সম্প্রতি ইন্ডিয়ার টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার হসপিটালের ডিরেক্টর ডা. রাজেন্দ্র বুড়বের নাম ব্যবহার করে “নারকেল ফুটানো গরম জলপানে ক্যান্সার নিরাময়ের” দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফুটানো গরম জল পানে ক্যান্সার নিরাময়ের বক্তব্যটি ডা. রাজেন্দ্র বুড়বে দেন নি এমনকি দাবিটির বৈজ্ঞানিক কোনো প্রমাণ নেই বরং বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, কিভাবে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি, বিস্তার ও মারা যায় এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে পোস্টগুলোতে প্রচারিত দাবিগুলো অসঙ্গতিপূর্ণ।
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, “Campaign against Nutrition Quacks and Courses” শীর্ষক ফেসবুক পেইজে ইন্ডিয়ার টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার হতে ১৬ মে ২০১৯ তারিখে উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে ডা. রাজেন্দ্র বুড়বে স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত বিবৃতিতে বলা হয়,
“It has come to our notice that there is a message circulating in social media that Dr. Rajendra Badwe, Director, Tata Memorial suggested that hot water coconut water can destroy cancer cells and is the latest treatment for all types of cancer. We would like to clarify to all concerned that this is a fake message and neither Dr. Badwe nither Tata Memorial Centre subscribe to this view. There is no data to suggest that hot coconut water can provide cures for any type of cancer. Public are requested not to be informed by such false and harmful messages sent on social media.”
অর্থাৎ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় এবং এই তথ্যটি টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার কিংবা ডা. রাজেন্দ্র বুড়বে দেন নি বলে স্পষ্ট বিবৃতি দেয় টাটা মেমোরিয়াল। এমনকি এ ধরনের তথ্যে বিভ্রান্ত না হতেও সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
নারকেলের ফুটানো পানিতে কি আসলেই ক্যান্সার নিরাময় হয়?
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ওয়েবসাইটে ক্যান্সার রোগীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। উক্ত ম্যাগাজিনে ক্যান্সার প্রশমনে গরম পানি খাওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।
এছাড়াও, Cancer Research UK এর ওয়েবসাইটে ক্যান্সার চিকিৎসায় হলুদ উপকারী বললেও গরম পানি পানের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বে ২০২১ সালে গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে, নারিকেল তেল খেলে এবং চিনি খাওয়া ছেড়ে দিলে ক্যান্সার উপশম হয় দাবিতে তথ্য প্রচারিত হয়। সেসময়ও উক্ত দাবির ভিত্তিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
এছাড়াও ফুটানো গরম জল পানে ক্যান্সার নিরাময়ের দাবির সত্যতা যাচাইয়ে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Boom ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
উক্ত দাবিটিকে ভিত্তিহীন বলে ভারতের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের বক্তব্য নিয়ে The Hindu পত্রিকায় ১৭ মার্চ ২০১৯ তারিখে “Oncologists warn against misleading ‘miracle’ treatments on social media” শীর্ষক শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
এমনকি তথ্যটি ভারতে প্রচারিত হলে টাইমস অফ ইন্ডিয়া বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে সংবাদ প্রচার করে।
প্রসঙ্গত, উক্ত দাবিতে ভারতের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Factly এবং ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম AFP ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সুতরাং, ইন্ডিয়ার টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার হসপিটালের ডিরেক্টর ডা. রাজেন্দ্র বুড়বের নাম ব্যবহার করে “ফুটানো গরম জলপানে ক্যান্সার নিরাময়ের” একটি পদ্ধতি ভিত্তিহীনভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি: TATA MEMORIAL CENTRE Press Release
- AFP: Fake hospital advice falsely claims coconut water cures cancer
- টাইমস অফ ইন্ডিয়া: Hot coconut water not cure for cancer: Hospital
- The Hindue: Oncologists warn against misleading ‘miracle’ treatments on social media