চট্টগ্রামে বাইক দুর্ঘটনায় নিহত তরুণী দাবিতে গণমাধ্যমে একাধিক জীবিত তরুণীর ছবি প্রচার

গত ২০ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন তরুণ এবং অপরজন তরুণী। এ বিষয়ে জাতীয় এবং স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মৃত তরুণের সাথে মৃত তরুণীর ছবি দাবিতে ভিন্ন ভিন্ন ছয়টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। একইসাথে নিহত দুই শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের শিক্ষার্থী বলে দাবি করা হয়েছে। 

Collage: Rumor Scanner 

মৃত তরুণীর ভুল ছবি এবং তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ভুল করে গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন কালের কণ্ঠ, চ্যানেল২৪ (ফেসবুক), নিউ এজ, বাংলাভিশন, যায়যায়দিন, এনটিভি, ডেইলি অবজারভার, মানবকণ্ঠ, যুগান্তর, আরটিভি (ফেসবুক), জনকণ্ঠ, কালবেলা (ফেসবুক), নয়া দিগন্ত, নিউজজি২৪, ইত্তেফাক, বাংলাদেশ প্রতিদিন, আমাদের সময়.কম, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ইউএনবি, ইউএনবি (ইংরেজি), দেশ রূপান্তর, ঢাকা পোস্ট, মানবজমিন, সমকাল, দেশ টিভি, বায়ান্ন টিভি, এবিনিউজ২৪, বার্তা২৪, বাংলাদেশ টাইমস, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, ডেইলি বাংলাদেশ, বিবার্তা২৪, বাংলাদেশ বুলেটিন, পূর্ব পশ্চিম বিডি ,রিদ্মিক নিউজ, জুম বাংলা, ২৪লাইভ নিউজপেপার, সংবাদ প্রকাশ, বিডি২৪রিপোর্ট, ঢাকা প্রকাশ, ফ্রিডম বাংলা নিউজ, স্টার সংবাদ, দৈনিক শিক্ষা, প্রবাসীর দিগন্ত, ভোরের দর্পণ, মুক্ত খবর, খুলনা গেজেট, বিডি২৪লাইভ, খবর সংযোগ, সময় জার্নাল, ভিন্ন বার্তা, দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়া, একুশে সংবাদ, জনবাণী, শেয়ার নিউজ২৪, আমাদের সমাজ, বাংলাদেশ সকাল, ডেইলি কুমিল্লা নিউজ, সংবাদ সারাক্ষণ, দৈনিক পূর্বাশা, বাংলা কথা, মোহনা নিউজ, উখিয়া নিউজ, নতুনের কথা, প্যাসেন্জার ভয়েস, নীলাকাশ টুডে, ডিবিএস নিউজ২৪, অপরাধ ঘোষণা, দীপ্ত টাইমস, বাংলার সংবাদ২৪, রাইজিং কুমিল্লা, জনমত, বাংলাদেশ পোস্ট ইংলিশ, সিটি নিউজ ঢাকা, সান নিউজ, ইনিউজ৭১, স্বাধীন আলো, এমটি নিউজ২৪, প্রাইম নিউজচট্টগ্রাম বার্তা। 

তাছাড়া, ‘দৈনিক বাংলা’ ও ‘ডিবিসি নিউজ’ মৃত তরুণীর ভুল ছবি ব্যবহার করে ফটোকার্ড প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে তা সংশোধন করে নেয়৷ তবে সংশোধনের পূর্বের ভার্সনের কোনো আর্কাইভ পাওয়া যায়নি। 

Collage: Rumor Scanner 

মৃত তরুণীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ভুল করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো, ডিবিসি নিউজ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), ইনডিপেনডেন্ট টিভি (ইউটিউব), সময় টিভি, আজকের পত্রিকা, ইনকিলাব, দৈনিক বাংলা, দীপ্ত টিভি,কালবেলা, বাংলা ট্রিবিউন, ঢাকা ট্রিবিউন, প্রতিদিনের সংবাদ, ভোরের কাগজ, বাংলানিউজ২৪ (ইংরেজি), সাম্প্রতিক দেশকাল (ইংরেজি), এসএ টিভি, আলোকিত বাংলাদেশ, ডেইলি মেসেঞ্জার, ঢাকা মেইল, দৈনিক আজাদী, আলোকিত চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম প্রতিদিন, সুপ্রভাত, বিএনএ নিউজ২৪, বাংলা ধারা

