সম্প্রতি, “বেগম খালেদা জিয়া অনেক অসুস্থ, সকলে তার জন্য দোয়া করবেন,, হে আল্লাহ নেত্রী কে সুস্থ করে দিন” শীর্ষক শিরোনামে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা একজন নারীর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নয় বরং এটি ভিন্ন একজন নারীর পুরোনো ছবি।
মূলত, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জালাল উদ্দীন ওয়াসিম এবং মৌ সামারার অসুস্থ মাকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইশরাক হোসেন দেখতে গেলে সেই সময়ের কিছু ছবি তারা তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেন। তবে সম্প্রতি, জালাল উদ্দীন ওয়াসিম এবং মৌ সামারার অসুস্থ মায়ের হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থার একটি ছবি বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থ অবস্থার ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। যার ফলে আলোচিত ছবিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস ও নানা শারীরিক জটিলতার কারণে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসারত আছেন।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও একই ছবিটি খালেদা জিয়ার অসুস্থ অবস্থার ছবি দাবিতে ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি কুয়েতে বিয়ের তিন মিনিট পরই স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়েছে, কুয়েতের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে স্ত্রী তার স্বামীকে নিয়ে মজা করছিলেন। যেটা অনেকটা রোস্টিংয়ের মতো ছিল। অনুষ্ঠানে স্বামী মঞ্চে উঠতে গিয়ে পড়ে যান। এতে স্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে স্টুপিড বলেন। আর তাতে পাত্র চটে গিয়ে পাত্রীকে ডিভোর্স দেন। বিয়ের তিন মিনিটের মাথায় এই ঘটনা ঘটে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনগুলোতে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুয়েতে বিয়ের তিন মিনিট পরই স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং একটি অনলাইন পোর্টালের বরাতে ছড়িয়ে পড়া সাড়ে চার বছরেরও বেশি পুরোনো সংবাদকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অধিকাংশ প্রতিবেদনে সংবাদটির সূত্র হিসেবে ডেইলি মিররের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড পত্রিকা The Mirror এর ওয়েবসাইটে গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি খুঁজে পেয়েছি আমরা। তবে মিররের প্রতিবেদনে এই ঘটনা কবে ঘটেছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Mirror
মিরর তাদের প্রতিবেদনের সূত্র হিসেবে Q8 News নামক একটি গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করেছে।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে, কিওয়ার্ড সার্চ করতে গিয়ে আমরা মিররেরই ওয়েবসাইটে একই সংবাদ ২০১৯ সালের ০৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হতে দেখেছি।
দুটো প্রতিবেদনেরই ভাষা, তথ্য এবং শব্দচয়নে মিল পাওয়া যায়। পূর্বের প্রতিবেদনেও Q8 News নামক গণমাধ্যমটিকেই সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
Screenshot: Google
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কুয়েত ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল Kuwait Daily News (Q8 News) এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Kuwait Daily News
এক প্যারার এই সংবাদ প্রতিবেদনে ডিভোর্সের কারণ বলা হলেও পাত্র পাত্রীর নাম এমনকি কুয়েতের ঠিক কোথায় ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি এ সংক্রান্ত কোনো ছবি প্রকাশ না করে প্রতীকী একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
এই প্রতিবেদনের বরাতেই সেসময় মিরর ছাড়াও আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমে (Daily Mail, India Times, Metro, The Sun) সংবাদ প্রকাশিত হয়।
কিন্তু Kuwait Daily News ছাড়া আর কোনো সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত বাড়তি তথ্যের খোঁজ মেলেনি। তাই সংবাদটির সত্যতা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এটা নিশ্চিত যে, সংবাদটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
মূলত, সম্প্রতি দেশের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, কুয়েতে বিয়ের তিন মিনিট পরই স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে স্বামী মঞ্চে উঠতে গিয়ে পড়ে গেলে স্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে স্টুপিড বলেন। আর তাতে পাত্র চটে গিয়ে পাত্রীকে ডিভোর্স দেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সংবাদটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। ২০১৯ সালে কুয়েতের একটি অনলাইন পোর্টালের বরাতে সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ার পর সম্প্রতি এটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিররে প্রকাশিত হয়। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও সংবাদটি ঘটনার সময় যাচাই ব্যতিত সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, বিয়ের তিন মিনিট পরই ডিভোর্সের সাড়ে চার বছরের পুরোনো সংবাদকে সাম্প্রতিক দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “রাণী এলিজাবেথকে গার্ড অফ অনার দিচ্ছে আরএসএসের ঊর্দি-পরিহিত সেবকরা লাঠি হাতে” শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া শুধুমাত্র “গোটা দেশ যখন ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধ করছিল, কিছু বিশ্বাসঘাতক ইংল্যান্ডের রানীকে স্যালুট করছিল, শোনা যায় তাদের বংশধররা নিজেদের দেশ প্রেমিক বলে” শীর্ষক দাবিতেও একই ছবি প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক ও আধাসামরিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সদস্যদের গার্ড অফ অনার দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এডিটেড। প্রকৃতপক্ষে, দুটি ভিন্ন ঘটনার ছবিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একত্রে করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ছবি এক প্রান্ত যাচাই
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া আলোচিত ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘Deccan Chronicle’ এ ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি “Staff can take part in apolitical activities of RSS: Chhattisgarh govt” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক আধাসামরিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সদস্যের।
ছবি অপর প্রান্ত যাচাই
উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবির অপর অংশের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘CNN’ এ ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল “Queen Elizabeth’s guide to traveling the globe” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত একটি ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ১৯৫৬ সালে ব্রিটেনের রানি ২য় এলিজাবেথ কমনওয়েলথ টুরে নাইজেরিয়ায় যান এবং রয়্যাল ওয়েস্ট আফ্রিকান ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের সৈন্যদের পরিদর্শন করেন।
অর্থাৎ, ভিন্ন দুই ঘটনার দুটি ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে একই ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, ১৯৫৬ সালে ব্রিটেনের রানি ২য় এলিজাবেথ কমনওয়েলথ টুরে নাইজেরিয়ায় যান এবং রয়্যাল ওয়েস্ট আফ্রিকান ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের সৈন্যদের পরিদর্শন করেন। সেই পরিদর্শনের সময়ে ধারণকৃত একটি ছবি থেকে রয়্যাল ওয়েস্ট আফ্রিকান ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের সৈন্যদের জায়গায় ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক আধাসামরিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সদস্যের ভিন্ন একটি ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে সম্প্রতি ফেসবুকে ‘রানি এলিজাবেথকে গার্ড অফ অনার দিচ্ছে আরএসএসের ঊর্দি-পরিহিত সেবকরা লাঠি হাতে’ শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। যার ফলে আলোচিত ছবিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ১৯৬১ সালের ঢাকা আগমনের তারিখ নিয়ে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক ও আধাসামরিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সদস্যরা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে গার্ড অফ অনার দিয়েছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, Marzuk Russell নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ঈদে মিলাদুন্নবী এবং ক্রিকেট খেলা নিয়ে দেওয়া একটি পোস্ট অভিনেতা মারজুক রাসেলের আসল পোস্ট দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
Marzuk Russell নামের পেজটির পোস্টে বলা হয়েছে, “অনেক নামধারী শায়েখ কে দেখি ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে উল্টা পাল্টা ফতোয়া দিতে কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন শায়েখ কে দেখলাম না ভোট চুরি হালাল নাকি হারাম এবং রোজ কিয়ামতে ভোট চুরির শাস্তি কি হবে এইটা নিয়ে বয়ান দিতে। কারণ সবাই পিঠ বাচিয়ে সংসার চালাইতে চায়।
যখন কোনো জুয়াডি ক্রিকেটার ছোট ভাই বলে ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে সমস্ত অনুষ্ঠান বিদাত তখন জানতে ইচ্ছে করে ক্রিকেট খেলা এইটা আবার কোন ধরনের নফল ইবাদত।”
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত এই পোস্টটি অভিনেতা মারজুক রাসেলের নয় বরং তার নামে পরিচালিত একটি ফ্যান পেজের মাধ্যমে এই পোস্টটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অভিনেতা মারজুক রাসেল বর্তমানে কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা পেজ ব্যবহার করেন না।
কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Marzuk Russell নামের ফেসবুক পেজটিতে আলোচিত পোস্টটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পেজটির বায়ো এবং ডিটেইলস সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, এটি একটি ফ্যান পেজ।
Screenshot: Facebook
এছাড়াও, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম আরটিভি’র ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ‘মারজুক রাসেলের ফেসবুক আইডি উধাও’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেসময় অভিনেতা মারজুক রাসেলের ফেসবুক আইডি ডিজেবল হয়ে গিয়েছিল।
