Home Blog Page 588

ভারতে দ্বাদশ পরীক্ষায় প্রথম হওয়া তাবাসসুম শাইক দাবিতে প্রচারিত ছবিটি মুসকানের

0

সম্প্রতি ‘ভারতের কর্ণাটকে দ্বাদশ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করা হিজাব আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী তাবাসসুম শাইক দাবিতে গণমাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে।

গণমাধ্যমের ফেসবুক পেইজে প্রচারিত এমন একটি প্রতিবেদন দেখুন ডিবিসি নিউজ (আর্কাইভ)। 

একই গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তাবাসসুম শাইক দাবিতে প্রচারিত ছবিটি তার নয়। প্রকৃতপক্ষে এই ছবিটি কর্ণাটক রাজ্যের মান্দ্যাইয়া জেলার পিইএস কলেজ অব আর্টস, সায়েন্স অ্যান্ড কমার্স কলেজের আরেক শিক্ষার্থী মুসকান খানের।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, ভারতীয় গণমাধ্যম Times of India তে ২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ‘Hijab row: Complaint filed against outfit for announcing reward to Mandya girl‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে ব্যবহৃত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Comparison: Rumor Scanner 

ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ছবির শিক্ষার্থীটির নাম মুসকান খান৷ তিনি কর্ণাটকের মান্দ্যাইয়া জেলার পিইএস কলেজ অব আর্টস, সায়েন্স অ্যান্ড কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই শিক্ষার্থীর আরও কিছু ছবি দেখুন এখানে, এখানে। 

Screenshot: Zee News

অপরদিকে তাবাসসুম শাইক ছিলেন কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর Nagarathnamma Meda Kasturirangan Setty Rashtreeya Vidyalaya (NMKRV) College for Women এর শিক্ষার্থী। 

Screenshot: Indian Express

অর্থাৎ, তাবাসসুমের ছবি দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি ভিন্ন আরেক শিক্ষার্থীর।

মূলত, কর্ণাটকে হিজাব আন্দোলনে অংশ নেওয়া মুসকান খান এবং তাবাসসুম শাইক দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি। তবে সংবাদমাধ্যমে তাবাসসুমের ছবির সাথে মুসকানের ছবিও তাবাসসুম দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে ভারতের কর্ণাটকের হিজাব আন্দোলনের তাবাসসুম শাইক দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় সমগ্র ভারতে প্রথম হয়েছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে৷ তবে এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তাবাসসুম শাইক দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় সমগ্র ভারতে প্রথম হননি বরং তিনি নিজ প্রদেশ কর্ণাটকে মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। 

প্রসঙ্গত, একই সময়ে বাংলাদেশি একাধিক গণমাধ্যমে তাবাসসুম শাইক দাবিতে মুসকানের ছবি প্রচার করা হয়েছিল। 

এ সম্পর্কিত রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

তথ্যসূত্র

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর গুজব প্রচার

0

সম্প্রতি ‘খালেদা জিয়া আর নেই’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং ডাক্তারদের পরামর্শে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষার অংশ হিসেবে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।বর্তমানে  তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গত এপ্রিল ২৯ এপ্রিল News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজ এবং Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে খালেদা জিয়ার মারা যাওয়ার দাবিতে দুটি আলাদা ভিডিও প্রচার করা হয়। 

Source: Facebook and YouTube

অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। News Plus নামের ফেসবুক পেজটিতে প্রচারিত নিউজ বুলেটিন ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন সংবাদ নিয়ে তৈরি। ভিডিওটির শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে খালেদা জিয়ার মারা যাওয়ার দাবি প্রচার করা হলেও সেখানে বিস্তারিত প্রতিবেদনে শুধু তার অসুস্থতার বিষয়ে বলা হয়।

Screenshot: News Plus Facebook

অপরদিকে Sabai Sikhi নামের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ১ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের ভিডিওটির বিস্তারিত প্রতিবেদনের প্রথম অংশে(০৯ সেকেন্ড পর্যন্ত) খালেদা জিয়া মারা গেছেন বলে দাবি করা হয়। তবে একই ভিডিও’র অপর অংশে(১০ সেকেন্ড থেকে) খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানানো হয়।

Screenshot: Sabai Sikhi YouTube 

উক্ত দাবিটি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূল ধারার গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এ ‘খালেদা জিয়ার অবস্থার ‘কিছুটা উন্নতি’ শীর্ষক শিরোনামে ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: bdnews24.com

উক্ত প্রতিবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম এর বক্তব্য পাওয়া যায়।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, “উনার কিছু অসুস্থতা ছিল… কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। যার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী তাকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেই চিকিৎসায় উনি মোটামুটি রেসপন্স করছেন।”

এছাড়াও মূলধারার গণমাধ্যম আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, অবস্থার কিছুটা উন্নতি’ শীর্ষক শিরোনামে ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Ajker Patrika