Collage: Rumor Scanner 

একই দাবিগুলোর বিষয়ে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিগুলোর বিষয়ে ইউটিউবে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিগুলোর বিষয়ে টিকটকের কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গণমাধ্যমে মৃত তরুণী নাহিন সুলতানার ছবি দাবিতে যে ছয়টি ছবি প্রচার করা হয়েছে তার মধ্যে পাঁচটি ছবি ভিন্ন তিন তরুণীর। তাছাড়া, নাহিনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি সিটি কলেজের নাম প্রচার করা হলেও তিনি মূলত চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকা ‘দৈনিক ইনফো বাংলা’ এর ফেসবুকে পেজে (আর্কাইভ) গত ২৩ আগস্টের প্রিন্ট সংস্করণের প্রথম পাতার একটি সংবাদ নজরে আসে রিউমর স্ক্যানার টিমের। “গণমাধ্যমের অপেশাদারিত্বে তরুণীর সামাজিক অবস্থান হুমকির মুখে” শীর্ষক শিরোনামের এই সংবাদে আলোচিত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাটির বিষয়ে বলা হয়, গণমাধ্যমে নাহিদা দাবিতে ভিন্ন এক তরুণীর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। রিতু বিশ্বাস নামে উক্ত তরুণী জীবিত এবং সুস্থ আছেন বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। 

Image: Facebook 

প্রতিবেদনটিতে আরটিভি এবং ডিবিসি নিউজের এ সংক্রান্ত সংবাদের ফটোকার্ড দেখা যাচ্ছে। তবে দুইটি ফটোকার্ডে থাকা তরুণীর চেহারার মিল নেই বলেই প্রতীয়মান হয়েছে রিউমর স্ক্যানারের কাছে। 

তবে কি দুইজন ভিন্ন তরুণীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে গণমাধ্যমে? এমন প্রশ্ন সামনে রেখে শুরুতে ইনফো বাংলা’র প্রতিবেদনটির লেখক মনজুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি আমাদের জানান, ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ডে থাকা তরুণীই রিতু বিশ্বাস। তবে আরটিভির ফটোকার্ডে থাকা তরুণীর পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি। 

এ বিষয়ে পরবর্তী অনুসন্ধানে দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী আল ইমরান ইফতির ফেসবুক আইডিতে (আর্কাইভ) গত ২৩ এপ্রিল প্রকাশিত এক পোস্টে (আর্কাইভ) গণমাধ্যমে প্রচারিত আলোচিত ছবিগুলোর হদিস পাওয়া যায়। তবে পোস্টের এডিট হিস্টোরি যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, এই ছবিগুলো পোস্টে যুক্ত করা হয়েছে গত ১৬ মে। 

Collage: Rumor Scanner 

একই পোস্টে ইনফো বাংলা’র প্রতিবেদনে প্রচারিত দুইটি গণমাধ্যমের ফটোকার্ডে থাকা দুই তরুণীর আল ইমরান ইফতির সাথে তোলা একটি গ্রুপ ছবিও খুঁজে পেয়েছি আমরা, যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, এরা দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি। 

Screenshot: Facebook 

অর্থাৎ, এই পর্যন্ত এটা বলা যাচ্ছে যে, গণমাধ্যমে মৃত তরুণী দাবিতে এই দুই তরুণীর ছবি প্রচার করা হয়েছে।  

পরবর্তীতে এই দুই তরুণীর পরিচয় নিশ্চিতে অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