পরবর্তীতে, গণমাধ্যম কালের কণ্ঠের অনলাইন সংস্করণে গত ১৮ আগস্ট ‘ফেসবুকে ‘Marzuk Russell’, ‘Marzuk Sha’r Mazar’ নামে আমার কোনো আইডি বা পেইজ নাই : মারজুক রাসেল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফেসবুকে মারজুকের নামে কোনো পেইজ বা অ্যাকাউন্ট আপাতত নেই। তার নামে ফেসবুকে সক্রিয় একাধিক ফেইক পেইজ, আইডির নিয়মিত পোস্টে সাধারণ ভক্তরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
এই প্রসঙ্গে মারজুক রাসেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা আমাক দীর্ঘদিন ফলো করে, যারা আমাকে চেনে, যারা আমার লেখা পড়ে, তারা জানে সেসব আমার নয়। হ্যাঁ, অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছে এটাও আমি জানি। তাঁদের বলবো বিভ্রান্ত হবেন না।’
তিনি আরও বলেন,’ত্যালফ্যাল ছাড়া যে রান্ধে―’ ‘হাওয়া দেখি, বাতাস খাই’, ‘দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর’, ‘পাশা ভাই’, ‘মারজুক রাসেলের জিনিস―গোল্লা’― এসব আমার বিষয়ভিত্তিক ইরেগুলার পেইজ। কিন্তু আমার নামে একাধিক ফেইক প্রোফাইল বা পেইজ, ফ্যান পেইজ খুলে কারা চালাচ্ছে আমি জানি না। মৌখিকভাবে সাইবার ক্রাইম বিভাগে বিষয়টি জানিয়ে রেখেছি।’
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, অভিনেতা মারজুক রাসেলের বর্তমানে কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা পেজ সক্রিয় নেই এবং তার নামে পরিচালিত অ্যাকাউন্ট এবং পেজগুলো ফেইক।
মূলত, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঈদে মিলাদুন্নবী এবং ক্রিকেট খেলা নিয়ে অভিনেতা মারজুক রাসেলের নামে পরিচালিত একটি ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সেই পোস্টটিকে মারজুক রাসেলের আসল পোস্ট ভেবে নেটিজেনরা সেটি শেয়ার করেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত এই পোস্টটি যে পেজ থেকে প্রচার করা হয়েছে সেটি মারজুক রাসেলের আসল পেজ নয় বরং সেটি তার নামে পরিচালিত একটি ফ্যান পেজ। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমানে অভিনেতা মারজুক রাসেল কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা পেজ ব্যবহার করেন না।
উল্লেখ্য, পূর্বেও অভিনেত্রী দিলারা জামানের নামে ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, অভিনেতা মারজুক রাসেলের নামে পরিচালিত ফ্যান পেজ থেকে ধর্ম ও ক্রিকেট বিষয়ক একটি পোস্ট মারজুক রাসেলের আসল ফেসবুক পোস্ট দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার ঘটনায় প্রচারিত ছয়টি ছবি উক্ত ঘটনার নয় বরং পুরোনো ও ভিন্ন স্থানের ছবিকে উক্ত ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান Getty Images এর ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Getty Images
গেটি ইমেজ বলছে, গত ১০ জুলাই ভারী বৃষ্টি থেকে সৃষ্ট বন্যায় যুক্তরাষ্ট্রের Ottauquechee River এর দৃশ্য এটি।
একই স্থানে সেসময়ে ধারণকৃত একটি ভিডিও দেখুন এখানে।
অর্থাৎ, ছবিটি লিবিয়ার নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের।
ছবি যাচাই ২
Screenshot: Orthosuchok
লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার ঘটনায় এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অর্থসূচক।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম The Guardian এর ওয়েবসাইটে গত ০৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: The Guardian
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সেসময় হংকংয়ে ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার দৃশ্য এটি।
একই ছবি পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম The Dawn এ দেখুন এখানে।
অর্থাৎ, ছবিটি লিবিয়ার নয়, বরং হংকংয়ের।
ছবি যাচাই ৩
Screenshot: Inqilab
লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার ঘটনায় এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইনকিলাব।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা Reuters এর ওয়েবসাইটে গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Reuters
রয়টার্স বলছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর তোলা এই ছবিতে সেসময় মরক্কোর ভূমিকম্পের ক্ষতিগ্রস্ত একটি এলাকার দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।
অর্থাৎ, ছবিটি লিবিয়ার নয়, বরং মরক্কোর।
ছবি যাচাই ৪
Screenshot: Karatoa
লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার ঘটনায় এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক করতোয়া।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে এক্স এ (সাবেক টুইটার) ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি টুইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: X
ছবিটির মূল সূত্র খুঁজে পাওয়া না গেলেও এটা নিশ্চিত যে, এটি লিবিয়ার সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনার দৃশ্য নয়।
ছবি যাচাই ৫
Screenshot: Daily Observer
লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার ঘটনায় এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডেইলি অবজারভার।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Al Jazeera এর ওয়েবসাইটে গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Al Jazeera
