সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়ে জারিকৃত ‘টাইটেল ৪২’র অবসান হওয়ায় গত ১১ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে হাজার হাজার শরনার্থী প্রবেশের খবরে কতিপয় গণমাধ্যমে একটি ছবি প্রকাশ করে ছবিটি শরণার্থী প্রবেশের সময়ের শীর্ষক দাবি করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রবেশের খবরে গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০১৮ সালে আমেরিকার অভিবাসীদের মেক্সিকোতে প্রবেশের সময়ে তোলা ছবি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে মার্কিন সংবাদ বিশ্লেষণ ভিত্তিক সংস্থা Toward Freedom এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ১৭ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন এবং ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ০১ নভেম্বর মধ্য আমেরিকার অভিবাসীদের প্রথম কাফেলা ওক্সাকা রাজ্যের মাতিয়াস রোমেরো শহরে পৌঁছেছিল। রোমেরো মেক্সিকোর একটি শহরের নাম।
Screenshot source: Toward Freedom
ছবিটি IOM এর জন্য তুলেছিলেন রাফায়েল রদ্রিগেজ নামক এক ব্যক্তি।
পরবর্তীতে ‘International Organization for Migration (IOM)’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ০২ নভেম্বর প্রকাশিত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: IOM
ছবিটির ক্যাপশন এবং প্রতিবেদনের তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, ছবিটি ২০১৮ সালে মেক্সিকোতে আমেরিকার অভিবাসীদের প্রবেশের দৃশ্য।
মূলত, গত ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়ে জারিকৃত ‘টাইটেল ৪২’র অবসান হয়। এর ফলে দেশটির সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার শরনার্থী প্রবেশের খবরে কতিপয় গণমাধ্যমে একটি ছবি প্রকাশ করে ‘ছবিটি শরণার্থী প্রবেশের সময়ের দৃশ্যের’ শীর্ষক দাবি করা হয়। এর প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। ২০১৮ সালে মেক্সিকোতে আমেরিকার অভিবাসীদের প্রবেশের ছবি এটি।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময়ে শরনার্থী প্রবেশের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ২০১৮ সালে মেক্সিকোতে আমেরিকার অভিবাসীদের প্রবেশের ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ষড়ভুজাকৃতির মেঘের কারণেই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের সৃষ্টি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া তথ্যটি সঠিক নয় বরং ২০১৬ সালে আমেরিকার সায়েন্স টিভি চ্যানেল তাদের একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত দুইজন বিশেষজ্ঞের বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে এই দাবিতে সর্বপ্রথম প্রচার করা হয়।
মূলত, ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল আমেরিকার সায়েন্স নামের একটি চ্যানেলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানটিতে দাবি করা হয়, মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার একটি স্যাটেলাইটে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের ষড়ভুজাকৃতির এমন কিছু মেঘ দেখা গিয়েছে, যা আরেকটি স্যাটেলাইটে উত্তর সাগরের উপরও দেখা গিয়েছে। এই ধরনের মেঘ মাইক্রোবার্স্ট (microburst) নামক একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, যা শক্তিশালী বাতাস তৈরি করে। অনুষ্ঠানটিতে আমন্ত্রিত দুইজন বিশেষজ্ঞ অতিথির এই মেঘ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে সায়েন্সে চ্যানেলটি এক পর্যায়ে দাবি করে, বিজ্ঞানীরা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্যের সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। তবে রিউমর স্ক্যানারে অনুসন্ধানে জানা যায়, এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত দুইজন অতিথিই পরবর্তীতে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জানান, তাদের বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে সায়েন্স চ্যানেলটি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্যের সমাধান খুঁজে পাওয়ার দাবিতে প্রচার করেছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, “বোঝো অবস্থা! ভক্তরা এদিকে আলফাল গল্প দিয়ে তৈরী “কেরালা স্টোরি” দেখে “লাভ জেহাদ, লাভ জেহাদ” করে চিল্লিয়ে গলা খারাপ করে তুললো, অথচ সেই সিনেমার অভিনেত্রী দেবলীনা ভট্টাচার্য (স্টার প্লাসের সেই বিখ্যাত গোপি বহু) বাস্তবে শাহনওয়াজ সেখকে বিয়ে করে সংসারী হলো! সাধে কি বলে, ভক্তদের মাথায় শুধু গোবর” শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট গুলোতে দাবি করা হচ্ছে, আলোচিত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ চলচ্চিত্রে দেবলীনা ভট্টাচার্য অভিনয় করেছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ চলচ্চিত্রে ভারতীয় অভিনেত্রী দেবলীনা ভট্টাচার্য অভিনয় করেননি বরং কোনোপ্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া, কেরালি মুভির মুক্তির প্রায় ৬ মাস পূর্বেই অভিনেত্রী দেবলীনা ভট্টাচার্যের সাথে শাহনেওয়াজ শেখ বিবাহে আবদ্ধ হন।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের অনলাইন ডেটাবেজ ভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘Imdb’ এ “Full Cast & Crew: The Kerala Story (2023)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত অভিনয় শিল্পীদের তালিকায় অভিনেত্রী দেবলীনা ভট্টাচার্যের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Imdb
এছাড়া, ভারতীয় চলচ্চিত্রের অনলাইন ডেটাবেজ ভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘Bollywood Hungama’ এ ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ চলচ্চিত্রের ‘Cast and Crew’ সেকশনে গিয়েও অভিনেত্রী দেবলীনা ভট্টাচার্যের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Bollywood Humgama
