সম্প্রতি, বাংলাদেশি, বলে “হাসপাতালেও” জায়গা নেই!!– শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, একজন বাংলাদেশি তার বাবাকে নিয়ে ভারতে গেছেন চিকিৎসা করাতে। সেখানে হাসপাতালে জায়গা দিচ্ছে না। পরবর্তীতে কিছু যুবক এসে, কোথা থেকে এসেছে জানতে চাইলে সে বাংলাদেশ থেকে এসেছে বলে পরিচয় দেয়। এরপর তাকে হেনস্তা করতে থাকে। পরিশেষে একজন ডাক্তার এসে তাঁর বাবাকে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাংলাদেশি বলে হাসপাতালে জায়গা না পাওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয় বরং বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি উক্ত ভিডিওটি বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি যেসব অ্যাকাউন্ট এবং পেজ থেকে ছড়িয়েছে সেসব পোস্টের কমেন্টবক্স পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, অধিকাংশ নেটিজেন বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
Screenshot collage: Rumor Scanner
বিষয়টি যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে Comedy Processing Unit নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ৪ ডিসেম্বর “বাংলাদেশি, বলে “হাসপাতালেও” জায়গা নেই!!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আলোচিত মূল ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: Facebook
১২ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের পুরো ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটি’র ১৮ সেকেন্ড অংশে ডিসক্লেইমারে উল্লেখ পাওয়া যায়, এই ভিডিওটি বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।
Screenshot source: Facebook
পরবর্তীতে উক্ত পেজটির অ্যাবাউট সেকশন পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে উল্লেখিত তথ্য থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায়, এটি একটি বিনোদনভিত্তিক পেজ।
Screenshot source: Facebook
তাছাড়া উক্ত পেজ থেকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক কয়েকটি ভিডিও (১, ২, ৩) পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেগুলোও বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি ভিডিও।
এছাড়া, এসব ভিডিওতে বাংলাদেশি যুবক দাবিতে প্রচারিত ব্যক্তিরও উপস্থিতি পাওয়া যায়। এতে বোঝা যায় যে, কথিত বাংলাদেশি ওই যুবক Comedy Processing Unit এর একজন সদস্য।
Screenshot comparison: Rumor Scanne
মূলত, গত ১৯ নভেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিত ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয় ভারত। সে ম্যাচে বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকদের একাংশের ভারতের পরাজয়ে উল্লাস করার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ভারতে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ভারতীয়দের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি জানান। পরবর্তীতে বাংলাদেশি, বলে “হাসপাতালেও” জায়গা নেই!! শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ০৪ ডিসেম্বর Comedy Processing Unit নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি উক্ত ভিডিওটি পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বাংলাদেশি নাগরিক বলে বাবার চিকিৎসা করাতে ভারতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হলে সেটিও স্ক্রিপ্টডে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি ভারতে বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাংলাদেশি যুবক হাসপাতালে জায়গা পাচ্ছে না- শীর্ষক ভিডিওটিকে বাস্তব ঘটনার ভিডিও দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওর ছবিগুলো গত ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে হওয়া ভূমিকম্পের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ভবন বা রাস্তার নয় বরং ভিন্ন ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন দেশের কয়েকটি ছবি সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নেপালে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে পাঁচ হাজারের উপরে মানুষ মারা যায়। সেসময় নেপালের বিভিন্ন ভবনও ধসে পড়ে। তখনকার দৃশ্য এটি।
অর্থাৎ, ছবিটি গত ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে হওয়া ভূমিকম্পের ফলে ক্ষয়ক্ষতি হওয়া দৃশ্যেরনয় বরং এটি ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে নেপালে হওয়া ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য।
ছবি যাচাই- ২
Screenshot: Tiktok Claim Post
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতীয় গণমাধ্যম The Economic Times এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল “Nepal earthquake: Eerie reminder of 1934 tragedy” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: The Economic Times
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উক্ত ছবিটিও ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে নেপালে হওয়া ভূমিকম্পের ফলে ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্যের।
অর্থাৎ, আলোচিত এই ছবিটিও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০১৫ সালে নেপালে হওয়া ভূমিকম্পের সময়কার।
ছবি যাচাই- ৩
Screenshot: Tiktok Claim Post
