সম্প্রতি “পুলিশ অফিসারদের নামে মার্কিন স্যাংশন” শীর্ষক শিরোনামে বাংলাদেশ পুলিশের ৮ কর্মকর্তার একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে, সম্প্রতি বাংলাদেশের ৮ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বরং কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অনুমান নির্ভর হয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
গুজবের সূত্রপাত
আলোচিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুলস এর সহায়তায়, ‘Abdur Rab Bhuttow’ নামের একটি ফেসবুক পেইজে গত ১৮ মে রাত ০৮:৫৯ মিনিটে “পুলিশ অফিসারদের নামে মার্কিন স্যাংশন” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from ‘CrowdTangle’
এছাড়া, ‘Abdur Rab Bhuttow’ নামক পেজের উক্ত পোস্টটির সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি, গ্রুপ এবং পেজে প্রায় একই দাবি সম্বলিত পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়াও, বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের লক্ষ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইট (U.S. DEPARTMENT OF THE TREASURY), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইট (USA gov) এবং বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এর ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা বা তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই “পুলিশ অফিসারদের নামে মার্কিন স্যাংশন” শীর্ষক দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার উপরে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) জারি করলে তা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটের (ট্রেজারি) মাধ্যমে জানিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের ৮ পুলিশ কর্মকর্তার নামে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই।
প্রসঙ্গত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব ও তার ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, ‘Abdur Rab Bhuttow’ নামক ফেসবুক পেজে ইতঃপূর্বেও বেশ কয়েকটি মিথ্যা এবং গুজব পোস্টের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। যেগুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কঙ্গোতে ভারী বর্ষণের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সাথে প্রচারিত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং পূর্বে কঙ্গোসহ ভিন্ন ভিন্ন দেশের বিভিন্ন সময়ের পুরোনো ছবিকে কঙ্গোর সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
গত ০৪ মে কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার ঘটনা ঘটে। সাউথ কিভু প্রদেশের প্রাদেশিক সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (০৪ মে) প্রদেশটিতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে একটি নদীর পানি উপচে পড়ে এবং বুশুশু ও নিয়ামুকুবি গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে।
ঘটনাটির বিষয়ে বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বেশ কিছু ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ছবিগুলো যাচাই করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, উক্ত ঘটনায় ২৩ টি গণমাধ্যমের ২৪ টি প্রতিবেদনে মোট ০৫ টি ভুল ছবি প্রচার করা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার সংবাদ মাধ্যম Jakarta Post এর অনলাইন সংস্করণে ‘Floods, landslide kill nine in West Sumatra, Riau’ শীর্ষক শিরোনামে ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (আর্কাইভ) আলোচিত ছবিটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রায় বন্যা ও ভূমিধসে একটি ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার।
Screenshot: The Jakarta Post
এছাড়াও, এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে ব্যবহৃত আলোচিত ওই ছবিটির সোর্স হিসেবে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সের নাম উল্লেখ করা হলেও রয়টার্সে এ বিষয়ে প্রকাশিত দুটো প্রতিবেদনের কোনোটিতেই উক্ত ঘটনার ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Bangla Tribune
এ বিষয়ে গত ০৫ মে এবং ০৬ মে রয়টার্সে প্রকাশিত দুটো প্রতিবেদন দেখুন।
International Center for Investigative Reporting Nigeria এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ০৮ নভেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি নাইজেরিয়ায় কোগি অঙ্গরাজ্যের বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যাওয়ার ঘটনার দৃশ্য।
Screenshot: ICIR Nigeria
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি কঙ্গোর ভারী বর্ষণের ঘটনার নয়।
ছবি যাচাই ৫
Screenshot Source: Daily Bangladesh
কঙ্গোতে সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে ডেইলি বাংলাদেশ।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
নাইজেরিয়ান সংবাদমাধ্যম The News Nigeria এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নাইজেরিয়ায় ২০২০ সালের বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যাওয়ার ছবি এটি।
Screenshot Source: The News Nigeria
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি কঙ্গোর সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের ঘটনার নয়।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহিত, কেউ-বা ছবিসূত্র হিসেবে বিদেশী গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করেছে। কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই লিখে নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহিত উল্লেখ, বিদেশী গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো কঙ্গোর সাম্প্রতিক আকস্মিক বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, গত ০৪ মে কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে কঙ্গো এবং ভিন্ন ভিন্ন দেশের পাঁচটি ভিন্ন ঘটনার ছবি ব্যবহার করে সাম্প্রতিক ঘটনার ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো কঙ্গোর সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও গণমাধ্যমে ভিন্ন ঘটনার ছবি ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ নিয়ে ফ্যাক্টচেকপ্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, সম্প্রতি কঙ্গোতে ভারী বর্ষণের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে একাধিক পুরোনো ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি,”ঘূর্ণিঝড়ের আসল রূপ দেখলো মিয়ানমার” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজে “মোকার আসল রূপ দেখলো মিয়ানমার” শীর্ষক থাম্বনেল টেক্সট এবং “আসল ঘূর্ণিঝড়ে তছনছ মিয়ানমার” শীর্ষক শিরোনামে মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখার অবস্থার তথ্য তুলে ধরতে গত ১৪ মে ৭ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
