Home Blog Page 577

ফিলিস্তিন ইস্যুতে পুতিনের পুরোনো বক্তব্যের ভিডিওতে ভিন্ন দাবি যুক্ত করে প্রচার

সম্প্রতি, “আমি আমেরিকাকে সতর্ক করে দিচ্ছি, যেন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ না করে। আমেরিকা যদি তা করে, আমরা খোলাখুলিভাবে ফিলিস্তিনকে সাহায্য করব।” শীর্ষক একটি বক্তব্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

ফিলিস্তিন

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাম্প্রতিক ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত ইস্যুতে আমেরিকাকে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি বরং ২০২২ সালে মানবাধিকার নিয়ে পুতিনের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিওর সাবটাইটেল এডিটের মাধ্যমে পরিবর্তন করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘USA Today’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ০৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ০৮ ডিসেম্বরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মানবাধিকার কাউন্সিলের সভায় বক্তব্য রাখছিলেন। সেই সভায় তিনি পারমাণবিক অস্ত্র এবং যুদ্ধের হুমকি নিয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, রাশিয়া কখনই ইউক্রেনের উপর পারমাণবিক হামলা শুরু করবে না। রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্রকে কেবল সুরক্ষা বা আত্মরক্ষার উপায় হিসেবে ব্যবহার করবে।

তবে উক্ত ভিডিওতে পুতিন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে কোনো কথা বলেননি।

তাছাড়া, প্রেসিডেন্ট পুতিন সাম্প্রতিক ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত ইস্যুতে আমেরিকাকে হস্তক্ষেপ করতে বাধা দেওয়া সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ‘Reuters’ এর ওয়েবসাইটে গত ১১ অক্টোবর “Putin blames failure of US policy for Mideast conflict, Russia says talking to both sides” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা ফিলিস্তিনিদের কোনো খোঁজ নেননি বলে মন্তব্য করেন পুতিন।

ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, তারা যুদ্ধরত উভয় পক্ষের সাথে যোগাযোগ করছে এবং বিরোধ সমাধানে চেষ্টা করবে তবে সেটা কিভাবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া, তিনি এই যুদ্ধটি অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করেন।

মূলত, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আমেরিকাকে সাম্প্রতিক ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ২০২২ সালের ভিন্ন ঘটনার। উক্ত বক্তব্যে তিনি ফিলিস্তিন বা ইসরায়েলের বিষয়ে কোনো মন্তব্যই করেননি। 

প্রসঙ্গত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

সুতরাং, ফিলিস্তিন ইস্যুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পুরোনো বক্তব্যের ভিডিওতে ভিন্ন দাবি যুক্ত করে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ফিলিস্তিনিদের পক্ষে শিকাগোতে মানুষের বিক্ষোভের ভিডিওটি পুরোনো

সম্প্রতি, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের রাস্তায় মানুষের বিক্ষোভ মিছিলের ঘটনায় একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের বলে দাবি করা হচ্ছে। 

ফিলিস্তিনি

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শিকাগোতে সম্প্রতি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল হলেও প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০২১ সালের একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে AMU Citizens নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২১ সালের ১৭ মে আলোচিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।  

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সে সময় শিকাগোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রতিবাদ মিছিল হয়।

Screenshot comparison: Rumor Scanner 

পরবর্তীতে আরো অনুসন্ধান করে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ABC7 Chicago এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১৩ মে “Thousands protest in downtown Chicago over Israel-Palestine conflict” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জেরুজালেমে ইসরায়েলি কর্মকাণ্ড এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এবং ইসরায়েলের করা গাজায় বিমান হামলার প্রতিবাদে শিকাগো শহরের কেন্দ্রস্থলে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল।

এছাড়া, উক্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওর সাথেও আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। 

পাশাপাশি, একই দিনে ABC7 Chicago এর ইউটিউব চ্যানেলেও এ সংক্রান্ত একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।  

অর্থাৎ, আলোচিত বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

তবে, এই ভিডিওটি ২০২১ সালের হলেও সম্প্রতি শিকাগোতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সংঘাতের ঘটনাতেও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। 

মূলত, সম্প্রতি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের রাস্তায় মানুষের বিক্ষোভ মিছিলের ঘটনায় একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ০৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাতের ঘটনায় শিকাগো শহরে বিক্ষোভ হলেও আলোচিত ভিডিওটি উক্ত ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২১ সালে ইসরায়েল কর্তৃক গাজায় বিমান হামলার ঘটনার প্রতিবাদে করা বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