হলুদ শাড়ি পরিহিত তরুণীর খোঁজে

ইনফো বাংলা’র সূত্রে ইতোমধ্যেই হলুদ শাড়ি পরিহিত তরুণীর নাম ঋতু বিশ্বাস বলে ধারণা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সহায়তায় কলেজটির ওয়েবসাইটের স্টুডেন্ট ডাটাবেজে ঋতু বিশ্বাসের প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যায়। গণমাধ্যমে মৃত তরুণী দাবিতে প্রচারিত হলুদ শাড়ি পরিহিত তরুণীর ছবির সাথে ঋতু বিশ্বাসের চেহারার মিল পাওয়া যায়। কলেজের ওয়েবসাইটে থাকা স্টুডেন্ট ইনফরমেশন সেকশন থেকে জানা যায়, ঋতু ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বিএ প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছেন। 

Comparison: Rumor Scanner 

আরো নিশ্চিত হতে অনুসন্ধানে ঋতু বিশ্বাসের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া তার বাড়ির ঠিকানার সাথে ওয়েবসাইটে দেওয়া ঠিকানার মিল খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ঋতু বেঁচে আছে দাবি করে ইনফো বাংলা যে তথ্য প্রচার করেছে তা সত্য বলে তার একাধিক সহপাঠী রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছে।

অর্থাৎ, ইফতির সাথে হলুদ শাড়ি পরিহিত যে তরুণীকে দেখা যাচ্ছে, তিনি ঋতু বিশ্বাস। তিনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হননি।

লাল শাড়ি পরিহিত তরুণীর খোঁজে

পরবর্তীতে ইফতির সাথে থাকা লাল শাড়ি পরিহিত তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত হতে ফেসবুক মনিটরিং টুলসের মাধ্যমে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করে এক ব্যক্তির নিজ অ্যাকাউন্ট এবং একটি গ্রুপে দেওয়া পোস্ট নজরে আসে রিউমর স্ক্যানার টিমের। 

‘চট্টগ্রাম’ নামে একটি গ্রুপে দেওয়া পোস্টে ঋতু এবং লাল শাড়ি পরিহিত তরুণীর ছবি সম্বলিত ফটোকার্ড পোস্ট করে লিখেছেন, দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া তরুণী দাবিতে তার বান্ধবী সুমাইয়া সুলতানার ছবি প্রচার করা হচ্ছে গণমাধ্যমে। তিনি তার অ্যাকাউন্টেও লাল শাড়ি পরিহিত তরুণীর ছবি সম্বলিত ফটোকার্ডটি পোস্ট করে প্রথম বিষয়টি সত্যি কিনা জানতে চেয়ে পোস্ট করেন। পরে পোস্টের ক্যাপশন এডিট করে জানান, সুমাইয়া সুস্থ আছেন। 

Collage: Rumor Scanner

অর্থাৎ, উক্ত ব্যক্তির দেওয়া তথ্যমতে, লাল শাড়ি পরা তরুণীর নাম সুমাইয়া সুলতানা।

রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে পোস্টদাতা ব্যক্তির সাথে কথা বলেছে। তিনি জানান, লাল শাড়ি পরিহিত উক্ত তরুণীর নাম সুমাইয়া। আমরা তার মাধ্যমে সুমাইয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। এ বিষয়ে শুরুতে তিনি আমাদের সহায়তার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে সুমাইয়ার বিষয়ে দেওয়া দুইটি পোস্ট ডিলিট করে দিয়ে জানান, তিনি এ বিষয়ে আর কথা বলতে চান না। (সঙ্গত কারণে তাই আমরা তার অ্যাকাউন্টের নাম ও ছবি ব্লার করে দিয়েছি।) 

লাল শাড়ি পরা তরুণীর নাম ‘সুমাইয়া সুলতানা’ জানার পর এ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান এগোতে থাকে আমাদের। রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে জানতে সরকারি সিটি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে থাকা কয়েকজন জানিয়েছেন, ঋতু এবং সুমাইয়া তাদের ব্যাচমেট। অর্থাৎ, সুমাইয়াও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বিএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। 

তাদের সহায়তায় কলেজটির ওয়েবসাইটে স্টুডেন্ট ডাটাবেজে সুমাইয়া সুলতানার প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে গণমাধ্যমে মৃত তরুণী দাবিতে লাল শাড়ি পরিহিত যে তরুণীর ছবি প্রচারিত হয়েছে তার সাথে সুমাইয়ার চেহারার দৃশ্যমান মিল পাইনি আমরা।

