সম্প্রতি ‘আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুর পর সারাদেশে ৭ হাজারের বেশি মামলা করে জালিম সরকার।’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।
গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ)।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন বিবিসি বাংলা।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর সারাদেশে ৭ হাজার মামলা নয় বরং তার মৃত্যুর পর ঢাকায় জানাজার দাবি, দেশের বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠান ও এর জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭ হাজারের বেশি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিভ্রান্তিকর তথ্যের সূত্রপাত
দাবিটির সূত্রপাত সম্পর্কে অনুসন্ধানে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি নিউজের বাংলা সংস্করণ বিবিসি বাংলায় ১৭ আগস্ট ‘সাঈদীর মৃত্যুর পর সারাদেশে ৭ হাজারের বেশি মামলা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটির বিস্তারিত অংশ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবেদনটির সূচনা অংশে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে ঢাকা ও কক্সবাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় সাত হাজারের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কথা উল্লেখ রয়েছে।
অর্থাৎ গণমাধ্যমটির শিরোনামের সাথে মূল সংবাদের তথ্যের গড়মিল রয়েছে।
পরবর্তীতে গণমাধ্যমটি এ গড়মিল শুধরে নিয়ে শিরোনামে ‘সাঈদীর মৃত্যুর পর সারাদেশে ৭ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা’ শীর্ষক পরিবর্তন করে।
অর্থাৎ বিবিসি বাংলায় সাত হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে সংবাদের শিরোনামে ৭ হাজার মানুষের স্থলে ৭ হাজার মামলা বলে উল্লেখ করে। যদিও প্রতিবেদনের ভিতরে তথ্যের উপস্থাপন ঠিক ছিল।
অপরদিকে গণমাধ্যমটি ভুল শিরোনামটি সংশোধন করে নিলেও এর মধ্যেই সেটি কপি-পেস্ট হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার হতে থাকে।
সাঈদীর মৃত্যু পরবর্তী সময়ের ঘটনায় ঢাকা ও কক্সবাজারে কতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে?
এ নিয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ‘সাঈদীর ছেলেসহ ৫ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এলাকা এবং শাহবাগ মোড়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরও প্রতিবেদন দেখুন
অপরদিকে সাঈদীর মৃত্যুর ঘটনায় কক্সবাজারে সহিংসতার মামলা নিয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘কক্সবাজারে ৬ মামলায় জামায়াতের ১২ হাজার আসামি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কক্সবাজারে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে কক্সবাজার সরকারি কলেজের সামনে পুলিশের সঙ্গে জামায়াতের সমর্থকদের ধাওয়া পালটা ধাওয়ার সময় পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে ২ হাজার ২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে পুলিশ মামলা দায়ের করেছে।
একই তথ্য পাওয়া যায়, জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তরে উল্লেখিত তথ্য থেকেও।
মূলত, গত ১৪ আগস্ট জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর ঢাকায় তার জানাজার দাবি, দেশের বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠান ও এর জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭ হাজারের বেশি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। উক্ত খবরটি প্রচার করতে গিয়ে বিবিসি বাংলা তাদের প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশে সঠিক তথ্য উল্লেখ করলেও সংবাদের শিরোনামে ৭ হাজার মানুষের স্থলে ৭ হাজার মামলা বলে উল্লেখ করে। যার ফলে ৭ হাজার মামলা দাবিতে ইতোমধ্যে ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে।
দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত একাধিক গুজব নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের ফ্যাক্টস্টোরি দেখুন
সাঈদীর মৃত্যু: পুরোনো ছবি-ভিডিও আর ভুল তথ্যে একদিন
সুতরাং, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর সারাদেশে ৭ হাজারের বেশি মামলা হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- BBC Bangla: সাঈদীর মৃত্যুর পর সারাদেশে ৭ হাজারের বেশি মামলা
- Daily Prothom Alo: সাঈদীর ছেলেসহ ৫ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা
- Daily Inqilab: সাঈদীর ছেলেসহ ৫ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা
- Daily Kalbela: সাঈদীর ছেলেসহ ৫ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা
- Dhaka Post: কক্সবাজারে ৬ মামলায় জামায়াতের ১২ হাজার আসামি
- Desh Rupantor: কক্সবাজারে ৬ মামলায় জামায়াতের ১২ হাজার নেতা-কর্মী আসামি