পরবর্তীতে একই ভিডিওটি একই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রচার করা হয়। পোস্ট গুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে “ঘূর্ণিঝড়ের আসল রূপ দেখলো মিয়ানমার” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনের ১ থেকে ১৪ সেকেন্ড এর ভিডিও ফুটেজটি ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের ঘটনার দৃশ্য নয় বরং এটি এটি গত এপ্রিল মাসে সোমালিয়াতে হওয়া বন্যার ভিডিও।
ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সোমালিয়ার “Action for Women & Children Concern” এনজিও এর টুইটার অ্যাকাউন্টে গত ২৯ এপ্রিলে টুইটকৃত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। যার সাথে মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখায় তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওর ১ থেকে ১৪ সেকেন্ড পর্যন্ত কিছু দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে, উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘Meteored’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে “Severe flooding in Somalia” শীর্ষক শিরোনামে গত ২৯ এপ্রিলে প্রচারিত ভিডিওর সাথে একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from Youtube
এছাড়া, অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘Universal TV’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে “Roob mahiigan ah oo burbur geestay oo ka da’ay Xamar” শীর্ষক শিরোনামে গত ২৮ এপ্রিল তারিখে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে থাকা স্থাপনার সাথে মিয়ানমারে মোখার তাণ্ডবের দৃশ্যদাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে থাকা স্থাপনার মিল পাওয়া যায়।
এছাড়া, অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘Universal TV’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে “Roob mahiigan ah oo burbur geestay oo ka da’ay Xamar” শীর্ষক শিরোনামে গত ২৮ এপ্রিল তারিখে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে থাকা স্থাপনার সাথে মিয়ানমারে মোখার তাণ্ডবের দৃশ্যদাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে থাকা স্থাপনার মিল পাওয়া যায়।
VideoComparison by Rumor Scanner
এপ্রিল মাসে সোমালিয়ায় বন্যার বিষয়ে অধিকতর সত্যতা যাচাই অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
মূলত, গত এপ্রিল মাসে সোমালিয়াতে বন্যা হলে সেই সময়ের বন্যার কিছু ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়। তবে, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মোখা মিয়ানমারে আঘাত হানলে একাত্তর টিভি সোমালিয়ার ঐ বন্যার ভিডিওকে মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে তাদের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ মে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানে।
এর প্রভাবে মিয়ানমারের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে অস্থায়ী আভাস ভেঙ্গে পড়ে এবং টিনের বাড়িঘরের চাল উড়ে যায়। এই আর্টিকেল লেখার আগ পর্যন্ত মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখায় প্রায় ১৪৫ জন ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ইতঃপূর্বে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে ইন্টারনেটে বি ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভুল তথ্য শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত সোমালিয়ার বন্যার ভিডিওকে মিয়ানমারে মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে একাত্তর টিভিরফেসবুক পেজ এবং ইউটিউবে চ্যানেলে প্রচারিত হয়; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত, ১২ই মে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের বিজ্ঞান (ক) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে দাবিতে দুইটি পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
গত ১২ই মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান (ক) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ১১টায়। এর পূর্বে সকাল ৯ টা ০৯ মিনিটে ফেসবুকে ‘Asif Chowdhury’ নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “ঢাবি ক ইউনিট প্রশ্ন ২ ঘন্টা আগে ফ্রি দিলাম এক্সাম দিয়ে মিলায়েন ১০০% কমন থাকবে এটা। টাকা ছাড়া প্রশ্ন পাবেন না কখনই।”
পোস্টের সাথে একটি ছবি সংযুক্ত আছে যেখানে একটি ছাপা প্রশ্নের বাংলা MCQ অংশ দেখা যাচ্ছে।
এছাড়াও, একইদিন (১২ই মে) ৯টা ১২ মিনিটে ‘Adnan Hasib Arnob’ নামের অপর এক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “Dhaka বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ‘A’ ইউনিট এর প্রশ্ন সময় সকাল ৯ টা ১৫ মিনিট প্রশ্নের কিছু অংশ ফ্রি তে দিলাম পরীক্ষার পর এসে মিলিয়ে নিয়ো। “
এই পোস্টের সাথেও বাংলা MCQ অংশের একটি ছাপা প্রশ্নপত্রের সংযুক্ত ছবি দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান (ক) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত একটি পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে একই পোস্ট এডিট/সম্পাদনা করে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান (ক) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১২ই মে সকাল ১১ টা থেকে ১২.৩০ টা পর্যন্ত।
এই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া পোস্ট দুইটির মধ্যে ‘Asif Chowdhury’ নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত আলোচিত পোস্টটির ‘Edit History’ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সকাল ৯ টা ০৯ মিনিটে যখন পোস্ট করা হয়, তখন পোস্টের সাথে প্রশ্নপত্রের কোনো ছবি যুক্ত ছিল না। পরবর্তীতে দুপুর ১ টা ১৭ মিনিটে প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
Screenshot Source: Facebook
অর্থাৎ স্ট্যাটাসটিতে কোনো ছবি যুক্ত না করে পোস্ট করা হয়েছে সকালে এবং ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর প্রশ্নপত্রটি সংযুক্ত করা হয়েছে।
পরবর্তীতে Adnan Hasib Arnob নামক অপর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত পোস্টের বিষয়ে অনুসন্ধানে উক্ত পোস্টটির ‘Edit History’ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সকাল ৯ টা ১২ মিনিটে যখন পোস্ট করা হয়, তখন পোস্টের সাথে প্রশ্নপত্রের কোনো ছবি যুক্ত ছিল না।