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম Voice Of America এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল “More Than 3,200 Dead in Nepal Quake” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Voice Of America
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই ছবিটিও ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে নেপালে হওয়া ভূমিকম্পের সময়কার দৃশ্য।
অর্থাৎ, আলোচিত এই ছবিটিও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং নেপালের।
ছবি যাচাই- ৪
Screenshot: Tiktok Claim Post
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতীয় গণমাধ্যম The Times Of India এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি “Is India sitting on a ticking earthquake time bomb?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: The Times Of India
অর্থাৎ, উক্ত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে হওয়া ভূমিকম্পের নয় বরং পুরোনো।
ছবি যাচাই- ৫
Screenshot: Tiktok Claim Post
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম Al Jazeera’র ওয়েবসাইটে গত ৬ ফেব্রুয়ারি “Thousands dead after powerful quakes devastate Turkey and Syria” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে থাকা ভিডিও’র থাম্বনেইলে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Al Jazeera
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় বড় ধরনের কম্পন আঘাত হেনেছে। এই ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। এটি ঐ ঘটনার দৃশ্য।
অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে হওয়া ভূমিকম্পের নয় বরং ছবিটি তুরস্ক বা সিরিয়ার।
মূলত, গত ২ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯ টার সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। পরবর্তীতে ইন্টারনেটে পাঁচটি ছবি যুক্ত একটি ভিডিও বাংলাদেশের ভূমিকম্পের ফলে ভবন ও রাস্তার ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিগুলো সম্প্রতি বাংলাদেশে হওয়া ভূমিকম্পের ফলে ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে ছবিগুলো ভিন্ন ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন দেশের পুরোনো ঘটনায় ধারণকৃত।
সুতরাং, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার দাবিতে একাধিক পুরোনো ছবি যুক্ত একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে ; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে নেত্রকোনার একটি মাহফিলের প্যান্ডেল থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নেত্রকোনার মাহফিলের প্যান্ডেল থেকে মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেফতার কারার দাবিটি সঠিক নয় বরং, উক্ত স্থানে মাহফিল করার জন্যে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় পুলিশ সদস্যরা সেখানে গিয়ে মাহফিল বন্ধ করে দেয় এবং রফিকুল ইসলাম মাদানীকে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেন।
অনুসন্ধানের শুরুতের কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীর ফেসবুক পেজে গত ৫ ডিসেম্বর করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
পোস্টটিতে তিনি লিখেছেন, ‘নেত্রকোনার মাহফিল কতৃপক্ষ বলছে অনুমতি নিয়েছে প্রশাসন বলছে অনুমতি নেওয়া হয়নি তারা মাইক বন্ধ করে দিয়েছে মাইক বন্ধ হওয়ার পর জনগণ চরম ক্ষেপে যায়,আমি জনগনকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর অনুরোধ করি আমিও নিভৃত থাকি কিন্তু এখনও জানতে পারিনি এমনটা কেন ঘটল..? তবে আলহামদুলিল্লাহ আমাকে জনগণ পায়ে হেঁটে সমস্ত বাঁধা বিপত্তি থেকে আমার শশুরালয় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়,,’
পরবর্তীতে তার ফেসবুক পেজ পর্যালোচনা করে ঘটনার দিন রাতেই অর্থাৎ, ০৫ ডিসেম্বর তার পেজে প্রচার করা একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
ভিডিওটিতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রিয় দেশবাসী, আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি, সুস্থ আছি। আমি গ্রেফতার হইনি। অযথা যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন দয়া করে তারা বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। আমি আমার শশুরালয়ে আছি। মাহফিল থেকে আমার শ্বশুরালয় পর্যন্ত হাজার হাজার জনগণ পায়ে হেঁটে আমার গাড়িকে সেফ করে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেছে। অতএব, আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন যেন দ্বীনের জন্যে কাজ করে যেতে পারি।’
পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক পত্রিকা নয়া দিগন্তের ওয়েবসাইটে আজ (০৭ ডিসেম্বর) পুলিশি বাধায় রফিকুল ইসলাম মাদানির মাহফিল পণ্ড শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Dailynayadiganta
