সম্প্রতি, “আগে দৈনিক সাড়ে ৪ কেজি মাংস খাইতাম, এখন মাত্র আড়াই কেজি খাইতে পারি। পেটে মাংস না থাকলে স্বাধীনতা দিয়া কি করুম? আমাদের মাংসের স্বাধীনতা চাই।” শীর্ষক লেখা সম্বলিত একটি ডিজিটাল ব্যানার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

যা দাবি করা হচ্ছে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম আলো’র লোগোসহ একটি ডিজিটাল ব্যানারে “আগে দৈনিক সাড়ে ৪ কেজি মাংস খাইতাম, এখন মাত্র আড়াই কেজি খাইতে পারি। পেটে মাংস না থাকলে স্বাধীনতা দিয়া কি করুম? আমাদের মাংসের স্বাধীনতা চাই।” শীর্ষক বক্তব্যটি গণ অধিকার পরিষদের সহকারী আহ্বায়ক তামান্না ফেরদৌস শিখা’র বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ডিজিটাল ব্যানারটি প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়নি এবং বক্তব্যটিও গণ অধিকার পরিষদের নেত্রী তামান্না ফেরদৌস শিখার নয় বরং কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত ব্যানারটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়া, প্রথম আলোর ওয়েবসাইট সহ সামাজিক মাধ্যমের একাউন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করেও এ সংক্রান্ত কোনো ছবি বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গুজবের সূত্রপাত
এপ্রিল তারিখে “আহারে! না খাইতে খাইতে পাডা-পাডি দুইটা শুকাইয়া একবারে কাঠ হয়ে গেছে!” শিরোনামে প্রকাশিত ব্যানারটি খুঁজে পাওয়া যায়।

পোস্টটির কমেন্ট বক্স বিশ্লেষণ করে গণ অধিকার পরিষদের নেত্রী ‘Tamanna Ferdous Shikha’ এর একটি কমেন্ট দেখতে পাওয়া যায়।

কমেন্টে তামান্না ফেরদৌস শিখা দাবি করেছেন যে, ‘তার একটি বক্তব্য বিকৃত করে প্রথম আলো’র লোগো ব্যবহার করে আলোচিত ব্যানারটি সম্পাদনা করা হয়েছে।’ পাশাপাশি, তামান্না ফেরদৌস শিখা তার কমেন্টে একটি ফেসবুক পোস্টের লিংক ও সংযুক্ত করে দেন।
উক্ত লিংকে প্রবেশ করলে গত ২৯ মার্চ তারিখে “আমি তামান্না ফেরদৌস শিখা বলছি, “আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো৷”” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফেসবুক পোস্ট দেখতে পাওয়া যায়।

এছাড়া, তামান্না ফেরদৌস শিখা’র ফেসবুক একাউন্টে প্রচারিত ছবিগুলোর মধ্যে আলোচিত ডিজিটাল ব্যানারে থাকা ছবিটিরও সন্ধান পাওয়া যায়, যা ২০২২ সালের ২২ আগষ্ট তারিখে ‘আ… টি টি টি টি……’ শিরোনামে আপলোড করা হয়েছিলো।

Screenshot from Facebook | Tamanna Ferdous Shikha
তাছাড়া, প্রথম আলো অনুরূপ ডিজিটাল ব্যানারে কোনো ব্যক্তির ছবিসহ মন্তব্য/বক্তব্য এবং তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত যে ডিজাইন ব্যবহার করে থাকে, গণ অধিকার পরিষদের নেত্রী তামান্না শিখার বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত ব্যানারে কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।

মূলত, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর অনলাইনে ‘আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ব্যানার প্রকাশ করা হলে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। প্রথম আলো’র ডিজিটাল ব্যানারটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষিতে গণ অধিকার পরিষদের নেত্রী তামান্না ফেরদৌস শিখা তার ফেসবুক একাউন্টে একটি উদ্ধৃতি প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে, তামান্না শিখার উদ্ধৃতিটি বিকৃত করে প্রথম আলো’র লোগো ব্যবহার করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একইভাবে দ্য ডেইলি স্টার এর সম্পাদক মাহফুজ আনামের নামে ভুয়া বক্তব্য প্রচার করা হলে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, প্রথম আলোর ডিজিটাল ব্যানারে গণ অধিকার পরিষদের নেত্রী তামান্না ফেরদৌস শিখার বক্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s own analysis.
- Facebook Post : Tamanna Ferdous Shikha
- Prothom Alo : Photos
- Rumor Scanner : Fact-check