পরবর্তীতে সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে পোস্টের “b” ইউনিটের স্থলে ‘A’ ইউনিট লিখে পোস্টটি এডিট করা হয় এবং সবশেষে ১টা ১৫ মিনিটে প্রশ্নপত্রের ছবিটি সংযুক্ত করা হয়।
অর্থাৎ, পরীক্ষা শুরু হবার পূর্বে উক্ত স্ট্যাটাসটি প্রকাশ করা হলেও ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে পরীক্ষা শেষ হবার পৌনে এক ঘন্টা পর। এমনকি ইউনিটের নামও সম্পাদনা করা হয়েছে পোস্টে।
এছাড়া, চলতি বছরের ঢাবির বিজ্ঞান (ক) ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁস হওয়া শীর্ষক কোনো তথ্য গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ১২ মে সকাল ১১ টা থেকে ১২.৩০ টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান (ক) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে একইদিন সকাল ৯টা ০৯ মিনিট ও সকাল ৯টা ১২ মিনিটে প্রকাশিত দুইটি পোস্টে দাবি করা হয়, ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। উক্ত পোস্টগুলোর সাথে প্রশ্নপত্রের একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান (ক) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর যথাক্রমে দুপুর ১টা ১৭ এবং ১টা ১৫ মিনিটে পোস্ট দুইটি এডিট/সম্পাদনা করে প্রশ্নপত্রের ছবিগুলো যুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে দাবিতে একটি গুজব একইভাবে ছড়িয়ে পড়লে সেটির বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান (ক) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি টলিউডের নায়িকা শ্রাবন্তী চ্যাটার্জীকে হলিউড অভিনেতা জন সিনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ফলো করা শুরু করেছেন শীর্ষক দাবিতে একটি সংবাদ দেশীয় ও ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার আজকের (১৮ মে) প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত খবর দেখুন- বাংলাদেশ প্রতিদিন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, টলিউড নায়িকা শ্রাবন্তীকে হলিউড অভিনেতা জন সিনা ইনস্টাগ্রামে ফলো করেছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং জন সিনা শ্রাবন্তীকে টুইটারে ফলো করছেন। তাছাড়া, জন সিনা তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে কাউকেই ফলো করছেন না।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে, হলিউড অভিনেতা ও বিখ্যাত রেসলার জন সিনার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, তিনি অন্য কোনো ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীকে ফলো করছেন না।
Screenshot from Instagram
তাই, জন সিনা শ্রাবন্তীকে ইনস্টাগ্রামে ফলো করছেন শীর্ষক দাবিটি অমূলক।
জন সিনা শ্রাবন্তীকে টুইটারে ফলো করছেন কিনা তার সত্যতা যাচাই করার জন্য রিউমর স্ক্যানার টিমের একজন সদস্যের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথমে টুইটারে জন সিনা এবং শ্রাবন্তীকে ফলো করা হয়। এরপর শ্রাবন্তীর টুইটার প্রোফাইলের ‘Followers you know’ অপশনে গিয়ে ফলো তালিকায় জন সিনার টুইটার অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়।
Screenshot from ‘Twitter’
অর্থাৎ, জন সিনা শ্রাবন্তীকে ইনস্টাগ্রামে ফলো করেননি বরং টুইটারে ফলো করেছেন।
মূলত, টলিউড নায়িকা শ্রাবন্তীকে হলিউড অভিনেতা জন সিনা ইন্সটাগ্রামে ফলো করছেন শীর্ষক একটি দাবি বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। জন সিনা ইনস্টাগ্রামে নয়, বরং শ্রাবন্তীকে টুইটারে ফলো করছেন।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও ভারতীয় অভিনেত্রীদের নিয়ে ইন্টারনেটে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, টলিউড নায়িকা শ্রাবন্তীকে হলিউড অভিনেতা জন সিনা কর্তৃক টুইটারে ফলো করার তথ্যকে ইনস্টাগ্রামে ফলো করার দাবিতে বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, মেট্রোরেল চলাচলের নতুন সময়সূচি ২১ মে থেকে কার্যকর দাবিতে দুই দফায় কতিপয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রথম দফায় গত ১৩ ও ১৪ মে প্রকাশিত কতিপয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মেট্রোরেলের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অফিসগামী যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশন থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করবে। আগামী ২১ মে থেকে এই সময়সূচি কার্যকর হবে। শনিবার (১৩ মে) মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আগামী ২১ মে থেকে মেট্রোরেল চলাচলের নতুন সময়সূচি কার্যকর করার কথা জানিয়েছে দাবিতে দুই দফায় কতিপয় গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয় বরং আজ এক সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩১ মে থেকে মেট্রোরেলের নতুন সূচি কার্যকর হবে৷ উল্লেখ্য, এর আগে এই নতুন সময়সূচি নিয়ে কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ।
গত ১৩ ও ১৪ মে’তে প্রকাশিত গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে ২১ মে থেকে মেট্রোরেল চলাচলের নতুন সময়সূচি কার্যকর এবং ১৩ মে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ শীর্ষক তথ্যের বিষয়ে অনুসন্ধান করে জাতীয় দৈনিক ‘সমকাল’ পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ১৩ মে দুপুরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগামী ২১ মে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চালানোর খবরটি সত্য নয়। মেট্রোরেলের নির্মাণ ও পরিচালনার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকারি কোম্পানি ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম, এ, এন, ছিদ্দিক সমকালকে জানিয়েছেন, ‘কে বা কারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়েছে।’ সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে ছড়ানো একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, ২১ মে থেকে সকাল ৮টা থেকে ১২ ঘণ্টা চলবে মেট্রোরেলের ট্রেন। শুক্রবার থাকবে সাপ্তাহিক ছুটি। এম, এ, এন, ছিদ্দিক সমকালকে বলেছেন, ‘এ চিঠির সত্যতা নেই। চিঠিটি ডিএমটিসিএল’র নয়। মেট্রোরেলের নামে অনেকগুলো ফেসবুক পেইজ রয়েছে, সেগুলোর খবর দেখে বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ নেই।’
Screenshot source: Samakal
উক্ত চিঠির বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ফেসবুকে একটি বিজ্ঞপ্তি সদৃশ ছবি (আর্কাইভ) খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
এই ছবিতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কোনো স্বাক্ষর বা নাম উল্লেখ না থাকলেও ২১ মে থেকে মেট্রোরেলের নতুন সূচির বিষয়টি উল্লেখ ছিল।
Screenshot source: Facebook