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা  হয়, ‘রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আগের চেয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। গতকাল শনিবার মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁর বিষয়ে বৈঠক করেন বোর্ডের সদস্যরা। পরে বোর্ডের পরামর্শেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। ইতিমধ্যে তাঁর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।’

অর্থাৎ, উপরোক্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। 

পাশাপাশি, দেশীয় গণমাধ্যম কিংবা বিএনপি সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে খালেদা জিয়ার মৃত্যু সম্পর্কিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গত শনিবার(২৯ এপ্রিল) সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষার অংশ হিসেবে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরবর্তীতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর খবরটিকেই বিকৃত করে তিনি মারা গেছেন দাবিতে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন  রয়েছেন।

উল্লেখ্য, এর আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘোড়া দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ‘AI’ দিয়ে তৈরী 

0

সম্প্রতি ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘোড়া!’ শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ঘোড়ার ছবি প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ),এখানে (আর্কাইভ)।

ইংরেজিতে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ),এখানে (আর্কাইভ),এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘোড়া দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

ঘোড়ার ছবিটি সম্পর্কে জানার আগে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী কোনো ছবি কিভাবে শনাক্ত করা যায়, সে সম্পর্কে কিছু বিষয় জানা প্রয়োজন। 

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী কোনো ছবি শনাক্ত করার উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: 

  • ছবিটি জুম ইন করা: 

এভাবে ছবি জুম ইন করার মাধ্যমে ছবির বিস্তারিত খুঁটিনাটি চোখে ধরা পড়ে।

  • ছবির মুখ ও হাত খেয়াল করা: 

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী ছবিতে সাধারণত ছবির মুখ ও হাত ঠিকঠাক ফুটে ওঠে না। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, ছবির বিদ্যমান ব্যক্তির মুখাবয়ব ও হাতে অসঙ্গতি থেকে যায়। এ নিয়ে আরও পড়ুন এখানে। 

  • রিভার্স ইমেজ সার্চ করা: 

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে যদি ছবিটির মূল সূত্র খুঁজে পাওয়া না যায় বা কোনো ফলাফল যদি পাওয়া না যায়, তাহলে সেটিও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী হতে পারে।

ঘোড়ার ছবিটি সম্পর্কে যেভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল

‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘোড়া!’ শীর্ষক ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই উপরিউক্ত কৌশল সমূহ অবলম্বন করে ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। তবে এ প্রক্রিয়ায় ছবিটি সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিস্তারিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। 

পরবর্তীতে ছবিটি জুম ইন করে এতে বেশ কিছু অসঙ্গতি চোখে পড়ে। যেমন, ছবিটিতে দেখা যায়,  ছবিটির একদম ডানপাশে দাঁড়ানো ব্যক্তির পা ও ঘোড়ার পা একীভূত হয়ে আছে। অর্থাৎ ঘোড়ার পা ও ঐ ব্যক্তির পা আলাদা করা যাচ্ছে না। একই রকম দেখা যায়, বামপাশের প্রথম ব্যক্তিটির ক্ষেত্রেও৷ এখানেও ঘোড়ার পা ও ব্যক্তির পা একীভূত হয়ে আছে। আবার ডানপাশে সাদা জমা পরিহিত দাঁড়ানো ব্যক্তির বাম হাতটিও ছবিতে অস্বাভাবিকভাবে অনুপস্থিত দেখা যাচ্ছে।

Image Analysis: Rumor Scanner 

পাশাপাশি গত ৮ এপ্রিল Mervyn Chapman নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে Mid Journey Official নামের ফেসবুক গ্রুপে দেওয়া পোস্টেও এই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Mid Journey Official Facebook group 

পোস্টটিতে আলোচিত ছবিটির মতো মানুষের চেয়ে বৃহৎদাকৃতির প্রাণীসহ আরও একাধিক ছবিও খুঁজে পাওয়া যায়। একইসাথে পোস্টটিতে উল্লেখিত শিরোনাম থেকেও এটি প্রতীয়মান হয় যে, এই ছবিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা তৈরী। 

ছবিটির এসব অসঙ্গতির ভিত্তিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, এই ছবিটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী। অর্থাৎ ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘোড়া!’ শীর্ষক ছবিটির ঘোড়াটি বাস্তব নয়।

এছাড়া আমেরিকান ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট Snopes ও গত ২৭ এপ্রিল ‘Does This Photo Show the Biggest Horse in History?‘ শীর্ষক তাদের একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে আলোচিত ঘোড়ার ছবিটিকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী বলে নিশ্চিত করে। 

Screenshot: Snopes.com

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘোড়া কোনটি?

