সম্প্রতি, ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের ডিরেক্টর ডা. রাজেন্দ্র বুড়বের নাম ব্যবহার করে নারকেল ফুটানো গরম জল পান করলে ক্যান্সার নিরাময় হয় বলে একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
পাশাপশি একই দাবিতে মেসেজিং এপ্লিকেশন হোয়াটসঅ্যাপেও তথ্যটি ছড়িয়ে পড়েছে।
Whatsapp Screenshot
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নারকেল ফুটানো গরম পানি পান করলে ক্যান্সার নিরাময় হয় বলে ডা. রাজেন্দ্র বুড়বের নাম জড়িয়ে যে দাবি করা হচ্ছে তা সঠিক নয় বরং ডা. রাজেন্দ্র বুড়বে এমন কোনো পরামর্শ দেননি এবং উক্ত চিকিৎসা পদ্ধতির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, Campaign against Nutrition Quacks and Courses নামক ফেসবুক পেজে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালের ১৬ মে উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে ডা. রাজেন্দ্র বুড়বে স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত বিবৃতিতে বিষয়টিকে মিথ্যা বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
মূলত, ক্যান্সার নিরাময়ে নারকেল ফুটানো গরম পানি পানের মাধ্যমে ক্যান্সার নিরাময়ের কোনো চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপারে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের ডিরেক্টর ডা. রাজেন্দ্র বুড়বে কোনো পরামর্শ দেননি এবং উক্ত চিকিৎসা পদ্ধতির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও নেই।
২০২২ সালেও ডা. রাজেন্দ্র বুড়বের নামে প্রচারিত নারকেল ফুটানো গরম পানি পানের মাধ্যমে ক্যান্সার নিরাময় বিষয়ক চিকিৎসা পদ্ধতিটিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি সদ্য পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া সৌদি ফুটবল ক্লাব আল নাসেরের সভাপতি মুসাল্লি আল মুয়াম্মারকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মন্তব্য প্রচার করা হচ্ছে।
যেখানে মুসাল্লি আল মুয়াম্মার বলেন, ‘আমি আমার জীবনে মাত্র 2 বার প্রতারণার শিকার হয়েছি। প্রথমটি, যখন আমি 3টি কাবাবের অর্ডার দিয়েছিলাম এবং মাত্র 2টি পেয়েছি। দ্বিতীয়টি, যখন আমি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে স্বাক্ষর করি।’
বিষয়টিকে ভুয়া হিসেবে প্রচার করে শিরোনামে ভুল তথ্য দিয়ে দৈনিক কালবেলার প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সদ্য পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া সৌদি ফুটবল ক্লাব আল নাসেরের সভাপতি মুসাল্লি আল মুয়াম্মারের নামে রোনালদোকে ঘিরে প্রচারিত মন্তব্যটি ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে ArabiaNews50 নামে একটি ভুয়া ওয়েবসাইটের সূত্রে মুসাল্লি আল মুয়াম্মারের নামে আলোচিত মন্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনটিতে স্প্যানিশ বার্তা সংস্থা ইএফইকে দেওয়া আল নাসরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা ওয়ালিদ আল মুহাইদিবকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, আরাবিয়া নিউজ৫০ ওয়েবসাইটের বরাতে রোনালদোকে কিনে আল নাসর প্রতারিত হয়েছে দাবিতে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে যে তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে, সেটি মিথ্যা ও ভুল।
পাশাপাশি স্প্যানিশ গণমাধ্যম Antena 2 এ গত ২৭ এপ্রিল ‘Scandal in Arabia touches Cristiano head on; revealed the truth: “A scam”‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আল নাসরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা ওয়ালিদ আল মুহাইদিবকে উদ্ধৃত করে একই তথ্য জানানো হয়। পাশাপাশি আরও উল্লেখ করা হয়, আরাবিয়া নিউজ৫০ নামে যে ওয়েবসাইটের বরাতে স্প্যানিশ গণমাধ্যম সংবাদ প্রচার করেছে, সৌদি আরবে এই নামে কোনো গণমাধ্যমই নেই।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আল নাসরের সভাপতি কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি বলেও জানান ওয়ালিদ আল মুহাইদিব।
অর্থাৎ, একটি ভুয়া ওয়েবসাইটের সূত্রে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি করে মুসাল্লি আল মুয়াম্মার প্রতারিত হয়েছেন, তার এমন মন্তব্য দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, এক সপ্তাহের মধ্যে টানা দুই হারে আল নাসর ক্লাবের সমর্থকদের চাপে ক্লাবটির সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন মুসাইলি আল মুয়াম্মার। গত ২৫ এপ্রিল সৌদি গণমাধ্যম Saudi Gazette এ ‘Al-Nassr President Al-Muammar resigns‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে তার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।