এ বিষয়ে জানতে গত ১৬ মে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) জনসংযোগ কর্মকর্তা আফতাব মাহমুদ গালিবের কাছে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ‘২১ মে থেকে মেট্রোরেলের নতুন সূচি কার্যকরের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনা হচ্ছে, তবে সূচি বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট কোনো তারিখের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।’
ফেসবুক এবং গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘বিজ্ঞপ্তি’টির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘তারা এমন কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেননি। যারা ফেসবুক সাংবাদিক তারাই এগুলো ছড়িয়েছে।’
অর্থাৎ, গত ১৩ ও ১৪ মে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে আগামী ২১ মে থেকে মেট্রোরেলের নতুন সময়সূচি কার্যকর হবে এবং শনিবার (১৩ মে) মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে শীর্ষক যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
পরবর্তীতে আজ ১৮ মে সকাল সাড়ে ১১ টা পরবর্তী সময়ে একই দাবিতে (২১ মে নতুন সূচি কার্যকর) কতিপয় গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ বিষয়ে ইত্তেফাক সকাল ১১:৪০ মিনিটে, বাংলা ইনসাইডার সকাল ১১:৪৩ মিনিটে, আগামী নিউজ সকাল ১১:৪২ মিনিটে, বাংলাদেশ মোমেন্টস দুপুর ১২:০০ মিনিটে, ডেইলি ক্যাম্পাস দুপুর ১২:২১ মিনিটে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
কিন্তু প্রায় একই সময়ে (সকাল ১১:৩৯ মিনিটে) জাতীয় দৈনিক ‘The Daily Star’ এর প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ৩১ মে থেকে মেট্রোরেলের নতুন সূচি কার্যকরের সিদ্ধান্ত এসেছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের এ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
Screenshot source: The Daily Star
সংবাদ সম্মেলনটি ঠিক কখন হয়েছে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে সময় টিভি’র ফেসবুক পেজে একই দিন সকাল ১১:৩২ মিনিটে শুরু হওয়া লাইভে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম, এ, এন, ছিদ্দিককে কথা বলতে শোনা যায়। তবে উক্ত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এম, এ, এন, ছিদ্দিক তার মূল বক্তব্য সময় টিভির লাইভ শুরুর পূর্বেই দিয়েছেন। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তিনি যা সময় টিভি লাইভের মাধ্যমে কাভার করেছে। লাইভ ভিডিওটির ১০:৪২ মিনিট সময়ে (ঘড়ির হিসেবে ১১:৪২ মিনিট সময়) এম, এ, এন, ছিদ্দিককে বলতে শোনা যায়, আমি তো শিডিউল দিয়েছি ৩১ মে থেকে (নতুন সূচি কার্যকর), তার আগে বর্তমান সময় অনুযায়ী মেট্রোরেল চলাচল করবে।
Screenshot source: Facebook
পরবর্তীতে দুপুর ১২:১৪ মিনিটে ডিএমটিসিএলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের একটি পোস্টেও মেট্রোরেলের নতুন সূচির বিষয়ে জানানো হয়।
Screenshot source: Facebook
একইসাথে ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটেও এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
Screenshot source: DMTCL
অর্থাৎ, আজ সকাল সাড়ে ১১ টার পূর্বেই মেট্রোরেল চলাচলের নতুন সময়সূচির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু উক্ত সময়ের পরেও কতিপয় গণমাধ্যমে নতুন সময়সূচি বিষয়ক খবরে ভুল তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে।
মূলত, গত ১৩ ও ১৪ মে’তে প্রকাশিত কতিপয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ২১ মে থেকে মেট্রোরেল চলাচলের নতুন সময়সূচি কার্যকর এবং ১৩ মে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। পরবর্তীতে আজ ১৮ মে সকাল সাড়ে ১১ টা পরবর্তী সময়ে একই দাবিতে (২১ মে ) একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। ২১ মে থেকে মেট্রোরেলের নতুন সূচি কার্যকর হবে জানিয়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কোনো বিজ্ঞপ্তি ১৩ মে প্রকাশ করেনি। আজ ১৮ মে সকাল সাড়ে ১১ টার কিছু সময় পূর্বে এ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, ৩১ মে থেকে মেট্রোরেলের নতুন সূচি কার্যকর হবে। কিন্তু এই সংবাদ সম্মেলন পরবর্তী সময়েও কতিপয় গণমাধ্যমে ২১ মে থেকে মেট্রোরেল চলাচলের নতুন সময়সূচি কার্যকর দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে মেট্রোরেলের বিষয়ে একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ৩১ মে থেকে মেট্রোরেল চলাচলের নতুন সময়সূচি কার্যকরের তথ্যকে ২১ মে থেকে কার্যকর শীর্ষক একটি দাবি ভুয়া একটি বিজ্ঞপ্তির বরাতে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “জাপানের একটি ছোট্ট গ্রামে ২০ মিনিট বিদ্যুৎ ছিল না। তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্ৰী গ্রামবাসীর কাছে ঠিক ২০ মিনিট মাথা নীচু করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছেন! ঘটনাটি ২০১৭ সালের।” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে সাংবাদিকদের সামনে মাথা নত করে থাকা এক ব্যক্তির একটি ছবি প্রচারের মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, এটি জাপানের জ্বালানি মন্ত্রীর ছবি, যিনি ২০ মিনিট বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য জনসাধারণের কাছে মাথা নিচু করে ২০ মিনিট ধরে ক্ষমা চেয়েছেন৷
অনুসন্ধানে উক্ত দাবিটি ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিত ফেসবুকে প্রচার হতে দেখা যায়। ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২১ এবং ২০২২ সালের পোস্ট দেখুন যথাক্রমে এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায় যায়, উল্লেখিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি জাপানের জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রীর নয় বরং ছবিটি জাপানের অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান হোন্ডা মোটর এর নতুন প্রেসিডেন্ট ও সিইও তাকাহিরো হাচিগো এর দায়িত্ব গ্রহণের পর আয়োজিত প্রথম সংবাদ সম্মেলনের এবং সেখানে ক্ষমা চাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও ২০ মিনিট লোডশেডিং এর জন্য জাপানের জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রীর মাথা নিচু করে ২০ মিনিট ধরে ক্ষমা চাওয়ার কোনো ঘটনাও ঘটেনি।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করার মাধ্যমে ফটো স্টক ওয়েবসাইট অ্যালামিতে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : Alamy
ছবির বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, “২০১৫ সালের ৬ জুলাই সোমবার জাপানের শীর্ষস্থানীয় অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান হোন্ডা মোটর কোম্পানির নতুন প্রেসিডেন্ট ও সিইওহিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর টোকিও হেড অফিসে আয়োজিত প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তাকাহিরো হাচিগো।”
