বুধবার, অক্টোবর 4, 2023
spot_img

গণঅধিকার পরিষদ নেতা রাশেদ খানের বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার

সম্প্রতি, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খানের বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক প্রচার করা হচ্ছে।

ভিডিওতে রাশেদ খানকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “জামায়াত বিএনপি যেহেতু মাঠে নামতে পারে না। আমাদেরকে পেছন থেকে অর্থ টাকা কড়ি দিয়ে মাঠে নামায়। তারেক রহমানের কাছ থেকে একশ পচিঁশ কোটি টাকা খেয়েছি।”  

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।   

 ফ্যাক্টচেক

রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গণঅধিকার পরিষদ নেতা রাশেদ খান বিএনপি নেতা তারেক রহমানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আন্দোলন করেন এমন কোনো মন্তব্য করেননি বরং রাশেদ খানের দেওয়া দীর্ঘ একটি বক্তব্যের কিছু অংশ জোড়া লাগিয়ে উক্ত ভিডিওটি তৈরী করা হয়েছে। 

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধানের মাধ্যমে Changetv.press নামের একটি সংবাদ ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেলে গত ৫ জানুয়ারি ‘ভিপি নুরের সঙ্গে মোসাদের বৈঠক নিয়ে এসব কী বলছেন রাশেদ? শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ)  খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Changetv.press Youtube

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ফেসবুকে প্রচারিত রাশেদ খানের বক্তব্যের ভিডিওর সাথে উক্ত ভিডিওর ৫৩ সেকেন্ড থেকে ৫৭  এবং ১ মিনিট ০১ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ০৭  সেকেন্ড পর্যন্ত দেওয়া বক্তব্যের হবহু মিল রয়েছে।

এদিকে, Changetv.press এর ভিডিওটি শুরু থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, সম্প্রতি ভিপি নুর এবং ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির ভাইরাল হওয়া ছবির বিষয়টিকে গণ অধিকার পরিষদ কিভাবে খণ্ডিত করবে এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান বলেন, “ভিপি নুরকে নিয়ে ষড়যন্ত্র যে আজকেই শুরু হয়েছে তা নয়। তাকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র চলছে। কোটা আন্দোলন থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত এই সরকারের ব্যক্তি বিশেষ; বিশেষ করে নিয়োজিত মহল যারা রয়েছে তারা আসলে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, আমরা নাকি তারেক রহমানের কাছ থেকে একশ পচিঁশ কোটি টাকা খেয়েছি। বলা হয়েছিল, এই আন্দোলন নাকি জামায়াত বিএনপির আন্দোলন। জামায়াত বিএনপি যেহেতু মাঠে নামতে পারে না। আমাদেরকে পেছন থেকে অর্থ টাকা কড়ি দিয়ে মাঠে নামায়।”

অর্থাৎ, রাশেদ খানের মূল বক্তব্যের শুরুর, “ভিপি নুরকে নিয়ে ষড়যন্ত্র যে আজকেই শুরু হয়েছে তা নয়। তাকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র চলছে। কোটা আন্দোলন থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত এই সরকারের ব্যক্তি বিশেষ; বিশেষ করে নিয়োজিত মহল যারা রয়েছে তারা আসলে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল” এই অংশ এবং বক্তব্যের মাঝের “বলা হয়েছিল, এই আন্দোলন নাকি জামায়াত বিএনপির আন্দোলন।” এই অংশ  বাদ দিয়ে আগে পরের দুইটি খণ্ডিত অংশ জোড়া লাগিয়ে উক্ত ভিডিওটি তৈরী করা হয়েছে।

মূলত, গত ৫ জানুয়ারি সংবাদ ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল Changetv.press এ প্রচারিত গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খানের এক সাক্ষাৎকারের শুরুর দিকে সাংবাদিক তাকে ভিপি নুর এবং মেন্দি এন সাফাদির ভাইরাল হওয়া ছবির বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে ভিপি নুরকে নিয়ে আগেও সমালোচনা হয়েছিল উল্লেখ করে রাশেদ খান বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বলা হয়েছি, আমরা নাকি তারেক রহমানের কাছ থেকে একশ পচিঁশ কোটি টাকা খেয়েছি। বলা হয়েছিল, এই আন্দোলন নাকি জামায়াত বিএনপির আন্দোলন। জামায়াত বিএনপি যেহেতু মাঠে নামতে পারে না। আমাদেরকে পেছন থেকে অর্থ টাকা কড়ি দিয়ে মাঠে নামায়।” তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাশেদ খানের সেই বক্তব্যের দুইটি খণ্ডিত অংশ জোড়া লাগিয়ে“তারেক রহমানের কাছ থেকে একশ পচিঁশ কোটি টাকা খেয়েছি। জামায়াত বিএনপি যেহেতু মাঠে নামতে পারে না। আমাদেরকে পেছন থেকে অর্থ টাকা কোড়ি দিয়ে মাঠে নামায়।” শীর্ষক খণ্ডিত অংশটুকু বিকৃতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। যার ফলে আলোচিত বক্তব্যটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এ সংবাদ সম্মেলনে আসার পূর্বেই ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা মারধরের শিকার হন বলে অভিযোগ উঠে।  এরপর দুপুরে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তৎকালীন যুগ্ম আহবায়ক মশিউর রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করা হয়। যেখানে তিনি সংগঠনটির ৪ নেতা রাশেদ, ফারুক, মামুন এবং নুর এর বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির কাছ থেকে টাকা খাওয়ার অভিযোগ তোলেন। তবে এ বিষয়ে সংগঠনটির তৎকালীন আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান সেসময় গণমাধ্যমে জানান, ‘ছাত্রলীগ দুপুরের আগেই মশিউরকে হল থেকে তুলে নিয়ে গেছে। সে কোথায় আছে তা আমি এখনও জানতে পারিনি।’

 উল্লেখ্য, পূর্বেও ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ. আরাফাতের দেওয়া একটি দীর্ঘ বক্তব্য কেটে বিকৃত বিকৃতভাবে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, একটি সংবাদ ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেলে গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খানের দেওয়া এক দীর্ঘ বক্তব্যের একটি খণ্ডিত অংশ বিকৃতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। ‍

তথ্যসূত্র

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img