সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেননি

সম্প্রতি ‘৭ দিনের মধ্যে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিলো সেনাপ্রধান, বিপাকে আ.লীগ’ শীর্ষক শিরোনাম এবং সক্ষমতায় যাচ্ছে সেনাবাহিনী, হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

Screenshot: YouTube

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৭ দিনের মধ্যে পদত্যাগের কোনো আল্টিমেটাম দেননি এবং  বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একটি ভিডিও তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

গত এপ্রিল Sabai Sikhi নামের ইউটিউব চ্যানেলে ১ মিনিট ০৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।

Screenshot: YouTube

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান উর্ধতন কর্মকর্তাকে দেখা যায়।

১ মিনিট ০৮ সেকেন্ডের এই নিউজ ভিডিওটিতে বলা হয়, এবার শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিলো সেনাপ্রধান। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নেওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিলো সেনাপ্রধান। যাতে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠন অংশগ্রহণ করে, ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারে। এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সকল সমঝোতা করবে সেনাবাহিনী। নির্বাচনের যেকোনো দায়িত্ব পেলে তারা সঠিক ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকল সহযোগিতা করবে। এদিকে নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ায় বিপাকে পড়লো আওয়ামী লীগ সরকার।’

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি আলাদা ছবি এবং ভিডিও যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।

পাশাপাশি ভিডিওটির কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায় সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি। ভিডিওটির ৩৭ সেকেন্ডের সময় প্রদর্শিত ছবিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩ সদস্যকে রাস্তায় টহল দিতে দেখা যায়। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, উক্ত ছবিটি বিবিসি নিউজের অনলাইন সংস্করণে  ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ‘নির্বাচনী কাজে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে।

Image Collage: Rumor Scanner

এছাড়াও ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের অন্যান্য সময়ের বিভিন্ন কার্যক্রমের ছবি যুক্ত করা হয়েছে যার কোনোটিই সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি এবং ভিডিও সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। 

এছাড়াও মূল ধারার গণমাধ্যম কিংবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো সূত্রে প্রধানমন্ত্রীকে সেনাপ্রধানের পদত্যাগের নির্দেশ সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, সম্প্রতি সেনাবাহিনী ক্ষমতায় যাচ্ছে এবং সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নাম জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। 

সুতরাং, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img