বেগম খালেদা জিয়ার পুরোনো বক্তব্যকে বিকৃত করে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার

সম্প্রতি, “ক্ষমতায় তো থাকি তারপর দেখা যাবে কি হয় দেশ নিয়ে !! এই দেশ দিয়ে আর কি দরকার ? আমরা যতো দিন পারি থাকি, লুটেপুটে খাই দাই আরাম করে থাকি !! তারপরে দেশ নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নাই !! এই ছিলো ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ।” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে।

খালেদা

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ,এখানে , এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এখানে ,এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রচারিত বক্তব্যটি ২০০১ সালের নয় বরং এটি ২০১৭ সালে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে দেওয়া একটি বক্তব্য এবং প্রচারিত ভিডিওতে বেগম খালেদা জিয়ার একটি বক্তব্যের আলাদা সময়ের খণ্ড খণ্ড অংশের মন্তব্য সংযুক্ত করে বিকৃত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স সার্চের মাধ্যমে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের “Bangladesh Nationalist Party-BNP” নামের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারীতে “ছাত্রদলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটির ৪১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড থেকে ৪৩ মিনিট পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন,

“আমরাও তো কিছুদিন সরকার চালিয়েছি, জানি। এই যেসব আর্মস কেনা হচ্ছে, এই আর্মসের ই এইভাবে তো হয়না কোনো দিনও। অনেক নিয়ম কানুন আছে। কিন্তু আজকাল কোনো নিয়ম কানুনেরই ধার ধারে না। টেন্ডারেরও পর্যন্ত ধার ধারে না। আজকে ফট করে এই অস্ত্র কিনে ফেললাম, ওই অস্ত্র কিনে ফেললাম। রাশিয়া থেকে কিছু কিনলাম, অমুকখান থেকে কিছু কিনলাম, আমেরিকা থেকে কিছু কিনলাম, ইন্ডিয়া থেকে কিছু কিনলাম, যেখান থেকে পাবো কমিশন দেয়া হবে, ক্ষমতায় থাকার জন্য একটু আশ্বাস দেবে, তার কাছ থেকেই কিনো। “ক্ষমতায় তো থাকি তারপর দেখা যাবে কী হয় দেশ নিয়ে। এই দেশ দিয়ে আর কী দরকার। আমরা যতদিন পাই থাকি, লুটেপুটে খাই দাই আরাম করে থাকি, তারপরে এই দেশ নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নাই।” কিন্তু তোমরা (ছাত্রদল) আজকে তোমাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। তোমাদের কাছে আজকে একটা বিরাট দিন, আনন্দের দিন। তোমাদেরকে আজকে শপথ নেয়ার দিন যে, এই দেশটাকে আমরা, এইযে জালেম অত্যাচারী লুটেরা সরকারের হাত থেকে কী করে দেশটাকে আমরা বাঁচাবো। কী করে আমরা বাঁচাবো সেজন্য আমরা চিন্তাভাবনা করে কর্মসূচিও দিতে হবে, এবং চিন্তাভাবনা করে কথাও বলতে হবে।”

তাছাড়া, ভিডিওর ৪৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড থেকে ৪৪ মিনিট ১০ সেকেন্ড সময়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন

“সেই জন্যে ইনারা ভাবছেন এখন বসেছি সব চেয়ারগুলোতে, বিশেষ করে যিনি আছেন, “চেয়ারে বসেছি এমন শক্ত করে, শক্ত করে ধরে রাখতে হয় না। ওই আছেনা কী, কী একটা এড দেয় না, ফেভিকল না কী একটা আঠা? ফেভিকল লাগায়া বইসা গেছি, কাজেই এখান থেকে আর উঠছি না, নড়ছি না।” এই হলো অবস্থা, বুঝেছেন।”

ওপরের মন্তব্যগুলো থেকে এটা সহজে অনুমেয় যে বেগম খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্যে উক্ত কথাগুলো আওয়ামী লীগ সরকারকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন। আর সেই কথাগুলোকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে সম্প্রতি এমনভাবে সামাজিক মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে মনে হচ্ছে এসব কথা তিনি তার নিজের এবং বিএনপির অবস্থানকে ইঙ্গিত করে বলেছেন।

মূলত, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট মিলনায়তনে ছাত্রদল আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটি দীর্ঘ বক্তব্য দেন। উক্ত বক্তব্যে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারকে ইঙ্গিত দিয়ে করা সমালোচনা সূচক মন্তব্যের দুটি আলাদা সময়ের খণ্ড খণ্ড অংশকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সংযুক্তের মাধ্যমে বিকৃত আকারে বিভ্রান্তিকর শিরোনামে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, পূর্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য বিকৃত করে প্রচারিত ভিডিও ভুয়া চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ২০১৭ সালে ছাত্রদলের এক সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক প্রদানকৃত একটি বক্তব্যের ভিডিওকে বিকৃত করে “২০০১ সালে ক্ষমতা এসে গোপন মিটিংয়ে যা বলেছিলেন খালেদা জিয়া” শীর্ষক দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

Bangladesh Nationalist Party-BNP- ছাত্রদলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য

আরও পড়ুন

spot_img