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ৫ ডিসেম্বের নেত্রকোনা পৌর এলাকার বর্শীকুড়া নামক স্থানে যুবসমাজ কর্তৃক আয়োজিত এক ওয়াজ মাহফিলের প্রধান বক্ত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রফিকুল ইসলাম মাদানী। রাত সোয়া ১০টার দিকে তিনি বক্তব্য প্রদানের জন্যে স্টেজে উঠতে নিলে নেত্রকোনা মডেল থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেন এবং উক্ত স্থানে ওয়াজ মাহফিল করার জন্যে প্রশাসন কর্তৃক অনুমতি না থাকায় মাহফিলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মূলত, গত ০৫ ডিসেম্বর নেত্রকোনার পৌর এলাকার বর্শিকুড়ার দক্ষিণপাড়া (বড়বাড়ী) জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে যুব সমাজের আয়োজনে একটি ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। উক্ত মাহফিলে রফিকুল ইসলাম মাদানী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বক্তব্য প্রদানের জন্যে স্টেজে উঠতে নিলে স্থানীয় পুলিশ উক্ত স্থানে ওয়াজ মাহফিল করার অনুমতি না থাকায় মাহফিল বন্ধ করে দেয় এবং তাকে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেন। সেসময় একাধিক ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়, জনাব রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত মাহফিল থেকে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি নিরাপদেই তার শ্বশুড় বাড়িতে পৌঁছে বিষয়টি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন।
সুতরাং, মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে নেত্রকোনার মাহফিল থেকে পুলিশের গ্রেফতার করা হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিএমপি) প্রধান হারুন অর রশিদ পদত্যাগ করেননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কয়েকটি সংবাদপাঠের ভিডিও ক্লিপ এবং ভিডিও প্রতিবেদনের অংশ যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওর সংবাদ পাঠের অংশ এবং ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে তৎকালীন পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে আনিত একাধিক অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
ভিডিওর বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন বিদায়ী এসপি হারুন অর রশিদ।
অর্থাৎ, পুরোনো ঘটনার ভিডিও ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র হতে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের পদত্যাগের সত্যতা জানা যায়নি।
উক্ত প্রতিবেদনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা(ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদের বরাত দিয়ে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ করতে ঝালকাঠি-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহজাহান ওমর ডিবি অফিসে আসেন বলে জানানো হয়।
এ থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ স্বপদে বহাল আছেন।
মূলত, ২০১৯ সালে একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহার করা হয়। সেসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে জানান তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের পুরোনো সে ভিডিও ব্যবহার করে তিনি পদত্যাগ করেছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, হারুন অর রশিদ ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের(ডিবি) প্রধানের পদে বহাল আছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের পদ হারানোর বিষয়ে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার(ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ পদত্যাগ করেছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই দাবি প্রচার হওয়ার প্রেক্ষিতে একটি টিকটক পোস্টকে দাবি হিসেবে প্রতিবেদনে যুক্ত করা হলো।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নুর বাহিনীর ঢাকা ঘেরাওয়ের ভিডিও দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০২২ সালের ০৭ অক্টোবরে ছাত্রলীগ কর্তৃক ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মারধর করে পুলিশে দেওয়ার অভিযোগের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকায় গণ অধিকার পরিষদের মশাল মিছিলের ভিডিও। যা ভুয়া লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপের সহায়তায় সাম্প্রতিক ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
মূলত, ২০২২ সালের ০৭ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে ঐ দিনই মশাল মিছিল করে গণ অধিকার পরিষদ। সম্প্রতি ঐ মশাল মিছিলের একটি ভিডিওকে নুর বাহিনীর রাতের মধ্যেই ঢাকা ঘেরাও করার ভিডিও দাবিতে ভুয়া লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপের সহায়তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে ভিডিওটি প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
গতকাল ৫ ডিসেম্বর জনপ্রিয় ভিডিও গেম সিরিজ গ্র্যান্ড থেফট অটোর নতুন কিস্তি গ্র্যান্ড থেফট অটো-৬ (জিটিএ-৬) এর ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। উক্ত বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো গেম সিরিজটিকে সিনেমা সিরিজ উল্লেখ করে সংবাদ প্রচার করেছে।
সংবাদটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘ভিডিও গেমস নিয়ে আলোচিত সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ এখনো তুঙ্গে। ১০ বছর পরে নতুন রূপে আসছে গ্র্যান্ড থেফট অটো ৬ সিনেমার সিকুয়েল। গতকাল অ্যাকশন, ক্রাইম ড্রামা ঘরানার এই সিনেমার ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। প্রথম দিনে এই ট্রেলার দেখেছেন ১০ মিলিয়ন দর্শক। দেড় মিনিটের এই ট্রেলার থেকে জানা যায়, সিনেমাটি এবারই প্রথম নারীপ্রধান চরিত্রের দেখা পাওয়া যাবে। সিনেমাটি ২০২৫ সালে মুক্তি পাবে।’
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্র্যান্ড থেফট অটো (জিটিএ) সিনেমা সিরিজ নয় বরং এটি একটি ভিডিও গেম সিরিজ।
গ্র্যান্ড থেনফট অটো কী?
