সম্প্রতি, “লাইভে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দিলো শেখ হাসিনা, খুশি বিএনপি” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচারিত হচ্ছে।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাইভে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দেননি বরং কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে ভিডিওটির থাম্বনেইলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
গত ১১ এপ্রিল ‘Sabai Sikhi’ নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে “লাইভে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দিলো শেখ হাসিনা, খুশি বিএনপি” শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি একটি ভিডিও প্রতিবেদন এবং এই ভিডিও প্রতিবেদনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুনে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
বিভ্রান্তি ০১: প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
প্রতিবেদনটির শুরুতে ১ থেকে ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য দেওয়া হয়েছিলো। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, “আসুক না, হেঁটে হেঁটে যতটুকু আসতে পারে। কোনো আপত্তি নেই। আমি চা খাওয়াবো, বসাবো, কথা বলতে চাইলে শুনবো। কারণ আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।”
ভিডিওটি’র এই অংশের কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, এটি ২০২২ সালের ২৩ জুলাই সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে আসলে চা খাওয়াবো বিএনপিকে” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথসভায় ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন।
বিভ্রান্তি ০২: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য
প্রতিবেদনটির শুরুতে ১১ থেকে ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য একটি বক্তব্য দেওয়া হয়েছিলো। যেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বলেন, “আমি কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট সিস্টেম মেনে নিচ্ছি। তাহলে সেখানে চা-টা খাওয়া যাবে অসুবিধা নেই।”
ভিডিওটি’র এই অংশের কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, এটি ২০২২ সালের ২৪ জুলাই ‘এটিএন নিউজ’ এর ইউটিউব চ্যানেলে “এইসব চা-টা খাওয়ার কথা বলে লাভ নাই : ফখরুল” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। আগেরদিনের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বিএনপি নেতৃবৃন্দকে চা খাওয়ানোর ইঙ্গিত প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
এছাড়াও প্রতিবেদনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে বলা হয় “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি দিলেন গণভবনে চা খাওয়া যেতে পারে।”
অনুসন্ধানে দেখা যায় এই কথা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০২২ সালের ২৪ জুলাই বলেছিলেন। যা হুবহু একই শিরোনামে ‘আরটিভি অনলাইন’ এ প্রকাশিত হয়েছিলো।
বিভ্রান্তি ০৩: প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংলাপের ঘোষণা দিয়েছেন
প্রতিবেদনটির ১৬ সেকেন্ড থেকে ৩৯ সেকেন্ড পর্যন্ত বলা হয় “তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চাইলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। তাদের যেকোনো দাবি মেনে নেওয়া হবে।” এসময় ভিডিওতে ২৭ থেকে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর একটি ছবি প্রদর্শন করা হয়।
অনুসন্ধানে মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ‘দ্য ডেইলি স্টার’ এর অনলাইনে “সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে: প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ছবির সাথে উক্ত ছবির হবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ছবিটি রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান থেকে ধারণ করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী(তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল) দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে এবং অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে কারা ক্ষমতায় যাবে, তার সিদ্ধান্ত নিতে জনগণকে ক্ষমতা দিয়েছে।
বিভ্রান্তি ০৪: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ
প্রতিবেদনটির ৪৮ সেকেন্ড থেকে ৫৭ সেকেন্ড পর্যন্ত বলা হয় যে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য চাপ দিয়ে আসছে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য কোনো চাপ দেননি বরং গত ১২ এপ্রিল মূলধারার গণমাধ্যম ‘কালের কণ্ঠ’ এ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বরাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ থাকবে।
বিভ্রান্তি ০৫: ভিডিওর থাম্বনেইলে ফখরুদ্দীন আহমেদের ছবি
প্রতিবেদনটির থাম্বনেইলে ফখরুদ্দীন আহমেদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাকে নিয়ে প্রতিবেদনটিতে কোনো তথ্যই উপস্থাপন করা হয়নি।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনে পূর্বের তথ্য উপস্থাপন, থাম্বনেইলে ভুল তথ্য উপস্থাপন এবং প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো প্রতিবেদন খুঁজে না পাওয়ায় এটা স্পষ্ট যে, লাইভে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, গত ১১ এপ্রিল একটি ভূঁইফোড় ইউটিউব অ্যাকাউন্ট থেকে “লাইভে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দিলো শেখ হাসিনা, খুশি বিএনপি” শীর্ষকক্যাপশন ও থাম্বনেইলে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায় বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাইভে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দেননি। প্রকৃতপক্ষে, চটকদার ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে অধিক ভিউ পাবার আশায় উক্ত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ‘লাইভে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Somoy TV – “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে আসলে চা খাওয়াবো বিএনপিকে”
- ATN Bangla – “এইসব চা-টা খাওয়ার কথা বলে লাভ নাই : ফখরুল”
- RTV Online – “তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নিলে চা খেতে সমস্যা নেই : ফখরুল”
- The Daily Star Online – সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে: প্রধানমন্ত্রী”
- Kaler Kantho – তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ থাকবে
- RTV Online – প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন শেখ হাসিনা
- Rumor Scanner’s own analysis.