জাপানের জ্বালানি মন্ত্রীর লোডশেডিং এর জন্য ২০ মিনিট ধরে ক্ষমা চাওয়ার দাবির একটি ভাইরাল টুইট এর প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে বিবিসির একটি প্রতিবেদনেও ছবিটি জাপানের কোনো মন্ত্রীর নয় বরং ২০১৫ সালে তৎকালীন হোন্ডার নতুন সিইও এর প্রথম প্রেস কনফারেন্সের ছবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
Screenshot : BBC
অর্থাৎ, ছবির ব্যক্তিটি জাপানের কোনো মন্ত্রী নয়। মূলত এটি হোন্ডা মোটর কোম্পানির ২০১৫ সালে নিযুক্ত চেয়ারম্যান ও সিইও তাকাহিরো হাচিগোর ছবি। এছাড়াও উক্ত ছবিতে তিনি ক্ষমা চাচ্ছেন না বরং সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মতবিনিময় করার একটা সময় মাথা নিচু করে সম্মান বা কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করছেন।
প্রকৃতপক্ষে জাপানিদের মধ্যে মাথা নিচু করে সম্মান প্রদর্শন বা অভিবাদন জানানোর চর্চা রয়েছে। জাপানে মাথা নত করার এ বিষয়টি ওজিগি নামে পরিচিত। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার যা জাপানে অল্প বয়স থেকেই শেখানো হয়। জাপানিজরা মাথা নত করাকে কৃতজ্ঞতা, সম্মান, কখনও অনুশোচনা বা কৃতজ্ঞতা সহ আবেগ বোঝাতে ব্যবহার করে থাকে। কাউকে শুভেচ্ছা জানানো, বিদায় বলা, সভা, ক্লাস বা অনুষ্ঠানের শুরুতে বা শেষে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা (ধন্যবাদ বলা), ক্ষমাপ্রার্থনা, কাউকে অভিনন্দন জানানো, কিংবা একটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান শুরু করা সহ নানা সামাজিক মিথস্ক্রিয়াতে মাথা নত করা জাপানিজদের জন্য সাধারণ বিষয়।
Screenshot : Interac
এছাড়াও জাপানের কোনো গ্রামে ২০ মিনিট লোডশেডিং এর জন্য জাপানের জ্বালানি মন্ত্রী ২০ মিনিট ধরে ক্ষমা চেয়েছেন এমন কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, জাপানের অন্যতম শীর্ষ অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান হোন্ডার সেসময়ের নতুন চেয়ারম্যান ও সিইও তাকাহিরো হাচিগোর ২০১৫ সালের ৬ জুলাই এর প্রথম প্রেস কনফারেন্সে মাথা নত করে সম্মান কিংবা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি ছবিকে জাপানের একটি গ্রামে ২০ মিনিট লোডশেডিং হওয়ায় দেশটির জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রীর মাথা নিচু করে ২০ মিনিট ধরে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, তাকাহিরো হাচিগো ১৯৮২ সালে অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান হোন্ডায় যোগ দেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এবং সিইও নির্বাচিত হোন। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি হোন্ডার সিইও পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মূলত তাকাহিরো হাচিগোকে দায়িত্ব থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং এপ্রিলের ১ তারিখ তাকে সরিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয় আর অ্যান্ড ডি চিফ তোশিহিরো মিব কে।
Screenshot : HT Auto
সুতরাং, জাপানের একটি গ্রামে ২০ মিনিট লোডশেডিং এর জন্য জাপানের জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রীর মাথা নিচু করে ২০ মিনিট ধরে ক্ষমা চাওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘‘চরমোনাইয়ের পীর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর রওজা গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু সালামকে জিজ্ঞাসা করতেছে ,হে রাসূল আমরা কার পক্ষে যাব হাসিনার পক্ষে না খালেদার পক্ষে, দুইজনে তো মহিলা , তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম চরমোনাই পীরকে বলেছে, হাসিনার পক্ষে যাওয়ার জন্য!’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
টিকটকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সূত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি চরমোনাই পীরের একটি বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ। প্রকৃতপক্ষে চরমোনাই পীরের দীর্ঘ একটি বক্তব্য থেকে আলোচিত অংশটি কেটে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিওগুলোতে দৃশ্যমান ‘জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ’ কি-ওয়ার্ড সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে RI Media27 নামের একটি চ্যানেলে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি ‘কুমিল্লায় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে শায়েখে চরমোনাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: RI Media27
এই ভিডিওটির সঙ্গে চরমোনাই পীরের হযরত মুহাম্মদ সা. সূত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Collage: Rumor Scanner
ভিডিওটির তিন মিনিট সময়কালে চরমোনাই পীর মুফতী ফয়জুল করিম আলেমদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে উদাহরণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ধরে নেন জনাব মুহাম্মদ রাসুল (সঃ) মদিনাতে আছেন। ধরে নেন। আমাদের বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল মদিনায় গেছে। গিয়ে আল্লাহর নবীর কাছে বলতেছে, ইয়া নাবিয়াল্লাহ! আমাদের বাংলাদেশের পরিস্থিতি এই, বাংলাদেশে দুটি দল, দুটি দলের মধ্যে দুইজন নেত্রী এবং কেউ সেক্যুলার, কেউ ডেমোক্রেসি। এর বাইরে ক্ষমতায় আসা খুব জটিল এবং কঠিন। এখন আমাদের মধ্যে কিছু ইসলামী দল আছে, যারা আপনার ইসলাম নিয়ে ভাবে, আপনার কথা বলে, আপনার আদর্শের বানী শোনায় সবাইকে। কিন্তু তারা এখনো ক্ষমতায় যাবার উপযুক্ত হয়নি। কিন্তু যারা সেক্যুলার আছে, তারা ক্ষমতায় যাওয়ার অনেক উপযুক্ত এবং যারা আমেরিকানপন্থী আছে, তারাও ক্ষমতায় যাওয়ার উপযুক্ত। তবে দুই দলের নেত্রীই মহিলা। ইয়া নাবিয়াল্লাহ, এখন আমরা কি করবো? শেখ হাসিনার পক্ষে যাবো না খালেদা জিয়ার পক্ষে যাবো?’
এসময় চরমোনাই পীর বলেন, ‘প্রশ্ন কার কাছে করছেন? উত্তরে শ্রোতারা বলেন, রাসূল সা. এর কাছে। এরপর চরমোনাই পীর পুনরায় বলেন, ওলামা ইকরাম ভালমতো বুঝবেন, বোঝার চেষ্টা করেন। দুইটা দল আছে বড়, তাদের অবস্থা এই। আর ছোট চরমোনাই হুজুর হাকডাক দিয়ে বেড়াইতেছে, সবাইকে বলতেছে আসো। শুধু নেতা নয়, নীতির পরিবর্তন চাই। ইসলামী হুকুমাত কায়েম করতে চাই। জীবন যাবে, যাক। ইসলামের বাইরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই, এসব সাধু বাণী শুনাইতেছে। এখন আমরা কি করবো? আমরা শেখ হাসিনার পক্ষে যাবো না খালেদা জিয়ার পক্ষে যাবো?
আল্লাহর নবী বলতেন, যা! কি করবি? যেহেতু বড় দুটি দল, তোরা সবাই শেখ হাসিনার পক্ষে যা!