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে রেকর্ড সংরক্ষণকারী ওয়েবসাইট Guinness World Records  এ দেখা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা নথিভুক্ত ঘোড়ার নাম হলো শায়ার জেল্ডিং স্যাম্পসন (পরে নামকরণ করা হয়েছে ম্যামথ)।  এই ঘোড়াটির জন্ম ১৮৪৬ সালে, যুক্তরাজ্যের বেডফোর্ডশায়ারের টডিংটন মিলসে। 

Screenshot: Guinness World Records 

তবে ওয়েবসাইটটিতে ঘোড়াটির কোনো ছবি পাওয়া যায় না। যদিও স্যাম্পসন দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ঘোড়ার ছবির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্যাম্পসন দাবিতে ইন্টারনেটে যে ছবিটি প্রচার হয়ে আসছে, সেটি মূলত Brooklyn Supreme নামে ভিন্ন আরেকটি ঘোড়ার ছবি।

এ সম্পর্কিত অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনেল কলেজের ওয়েবসাইটে ‘Brooklyn Supreme, world’s largest horse, owned by C. G. Good & Son, Ogden, Iowa‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Grinnell College

প্রতিবেদনটিতে ঘোড়াটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘোড়া দাবি করে উল্লেখ করা হয় যে, এই ঘোড়াটির নাম Brooklyn Supreme। এই ঘোড়াটির সঙ্গে স্যাম্পসন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ঘোড়াটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Collage: Rumor Scanner 

মূলত, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘোড়া!’ শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে সেটি বাস্তব কোনো ছবি নয়। প্রকৃতপক্ষে ছবিটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরী। অপরদিকে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নথিভুক্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘোড়া স্যাম্পসনের কোনো ছবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং স্যাম্পসন দাবিতে যে ছবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়, সেটি Brooklyn Supreme নামে ভিন্ন আরেকটি ঘোড়ার ছবি।

সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরী ঘোড়ার ছবিকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘোড়া দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বাংলাদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁসের দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি ‘নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁসের কোন ঘটনা ঘটেনি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের সামরিক শাসনের ঘোষণা দেওয়ার দাবিটিও সঠিক নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওটি তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

গত ১৪ এপ্রিল Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস’ শীর্ষক থাম্বনেইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের ছবি ব্যবহার করে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিলে সামরিক শাসনের ঘোষণা দিলো সেনাপ্রধান’ শীর্ষক শিরোনামে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

Screenshot: YouTube 

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে বিএনপি নেতা আব্দুল আওয়াল মিন্টু’র সাক্ষাতকারের একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের ছবি সহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রমের কিছু ছবি দেখা যায়। 

১ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটির শুরুতে বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু’র একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করা হয়। এরপর ভিডিওটি’র পরবর্তী অংশে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস করলো পেন্টাগন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না দেওয়া হলে সামরিক শাসন জারির নির্দেশ দেওয়া হয় এই গোপন নথিতে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্নের জন্য নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানানো হয়। যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়া না হয় তাহলে সামরিক শাসনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর নির্দেশ দেওয়া হয় ওই নথিতে। এদিকে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প নেই তাই সকল দল অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।’

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়াও, ভিডিওটির ক্যাপশনে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিলে সামরিক শাসনের ঘোষণা দিলো সেনাপ্রধান’ শীর্ষক দাবি করা হলেও বিস্তারিত প্রতিবেদনে সে বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

Screenshot: Sabai Sikhi YouTube

পাশাপাশি ভিডিওটি’র কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ভিডিওটি শুরুর ১৪ সেকেন্ড গত ১৩ এপ্রিল ‘খালেদা জিয়াকে বলা হয়, নির্বাচনে না গেলে সামরিক শাসন জারি হবে’ শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম মানবজমিনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু’র সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে।

Screenshot: ManabZamin YouTube

এবিষয়ে সাম্প্রতিক দাবির এবং প্রকৃত তথ্যের ছবি দুটোর পাশাপাশি তুলনা দেখুন নিচে।

Image Comparison by Rumor Scanner

তাছাড়া, ভিডিওটি থেকে নেওয়া কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি। 

পাশাপাশি মূল ধারার গণমাধ্যম কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বাংলাদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এছাড়াও গণমাধ্যম, সেনাবাহিনী বা নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো সূত্রে ভিডিওটি’র শিরোনামে প্রকাশিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের সামরিক শাসনের ঘোষণা দেওয়ার দাবির পক্ষেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। 

মূলত, সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁসের দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় পূর্বেও একাধিক ফ্যাক্টচেকপ্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, বাংলাদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাইভে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দেননি

সম্প্রতি, “লাইভে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দিলো শেখ হাসিনা, খুশি বিএনপি” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচারিত হচ্ছে।

Screenshot from Youtube

ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাইভে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দেননি বরং কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে ভিডিওটির থাম্বনেইলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

গত ১১ এপ্রিল ‘Sabai Sikhi’  নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে “লাইভে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দিলো শেখ হাসিনা, খুশি বিএনপি” শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

Screenshot from Youtube

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি একটি ভিডিও প্রতিবেদন এবং এই ভিডিও প্রতিবেদনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুনে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

বিভ্রান্তি ০১: প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

প্রতিবেদনটির শুরুতে ১ থেকে ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য দেওয়া হয়েছিলো। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, “আসুক না, হেঁটে হেঁটে যতটুকু আসতে পারে। কোনো আপত্তি নেই। আমি চা খাওয়াবো, বসাবো, কথা বলতে চাইলে শুনবো। কারণ আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।”