মূলত, সম্প্রতি এক সপ্তাহের মধ্যে টানা দুই ম্যাচ হেরে সমর্থকদের চাপে সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সৌদি ফুটবল ক্লাব আল নাসরের সভাপতি মুসাইলি আল মুয়াম্মার। এই মুসাইলি আল মুয়াম্মারই পর্তুগিজ তারকা রোনালদোকে সৌদি লিগে এনেছিলেন। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ ইন্টারনেটে আরাবিয়া নিউজ৫০ নামে একটি ভুয়া ওয়েবসাইটের বরাতে মুসাইলি আল মুয়াম্মারের মন্তব্য দাবিতে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে চুক্তি স্বাক্ষর করিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। তবে পরবর্তীতে ক্লাবটি থেকে নিশ্চিত করা হয় যে, মুসাইলি আল মুয়াম্মার এমন কোনো মন্তব্যই করেননি, এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে তিনি গণমাধ্যমকে কোনো সাক্ষাৎকারই দেননি।
সুতরাং, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে চুক্তি স্বাক্ষর করিয়ে প্রতারিত হয়েছেন দাবিতে সৌদি ফুটবল ক্লাব আল নাসরের সভাপতি মুসাইলি আল মুয়াম্মারের নামে প্রচারিত মন্তব্যটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, বিড়াল কাঁধে নামাজরত একজন ইমামের ছবি এবং ভিডিও ব্যবহার করে দাবি করা হচ্ছে, মধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াতের জন্য সমাদৃত জনপ্রিয় ইমাম শায়খ আবদুল্লাহ আহমদ কামেল মারা গেছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ছবি এবং ভিডিওগুলো ইমাম শায়খ আবদুল্লাহ আহমদ কামেলের নয় বরং এগুলো আলজেরিয়ার ইমাম শেখ ওয়ালিদ মেহসাসের বিড়াল কাঁধে নামাজে ইমামতি করার দৃশ্য।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা Reuters এর ওয়েবসাইটে গত ০৫ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিও ও ছবিগুলোর মিল রয়েছে।
ভিডিও প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ০৩ এপ্রিল আলজেরিয়ায় তারাবির নামাজ পড়ানোর সময় ইমাম শেখ ওয়ালিদ মেহসাসের কাঁধে বিড়াল উঠে যায়।
এই ঘটনার ভিডিও পরবর্তীতে ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
Screenshot source:, Reuters
আরো কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত একই ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
অর্থাৎ, প্রচারিত ছবি ও ভিডিওগুলো আলজেরিয়ার ইমাম শেখ ওয়ালিদ মেহসাসের।
ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর দাবি অনুযায়ী, মধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াতের জন্য সমাদৃত জনপ্রিয় ইমাম শায়খ আবদুল্লাহ আহমদ কামেলের মৃত্যুর বিষয়ে অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চ করে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম Al Jazeera এর আরবি সংস্করণের ওয়েবসাইটে গত ২৭ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শেখ আব্দুল্লাহ কামেল নামে মিশরের একজন কোরআন তেলাওয়াতকারী ও ইমাম গত ২৭ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি জন্মগতভাবেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছিলেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে উক্ত ব্যক্তির একাধিক ছবি ও ভিডিও যুক্ত রয়েছে যার সাথে আলোচিত ছবির ব্যক্তির মিল পাওয়া যায়নি।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
একই বিষয়ে অন্য গণমাধ্যমের খবর দেখুন এখানে এবং এখানে।
অর্থাৎ, ইমাম শেখ আব্দুল্লাহ কামেল মৃত্যু বিষয়ক পোস্টে ভিন্ন একজন ইমামের ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করা হয়েছে।
মূলত, গত ২৭ এপ্রিল শেখ আব্দুল্লাহ কামেল নামে মিশরের একজন কোরআন তেলাওয়াতকারী ও ইমাম মারা যান। তার মৃত্যুর বিষয়ে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টে গত ০৩ এপ্রিল আলজেরিয়ার বিড়াল কাঁধে নামাজে ইমামতি করে ভাইরাল হওয়া ইমাম শেখ ওয়ালিদ মেহসাসের ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে মেহসাসকে কামেল হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, আলজেরিয়ার ইমাম শেখ ওয়ালিদ মেহসাসকে সদ্য প্রয়াত ইমাম শায়খ আবদুল্লাহ আহমদ কামেল দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক বিষয়ক পরীক্ষার প্রথম হয়েছেন দাবিতে কিছু পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাইমা রহমান লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক বিষয়ক পরীক্ষার প্রথম হননি বরং ২০২১ সালে Zaima Rahman নামের একটি ভুয়া ফেসবুক পেজের পোস্ট থেকে কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, সর্বপ্রথম ২০২১ সালের ১৩ই ডিসেম্বর Zaima Rahman নামের ফেসবুক পেজ থেকে আলোচ্য দাবিতে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই জাইমা রহমানের রাজনৈতিক পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার দাবিটি ছড়ানো হয়।
Source: CrowdTangle Screenshot
পাশাপাশি, জাইমা রহমানের রাজনৈতিক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে প্রথম হওয়ার ব্যাপারে ইন্টারনেটে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য খুজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার।
এছাড়াও, তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানের কোনো ফেসবুক একাউন্ট বা পেজ নেই বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র।