তবে এ সময়উপস্থিত শ্রোতারা সবাই না বলে উঠেন। এরপর চরমোনাই পীর বলেন, ‘রাসূল সা. বলতেন,, তাহলে শেখ হাসিনার পক্ষ বাদ দে, সবাই খালেদা জিয়ার পক্ষে যা। এসময়ও উপস্থিত শ্রোতারা না বলে উঠলে চরমোনাই পীর বলেন, কেন না বললেন? কারণ বিবেককে ধোঁকা দেওয়া যায় না। এরপর চরমোনাই পীর রাসূল সা. ও সাহাবীদের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেন।’
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চরমোনাই পীরের পুরো ১৩ মিনিট ২১ সেকেন্ডের উক্ত ভিডিওটি থেকে কেবল ৩ মিনিট থেকে ৪ মিনিটি ৪৫ সেকেন্ডের অংশটুকু প্রচার করা হচ্ছে। পাশাপাশি বক্তব্য থেকে ‘সবাই খালেদা জিয়ার পক্ষে যা।’ অংশটুকু কেটে দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, চরমোনাই পীরের হযরত মুহাম্মদ সা. সূত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ ভিডিও থেকে কেটে নেওয়া খণ্ডিত অংশ।
মূলত, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লায় জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের আয়োজনে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি রাসূল (সা.) সঙ্গে মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে টেনে উদাহরণ দেন। সম্প্রতি রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার ঐ বক্তব্য থেকে কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের অংশটুকু কেটে নিয়ে চরমোনাই পীরের হযরত মুহাম্মদ সা. সূত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে যাওয়ার বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের একটি দীর্ঘ বক্তব্যের ভিডিও থেকে নেওয়া খণ্ডিত অংশ প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সূত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে যেতে বলেছেন; যা সম্পূর্ণ বিকৃত।
সম্প্রতি, “বিটিএসের জিমিনের মতো হতে অস্ত্রোপচার, মারা গেলেন অভিনেতা” শীর্ষক শিরোনাম সহ সমজাতীয় বিভিন্ন শিরোনামে একটি সংবাদ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক একাধিক গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
Screenshot from Prothom Alo
যা দাবি করা হচ্ছে
কানাডীয় অভিনেতা সেইন্ট ভন কলুচি বিটিএস ব্যান্ডের সদস্য জিমিনের একজন ভক্ত। তাই তিনি নিজের চেহারাকে জিমিনের মতো করতে প্লাস্টিক সার্জারির সহায়তা নেন।
নিজের চেহারা জিমিনের মতো করতে মোট ১২ বার অস্ত্রোপচার করেন এবং প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচ হয়। গত নভেম্বরে কলুচির চেহারায় জিমিনের মতো চোয়াল প্রতিস্থাপনের কথা ছিলো। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় সার্জারি করা হয়নি।
অবশেষে ২২ এপ্রিল দক্ষিণ কোরিয়ার একটি হাসপাতালে চোয়াল প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচার করা হলে তাঁর শরীরে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া শুরু হলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ২৩ এপ্রিল সকালে মারা যান তিনি।
কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যম আলোচিত দাবিটি তাদের সাইটে প্রকাশ করলেও সেগুলোর আর্কাইভ লিংক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Image Collage by Rumor Scanner
কানাডার টরোন্টো সান, দক্ষিণ কোরিয়ার newsis.com, ভারতীয় WION এবং নিউজ ১৮ গণমাধ্যম গুলো সংবাদ উক্ত দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু সেগুলো পরবর্তীতে তারা ডিলিট করে দিয়েছে। এ সংবাদ চারটির কোনো সরাসরি আর্কাইভ লিংক পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Al Jazeera
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নিজেদের পেজ থেকে প্রকাশ করা কিছু পোস্ট দেখুন প্রথম আলো (ফেসবুক), বিডিনিউজ২৪ (ফেসবুক), সময় টিভি (ফেসবুক), কালের কণ্ঠ (ফেসবুক), চ্যানেল আই (ফেসবুক), ডেইলি ক্যাম্পাস (ফেসবুক), প্রতিদিনের বাংলাদেশ (ফেসবুক), দ্য ফ্রন্ট পেজ (ফেসবুক)।
ইউটিউবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নিজেদের চ্যানেল থেকে প্রকাশ করা কিছু পোস্ট দেখুন ঢাকা পোস্ট (ইউটিউব)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিটিএস ব্যান্ড এর সদস্য জিমিনের মতো হতে অস্ত্রোপচার করে কানাডীয় অভিনেতা সেইন্ট ভন কলুচির মৃত্যুর ঘটনাটি সত্য নয় বরং এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা তৈরি কল্পিত এক অভিনেতার গল্প এবং একইসাথে তার ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিও প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি।
পরবর্তীতে, ডেইলি মেইলের সম্পাদক জানিয়েছেন যে আলোচিত নিউজটির প্রতিবেদক সাংবাদিক রুথ বাশিনস্কির সাথে প্রতারণা করা হয়েছে এবং এটি একটি ভুয়া খবর ছিল।
অনুসন্ধান
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে গত ২৮ এপ্রিল ‘Al Jazeera’ তে “Reports said actor died after surgery to look Korean. Was he AI?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, সেইন্ট ভন কলুচি (চরিত্রটি) প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে সাজানো একটি (গল্প) প্রতারণার অংশ। এই প্রতারণামূলক গল্প দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্য, ভারত ও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বোকা বানানো হয়েছে।
এছাড়াও, থাইল্যান্ডের গণমাধ্যম “ম্যানেজার ডেইলি” এর “‘Godfather of AI’ resigns from Google, warns of AI dangers (অনূদিত)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “গত সপ্তাহে প্র্যাঙ্কস্টাররা ডেইলি মেইল এবং দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট সহ সারা বিশ্বের মিডিয়া আউটলেটগুলিকেও প্রতারিত করেছে। ডেইলি মেইল কথিত কানাডিয়ান অভিনেতা “সেইন্ট ভন কলুচি” সম্পর্কে একটি গল্প প্রকাশ করে এবং পরবর্তীতে মুছে দেয়.”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে গত ২৫ এপ্রিল আলোচিত ঘটনাস্থল (দাবি) সেই দক্ষিণ কোরিয়ার-ই ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ‘Raphael Rashid’ (যিনি আল জাজিরাতেও লিখেন) এর একটি টুইট পাওয়া যায়। সেখানে তিনি সেইন্ট ভন কলুচি ঘটনাটি মিথ্যা উল্লেখ করেন।
Screenshot from Twitter
‘Raphael Rashid’ এর টুইটের থ্রেড থেকে জানা যায়, “সেইন্ট ভন কলুচির জনসংযোগ দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি বিভ্রান্তিকর ছিলো।”
Screenshot from Twitter
দাবির সাথে যতগুলো ছবি প্রচার করা হয়েছে
আলোচ্য দাবির সাথে এবং সেইন্ট ভন কলুচির ছবি দাবিতে বেশ কয়েকটি ছবি প্রচার করা হয়েছে।
Collage by Rumorscanner
তবে ছবিগুলোর কোনোটিতেই তার মুখমন্ডলের ছবি স্পষ্ট না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছবিগুলো এআই সহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উপায়ে তৈরি করা বলে ডিবাঙ্ক করা প্রতিবেদন (১, ২, ৩) ও পোস্ট থেকে জানা গেছে। কিছু ছবির ক্ষেত্রে উৎস-ই শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
Collage by Rumorscanner
অধিকাংশ ছবির উৎস কলুচির নামে খোলা একটি ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট। যেটি এখন আর সচল নেই।
Courtesy: Instagram
‘Raphael Rashid’ এর একই টুইটের থ্রেড-এ আরো জানানো হয়, “সেইন্ট ভন কলুচির ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা তৈরি।”
Screenshot from Twitter
বানোয়াট তথ্যটি প্রচারে প্রেস রিলিজের আশ্রয়
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, “বানোয়াট গল্পটি এই সপ্তাহের শুরুতে শুরু হয়েছিল যখন বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকরা একটি প্রেস রিলিজ পেয়েছিলেন যাতে ঘোষণা করা হয়েছিল যে ভন কলুচি ২৩ এপ্রিল সিউলের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। প্রেস রিলিজটি আনাড়ি-শব্দের ইংরেজিতে লেখা হয়েছিল। HYPE নামক একটি পাবলিক রিলেশনস বা জনসংযোগ সংস্থার থেকে এটি পাঠানো হয়েছিল। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অনেকগুলো অসঙ্গতি ছিল।” যেমনঃ
নথিতে অনেক ওয়েব লিঙ্ক লোড হয় না। যার মধ্যে ভন কলুচির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের একটি লিঙ্ক রয়েছে সেটিও অকার্যকর
প্রেস রিলিজে উল্লিখিত হাসপাতালের অস্তিত্ব নেই।
HYPE-এর ওয়েবসাইট, যা লন্ডন এবং টরন্টোতে WeWork (কো-ওয়ার্কিং স্পেস প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা) সদর দফতর হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা অসমাপ্ত বলে মনে হচ্ছে এবং এটি ভন কলুচির মৃত্যুর প্রতিবেদনের কয়েক সপ্তাহ আগে নিবন্ধিত হয়েছিল।
যখন আল জাজিরা উল্লিখিত নম্বরের মাধ্যমে HYPE-এ কল করার চেষ্টা করেছিল, তখন কেউ ফোন রিসিভ করেনি। আল জাজিরাকে পরে ঐ নম্বর থেকে একটি টেক্সট বার্তা পাঠানো হয়েছিল যাতে বলা হয়েছিল, “Wtf do u want”।
বেশ কয়েকজন কে-পপ তারকাদের জন্য গান লেখা সত্ত্বেও (দাবি) ভন কলুচির একটি উল্লেখযোগ্য অনলাইন উপস্থিতি ছিল না এবং কেউ তার মৃত্যুতে প্রকাশ্যে শোক প্রকাশ করেনি।
“T1K T0K H1GH SCH00L” অ্যালবাম সহ ভন কলুচির সঙ্গীতগুলো (দাবি) কোনো মূলধারার মিউজিক স্ট্রিমিং সাইটে পাওয়া যায়না৷
এছাড়াও একই প্রতিবেদনে আর একটি পুরোনো প্রেস রিলিজের বিষয়ে আরো কিছু অসঙ্গতির কথা তুলে ধরা হয়। যেমনঃ
গত বছর প্রচারিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, ভন কলুচিকে “ইউরোপের শীর্ষ হেজ ফান্ড কোম্পানি আইবিজি ক্যাপিটালের সিইও জিওভানি লামাসের দ্বিতীয় পুত্র” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। কিন্তু জিওভানি লামাসের-ও অনলাইনে কোনো অফিসিয়াল উপস্থিতি পাওয়া যায়না। আর আইবিজি ক্যাপিটালের ক্ষেত্রে অনুসন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যে অবস্থিত একটি বিনিয়োগ সংস্থা হিসেবে পাওয়া যায়, ইউরোপের নয়।
কলুচির ইনস্টাগ্রাম একাউন্টটি এই সপ্তাহে পুনরায় সক্রিয় করা হয়েছিল, এবং তার মৃত্যুর দুই দিন পরে একটি মন্তব্য সম্পাদনা করা হয়েছিল। পরে মন্তব্যটি মুছে ফেলা হয়েছে।
ইন্টারনেটে সেইন্ট ভন কলুচির মৃত্যুর সংবাদ প্রথম প্রকাশ করেছিল যে ডেইলি মেইল অনলাইন কোন ব্যাখ্যা বা প্রত্যাহার বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই বুধবার তার নিবন্ধটি নিঃশব্দে সরিয়ে নিয়েছে।
আল জাজিরার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সিউলে কানাডিয়ান দূতাবাস মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার মিডিয়া জানিয়েছে যে, প্লাস্টিক সার্জারির জটিলতার কারণে মারা যাওয়া অভিনেতার সম্পর্কিত কোনো কেস রিপোর্ট পায়নি পুলিশ।
সাংবাদিকগণ “Nylas” নামক একটি বটের মাধ্যমে তাদের ইনবক্সে এই রিলিজগুলি পেয়েছেন। বটটি অনলাইন পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট MuckRack থেকে ইমেল ঠিকানাগুলি সংগ্রহ করেছে৷
আর একটি প্রেস রিলিজ “GoPapaMedia” এর সাথে সংযুক্ত একটি PR থেকে পাঠানো হয়েছিল, যার ডোমেনটি কানাডার টরন্টোতে “সাইট লুচি” এর অধীনে নিবন্ধিত হয়েছিল।
সেন্ট ভন কলুচির পরিচয় যাচাই করার জন্য দ্য হাইপ; পিআর-কে ভ্যারাইটি অসংখ্য ইমেল এবং কল করেছে কিন্তু কোনোটির-ই উত্তর দেওয়া হয়নি।
অনুসন্ধানে গত ৩ মে ‘Next Shark‘ নামক একটি ওয়েবসাইটে “সেন্ট ভন কলুচির পরিবার তার বিষয়ের তথ্যকে ‘ভিত্তিহীন’ হিসেবে প্রতিবেদন করায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করছেন (অভিযোগ) [অনূদিত]” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
লজিক্যালি ফ্যাক্ট’স এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, “নেক্সটশার্ক উল্লেখ করেছে যে, যখন তারা আরও তথ্যের জন্য পিআর সংস্থাগুলির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল, তখন কেবল রুথম্যানের মেইল এড্রেসটিতে মেইল গিয়েছিল। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে “মেইল ঠিকানা পাওয়া যায়নি” নোটিশ সহ মেইল ফেরত এসেছে।
সবচেয়ে বড় পয়েন্ট হলোঃ প্রেস রিলিজে সেন্ট ভন কলুচিকে ‘intubated’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একজন শিল্পীর পিআর বা ম্যানেজমেন্ট টিম কখনই এরকম শব্দ ব্যবহার করবে না বলে জানিয়েছেন সঙ্গীত এবং পপ সংস্কৃতি বিষয়ক ম্যাগাজিন রোলিং স্টোন এর ইন্ডিয়া সংস্করণের সহকারী সম্পাদক ঋদ্ধি চক্রবর্তী (ভ্যারাইটির সাথে তিনি এই মন্তব্যটি করেছেন)।”
অনুসন্ধানে আরো যে সকল বিষয়ে অসঙ্গতি