Comparison: Rumor Scanner

এ বিষয়ে আরো নিশ্চিত হতে পরবর্তীতে সুমাইয়ার সাথে রিউমর স্ক্যানার টিমের কথা হয়। তিনি নিজেও বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং স্বীকার করেন যে, গণমাধ্যমে মৃত দাবিতে তার ছবি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া লাল পরিহিত তরুণীর ছবিগুলো সুমাইয়া সুলতানার বলে তার একাধিক সহপাঠীও রিউমর স্ক্যানার টিমকে নিশ্চিত করেছেন।

অর্থাৎ, আল ইমরান ইফতির সাথে লাল শাড়ি পরিহিত যে তরুণীকে দেখা যাচ্ছে, তিনি সুমাইয়া সুলতানা এবং তিনি জীবিত আছেন। 

এবার তৃতীয় আরেক ব্যক্তির আবির্ভাব

গণমাধ্যমে প্রচারিত ভুল চারটি ছবি প্রচারের বিষয়ে অনুসন্ধানের মধ্যেই ফেসবুকে একটি ভিডিও (আর্কাইভ) নজরে আসে রিউমর স্ক্যানার টিমের। এ্যানি নামে এক তরুণীকে উক্ত ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, ‘আনোয়ারার সংবাদ’ নামে সংবাদভিত্তিক একটি ফেসবুকে পেজে দাবি করা হয়েছে, ইফতির সাথে দুর্ঘটনায় তিনি (এ্যানি) মারা গেছেন। এজন্য তিনি ভিডিওর মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করছেন যে, তিনি জীবিত আছেন। 

রিউমর স্ক্যানার টিম আনোয়ারার সংবাদ নামক পেজটিতে এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ না পেয়ে এ্যানির সাথে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের জানান, তার ভিডিও করার পর পেজটি থেকে এ সংক্রান্ত ভিডিওটি ডিলিট করা হয়েছে। তিনি আমাদের কাছে ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট পাঠিয়েছেন।

Collage: Rumor Scanner

এ্যানি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, আল ইমরান ইফতি তার বন্ধু ছিল। তারা বাইক রাইডার ছিলেন। তবে মারা যাওয়া তরুণী বাইকার ছিলেন না। তার নাম নাহিন সুলতানা। 

অর্থাৎ, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আল ইমরান ইফতির সাথে লাল ও হলুদ শাড়ি পরিহিত দুই তরুণী কিংবা এক বাইকার তরুণীর যে ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার হয়েছে তাদের কেউই মারা যাননি।

আল ইমরান ইফতির সাথে বাইক দুর্ঘটনায় নিহত তরুণীর পরিচয় কী?

অধিকাংশ গণমাধ্যমে আল ইমরান ইফতির এই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মৃত তরুণীর নাম নাহিদা সুলতানা এবং তিনি চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী বলে দাবি করা হয়েছে।

এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে শুরুতে সরকারি সিটি কলেজের ওয়েবসাইটে স্টুডেন্ট ডাটাবেজে নাহিন সুলতানা নামে কোনো শিক্ষার্থীর নাম খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম। 

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অফিস সেকশনের রেজিস্ট্রার (ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী) মো: গোলাম কিবরিয়ার সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, তিনি এখন এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন না৷ তবে তিনি খোঁজ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এই প্রতিষ্ঠানেরই এক শিক্ষার্থী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। 

বিষয়টি নিশ্চিত হতে মৃত তরুণীর বাবা রাসেল চৌধুরীর সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, জন্মসনদ এবং একাডেমিক সনদ অনুযায়ী তার মেয়ের নাম নাহিন সুলতানা। তার মেয়ে চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করতেন। তিনি সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নয়।

অর্থাৎ, ইফতির সাথে যে তরুণী মারা গেছেন তার নাম নাহিদা সুলতানা নয় এবং তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজের শিক্ষার্থীও নয়। তার প্রকৃত নাম নাহিন সুলতানা এবং তিনি চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

নাহিনের প্রকৃত ছবির খোঁজে

একই ঘটনার বিষয়ে শোক জানিয়ে ফেসবুকে প্রকাশিত এক ব্যক্তির একটি পোস্টে ইফতির সাথে থাকা এক তরুণীর ছবিকে (গোল চিহ্নিত) নাহিদা (মূলত নাহিন) বলে দাবি করতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