মূলত, ২০২১ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানের নামে পরিচালিত একটি ভুয়া ফেসবুক পেজের পোস্টকে কেন্দ্র করে উক্ত ভিত্তিহীন দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে। তবে, জাইমা এ ধরনের কোনো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি।
উল্লেখ্য, তিনি লন্ডনের কুইন ম্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক এবং ইনার টেম্পল থেকে বার-অ্যাট-ল সনদ অর্জন করেছেন।
২০২১ সালে উক্ত বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
একই দাবিতে ইউটিউবের একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাবেক ফুটবলার রবিন ভ্যান পার্সি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার ঘোষণা দেননি বরং লিবারিজমে বিশ্বাসী এই সাবেক ফুটবলারের বিষয়ে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
রবিন ভ্যান পার্সির ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে সর্বপ্রথম তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং টুইটার অ্যাকাউন্ট বিস্তর পর্যবেক্ষণ করেও তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারে সাম্প্রতিক কিংবা পূর্ববর্তী সময়ের কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, কিছু পোস্টে উক্ত বিষয়টির তথ্যসূত্র হিসেবে স্প্যানিশ গণমাধ্যম Marca এর এর কথা উল্লেখিত থাকলেও একাধিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মার্কাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উক্ত বিষয়ের উপর প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
গুজবের সূত্রপাত
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময় ছাড়াও বহু আগে থেকেই রবিন ভ্যান পার্সির ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়টি ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালে যখন তিনি Bouchra van Persie নামের একজন মুসলিম নারীকে বিয়ে করেন তখন থেকেই তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের খবরটি বিভিন্ন সময়ে প্রচার হয়ে আসছে।
বুলগেরিয়া ভিত্তিক ফুটবল বিষয়ক সাইট Oh My Football এ ২০২১ সালের ০২ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিন ভ্যান পার্সির স্ত্রী একজন নিবেদিত মুসলিম এবং তার পিতা-মাতাও মুসলিম।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক সাক্ষাৎকারে রবিন ভ্যান পার্সিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি মুসলিম হয়েছেন কি না, প্রতিত্তোরে তিনি বলেছিলেন, “এটা সত্য নয়। আমি মুসলিম নই, খ্রিস্টান বা ইহুদিও নই। আমি লিবারিজমে বড় হয়েছি। আপনি যদি মুসলিম হতে চান তাহলে এটা মন থেকে আসা উচিত। আমি শুধু আমার স্ত্রীকে খুশি করার জন্য এটা করব না। একজন ভালো মানুষ হয়ে উঠার জন্য আমি অনুসন্ধানে বিশ্বাসী।”
আরো বিস্তারিত অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালের ০৮ জানুয়ারি সাংবাদিক Willem Vissers কে দেওয়া এক ইন্টারভিউতে রবিন ভ্যান পার্সি এই কথাগুলো বলেছিলেন। Dutch-Football নামক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত উক্ত ইন্টারভিউটি দেখুন এখানে।
মূলত, ২০০৪ সালে একজন মুসলিম নারীকে বিয়ে করার পর থেকেই স্ত্রীকে দেখে ডাচ ফুটবলার রবিন ভ্যান পার্সির মুসলিম হওয়ার খবরটি ইন্টারনেটে প্রচারিত হলে এক ইন্টারভিউতে করা প্রশ্নের উত্তরে রবিন ভ্যান পার্সি নিজেই তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের দাবিটিকে মিথ্যা আখ্যায়িত করেন এবং নিজেকে লিবারিজমের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন।
সুতরাং, ডাচ ফুটবলার রবিন ভ্যান পার্সি তার স্ত্রীকে দেখে ইসলাম ইসলাম গ্রহণ নিয়ে ফেসবুকে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা।
একই দাবিতে ইউটিউবের কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ),
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জুলিয়েট রোজের দাম ও উৎপাদন সময়সীমার সম্পর্কে প্রচারিত তথ্যগুলো সত্য নয় বরং এই তথ্যগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে ফুলটির উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান থেকেই নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড অস্টিন একজন গোলাপ প্রজননকারী ছিলেন। ১৯৬১ সালে প্রথম তিনি গোলাপ উদ্ভাবন শুরু করেন। জীবদ্দশায় তিনি দুই শতাধিক ইংরেজি গোলাপ উদ্ভাবন করেন। তিনি ২০১৮ সালে মারা যান। তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘David Austin Roses’ এর মাধ্যমে বর্তমানে গোলাপের ব্যবসাটি পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ডেভিড অস্টিনের ফুলের চাহিদা রয়েছে।