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যাচ্ছে, রয়টার্সের তোলা ছবিটি গ্রিসের বন্যা কবলিত একটি এলাকার।
অর্থাৎ, ছবিটি লিবিয়ার নয়, বরং গ্রিসের।
ছবি যাচাই ৬
Screenshot: Protidiner Sangbad
লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার ঘটনায় এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রতিদিনের সংবাদ।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতের সংবাদমাধ্যম Hindustan Times এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২৮ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Hindustan Times
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সে বছরের ২৭ জুলাই ভারতের বিহারের গোপালগঞ্জ জেলায় ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টির দৃশ্য এটি।
অর্থাৎ, ছবিটি লিবিয়ার নয়, বরং ভারতের।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহীত এবং কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে বিদেশি সংবাদ সংস্থার নাম উল্লেখ করেছে। আবার কোনোটিতে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহীত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্য উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিগুলো চীনের গত জুলাইয়ের বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, সম্প্রতি লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনায় দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লিবিয়ার ঘটনার দাবিতে ছয়টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিগুলো উক্ত ঘটনার নয়। ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ছবিকে লিবিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনার খবরে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো লিবিয়ার সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
সুতরাং, লিবিয়ায় সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছয়টি পুরোনো ও ভিন্ন স্থানের ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
একই ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো চীনের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার নয় বরং পূর্বের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ছবিকে চীনের সাম্প্রতিক ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা Reuters এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২২ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Reuters
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২০ জুলাই চীনের হেনান প্রদেশের ঝেংঝোতে ভারী বৃষ্টিপাতে বাসিন্দাদের দড়ি দিয়ে প্লাবিত রাস্তা পার হওয়ার সময় তোলা হয় ছবিটি।
অর্থাৎ, ছবিটি দুই বছর আগের তোলা।
ছবি যাচাই ২
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইত্তেফাক।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে রয়টার্স এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২২ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Reuters
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২১ জুলাই চীনের হেনান প্রদেশের ঝেংঝুতে ভারী বৃষ্টিপাতের পর প্লাবিত রাস্তার দৃশ্য এটি।
অর্থাৎ, এই ছবিটিও দুই বছর আগের।
ছবি যাচাই ৩
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বণিক বার্তা।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে রয়টার্স এর ওয়েবসাইটে “What are China’s ‘sponge cities’ and why aren’t they stopping floods?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Reuters
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের জুলাই মাসে চীনের জিয়াংসি প্রদেশের পোয়াং কাউন্টিতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভবন এবং কৃষিজমি আংশিকভাবে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য এটি।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি’র ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ৯ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: AP
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ৪ জুন চীনের হুনান প্রদেশের ফেং হুয়াং শহরের প্রাচীন শহর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ার দৃশ্য এটি।
অর্থাৎ, ছবিটি এক বছরেরও বেশি সময় পূর্বের।
ছবি যাচাই ৫
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক জনকণ্ঠ।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম The Times Of India এর ওয়েবসাইটে “At least 792 people reported dead, missing in China due to natural calamities this year” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: The Times Of India
ছবিটি The Times Of India এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর প্রকাশ করা হয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এ ২০২১ সালের ২১ জুলাই “Inside the flooded China subway, where water trapped commuters and killed 12” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: The Washington Post
ছবিটিরক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২১ জুলাই চীনের মধ্য হেনান প্রদেশের ঝেংঝু শহরে ভারী বৃষ্টিপাতের পর বন্যার পানিতে গাড়ি ভেসে থাকার দৃশ্য এটি।
অর্থাৎ, ছবিটি অন্তত দুই বছরের পুরোনো।
ছবি যাচাই ৭
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জুম বাংলা।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা AP এর ওয়েবসাইটে “South China floods force tens of thousands to evacuate” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: AP
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ২১ জুন মধ্য চীনের জিয়াংসি প্রদেশের শাংগ্রাওতে প্লাবিত রেলপথের দৃশ্য এটি।
অর্থাৎ, এই ছবিটিও সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া বন্যার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম Al Jazeera এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Al Jazeera
Al Jazeera এর ওয়েবসাইটে ছবিটি ২০২১ সালেের ২১ জুলাই প্রকাশিত হয় এবং ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, চীনের হেনান প্রদেশের ঝেংঝুতে প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্যে মানুষ বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য এটি৷
অর্থাৎ, এই ছবিটিও পুরোনো।
ছবি যাচাই ৯
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সময়ের আলো।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে মালয়েশিয়া ভিত্তিক গণমাধ্যম The Star এ “Further extreme weather predicted across China amid early flood season” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: The Star
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল চীনের পূর্ব ফুজিয়ান প্রদেশের জিয়ামেনে ভারী বৃষ্টিপাতের পর বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে উদ্ধারকারীরা। সেই সময়কার দৃষ্টি এটি।
অর্থাৎ, ছবিটি সম্প্রতি আগস্টে মাসের কোনো বন্যা ঘটনার নয় বরং ছবিটি গত এপ্রিল মাসের বন্যার ঘটনার।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহীত এবং বিদেশি গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহীত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্য উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিগুলো চীনের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, গত আগস্ট মাসে চীনে কয়েকটি বন্যার ঘটনায় দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে চীনের ঘটনার দাবিতে নয়টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিগুলো উক্ত ঘটনার নয়। ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবিকে চীনের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার খবরে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো চীনের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
সুতরাং, চীনের সাম্প্রতিক কয়েকটি বন্যার ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একাধিক পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মারা গেছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মারা যাননি বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখিয়ে বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। দুপুরে পুলিশের এক সাব ইন্সপেক্টর তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।’
অডিও যাচাই
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটির অডিও অংশে বলা ভয়েসের সাথে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে চলতি বছরের ২৯ জুন ভারতের ওড়িশার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিহতের বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদপাঠের প্রথম ৯ সেকেন্ডের অংশের মিল পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ভিন্ন ঘটনার ভিডিওতে যমুনা টিভির এই প্রতিবেদনের একটি অংশের অডিও সংযুক্ত করা হয়েছে। ভিডিওতে লোকসমাগমের দৃশ্যটি কখন কোথায় ধারণ করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এটা নিশ্চিত যে উক্ত লোকসমাগমের ভিডিওর সাথে প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়া, অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে এই দাবিটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা সংস্করণে গত ২২ সেপ্টেম্বর ‘ইউএনজিএ-তে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুরে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ভাষণে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উক্ত ভাষণের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: BTV YouTube
পরবর্তীতে, ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে আজ ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রী এবং তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Bangladesh Awami League Facebook Page
ছবিটির বিস্তারিত বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের বাগানে উৎসর্গীকৃত বেঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সুযোগ্য কন্যা ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।’
তাছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে আজ ২৪ সেপ্টেম্বর ‘ওয়াশিংটন ডিসি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশন এবং অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের পার্শ্ব ও দ্বিপক্ষীয় অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌছান। এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করবেন এবং ৩ অক্টোবর পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থান করবেন। সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী দেশের উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করবেন। আগামী ৪ অক্টোবর তার ঢাকায় পৌছানোর কথা রয়েছে।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মারা গেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচারের প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিটি ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট। প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্থ এবং জীবিত আছেন। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্রাজিলিয়ান ফরওয়ার্ড নেইমার দ্য সিলভা সান্তোস জুনিয়রের সৌদি আরবের বাড়ি দাবিতে যে ছবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে সেগুলো বাস্তব নয় বরং ছবিগুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি।
প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, ইনস্টাগ্রাম ইন্টেরিয়র পেজ ম্যানসিওনিস্টি তাদের এআই দলকে নেইমারের জন্য ১৯৫ মিলিয়ন ডলারের একটি বাড়ির কনসেপ্ট ডিজাইন করার জন্য বলে। এবং ডিজাইনাররা এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এর মাধ্যমে বাড়ির ডিজাইন তৈরি করে।
উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ছবিগুলোর সাথে ফেসবুকে প্রচারিত ছবিগুলোর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ইনস্টাগ্রাম পোস্টটিতে দেখা যায়, তারা ছবির কৃতজ্ঞতায় এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দলটির কথা উল্লেখ করে।
অর্থাৎ এআই দিয়ে নির্মিত ছবিগুলোকে নেইমারের সৌদি আরবের বাড়ির প্রকৃত নকশার ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া ‘SupercarBlondie’ নামক একই ওয়েবসাইটে গত ১ সেপ্টেম্বর “Neymar Jr has $50 million concept mansion designed following his huge contract signing” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘দুই বছরের চুক্তিতে সৌদির আল হিলালে যোগ দিবেন নেইমার। চুক্তির সঙ্গে রয়েছে একগুচ্ছ সুযোগ সুবিধাও। এর মধ্যে রয়েছে একটি বিলাসবহুল বাড়ির কথা। নেইমার কি ইতোমধ্যে তৈরি করা বাড়িতেই চলে যাবেন নাকি নিজেই ডিজাইন করবেন তার বাড়ি৷’
উক্ত প্রতিবেদনে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নেইমারের জন্য এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি করা কাল্পনিক কাস্টমাইজ বাড়ির ডিজাইন করা কিছু ছবি যুক্ত করা হয়। এবং বলা হয় ‘houses’ নামক একটি ইনস্টাগ্রাম পেজ এর এআই দলের একজন ডিজাইনার তার জন্য একটি কাল্পনিক বাড়ির ডিজাইন তৈরি করেছিলো।
মূলত, গত ১৫ আগস্ট সৌদি প্রো লিগের আল হিলাল ক্লাবের সাথে দুই বছরের চুক্তিতে সাক্ষর করেন নেইমার। এর আগে ফরাসি ক্লাব পিএসজির হয়ে খেলতেন ব্রাজেলিয়ান এই ফরোয়ার্ড। আল হিলালের সাথে দুই বছরের এই চুক্তিতে বেতনবাবদ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার পাশাপাশি কর্মচারীসহ থাকছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি এবং প্রাইভেট বিমানের সুবিধা। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সৌদি আরবে নেইমারের বাড়ির ডিজাইন দাবিতে কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায় ছবিগুলো মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি।
সুতরাং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা তৈরি বাড়ির ডিজাইন এর বেশ কিছু ছবিকে নেইমারের সৌদি আরবের বাড়ির ডিজাইন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেছেন শীর্ষক দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাপশনে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মারা যাননি বরং তার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তোলা একটি পুরোনো ছবি জুড়ে দিয়েকোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবির ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
টিকটকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে প্রদর্শিত খালেদা জিয়ার ছবিটির উৎস যাচাইয়ের জন্য রিভার্স সার্চের মাধ্যমে দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ০৯ মে “২৭ দিন পর করোনামুক্ত খালেদা জিয়া” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
এছাড়া, ২০২১ সালে একই বিষয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও এই ছবিটি পাওয়া যায়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন বাংলাদেশ প্রতিদিন, ঢাকা ট্রিবিউন।
অর্থাৎ, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, এটি ২০২১ সালে খালেদা করোনা আক্রান্ত হওয়ার সময়ে চিকিৎসাধী অবস্থান তোলা ছবি। উক্ত ছবির সাথে খালেদা জিয়ার মৃত্যু সম্পর্কিত তথ্যের কোনো সম্পর্ক নেই।
