সম্প্রতি, পাবনার রূপপুরে জ্বালানি সরবরাহের সনদ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রূপপুরে জ্বালানি সরবরাহের সনদ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভ্লাদিমির পুতিন বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং রুশ ভাষায় দেওয়া তার বক্তব্যকে ভিন্ন একজন ব্যক্তি বাংলায় অনুবাদ করে শুনিয়েছেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে অনলাইন সংবাদমাধ্যম Dhaka Post এর ওয়েবসাইটে গত ০৫ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচিত অনুষ্ঠানটিতে সেদিন (০৫ অক্টোবর) রাশিয়া থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন বক্তব্য দেন। তাঁর বক্তব্য বাংলায় অনুবাদ করে শোনানো হয়।
Screenshot: Dhaka Post
এই তথ্যের সূত্র ধরে সেদিনের অনুষ্ঠানের লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে।
Screenshot: YouTube
ভিডিওর ৩৩ মিনিট ৫০ সেকেন্ড থেকে পুতিনকে বক্তব্য শুরু করতে দেখা যায়। পরের ১০ সেকেন্ড পুতিনকে রুশ ভাষাতেই বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এরপরই ভিন্ন একজন ব্যক্তি পুতিনের বক্তব্যকে বাংলায় অনুবাদ করতে শুরু করেন৷পুতিনের কণ্ঠস্বর এবং অনুবাদকারী ব্যক্তির কন্ঠস্বরে স্পষ্টতই ভিন্নতা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
অর্থাৎ, পুতিন সেদিন বাংলা ভাষায় বক্তব্য দেননি।
মূলত, গত ০৫ অক্টোবর পাবনার রূপপুরে জ্বালানি সরবরাহের সনদ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অনুষ্ঠানে তিনি বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। সেদিন রুশ প্রেসিডেন্ট রুশ ভাষাতেই বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যকে ভিন্ন এক ব্যক্তি বাংলায় অনুবাদ করে শুনিয়েছেন।
সুতরাং, রূপপুর প্রকল্পের অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রুশ ভাষায় দেওয়া বক্তব্যের ভিন্ন এক ব্যক্তির বাংলায় অনুবাদের ঘটনাকে পুতিন বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইসরায়েলের পতাকা নামিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলনের পর আযান দেওয়ার ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং এটি “Fist of the Free” নামের একটি সিরিজের দৃশ্য।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, Maxammed Boodmakaay নামের একটি ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে “If you are happy with Allahuakabar, write it” (অনূদিত) শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটির সাথে আলোচ্য ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে টিকটক ইউজারনেম ‘@palestiniandrama’ লক্ষ্য করা যায়।
Screenshot: Facebook
উক্ত টিকটক ইউজার নেমের সূত্র ধরে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ইউজারনেম সার্চ করে খুঁজে পাওয়া যায় ‘Palestinian Drama’ নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট। তবে, উল্লিখিত টিকটক অ্যাকাউন্টে মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্টের ইউজার নেম গুগলে সার্চ করে বেশ কিছু ভিডিওর প্রিভিউ লক্ষ্য করা যায় এবং প্রিভিউ গুলোয় ঢুকলে একটি ভিডিও রিমুভ অবস্থায় পাওয়া যায়।
রিমুভ হওয়া ভিডিওটির গুগল ক্যাশে অনুসন্ধান করলে মূল ভিডিওটি (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
ভিডিওটির আরবি ভাষার ক্যাপশন অনুবাদ করে জানা যাচ্ছে, ভিডিওটি “Fist of the Free” নামের একটি সিরিজের দৃশ্য।
Screenshot: Google Web Cache
সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধানের মাধ্যমে লেবানিজ টেলিভিশন চ্যানেল ‘Al-Manar’ এর ওয়েবসাইটে “Fist of the Free” সিরিজের ৩০ টি পর্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
পর্বগুলো পর্ববেক্ষণ করে ৩০তম পর্বের ৫০ মিনিট থেকে দেখানো দৃশ্যের সাথে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “ফিস্ট অফ দ্য ফ্রি” নামক সিরিজটি গাজা ভূখণ্ডের সত্য ঘটনা অনুকরণ করে তৈরি করা হয়েছে। সিরিজটি হামাস দ্বারা প্রযোজিত।
মূলত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়। এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের পতাকা নামিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলনের পর আযান দেওয়ার একটি ভিডিও বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচ্য ভিডিওটি “Fist of the Free” নামের একটি সিরিজের দৃশ্য।
উল্লেখ্য, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়। চলমান এই সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং,”ফিস্ট অফ দ্য ফ্রি” নামের একটি সিরিজে ইসরায়েলের পতাকা নামিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলনের পর আযান দেওয়ার দৃশ্যকে বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিয়েছেন এবং ২০২৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেনাবাহিনীর সদস্যের পুরোনো কিছু ছবি ও ভিডিও’র অংশ দেখা যায়।