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ১৩ মে অভিনেত্রী দেবলীনা ভট্টাচার্য তার টুইটার একাউন্ট থেকে ‘Incognito’ নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্টের টুইট পোস্টের রিটুইট করে তার স্বামীর সাথে একত্রে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ চলচ্চিত্র দেখার কথা জানান। দেবলীনা বলেন, “আমার স্বামী একজম মুসলিম এবং তিনি আমার সঙ্গে এই ছবি দেখতে এসেছেন।তিনি এটির প্রশংসা করেছেন। তিনি এটিকে অপরাধ হিসেবে নেননি বা তিনি মনে করেননি এটি তার ধর্মের পরিপন্থী এবং আমি মনে করি প্রত্যেক ভারতীয়ের এমনই হওয়া উচিত।”
মূলত, ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর জিম ট্রেইনার মুসলমান ধর্মের অনুসারী শাহনেওয়াজ শেখের সাথে হিন্দু ধর্মের অনুসারী ভারতীয় অভিনেত্রী দেবলীনার বিয়ে হয়। গত ১৩ মে এক টুইট বার্তায় অভিনেত্রী দেবলীনা ভট্টাচার্য তার স্বামী শাহনেওয়াজ শেখের সাথে একসাথে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখতে যাওয়ার কথা জানান। তবে, সম্প্রতি কোনো প্রকার তথ্য প্রমাণ ছাড়াই দেবলীনা ভট্টাচার্য ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বাঙালি নির্মাতা সুদীপ্তর সেনের আলোচিত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ চলচ্চিত্রটি গত ৫ মে মুক্তি পায়। ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে অনেক নারীর মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসে যোগ দেওয়ার ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমাটি মুক্তির আগে থেকেই সমালোচনায় মুখর। অভিযোগ উঠেছে সিনেমাটির কাহিনী ‘অতিরঞ্জিত’। সমালোচনার মুখে ইতোমধ্যে ভারতের একাধিক রাজ্যে সিনেমাটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ জারি করেছে সুপ্রিমকোর্ট। ভারতজুড়ে আলোচনা সমালোচনা এবং নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ইতোমধ্যে সিনেমাটি ১৫০ কোটি রুপি আয় করেছে।
সুতরাং, ভারতীয় অভিনেত্রী দেবলীনা ভট্টাচার্য আলোচিত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় তার ওপর সেখানে বিএনপি কর্তৃক হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে তার বিরুদ্ধে জাপান বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির একটি ভিডিও প্রচার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি’র ক্যাপশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলার কথা লেখা থাকলে ভিডিও’র বিস্তারিত অংশে সেরকম কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। সেখানে শুধু শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে জাপান বিএনপির নেতাকর্মীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। তাছাড়া রিউমার স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিডিও’র ক্যাপশনের সাথে ভিডিও’র বিস্তারিত অংশ অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিএনপির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল Bangladesh Nationalist Party-BNP এ গত ২৭ এপ্রিল ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর উপলক্ষে জাপান বিএনপি প্রতিবাদ সমাবেশ ও কালো পতাকা প্রদর্শন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: BNP YouTube
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকে কেন্দ্র করে জাপান বিএনপির পক্ষ থেকে ডাকা প্রতিবাদ সমাবেশের ভিডিও। উক্ত ভিডিওর সাথে ‘জাপানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বিএনপি হামলা করছে’ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম এনটিভি অনলাইনে গত ২৬ এপ্রিল ‘প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের প্রতিবাদে টোকিওতে বিএনপির বিক্ষোভ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: NTV Online
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের প্রতিবাদে টোকিওতে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে জাপান বিএনপি। বুধবার (২৬ এপ্রিল) প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিল করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, বিএনপির অবস্থানের সময় জাপান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুলিশের পাহারায় পিছু হটে চলে যেতে দেখা যায়। এ সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার কার্যালয়ের মূল ফটকের ঠিক মুখোমুখি বিএনপির নেতা কর্মীরা অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে। তবে সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলা হয়েছে এমন কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে গত ২৬ এপ্রিল ‘প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর: টোকিওতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: The Daily Star
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেখানে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হলেও পুলিশের তৎপরতায় অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে জাপানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বিএনপির হামলার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, জাপানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বিএনপির হামলার দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাগত ২৫ এপ্রিল ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের জাপান যান। প্রধানমন্ত্রীর সফরকল কেন্দ্র করে জাপানের টোকিওতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে। বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া স্লোগানের ভিডিওকে জাপান সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর কালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করলেও সেখানে বিএনপি নেতাকর্মী কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলা কোনো ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ইন্টারনেটে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, জাপানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বিএনপি হামলা করেছে শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, মাইক্রোব্লগিং সাইট টুুইটার এবং মার্কিন বৈদ্যুতিক যান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা’র মালিক ইলন মাস্কের সাথে কিছু নারী রোবটের ছবি ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ইলন মাস্ক ২০২৪ সালে বাহারি রঙ ও চেহারার এমন রোবট বউ আনতে যাচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইলন মাস্ক রোবট বউ বানিয়েছেন এবং তা ২০২৪ সালে বাজারে আসবে শীর্ষক দাবিগুলো সঠিক নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ইলন মাস্কের সাথে রোবটের কাপল ছবি তৈরি করে উক্ত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘Xavier Art’ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে “Original creator of ‘Elon introduces Electrical Side Piece'” শীর্ষক ক্যাপশনে গত ৪ মে তারিখে প্রকাশিত এক পোস্টে কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়, যার সাথে আলোচিত ছবিগুলোর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
ইনস্টাগ্রাম পোস্টটিতে পোস্টদাতা ক্যাপশনের নিচের দিকে বেশকিছু হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেন যার মধ্যে “#ai #aiart #aibeauty #aicommunity #aicommunityart #aiartwork #art #chicagoaiart #midjourney #midjourneycommunity নামক কিছু হ্যাশট্যাগও রয়েছে।
এই হ্যাশট্যাগগুলো থেকে প্রতীয়মান হয়, উক্ত ব্যক্তি এআই আর্ট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ছবিগুলো তৈরি করেছেন।
Screenshot from Instagram
উক্ত ছবি গুলো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বেশ কিছু ভুল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রকাশিত ছবি গুলোর মধ্যে দুটি ছবির হাত এবং হাতের আঙুল বিকৃত দেখা যায়। যা থেকে প্রতীয়মান হয়, ছবিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি।
Image by Rumor Scanner
পরবর্তীতে, অনুসন্ধানের মাধ্যমে ফ্রান্সের গণমাধ্যম ‘France 24’ এর ওয়েবসাইটে গত ১৮ মে “No, Elon Musk is not building a ‘robot wife” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইলন মাস্কের ২০২৪ সালের মধ্যে বাহারি রঙ ও চেহারার রোবট বউ বাজারে আনার তথ্যটি সত্য নয় এবং ছবিগুলো কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই টুলসের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।
Screenshot from France 24
ভিডিও প্রতিবেদনে ‘Dania Stark’ নামে একটি একটি টুইটার অ্যাকাউন্টের টুইটের বিষয়ে উল্লেখ করে বলা হয়, কীভাবে মিডজার্নির মাধ্যমে কমান্ড দিয়ে এসব ছবি তৈরি করা হয়েছে ‘Dania Stark’ টুইট পোস্টে সেসব তুলে ধরা হয়েছে।
পরবর্তীতে গত ০৫ মে তারিখে প্রকাশিত ‘Dania Stark’ এর টুইটার পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from Twitter
এছাড়া, আরও অনুসন্ধান করে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান ‘টেসলা’ এর ইউটিউব চ্যানেলে “2023 Annual Shareholder Meeting” শীর্ষক শিরোনামে গত ১৬ মে প্রকাশিত এক ভিডিও থেকে জানা যায়, তিনি ‘অপটিমাস’ নামের মানবাকৃতির রোবট তৈরি করেছেন। তবে ভিডিওতে রোবট বউ তৈরি শীর্ষক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Youtube
একইসাথে, টেসলার ওয়েবসাইট এবং ইলন মাস্কের টুইটার অ্যাকাউন্টে খোঁজ করেও তিনি ২০২৪ সালের মধ্যে রোবট বউ বাজারে আনবেন শীর্ষক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ০৪ মে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা ছবি তৈরির টুলস ‘মিডজার্নি’ ব্যবহার করে ইলন মাস্কের সাথে রোবটের কিছু কাপল ছবি তৈরি করে ‘Xavier Art’ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়। সম্প্রতি সেই পোস্ট থেকে ছবিগুলো সংগ্রহ করে ইলন মাস্ক ২০২৪ সালের মধ্যে রোবট বউ বাজারে আনবেন শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া অনুসন্ধানে জানা যায়, মাস্ক রোবট বউ বা রোবট ওয়াইফ নামে কোনো রোবট তৈরি করেননি।
উল্লেখ্য, মিডজার্নি হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন একটি ছবি প্রস্তুতকরক টুল। এটি ব্যবহার করে কিছু কমান্ডের সাহায্যে নিখুঁত ছবি তৈরি করা সম্ভব। মেসেজিং প্লাটফর্ম ডিস্কর্ডে মিডজার্নির সার্ভারে থাকা বট ব্যবহার করে ছবি প্রস্তুত করা যায়।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই টুলস দ্বারা তৈরি ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি রোবট এবং ইলন মাস্কের কিছু কাপল ছবি সম্প্রতি ইলন মাস্ক ২০২৪ সালের মধ্যে রোবট বউ বাজারে আনতে এই রোবটগুলো তৈরি করেছেন শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
দীর্ঘদিন ধরে ‘১৭ই মে, ১৯৮১সলের এই দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন এবং বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন গনতন্ত্রের মা দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
একই দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ),
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরত আসার পর তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বুকে জড়িয়ে নেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ছবিতে থাকা নারীটি খালেদা জিয়া নন বরং ছবিটিতে শেখ হাসিনাকে বুকে জড়িয়ে নেওয়া নারীটি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত আইভি রহমান। এছাড়া ছবিটি ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার দিনের নয়। প্রকৃতপক্ষে ছবিটি একই বছরের ১৫ আগস্ট দেশে ফিরে শেখ হাসিনার প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি পরিদর্শনের দিন তোলা।