Screenshot from Youtube

ভিডিওটি’র এই অংশের কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, এটি ২০২২ সালের ২৩ জুলাই সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে আসলে চা খাওয়াবো বিএনপিকে” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে।

Image Comparison by Rumor Scanner 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথসভায় ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন।

বিভ্রান্তি ০২: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য

প্রতিবেদনটির শুরুতে ১১ থেকে ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য একটি বক্তব্য দেওয়া হয়েছিলো। যেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বলেন, “আমি কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট সিস্টেম মেনে নিচ্ছি। তাহলে সেখানে চা-টা খাওয়া যাবে অসুবিধা নেই।”

Screenshot from Youtube

ভিডিওটি’র এই অংশের কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, এটি ২০২২ সালের ২৪ জুলাই ‘এটিএন নিউজ’ এর ইউটিউব চ্যানেলে “এইসব চা-টা খাওয়ার কথা বলে লাভ নাই : ফখরুল” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। আগেরদিনের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বিএনপি নেতৃবৃন্দকে চা খাওয়ানোর ইঙ্গিত প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। 

Image Comparison by Rumor Scanner 

এছাড়াও প্রতিবেদনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে বলা হয় “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি দিলেন গণভবনে চা খাওয়া যেতে পারে।”

অনুসন্ধানে দেখা যায় এই কথা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০২২ সালের ২৪ জুলাই বলেছিলেন। যা হুবহু একই শিরোনামে ‘আরটিভি অনলাইন’ এ প্রকাশিত হয়েছিলো।

Screenshot: RTV News
বিভ্রান্তি ০৩: প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংলাপের ঘোষণা দিয়েছেন

প্রতিবেদনটির ১৬ সেকেন্ড থেকে ৩৯ সেকেন্ড পর্যন্ত বলা হয় “তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চাইলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। তাদের যেকোনো দাবি মেনে নেওয়া হবে।” এসময় ভিডিওতে ২৭ থেকে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর একটি ছবি প্রদর্শন করা হয়।

Screenshot from Youtube

অনুসন্ধানে মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ‘দ্য ডেইলি স্টার’ এর অনলাইনে “সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে: প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ছবির সাথে উক্ত ছবির হবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner

উক্ত ছবিটি রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান থেকে ধারণ করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী(তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল) দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে এবং অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে কারা ক্ষমতায় যাবে, তার সিদ্ধান্ত নিতে জনগণকে ক্ষমতা দিয়েছে।

বিভ্রান্তি ০৪: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ

প্রতিবেদনটির ৪৮ সেকেন্ড থেকে ৫৭ সেকেন্ড পর্যন্ত বলা হয় যে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য চাপ দিয়ে আসছে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য কোনো চাপ দেননি বরং গত ১২ এপ্রিল মূলধারার গণমাধ্যম ‘কালের কণ্ঠ’ এ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বরাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ থাকবে

Screenshot from Kaler Kantho
বিভ্রান্তি ০৫: ভিডিওর থাম্বনেইলে ফখরুদ্দীন আহমেদের ছবি

প্রতিবেদনটির থাম্বনেইলে ফখরুদ্দীন আহমেদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাকে নিয়ে প্রতিবেদনটিতে কোনো তথ্যই  উপস্থাপন করা হয়নি।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনে পূর্বের তথ্য উপস্থাপন, থাম্বনেইলে ভুল তথ্য উপস্থাপন এবং প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা নিয়ে  গণমাধ্যমে কোনো প্রতিবেদন খুঁজে না পাওয়ায় এটা স্পষ্ট যে, লাইভে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। 

মূলত, গত ১১ এপ্রিল একটি ভূঁইফোড় ইউটিউব অ্যাকাউন্ট থেকে “লাইভে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দিলো শেখ হাসিনা, খুশি বিএনপি” শীর্ষকক্যাপশন ও থাম্বনেইলে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায় বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাইভে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দেননি। প্রকৃতপক্ষে, চটকদার ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে অধিক ভিউ পাবার আশায় উক্ত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ‘লাইভে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত  তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনির ছবি ব্যবহার করে ভিন্ন ব্যক্তির মৃত্যুর খবর প্রচার

সম্প্রতি, এক ব্যক্তির একাধিক ছবি ব্যবহার করে গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটে দাবি করা হচ্ছে, ইরানের একজন সিনিয়র শিয়া আলেম এবং প্রভাবশালী বিশেষজ্ঞ পরিষদের সদস্য আয়াতুল্লাহ আব্বাসালি সোলেইমানিকে একটি ব্যাংকের ভেতরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। 

উক্ত ছবি ব্যবহার করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন যমুনা টিভি (ইউটিউব), আরটিভি (ফেসবুক)।

Screenshot source: Facebook  

একই দাবিতে ইউটিউবের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

একই ব্যক্তির ভিন্ন আরেকটি ছবি ব্যবহার করে উক্ত দাবিতে ফেসবুকের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

Screenshot source: Facebook 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কতিপয় গণমাধ্যমের খবরে প্রচারিত ছবিগুলো আয়াতুল্লাহ আব্বাসালি সোলেইমানির নয় বরং এগুলো ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনির ছবি। 

যমুনা টিভিতে প্রচারিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে ইরানের গণমাধ্যম Rasa News Agency এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ১৯ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের একটি ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল রয়েছে।

Screenshot source: Rasa News Agency

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনির। 

আরও অনুসন্ধান করে, খামেনির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও একই ছবি খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

Screenshot source: Khamenei.ir

যমুনা টিভিতে আয়াতুল্লাহ আব্বাসালি সোলেইমানি বলে দাবি করা ছবি ও আয়াতুল্লাহ আল খামেনির প্রকৃত ছবির তুলনামূলক চিত্র দেখুন – 

Screenshot comparison: Rumor Scanner 

যমুনা টিভি একই ভিডিও প্রতিবেদনে আয়াতুল্লাহ আব্বাসালি সোলেইমানি দাবি করে আয়াতুল্লাহ আল খামেনির একাধিক ছবি ব্যবহার করেছে। 

অর্থাৎ, যমুনা টিভির প্রতিবেদনে প্রচারিত ছবিটি আয়াতুল্লাহ আব্বাসালি সোলেইমানির নয়। 

পরবর্তীতে আরটিভিতে প্রচারিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে মাল্টার সংবাদমাধ্যম Times of Malta এর ওয়েবসাইটে গত ২৬ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের একটি ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল রয়েছে। তবে আরটিভিতে প্রচারিত ছবিটি মিরর করা ছিল। 

Screenshot comparison: Rumor Scanner 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনির। 

আরও অনুসন্ধান করে, ইরানের সংবাদমাধ্যম Mashreq News এর ওয়েবসাইটে গত ২২ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আয়াতুল্লাহ আল খামেনিরর একই পোশাক পরিহিত একাধিক ছবির মধ্যে আলোচিত ছবিটিও খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

Screenshot source: Mashreq News

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আয়াতুল্লাহ আল খামেনির ইমামতিতে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন মুসুল্লিরা।

আরটিভি একই ভিডিও প্রতিবেদনে আয়াতুল্লাহ আব্বাসালি সোলেইমানি দাবি করে আয়াতুল্লাহ আল খামেনির একাধিক ছবি ব্যবহার করেছে। তবে গণমাধ্যমটি প্রতিবেদনের থাম্বনেইলসহ মূল প্রতিবেদনে আয়াতুল্লাহ আব্বাসালি সোলেইমানির প্রকৃত ছবিও ব্যবহার করেছে। 

Screenshot presentation: Rumor Scanner 

অর্থাৎ, আরটিভির প্রতিবেদনে প্রচারিত একাধিক ছবি আয়াতুল্লাহ আব্বাসালি সোলেইমানির নয়। 

ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর দাবি অনুযায়ী, ইরানের একজন সিনিয়র শিয়া আলেম এবং প্রভাবশালী বিশেষজ্ঞ পরিষদের সদস্য আয়াতুল্লাহ আব্বাসালি সোলেইমানির মৃত্যুর বিষয়ে অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চ করে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম BBC এর ওয়েবসাইটে গত ২৬ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইরানের একজন সিনিয়র শিয়া আলেম এবং প্রভাবশালী বিশেষজ্ঞ পরিষদের সদস্য আয়াতুল্লাহ আব্বাসালি সোলেইমানিকে একটি ব্যাংকের ভেতরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মাজানদারান প্রদেশের বাবোলসার এলাকার একটি ব্যাংকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

 Screenshot source: BBC

অর্থাৎ, আয়াতুল্লাহ আব্বাসালি সোলেইমানির মৃত্যুর খবরে গণমাধ্যমে ভিন্ন ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। 

মূলত, গত ২৬ এপ্রিল ইরানের সিনিয়র শিয়া আলেম আয়াতুল্লাহ আব্বাসালি সোলেইমানিকে একটি ব্যাংকের ভেতরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তার মৃত্যুর খবরে গণমাধ্যমে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনির ছবি ব্যবহার করে খামেনিকে সোলেইমানি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনিকে সদ্য প্রয়াত ইরানের সিনিয়র শিয়া আলেম আয়াতুল্লাহ আব্বাসালি সোলেইমানি দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

ছবিগুলো ৩৪ বছর পূর্বে মারা যাওয়া কোনো ব্যক্তির অক্ষত মৃতদেহের নয়

0

সম্প্রতি, “পাকিস্তানের এক ইমাম ৩৪ বছর পর তার কবর ভেঙে গেলে মুসল্লীগন দেখেন জীবন্ত লাশ।” শীর্ষক শিরোনামে মাটি চাপা দেওয়া এক ব্যক্তির ছবি সম্বলিত কিছু পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই ছবি ব্যবহার করে ৩২ বছর পরও অক্ষত মৃতদেহ দাবিতে ফেসবুক প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই ছবি ব্যবহার করে ৪০ বছর পরও অক্ষত মৃতদেহ দাবিতে এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি ৩২, ৩৪ বা ৪০ বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করা কোনো ব্যক্তির নয় বরং ২০১৯ সালে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হওয়া ব্যক্তিকে বাঁচাতে মাটিচাপা দেওয়ার পদ্ধতি ব্যবহারের সময় ধারণ করা ছবি এগুলো।

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, ছবিটি পাকিস্তানের সমাজকর্মী এবং লেখক Ali Sherazi এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের ২০১৯ সালের ২২ জুন প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

পোস্ট থেকে জানা যায়, আলী সেরাজিকে জনৈক নারী উক্ত ছবি পাঠিয়েছেন। যে উক্ত নারীর বাবা তিনি। তার বাবা বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে অচেতন অবস্থায় থাকার কারণে ওই নারী তার বাবার জন্য দোয়া চেয়েছেন।

Facebook Screenshot

রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে আলী সেরাজির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিশ্চিত করেন যে উক্ত ছবিগুলো এক নারী তার বাবার জন্য দোয়া চেয়ে তাকে ইনবক্সে পাঠিয়েছিলেন। জনৈক সেই নারীকে শনাক্ত করতে না পারলেও লেখক ও সমাজকর্মী আলী সেরাজির সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আলোচ্য ছবির ব্যক্তি ৩২, ৩৪ বা ৪০ বছর পূর্বে মারা যায়নি। তাছাড়া, এটি কোনো মৃতদেহেরও ছবিও নয়। 

মূলত, ২০১৯ সালে পাকিস্তানি লেখক আলী সেরাজিকে এক নারী তার বিদ্যুৎপৃষ্ট বাবাকে মাটিচাপা দিয়ে রাখার কিছু ছবি পাঠিয়ে বাবার জন্য দোয়া চান। সেই ছবি তিনি তার ফেসবুক পেজে প্রকাশ করার পর সেই ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে ৩২, ৩৪ বা ৪০ বছর পূর্বে মৃত ব্যক্তির অক্ষত লাশের ছবি বলে প্রচার হয়ে আসছে।

২০২২ সালের আগস্ট মাসে একই ছবি ব্যবহার করে ৩২ বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তির অক্ষত মৃতদেহ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সে সময়ে বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ডুবন্ত দ্বারকা নগরীর শ্রী কৃষ্ণের মন্দিরের ভিডিওটি থ্রিডি অ্যানিমেশনে তৈরী

সম্প্রতি, ভারতে ডুবন্ত প্রাচীন দ্বারকা নগরীর শ্রীকৃষ্ণের মন্দির দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

Screenshot from Facebook 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পানির নিচে ডুবন্ত দ্বারকা নগরীতে শ্রীকৃষ্ণের মন্দির দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং শ্রীরাম নামের একজন আর্টিস্ট প্রাচীন দ্বারকা নগরী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই থ্রিডি অ্যানিমেটেড ভিডিওটি তৈরি করেছেন। 

অনুসন্ধান যেভাবে এগিয়েছে

প্রথমত, ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির সত্যতা অনুসন্ধানে, প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বাস্তবে পানির নিচে ডুবন্ত প্রাচীন দ্বারকা নগরীতে শ্রীকৃষ্ণের মন্দির পাওয়া গিয়েছিল কিনা সে বিষয়ে জানতে আন্তর্জাতিক ও ভারতীয় গণমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোতে অনুসন্ধান করে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে ভাইরাল ভিডিওটির মূল উৎস অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Lost Temple নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ৩১ মার্চ পোস্ট করা একটি রিল ভিডিও খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। 

ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, উক্ত ভিডিওটি জলের নিচে ডুবন্ত প্রাচীন দ্বারকা শহর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে থ্রিডি অ্যানিমেশন প্রযুক্তিতে তৈরি এবং ভিডিওটি @artz_by_ram নামক একটা ইন্সটাগ্রাম আইডি থেকে নেওয়া হয়।

Screenshot from Facebook

পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে artz by ram নামের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২০ মার্চ প্রকাশিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি কোনো বাস্তব ভিডিও নয় বরং পানির নিচে ডুবন্ত প্রাচীন দ্বারকা নগরীর উপর ভিত্তি করে এই থ্রিডি ভিডিওটি বানানো হয়েছে।

Screenshot from Instagram

উক্ত ইন্সটাগ্রাম আইডির প্রোফাইল থেকে জানা যায়, শ্রীরাম একজন আর্টিস্ট যিনি মূলত ডিজিটাল পোট্রেট ও থ্রিডি মডেল নিয়ে কাজ করে থাকেন।

Screenshot from Instagram 

তার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শ্রীরাম নিয়মিতই এই ধরনের আর্টওয়ার্কের ভিডিও আপলোড করে থাকেন। 

