সম্প্রতি, “ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আমার নির্বাচনী কাজে সহায়তার জন্য ২০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন আন্দালিব পার্থ, কিন্তু মনোনয়ন বাতিল হওয়াতে তিনি সেই টাকা ফেরত চাইছেন” শীর্ষক শিরোনামে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের মন্তব্য দাবিতে একটি তথ্য দৈনিক প্রথম আলোর আদলে তৈরি করা একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিরো আলমের বক্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ফটো কার্ডটি প্রথমআলো’র নয় বরং ফটোশপের সহায়তায় প্রথম আলোর আদলে তৈরি করা একটি ফটো কার্ডের মাধ্যমে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত পোস্টে প্রথম আলো’র আদলে তৈরি ফটো কার্ডটি বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায় এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ দেখানো হয়েছে ১৮ জুন ২০২৩।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, মূলধারার গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ এর ওয়েবসাইট, ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল সহ সামাজিক মাধ্যমে অন্যান্য একাউন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করেও ১৮ জুন ২০২৩ তারিখে উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, প্রথম আলো ছাড়া অন্যকোনো সংবাদমাধ্যমেও আলোচিত দাবিটির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “এ রকম কোনো খবর আমরা দিইনি। এটা নির্জলা অসত্য। অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ এমন মিথ্যা খবর আমাদের লোগো ব্যবহার করে প্রচার করেছে।”
পরবর্তীতে, আলোচিত বিষয়টিকে নিয়ে প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করা হয়।
উক্ত পোস্টের মাধ্যমে ‘প্রথম আলো’ প্রচারিত ফটো কার্ডটিকে ভুয়া সাব্যস্ত করে পাঠকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, প্রথম আলো আসন্ন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন ঘিরে হিরো আলম ও আন্দালিব পার্থকে জড়িয়ে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। এছাড়া হিরো আলম বক্তব্য ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিও কোনোপ্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্য প্রমাণ ছাড়াই প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, গত ১৮ জুন “ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আমার নির্বাচনী কাজে সহায়তার জন্য ২০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন আন্দালিব পার্থ, কিন্তু মনোনয়ন বাতিল হওয়াতে তিনি সেই টাকা ফেরত চাইছেন” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য দৈনিক প্রথম আলোর আদলে তৈরি করা একটি ফটো কার্ডের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৮ জুন ২০২৩ তারিখে কিংবা তার আগে-পরে প্রথম আলো এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। এছাড়া প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ প্রচারিত ফটো কার্ডটি প্রথম আলো’র নয় বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও প্রথম আলো’র আদলে ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার এবং সাংবাদিক রওশন হক যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গ্রেফতারের ভুয়া দাবি প্রচার করা হলে বিষয়গুলোকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচন উপলক্ষে হিরো আলমের সাথে আন্দালিব পার্থের আর্থিক লেনদেন উল্লেখ করে প্রথম আলো’র ফটো কার্ডে হিরো আলমের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo website
- Prothom Alo Facebook Page
- Prothom Alo Youtube Channel
- Prothom Alo Facebook Post
- Statement from Sazzad Sharif
- Rumor Scanner’s Own Analysis