ইন্টারনেটে কোথাও তার স্পষ্ট কোনো ছবিও পাওয়া যায়না। যেগুলো পাওয়া যায় কোনোটিতেই তার মুখচ্ছবি বোঝা যায় না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে-ই বিভিন্ন দেশের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে উইকিপিডিয়া নিবন্ধ থাকলেও তিনি কানাডিয়ান (দাবি অনুযায়ী) অভিনেতা হওয়ার পরও তাকে নিয়ে উইকিপিডিয়ায় কোনো নিবন্ধ পাওয়া যায়নি।
বিভিন্ন পোর্টালে তার ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট (১, ২) দাবি করা হলেও সেগুলো এখন আর সচল নেই অথবা শুধুমাত্র ক্রিয়েট করেই রাখা হয়েছে। কোনো এক্টিভিটি নেই।
একটি পোর্টালে তার ওয়েবসাইটের (saintvoncolucci.com) বিষয়ে উল্লেখ করা হলেও সেটিতেও প্রবেশ করা যায়না। এমনকি সাইটটির কোনো আর্কাইভও পাওয়া যায়না।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে সেইন্ট ভন কলুচির সহযোগী বা প্রচারক হিসেবে Eric Blake এর নাম পাওয়া গেলে তাকে বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে তাকে মেসেজ করা হলেও তিনি এখনও রিপ্লাই করেননি।
তার মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের আগে অর্থাৎ ২৪ এপ্রিলের আগে (আর্কাইভ) ইন্টারনেটে einpresswire নামক একটি সাইটে সেইন্ট ভন কলুচিকে নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও সেটি কর্তৃপক্ষ ডিলিট করে ফেলেছে।
Screenshot: Instagram
অর্থাৎ, বিটিএস ব্যান্ড সদস্য জিমিনের মতো হতে কানাডিয়ান অভিনেতা সেইন্ট ভন কলুচির অস্ত্রোপচার করার পর মারা যাওয়ার ঘটনাটি বানোয়াট। সেইন্ট ভন কলুচি নামের কারো অস্তিত্ব পাওয়া যায়না এবং দাবির সাথে প্রচারিত ছবি-ও এআই জেনারেটেড। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন বানোয়াট গল্পের বিষয়টি প্রচার হয়ে গেছে স্বীকার করে তাদের স্টোরি আপডেট করেছে।
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কি কোনো পূর্ব ঘটনা থেকে গল্পটি তৈরি করেছে
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাকে একদম নির্দিষ্ট ইনপুট না দিয়ে একটি গল্প তৈরি করতে বললে উভয় ধরণের ঘটনা-ই ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি একদম নতুন একটি গল্প তৈরি করতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরোনো কোনো গল্পকে নতুনভাবেও উপস্থাপন করতে পারে। ফলে প্রশ্ন তৈরি হয় আলোচিত দাবিটির অনুরূপ কোনো ঘটনা আগে থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান রয়েছে কিনা। এর উত্তর হলো হ্যাঁ।
অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম NBCNews-এ ২০২২ সালের ৩১শে আগষ্ট “ইনফ্লুয়েন্সার অলি লন্ডন বিটিএস তারকা জিমিনের মতো হওয়ার জন্য অপারেশন করার বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন (ভাবানুবাদ)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “ব্রিটিশ প্রভাবশালী এবং ইউটিউবার অলি লন্ডন কোরিয়ান পপ আইডলের মতো দেখতে হওয়ার জন্য কয়েক ডজন অপারেশনের বিষয়ে তিনি বিটিএস তারকা জিমিন এবং এশিয়ান সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তারা ৩২টি অপারেশন করেছে, যার মধ্যে ছয়টি নাকের অস্ত্রোপচার, চোখের অস্ত্রোপচার এবং একটি কপাল লিফ্ট।”
মূলত, আলোচিত বানোয়াট ঘটনাটি বটসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সাংবাদিকদের ইমেইল সংগ্রহ করে ইমেইল ঠিকানাগুলোতে প্রেস রিলিজ আকারে পাঠানো হয়েছিল। এরপরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে ডেইলি মেইলের থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমে দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায় উক্ত দাবিতে প্রচারিত সংবাদ গুলো সত্য নয় বরং সেইন্ট ভন কলুচির গল্পটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা সাজানো একটি প্রতারণার অংশ। যদিও ডেইলি মেইল তাদের ভুল বুঝতে পেরে পরবর্তীতে সংবাদটি ডিলিট করে ফেলে।
উল্লেখ্য, ভারতীয় এক পোর্টালের বরাতে আইএমডিবি এর নিউজ সেকশনেও বানোয়াট এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল। একইভাবে গল্পটিকে বানোয়াট হিসেবে প্রমাণ করে প্রকাশিত প্রতিবেদনও আইএমডিবি-তে ভ্যারাইটির বরাতে প্রকাশ হয়েছিল। পাশাপাশি আমেরিকা ভিত্তিক সাইট টিএমজি, ভারতীয় সাইট “লেটেস্টলি” তাদের প্রথমে প্রকাশিত ভুল বুঝতে পেরে পরবর্তীতে দাবিটিকে বানোয়াট হিসেবেও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও গণমাধ্যমে ভুল তথ্যের মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন করলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, বাংলাদেশ, ভারত সহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং পোর্টালে “বিটিএস সদস্য জিমিনের মতো হতে কানাডিয়ান অভিনেতা সেইন্ট ভন কলুচি ১২ অস্ত্রোপচার করার পর মারা গেছেন” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়েছেঃ যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘স্ত্রীর পরকিয়া করার উপযুক্ত প্রমান থাকলে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে কাবিনের টাকা পরিশোধ করতে হবে না’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘স্ত্রীর পরকিয়া করার উপযুক্ত প্রমাণ থাকলে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে কাবিনের টাকা পরিশোধ করতে হবে না’ সংক্রান্ত কোনো মক্তব্য ডা. দীপু মনি করেননি বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই এই মন্তব্যটি ২০১৯ সাল থেকেই শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির মন্তব্য দাবিতে প্রচার হয়ে আসছে।
মূলত, স্ত্রীর একাধিক পরকীয়ার জেরে ২০১৯ সালে ডা. আকাশের আত্মহত্যার পর সে সময়ে উচ্চ দেনমোহরের কারণে পুরুষরা চাইলেও ডিভোর্স না দিতে পারার বিষয়টি আলোচনায় আসে। যার প্রেক্ষিতে পরকীয়া প্রমাণিত হলে কাবিনের টাকা পরিশোধ করতে হবে না শীর্ষক মন্তব্যটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং একসময় এটি তথ্যসূত্র ছাড়াই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মন্তব্য দাবিতে প্রচার হতে থাকে।
এছাড়া, পরকীয়া ও কাবিন বিষয়ে ডা. দীপু মনির কোনো বক্তব্য ইন্টারনেটে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন)পরকীয়া প্রমাণিত হলে কাবিন পরিশোধ করতে হবে না শীর্ষক কোনো আইন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে সনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।