গ্র্যান্ড থেফট অটো (জিটিএ) মূলত জনপ্রিয় একটি অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার ভিডিও গেম সিরিজ। এই ভিডিও গেম সিরিজটি রকস্টার নর্থ (পূর্বে ডিএমএ ডিজাইন নামে পরিচিত) তৈরি করে এবং রকস্টার গেমস প্রকাশ করে। ১৯৯৭ সালে গ্র্যান্ড থেফট অটো প্রথম বাজারে আসে। গেমটির সর্বশেষ সংস্করণ গ্যান্ড থেফট অটো-৫ (জিএটিএ-৫) ২০১৩ সালে প্রকাশ পায়।
গতকাল ৫ ডিসেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন গেমটির নতুন কিস্তি জিটিএ-৬ এর ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। গেমের এই নতুন কিস্তি ২০২৫ সালে প্রকাশ করা হবে।
পরবর্তীতে, রকস্টার গেমসের ইউটিউব চ্যানেলে ট্রেলারটি খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত, গতকাল জনপ্রিয় অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার ভিডিও গেম সিরিজ গ্র্যান্ড থেফট অটো (জিটিএ) এর নতুন কিস্তি জিটিএ-৬ এর ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। গেমটির নতুন এই কিস্তি ২০২৫ সালে প্রকাশিত হবে। উক্ত বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো গ্র্যান্ড থেফট অটো কে সিনেমা সিরিজ হিসেবে উল্লেখ করে।
সুতরাং, গ্র্যান্ড থেফট অটো (জিটিএ) ভিডিও গেম সিরিজ হলেও দৈনিক প্রথম আলো এটিকে সিনেমা সিরিজ দাবি করে সংবাদ প্রকাশ করেছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, নতুন জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর মধ্যেই একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, কতিপয় নারী-পুরুষ প্যাঁক প্যাঁক শীর্ষক হাঁসের ডাকের শব্দগুচ্ছ উচ্চারণের মাধ্যমে হাঁসের চলার মতো করি ভঙ্গি করছেন। দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।
উল্লিখিত ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওগুলো প্রায় চার লাখ বার দেখা হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্যাঁক প্যাঁক শীর্ষক আলোচিত ভিডিওটি দেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অধীন কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণের দৃশ্য নয় বরং ২০২২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গণিত বইয়ের বিষয়গুলো সহজ ও আনন্দের সাথে শিক্ষার্থীদের শেখাতে গণিত অলিম্পিয়াডের আদলে শিখন কৌশলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভাইরাল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একটি কক্ষে কিছু ব্যক্তি হাঁসের প্যাক প্যাক ডাল সদৃশ ভঙ্গিতে কসরত করছেন। কক্ষের দেয়ালে একটি ব্যানার দেখা যাচ্ছে, যাতে লেখা ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ। স্থানের নাম উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, বদলগাছী, নওগাঁ লেখা রয়েছে। তবে ভিডিওটি কবের সে বিষয়ে ব্যানারটি থেকে স্পষ্ট ধারণা মেলেনি।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে ২০২২ সালের ০৬ অক্টোবর ফেসবুকের একটি গ্রুপে Shapan Hossain নামে এক ব্যক্তির একটি পোস্ট (আর্কাইভ) নজরে আসে আমাদের। এই পোস্টেও প্রায় একই ব্যানার ছিল যাতে তারিখ স্পষ্টতই পড়া যাচ্ছে, ০৩ থেকে ১০ অক্টোবর এবং এখানেও সমজাতীয় আরও ছয়টি ভিডিও ছিল, ছিল চারটি ছবিও। তবে উক্ত ভিডিওটি এই পোস্টে ছিল না।
এই পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যাচ্ছে, ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয় ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণের ৩য় দিনের কার্যক্রমের দৃশ্য এগুলো৷ স্থান – উপজেলা রির্সোস সেন্টার, বদলগাছী, নওগাঁ।
Screenshot: Facebook
আমরা জনাব স্বপনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তবে ভিডিওটির বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি।
রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, সে সময় দেশের একাধিক স্থানেও একই প্রশিক্ষণের ছবি পোস্ট করেছেন অনেকে। কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার এই প্রশিক্ষণের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
আমরা মূল ভিডিওটির খোঁজে আরও অনুসন্ধান করে একই বছরের (২০২২) ১১ মার্চ Gazipur City নামক একটি পেজে একই ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়৷
কাছাকাছি সময়ে দেশের আরো কিছু স্থানে এই ধরণের প্রশিক্ষণের খবর পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে যশোরেও একই ধরণের প্রশিক্ষণের (হাসের প্যাক প্যাক সদৃশ প্রশিক্ষণ) পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পেয়েছি আমরা।
এই পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে, দশমিক ভগ্নাংশ চেনার জন্য এই পদ্ধতিতে শিশুদের শিখনে পারদর্শী করতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল।
Screenshot: Facebook
ভাইরাল ভিডিওটি ধারণের স্থান অর্থাৎ নওগাঁর বদলগাছিতে উক্ত প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন এমন দুইজন শিক্ষকের খোঁজ পেয়েছি আমরা। তৎকালীন বদলগাছির মিঠাপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রতন কুমার সরকারের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি বলছিলেন, “এটা গত বছরের ঘটনা। নির্দিষ্ট তারিখ মনে পড়ছে না এই মুহূর্তে। তবে কোনো নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত নয় এটি। এটা এখন আর হচ্ছেও না।”
তৎকালীন বদলগাছির কাটগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাহমুদুল হাসানের সাথে কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। জনাব রতন আমাদেরকে বলেছেন, এই প্রশিক্ষণের দায়িত্বে মাহমুদুলই ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, চতুর্থ শ্রেণির ‘আনন্দে গণিত শিখি-কনটেন্ট ডেলিভারি বুক’-এ প্যাকঁ প্যাকেঁর এই শিখন কৌশলের বিষয়ে (৮৩ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ রয়েছে। তবে এটি মূল পাঠ্যবইয়ের অংশ নয়৷ চতুর্থ শ্রেণির গণিত বইয়েও এই বিষয়টির উল্লেখ নেই। শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে এবং আনন্দের সাথে গাণিতিক বিষয়গুলো আয়ত্ব করতে পারে তার জন্য গণিত অলিম্পিয়াডের কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিক (প্রথম-পঞ্চম) শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতা উন্নয়নের জন্য এই কনটেন্ট ডেলিভারি বইগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।
Screenshot: আনন্দে গণিত শিখি (চতুর্থ শ্রেণি)
গণিত অলিম্পিয়াডের মাস্টার ট্রেনার এবং ফরিদপুরের সদরপুরের ৩৩নং ডিক্রীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ আহসান হাবীব ২০২২ সালের ১৬ মার্চ এ বিষয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট (আর্কাইভ) করেন।
তিনি লিখেছেন, প্যাঁক প্যাঁকের দৌড়াদৌড়ি নিয়ে ইদানীং ফেসবুকে কেউ কেউ ট্রল করছেন। আমি জানিনা বিষয়টি তাঁরা জেনে নাকি না জেনে, না বুঝে এমনটি করছেন। কেউ কেউ লিখেছেন প্রশিক্ষণের নামে প্রাথমিক শিক্ষকদের এতোটা নিচে নামানো ঠিক হয়নি। আর এটি দিয়ে শিক্ষার্থীরাই বা কী শিখবে?
শিক্ষার্থীদের গল্প আকারে সাধারণ ভগ্নাংশ ও দশমিক ভগ্নাংশের বিষয়ে শেখাতে এই কৌশলটি প্রয়োগ করা হয় জানিয়ে জনাব হাবিব বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাধারণ ভগ্নাংশ থেকে দশমিক ভগ্নাংশের ধারণা পাবে। আর এভাবে প্যাঁক প্যাঁকের দৌড়াদৌড়ির মাধ্যমে শেখালে তারা খুব সহজেই বুঝবে, মজা পাবে, কখনও ভূলবে না, হৃদয়ে গ্রথিত হবে। আমার মনে হয় না আর কোন উপায়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দশমিক ভগ্নাংশের মতো এমন একটি জটিল বিষয় সহজ করে শেখানো যেতে পারে।
Screenshot: Facebook
আহসান হাবিব তার পোস্টে জানিয়েছেন, গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল প্রয়োগ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আনন্দে গণিত শেখানোর পদ্ধতিতে থাকা ‘প্যাক’ শব্দটি শিক্ষাক্ষেত্রে নতুনও নয়, হাস্যকরও নয়। এটি খুব মজার। কেননা, কাব-স্কাউটের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট স্টিফেনসন স্মিথ লর্ড ব্যাটন পাওয়েল অফ গিলওয়েল প্রায় ২০০ বছর আগে ‘প্যাক’ প্রবর্তন করে গেছেন। কাব- স্কাউটের সাপ্তাহিক মিটিংয়ের আগে ইউনিক লিডারগণ প্যাক, প্যাক শব্দ করে ষষ্ঠকদের একত্রিত করেন। ‘প্যাক’ ইংরেজি শব্দের অনেকগুলি বাংলা অর্থের মধ্যে একটি হচ্ছে – তাড়া করা বা একত্রিত করা। এটিতো শিক্ষকদের আনন্দ দেয়ার কোন বিষয় নয় বা Ice breaking এর জন্যও নয়। প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকগণকে শিক্ষার্থীদের মাঝে আইডিয়াটি উপস্থাপনের কৌশল ও ধাপসমূহ হাতে- কলমে অনুশীলন করানো হয় মাত্র।
এছাড়া, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম ইস্যুতে গতকাল (০৩ ডিসেম্বর) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে প্রকাশিত এক সতর্কীকরণ বিবৃতিতে বলা হয়, “কিছু লোক ব্যাঙের লাফ বা হাঁসের ডাক দিচ্ছে এমন ভিডিও আপলোড করে বলা হচ্ছে এটা নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার।”
মূলত, সম্প্রতি নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, কিছু ব্যক্তি হাঁসের ডাকের মতো প্যাঁক প্যাঁক উচ্চারণ করে হাসের মতো ভঙ্গি করছেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এই ভিডিওর দৃশ্যের সাথে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণেরও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ সালের শুরুতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মূল গণিত বইয়ের বিষয়গুলো সহজ ও আনন্দের সাথে শিক্ষার্থীদের শেখাতে গণিত অলিম্পিয়াডের আদলে এই শিখন কৌশলটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল৷ তবে এটি এখন আর দেওয়া হচ্ছে না আর নতুন শিক্ষা কারিকুলামেও এই বিষয়টির উল্লেখ নেই।
সুতরাং, ২০২২ সালের একটি ভিডিও সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে এটিকে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার বরাতে ‘বছরে ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করে’ শীর্ষকদাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারে অনুসন্ধানে দেখা যায়, বছরে ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করছে দাবিতে আল-জাজিরা কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বরং লিবিয়ার শরীয়াহ্ আইন বিষয়ক সভাপতি আহমেদ আল কাতানি আল-জাজিরাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে কোনোরকম তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত বিষয়টি উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তার ঐ মন্তব্যকে আল-জাজিরার প্রতিবেদন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
মূলত, কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর গৃহীত একটি সাক্ষাৎকারে লিবিয়ার শরীয়াহ্ আইন বিষয়ক সভাপতি আহমেদ আল কাতানি কোনরকম তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবি করেন যে আফ্রিকা অঞ্চলে প্রতিবছর ৬ মিলিয়ন মুসলিম ইসলাম ত্যাগ করছে। পরবর্তীতে, তার সাক্ষাৎকারের এই অংশকে আল জাজিরার প্রতিবেদন দাবি করে ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে ‘বছরে ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করে’ শীর্ষক তথ্যটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আল জাজিরা উক্ত দাবিতে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। উপরন্তু, কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র উক্ত দাবিকে সমর্থন করে না।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, নতুন জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর মধ্যেই একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, একদল নারী-পুরুষের ঝিংগা লালা হু শীর্ষক শব্দগুচ্ছ উচ্চারণের মাধ্যমে জংলী সদৃশ পোশাকে নৃত্য করছেন। দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।
উল্লিখিত দাবিতে Md Masud Rana নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত ফেসবুকে সবচেয়ে ভাইরাল পোস্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ১০ লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার বার। এছাড়া, এই পোস্টে প্রায় ১১০০ পৃথক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,ঝিংগা লালা হু শীর্ষক আলোচিত ভিডিওটি দেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অধীন কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণের দৃশ্য নয় বরং কাব স্কাউটের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুকে Rakibul Alam Rony নামে একটি অ্যাকাউন্টে আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
জনাব রনির পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যাচ্ছে, জংলী সাজার এই দৃশ্যটি ২৯২তম কাব স্কাউট ইউনিট লিডার বেসিক কোর্সের।
Screenshot: Facebook
রাকিবুল আলম রনি কুমিল্লার দাউদকান্দির ২৯নং শ্রীরায়েরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষক। আমরা জনাব রনির সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি রিউমর স্ক্যানার টিমকে বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের সাথে এর কোন যোগাযোগ (সম্পর্ক) নেই৷ এটি কুমিল্লা পিটিআইয়ের ঘটনা। সম্ভবত ২৯ অথবা ৩০ তারিখের ভিডিও। আমার ধারণ করা নয়। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি অন্য আরেকজন থেকে ডাউনলোড করে এই পোস্ট করেছিলাম।
গত ২৬ থেকে ৩০ নভেম্বর কুমিল্লার কুমিল্লা প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে (পিটিআই) ২৯২তম কাব স্কাউট ইউনিট লিডার বেসিক কোর্সের আলোচিত এই অনুষ্ঠানটি হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানের আরও একটি ভিডিওর বিষয়ে ইতোমধ্যে অনুসন্ধান করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম, যাতে দেখা যায়, একদল নারী-পুরুষের ব্যাঙ নৃত্যের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।
Screenshot: Facebook
আমরা ফ্যাক্টচেক করে জানিয়েছিলাম, এটি ছিল মূলত গত ২৮ নভেম্বর কুমিল্লা প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে (পিটিআই) কাব স্কাউটের এক প্রশিক্ষণে স্কাউটের সিলেবাসের অংশ হিসেবে আলোচিত একটি ব্যাঙ নৃত্যের প্রশিক্ষণ দৃশ্য।
এই দৃশ্যে প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মনতলী সরকারি প্রাথমিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: ইয়াছিন।
আমরা ঝিংগা লালা হু শীর্ষক ভিডিওটির বিষয়ে জনাব মো: ইয়াছিনের সাথে আবার যোগাযোগ করি। তিনিও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন, এটি একই অনুষ্ঠানেরই অন্য একটি ঘটনার দৃশ্য।
ইয়াছিন বলছেন, এটিও কাব স্কাউটের প্রশিক্ষণের অংশ ছিল। তবে এই প্রশিক্ষণে আমি অংশ না নিলেও আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম।
অনুসন্ধানে ফরহাদ রায়হান নামে এক ব্যক্তির সাম্প্রতিক একটি ফেসবুক পোস্ট (আর্কাইভ) নজরে আসে আমাদের, যেখানে আলোচিত অনুষ্ঠানটির বিষয়ে উল্লেখ করে এ সংক্রান্ত কিছু ছবি যুক্ত করা হয়েছে।
Screenshot: Facebook
আমরা জনাব ফরহাদ রায়হানের সাথে কথা বলেছি। তিনিও রিউমর স্ক্যানারকে একই তথ্য দিয়েছেন।
মূলত, গত নভেম্বরে কুমিল্লা প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে (পিটিআই) কাব স্কাউটের এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে ঝিংগা লালা হু শীর্ষক একটি নৃত্যের প্রশিক্ষণে অংশ নেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক। এই নৃত্যের দৃশ্যকে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অংশ হিসেবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত এমন আরো একটি ভিডিও নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, কাব স্কাউটের ট্রেনিং অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্যকে জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষকদের ঝিংগা লালা হু শীর্ষক প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আইসিইউ-তে মৃত রোগীকে গরুর ইনজেকশন দেওয়ার সিরিঞ্জ পুশ করে জীবিত দেখানোর দাবিটি ভিত্তিহীন। এছাড়া গরুর ইনজেকশন পুশ করে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখাও সম্ভব নয়।
মূলত, ২০১৭ সাল থেকেই বিভিন্ন সময়ে এই দাবিটি কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ফেসবুকে প্রচার করে আসছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে একইভাবে এই তথ্যটি পুনরায় প্রচার করা হচ্ছে।
পূর্বেও একই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক প্রচারিত হয়েছিলো। সে সময় বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনপ্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।