সম্প্রতি ‘ইন্নালিল্লাহ, মমতাজের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজের ছবি ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম মারা যাননি বরং সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরে মমতাজ বেগম নামে এক নারী নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তাছাড়া, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক প্রকাশের কোনো সংবাদও পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভ্রান্তির উদ্দেশ্যে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারী News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘মমতাজের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি পোস্ট করা হয়।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। ৯ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ২ মিনিট ২৪ সেকেন্ড অংশে মমতাজের মৃত্যুর বিষয়ে বলা হয়। তবে সেখানে সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ নয় বরং লক্ষ্মীপুরে সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে মমতাজ নামের এক নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনের ২ মিনিট ২৪ সেকেন্ড অংশে লক্ষ্মীপুরে মমতাজ বেগমের খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের বিষয়ে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ২ মিনিট ২৪ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৩ মিনিট ২৫ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে। সেখানে বলা হয়, লক্ষ্মীপুরে সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে এক নারীর বিবস্ত্র অবস্থায় কয়েক খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোমবার (২৪ এপ্রিল) রাত ২টায় ওই কোয়ার্টারের ভেতর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা কুশাখালী ইউনিয়নের মৃত আব্দুল মতিনের স্ত্রী মমতাজ বেগম। তার স্বামী সড়ক বিভাগে চাকরি করতেন। মারা যাওয়ার পর থেকেই তার দুই ছেলে শরিফুল ইসলাম বাপ্পি ও ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম রকিকে নিয়ে সড়ক বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করছিলেন তিনি। তার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে বর্তমানে বড় ছেলে বাপ্পি সড়ক বিভাগে মাস্টার রুলে কাজ করছেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, “স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ওই কোয়ার্টারে বসবাস করতেন মমতাজ। সোমবার রাতে তার বড় ছেলে বাপ্পি বাসায় ফিরে দেখে তার মায়ের খণ্ডিত মরদেহ পড়ে আছে। পরে পুলিশে সংবাদ দিলে তারা মরদেহটি উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।”
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূল ধারার গণমাধ্যম সংবাদ এর অনলাইন সংস্করণে ‘স্টাফ কোয়ার্টার থেকে মমতাজের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, লক্ষ্মীপুরে সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে এক নারীর বিবস্ত্র অবস্থায় কয়েক খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোমবার (২৪ এপ্রিল) রাত ২টায় ওই কোয়ার্টারের ভেতর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা কুশাখালী ইউনিয়নের মৃত আব্দুল মতিনের স্ত্রী মমতাজ বেগম। তার স্বামী সড়ক বিভাগে চাকরি করতেন। মারা যাওয়ার পর থেকেই তার দুই ছেলে শরিফুল ইসলাম বাপ্পি ও ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম রকিকে নিয়ে সড়ক বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করছিলেন তিনি। তার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে বর্তমানে বড় ছেলে বাপ্পি সড়ক বিভাগে মাস্টার রুলে কাজ করছেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, “স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ওই কোয়ার্টারে বসবাস করতেন মমতাজ। সোমবার রাতে তার বড় ছেলে বাপ্পি বাসায় ফিরে দেখে তার মায়ের খণ্ডিত মরদেহ পড়ে আছে। পরে পুলিশে সংবাদ দিলে তারা মরদেহটি উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।”
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, গণমাধ্যম সংবাদ এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আলোচিত নিউজ বুলেটিন ভিডিও’র ওই প্রতিবেদনের অংশে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হুবহু পাঠ করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহৃত এই সংবাদের অংশের ছবিও উক্ত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো মাধ্যমে সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজের মৃত্যু কিংবা তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী’র শোক প্রকাশ সম্পর্কিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে ২০২০ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অ্যাডভোকেট মমতাজ বেগমের মৃত্যুতে সেসময় শোক প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন যুগান্তরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, মমতাজ বেগম নামের ভিন্ন এক নারীর মৃত্যুর সংবাদকে কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের মৃত্যু দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশও করেননি।
মূলত, লক্ষ্মীপুরে সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে মমতাজ নামের এক নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া উক্ত ঘটনাটিকে বিকৃত করে সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজের মৃত্যু এবং এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক প্রকাশের দাবিতে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভ্রান্তির উদ্দেশ্যে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, লক্ষ্মীপুরে মমতাজ নামের এক নারীর মৃত্যুর ঘটনাকে সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের মৃত্যু এবং এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Sangbad: স্টাফ কোয়ার্টার থেকে মমতাজের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার
- Momotaz Begom: Verified Facebook Page
- Rumor Scanner Own Analysis