ড. ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হচ্ছেন দাবিতে কালবেলার সূত্রে ভুয়া তথ্য প্রচার 

সম্প্রতি, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হচ্ছেন শীর্ষক তথ্য জাতীয় দৈনিক কালবেলা’তে প্রকাশিত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

Screenshot: Crowdtangle

পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হচ্ছেন শীর্ষক তথ্য জাতীয় দৈনিক কালবেলা’তে প্রকাশিত হয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে তা সঠিক নয় বরং কালবেলা’য় এমন কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। লন্ডনভিত্তিক বাংলা সংবাদমাধ্যম সুরমা নিউজের এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ক আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কালবেলা’র ওয়েবসাইট, গেল কয়েকদিনের প্রিন্ট সংস্করণ এবং ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে ড. ইউনসূের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হওয়া সংক্রান্ত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। 

Screenshot: Kalbela Website 

পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানতে কালবেলা’র অনলাইন বিভাগের এডিটর পলাশ মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, কালবেলায় এমন কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। 

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিটির সূত্র হিসেবে কালবেলা’র নাম ব্যবহার করা হলেও সংবাদমাধ্যমটিতে এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। 

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে ফেসবুকে Abdur Rab Bhuttow নামে একটি অ্যাকাউন্টে গত ২৪ আগস্ট রাতে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

পোস্টে সুরমা নিউজ নামে লন্ডনভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমের প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত “কে হচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান?” শিরোনামের একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট যুক্ত করা হয়েছে। একইসাথে প্রতিবেদনের বিস্তারিত বর্ণনাও পোস্টের ক্যাপশনে জনাব ভুট্টো তুলে দিয়েছেন। 

Screenshot: Facebook

প্রতিবেদনটি সুরমা নিউজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে গত ২৩ আগস্ট। দেখুন এখানে। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের একটি সূত্র সুরমাকে জানিয়েছে যে, ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নাম প্রস্তাব করেছে। শেখ হাসিনা সেই সরকারে তাকে রাখার শর্তে রাজি হয়েছেন। তবে ড. ইউনুস সেই সরকারে হাসিনাকে রাখতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন।” 

সুরমা নিউজের দাবি, “বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থার একটি সূত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের সেই সূত্রকে সমর্থন করে সুরমাকে জানিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে আরও কয়েকটি নাম তারা বিবেচনা করছে। তারা সবাই সম্মানিত ব্যক্তি। এর মধ্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের নাম আছে। এই পদে টেকনোক্র্যাট এবং বর্তমানে যেসব ব্যক্তি রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন, তাদেরকে নিয়োগ করার বিষয়ে আপত্তির কথা তারা জানিয়েছে।” 

অর্থাৎ, সুরমা নিউজে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ড. ইউনূসের নাম এসেছে, যা থেকে আলোচিত দাবিটির সূত্রপাত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। 

কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দেশের একাধিক দল আন্দোলন করলেও উক্ত সরকারে কারা থাকবেন বা কে প্রধান হবেন এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দলের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্যও পাওয়া যায়নি গণমাধ্যমে।

মূলত, সম্প্রতি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হচ্ছেন দাবিতে জাতীয় দৈনিক কালবেলা’তে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। কালবেলা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, লন্ডনভিত্তিক বাংলা সংবাদমাধ্যম সুরমা নিউজে গত ২৩ আগস্ট এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে, ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছে। এই তথ্যকে কেন্দ্র করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ক আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।  

প্রসঙ্গত, পূর্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল অনুমোদন দিয়েছে শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি বানোয়াট প্রমাণ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।  

সুতরাং, ড. ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হচ্ছেন দাবিতে কালবেলার সূত্রে একটি তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img