সম্প্রতি ‘একাত্তরের ঘৃণ্য রাজাকার সাইদীর মৃত্যু’ শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলোর আদলে একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, একাত্তরের ঘৃণ্য রাজাকার সাঈদীর মৃত্যু শীর্ষক ফটোকার্ডটি প্রথম আলো প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথম আলোর আদলে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রথম আলোর আদলে তৈরি আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৪ আগস্ট ২০২৩।
অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রথম আলোর ওয়েবসাইট, ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে ১৪ আগস্ট উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে গত ১৪ আগস্ট দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর একটি সংবাদের লিংক তাদের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করে।
উক্ত লিংকে প্রবেশ করে গত ১৪ আগস্ট (আপডেট ১৫ আগস্ট) “মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
এছাড়া, পত্রিকাটি তাদের ফেসবুক পেজে ১৫ আগস্ট ‘মিথ্যা প্রচারণা’ শীর্ষক একটি পোস্ট দিয়ে জানায়, ‘প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই ছবিটি নকল, আমাদের তৈরি নয়। বিভ্রান্তি এড়াতে আমাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও অনলাইনের সঙ্গে থাকুন।’
মূলত, গত ১৪ আগস্ট রাতে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদন্ড প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মারা যান। তার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে একইদিনের তারিখ উল্লেখ করে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর আদলে একটি ফটোকার্ডে ‘একাত্তরের ঘৃণ্য রাজাকার সাইদীর মৃত্যু’ শীর্ষক একটি তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রথম আলোর আদলে তৈরি উক্ত ফটোকার্ডটি প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেনি বরং ফটোকার্ডটি এডিটের মাধ্যমে তৈরি করা।
উল্লেখ্য, মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাগারে থাকার সাজা হয়েছিল দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদীর। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে মোট বিশটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এসব অভিযোগের মধ্যে ছিল ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পিরোজপুরে হত্যা, হত্যায় সহযোগিতা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ এবং ধর্মান্তরে বাধ্য করা। যে বিশটি অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল, তার মধ্যে আটটি অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। এর মধ্যে দুটো অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আপীল বিভাগ দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।
প্রসঙ্গত, পূর্বে প্রথম আলোর নকল ফটোকার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের এইচএসসিতে অটো জিপিএ-৫ দেওয়ার ভুয়া দাবি প্রচার করলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর খবরে প্রথম আলো একটি ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার করেছে শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo – Facebook Post
- Rumor Scanner’s own analysis