প্রসঙ্গত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ 

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে মানুষের বিক্ষোভ মিছিলের ২০২১ সালের পুরোনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মারা যাননি, যেভাবে ছড়ালো মৃত্যুর গুজব

গতকাল (১০ অক্টোবর) অর্থনীতির নোবেল খ্যাত ‘সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক প্রাইজ’ বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মারা গেছেন শীর্ষক একটি দাবি দেশ এবং দেশের বাইরের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়। 

অমর্ত্য সেন

উক্ত দাবিতে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন সময় টিভি  সমকাল  ইত্তেফাক, ইনকিলাব, দেশ রূপান্তর, দেশ টিভি, চ্যানেল২৪, বিডি২৪লাইভ (ফেসবুক), আজকালের খবর, দৈনিক করতোয়া, সংবাদ প্রকাশ, ঢাকা পোস্ট (ফেসবুক), সংবাদ, নিউজজি২৪, অধিকার, বার্তা২৪, সিটি নিউজ ঢাকা, সানবিডি২৪। 

তাছাড়া, ‘দ্য ডেইলি স্টার’ একই দাবিতে ফেসবুক পেজে পোস্ট করলেও পরবর্তীতে পোস্টটি সরিয়ে নেয়৷ পোস্টটির স্ক্রিনশট পাওয়া গেলেও আর্কাইভ পাওয়া যায়নি। 

একই দাবিতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ইটিভি ভারত, ডেকান হেরাল্ড

একই দাবিতে প্রচারিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অমর্ত্য সেন মারা যাননি বরং সুস্থ আছেন ‘সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক প্রাইজ’ বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ, যা তার পরিবারের পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে আলোচিত দাবিটির সূত্র হিসেবে নোবেলজয়ী মার্কিন ইতিহাসবিদ ক্লডিয়া গোল্ডিন টুইটের বরাত দেওয়া হয়েছে।  

আমরা অনুসন্ধানে দেখেছি, চলতি বছর (২০২৩) অর্থনীতির নোবেল খ্যাত ‘সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক প্রাইজ’ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ক্লডিয়া গোল্ডিন। গোল্ডিন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। এখানে উল্লেখ প্রয়োজন, অমর্ত্য সেন নিজেও হার্ভার্ডের অধ্যাপক। 

গোল্ডিন অমর্ত্য সেনকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো টুইট করেছেন কিনা এমন তথ্যের বিষয়ে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম ক্লডিয়া গোল্ডিনের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট খুঁজে পায়৷ ২০১৩ সালে চালু করা এই অ্যাকাউন্ট থেকে অবশ্য ২০২১ সালে সর্বশেষ টুইট করা হয়। 

Screenshot: X

তবে এটিই যে গোল্ডিনের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট তা নিশ্চিত হওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রের Princeton University Press এর অফিশিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টের একটি টুইট থেকে। উক্ত টুইটে গোল্ডিনের অ্যাকাউন্টকে মেনশন করে নোবেল (আদতে ‘সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক প্রাইজ’) পুরস্কার পাওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানানো হয়। 

এই অ্যাকাউন্টে অমর্ত্য সেনের বিষয়ে কোনো টুইট না পাওয়ায় আমরা বিষয়টি নিয়ে আরো অনুসন্ধান করে ইন্টারনেট আর্কাইভে Claudia Goldin নামে আরেকটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত টুইটের সন্ধান পাই। 

১০ অক্টোবর সকালে প্রকাশিত এই টুইটে অমর্ত্য সেন মারা গেছেন বলে দাবি করা হয়। 

Screenshot: X

তবে উক্ত টুইট এবং অ্যাকাউন্টটি এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সচল ছিল না৷ কিন্তু আমরা এই অ্যাকাউন্ট থেকেই গতকাল প্রকাশিত আরেকটি টুইট থেকে জানতে পারি, অ্যাকাউন্টটি গোল্ডিনের নয়। এটি তৈরি করেছেন ইতালির সাংবাদিক তমাসো ডেবেনেডেটি। 

Screenshot: X

ইতালির এই সাংবাদিকের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, তিনি অন্তত ২০১২ সাল থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে আসছেন। ২০১২ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম The Guardian এর ওয়েবসাইটে ডেবেনেডেটিকে নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ডেবেনেডেটি জানান, মিডিয়ার দুর্বলতা ধরিয়ে দিতে এই কাজটি তিনি করে থাকেন। 

তার মতে, সোশ্যাল মিডিয়া হল বিশ্বের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত তথ্যের উৎস কিন্তু সংবাদ মাধ্যমগুলো গতির প্রয়োজনের কারণে এটি বিশ্বাস করে।  

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ডেবেনেডেটির ঝুলিতে ইতালির পত্রিকাগুলোকে বোকা বানিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির ভুয়া ইন্টারভিউ ছাপানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে।

আমরা পরবর্তীতে Claudia Goldin নামক অ্যাকাউন্টটির ইন্টারনেট আর্কাইভ থেকে পাওয়া আর্কাইভ পর্যালোচনা করে দেখতে পাই, অ্যাকাউন্টটি গত মে মাসে চালু করা হয়েছে। তবে অল্প সময়েই অ্যাকাউন্টে যুক্ত হয়েছেন দশ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ 

Screenshot: X

অর্থাৎ, অমর্ত্য সেনের মৃত্যুর দাবিটি একটি ভুয়া এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথম প্রকাশ করা হয়। 

অমর্ত্য সেনের মৃত্যু বিষয়ক দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে পরবর্তীতে অনুসন্ধান করে ভারতের সংবাদমাধ্যম India Today এর ওয়েবসাইটে গত ১০ অক্টোবর সন্ধ্যায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অমর্ত্য সেনের সাথে মৃত্যুর বিষয়টি গুজব। তার মেয়ে নন্দনা দেব সেন এক্স অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক টুইটে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

নন্দনা দেব সেন তার দেওয়া টুইটে জানান, তার বাবা পুরোপুরি ভালো আছেন। তারা সবেমাত্র কেমব্রিজে পরিবারের সাথে একসাথে একটি চমৎকার সপ্তাহ কাটিয়ে গত রাতে (০৯ অক্টোবর) যখন বিদায় জানান তখন তিনি বরাবরের মতোই শক্তিশালী আলিঙ্গন দিয়ে বিদায় জানিয়েছেন! তিনি হার্ভার্ডে সপ্তাহে টি কোর্স পড়াচ্ছেন, তার ‘জেন্ডার’ নামক বই নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বরাবরের মতোই ব্যস্ত!

Screenshot: X

অমর্ত্য সেনের আরেক মেয়ে অন্তরা সেনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছে ভারতের ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান Newschecker। অন্তরা জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি তার বাবা অমর্ত্য সেনের সাথে কেমব্রিজে আছেন। ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই, মৃত্যুর খবরটি ভুল।

মূলত, গতকাল (১০ অক্টোবর) অর্থনীতির নোবেল খ্যাত ‘সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক প্রাইজ’ বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মারা গেছেন শীর্ষক একটি দাবি দেশ এবং দেশের বাইরের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। অমর্ত্য সেন মারা যাননি বরং সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। প্রকৃতপক্ষে, একটি ফেক এক্স অ্যাকাউন্টের বরাতে উক্ত দাবিটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে অমর্ত্য সেনের পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া, ইতালির একজন সাংবাদিকের তৈরি করা উক্ত অ্যাকাউন্টটিও এখন আর সচল নেই। 

প্রসঙ্গত, সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক কর্তৃক নোবেল ফাউন্ডেশনকে প্রদানকৃত অনুদানের উপর ভিত্তি করে ১৯৬৯ সাল থেকে প্রতিবছর অর্থনীতিতে একটি পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু বহু বছর ধরে এই পুরস্কার ঘোষণার পর গণমাধ্যমে এটিকে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দাবিতে প্রচার হয়ে আসছে। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে। 

সুতরাং, ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মারা গেছেন শীর্ষক একটি দাবি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

রূপপুর প্রকল্পের অনুষ্ঠানে পুতিন বাংলায় বক্তব্য দেননি

সম্প্রতি, পাবনার রূপপুরে জ্বালানি সরবরাহের সনদ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

পুতিন

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন যমুনা টিভি (ইউটিউব), বায়ান্ন টিভি (ইউটিউব), চ্যানেল আই (ইউটিউব), জনবাণী (ইউটিউব)। 

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজসহ অন্যান্য কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রূপপুরে জ্বালানি সরবরাহের সনদ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভ্লাদিমির পুতিন বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং রুশ ভাষায় দেওয়া তার বক্তব্যকে ভিন্ন একজন ব্যক্তি বাংলায় অনুবাদ করে শুনিয়েছেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে অনলাইন সংবাদমাধ্যম Dhaka Post এর ওয়েবসাইটে গত ০৫ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচিত অনুষ্ঠানটিতে সেদিন (০৫ অক্টোবর) রাশিয়া থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন বক্তব্য দেন। তাঁর বক্তব্য বাংলায় অনুবাদ করে শোনানো হয়।

Screenshot: Dhaka Post

এই তথ্যের সূত্র ধরে সেদিনের অনুষ্ঠানের লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে। 

Screenshot: YouTube 

ভিডিওর ৩৩ মিনিট ৫০ সেকেন্ড থেকে পুতিনকে বক্তব্য শুরু করতে দেখা যায়। পরের ১০ সেকেন্ড পুতিনকে রুশ ভাষাতেই বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এরপরই ভিন্ন একজন ব্যক্তি পুতিনের বক্তব্যকে বাংলায় অনুবাদ করতে শুরু করেন৷পুতিনের কণ্ঠস্বর এবং অনুবাদকারী ব্যক্তির কন্ঠস্বরে স্পষ্টতই ভিন্নতা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

অর্থাৎ, পুতিন সেদিন বাংলা ভাষায় বক্তব্য দেননি।

মূলত, গত ০৫ অক্টোবর পাবনার রূপপুরে জ্বালানি সরবরাহের সনদ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অনুষ্ঠানে তিনি বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। সেদিন রুশ প্রেসিডেন্ট রুশ ভাষাতেই বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যকে ভিন্ন এক ব্যক্তি বাংলায় অনুবাদ করে শুনিয়েছেন। 

সুতরাং, রূপপুর প্রকল্পের অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রুশ ভাষায় দেওয়া বক্তব্যের ভিন্ন এক ব্যক্তির বাংলায় অনুবাদের ঘটনাকে পুতিন বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

ইসরায়েলের পতাকা নামিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলনের দৃশ্যটি বাস্তব নয়

সম্প্রতি, ইসরায়েলের পতাকা নামিয়ে সেখানে ফিলিস্তিনের পতাকা লাগিয়ে আযান দেওয়ার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। 

পতাকা

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইসরায়েলের পতাকা নামিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলনের পর আযান দেওয়ার ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং এটি “Fist of the Free” নামের একটি সিরিজের দৃশ্য।

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, Maxammed Boodmakaay নামের একটি ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে “If you are happy with Allahuakabar, write it” (অনূদিত) শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।

২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটির সাথে আলোচ্য ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে টিকটক ইউজারনেম ‘@palestiniandrama’ লক্ষ্য করা যায়।

Screenshot: Facebook 

উক্ত টিকটক ইউজার নেমের সূত্র ধরে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ইউজারনেম সার্চ করে খুঁজে পাওয়া যায় ‘Palestinian Drama’ নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট। তবে, উল্লিখিত টিকটক অ্যাকাউন্টে মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্টের ইউজার নেম গুগলে সার্চ করে বেশ কিছু ভিডিওর প্রিভিউ লক্ষ্য করা যায় এবং প্রিভিউ গুলোয় ঢুকলে একটি ভিডিও রিমুভ অবস্থায় পাওয়া যায়। 

রিমুভ হওয়া ভিডিওটির গুগল ক্যাশে অনুসন্ধান করলে মূল ভিডিওটি (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।

ভিডিওটির আরবি ভাষার ক্যাপশন অনুবাদ করে জানা যাচ্ছে, ভিডিওটি “Fist of the Free” নামের একটি সিরিজের দৃশ্য। 

Screenshot: Google Web Cache

সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধানের মাধ্যমে লেবানিজ টেলিভিশন চ্যানেল ‘Al-Manar’ এর ওয়েবসাইটে “Fist of the Free” সিরিজের ৩০ টি পর্ব খুঁজে পাওয়া যায়।

পর্বগুলো পর্ববেক্ষণ করে ৩০তম পর্বের ৫০ মিনিট থেকে দেখানো দৃশ্যের সাথে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot comparison: Rumor Scanner 

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম Al Jazeera এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ০২ অক্টোবর “drama… “Fist of the Free” is a Ramadan series that simulates the stories of Gaza’s steadfastness” (অনূদিত) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “ফিস্ট অফ দ্য ফ্রি” নামক সিরিজটি গাজা ভূখণ্ডের সত্য ঘটনা অনুকরণ করে তৈরি করা হয়েছে। সিরিজটি হামাস দ্বারা প্রযোজিত। 

মূলত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়। এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের পতাকা নামিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলনের পর আযান দেওয়ার একটি ভিডিও বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচ্য ভিডিওটি “Fist of the Free” নামের একটি সিরিজের দৃশ্য। 

উল্লেখ্য, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়। চলমান এই সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ 

সুতরাং,”ফিস্ট অফ দ্য ফ্রি” নামের একটি সিরিজে ইসরায়েলের পতাকা নামিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলনের পর আযান দেওয়ার দৃশ্যকে বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

  • Maxammed Boodmakaay Facebook Post 
  • palestiniandrama- Tik Tok Post
  • Fist Of The Free Series All Episodes
  • 30th Episode of Fist Of The Free Series
  • Rumor Scanner’s own investigation 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নেওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিয়েছেন এবং ২০২৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেনাবাহিনীর সদস্যের পুরোনো কিছু ছবি ও ভিডিও’র অংশ দেখা যায়।

Screenshot: Facebook Claim Post

‘ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা BNP’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ০৪ অক্টোবর ১ মিনিট ০৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়। 

ভিডিওটিতে বলা হয়, “এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিলো শেখ হাসিনা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নেওয়া হচ্ছে। এদিকে আগামী তিনমাসের মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়েই নির্বাচনের পক্রিয়া শুরু করবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ওদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে, যাতে করে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারে। এই নির্বাচনে সকল সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।”

উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি আলাদা ছবি এবং ভিডিও যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। 

অসংগতি-১

ভিডিওটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নেওয়ার বিষয়ে কোনো ঘোষণা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ভিডিওটিতে ২০২৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার বিষয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি। 

অসংগতি-২

ভিডিওটিতে দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিয়েছেন এবং আগামী তিন মাসের মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে আওয়ামী লীগ সরকার। তবে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে এই দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

অসংগতি-৩

ভিডিওটিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নির্বাচনে সেনাবাহিনী সহায়তা করবে বলে দাবি করা হলেও গণমাধ্যম বা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে এসম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, আলোচিত ভিডিওটির শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি বইয়ে স্বাক্ষর করতে দেখা যাচ্ছে। 

Screenshot: Facebook 

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ০৪ জানুয়ারি মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: The Daily Star 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেসময় জাতীয় সংসদ ভবনে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে সংসদ সদস্যদের বইয়ে স্বাক্ষর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অর্থাৎ, এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, এটি ২০১৯ সালের ছবি।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সর্ম্পকিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পুর্ণবহাল করা হয়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।

মূলত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করার দাবিতে বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দাবি জানিয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে এবং বিপক্ষে ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য প্রচার করা হয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিয়েছেন এবং ২০২৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে সেখানে উক্ত তথ্যের কোনো নির্দিষ্ট সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নেওয়ার বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেননি।

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ভারতের সিকিমে মেঘ ভাঙ্গার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি অস্ট্রিয়ার 

সম্প্রতি, ভারতের সিকিমে মেঘ ভাঙ্গার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। 

দৃশ্য

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের সিকিমে মেঘ ভাঙ্গার দৃশ্য শীর্ষক  দাবিটি সঠিক নয় বরং ভিডিওটি অস্ট্রিয়ার লেক মিলস্ট্যাটের উপর ঘটে যাওয়া মাইক্রোবার্স্ট এর দৃশ্য। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর ‘Techno -Wonders’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “Microburst at Lake Millstatt in #Austria” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: YouTube 

উক্ত ভিডিওটির ক্যাপশনে থাকা বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটি অ্যাড্রিয়াটিক (১,৯২৯ ফুট) থেকে ৫৮৮ মিটার উপরে, মধ্য পূর্ব আল্পসের গুর্কটাল আল্পস (নক পর্বতমালা) রেঞ্জের মধ্যে ড্রাভা উপত্যকার উত্তরে, স্পিটাল আন ডার ড্রউ শহরের কাছে অবস্থিত। 

আরও অনুসন্ধান করে ২০১৮ সালের ১২ জুন ‘Peter Maier’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “Tsunami from Heaven / Amazing Rainstorm Timelapse / Downburst / Microburst ” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot : Peter Maier 

উক্ত ভিডিওটির সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম INSIDER এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২১ জুন “This mountaineer captured a stunning timelapse of a ‘tsunami from heaven’ — and people are in awe” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,পর্বতারোহী পিটার মায়ার অস্ট্রিয়ার লেক মিলস্ট্যাটে তার হোটেলের টেরেস থেকে এই টাইমল্যাপসটি ক্যাপচার করেছেন।

অর্থাৎ অস্ট্রিয়ায় ঘটে যাওয়া পুরাতন একটি মাইক্রোবার্স্ট এর দৃশ্যকে ভারতের সিকিম অঞ্চলের মেঘ ভাঙ্গার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

মাইক্রোবার্স্ট কী?  

মাইক্রোবার্স্ট একটি বজ্রঝড়ের মধ্যে দ্রুত ডুবে যাওয়া বাতাসের একটি প্লাম। এটি সাধারণত একই অঞ্চলে হয়ে থাকে যেখানে শিলাবৃষ্টি এবং ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এটি শিলাবৃষ্টি এবং ভারী বৃষ্টির বোঝা যা বাতাসকে নীচের দিকে টেনে নিয়ে যায়। বিস্তারিত দেখুন এখানে। 

মূলত, সিকিমে মেঘ ভাঙ্গার দৃশ্য দাবিতে সম্প্রতি ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে, পর্বতারোহী পিটার মায়ার ২০১৮ সালে তার হোটেল টেরেস থেকে অস্ট্রিয়ার লেক মিলস্ট্যাটের উপর ঘটে যাওয়া মাইক্রোবার্স্ট এর দৃশ্যটি ধারণ করেন। 

সুতরাং, অস্ট্রিয়ায় মাইক্রোবার্স্টের দৃশ্যকে ভারতের সিকিমের মেঘ ভাঙ্গার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ভয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, ‘ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ভয়ে বিমানঘাঁটি খালি করে পালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী‘ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফিলিস্তিনি

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের নয় বরং ভিডিওটি পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার।

ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘Sprinter’ নামক এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি দক্ষিণ ইসরায়েলের রাস্তায় এফ-১৬ নামক দুটি যুদ্ধবিমান গাড়িতে করে নেওয়ার সময়ের দৃশ্য। যা সাম্প্রতিক ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হওয়ার বেশে কয়েকদিন আগের ঘটনা।

তাছাড়া, ‘Mahmood Khan’ নামক এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ভিডিও থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Twitter

মূলত, গত ১৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ইসরায়েলের রাস্তায় গাড়িতে করে যুদ্ধবিমান নিয়ে যাওয়ার একটি দৃশ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়। সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তন সংঘাতকে কেন্দ্র করে ঐ ভিডিওকে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ভয়ে ইসরায়েলি বাহিনী বিমানঘাঁটি খালি করে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা করলে ফিলিস্তিন- ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷

প্রসঙ্গত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ 

সুতরাং, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ভয়ে ইসরায়েলি বাহিনী বিমানঘাঁটি খালি করে পালিয়ে যাওয়ার দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

বাংলাদেশের সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দাবিতে মিশরের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, ‘এই মাত্র সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুনের ভীষণ অবস্থা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে।

সচিবালয়ে

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট (আর্কাইভ) এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ) এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাথে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, গত ০২ অক্টোবর মিশরের ইসমাইলিয়া শহরে পুলিশের সদর দপ্তরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ধারণকৃত পুরোনো ভিডিওতে সচিবালয়ে আগুন লাগার শিরোনাম যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে। 

রির্ভাস ইমেস সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম The Guardian এর ওয়েবসােইটে Fire breaks out at police premises in Egypt’s Ismailia – video শীর্ষক শিরোনামে গত ০২ অক্টোবর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 


ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর ১ সেকেন্ড থেকে ৬ সেকেন্ড পর্যন্ত হুবহু মিল রয়েছে।

Video Comparison by Rumor Scanner 

এছাড়াও উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সোমবার অর্থাৎ ০২ অক্টোবর মিশরের সুয়েজ খালের তীরবর্তী শহর ইসমাইলিয়ার পুলিশ সদর দপ্তরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। 

পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আরেকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম Reuters এর ওয়েবসাইটে Fire engulfs police facility in Egypt’s Ismailia, 25 hurt শীর্ষক শিরোনামে একই দিনে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Reuters

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, মিশরের ইসমাইলিয়া শহরের পুলিশ সদর দপ্তরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন।

এছাড়াও বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক The Daily Star এর বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে মিশরের ইসমাইলিয়ায় পুলিশ ভবনে আগুন, আহত অন্তত ২৫ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও একই তথ্য প্রদান করা হয়েছে।

Screenshot: The Daily Star

তবে দেশীয় কোনো গণমাধ্যমে সম্প্রতি বাংলাদেশের কোনো সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কোনো ঘটনার তথ্য পায়নি ‍রিউমর স্ক্যানার টিম। 

অর্থাৎ, মিশরের ইসমাইলিয়া শহরের পুলিশ সদর দপ্তরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ভিডিও বাংলাদেশের সচিবালয়ে আগুন লাগার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

মূলত, গত ০২ অক্টোবর মিশরের সুয়েজ খাল তীরবর্তী শহর ইসমাইলিয়ার পুলিশ সদর দপ্তরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যাতে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। সেসময় উক্ত ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যগুলো সেসময় প্রচারিত ভিডিওগুলো দিয়েই উক্ত ঘটনার সংবাদ কাভার করে। কিন্তু সম্প্রতি উক্ত ঘটনার একটি ভিডিওতে ‘এই মাত্র সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুনের ভীষণ অবস্থা’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, মিশরের পুলিশ সদর দপ্তরে আগুন লাগার ভিডিও ব্যবহার করে বাংলাদেশের সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

কেবল আর্জেন্টিনা নয়, দক্ষিণ আমেরিকার সবগুলো দেশই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে 

0

সম্প্রতি ‘দক্ষিণ আমেরিকার এক মাত্র দেশ আর্জেন্টিনা, যারা ফিলিস্তিনি কে স্বীকৃতি দিয়েছে‘ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র আর্জেন্টিনা কর্তৃক ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং  আর্জেন্টিনা ছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কোনগুলো?

পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের একটি দক্ষিণ আমেরিকা। মোট ১২ টি স্বাধীন রাষ্ট্র নিয়ে এ মহাদেশ গঠিত। রাষ্ট্রগুলো হলো ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, চিলি, বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, গায়ানা ও সুরিনাম।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র আর্জেন্টিনাই কি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে?

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম Al Jazeera এর ওয়েবসাইটে ২০১০ সালের ০৫ ডিসেম্বর ‘Brazil recognises Palestine’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সে বছর ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লুলা দ্যা সিলভা ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন। 

আল জাজিরাতেই ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘Guyana recognises Palestinian state’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গায়ানার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে জানা যায়। 

একই সংবাদমাধ্যমে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ‘Has Latin America abandoned Palestine?‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অনেকগুলো দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর  মধ্যে আছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলি, ইকুয়েডর, ভেনিজুয়েলা।

পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ফরেন পলিসির ওয়েবসাইটে ২০১১ সালের ০৫ জানুয়ারি ‘Why are so many South American countries recognizing the Palestinian state?‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উপরিউক্ত দেশগুলো ছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ উরুগুয়ের নাম পাওয়া যায়, যারা রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

এই দেশগুলো ছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকায় অন্যান্য দেশগুলোর নাম ধরে অনুসন্ধানে ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা ওয়াফার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে প্যারাগুয়ে, সুরিনাম, পেরুর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনগুলো দেখুন-

এছাড়া অনুসন্ধানে দেখা যায়, মার্কিন সংবাদ মাধ্যম CNN এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ০৯ আগস্ট ‘Colombia recognizes Palestine as sovereign state‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কলম্বিয়াও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

এ পর্যন্ত অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, কেবল আর্জেন্টিনাই একমাত্র নয়, দক্ষিণ আমেরিকার সবগুলো দেশই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং বিশ্বের ১৩৬ টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।  

মূলত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এতে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার নাগরিকদের প্রতিবাদের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনকে একমাত্র আর্জেন্টিনাই স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে কেবল আর্জেন্টিনা নয়, এই মহাদেশটির সব কটি দেশই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

সুতরাং, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনকে একমাত্র আর্জেন্টিনা স্বীকৃতি দিয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র