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ওয়েবসাইট, অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং এক্স (সাবেক টুইটার) পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে, বিএনপির ওয়েবসাইট, অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং এক্সে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশীয় গণমাধ্যম বা অন্যকোনো সূত্রে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক ‘যুগান্তর’ এ গত ২২ সেপ্টেম্বর “নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে বেগম জিয়ার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে স্বাস্থ্যের অবনতি হলে পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ফুসফুস থেকে পানি অপসারণ করে কিছুক্ষণ পর আবারও কেবিনে নেওয়া হয়। এরপর বেগম জিয়াকে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
অর্থাৎ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মারা যাননি। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসারত আছেন।
মূলত, গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। এরপর বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে ১৮ তারিখে আবার কেবিনে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে, গত ২২ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে বেগম জিয়ার শ্বাসকষ্টের কারণে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। ফুসফুস থেকে পানি অপসারণ করে কিছুক্ষণ পর আবারও কেবিনে নেওয়া হলে বেগম জিয়াকে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তবে, সম্প্রতি খালেদা জিয়া মারা গিয়েছেন দাবিতে তাঁর ২০২১ সালে হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মূহুর্তে তোলা পুরোনো ছবি সংযুক্ত করে তৈরি একটি ভিডিও টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বে প্রথম আলো’র সংবাদ বিকৃত করে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর গুজব প্রচার করা হলে বিষয়টি শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরের মার্কিন ভিসা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বরং কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই নুরুল হক নুরের নামে পরিচালিত একটি ফেসবুক পেজের এক পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ারের মাধ্যমে এই দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, Nurul Haque Nur নামের একটি ফেসবুক পেজের পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে নুরুল হক নুরের মার্কিন ভিসা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি বলা হয়।
Screenshot: Facebook
নুরুল হক নুরের নামে পরিচালিত ফেসবুক পেজের পোস্টের স্ক্রিনশটটিতে বলা হয়েছে, “আমাকে কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো বুঝতে পারলাম না। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, এটাই বলেছিলাম। তাতেই আমার ভিসা নিষিদ্ধ করলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আসলে মাফিয়া সরকারের মত যুক্তরাষ্ট্রও অন্ধ হয়ে বসে আছে। যতই নিষেধাজ্ঞা আসুক, আমাকে কেউ থামাতে পারবে না। ষোলো কোটি জনতা আমার পাশে আছে।”
তবে স্ক্রিনশটে প্রদর্শিত একই প্রোফাইল পিকচার সম্বলিত Nurul Haque Nur নামের ফেসবুকে পেজে নুরুল হক নুরের মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে এই পেজটিতে বিভিন্ন ব্যক্তিদের ওপর সাম্প্রতিক মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Nurul Haque Nur Facebook
উক্ত পোস্টটিতেও নুরুল হক নুরের মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, কি ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে গণমাধ্যম বা অন্যকোনো সূত্রে নুরুল হক নুরের মার্কিন ভিসা নিষিদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞার দাবিটির কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে গত ২২ সেপ্টেম্বর ‘ভিসা নীতির প্রয়োগ নিয়ে ডেইলি স্টারকে যা বললেন ডোনাল্ড লু’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এর সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, ভিসা নীতির আওতায় যাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হবে না। কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যেকোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য।
Screenshot: The Daily Star
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরের মার্কিন ভিসা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।
মূলত, গত ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশি কিছু নাগরিকের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানানো হয়। এর পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য প্রচারের প্রবণতা দেখা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর নুরুল হক নুরের নামে পরিচালিত একটি ফেসবুক পেজে এক পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ারের মাধ্যমে নুরুল হক নুরের মার্কিন ভিসা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে স্ক্রিনশটে উল্লেখিত উক্ত পোস্টের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, গণমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে নুরের মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মার্কিন ভিসা বাতিলের গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন-