সৌদি আরবের ৭০ জন আলেম হ্যালো শব্দটিকে হারাম ঘোষণা করেননি 

সম্প্রতি, “সৌদিআরবের ৭০ জন আলেম ফোনে হ্যালো বলা হারাম করে দিয়েছেন। কারণ হেল অর্থ জাহান্নাম আর হ্যালো অর্থ জাহান্নামী।” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

 হ্যালো

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত পোস্টগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ )।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সৌদি আরবের ৭০ জন আলেম ফোনে হ্যালো বলাকে হারাম বলে ঘোষণা করেননি এবং হ্যালো শব্দটির অর্থও জাহান্নামী নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে। 

সৌদি আরবের ৭০ জন আলেম হ্যালো বলা হারাম ঘোষনা করেছেন কিনা তা জানতে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর Islamweb নামক একটি ওয়েবসাইটে “Hello has nothing to do with the Hell” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে জানা যায়, মক্কার মসজিদুল হারামের কোনো ইমাম কর্তৃক এই ধরনের কোনো ফতোয়া দেওয়া হয়নি। 

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইসলামিক ওয়েবসাইট কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে আলোচিত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

হ্যালো এবং হেল শব্দের অর্থ কি? 

হ্যালো শব্দটির অর্থ অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০১১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক স্বাধীন ও অলাভজনক গণমাধ্যম npr.org এ  “A (Shockingly) Short History Of ‘Hello’ ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টেলিফোন যখন আবিষ্কার হয় তখন হ্যালো শব্দটির প্রচলন হয়নি। টেলিফোনের উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রথমে সম্ভাষণ হিসেবে টেলিফোনে ‘আহয়’ শব্দটির ব্যবহার করেছিলেন। এটি সাধারণত নাবিকরা ব্যবহার করতেন। তবে হ্যালো বলার প্রচলন শুরু হয় টমাস আলভা এডিসন কর্তৃক হ্যালো শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে। তিনিই প্রথম “হ্যালো” শব্দটির সূচনা করেন। তিনি টেলিফোনে উত্তর দেওয়ার সময় “হ্যালো” ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীদের আহবান জানান। এই হ্যালো শব্দটি এসেছে পুরোনো জার্মান শব্দ ‘হ্যালা, হলা’ থেকে। ফেরি নৌকার মাঝিকে ডাকার জন্য ওই শব্দটি ব্যবহার করতো।  

পরবর্তীতে হেল শব্দটির অর্থ অনুসন্ধানে ইংরেজি অভিধান Merriam Webster থেকে জানা যায়, হেল শব্দটির পুরোনো ইংরেজি শব্দ হেল (hell) বা হেলে (helle) যা দিয়ে ‘মৃতদের আবাস বা মৃত্যু দেবী’ বুঝানো হতো। এই শব্দ দুটো ‘প্রোটো জার্মানিক’ শব্দ halja থেকে এসেছে যার অর্থ কোনো কিছু ঢাকে বা লুকিয়ে রাখা৷ 

অর্থাৎ হেল শব্দের সাথে হ্যালো শব্দের কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়া “Where Does ‘Hello’ Come From” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শেক্সপিয়ারের সময়ে হেইল (Hail) শব্দটি অভিবাদন জানাতে ব্যবহার করা হতো এবং এটি হেইল শব্দটি স্বাস্থ্যবিষয়ক শব্দ হেল, হেলথ, হোল এর সাথে সম্পর্কিত এবং এই হেইল শব্দটি যেহেতু অভিবাদন জানানোর জন্য ব্যবহৃত হতো তাই এটি হোলো, হালো এবং হ্যালোওসহ ( hollo, hallo, halloa) বেশ কয়েকটি রূপে পরিবর্তিত হতে পারে বলেও জানা যায়।

মূলত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৌদি আরবের আলেমরা ফোনে হ্যালো বলা হারাম করেছেন দাবিতে একটি তথ্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচার করা হচ্ছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে হেল অর্থ জাহান্নাম এবং হ্যালো অর্থ জাহান্নামী। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে যে সৌদি আলেম কর্তৃক এমন কোনো ফতোয়া দেওয়া হয়নি এবং হেল শব্দের অর্থ জাহান্নাম হলেও হ্যালো শব্দের অর্থ জাহান্নামী নয়। হেল এবং হ্যালো শব্দ দুটির মধ্যে অর্থগত এবং উৎপত্তিগত পার্থক্য রয়েছে। 

সুতরাং, সৌদি আরবের ৭০ জন আলেম ফোনে হ্যালো বলা হারাম ঘোষণা করেছেন এবং হ্যালো শব্দটির অর্থ জাহান্নামী শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img