Screenshot from Instagram
দ্বারকা নগরীর পরিচিতি

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি “Dwarka: India’s submerged ancient city” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের সাতটি পবিত্র তীর্থস্থানের একটি, দ্বারকা শহরটি কেবল ধর্মীয়ভাবেই নয় বরং প্রত্নতাত্ত্বিক দিক বিবেচনায়ও সমান গুরুত্বপূর্ণ। 

মহাকাব্য মহাভারতে কৃষ্ণের প্রাচীন রাজ্য হিসাবে এই শহরটির উল্লেখ করা হয়েছে, যা প্রায় ৮৪ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে একটি সুরক্ষিত শহর হিসেবে বিস্তৃত ছিল, যেখানে গোমতী নদী এবং আরব সাগর মিলিত হয়েছে। পাঠ্য অনুসারে, কৃষ্ণের মৃত্যুর পর প্রাচীন শহরটি আরব সাগরের নীচে তলিয়ে যায়। 

Screenshot Source: BBC

বিবিসি’র প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গত শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে, প্রত্নতাত্ত্বিকরা আধুনিক দ্বারকার উপকূলে ডুবে যাওয়া শহরের প্রকৃত প্রমাণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলেন।

ফলস্বরূপ, পাথরের খন্ড এবং স্তম্ভের মতো অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু পানির নিচে আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে এই প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তুগুলোর সঠিক বয়স নিয়ে এখনও বিতর্ক চলমান রয়েছে। 

Screenshot Source: BBC

তাছাড়া, জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (UNESCO) কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় শহর দ্বারকা হিন্দু সংস্কৃতিতে কৃষ্ণের মহান এবং সুন্দর শহর হিসেবে পরিচিত।

হিন্দু পুরাণে বলা হয়েছে যে, কৃষ্ণ যখন আধ্যাত্মিক জগতে যোগদানের জন্য পৃথিবী ত্যাগ করেছিলেন, তখন কলির যুগ শুরু হয়েছিল এবং দ্বারকা এবং এর বাসিন্দারা সমুদ্র দ্বারা নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিলো। 

আধুনিক দ্বারকা শহর আজ হিন্দু ধর্মের সাতটি পবিত্র শহরের একটি, প্রতি বছর তীর্থযাত্রীরা কৃষ্ণের উপাসনা করে। দ্বারকা নগরীর নিমজ্জিত অংশের খোঁজ ১৯৩০-এর দশকে শুরু হয়েছিল, এবং প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ১৯৬৩ সালে সংঘটিত হয়েছিল। তৎকালীন সময়ের উক্ত খননে অনেক প্রাচীন প্রত্নবস্তু পাওয়া গিয়েছিল, সেইসাথে পানির নিচে কাজ করা প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দলের নেতৃত্বে পরবর্তী খননের সময় প্রাচীন দ্বারকার নিমজ্জিত অংশের অবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাচীন দ্বারকা শহরের একটি সুরক্ষিত ভিত্তি আবিষ্কার করেছিলেন যা নির্দেশ করে যে, প্রাচীন শহরের প্রাচীরগুলি অবশ্যই নদীর তীরে নির্মিত হয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকদের খননে পাওয়া গিয়েছিল বিভিন্ন নির্মাণ, স্তম্ভ এবং সেচ ব্যবস্থার জন্য ব্যবহৃত পাথরের খন্ড। তবে ইউনেস্কোর প্রতিবেদনেও উল্লেখ রয়েছে, প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তুগুলোর বয়সের ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে। 

Screenshot Source: UNESCO

মূলত, শ্রীরাম নামের একজন আর্টিস্ট প্রাচীন দ্বারকা নগরী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রী কৃষ্ণের মন্দিরের একটি থ্রিডি এনিমেশন ভিডিও তৈরী করেন। উক্ত ভিডিওটিকেই সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু পোস্টে, মূল ভিডিওটি যে বাস্তব নয় তা উল্লেখ না করেই পানির নিচে ডুবন্ত দ্বারকা নগরীতে শ্রীকৃষ্ণের মন্দিরের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।  

প্রসঙ্গত, পূর্বে কক্সবাজার রেল স্টেশনের থ্রিডি অ্যানিমেটেড ছবি বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত হলে সে ব্যাপারে ফ্যাক্টচেক আর্টিকেল প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পড়ুন এখানে

সুতরাং প্রাচীন দ্বারকা নগরীর শ্রী কৃষ্ণের মন্দিরের একটি থ্রিডি অ্যানিমেটেড ভিডিওকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

যুক্তরাষ্ট্রের চাপে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষনা দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি ‘এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিলো হাসিনা’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি দেননি বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওটি তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে। 

গত এপ্রিল Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিলো হাসিনা’ শীর্ষক থাম্বনেইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের ছবি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি দিলো হাসিনা’ শীর্ষক শিরোনামে উক্ত ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

Screenshot: YouTube

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার একই ভিডিও ক্লিপের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের ছবি সহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনের সময়কার কয়েকটি পুরোনো ছবি দেখা যায়। 