তবে জুলিয়টে রোজ সম্পর্কে প্রচারিত দাবিগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি উক্ত ওয়েবসাইটে।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানতে ‘David Austin Roses’ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, জুলিয়েট রোজের বিষয়ে অনলাইন আর্টিকেল এবং পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই ভুল তথ্য প্রকাশ হয়। আমাদের পাঠানো দাবিগুলোর বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়।
‘David Austin Roses’ এর জনসংযোগ কর্মকর্তা এ্যামি ম্যাককেন (Amy McCann) রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “জুলিয়েটকে প্রায়শই বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গোলাপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যা সত্য নয়।”
পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ফুল কোনটি এমন প্রশ্নে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বৈশ্বিক ফুল এবং উপহারের খুচরা বিক্রেতা ‘অ্যারেনা ফ্লাওয়ার্স’ (Arena Flowers) -এর ওয়েবসাইটে কিছু তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Arena Flowers
‘অ্যারেনা ফ্লাওয়ার্স’ বলছে, পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ফুলের নাম কাদুপুল (KADUPUL)। যার মূল্য নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। এই ফুল এতই ক্ষণস্থায়ী আর নাজুক যে আজ পর্যন্ত কেউই একে তার কাণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে অক্ষতরূপে অন্য কাউকে উপহার দিতে পারেননি।
‘অ্যারেনা ফ্লাওয়ার্স’ এর তৈরি করা সবচেয়ে দামি ফুলের তালিকার পরের চার অবস্থানে আছে Shenzhen Nongke Orchid , Gold of Kinabalu Orchid, Bouquet Consisted of white orchids, White lilies, Moonflowers and the Root of A 100 year old ficus এবং Saffron Crocus।
এই তালিকায় থাকা ফুলগুলোর দাম ১ লাখ ৬৬ হাজার ডলার থেকে সর্বনিম্ন ৬২২ ডলার পর্যন্ত।
অর্থাৎ, সবচেয়ে দামি পাঁচ ফুলের তালিকায় জুলিয়েট রোজ নেই।
রিউমর স্ক্যানারের সাথে আলাপকালে এ্যামি ম্যাককেন জানিয়েছেন, জুলিয়েট রোজ তাদের ১৬ টি কাট রোজ ফুলের মধ্যে একটি। এগুলোর প্রতিটি স্টেম বা স্টিক পাইকারি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৩.৫০ ডলার দামে বিক্রি হয়।
Screenshot: Email
অর্থাৎ, প্রতিটি জুলিয়েট রোজের দাম ১৫.৮ মিলিয়ন ডলার বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিটি জুলিয়েট রোজ পাইকারি দরে সাড়ে তিন ডলারে বিক্রি হয়।
কিন্তু জুলিয়েট রোজের সাথে এমন আকাশচুম্বী দামের ব্যাপারটি জড়ালো কীভাবে – এমন প্রশ্নে এ্যামি ম্যাককেন রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “ব্যাপারটি যেখান থেকে এসেছে তা হল জুলিয়েট আমাদের ১৫ বছরের একটি প্রজনন প্রোগ্রামের অংশ ছিল। এরপরে এটি উদ্ভাবিত হয়েছিল। একটি প্রজনন প্রোগ্রামের জন্য প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। এর ফলস্বরূপ, লোকেরা প্রজননের সাথে জড়িত বৃহৎ ব্যয়ের উদ্ধৃতি দেয় এবং এটি জুলিয়েটের সাথে জড়িয়ে ফেলেছে।”
Screenshot: Email
দুই নম্বর দাবির প্রশ্নের উত্তরেই এ্যামি ম্যাককেন পরিষ্কার করেছেন যে প্রথম যখন জুলিয়েটের প্রজনন প্রোগ্রাম করা হয়েছিল তখন তাতে সময় লেগেছিল ১৫ বছর। প্রজনন প্রোগ্রামের মাধ্যমে ফুলটি উদ্ভাবন করা হয়েছিল। প্রজনন প্রোগ্রামে সাধারণত নানান গবেষণা করা হয়, যাতে সময় বেশি লাগে। এতে করে একেকটি প্রজনন প্রোগ্রাম দীর্ঘস্থায়ী হয় বছরের পর বছর। জুলিয়েট রোজের প্রজনন প্রোগ্রামের ক্ষেত্রেও তেমনটিই ঘটেছে।
কিন্তু ঠিক কতদিন সময় লাগে একেকটি জুলিয়েট রোজ ফুটতে – এমন প্রশ্নে এ্যামি ম্যাককেন রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, পাঁচটি চাষাবাদকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা ফুলের চাষ করে থাকেন। তারা যেহেতু সরাসরি চাষ করেন না, সেহেতু তাদের পক্ষে একেকটি ফুলের চাষের উৎপাদন সময়সীমা সম্পর্কে বলা মুশকিল।
তবে এ্যামি জানিয়েছেন, একেকটি নতুন জাতের গোলাপের প্রজনন করাতে তাদের প্রায় নয় বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
অর্থাৎ, একেকটি জুলিয়েট রোজ ফুটতে প্রায় ১৫ বছর সময় লাগার তথ্যটি সঠিক নয়। বরং ফুলটির প্রথম প্রজনন প্রোগ্রামে ১৫ বছর সময় ব্যয় হয়েছিল।
মূলত, ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড অস্টিন ১৫ বছরের একটি ব্যয়বহুল প্রজনন প্রোগ্রামের মাধ্যমে ‘জুলিয়েট রোজ’ নামে গোলাপের একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেন। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরেই এই ফুলকে সবচেয়ে দামী ফুল, এর প্রতিটির মূল্য শতাধিক কোটি টাকা এবং একেকটি ফুল ফুটতে ১৫ বছর সময় লাগার দাবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। কিন্তু অস্টিনের প্রতিষ্ঠান থেকে বিষয়গুলো সত্য নয় নিশ্চিত করে রিউমর স্ক্যানারকে জানানো হয়, প্রতিটি জুলিয়েট রোজের পাইকারি মূল্য সাড়ে তিন ডলার। তাই এটি সবচেয়ে দামি ফুলও নয়। এমনকি এই ফুল ফুটতে ১৫ বছর সময় লাগার দাবিটিও সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও একই বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এডকো নামে কোনো ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসার দাবিটি সঠিক নয় বরং আসন্ন ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামের তালিকায় ‘এডকো’ নাম নেই এবং অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে কোনো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পূর্বাভাসও নেই।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড এবং ম্যানুয়াল সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক খবর বিশ্লেষণ করে ‘বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে’ শীর্ষক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেও আসন্ন কোনো ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Bangladesh Meteorological Department Website.
পৃথিবীতে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের চর্চা কয়েকশো বছর আগেই শুরু হয়। ভারতীয় উপমহাদেশ ও এর আশপাশের অঞ্চলগুলোয় সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় বঙ্গোপসাগর থেকে। এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের প্রচলন শুরু হয় ২০০৪ সালে। আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ আটটি সদস্য দেশের (বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড) প্যানেলের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। নামকরণের বিষয়টি সমন্বয় করে ভারতের দিল্লির ‘রিজিওনাল স্পেশালাইজড মেটেরিওলজিক্যাল সেন্টার’ (আরএসএমসি)। আটটি দেশের দেওয়া নামের তালিকা ধরে প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়ে থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের নামের সর্বশেষ তালিকায় এডকো নামে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের অস্তিত্ব উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত আটটি দেশে সর্বশেষ গত বছরের (২০২২) ডিসেম্বরে যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে তার নাম ছিল মানদাউস (Mandous)।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণে তালিকায় মানদাউসের নাম খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তালিকা অনুযায়ী, পরবর্তীতে যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে তার নাম হবে মোচা (Mocha)।
Screenshot from WMO
অর্থাৎ, এডকো নয়, পরবর্তী যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি বা আঘাত হানবে তার নাম হবে মোচা।
মূলত, সম্প্রতি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় এডকো শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই নামে ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকায় কোনো নাম নেই। বঙ্গোপসাগরেও অতি সম্প্রতি কোনো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়নি আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উল্লেখ্য, আগামী মে মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে বলে খবর এসেছে ভারত ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে। এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তার নাম হবে মোচা।
সুতরাং, এডকো নামে একটি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে;যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
দীর্ঘদিন ধরে ‘সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে’ শীর্ষক একটি কবিতা বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে শীর্ষক কবিতাটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের নয়। প্রকৃতপক্ষে এই কবিতাটি শেখ সাজ্জাদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির লেখা, যা ২০২২ সাল থেকে কাজী নজরুল ইসলামের নামে প্রচার হয়ে আসছে।
কবিতাটির প্রকৃত লেখকের অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম দীর্ঘ অনুসন্ধান চালায়৷
এক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে ২০২০ সালের ২৮ নভেম্বর সাংবাদিক তৌফিক তাপস নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘সাধুর নগরে “বেশ্যা” মরেছে লাশটি দাফন করবে কে?‘ শীর্ষক একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: সাংবাদিক তৌফিক তাপস Facebook Post
পোস্টটির কমেন্টবক্সে পোস্টদাতা কবিতাটির লেখক হিসেবে Toufik Meem (তৌফিক মীম) নামে জনৈক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন৷
Screenshot: সাংবাদিক তৌফিক তাপস Facebook Post
তার এই কমেন্টের সূত্রে রিউমর স্ক্যানার টিম Toufik Meem (তৌফিক মীম) এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এই কবিতাটি তার লেখা নয়। তিনি কবিতাটি তার এক ছোট ভাই থেকে সংগ্রহ করেছেন। তবে তিনি তার এই ছোট ভাই সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
এটি ছাড়াও একই বছরের ৬ অক্টোবর Sadin Akon Rubel নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে উক্ত কবিতাটি তার নিজের নামে পোস্ট করা দেখা হয়।
Screenshot: Sadin Akon Rubel Facebook Post
এছাড়া ২০২১ সালেও বিভিন্ন সময়ে উল্লেখিত কবিতাটি সংগৃহীত সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হতে দেখা যায়। ২০২১ সালে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে।
এ পর্যন্ত অনুসন্ধানে কোথাও কবিতাটির সঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কোনো সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ পর্যায়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের আরও অধিকতর অনুসন্ধানে আলোচিত কবিতাটির সঙ্গে ২০২২ সালে প্রথম জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামের সম্পৃক্ততার সন্ধান মিলে।
এসব পোস্টে কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের দাবি করা হলেও কবিতাটি তার কোন কাব্যগ্রন্থের এমন কোনো তথ্য পোস্টগুলো থেকে জানা যায় না।
পরবর্তীতে চলতি বছরের গত ১৬ এপ্রিল শেখ সাজ্জাদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি রিউমর স্ক্যানারের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে যোগাযোগ করে কবিতাটি তার নিজের বলে দাবি করেন। তার এ দাবির প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানার টিম শেখ সাজ্জাদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
কবিতাটি রচনার প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ২০১৯ সালের শেষদিকে খুলনার রূপসার রহিমনগর এলাকায় একজন পতিতা খুন হন। এসময় তার জানাজা পড়া ও তাকে দাফন করা নিয়ে এলাকায় অনেক বাজে পরিস্থিতির তৈরি হয়। এই ঘটনা অবলম্বনে তিনি ২০১৯ সালে ‘সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে’ শীর্ষক কবিতাটি লিখেছিলেন এবং পরবর্তীতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন।
যেভাবে প্রমাণ হলো কবিতাটি শেখ সাজ্জাদুল ইসলামের
অপরদিকে তার উপরিউক্ত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে খুলনার রূপসা উপজেলার দক্ষিণ নন্দনপুর গ্রামে ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর লাকি খাতুন নামে এক নারীর খুনের সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে নিহত লাকী দেহ ব্যবসা ও মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিল। এসবের সূত্রেই হত্যার শিকার হন লাকি খাতুন।
Screenshot: Khulna Gazette
সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে’ শীর্ষক কবিতার লেখক দাবি করা শেখ সাজ্জাদুল ইসলামের বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে উপরিউক্ত সংবাদ দুইটির যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিম ‘সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে’ শীর্ষক কবিতাটি নিয়ে শেখ সাজ্জাদুল ইসলামের দাবির সত্যতা যাচাইয়ে আরও অনুসন্ধান করে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত কবিতাটি Md Saddam Hossain নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ‘পতিতার লাশ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচার করা হয়। পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, Husain Mohammod Sazzad, রহিম নগর এলাকার বাস্তব ঘটনা উপরে লিখেছেন এই কবিতাটি লিখেছেন।
Screenshot: Md Saddam Hossain Facebook Post
এছাড়া ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরেও Tania Akter Taane নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টেও ‘পতিতার লাশ’ শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত কবিতাটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Tania Akter Taane Facebook Post
এই কবিতাটিতেও ‘Husain Mohammod Sazzad’ নামে এক ব্যক্তিকে উদ্ধৃত করা হয়।
এছাড়া রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানেও ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পূর্বে কবিতাটি ইন্টারনেট বা ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Husain Mohammod Sazzad সম্পর্কে শেখ সাজ্জাদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এটি তারই অ্যাকাউন্ট ছিল। তবে করোনার সময় অ্যাকাউন্টটি ডিজেবল হয়ে যায়। যা পরবর্তীতে তিনি আর উদ্ধার করতে পারেননি।
পাশাপাশি তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ‘পতিতার লাশ’ শীর্ষক কবিতাটি লেখার পর তিনি এটি দৈনিক দেশপত্র নামের একটি পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসানকে দেখিয়েছিলেন।
তার এ দাবির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম রিয়াদুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, আলোচিত কবিতাটি বছর কয়েক আগে সাজ্জাদুল ইসলাম তাকে দেখিয়েছিলেন। যদিও কবিতাটি তিনি তার পত্রিকায় ছাপাননি।
পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, এটা নজরুলের লেখা হতেই পারে না। নজরুলের লেখা হলে অবশ্যই এটি নজরুল রচনাবলীতে পাওয়া যেত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের বিস্তারিত অনুসন্ধানেও কাজী নজরুল ইসলামের এমন কোনো কবিতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সার্বিক বিষয়ে শেখ সাজ্জাদুল ইসলাম রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, আমি কাজী নজরুল ইসলামের একজন অনুরাগী। আমার মতো একজন মানুষের লেখা কবিতাকে কাজী নজরুল ইসলামের মতো মহান কবির নামে চালিয়ে দেওয়াটা খুবই খারাপ এবং ব্যাপারটা খুবই বিব্রতকর।
উল্লেখ্য, শেখ সাজ্জাদুল ইসলাম খুলনার রূপসা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। বর্তমানে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি করছেন এবং কর্মসূত্রে কুমিল্লায় বসবাস করছেন।
অর্থাৎ, রিউমর স্ক্যানার টিমের সার্বিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, দীর্ঘদিন ধরে ‘সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে’ শীর্ষক যে কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের নামে প্রচার হয়ে আসছে, সেটি তার লেখা নয়। প্রকৃতপক্ষে কবিতাটি লিখেছিলেন শেখ সাজ্জাদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি।
মূলত, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে খুলনার রূপসার রহিমনগর এলাকায় দেহ ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত লাকী খাতুন নামে এক নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে সেই বছরই শেখ সাজ্জাদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ‘পতিতার লাশ’ শীর্ষক একটি কবিতা রচনা করেন৷ যা ২০২০ সালে ফেসবুকে প্রকাশ করেন তিনি। পরবর্তীতে তার লেখা এই কবিতাটি বিভিন্নজনের নামে প্রচার হতে হতে এক পর্যায়ে ২০২২ সালে এসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে প্রচার হতে থাকে।
সুতরাং, দীর্ঘদিন ধরে ‘সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে’ শীর্ষক কবিতাকে কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা কবিতা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘ইন্নালিল্লাহ, মমতাজের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজের ছবি ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম মারা যাননি বরং সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরে মমতাজ বেগম নামে এক নারী নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তাছাড়া, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক প্রকাশের কোনো সংবাদও পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভ্রান্তির উদ্দেশ্যে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারী News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘মমতাজের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি পোস্ট করা হয়।
Screenshot: Facebook
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। ৯ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ২ মিনিট ২৪ সেকেন্ড অংশে মমতাজের মৃত্যুর বিষয়ে বলা হয়। তবে সেখানে সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ নয় বরং লক্ষ্মীপুরে সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে মমতাজ নামের এক নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনের ২ মিনিট ২৪ সেকেন্ড অংশে লক্ষ্মীপুরে মমতাজ বেগমের খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের বিষয়ে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ২ মিনিট ২৪ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৩ মিনিট ২৫ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে। সেখানে বলা হয়, লক্ষ্মীপুরে সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে এক নারীর বিবস্ত্র অবস্থায় কয়েক খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোমবার (২৪ এপ্রিল) রাত ২টায় ওই কোয়ার্টারের ভেতর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা কুশাখালী ইউনিয়নের মৃত আব্দুল মতিনের স্ত্রী মমতাজ বেগম। তার স্বামী সড়ক বিভাগে চাকরি করতেন। মারা যাওয়ার পর থেকেই তার দুই ছেলে শরিফুল ইসলাম বাপ্পি ও ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম রকিকে নিয়ে সড়ক বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করছিলেন তিনি। তার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে বর্তমানে বড় ছেলে বাপ্পি সড়ক বিভাগে মাস্টার রুলে কাজ করছেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, “স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ওই কোয়ার্টারে বসবাস করতেন মমতাজ। সোমবার রাতে তার বড় ছেলে বাপ্পি বাসায় ফিরে দেখে তার মায়ের খণ্ডিত মরদেহ পড়ে আছে। পরে পুলিশে সংবাদ দিলে তারা মরদেহটি উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।”
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূল ধারার গণমাধ্যম সংবাদ এর অনলাইন সংস্করণে ‘স্টাফ কোয়ার্টার থেকে মমতাজের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Sangbad
প্রতিবেদনে বলা হয়, লক্ষ্মীপুরে সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে এক নারীর বিবস্ত্র অবস্থায় কয়েক খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোমবার (২৪ এপ্রিল) রাত ২টায় ওই কোয়ার্টারের ভেতর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা কুশাখালী ইউনিয়নের মৃত আব্দুল মতিনের স্ত্রী মমতাজ বেগম। তার স্বামী সড়ক বিভাগে চাকরি করতেন। মারা যাওয়ার পর থেকেই তার দুই ছেলে শরিফুল ইসলাম বাপ্পি ও ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম রকিকে নিয়ে সড়ক বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করছিলেন তিনি। তার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে বর্তমানে বড় ছেলে বাপ্পি সড়ক বিভাগে মাস্টার রুলে কাজ করছেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, “স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ওই কোয়ার্টারে বসবাস করতেন মমতাজ। সোমবার রাতে তার বড় ছেলে বাপ্পি বাসায় ফিরে দেখে তার মায়ের খণ্ডিত মরদেহ পড়ে আছে। পরে পুলিশে সংবাদ দিলে তারা মরদেহটি উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।”
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, গণমাধ্যম সংবাদ এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আলোচিত নিউজ বুলেটিন ভিডিও’র ওই প্রতিবেদনের অংশে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হুবহু পাঠ করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহৃত এই সংবাদের অংশের ছবিও উক্ত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো মাধ্যমে সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজের মৃত্যু কিংবা তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী’র শোক প্রকাশ সম্পর্কিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে ২০২০ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অ্যাডভোকেট মমতাজ বেগমের মৃত্যুতে সেসময় শোক প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন যুগান্তরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
Screenshot: Jugantor
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, মমতাজ বেগম নামের ভিন্ন এক নারীর মৃত্যুর সংবাদকে কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের মৃত্যু দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশও করেননি।
মূলত, লক্ষ্মীপুরে সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে মমতাজ নামের এক নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া উক্ত ঘটনাটিকে বিকৃত করে সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজের মৃত্যু এবং এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক প্রকাশের দাবিতে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভ্রান্তির উদ্দেশ্যে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেকপ্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, লক্ষ্মীপুরে মমতাজ নামের এক নারীর মৃত্যুর ঘটনাকে সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের মৃত্যু এবং এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি প্লেকার্ডে ইংরেজি ভাষায় ‘ঈদ মোবারক’ লিখে কোনো ছবি প্রকাশ করেননি বরং পূর্বের একটি ছবিকে এডিট করে ইংরেজি ভাষায় ‘ঈদ মোবারক’ লেখা বসানো হয়েছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ২০২১ সালের ১১ মে’তে লিওনেল মেসির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, লিওনেল মেসি সেদিন icons.com এর পক্ষ থেকে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের জার্সির গিভওয়ে দেওয়ার প্রচারণার অংশ হিসেবে সেই ছবিটি তোলেন।
Screenshot from Facebook
পরবর্তীতে, একইদিন (২০২১ সালের ১১ মে) এ ‘icons_memorabilia’ এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের একটি পোস্টেও একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Collage by Rumor Scanner
অর্থাৎ, ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি প্লেকার্ডে ‘ঈদ মোবারক’ লিখে কোনো ছবি প্রকাশ করেননি।
মূলত, ২০২১ সালে ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি একটি ওয়েবসাইটের প্রচারণার অংশ হিসেবে সেই ওয়েবসাইটের নাম সহ একটি প্লেকার্ডের ছবি প্রকাশ করেন। সম্প্রতি মেসির সেই ছবির প্লেকার্ডটি এডিট করে ইংরেজি ভাষায় ‘ঈদ মোবারক’ লিখে লিওনেল মেসি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে লিওনেল মেসিকে নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
উল্লেখ্য, লিওনেল মেসি ২০২১ সালের ৫ আগস্ট বার্সেলোনা ক্লাব ছাড়েন এবং বর্তমানে ফ্রান্সের ক্লাব পিএসজির হয়ে খেলছেন।
সুতরাং, লিওনেল মেসির ‘ঈদ মোবারক’ লিখে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা এডিটেড।