সম্প্রতি, দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনামের নাম ও ছবি ব্যবহার করে তার দেয়া বক্তব্য দাবি করে তিনটি ডিজিটাল ব্যানার ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম গত ৭ এপ্রিল প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক কলামে নিম্নোক্ত মন্তব্য করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
মন্তব্য ১: “স্বাধীনতার পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে তারেক জিয়াকে দেশে এনে রাজনীতি করতে দেওয়া প্রয়োজন।”
মন্তব্য ২: “বিএনপির সিনিয়র নেতারাই কেবল প্রথম আলোকে বাঁচাতে পারে।”
মন্তব্য ৩: “সাংবাদিকদের মনে প্রশ্ন ওঠা উচিৎ, জনমানুষের কাছে ধিকৃত ও বর্জনযোগ্য পলাতক তারেক জিয়াকে দেশে আনার জন্য প্রথম আলো সম্পাদক কেন এত উঠেপড়ে লাগলেন?”
ফেসবুকে প্রচারিত মন্তব্য-১ সম্পর্কিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
আর্কাইভ দেখুন, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফেসবুকে প্রচারিত মন্তব্য-২ সম্পর্কিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
আর্কাইভ এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফেসবুকে প্রচারিত মন্তব্য-৩ সম্পর্কিত একটি পোস্ট এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এর নামে প্রচারিত উল্লেখিত বক্তব্যগুলো তিনি দেননি বরং তার প্রকৃত বক্তব্য সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানারকে বিকৃত করে ভুয়া বক্তব্য বসিয়ে তার নামে প্রচার করা হয়েছে।
ব্যানারগুলোতে প্রথম আলোর লোগো থাকায় প্রথমেই প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে অনুসন্ধান করা হয় এবং প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একই জাতীয় কিছু ডিজিটাল ব্যানার খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায় ৭ ও ৮ এপ্রিল মাহফুজ আনাম এর বক্তব্য নিয়ে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ডিজিটাল ব্যানার সংগ্রহ করে সেখানে থাকা প্রকৃত বক্তব্যকে বিকৃত করে ভিন্ন বক্তব্য বসিয়ে মাহফুজ আনামের বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
১ম বক্তব্যের সত্যতা যাচাই
মাহফুজ আনামের নামে প্রচারিত একটি বক্তব্য হলো– “স্বাধীনতার পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে তারেক জিয়াকে দেশে এনে রাজনীতি করতে দেওয়া প্রয়োজন।”এ বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ের অনুসন্ধানে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে গত ৭ এপ্রিল প্রকাশিত একটি পোস্টে মূল ব্যানারটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার। দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের উক্তি সম্বলিত সেই ডিজিটাল ব্যানারে তাকে উদ্ধৃতি করে লেখা হয়, “স্বাধীনতার পূর্ন সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে একটি সমাজে মুক্ত সাংবাদিকতা প্রয়োজন।”
মাহফুজ আনাম এর এই বক্তব্যকে বিকৃত করে বদলিয়ে “স্বাধীনতার পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে তারেক জিয়াকে দেশে এনে রাজনীতি করতে দেওয়া প্রয়োজন।” শীর্ষক বক্তব্যটি প্রচার করা হয়েছে।
দ্বিতীয় বক্তব্যের সত্যতা যাচাই
মাহফুজ আনাম এর নামে প্রচারিত আরেকটি বক্তব্য হলো– “বিএনপির সিনিয়র নেতারাই কেবল প্রথম আলোকে বাঁচাতে পারে।”
এ বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ের অনুসন্ধানে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে গত ৮ এপ্রিল প্রকাশিত অপর একটি পোস্টে এডিটেড ডিজিটাল ব্যানারটির মূল ছবি ও বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। মাহফুজ আনামের উক্তি সম্বলিত সেই প্রকৃত ডিজিটাল ব্যানারে লেখা ছিলো– “সাংবাদিকেরাই কেবল সাংবাদিকতাকে বাঁচাতে পারে”। তার করা এই বক্তব্য সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানারকে বিকৃত করে “বিএনপির সিনিয়র নেতারাই কেবল প্রথম আলোকে বাঁচাতে পারে” শিরোনামের ভুয়া বক্তব্যটি প্রচার করা হয়েছে।
তৃতীয় বক্তব্যের সত্যতা যাচাই
দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এর বক্তব্য হিসেবে প্রচারিত অপর বক্তব্যটি হলো– “সাংবাদিকদের মনে প্রশ্ন ওঠা উচিৎ, জনমানুষের কাছে ধিকৃত ও বর্জনযোগ্য পলাতক তারেক জিয়াকে দেশে আনার জন্য প্রথম আলো সম্পাদক কেন এত উঠেপড়ে লাগলেন?”
উক্ত বক্তব্যের সত্যতা অনুসন্ধানে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে ৮ এপ্রিল প্রকাশিত অন্য একটি পোস্টে এডিটেড ডিজিটাল ব্যানারটির মূল ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেই ডিজিটাল ব্যানারে মাহফুজ আনাম যা বলেছেন তা হলো– “সাংবাদিকদের মনে প্রশ্ন ওঠা উচিত, জনমানুষের কাছে সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য বাংলা দৈনিকটিকে হেয় করার জন্য আমাদেরই অনেকে কেন এত উঠেপড়ে লাগলেন?” তার এই বক্তব্যটিই বিকৃত করে এক্ষেত্রে “সাংবাদিকদের মনে প্রশ্ন ওঠা উচিত, জনমানুষের কাছে ধিকৃত ও বর্জনযোগ্য পলাতক তারেক জিয়াকে দেশে আনার জন্য প্রথম আলো সম্পাদক কেন এতো উঠেপড়ে লাগলেন” এ পরিবর্তন করে প্রচার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে প্রথম আলোতে গত ৮ এপ্রিল প্রকাশিত “সাংবাদিকেরাই কেবল সাংবাদিকতাকে বাঁচাতে পারেন” শিরোনামে মাহফুজ আনামের লেখা একটি কলাম খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার। সেই কলামে মাহফুজ আনামের দেয়া প্রকৃত বক্তব্যগুলো পাওয়া যায় এবং এর মাধ্যমে আরও নিশ্চিত হওয়া যায় যে মাহফুজ আনামের বক্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত উল্লেখিত বক্তব্য তিনটি ভুয়া।
পাশাপাশি ৭ এপ্রিল দ্য ডেইলি স্টার বাংলায় প্রকাশিত মাহফুজ আনামের লেখা একই কলাম খুঁজে পাওয়া যায়। সেই কলামেও মাহফুজ আনামের বক্তব্যের ভিন্নতা পাওয়া যায়নি।
মূলত, প্রথম আলোর সাংবাদিক গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৭ এপ্রিল দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনামের লেখা “সাংবাদিকেরাই কেবল সাংবাদিকতাকে বাঁচাতে পারেন” শীর্ষক একটি কলামের কয়েকটি বক্তব্য প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেজে ডিজিটাল ব্যানার আকারে প্রকাশ করে। মাহফুজ আনাম এর বক্তব্যের ওপর প্রকাশিত প্রথম আলোর সেই ডিজিটাল ব্যানার তিনটিকেই মূলত বিকৃত করে সেখানে ভিন্ন বক্তব্য বসিয়ে মাহফুজ আনামের নামে ভুয়া বক্তব্যগুলো প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনামের নামে ফেসবুকে প্রচারিত উল্লেখিত বক্তব্য তিনটি ভুয়া।
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo Facebook Page
- Prothom Alo: সাংবাদিকেরাই কেবল সাংবাদিকতাকে বাঁচাতে পারেন
- The Daily Star Bangla: সাংবাদিকেরাই কেবল সাংবাদিকতাকে বাঁচাতে পারেন