সম্প্রতি, ইংরেজি জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টারের একটি ফটোকার্ড ব্যবহার করে আলোচিত ব্যক্তি ও ঢাকা-১৭ আসন উপ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে উদ্ধৃত করে ‘ঢাকা ১৭ আসনে আমাকে বলা হয়েছিল মার না খেলে নেতা হওয়া যায়না, রক্ত না জড়ালে ইতিহাস লেখা যায়না। তাই আমি সেদিন সাদা পাঞ্জাবি পরেছিলাম। যেন বিশ্ব আমার রক্তমাখা পাঞ্জাবি মিডিয়ায় ফলাওভাবে প্রচার করতে পারে’ শীর্ষক একটি মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট(আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে হিরো আলমকে নিয়ে এমন কোনো ফটোকার্ড কিংবা সংবাদ প্রচার করা হয়নি বরং ভিন্ন একটি ফটোকার্ড এডিট করে দাবির বিষয়টি প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা তারিখ ও ডেইলি স্টারের লোগোর সূত্রে গণমাধ্যমটির বাংলা সংস্করণের ফেসবুক পেজে গত ২২ জুলাই হিরো আলমকে নিয়ে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। এই ফটোকার্ডটির সঙ্গে হিরো আলমের মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডটির কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ফটোকার্ড দুইটিতে থাকা হিরো আলমের বক্তব্যের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়।

ডেইলি স্টারে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে হিরো আলমের বক্তব্য ছিল, ‘একজন নারী ভোটারকে দিয়ে ৪০টি ভোট দেওয়ানো হয়েছে। ১২-১৩ বছরের ছেলে-মেয়েদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকিয়ে ভোট দেওয়ানো হয়েছে। যারা ভোট দিয়েছেন তাদের অনেকের নাম-ঠিকানা ভোটার তালিকায় ছিল না। এসবের ভিডিও ফুটেজ আমার কাছে আছে।’
বিপরীতে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে হিরো আলমের বক্তব্যটি হলো, ‘ঢাকা ১৭ আসনে আমাকে বলা হয়েছিল মার না খেলে নেতা হওয়া যায়না, রক্ত না জড়ালে ইতিহাস লেখা যায়না। তাই আমি সেদিন সাদা পাঞ্জাবি পরেছিলাম। যেন বিশ্ব আমার রক্তমাখা পাঞ্জাবি মিডিয়ায় ফলাওভাবে প্রচার করতে পারে।’
এছাড়া ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজে গত ২২ জুলাই উক্ত ফটোকার্ডটি ছাড়া হিরো আলমকে নিয়ে করা আর কোনো ফটোকার্ডও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, ডেইলি স্টারের বাংলা সংস্করণের সম্পাদক গোলাম মোর্তোজাও ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনকে ঘিরে ডেইলি স্টারের লোগো ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডটিকে মিথ্যা বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
অর্থাৎ হিরো আলমকে নিয়ে করা ডেইলি স্টারের ফটোকার্ডটিতে তার বক্তব্যটির উপর ভিন্ন আরেকটি বক্তব্য জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
তাছাড়া, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে হিরো আলমের ‘ঢাকা ১৭ আসনে আমাকে বলা হয়েছিল মার না খেলে নেতা হওয়া যায় না, রক্ত না জড়ালে ইতিহাস লেখা যায়না।…..’ এরূপ কোনো মন্তব্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হিরো আলমের মন্তব্যগুলো দেখুন:
- আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাবেন না হিরো আলম
- মার খেয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে যা বললেন হিরো আলম
- ‘১৮’র নির্বাচনেও মা র খেয়েছি, আর কেউ যাতে মা র না খায়’
মূলত, গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন হিরো আলম। নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলাকালে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে ডেইলি স্টারের একটি ফটোকার্ডে হিরো আলমের ‘ঢাকা ১৭ আসনে আমাকে বলা হয়েছিল মার না খেলে নেতা হওয়া যায়না, রক্ত না জড়ালে ইতিহাস লেখা যায়না। তাই আমি সেদিন সাদা পাঞ্জাবি পরেছিলাম। যেন বিশ্ব আমার রক্তমাখা পাঞ্জাবি মিডিয়ায় ফলাওভাবে প্রচার করতে পারে’ শীর্ষক একটি মন্তব্য ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডেইলি স্টারের নামে প্রচারিত উক্ত ফটোকার্ডটি এডিটেড এবং হিরো আলমও এমন কোনো বক্তব্য দেননি।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফটোকার্ড সম্পাদনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত একাধিক গুজব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন
- প্রথম আলোর ফটোকার্ড নকল করে হিরো আলমকে নিয়ে ফখরুলের ভুয়া মন্তব্য প্রচার
- আরটিভির ফটোকার্ড নকল করে অভিনেতা আফরান নিশোর বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার
- ‘পিনাকী ভট্টাচার্য সাহেব আমার কাছে টাকা চেয়েছিলেন’ শীর্ষক মন্তব্যটি নুরুল হক নুরের নয়
সুতরাং, ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনের দিন হিরো আলমের সাদা পাঞ্জাবি পরার কারণ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া।
তথ্যসূত্র
- Daily Star Facebook Page: একজন নারী ভোটারকে দিয়ে ৪০টি ভোট দেওয়ানো হয়েছে।
- Daily Star Bangla Editor’s Statement
- Rumor Scanner’s own Investigation