Screenshot: Facebook 

এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে আমরা শরণাপন্ন হই এ্যানির। ঘটনার দিন ঘটনাস্থল এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে উপস্থিত ছিলেন বাইকার আরকে এ্যানি। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন, ছবির এই ব্যক্তিই মৃত নাহিন সুলতানা। একই ছবিতে তিনিও রয়েছেন। উক্ত ছবিতে ডান থেকে তৃতীয় ব্যক্তিই এ্যানি। 

এ্যানিকে আমরা গণমাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা আরো একটি ছবি দেখাই, যার সাথে নাহিনের ছবিটির মিল পেয়েছি আমরা। এ্যানি রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, এটিও নাহিনেরই ছবি। 

Image: Facebook

ভুল শোধরাতে গিয়েও ভুল!

রিউমর স্ক্যানার টিম চট্টগ্রামের আলোচিত এই ঘটনায় দীর্ঘ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেশের প্রায় সকল গণমাধ্যমেরই এ সংক্রান্ত সংবাদগুলো পর্যালোচনা করেছে, পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলোর ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত সংবাদগুলোও। এই কাজটি করতে গিয়ে দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যম বাংলাভিশনের একটি ফেসবুক পোস্ট নজরে আসে আমাদের। 

গত ২০ আগস্ট সকাল ৯ টা ৫৫ মিনিটে আলোচিত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বিষয়ে একটি ফটোকার্ড নিজেদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করে বাংলাভিশন। এই ফটোকার্ডে ইফতির সাথে নাহিন দাবিতে সুমাইয়ার ছবি প্রচার করা হয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে পোস্ট এডিট করে আগের ফটোকার্ডটি সরিয়ে একইদিন সকাল ১১ টা ৩৮ মিনিট নতুন আরেকটি ফটোকার্ড যুক্ত করা হয়। এই ফটোকার্ডে ইফতির সাথে নাহিন দাবিতে যে তরুণীকে দেখা যাচ্ছে, তিনিও নাহিন নয়। তার নাম ঋতু বিশ্বাস।  

Comparison: Rumor Scanner

অর্থাৎ, বাংলাভিশন এ বিষয়ে প্রকাশিত তাদের পোস্টের প্রথম ফটোকার্ডে ভুল ছবি প্রকাশ করে পরবর্তীতে আরেকটি ফটোকার্ড প্রকাশ করলেও সেটিও নাহিনের ছবি ছিল না। 

মূলত, গত ২০ আগস্ট চট্টগ্রামে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী ও কলেজ ছাত্রলীগের নেতা আল ইমরান ইফতি ও তার একই মোটরসাইকেলে থাকা নাহিদা নামে এক তরুণী মারা যান বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মৃত তরুণীর ছবি দাবিতে গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন ছয়টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। একইসাথে মৃত তরুণীকে সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, মারা যাওয়া তরুণীর প্রকৃত নাম নাহিন সুলতানা এবং তিনি চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাছাড়া, গণমাধ্যমে যে ছয়টি ছবিকে নাহিনের বলে দাবি করা হয়েছে তার মধ্যে মাত্র একটি ছবি নাহিন সুলতানার, বাকি পাঁচটি ছবি ভিন্ন তিন তরুণীর। প্রকৃতপক্ষে, সুমাইয়া সুলতানা, ঋতু বিশ্বাস এবং এ্যানি নামের ভিন্ন এবং জীবিত তিন তরুণীর ছবি মৃত নাহিন সুলতানার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।  

সুতরাং, চট্টগ্রামে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গণমাধ্যমে মৃত তরুণীর ছবি দাবিতে জীবিত ভিন্ন তিন তরুণীর পাঁচটি ছবি এবং তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি সিটি কলেজের নাম প্রচার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s own investigation 
  • Statement from Rasel Chowdhury 
  • Statement from R K Any
  • Statement from Monjurul Islam
  • Dainik Info Bangla: Epaper

আরও পড়ুন

spot_img