ছবিতে শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ধরে থাকা নারীর পরিচয় যেভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল
ছবিটিতে থাকা নারীটির পরিচয় যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট ‘সেই রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কী ঘটেছিল?‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Daily Prothom Alo
সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও সাংবাদিক অধ্যাপক মালেকা বেগমের লেখা এই প্রতিবেদনটিতে আলোচিত ছবিটি সহ আরও একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে ব্যবহৃত প্রথম ছবিটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ছবিটি ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮১ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথমবারের মতো পরিদর্শনকালে ধারণকৃত। ছবিতে বিদ্যমান নারীদ্বয় হলেন বাঁ পাশে আইভী রহমান ও ডান পাশে জোহরা তাজউদ্দীন।
Screenshot: Daily Prothom Alo
প্রতিবেদনে ব্যবহৃত দ্বিতীয় ছবিটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, এটিও সেদিন শেখ হাসিনার কান্নায় ভেঙে পড়ার সময়ে ধারণকৃত।
Screenshot: Daily Prothom Alo
এই দুইটি ছবির মধ্যে দ্বিতীয় ছবিটিকেই বর্তমানে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর বিএনপি নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বুকে জড়িয়ে নেওয়ার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনাকে বুকে জড়িয়ে নেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সঙ্গে প্রথম ছবিতে শেখ হাসিনার বাঁ পাশে থাকা আইভী রহমানের শাড়ি ও চুলের জুলফি, চোখের ভ্রুর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া দুইটি ছবিতেই শেখ হাসিনাকেও একই শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়।
Image Collage: Rumor Scanner
পরবর্তীতে ছবিটি নিয়ে আরও অধিকতর অনুসন্ধানে deviantart.com নামের একটি ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের ৮ জুন ‘Deshratna Sheikh Hasina‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আলোচিত ছবিটির একটি রঙিন সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Collage: Rumor Scanner
এতেও উক্ত ছবিটির সঙ্গে বিএনপি নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ পর্যন্ত রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক অনুসন্ধানে এটি প্রতীয়মান হয় যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ধরে থাকা নারীটি বিএনপি নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নন।
এছাড়া ছবিটি সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খানের সাথে যোগাযোগ করে। তিনিও ছবিটিতে থাকা নারীটি খালেদা জিয়ার নয় বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় উশৃংখল সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেসময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দীর্ঘ নির্বাসন শেষে দেশে ফিরেন শেখ হাসিনা। তবে সেসময়ে তিনি ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িটি খুলে দিতে বললেও বাড়িটি তাকে খুলে দেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার বই শেখ মুজিব আমার পিতা বইয়ে লিখেন, ‘১৯৮১ সালে আমি ফিরে এসে বাড়িটি খুলে দিতে বলি, কিন্তু জেনারেল জিয়াউর রহমান অনুমতি দেয়নি। এমনকি বাড়িতে প্রবেশ করার অনুমতিও পাইনি। মিলাদ পড়ানোর জন্য বাড়ির দরজা জিয়া খুলে দেয়নি। রাস্তার উপর বসেই আমরা মিলাদ পড়ি।…পরবর্তীতে এই বাড়িটি যখন ১২ জুন, ১৯৮১ সালে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাত্তার সাহেবের নির্দেশে খুলে দেওয়া হল তখন বাড়িটির গাছপালা বেড়ে জঙ্গল হয়ে আছে। মাকড়সার জাল, ঝুল, ধুলোবালি, পোকামাকড়ে ভরা। ঘরগুলি অন্ধকারাচ্ছন্ন।’
Screenshot: Sheikh Mujib Amar Pita book
মূলত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর প্রায় ৬ বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরত আসেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের ১৫ আগস্ট প্রথমবারের মতো ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে যান তিনি। সেসময়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লে তার সঙ্গে থাকা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমান তাকে বুকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দেন৷ সম্প্রতি সেই সময়ের ধারণকৃত একটি ছবিকেই বর্তমানে শেখ হাসিনা দেশে ফেরত আসার পরে খালেদা জিয়ার বুকে জড়িয়ে নেওয়ার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, ১৯৮১ সালের ১৫ আগস্ট প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুকে জড়িয়ে নেওয়ার ছবিকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কর্তৃক শেখ হাসিনাকেবুকে জড়িয়ে নেওয়ার দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নাম ব্যবহার করে ৭৫০ পদ বিষয়ক যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার করা হচ্ছে তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নয় বরং, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নাম ব্যবহার করে উক্ত ভুয়া বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এমন কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, অনলাইন সংবাদমাধ্যম “বাংলাদেশ প্রকাশ” এর ওয়েবসাইটে গত ০৪ এপ্রিল প্রকাশিত “গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নাম ব্যবহার করে একটি ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়লে গত ৩রা এপ্রিল আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ উক্ত প্রতিবেদনটিতে আলোচ্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি সংযুক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে আজ (২০ মে) সকালে প্রকাশিত একটি পোস্টে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিজ্ঞাপনের ছবির বিষয়ে বলা হয়, আলোচ্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া। এই বিজ্ঞাপনের সাথে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো সম্পর্ক নেই।
পরবর্তীতে, বিষয়টির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভূয়া এবং প্রতারণামূলক বলে নিশ্চিত করেন।
মূলত, সম্প্রতি “গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৭৫০ পদেে নিয়োগ দিচ্ছে” শীর্ষক দাবিতে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, উক্ত বিজ্ঞপ্তিটি ভূয়া। প্রকৃতপক্ষে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এ ধরনের কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নি। উপরন্তু, ভূয়া এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, পূর্বে ইউনিসেফের স্বাস্থ্য প্রকল্পের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি শনাক্ত করে সেটির বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৭৫০ পদেে নিয়োগ দিচ্ছে শীর্ষক দাবিতে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ভারতীয় বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজার সূত্রে ‘ক্ষমতা ছাড়ব না। পশ্চিমাদের ম্যানেজ করুন, ভারতকে শেখ হাসিনা।‘ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের কলকাতার শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ভারতকে উদ্দেশ্য করে ক্ষমতা না ছাড়ার বিপরীতে দেশটিকে পশ্চিমাদের ম্যানেজ করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদন সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর নামে উক্ত মন্তব্যটি প্রচার করা হলেও আনন্দবাজারের ঐ প্রতিবেদনে উক্ত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই।
Screenshot: Dr. Fayzul Huq The Youth Leader of Bangladesh
সমজাতীয় নামের আরো একাধিক ফেসবুক পেইজ থেকেও উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
Image Collage: Rumor Scanner
পরবর্তীতে ভিডিওগুলো যাচাই করে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটির উপস্থাপক ভিডিওটি শুরু করেন গত ১০ মে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার ‘পশ্চিমী চাপে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ (আর্কাইভ)’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন দিয়ে।
Screenshot: Anandabazar Patrika
৭ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে উপস্থাপক নিজেই আনন্দবাজার পত্রিকার এই প্রতিবেদনটি দর্শকদের উদ্দেশ্যে পড়ে শোনান এবং নিজ থেকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। তবে তার এই সংবাদটি পাঠের সাথে ভিডিওটিতে দেওয়া শিরোনামের কোনো প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না।
অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা না ছাড়ার বিপরীতে ভারতকে পশ্চিমাদের ম্যানেজ করতে তার মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি উপস্থাপক কর্তৃক পাঠকৃত আনন্দবাজার পত্রিকার উক্ত প্রতিবেদনটিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কি আছে আনন্দ বাজার পত্রিকার প্রতিবেদনটিতে?
গত ১০ মে তে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকার ‘পশ্চিমী চাপে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ (আর্কাইভ)’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই প্রতিবেদনটি পুরোটাই তৈরি করা হয়েছে কিছু অজ্ঞাত সূত্র যেমন, ‘ঢাকার দাবি, বাংলাদেশ সূত্রের দাবি, বাংলাদেশ চাইছে, ঢাকার বক্তব্য, বাংলাদেশের যুক্তি, ঢাকার দীর্ঘ দিনের অভিযোগ’ ইত্যাদির ভিত্তিতে। অর্থাৎ প্রতিবেদনটিতে কোনো সুনির্দিষ্ট সূত্র নেই।
এসব সূত্রের ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা তথা পশ্চিমের যে চাপ বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলায় কূটনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের পাশে থাকুক ভারত। বন্ধুদেশ হিসাবে ভারত কূটনৈতিকভাবে ঐ দেশগুলির সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা বলুক।
Screenshot: Anandabazar Patrika
এছাড়া প্রতিবেদনটির সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি বছরের আগামী সেপ্টেম্বরে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের কথা রয়েছে। এর বাইরে প্রতিবেদনটি থেকে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কিত আর কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ১০ মে ভারতের বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজারে ‘পশ্চিমী চাপে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। উক্ত প্রতিবেদনটি সূত্রে গত ১১ মে ‘ক্ষমতা ছাড়ব না।পশ্চিমাদের ম্যানেজ করুন, ভারতকে শেখ হাসিনা। আনন্দিত বাজারে তথ্য প্রকাশ। ড. ফয়জুল হক।’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। কিন্তু একাধিক অজ্ঞাত সূত্র ব্যবহার করে তৈরী আনন্দবাজার পত্রিকার উপরিউক্ত প্রতিবেদনটিতে প্রধানমন্ত্রীর এমন কোনো মন্তব্য বা উদ্ধৃতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে পত্রিকাটির উক্ত প্রতিবেদনটি সূত্রেই ভারতকে উদ্দেশ্য করে ক্ষমতা না ছাড়ার বিপরীতে দেশটিকে পশ্চিমাদের ম্যানেজ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হয়তো চায় না আমি প্রধানমন্ত্রী থাকি, দেশের যে উন্নয়ন আমার সময়ে হয়েছে তারা হয়তো তা মেনে নিতে পারছে না।’
সুতরাং, আনন্দবাজার সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ভারতকে উদ্দেশ্য করে ক্ষমতা না ছাড়ার বিপরীতে দেশটিকে পশ্চিমাদের ম্যানেজ করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ১৬ মে জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার প্রিন্ট এবং অনলাইন সংস্করণে “সুপার লিগের ‘সুপারম্যান’ সিরিজ” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
কী দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে?
