বিএনপির বিক্ষোভে সংঘর্ষে ১০ জনের মৃত্যু দাবিতে বিভ্রান্তিকর থাম্বনেইলে সংবাদ প্রচার

সম্প্রতি ‘নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ-সংঘর্ষ, ১০ জনের মৃত্যু’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

Screenshot: Facebook

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নয়াপল্টনে বিএনপির সাম্প্রতিক বিক্ষোভে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি এবং কেউ নিহতও হয়নি বরং দক্ষিন আফ্রিকায় গুলিতে একই পরিবারের ১০ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে এবং কোন দেশ তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করা এবং থাম্বনেইলে বাংলাদেশের মানুষের পুরোনো সংঘর্ষের ছবি ব্যবহার করায় বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

গত ২৩ এপ্রিল News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ-সংঘর্ষ, ১০ জনের মৃত্যু’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে বাংলাদেশের মানুষের সংঘর্ষের ছবি ব্যবহার করে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

Screenshot: Facebook

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। ৯ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ১মিনিট ৩০সেকেন্ডের সময় বিএনপির বিক্ষোভের বিষয়ে সংবাদ পাঠ করা হয়। সেখানে বলা হয়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর  মুক্তির দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রিজভী আহমেদ মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ। তবে সেখানে সংঘর্ষ বা হতাহতের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

অন্যদিকে ভিডিওটি’র ২ মিনিট ১২ সেকেন্ডের সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় একই পরিবারের ১০ জনকে গুলি করে হত্যার বিষয়ে বলা হয়। এ বিষয়ে সংবাদ পাঠ ২ মিনিট ১২ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ২ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে। সেখানে বলা হয়, “দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল (কেজেডএন) প্রদেশের পিটারমারিটজবার্গ শহরে একই পরিবারের ১০ জনকে হত্যা করেছে কয়েকজন বন্দুকধারী। নিহতদের মধ্যে সাতজন নারী ও তিনজন পুরুষ। দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ মন্ত্রণালয় কাল শুক্রবার (২১ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রাথমিক পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী, অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা পিটারমারিটজবার্গের একটি বাড়িতে হামলা চালায় এবং পরিবারের সদস্যের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি করে। জাতীয় পুলিশের মুখপাত্র অ্যাথলেন্ডা ম্যাথ মার্কিন সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূল ধারার গণমাধ্যম আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় একই পরিবারের ১০ জনকে গুলি করে হত্যা’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২১ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Ajker Patrika

প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল (কেজেডএন) প্রদেশের পিটারমারিটজবার্গ শহরে একই পরিবারের ১০ জনকে হত্যা করেছে কয়েকজন বন্দুকধারী। নিহতদের মধ্যে সাতজন নারী ও তিনজন পুরুষ।

দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ মন্ত্রণালয় আজ শুক্রবার (২১ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্রাথমিক পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী, অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা পিটারমারিটজবার্গের একটি বাড়িতে হামলা চালায় এবং পরিবারের সদস্যের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি করে।’জাতীয় পুলিশের মুখপাত্র অ্যাথলেন্ডা ম্যাথ মার্কিন সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আলোচিত নিউজ বুলেটিন ভিডিও’র ওই প্রতিবেদনের অংশে  শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হুবহু পাঠ করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহৃত এই সংবাদের অংশের ছবিও উক্ত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। 

পাশাপাশি, দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সম্প্রতি নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ কিংবা সংঘর্ষে কোনো হতাহতের সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

মূলত, সম্প্রতি নয়াপল্টনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর  মুক্তির দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল করে রিজভী আহমেদ মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় একই পরিবারের ১০ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। তবে উক্ত ঘটনা দুটিকে পাশাপাশি প্রচার করতে গিয়ে একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিওতে ‘নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ-সংঘর্ষ, ১০ জনের মৃত্যু’ শীর্ষক অপ্রাসঙ্গিক শিরোনাম এবং চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, চটকদার ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে অধিক ভিউ পাবার আশায় উক্ত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় একই পরিবারের ১০ জনকে গুলি করে হত্যার দুটো আলাদা ঘটনাকে পাশাপাশি রেখে ‘নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ-সংঘর্ষ, ১০ জনের মৃত্যু’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img