পরকীয়া-কাবিন বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা

সম্প্রতি “স্ত্রীর পরকিয়া করার উপযুক্ত প্রমান থাকলে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে কাবিনের টাকা পরিশোধ করতে হবে না। – ডা. দীপু মনি” শীর্ষক শিরোনামে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মন্তব্য দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানেএখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘স্ত্রীর পরকিয়া করার উপযুক্ত প্রমাণ থাকলে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে কাবিনের টাকা পরিশোধ করতে হবে না’ সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য দেননি ডা. দীপু মনি বরং তথ্যসূত্রহীন ভিত্তিহীন এই দাবিটি ২০১৯ সাল থেকেই শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বরাতে প্রচার হয়ে আসছে।

কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে, আমাদের চাঁদপুর নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে ‘Tanvir Hasan‘ নামের একটি আইডি থেকে ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ৪.০৩ মিনিটে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে তিনি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার বরাতে বক্তব্যটি পোস্ট করেন।

Screenshot Tanvir Hasan Facebook Post

২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে এই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশিত আরো বেশ কিছু পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময়ে উক্ত বিষয়টি ডা. দীপু মনির নাম ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হতে থাকে।

Screenshot محمد أبون علي Facebook Post

গুজবের সূত্রপাত 

দেনমোহর সংক্রান্ত শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বক্তব্য দাবিতে ছড়িয়ে পড়া তথ্যটির সূত্রপাত খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, “Amra Bangali (আমরা বাঙালি)” নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে Ashok Kumar Dass নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪.৩৮ মিনিটে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে তিনি ‘বউ এর পরকিয়া করার উপযুক্ত প্রমাণ পেলে ডিভোর্স দিতে টাকা পরিশোধ করতে হবে না’ লিখে নিজস্ব মতামত জানিয়ে পোস্ট করে অন্যদের মতামত জানাতে আহবান করেন।

Screenshot Ashok Kumar Dass Facebook Post

তার এই ব্যক্তিগত মতামত তিনি গ্রুপে পোস্ট করার পাশাপাশি একই তারিখে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতেও পোস্ট করেছিলেন।

Screenshot Ashok Kumar Dass Facebook Post

এরপর তার নামে কৃতিত্ব দিয়ে তথ্যটি কপি হয়ে প্রচার হতে থাকে এবং পর্যায়ক্রমে কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত হয়ে তার নাম উল্লেখ ছাড়াই পরবর্তীতে প্রচারিত হয় এবং এক পর্যায়ে এই মতামতটি ‘আইন চাই’ শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচার হতে থাকে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, জনাব অশোক কুমার দাশের সেই ফেসবুক পোস্ট করার একদিন পূর্বেই ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারিতে ডা. মোস্তফা মোর্শেদ আকাশ স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। পরদিন ডা. আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী ডা. তানজিলা হক চৌধুরী মিতুসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলে পরকীয়া নিয়ে জনাব Ashok Kumar Dass এর ব্যক্তিগত মতামতটি দ্রুতই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

মূলত, স্ত্রীর একাধিক পরকীয়ার জেরে ডা. আকাশের আত্মহত্যার পর সে সময়ে উচ্চ দেনমোহরের কারণে পুরুষরা চাইলেও ডিভোর্স না দিতে পারার বিষয়টি আলোচনায় আসে, যার প্রেক্ষিতে পরকীয়া প্রমাণিত হলে কাবিনের টাকা পরিশোধ করতে হবে না শীর্ষক মতামতটি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে এবং একসময় এটি তথ্য সূত্র ছাড়াই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বরাতে প্রচার হতে থাকে।

আরো পড়ুনঃ দুবাই হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি ৩ হাফেজের শীর্ষস্থান অর্জনের দাবিটি মিথ্যা

এছাড়া, পরকীয়া ও কাবিন বিষয়ে ডা. দীপু মনির কোনো বক্তব্য ইন্টারনেটে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায় নি এবং মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালায় পরকীয়া প্রমাণিত হলে কাবিন পরিশোধ করতে হবে না শীর্ষক কোনো আইন খুঁজে পাওয়া যায় নি।

পরকীয়া

উল্লেখ্য, দেনমোহর হলো স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার। সাধারণত বর ও কনের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী দেনমোহর নির্ধারিত হয় এবং মুসলিম বিয়েতে এটি একটি বাধ্যতামূলক শর্ত। আইন অনুযায়ী স্বামীকে অবশ্যই দেনমোহর পরিশোধ করতে হয়, স্ত্রীকে তালাক দিলেও আইন অনুযায়ী তার মোহরানা পরিশোধ করতে হবে।

সুতরাং, “স্ত্রীর পরকিয়া করার উপযুক্ত প্রমান থাকলে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে কাবিনের টাকা পরিশোধ করতে হবে না। – ডা. দীপু মনি” শীর্ষক শিরোনামে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মন্তব্য দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং গুজব।

তথ্যসূত্র

  1. Ashok Kumar Dass Facebook Post: https://www.facebook.com/groups/1593079274254346/permalink/2480800055482259/
  2. Ashok Kumar Dass Facebook Posthttps://www.facebook.com/ashok.k.das.37/posts/10213672275110354
  3. RTV Onlinehttps://www.rtvonline.com/country/60931/%E0%A6%A1%E0%A6%BE.-%E0%A6%86%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B6-%E0%A6%86%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%98%E0%A6%9F%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A6%BE
  4. Department of Printing and Publications: https://www.dpp.gov.bd/upload_file/gazettes/SRO-201-Law%20Ministry-10%20August%202009(6027-6049)M.pdf
  5. Prothom Alohttps://www.prothomalo.com/feature/adhuna/%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%B9%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87%E0%A6%A8

আরও পড়ুন

spot_img