বাংলাদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁসের দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি ‘নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁসের কোন ঘটনা ঘটেনি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের সামরিক শাসনের ঘোষণা দেওয়ার দাবিটিও সঠিক নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওটি তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

গত ১৪ এপ্রিল Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস’ শীর্ষক থাম্বনেইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের ছবি ব্যবহার করে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিলে সামরিক শাসনের ঘোষণা দিলো সেনাপ্রধান’ শীর্ষক শিরোনামে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

Screenshot: YouTube 

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে বিএনপি নেতা আব্দুল আওয়াল মিন্টু’র সাক্ষাতকারের একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের ছবি সহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রমের কিছু ছবি দেখা যায়। 

১ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটির শুরুতে বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু’র একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করা হয়। এরপর ভিডিওটি’র পরবর্তী অংশে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস করলো পেন্টাগন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না দেওয়া হলে সামরিক শাসন জারির নির্দেশ দেওয়া হয় এই গোপন নথিতে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্নের জন্য নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানানো হয়। যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়া না হয় তাহলে সামরিক শাসনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর নির্দেশ দেওয়া হয় ওই নথিতে। এদিকে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প নেই তাই সকল দল অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।’

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়াও, ভিডিওটির ক্যাপশনে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিলে সামরিক শাসনের ঘোষণা দিলো সেনাপ্রধান’ শীর্ষক দাবি করা হলেও বিস্তারিত প্রতিবেদনে সে বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

Screenshot: Sabai Sikhi YouTube

পাশাপাশি ভিডিওটি’র কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ভিডিওটি শুরুর ১৪ সেকেন্ড গত ১৩ এপ্রিল ‘খালেদা জিয়াকে বলা হয়, নির্বাচনে না গেলে সামরিক শাসন জারি হবে’ শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম মানবজমিনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু’র সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে।

Screenshot: ManabZamin YouTube

এবিষয়ে সাম্প্রতিক দাবির এবং প্রকৃত তথ্যের ছবি দুটোর পাশাপাশি তুলনা দেখুন নিচে।

Image Comparison by Rumor Scanner

তাছাড়া, ভিডিওটি থেকে নেওয়া কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি। 

পাশাপাশি মূল ধারার গণমাধ্যম কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বাংলাদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এছাড়াও গণমাধ্যম, সেনাবাহিনী বা নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো সূত্রে ভিডিওটি’র শিরোনামে প্রকাশিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের সামরিক শাসনের ঘোষণা দেওয়ার দাবির পক্ষেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। 

মূলত, সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁসের দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় পূর্বেও একাধিক ফ্যাক্টচেকপ্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, বাংলাদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img