Screenshot: Facebook Claim Post
‘ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা BNP’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ০৪ অক্টোবর ১ মিনিট ০৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।
ভিডিওটিতে বলা হয়, “এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিলো শেখ হাসিনা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নেওয়া হচ্ছে। এদিকে আগামী তিনমাসের মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়েই নির্বাচনের পক্রিয়া শুরু করবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ওদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে, যাতে করে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারে। এই নির্বাচনে সকল সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।”
উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি আলাদা ছবি এবং ভিডিও যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।
অসংগতি-১
ভিডিওটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নেওয়ার বিষয়ে কোনো ঘোষণা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ভিডিওটিতে ২০২৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার বিষয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
অসংগতি-২
ভিডিওটিতে দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিয়েছেন এবং আগামী তিন মাসের মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে আওয়ামী লীগ সরকার। তবে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে এই দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অসংগতি-৩
ভিডিওটিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নির্বাচনে সেনাবাহিনী সহায়তা করবে বলে দাবি করা হলেও গণমাধ্যম বা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে এসম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, আলোচিত ভিডিওটির শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি বইয়ে স্বাক্ষর করতে দেখা যাচ্ছে।
Screenshot: Facebook
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ০৪ জানুয়ারি মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: The Daily Star
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেসময় জাতীয় সংসদ ভবনে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে সংসদ সদস্যদের বইয়ে স্বাক্ষর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অর্থাৎ, এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, এটি ২০১৯ সালের ছবি।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সর্ম্পকিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পুর্ণবহাল করা হয়নি।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
মূলত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করার দাবিতে বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দাবি জানিয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে এবং বিপক্ষে ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য প্রচার করা হয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিয়েছেন এবং ২০২৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে সেখানে উক্ত তথ্যের কোনো নির্দিষ্ট সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নেওয়ার বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেননি।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে একাধিক ফ্যাক্টচেকপ্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের সিকিমে মেঘ ভাঙ্গার দৃশ্য শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং ভিডিওটি অস্ট্রিয়ার লেক মিলস্ট্যাটের উপর ঘটে যাওয়া মাইক্রোবার্স্ট এর দৃশ্য।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর ‘Techno -Wonders’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “Microburst at Lake Millstatt in #Austria” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: YouTube
উক্ত ভিডিওটির ক্যাপশনে থাকা বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটি অ্যাড্রিয়াটিক (১,৯২৯ ফুট) থেকে ৫৮৮ মিটার উপরে, মধ্য পূর্ব আল্পসের গুর্কটাল আল্পস (নক পর্বতমালা) রেঞ্জের মধ্যে ড্রাভা উপত্যকার উত্তরে, স্পিটাল আন ডার ড্রউ শহরের কাছে অবস্থিত।
অর্থাৎ অস্ট্রিয়ায় ঘটে যাওয়া পুরাতন একটি মাইক্রোবার্স্ট এর দৃশ্যকে ভারতের সিকিম অঞ্চলের মেঘ ভাঙ্গার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
মাইক্রোবার্স্ট কী?