১ মিনিট ০৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি’র শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদ অধিবেশনে সম্প্রতি বক্তব্য রাখার একটি ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করা হয়। এরপর ভিডিওটির পরবর্তী অংশে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই প্রধানমন্ত্রী। আজকে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তর করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের সরকারকে হটাতে পারে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিলো শেখ হাসিনা, যাতে জনগণ তাদের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রার্থী নির্বাচিত করে ক্ষমতায় বসাতে পারে।’

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে। 

Screenshot: Youtube

পাশাপাশি ভিডিওটির কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, ভিডিওটি শুরুর ১৬ সেকেন্ড গত ১০ এপ্রিল ‘আমেরিকা গণতন্ত্রের চর্চা করে আটলান্টিকের পাড় পর্যন্ত: প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে।

Image Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও ভিডিওটি থেকে নেওয়া কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি। ভিডিওটি’র ৫০ সেকেন্ডের সময় প্রদর্শিত একটি ছবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সভায় বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

Screenshot: Youtube/Sabai Shiki 

তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে উক্ত ছবিটি মূল ধারার গণমাধ্যম ইত্তেফাকের অনলাইন সংস্করণে গত ৩১ জানুয়ারি ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে; প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে, যেখানে তিনি রংপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

Image Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। 

পাশাপাশি মূল ধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো সূত্রে উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দেননি। 

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় পূর্বেও একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

সম্প্রতি ‘ব্লিংকেনের কঠিন বার্তা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্দেশ‘ শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে প্রচার হচ্ছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নির্দেশ দেননি বরং কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই তাকে উদ্ধৃত করে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে উক্ত দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেনের বিভিন্ন সময়ে করা মন্তব্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখে। 

এসময় জার্মানি ভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বাংলার ওয়েবসাইটে গত ১১ এপ্রিল ‘বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান ব্লিংকেন‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: DW Bangla

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা একটি ভিডিওয়ের সূত্রে করা প্রতিবেদনটি থেকে দেখা যায়, ব্লিংকেন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বলেন, ”আমরা তাকিয়ে আছি, গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে।  আমাদের প্রত্যাশা,  বাংলাদেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে ওই অঞ্চলে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”

Screenshot: DW Bangla

পাশাপাশি বাংলাদেশি জাতীয় দৈনিক আমাদের সময়ে একইদিনে ‘বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান ব্লিংকেন‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রেও একই তথ্য জানা যায়। 

Screenshot: Dainik Amader Somoy

এই প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, ব্লিংকেন আমেরিকা ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে বলে, ‘আমেরিকা ও বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহয়োগিতা করে চলেছে। আর্থিক সম্পর্ক, দুই দেশের মানুষের সম্পর্ক, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে।’ 

Screenshot: Dainik Amader Somoy 

একইসময়ে বাংলাদেশ যেভাবে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে তারও প্রশংসা করেন ব্লিংকেন।

এছাড়া গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে দেওয়া ব্লিংকেনের বক্তব্যেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত তার কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায় না। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে দেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া এক প্রেস বিবৃতিতে ব্লিংকেন বলেন, এই যুগের সংজ্ঞায়িত ইস্যুতে আমাদের সহযোগিতার কারণে আমেরিকান ও বাংলাদেশিরা একসঙ্গে আরও শক্তিশালী।বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব ও গত পাঁচ দশকে অর্জিত অর্জনে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত।’

Screenshot: Daily Star

তিনি আরও বলেন, ‘অতি সম্প্রতি, আমরা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রচারের জন্য একসঙ্গে সত্যিকারের অগ্রগতি অর্জন করেছি। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা সকলের জন্য উন্মুক্ত।’

তবে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনল্ড লুর তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে জানতে চাওয়া নিয়ে গণমাধ্যম সূত্রে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের একটি মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Channel24

প্রতিবেদনটিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে উদ্ধৃত করে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন ডোনাল্ড লু। আইনমন্ত্রীর তরফ থেকে তাকে জানানো হয়, সংবিধান পরিবর্তন করে উচ্চ আদালতে সেটা বাতিল হয়েছে।

Screenshot: Channel24

এসবের বাইরে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্দেশ সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেনের কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন। সফর শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন জানান যে, যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না, তারা দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়।

মূলত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের এর সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে প্রচার করা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে তার এমন কোনো নির্দেশনা সম্পর্কে বিশ্বস্তসূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ‘ বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন’ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি  মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

DW Bangla: বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান ব্লিংকেন
Daily Amader Somoy: বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান ব্লিংকেন
Daily Star: বাংলাদেশ ‘দ্রুত আঞ্চলিক নেতৃত্বে উঠে আসছে’: ব্লিংকেন
Channel 24: তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন ডোনাল্ড লু: আইনমন্ত্রী (ভিডিও)
Daily Star: যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না: মোমেন
Barta24: যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
Channel24: পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর