সম্প্রতি, সদ্য সমাপ্ত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একজন বয়স্ক ব্যক্তির ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা দাবিতে একটি জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর লোগো ব্যবহার করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে একজন বয়স্ক মানুষ ভোট দিতে এসেছেন। পোলিং অফিসার বললেন, দাদু আপনার ভোট তো হয়ে গেছে, বয়স হয়েছে তো তাই মনে রাখতে পারেন না। বৃদ্ধ মাথা নাড়িয়ে বললেন, হু তা ঠিক। তবে একটু দেখবেন যে আমার স্ত্রী ভোট দিয়ে গেছেন কি-না? আমার স্ত্রীর নাম কুলসুম বেগম।
পোলিং এজেন্ট দেখেটেখে বললো–হ্যাঁ, দাদু, দাদীর ভোট তো হয়ে গেছে। বৃদ্ধ হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বললেন–ওগো, এতোদিন ধরে একসাথে ঘর করে এই প্রতিদান? পরপার থেকে তুমি ভোট দিতে আসতে পারো আমার বাসায় তুমি আসতে পারোনা? আমার চাইতে ভোট তোমার প্রিয় হল?

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একজন বয়স্ক ব্যক্তির ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা দাবিতে দৈনিক প্রথম আলোর লোগো ব্যবহার করে প্রচারিত তথ্যটি পুরানো। প্রকৃতপক্ষে ২০১৮ সালে খুলনা সিটি করপোরেশনেরই নির্বাচনকে ঘিরে সর্বপ্রথম তথ্যটি প্রচার করা হয়েছিল।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে দৈনিক আমাদের সময়.কমে ২০১৮ সালের ১৬ মে ‘পরপার থেকে তুমি ভোট দিতে আসতে পারো আর বাসায় আসতে পারো না?‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যকে উদ্ধৃত করে উল্লেখ করা হয়, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে একজন বয়স্ক মানুষ ভোট দিতে এসেছেন। পোলিং অফিসার বললেন, দাদু আপনার ভোট তো হয়ে গেছে, বয়স হয়েছে তো তাই মনে রাখতে পারেন না। বৃদ্ধ মাথা নাড়িয়ে বললেন, হু তা ঠিক। তবে একটু দেখবেন যে আমার স্ত্রী ভোট দিয়ে গেছেন কি-না? আমার স্ত্রীর নাম কুলসুম বেগম।

বৃদ্ধ হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বললেন–ওগো, এতোদিন ধরে একসাথে ঘর করে এই প্রতিদান? পরপার থেকে তুমি ভোট দিতে আসতে পারো আমার বাসায় তুমি আসতে পারোনা? আমার চাইতে ভোট তোমার প্রিয় হল?
পরবর্তী অনুসন্ধানে আরেক মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক সংগ্রাম এর ওয়েবসাইটে একই বছরের ১৭ মে ‘মিডিয়ার চোখে খুলনা নির্বাচনের নগ্নচিত্র‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একই লেখককে উদ্ধৃত করে আলোচিত লেখাটি খুঁজে পাওয়া যায়।

অপরদিকে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর লোগো ব্যবহার করে আলোচিত তথ্যটি প্রচার করা হলেও রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে প্রথম আলোতে এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিপরীতে আলোচিত তথ্যটি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার আরও আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একই ব্যক্তি অর্থাৎ পিনাকী ভট্টাচার্যকে উল্লেখ করে লেখাটি খুঁজে পাওয়া যায়।

২০১৮ সালের ১৫ মে CCTV Bangladesh নামের একটি ফেসবুক পেইজে পিনাকী ভট্টাচার্যের পোস্টের স্ক্রিনশটসহ প্রকাশিত লেখাটি দেখুন এখানে। একইদিনে মঈনুল ইসলাম নামে জনৈক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত আলোচিত লেখাটি পড়ুন এখানে। এমন আরও কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে৷
তবে অনুসন্ধানে পিনাকী ভট্টাচার্যের মূল পোস্ট ও পোস্ট প্রদানকারী অ্যাকাউন্টটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া অনুসন্ধানে সদ্য সমাপ্ত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আলোচিত ঘটনাটির ন্যায় কোনো ঘটনা গণমাধ্যমেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ১২ জুন একইসাথে খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুই সিটি করপোরেশনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয় লাভ করে। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ে একজন বয়স্ক ব্যক্তির ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত পুরানো একটি লেখা পুনরায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, উক্ত ঘটনাটি সদ্য সমাপ্ত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের।
সুতরাং, ২০১৮ সালে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এক বয়স্ক ব্যক্তির ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা একটি গল্প সম্প্রতি সদ্য সমাপ্ত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Amadersomoy.com: পরপার থেকে তুমি ভোট দিতে আসতে পারো আর বাসায় আসতে পারো না?
- Daily Sangram: মিডিয়ার চোখে খুলনা নির্বাচনের নগ্নচিত্র
- CCTV Bangladesh facebook post: দাদু, দাদীর ভোট হয়ে গেছে
- BBC Bangla: বরিশাল ও খুলনা- দুই সিটিতেই আওয়ামী লীগের বিজয়