একটি দেশে সংবাদ বা নানা তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছাতে মিডিয়া শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। প্রযুক্তির এই যুগে টেলিভিশন শুধু টেলিভিশনে কিংবা প্রিন্ট মিডিয়া শুধু ছাপা কাগজে আর সীমাবদ্ধ নেই। সময়ের চাহিদা আর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে নিত্য নতুন উপায়ে দর্শক এবং পাঠকের কাছে পৌঁছাতে উন্মুখ হয়ে থাকে মিডিয়া হাউজগুলো। সেই জায়গা থেকে গেল কয়েক বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গণমাধ্যমের উপস্থিতি আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। গণমাধ্যমগুলো নিউজের লিংক শেয়ারের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা হিসেবে ফেসবুকে নিজেদের পেজে ফটোকার্ড নামে সংবাদ প্রচারের নতুন একটি উদ্যোগ নেয়। সংবাদের শিরোনাম এবং প্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার করে তৈরি করা এসব ফটোকার্ড ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে অল্প সময়ে বেশ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে চলতি বছরের (২০২৩) শেষ কয়েক মাসে এই ফটোকার্ড নিয়েই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমকে।
রিউমর স্ক্যানার টিম চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গণমাধ্যমের আদলে তৈরি নকল ২৩ টি ফটোকার্ডের বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে, যেগুলো গণমাধ্যমের আদলে ফটোকার্ড তৈরি করে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তবে শুধু ফটোকার্ডই নয়, গেল আট মাসে গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচার করার ০৯ টি প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। এসব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোনো একটি ভিত্তিহীন সংবাদের সাথে সূত্র হিসেবে কোনো একটি গণমাধ্যমের লোগো বা নাম যুক্ত করে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে। অথচ, সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম এমন কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি।
এর বাইরে গত আট মাসে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম এডিট করে ভিন্ন শিরোনাম যুক্ত করে প্রচার করার সাতটি প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷
এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র নাম সবচেয়ে বেশি (১৮) ব্যবহার করা হয়েছে, শতকরা হিসেবে যা ৪৬ শতাংশ। এছাড়া, চ্যানেল২৪ এর নামে ০৪ টি, একাত্তর টিভি, সময় টিভি ও কালবেলার নামে ০২ টি এবং আরটিভি, দ্য ডেইলি স্টার, জাগোনিউজ২৪, এনটিভি, ডিবিসি নিউজ, আজকের পত্রিকা, রাইজিং বিডি, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, নিউজ২৪, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও দেশ রূপান্তর এর নামে একটি করে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে রাজনৈতিক বিষয়ে (২৭), যা মোট সংখ্যার ৬৯ শতাংশ। এছাড়া, শিক্ষা বিষয়ে ১৫ শতাংশ, বিনোদন বিষয়ে ০৮ শতাংশ ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ফটোকার্ড ব্যবহার করে চলতি বছরের শেষ তিন মাসে আশঙ্কাজনক হারে ভুল তথ্য প্রচারের প্রবণতা বেড়েছে। মোট প্রচারিত ৩৯ টি ভুল তথ্যের মধ্যে জুন থেকে আগস্টেই ছড়িয়েছে ৩৩ টি। এর মধ্যে গত মাসে (আগস্ট) এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারের হার ছিল ৪৯ শতাংশ।
রাজনৈতিক বিষয়ে গণমাধ্যমের আদলে নকল ফটোকার্ড, গণমাধ্যমের নাম ও লোগো এবং খবরের শিরোনাম বিকৃত করে ছড়ানো হয়েছে ২৭ টি ভুয়া তথ্য। এর মধ্যে এপ্রিলে ০২ টি, মে’তে ০১ টি, জুনে ০৪ টি, জুলাইতে ০৯ টি এবং আগস্টে ১১ টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজনীতি বিষয়ে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা অনিয়মিত হলেও শেষ তিন মাসে এই সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে।
এর মধ্যে এককভাবে এইচএসসির বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (৬) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও হিরো আলমের বিষয়ে ০৫ টি করে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ছাত্রলীগের বিষয়ে ০৪ টি করে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে ০৩ টি এবং বিএনপি, তোফায়েল আহমেদ, নির্বাচন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, নুরুল হক নূরের বিষয়ে একটি করে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
নকল ফটোকার্ড: অস্বস্তি গণমাধ্যমে
গণমাধ্যমের আদলে নকল ফটোকার্ড তৈরি করে চলতি বছরের গত আট মাসে প্রচারিত ২৩ টি ভুয়া তথ্যের মধ্যে প্রথম আলো’র আদলে ফটোকার্ড তৈরি করার প্রচার করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি (১৩ টি) ভুল তথ্য, শতকরার হিসেবে যা প্রায় ৫৬ শতাংশ। এর বাইরে চ্যানেল২৪ এর আদলে ০৩ টি, একাত্তর টিভির আদলে ০২ টি এবং ডিবিসি নিউজ, এনটিভি, জাগোনিউজ২৪, দ্য ডেইলি স্টার, আরটিভির আদলে ০১ টি করে নকল ফটোকার্ড তৈরি করে ভুল তথ্য প্রচারের ঘটনা ঘটেছে।
রিউমর স্ক্যানার টিম এই পরিসংখ্যানটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এসব ফটোকার্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক বিষয়েই সবচেয়ে বেশি (১৩) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচারের হার ৫৭ শতাংশ। এছাড়া, শিক্ষা বিষয়ে ২৬ শতাংশ, বিনোদন বিষয়ে ১৩ শতাংশ এবং খেলা বিষয়ে ০৪ শতাংশ হারে ভুয়া তথ্য প্রচারে গণমাধ্যমের আদলে নকল ফটোকার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। রাজনীতি বিষয়ে ছড়ানো ১৩ টি ফটোকার্ডের মাধ্যমে এপ্রিলে ০২ টি, মে’তে ০১ টি, জুনে ০৩ টি, জুলাইতে ০৪ টি এবং আগস্টে ০৩ টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
এ বছরের শুরুর তিন মাসে ফেসবুকে গণমাধ্যমের ফটোকার্ড নকলের প্রবণতা দেখা না গেলেও পরের পাঁচ মাসে এই বিষয়টি বাড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার৷ বিশেষ করে গত তিন মাসে এই পদ্ধতিতে ভুল তথ্য ছড়ানোর হার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে৷ মোট ২৩ টি নকল ফটোকার্ডের মধ্যে জুন থেকে আগস্টেই ছড়িয়েছে ২০ টি৷
চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয় গত ১৭ আগস্ট। কিন্তু আগস্টের শুরুর দিকে এই পরীক্ষার তারিখ পেছানো এবং নম্বর পুনর্বন্টনসহ চার দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। সেসময় নানা ভুল তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে একাধিক গণমাধ্যমের আদলে তৈরি নকল ফটোকার্ডেও ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। রিউমর স্ক্যানার টিম এমন ০৬ টি নকল ফটোকার্ড শনাক্ত করতে পেরেছে, যেগুলোতে এইচএসসির বিষয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। চলতি বছর একক কোনো ঘটনা বা বিষয়ে গণমাধ্যমের আদলে তৈরি নকল ফটোকার্ডে ভুল তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে এইচএসসি পরীক্ষাই ছিল সবচেয়ে এগিয়ে। এছাড়া, হিরো আলমের বিষয়ে ০৫ টি, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিষয়ে ০৩ টি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নুরুল হক নুর ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিষয়ে একটি করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে নকল ফটোকার্ডে।
গত ৭ এপ্রিল প্রথম আলো’তে মাহফুজ আনামের লেখা “সাংবাদিকেরাই কেবল সাংবাদিকতাকে বাঁচাতে পারেন” শীর্ষক একটি কলামের কয়েকটি বক্তব্য প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেজে ডিজিটাল ব্যানার আকারে প্রকাশ করে। মাহফুজ আনাম এর বক্তব্যের ওপর প্রকাশিত প্রথম আলোর সেই ডিজিটাল ফটোকার্ড তিনটিকেই মূলত বিকৃত করে সেখানে ভিন্ন বক্তব্য বসিয়ে মাহফুজ আনামের বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে মাহফুজ আনাম বিষয়ে প্রকাশিত এই ফ্যাক্টচেকের পর প্রথম আলোর তৈরি ফটোকার্ড দাবিতে আরও ১২ টি নকল ফটোকার্ড প্রচার করার নজির পাওয়া গেছে। মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে প্রথম আলোর আদলে ভুয়া ফটোকার্ড সবচেয়ে বেশি প্রচার করা হয়েছে গত আগস্টে (০৫ টি)। এছাড়া, এপ্রিলে ০২ টি, মে’তে ০১ টি, জুনে ০৩ টি এবং জুলাইতে ০২ টি নকল ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে ফেসবুকে।
প্রথম আলোর নকল ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আমরা দেখেছি, ১৩ টি ফটোকার্ডের মধ্যে ০৯ টিই রাজনৈতিক বিষয়ে। এর মধ্যে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরের বিষয়ে ০১ টি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিষয়ে ০২ টি (১, ২), হিরো আলমের বিষয়ে ০৩ টি (১, ২, ৩) এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিষয়ে ০১ টি নকল ফটোকার্ড ছড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক বিষয় ছাড়াও প্রথম আলোর আদলে নকল ফটোকার্ড তৈরি করে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে চারটি (১, ২, ৩, ৪) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
প্রথম আলোর আদলে তৈরি নকল ফটোকার্ডের বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেকগুলো দেখুন ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল২৪’ এর ফেসবুক পেজে গত ১৫ জুন “সালমানের হাত ধরে এবার বলিউডে মিয়া খলিফা, জল্পনা তুঙ্গে” শীর্ষক শিরোনামে একটি ফটোকার্ড প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে উক্ত ফটোকার্ডের শিরোনাম বিকৃতির মাধ্যমে ‘সালমান খানের হাত ধরে বাকিটা সময় কাটাতে চান মিয়া খলিফা, বাকিটা ইতিহাস’ শীর্ষক শিরোনামে ফটোকার্ড তৈরি করে চ্যানেল২৪ এর ফটোকার্ড দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করে।
বিনোদন বিষয়ক ভুল তথ্য সম্বলিত এই ফটোকার্ড ছাড়াও পরবর্তী সময়ে চ্যানেল২৪ এর আদলে তৈরি করা আরো দুইটি নকল ফটোকার্ডে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও এইচএসসির বিষয়ে একটি করে ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে ফেসবুকে। এই দুই ভুল তথ্যই গত আগস্টে ছড়িয়েছে।
চ্যানেল২৪ এর আদলে তৈরি নকল ফটোকার্ডের বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেকগুলো দেখুন ১, ২, ৩।
এইচএসসির বিষয়ে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে নকল ফটোকার্ডে ভুল তথ্য ছড়ানোর শিকার হয়েছে একাত্তর টিভিও।
গত ১৩ আগস্ট ‘এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত’ শীর্ষক একটি তথ্যকে একাত্তর টিভির আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হয়৷ রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধান করে জানতে পারে, একইদিন ‘এইচএসসির স্থগিত চার পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা।’ শীর্ষক শিরোনামের একাত্তর টিভির একটি ফটোকার্ডকে নকল করে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া, গণমাধ্যমটির আদলে তৈরি নকল আরেক ফটোকার্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়েও ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
একাত্তর টিভির আদলে তৈরি নকল ফটোকার্ডের বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেকগুলো দেখুন ১, ২।
এছাড়া, অভিনেতা আফরান নিশোর বিষয়ে আরটিভির আদলে ০১ টি, হিরো আলমের বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারের আদলে ০১ টি, হিরো আলমের বিষয়ে জাগোনিউজ২৪ এর আদলে ০১ টি, ব্রাজিলের জুলি রিমে ট্রফির বিষয়ে এনটিভির আদলে ০১ টি এবং তসলিমা নাসরিনের বিষয়ে ডিবিসি নিউজের আদলে ০১ টি নকল ফটোকার্ডে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহার: রাজনৈতিক বিষয়ে সিংহভাগ ভুল তথ্য
গণমাধ্যমের নাম লোগো ব্যবহার করে চলতি বছরের গত আট মাসে প্রচারিত ০৯ টি ভুয়া তথ্যের মধ্যে প্রথম আলো’কে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করে ছড়িয়েছে সবচেয়ে বেশি (০৪ টি) ভুল তথ্য, শতকরার হিসেবে যা প্রায় ৪৪ শতাংশ। এর বাইরে চ্যানেল২৪, সময় টিভি, আজকের পত্রিকা, কালবেলা এবং রাইজিং বিডি’র নাম ও লোগো ব্যবহার করে ০১ টি করে ভুল তথ্য প্রচারের ঘটনা ঘটেছে।
রিউমর স্ক্যানার টিম এই পরিসংখ্যানটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহার করার মাধ্যমে রাজনৈতিক বিষয়েই সিংহভাগ (৮) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে, শতকরা হিসেবে যা ৮৯ শতাংশ। এছাড়া, ধর্মীয় বিষয়ে একটি ভুয়া তথ্য প্রচারে গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহার করা হয়েছে।
এ বছরের শুরুর পাঁচ মাসে ফেসবুকে গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারের প্রবণতা দেখা না গেলেও পরের তিন মাসে এই পদ্ধতিতে ভুল তথ্য ছড়ানোর হার নিয়মিতভাবে বেড়েছে৷ মোট ০৯ টি এমন ভুল তথ্যের মধ্যে জুনে ছড়িয়েছে ০২ টি। পরের দুই মাসে এই সংখ্যা যথাক্রমে ০৩ ও ০৪ টি। এর মধ্যে রাজনীতি বিষয়ে জুনে ০১ টি, জুলাইতে ০৩ টি এবং আগস্টে ০৪ টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিম গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহার করে ছড়ানো ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছে, এই পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (৩) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, একই পদ্ধতিতে ড. ইউনূসের বিষয়ে ২ টি, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে ০১ টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
প্রথম আলো নাম ও লোগো ব্যবহার করে যে চারটি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে তার মধ্যে গত জুনে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে ০১ টি, জুলাইতে ছাত্রলীগের বিষয়ে ০১ টি এবং আগস্টে শেখ হাসিনা ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে ০১ টি করে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়া, চ্যানেল২৪ এর সূত্র ব্যবহার করে গত জুলাইতে ছাত্রলীগের বিষয়ে ০১ টি, সময় টিভির নাম ও লোগো ব্যবহার করে গত জুনে শেখ হাসিনার বিষয়ে ০১ টি, রাইজিং বিডির লোগো ব্যবহার করে গত জুলাইতে শেখ হাসিনার বিষয়ে ০১ টি, আজকের পত্রিকা’র সূত্র ব্যবহার করে ছাত্রলীগের বিষয়ে ০১ টি, কালবেলা’র সূত্র ব্যবহার করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে ০১ টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
শিরোনাম বিকৃতি: যা খবরে নেই তাই লিখে অপপ্রচার
গণমাধ্যমের খবরের শিরোনাম বিকৃতি ঘটিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্টে ০৭ টি ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম আলো, সময় টিভি, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, কালবেলা, নিউজ২৪, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দেশ রূপান্তর এর একটি করে প্রকাশিত খবরের শিরোনাম বিকৃতি করে ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিম এই পরিসংখ্যানটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরের শিরোনাম বিকৃত করে রাজনৈতিক বিষয়েই সিংহভাগ (৬) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে, শতকরা হিসেবে যা ৮৬ শতাংশ।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফেসবুকে গণমাধ্যমের শিরোনাম বিকৃত করে ০১ টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়। পরের পাঁচ মাসে এই পদ্ধতিতে ভুল তথ্য না ছড়ালেও জুলাই ও আগস্টে এই সংখ্যা বেড়েছে। উক্ত দুই মাসে এই পদ্ধতিতে ছড়ানো ভুল তথ্যের সবগুলোই ছিল রাজনীতি বিষয়ে।
রিউমর স্ক্যানার টিম গণমাধ্যমের খবরের শিরোনাম বিকৃত করে ছড়ানো ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছে, এই পদ্ধতিতে গত জুলাইতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (নিউজ২৪ এর শিরোনাম বিকৃত করে), গত আগস্টে ড. মুহাম্মদ ইউনূস (কালবেলার শিরোনাম বিকৃত করে), গত জুলাইতে ছাত্রলীগ (প্রথম আলোর শিরোনাম বিকৃত করে), গত আগস্টে তোফায়েল আহমেদ (বাংলাদেশ প্রতিদিনের শিরোনাম বিকৃত করে), গত আগস্টে বিএনপি (দেশ রূপান্তরের শিরোনাম বিকৃত করে), গত আগস্টে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ইনডিপেনডেন্ট টিভির শিরোনাম বিকৃত করে) এবং গত জানুয়ারিতে জাতীয় বিষয়ে (সময় টিভির শিরোনাম বিকৃত করে) একটি করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।