সমকাল পত্রিকার এ বিষয়ে প্রিন্ট এবং অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনের লেখা একই হলেও প্রিন্ট সংস্করণে কিছু ইনফোগ্রাফিক দেখিয়েছে পত্রিকাটি। এছাড়া, মূল প্রতিবেদনের লিংক ফেসবুক পেজে পোস্ট (আর্কাইভ) করা হলেও এ সংক্রান্ত প্রিন্ট সংস্করণের একটি ইনফোগ্রাফিক পোস্ট করে পরবর্তীতে সরিয়ে নিয়েছে পত্রিকাটি৷
Screenshot source: Facebook
দাবি -১
প্রথম ইনফোগ্রাফিকে দাবি করা হয়েছে, তামিম ২৪ ম্যাচে ৭৮৩ রান করেছেন। সাকিব ২০ ম্যাচে ৩১ উইকেট নিয়েছেন এবং মিরাজ ২৩ ম্যাচে ৩০ উইকেট ও ২৭৯ রান করেছেন।
দাবি – ২
সমকালের প্রিন্ট সংস্করণে দ্বিতীয় ইনফোগ্রাফিকে ‘সুপার লিগে বাংলাদেশের মার্কশিট’ শিরোনামে সুপার লিগে বাংলাদেশের সিরিজ দাবি করে কিছু সিরিজের ফলাফল দেখানো হয়েছে।
দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশ আফগানিস্তানের সাথে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে হোম সিরিজ খেলে ২-১ ব্যবধানে জয় পায়। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ২০২২ সালের মার্চে অ্যাওয়ে সিরিজ খেলে ২-১ ব্যবধানে জয় আসে। একই বছরের জুলাইতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ। পরের মাসে (আগস্ট) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ। সে বছরের (২০২২) ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ।
সমকাল দাবি করেছে, সুপার লিগের অংশ হিসেবে চলতি বছর (২০২৩) তিনটি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারের পর একই মাসে (মার্চ) আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ। পরবর্তীতে চলতি মাসে (মে) আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজেও একই ফলাফল আসে (২-০ ব্যবধানে জয়)।
সমকাল এই চার্টটির নিচে বাংলাদেশ সুপার লিগে ২৪ ম্যাচে ১৫ জয়, ৮ হার এবং ১ টি পরিত্যক্ত ম্যাচ পেয়েছে বলে দাবি করেছে৷
দাবি ৩
সমকাল তাদের প্রিন্ট সংস্করণের তৃতীয় ইনফোগ্রাফে দাবি করেছে, সুপার লিগে মিরাজ সর্বোচ্চ চারবার (আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারতের সাথে দুইবার), সাকিব দুইবার (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড) করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন। এছাড়া, লিটন (আফগানিস্তান), তাসকিন (দক্ষিণ আফ্রিকা), নাসুম (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), তাইজুল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), আফিফ (জিম্বাবুয়ে), তাওহিদ হ্দয় (আয়ারল্যান্ড), হাসান মাহমুদ (আয়ারল্যান্ড), নাজমুল হোসেন শান্ত (আয়ারল্যান্ড) এবং মুস্তাফিজুর (আয়ারল্যান্ড)।
তাছাড়া, মূল প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, অধিনায়ক তামিম ইকবাল সুপার লিগের কোনো ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হননি।
দাবি ৪
সমকালের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রায় দেড় বছর ধরে চলেছে এই সুপার লিগ। গেল বছরের (২০২২) ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে আফগানিস্তান সিরিজ দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের সুপার লিগ যাত্রা।
দাবি ৫
সমকালের দাবি, সুপার লিগে জিম্বাবুয়েতে গিয়ে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ।
সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি গত ১৭ মে অনলাইন ও প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশ করেছে আলোকিত বাংলাদেশ।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের শেষ আট ওয়ানডে সিরিজকে আইসিসির সুপার লিগের সিরিজ দাবিতে সমকালে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে তা সঠিক নয় বরং শেষ আট সিরিজের মাত্র চারটি ছিল সুপার লিগের অংশ। উক্ত আট সিরিজ ধরে সুপার লিগে বাংলাদেশের ম্যান অব দ্য ম্যাচ বিষয়েও ভুল তথ্য দিয়েছে পত্রিকাটি। একইসাথে সুপার লিগ বর্হিভূত সিরিজ হারের তথ্যকে সুপার লিগের সিরিজ হারের দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে তিন ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স সম্পর্কিত তথ্যগুলো সঠিক।
দাবি ১ বিষয়ে অনুসন্ধান
প্রথম দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে ক্রিকেট বিষয়ক আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট ‘Cricinfo’ থেকে জানা যায়, তামিম ২৪ ম্যাচে ৭৮৩ রান এবং মিরাজ ২৩ ম্যাচে ২৭৯ রান করেছেন। অন্যদিকে সাকিব ২০ ম্যাচে ৩১ উইকেট এবং মিরাজ ২৩ ম্যাচে ৩০ উইকেট নিয়েছেন।
Screenshot source: Cricinfo
অর্থাৎ, সমকালের এ সংক্রান্ত উল্লিখিত দাবিগুলো সত্য।
দাবি ২ বিষয়ে অনুসন্ধান
সমকালের প্রিন্ট সংস্করণে দ্বিতীয় ইনফোগ্রাফিক চার্টে ‘সুপার লিগে বাংলাদেশের মার্কশিট’ শিরোনামে সুপার লিগে বাংলাদেশের সিরিজ দাবি করে যেসব সিরিজের ফলাফল দেখানো হয়েছে সেসব সিরিজের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (জুলাই ২০২২) , জিম্বাবুয়ে (আগস্ট ২০২২), ভারত (ডিসেম্বর ২০২২) এবং আয়ারল্যান্ডের (মার্চ ২০২৩) বিপক্ষে হোম সিরিজটি সুপার লিগের অংশ নয়।
ক্রিকইনফোর ওয়েবসাইটে সুপার লিগে বাংলাদেশের ফলাফলগুলো দেখুন এখানে।
One Table creation & combined table collage: Rumor Scanner
রিউমর স্ক্যানার টিম বাংলাদেশের ওয়ানডের ফলাফলগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে, বাংলাদেশ সর্বশেষ যে আটটি সিরিজ খেলেছে সেগুলোকেই সুপার লিগের অংশ ধরে নিয়ে ইনফোগ্রাফ তৈরি করেছে সমকাল। কিন্তু বাংলাদেশের সর্বশেষ আট সিরিজের চারটি সিরিজ সুপার লিগের অংশই নয়।
সমকাল উক্ত চার্টটির নিচে সুপার লিগে বাংলাদেশ ২৪ ম্যাচে ১৫ জয়, ৮ হার এবং ১ টি পরিত্যক্ত ম্যাচ পেয়েছে বলে যে দাবি করেছে তা সত্য। তবে এটা স্পষ্ট যে, সুপার লিগের ম্যাচগুলোর ভিত্তিতে এই গণনা করা হয়নি। কারণ ইনফোগ্রাফিক চার্টটি সর্বশেষ আট সিরিজের ভিত্তিতে তৈরি। তাই ফলাফল গণনার বিষয়টিও সর্বশেষ আট সিরিজ কেন্দ্রিক হবে বলেই প্রতীয়মান হয়। এক্ষেত্রে গণনার ফল মিলে যাওয়া কাকতালীয় বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
ক্রিকইনফোর সৌজন্যে বাংলাদেশের সর্বশেষ আট সিরিজের ফলাফল দেখুন –
Screenshot collage: Rumor Scanner
দাবি ৩ বিষয়ে অনুসন্ধান
সমকাল তাদের প্রিন্ট সংস্করণের তৃতীয় ইনফোগ্রাফে ম্যান অব দ্য ম্যাচ সম্পর্কিত যে তথ্যগুলো দিয়েছে তাও সঠিক নয়৷ সমকাল সর্বশেষ আট সিরিজের ফলাফল নিয়ে পুরো প্রতিবেদনটি প্রকাশ করায় ম্যান অব দ্য ম্যাচের ক্ষেত্রেও উক্ত আট সিরিজের তথ্যই সুপার লিগের দাবিতে প্রকাশ করেছে।
রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সুপার লিগের ম্যাচগুলোয় বাংলাদেশের হয়ে সাকিব চারবার, মুশফিক তিনবার, মিরাজ দুইবার, লিটন দুইবার এবং তামিম, তাসকিন, শান্ত ও মুস্তাফিজ একবার করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন।
এখান থেকেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, সাকিব সর্বোচ্চ সংখ্যক বার ম্যাচ সেরা হয়েছেন। কিন্তু সমকালের দাবি, মিরাজের ছিল এই কৃতিত্ব।
সুপার লিগের ম্যাচগুলোয় বাংলাদেশের ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরো তালিকা দেখুন –
তাছাড়া, মূল প্রতিবেদনে অধিনায়ক তামিম ইকবাল সুপার লিগের কোনো ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হননি শীর্ষক যে দাবি করা হয়েছে তাও সঠিক নয়৷ উপরের টেবিলেই দেখা যাচ্ছে, তামিম ২০২১ সালের ২০ জুলাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে ৯৭ বলে ১১২ রান করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন। সেসময়ও তিনি দলের অধিনায়ক ছিলেন।
দাবি ৪ বিষয়ে অনুসন্ধান
সমকাল তাদের প্রতিবেদনে প্রায় দেড় বছর ধরে সুপার লিগ চলার দাবি করলেও সেটি সত্য নয়। বাংলাদেশের সুপার লিগ মিশন শুরু হয় ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি। শেষ হয় গত ১৪ মে। অর্থাৎ, দুই বছরের অধিক সময় ধরে সুপার লিগ খেলেছে বাংলাদেশ।
তাছাড়া, সমকাল গেল বছরের (২০২২) ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে আফগানিস্তান সিরিজ দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের সুপার লিগ যাত্রা শীর্ষক যে দাবি করছে তাও সঠিক নয়। বাংলাদেশের সুপার লিগ যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজ দিয়ে।
দাবি ৫ বিষয়ে অনুসন্ধান
সমকাল সুপার লিগে জিম্বাবুয়েতে গিয়ে বাংলাদেশের সিরিজ হারার যে দাবি করছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ, সমকালের ইনফোগ্রাফিক চার্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০২২ সালের আগস্টে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের যে অ্যাওয়ে সিরিজের বিষয়ে উল্লেখ আছে সেটি সুপার লিগের আওতায় ছিল না। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে গিয়ে ২০২১ সালের জুলাইতে অ্যাওয়ে সিরিজ খেলেছিল, যা সুপার লিগের আওতায় ছিল না। উক্ত সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ।
Screenshot source: Cricinfo
মূলত, গত ১৪ মে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের মাধ্যমে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘সমকাল’ পত্রিকা বাংলাদেশের শেষ আট সিরিজকে সুপার লিগের সিরিজ দাবি করেছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেষ আট সিরিজের মাত্র চারটি ছিল সুপার লিগের অংশ। উক্ত আট সিরিজ ধরে সুপার লিগে বাংলাদেশের ম্যান অব দ্য ম্যাচ বিষয়েও ভুল তথ্য দিয়েছে পত্রিকাটি। দাবি করেছে, মিরাজ সর্বোচ্চ চারবার ম্যাচ সেরা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, সাকিব সর্বোচ্চ সংখ্যকবার (৪) ম্যাচ সেরা হয়েছেন। তাছাড়া, সমকালের দাবি, তামিম সুপার লিগে একবারও ম্যাচসেরা হননি যা সত্য নয়। তামিম জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একবার ম্যাচসেরা হয়েছেন। একইসাথে সুপার লিগ বর্হিভূত জিম্বাবুয়ের সাথে ২০২২ সালের সিরিজ হারের তথ্যকে সুপার লিগের সিরিজ হারের ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে সমকালের প্রতিবেদনে। তবে প্রতিবেদনে তিন ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স সম্পর্কিত তথ্যগুলো সঠিক।
সুতরাং, বাংলাদেশের শেষ আট সিরিজকে সুপার লিগের অংশ দাবিতে সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একাধিক তথ্য প্রদান করা হয়েছে; যার অধিকাংশই মিথ্যা।
সম্প্রতি, সমুদ্রের উত্তাল স্রোতে আটকে পড়া এক পর্যটককে উদ্ধারের একটি ভিডিওকে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব চলাকালীন সময়ের ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব চলাকালীন সময়ের নয় বরং এটি ২০২২ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় উত্তাল সমুদ্রে নেমে স্রোতে তলিয়ে যাওয়া থেকে এক পর্যটককে উদ্ধারের ভিডিও।
যেভাবে ভিডিওটি ঘূর্ণিঝড় মোখার দাবিতে ছড়ালো
অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভি’র লোগো দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক পর্যটককে সমুদ্রের উত্তাল স্রোতে তলিয়ে যাওয়া থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে, অনুসন্ধানের মাধ্যমে একাত্তর টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার প্রায় ১ সপ্তাহ পূর্বে গত ০৬ মে “আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা, সাবধান না হলেই পড়তে পারেন এমন বিপদে” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত অনুরুপ ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Ekattor TV Youtube Video Comparison by Rumor ScannerScreenshot: DIGHA LIVE(Subhash Mishra) YoutubeVideo Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও ভিডিওটির স্ক্রিনে একটি লেখা প্রদর্শিত হতে দেখা যায়, যেখানে লেখা আছে ‘প্রবল জলোচ্ছ্বাসে গার্ড ওয়াল থেকে ছিটকে ভয়ংকর উত্তাল সমুদ্রে পড়ে তলিয়ে যাওয়ার সময় পর্যটককে উদ্ধার করেন দিঘার স্থানীয় যুবক ও নুনিয়ারা।
তাছাড়া, ভিডিওটিতে কমলারঙের পোশাক পরিহিত উদ্ধারকর্মীদের পোশাকে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল ডিফেন্স’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
Screenshot: DIGHA LIVE(Subhash Mishra) Youtube
উক্ত ভিডিওর সূত্র ধরে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম News18 Bangla এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট “Digha: দিঘায় উত্তাল সমুদ্র, পর্যটককে তলিয়ে যাওয়ার থেকে বাঁচালেন নুলিয়া” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: News 18 Bangla Youtube
উক্ত ভিডিওর ঘটনার সাথে উপরে উল্লিখিত একাত্তর টিভি এবং DIGHA LIVE(Subhash Mishra) ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ঘটনার হবহু মিল পাওয়া যায়। এবং ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এটি একই ঘটনায় ভিন্ন কোন থেকে ধারণকৃত একটি ভিডিও।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় মোখার নয়।
মূলত, গত ০৬ মে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে “আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা, সাবধান না হলেই পড়তে পারেন এমন বিপদে” শিরোনামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিঘা সমুদ্র সৈকত এলাকায় উত্তাল সমুদ্রের স্রোত থেকে এক পর্যটককে উদ্ধারের একটি পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে ঘূর্ণিঝড় মোখাকে কেন্দ্র করে প্রচারিত সচেতনতামূলক ভিডিওকেই ঘূর্ণিঝড় মোখার কবলে সমুদ্রে আটকে পড়া পর্যটক উদ্ধারের ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইতঃপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো ভিডিও ঘূর্ণিঝড় মোখার ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিঘা সমুদ্র সৈকতের পুরোনো একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় মোখার কবলে সমুদ্র আটকে পড়া পর্যটক উদ্ধারের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।