প্রথম আলো’র ফটোকার্ড বিকৃত করে মির্জা ফখরুলের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

সম্প্রতি, ‘২৮ অক্টোবর নেতা-কর্মীরা ঢাকায় না এসে নিজ জেলায় সমাবেশে অংশগ্রহন করুন’ শীর্ষক মন্তব্যকে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য দাবিতে দেশের মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ) এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘২৮ অক্টোবর নেতা-কর্মীরা ঢাকায় না এসে নিজ জেলায় সমাবেশে অংশগ্রহন করুন’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি এবং প্রথম আলোও উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত এই ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ হিসেবে ২৩ অক্টোবরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

Screenshot: Facebook Claim Post

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা লোগো ও তারিখের সূত্র ধরে প্রথম আলো’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২৩ অক্টোবর বা তার আগে পরে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, প্রথম আলো’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে, গত ২৩ অক্টোবর প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজে ‘২৮ অক্টোবর নিরাপত্তার ‘ঘাটতি’ দেখা দিলেই শক্তি প্রয়োগ করবে পুলিশ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ডের বিট এবং তারিখের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির বিট এবং তারিখের হুবহু মিল খুজে পাওয়া যায়। উভয় ফটোকার্ডে-ই বিটের স্থানে বাংলাদেশ এবং তারিখের স্থানে ২৩ অক্টোবর দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ড ব্যতীত প্রথম আলোর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সেদিন বাংলাদেশ বিটে আর কোনো ফটোকার্ড প্রচার করা হয়নি। ধারণা করা যায়, এই ফটোকার্ডটি এডিট করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডটির টেক্সট ফন্টের সাথে প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত অন্যান্য ফটোকার্ডের টেক্সট ফন্টের ভিন্নতা রয়েছে।

Photocard Comparison by Rumor Scanner 

পরবর্তী অনুসন্ধানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উক্ত মন্তব্যটি করেছেন কিনা জানতে একাধিক প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও এমন কোনো তথ্যের সন্ধানে পাওয়া যায়নি। তবে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২৩ অক্টোবর ‘হুঁশিয়ারি, বাধা উপেক্ষা করেই ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুজে পাওয়া যায়।

Screenshot: ProthomAlo

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে এই মহাসমাবেশ থেকে মহাযাত্রা শুরুর কথা বলেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই প্রেক্ষাপটে মহাসমাবেশ থেকেই বিএনপি ঢাকার রাজপথে বসে পড়বে কি না, এ ধরনের নানা আলোচনা চলছে। গতকাল দলের এক যৌথসভার পর সাংবাদিকদের কাছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য বলেছেন, ‘২৮ অক্টোবরের সমাবেশ কেন্দ্র করে দলের নেতা-কর্মীদের ঢাকায় এসে বসে পড়তে বলা হয়নি। আমরা বলেছি, ২৮ তারিখে কর্মসূচির পরে যে যার জায়গায় চলে যাবে এবং পরবর্তী কর্মসূচির জন্য তারা অপেক্ষা করবে।’ দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ শেষ করা হবে, এমন পরিকল্পনা নিয়েই তাঁরা এগোচ্ছেন।

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়,  দলটির কেন্দ্র থেকে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যেকোনো পরিস্থিতিতে মহাসমাবেশে এসে হাজির হতে হবে। এছাড়াও ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে কেবল যুবদলেরই পাঁচ লাখ নেতা-কর্মীকে হাজির করানোর লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের শীর্ষ নেতারা।

এছাড়াও পরবর্তীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উক্ত মন্তব্যটি করেছেন কিনা জানতে চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন কোনো মন্তব্য করেননি।”

অর্থাৎ, ‘২৮ অক্টোবর নেতা-কর্মীরা ঢাকায় না এসে নিজ জেলায় সমাবেশে অংশগ্রহন করুন’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য মির্জা ফখরুল ইসলাম করেননি।

মূলত, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির দাবিতে গত ১৮ অক্টোবর জনসমাবেশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। উক্ত সমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগ করতে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে সরকার দাবি না মানলে মহাসমাবেশ থেকে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথাও জানানো হয়। এছাড়াও ‍উক্ত মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি।  যাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজ করছে এক সংকটময় পরিস্থিতি। এরই প্রেক্ষিতে উক্ত সমাবেশের বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ‘২৮ অক্টোবর নেতা-কর্মীরা ঢাকায় না এসে নিজ জেলায় সমাবেশে অংশগ্রহন করুন’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য দাবিতে দেশের মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে ‍রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজ কিংবা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, বিএনপি’রমহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এমন কোনো মন্তব্য করেননি বলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ফটোকার্ড ব্যবহার করে অপপ্রচারের বিষয়ে গত ০৫ সেপ্টেম্বর বিস্তারিত ফ্যাক্ট ফাইল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘২৮ অক্টোবর নেতা-কর্মীরা ঢাকায় না এসে নিজ জেলায় সমাবেশে অংশগ্রহন করুন’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img