মাইক্রোবার্স্ট একটি বজ্রঝড়ের মধ্যে দ্রুত ডুবে যাওয়া বাতাসের একটি প্লাম। এটি সাধারণত একই অঞ্চলে হয়ে থাকে যেখানে শিলাবৃষ্টি এবং ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এটি শিলাবৃষ্টি এবং ভারী বৃষ্টির বোঝা যা বাতাসকে নীচের দিকে টেনে নিয়ে যায়। বিস্তারিত দেখুন এখানে।
মূলত, সিকিমে মেঘ ভাঙ্গার দৃশ্য দাবিতে সম্প্রতি ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে, পর্বতারোহী পিটার মায়ার ২০১৮ সালে তার হোটেল টেরেস থেকে অস্ট্রিয়ার লেক মিলস্ট্যাটের উপর ঘটে যাওয়া মাইক্রোবার্স্ট এর দৃশ্যটি ধারণ করেন।
সুতরাং, অস্ট্রিয়ায় মাইক্রোবার্স্টের দৃশ্যকে ভারতের সিকিমের মেঘ ভাঙ্গার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ভয়ে বিমানঘাঁটি খালি করে পালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী‘ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের নয় বরং ভিডিওটি পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘Sprinter’ নামক এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি দক্ষিণ ইসরায়েলের রাস্তায় এফ-১৬ নামক দুটি যুদ্ধবিমান গাড়িতে করে নেওয়ার সময়ের দৃশ্য। যা সাম্প্রতিক ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হওয়ার বেশে কয়েকদিন আগের ঘটনা।
তাছাড়া, ‘Mahmood Khan’ নামক এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ভিডিও থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from Twitter
মূলত, গত ১৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ইসরায়েলের রাস্তায় গাড়িতে করে যুদ্ধবিমান নিয়ে যাওয়ার একটি দৃশ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়। সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তন সংঘাতকে কেন্দ্র করে ঐ ভিডিওকে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ভয়ে ইসরায়েলি বাহিনী বিমানঘাঁটি খালি করে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন- ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷
প্রসঙ্গত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ভয়ে ইসরায়েলি বাহিনী বিমানঘাঁটি খালি করে পালিয়ে যাওয়ার দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ‘এই মাত্র সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুনের ভীষণ অবস্থা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাথে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, গত ০২ অক্টোবর মিশরের ইসমাইলিয়া শহরে পুলিশের সদর দপ্তরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ধারণকৃত পুরোনো ভিডিওতে সচিবালয়ে আগুন লাগার শিরোনাম যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর ১ সেকেন্ড থেকে ৬ সেকেন্ড পর্যন্ত হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সোমবার অর্থাৎ ০২ অক্টোবর মিশরের সুয়েজ খালের তীরবর্তী শহর ইসমাইলিয়ার পুলিশ সদর দপ্তরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আরেকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম Reuters এর ওয়েবসাইটে Fire engulfs police facility in Egypt’s Ismailia, 25 hurt শীর্ষক শিরোনামে একই দিনে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Reuters
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, মিশরের ইসমাইলিয়া শহরের পুলিশ সদর দপ্তরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন।
এছাড়াও বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক The Daily Star এর বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে মিশরের ইসমাইলিয়ায় পুলিশ ভবনে আগুন, আহত অন্তত ২৫ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও একই তথ্য প্রদান করা হয়েছে।
Screenshot: The Daily Star
তবে দেশীয় কোনো গণমাধ্যমে সম্প্রতি বাংলাদেশের কোনো সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কোনো ঘটনার তথ্য পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
অর্থাৎ, মিশরের ইসমাইলিয়া শহরের পুলিশ সদর দপ্তরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ভিডিও বাংলাদেশের সচিবালয়ে আগুন লাগার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, গত ০২ অক্টোবর মিশরের সুয়েজ খাল তীরবর্তী শহর ইসমাইলিয়ার পুলিশ সদর দপ্তরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যাতে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। সেসময় উক্ত ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যগুলো সেসময় প্রচারিত ভিডিওগুলো দিয়েই উক্ত ঘটনার সংবাদ কাভার করে। কিন্তু সম্প্রতি উক্ত ঘটনার একটি ভিডিওতে ‘এই মাত্র সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুনের ভীষণ অবস্থা’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, মিশরের পুলিশ সদর দপ্তরে আগুন লাগার ভিডিও ব্যবহার করে বাংলাদেশের সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র আর্জেন্টিনা কর্তৃক ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং আর্জেন্টিনা ছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কোনগুলো?
পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের একটি দক্ষিণ আমেরিকা। মোট ১২ টি স্বাধীন রাষ্ট্র নিয়ে এ মহাদেশ গঠিত। রাষ্ট্রগুলো হলো ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, চিলি, বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, গায়ানা ও সুরিনাম।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র আর্জেন্টিনাই কি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে?
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম Al Jazeera এর ওয়েবসাইটে ২০১০ সালের ০৫ ডিসেম্বর ‘Brazil recognises Palestine’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সে বছর ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লুলা দ্যা সিলভা ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
আল জাজিরাতেই ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘Guyana recognises Palestinian state’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গায়ানার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে জানা যায়।
একই সংবাদমাধ্যমে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ‘Has Latin America abandoned Palestine?‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অনেকগুলো দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে আছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলি, ইকুয়েডর, ভেনিজুয়েলা।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ফরেন পলিসির ওয়েবসাইটে ২০১১ সালের ০৫ জানুয়ারি ‘Why are so many South American countries recognizing the Palestinian state?‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উপরিউক্ত দেশগুলো ছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ উরুগুয়ের নাম পাওয়া যায়, যারা রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এই দেশগুলো ছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকায় অন্যান্য দেশগুলোর নাম ধরে অনুসন্ধানে ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা ওয়াফার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে প্যারাগুয়ে, সুরিনাম, পেরুর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়।
এছাড়া অনুসন্ধানে দেখা যায়, মার্কিন সংবাদ মাধ্যম CNN এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ০৯ আগস্ট ‘Colombia recognizes Palestine as sovereign state‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কলম্বিয়াও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এ পর্যন্ত অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, কেবল আর্জেন্টিনাই একমাত্র নয়, দক্ষিণ আমেরিকার সবগুলো দেশই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং বিশ্বের ১৩৬ টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
মূলত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এতে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার নাগরিকদের প্রতিবাদের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনকে একমাত্র আর্জেন্টিনাই স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে কেবল আর্জেন্টিনা নয়, এই মহাদেশটির সব কটি দেশই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
সুতরাং, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনকে একমাত্র আর্জেন্টিনা স্বীকৃতি দিয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘ইসরায়েলে ফিলিস্তিনিদের হামলার মুখে দেশ ছাড়ছেন দেশটির নাগরিকেরা’ শীর্ষক একটি দাবি এবং এ সংক্রান্ত সংবাদে একটি ছবি দেশীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাতে হামাস আতঙ্কে ইসরায়েলিদের দেশ ত্যাগের দাবিটি সঠিক নয় বরং ইসরায়েলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্যকে ভুলভাবে অনুবাদ করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, এই সংবাদে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিটিও ছয় মাসের বেশি সময় পূর্বের।
হামাস আতঙ্কে ইসরায়েলিরা কি দেশ ছাড়ছেন?
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেশীয় গণমাধ্যমের সংবাদের সূত্রগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কালবেলা, ভোরের কাগজ সহ একাধিক গণমাধ্যম এ সংক্রান্ত দাবির সূত্র হিসেবে ইসরায়েলের দুই সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল ও গ্লোবসের প্রতিবেদনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। কতিপয় গণমাধ্যম কোনো সূত্রই উল্লেখ করেনি।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে গত ০৮ অক্টোবর প্রকাশিত গ্লোবসের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো বীমা কভারেজ সমস্যার কারণে ফ্লাইট বাতিল করছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি বিমান সংস্থাগুলো ইসরায়েলিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ফ্লাইট যুক্ত করেছে। হামাসের দ্বারা ইসরায়েলে আশ্চর্যজনক আক্রমণ বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে আগমন এবং প্রস্থানের উপর প্রভাব ফেলেছে, যদিও ইসরায়েল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর এবং ইলাতের কাছে র্যামন বিমানবন্দর উভয়ই অভ্যন্তরীণ এবং বহির্মুখী উভয় ফ্লাইটের জন্য উন্মুক্ত এবং পরিচালনা করছে।”
প্রতিবেদনে স্পষ্ট করেই বলা হয়, “বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের এক নং টার্মিনালটি সাময়িকভাবে বন্ধ থাকলেও তিন নং টার্মিনাল চালু রয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, ৬০ হাজার যাত্রী সেদিন (০৮ অক্টোবর) বেন গুরিয়ন দিয়ে অতিক্রম করেছেন, যাদের মধ্যে অনেক ইসরায়েলি নাগরিক রয়েছেন, যারা বিদেশে ছুটি কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন এবং বিদেশে অবস্থানরত (ইসরায়েলি) সৈন্যরা তাদের অবস্থানের সময় কমিয়ে দেশে ফিরছেন নিজ নিজ ইউনিটের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য।”
Screenshot: Globes
অর্থাৎ, গ্লোবসের প্রতিবেদনে ৬০ হাজার যাত্রীর যে ইসরায়েলি নাগরিক এবং এরা সকলেই দেশ ত্যাগ করেছেন শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ নেই, বরং উল্টো অর্থই দাঁড়াচ্ছে।
একইদিন প্রকাশিত টাইমস অফ ইসরায়েলের এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ফ্লাইট বাতিল হওয়ার কারণে ইসরায়েলে ঘুরতে আসা পর্যটকরা বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন এবং বিদেশে অবস্থানরত ইসরায়েলিরা দেশে ফিরতে বিভিন্ন বিমানবন্দরে জড়ো হচ্ছে।
Screenshot: Times of Israel
অর্থাৎ, এই প্রতিবেদনে ইসরায়েলিদের দেশ ত্যাগ বিষয়ক কোনো তথ্য নেই।
পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের (১, ২, ৩) এ সংক্রান্ত সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করে উক্ত দাবিগুলোর পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রচারিত ছবিটি কি সাম্প্রতিক সময়ের?
আলোচিত সংবাদটিতে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ইসরায়েলি গণমাধ্যম ‘Globes’ এর ওয়েবসাইটে গত ২৭ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot Comparison: Rumor Scanner
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন (২৭ মার্চ) ক্ষমতাসীনদের বিচার পদ্ধতির সংশোধন এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওয়াভ গালান্তকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের শ্রমিক ইউনিয়ন সংগঠন হিস্টাড্রুট এরর প্রধান আর্নন বার ডেভিড জাতীয় নিরাপত্তার প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে একটি সাধারণ ধর্মঘট ঘোষণা করেন। যার কারণে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের বিমান বন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকে এবং যাত্রীরা বিমান বন্দরেই অপেক্ষা করতে থাকেন। উক্ত ঘটনারই ছবি এটি।
অর্থাৎ, ছবিটি ছয় মাসের বেশি সময় পূর্বের।
মূলত, সম্প্রতি ‘ইসরায়েলে ফিলিস্তিনিদের হামলার মুখে দেশ ছাড়ছেন দেশটির নাগরিকেরা’ শীর্ষক একটি দাবি এবং এ সংক্রান্ত সংবাদে একটি ছবি দেশীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ইসরায়েলগামী বিভিন্ন দেশের একাধিক ফ্লাইট বাতিল হয়ে যাওয়ায় বিদেশে আটকে পড়া ইসরায়েলিরা দেশে ফিরতে না পারায় ইসরায়েলের এয়ারলাইন্সগুলো নতুন ফ্লাইট সংযুক্ত করে ইসরায়েলিদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়া, ইসরায়েলের বিমানবন্দরে যারা জড়ো হয়েছেন, এদের অনেকেই পর্যটক হিসেবে দেশে এসেছিলেন এবং ০৮ অক্টোবর একদিনেই এক বিমানবন্দর দিয়েই অন্তত ৬০ হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করেছেন বলে অনুমান করেছে গ্লোবস নামে দেশটির একটি গণমাধ্যম। এই তথ্যকেই ভুলভাবে অনুবাদ করে দেশীয় গণমাধ্যমে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, এই সংবাদে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিটিও ছয় মাসের বেশি সময় পূর্বের।
প্রসঙ্গত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, হামাস আতঙ্কে ইসরায়েলিদের দেশ ত্যাগের দাবিটি বিভ্রান্তিকর এবং এই সংবাদে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিটিও ছয় মাসের বেশি সময় পূর্বের।
১০ অক্টোবর, ২০২৩ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়েও এ সংক্রান্ত আরো একটি দাবি আমাদের নজরে আসায় সেটির বিষয়েও অনুসন্ধানের ফলাফল প্রতিবেদনে সংযোজন করা হলো।
সম্প্রতি, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সংঘাত ইস্যুতে ‘আল আকসা মসজিদ দখলে নিয়েছে ফিলিস্তিনিরা’ শীর্ষক শিরোনামে আল -আকসা প্রাঙ্গণে সোনালী গম্বুজবিশিষ্ট ‘ডোম অফ দ্য রক’ এর একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে, যেখানে সমবেত জনতাকে লাব্বাইক আল আকসা লাব্বাইক ধ্বনি উচ্চারণ করতে শোনা যাচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আল আকসা মসজিদ দখলে নিয়েছে ফিলিস্তিনিরা শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং গত এপ্রিলে লাইলাতুল কদরের ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির ফ্রেমের উপরের দিকে fwaz tobasy নামক দুইটি ইংরেজি শব্দ দেখা যাচ্ছে।
Screenshot: Facebook
এই তথ্যের সূত্র ধরে ফেসবুকে একই নামে একটি অ্যাকাউন্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
ফাওয়াজ তোবাসির এই অ্যাকাউন্টেই গত ১৮ এপ্রিল ভোর ৩ টা ১৬ মিনিটে প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
কিন্তু এই ভিডিওতে লাব্বাইক আল আকসা লাব্বাইক ধ্বনি উচ্চারণ শোনা যায়নি।
অর্থাৎ, উক্ত ধ্বনি সম্বলিত অডিও যুক্ত করে সাম্প্রতিক দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
একইদিন ভোর ৩ টা ২৪ মিনিটে আল আকসা প্রাঙ্গণের রাতের দৃশ্যের একটি ভিডিও-ও (আর্কাইভ) আপলোড করেন তিনি।
অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম দেখেছে, ১৭ এপ্রিল ফিলিস্তিনে লাইলাতুল কদর পালিত হয়। কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এ সংক্রান্ত একটি সংবাদেও আল আকসা প্রাঙ্গণের প্রায় একইরকম দৃশ্য দেখা যায়।
Screenshot: Al Jazeera
এ থেকে প্রতীয়মান হয়, ফাওয়াজ তোবাসি কর্তৃক প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওগুলো ১৭ এপ্রিল ধারণ করা হয়েছে।
তাছাড়া, ছড়িয়ে পড়া দাবিগুলোতে বলা হচ্ছে, আল আকসা মসজিদ দখলে নিয়েছে ফিলিস্তিনিরা। কিন্তু অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি, আল-আকসার বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে জেরুজালেম ও পশ্চিমতীর দখল করে নেবার আগে নিয়ন্ত্রণ করতো জর্ডান। এখন পূর্ব জেরুজালেম ইসরায়েল অধিকৃত হলেও আল-আকসা বা টেম্পল মাউন্ট এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে জর্ডান-ফিলিস্তিনের একটি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান। তবে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী এই প্রাঙ্গণের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকে।
মূলত, সম্প্রতি চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সংঘাত ইস্যুতে আল আকসা মসজিদ দখলে নিয়েছে ফিলিস্তিনিরা শীর্ষক শিরোনামে আল -আকসা প্রাঙ্গণে সোনালী গম্বুজবিশিষ্ট ‘ডোম অফ দ্য রক’ এর একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে, যেখানে সমবেত জনতাকে লাব্বাইক আল আকসা লাব্বাইক ধ্বনি উচ্চারণ করতে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ভিডিওটি প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পূর্বে, লাইলাতুল কদরের রাতে ধারণ করা হয়। উক্ত ভিডিওতে লাব্বাইক আল আকসা লাব্বাইক ধ্বনি সম্বলিত অডিও যুক্ত করে সাম্প্রতিক সময়ে ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া, আল আকসা মসজিদ ফিলিস্তিনিরা দখলে নিয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। কারণ এটি জর্ডান-ফিলিস্তিনের একটি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
প্রসঙ্গত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷
সুতরাং, ফিলিস্তিনের আল আকসা প্রাঙ্গণে গত এপ্রিলে লাইলাতুল কদরের ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, সৌদি আরবে শরীয়া আইনে মোহাম্মদ বিন মুরসাল নামে এক তরুণকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় ইন্টারনেটে একটি ভিডিও এবং ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিও ও ছবিতে থাকা ঐ তরুণই মোহাম্মদ বিন মুরসাল।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সৌদি আরবে মোহাম্মদ বিন মুরসালের শরীয়া আইনে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনাটি সত্য হলেও এটিকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে থাকা ব্যক্তিটি তিনি নন। প্রকৃতপক্ষে ভিন্ন ঘটনার পুরানো ভিডিও ও ভিন্ন ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে মোহাম্মদ বিন মুরসাল দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
বোরকা পরিহিতা নারীর সঙ্গে আবেগঘন মূহুর্তে থাকা তরুণটি মোহাম্মদ বিন মুরসাল নয়
উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সৌদি আরবের নাগরিক মুসফর মালিক সিরিয়ায় গিয়ে একটি জিহাদি দলে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর মুসফরকে সৌদি আরবে আনার জন্য অভিযান চালানো হয়। পরবর্তীতে মুসফর দেশে ফিরে আসলে বিমানবন্দরে তার মা ও পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়।
অর্থাৎ পুরনো একটি ভিন্ন ঘটনার ভিডিওচিত্রকে সাম্প্রতিক মোহাম্মদ বিন মুরসালের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ বিন মুরসাল দাবিতে ছড়ালো সৌদি গায়কের ছবি ও ভিডিও
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওগুলোতে মোহাম্মদ বিন মুরসালের দাবিতে একজন ব্যক্তির ছবি ও ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
তবে এ ব্যক্তি সম্পর্কে যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ‘nader.alsharari‘ নামক একটি অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের মালিক নাদের আলশারারির ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যাক্তির ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে নাদের আলশারারি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ‘Viberate’ নামক সঙ্গীত ডেটা বিশ্লেষণ কোম্পানির ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : Viberate
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নাদের আলশারারি সৌদি আরবের একজন সঙ্গীতশিল্পী। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গীতে বিশেষ করে আরবি লোকসঙ্গীতে দক্ষ। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম।
অর্থাৎ সৌদি আরবের লোকসঙ্গীতশিল্পী নাদের আলশারারিকে মোহাম্মদ বিন মুরসালের ছবি দাবিতে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সৌদি আরবের নাজরানের আল-রিজক পরিবারের সদস্য মোহাম্মদ বিন মুরসাল কয়েক বছর আগে মুইদ বিন আবদুল্লাহ বিন মোহসেন আল-ইয়ামিকে হত্যা করেছিলেন এবং এর দায়ে গত ২০ সেপ্টেম্বরে মুরসালকে সৌদি আইন অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। এ বিষয়টি রিউমর স্ক্যানার টিমকে নিশ্চিত করেছে সৌদি আরবের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান No Rumors।
মূলত, সম্প্রতি সৌদি আরবে এক যুবককে হত্যার সাজা হিসেবে মোহাম্মদ বিন মুরসাল নামে এক তরুণকে ইসলামী শরীয়া আইনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই ঘটনা কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে একজন বোরকা পরিহিতা নারীর এক তরুণের সঙ্গে আবেগঘন মূহুর্তের একটি ভিডিও ও মোহাম্মদ বিন মুরসাল দাবিতে একজন তরুণের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল সৌদি আরবের নাগরিক মুসফর মালিক সিরিয়া থেকে ফিরে সৌদি বিমানবন্দরে তার মায়ের সাথে সাক্ষাতের। পাশাপাশি মোহাম্মদ বিন মুরসালের দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সৌদি সঙ্গীতশিল্পী নাদের আলশারারির।
সুতরাং, সৌদি আরবে মোহাম্মদ বিন মুরসালের মৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় মায়ের সাথে আবেগঘন মুহূর্তের দাবিতে একটি ভিডিও এবং মোহাম্মদ বিন মুরসাল দাবিতে একজন তরুণের ছবি ও ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে ;যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।