সম্প্রতি, ‘তুমি মিয়া করো টিকটক: রুমিন ফারহানা’ শীর্ষক শিরোনামে বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটিতে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “এত বড় সাহস হয় কি করে? তুমি মিয়া করো টিকটক। তোমার হাইট হলো ৫ ফিট। তোমার গায়ের রং আরাফাতের মত না। তোমার উচ্চতা আরাফাতের মত না। তোমার পেছনে আওয়ামী লীগের মত দল নাই। বিএনপি থাকলেই পারেনা, শুয়াইয়া ফেলে আর পেছনে তো স্বতন্ত্র প্রার্থী!”

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওতে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা হিরো আলমকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্যটি করেননি বরং SATV টেলিভিশনের টকশো লেট এডিশনে সরকারকে সমালোচনা করে রুমিন ফারহানার করা দীর্ঘ মন্তব্যের একটি ছোট অংশ কেটে উক্ত ভিডিওটি তৈরী করা হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধানের মাধ্যমে SA টেলিভিশন এর ফেসবুক পেজ SATV News এ গত ১৮ জুলাই ‘আ’লীগের পা’ন্ডাদের র’ক্তে মিশে গেছে স’হিং’সতা : রুমিন ফারহানা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে হিরো আলমকে কটাক্ষ করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত রুমিন ফারহানার বক্তব্যের ভিডিওর সাথে উক্ত ভিডিওর ৭ মিনিট ৪২ সেকেন্ড থেকে ৭ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড পর্যন্ত দেওয়া বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে।
SATV News এর ভিডিওটি শুরু থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, ভিডিওটি মূলত SATV-র লেট এডিশন নামের টকশোর ১৯৮৭ নম্বর পর্ব ‘কোন পথে রাজনীতি’-র আলোচিত অংশের একটি ক্লিপ।
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে SATV Talk Show নামের ইউটিউব চ্যানেলে টকশোটির পুরো ভিডিও পাওয়া যায়।

লেট এডিশন টক-শো’র ফুল ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা যায়, টক-শো’র অতিথি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাড. এবিএম রিয়াজুল কবীর কাওসার নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করলে তার প্রেক্ষিতে রুমিন ফারহানা বলেন, “যোগ্যতাটা কি? কন্সটিটিউশনে তো পরিষ্কার বলে দিয়েছে। বয়স হতে হবে ২৫। বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। পাগল হলে হবে না। দেউলিয়া হলে হবে না। ফৌজদারী মামলায় সাজা প্রাপ্ত হওয়ার পর ২ বছরের সাজা হলে ৫ বছর পার হতে হবে। এই তো ক্রাইটেরিয়া মোটা দাগে? হিরো আলম তার কোনটার মধ্যে পড়েছে? সেতো ঘোষিত প্রার্থী, তার মনোনয়ন একসেপ্ট হয়েছে। তাহলে আপনি তার অযোগ্যতা ধরবেন কিভাবে?”
ভিডিওটিতে তাকে আরও বলতে শোনা যায়, “আমি মনে করি না আজকে যে নির্বাচন হয়েছে সেখানে হিরো আলমকে হেনস্তা করার বা নির্বাচনটাকে বির্তকিত করে ফেলার কোনো নির্দেশনা উপর মহল থেকে ছিল। না, এটা হতে পারে না। এটা রাজনীতির সামান্য জ্ঞান দিয়েই বোঝা যায়। কিন্তু ওইযে পান্ডাদের রক্তে মিশে গেছে স’হিংসতা। পান্ডাদের অভ্যাস হয়ে গেছে ভিন্ন কেউ দাঁড়াবে এত বড় সাহস হয় কি করে!? তুমি মিয়া করো টিকটক। তোমার হাইট হলো ৫ ফিট। তোমার গায়ের রং আরাফাতের মত না। তোমার উচ্চতা আরাফাতের মত না। তোমার পেছনে আওয়ামী লীগের মত দল নাই। বিএনপি থাকলেই পারেনা, শুয়াইয়া ফেলে আর পেছনে তো স্বতন্ত্র প্রার্থী বেচারা। সুতরাং তাকে সহ্য করবে এটাই তো আওয়ামী লীগের ইগোতে লাগার মত বিষয়।”
অর্থাৎ, টকশোতে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে রুমিন ফারহানার দেওয়া মূল বক্তব্যের একটি অংশ “তুমি মিয়া করো টিকটক। তোমার হাইট হলো ৫ ফিট। তোমার গায়ের রং আরাফাতের মত না। তোমার উচ্চতা আরাফাতের মত না। তোমার পেছনে আওয়ামী লীগের মত দল নাই। বিএনপি থাকলেই পারেনা, শুয়াইয়া ফেলে আর পেছনে তো স্বতন্ত্র প্রার্থী” শীর্ষক কেটে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
মূলত, ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনের দিন স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিরো আলমের উপর হামলার প্রসংঙ্গে SATV-র জনপ্রিয় টকশো লেট এডিশনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাড. এবিএম রিয়াজুল কবীর কাওসার নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে টকশোর আরেক অতিথি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, “আমি মনে করি না আজকে যে নির্বাচন হয়েছে সেখানে হিরো আলমকে হেনস্তা করার বা নির্বাচনটাকে বির্তকিত করে ফেলার কোনো নির্দেশনা উপর মহল থেকে ছিল। না, এটা হতে পারে না। এটা রাজনীতির সামান্য জ্ঞান দিয়েই বোঝা যায়। কিন্তু ওইযে পান্ডাদের রক্তে মিশে গেছে স’হিংসতা। পান্ডাদের অভ্যাস হয়ে গেছে ভিন্ন কেউ দাড়াবে এত বড় সাহস হয় কি করে!? তুমি মিয়া করো টিকটক। তোমার হাইট হলো ৫ ফিট। তোমার গায়ের রং আরাফাতের মত না। তোমার উচ্চতা আরাফাতের মত না। তোমার পেছনে আওয়ামী লীগের মত দল নাই। বিএনপি থাকলেই পারেনা, শুয়াইয়া ফেলে আর পেছনে তো স্বতন্ত্র প্রার্থী বেচারা। সুতরাং তাকে সহ্য করবে এটাই তো আওয়ামী লীগের ইগোতে লাগার মত বিষয়।” তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রুমিন ফারহানার সেই বক্তব্যের একটি ছোট খন্ডিত অংশকে এমনভাবে প্রচার করা হচ্ছে যা দেখে মনে হচ্ছে রুমিন ফারহানা হিরো আলমের যোগ্যতা নিয়ে কটাক্ষ করছেন। যার ফলে আলোচিত বক্তব্যটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত এবং গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের বক্তব্য বিকৃত করে ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, SATV-র টকশো লেট এডিশনে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রুমিন ফারহানার দেওয়া একটি দীর্ঘ বক্তব্যের একটি খন্ডিত অংশ বিকৃতভাবে প্রচার করা হচ্ছে।