সম্প্রতি ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে শেখ হাসিনা সহ ৩০ আওয়ামী লীগ নেতা’ শীর্ষক লেখা সম্বলিত থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো নেতার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওটি তৈরি করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
গত ২৮ এপ্রিল Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে শেখ হাসিনা সহ ৩০ আওয়ামী লীগ নেতা’ শীর্ষক থাম্বনেইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছবি ব্যবহার করে ‘শেখ হাসিনা সহ আ.লীগের ৩০ নেতার ওপর আসলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা’ শীর্ষক শিরোনামে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের একটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছবি সহ ভিন্ন ভিন্ন সময়ের কয়েকটি পুরোনো ছবি দেখা যায়।
১ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের একটি পুরোনো ক্লিপ সংযুক্ত করা হয়। এরপর ভিডিওটির পরবর্তী অংশে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের ৩০ নেতা। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দেওয়ার জন্য সরকারকে অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, নইলে আর্থিক ও ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন। এই নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে রক্ষা পেতে আওয়ামী লীগ সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। যার ফলে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে বলে মনে করেন এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়াও ভিডিওটি থেকে নেওয়া কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি।
অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করে হয়েছে।
এছাড়াও শেখ হাসিনা সহ ৩০ আওয়ামী লীগ নেতার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত হলেও বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের সদরদপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৮ এপ্রিলই যুক্তরাষ্ট্রে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ০১ মে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাত দিনের সফর শেষে গত ০৪ মে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন।
অর্থাৎ, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার উক্ত দাবিটি যেদিন প্রচার করা হয় সেদিন থেকে পরবর্তী ৭ দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন। এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়।
এছাড়াও, বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের লক্ষ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইট (U.S. DEPARTMENT OF THE TREASURY), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইট (USA gov) এবং বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এর ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা বা তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৩০ আওয়ামী লীগ নেতার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার দেওয়া হয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো নেতার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব ও বাহিনীর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, Sabai Sikhi নামের ইউটিউব চ্যানেলটিতে এর আগেও বেশ কয়েকটি মিথ্যা এবং গুজব নিয়ে তৈরি ভিডিও’র অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। যেগুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
তাছাড়া, পূর্বেও রাষ্ট্রপতিসহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৩০ আওয়ামী লীগ নেতার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Jamuna TV on YouTube: র্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কল্পনাপ্রসূত
- BBC News: র্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লংঘনের দায়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ
- Voa Bangla: যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
- Pressinform.gov.bd
- BSS: লন্ডনের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন ত্যাগ
- U.S. DEPARTMENT OF THE TREASURY
- USA gov
- বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস
- Rumor Scanner’s Own Analysis