সম্প্রতি, ভারতীয় বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজার সূত্রে ‘ক্ষমতা ছাড়ব না। পশ্চিমাদের ম্যানেজ করুন, ভারতকে শেখ হাসিনা।‘ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের কলকাতার শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ভারতকে উদ্দেশ্য করে ক্ষমতা না ছাড়ার বিপরীতে দেশটিকে পশ্চিমাদের ম্যানেজ করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদন সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর নামে উক্ত মন্তব্যটি প্রচার করা হলেও আনন্দবাজারের ঐ প্রতিবেদনে উক্ত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই।
তথ্যটি যেভাবে ছড়ালো
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রচারিত তথ্যগুলোর সূত্রে ফেসবুকে Dr. Fayzul Huq The Youth Leader of Bangladesh নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ১১ মে ‘ক্ষমতা ছাড়ব না।পশ্চিমাদের ম্যানেজ করুন, ভারতকে শেখ হাসিনা। আনন্দিত বাজারে তথ্য প্রকাশ। ড. ফয়জুল হক। (আর্কাইভ)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

সমজাতীয় নামের আরো একাধিক ফেসবুক পেইজ থেকেও উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

পরবর্তীতে ভিডিওগুলো যাচাই করে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটির উপস্থাপক ভিডিওটি শুরু করেন গত ১০ মে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার ‘পশ্চিমী চাপে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ (আর্কাইভ)’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন দিয়ে।

৭ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে উপস্থাপক নিজেই আনন্দবাজার পত্রিকার এই প্রতিবেদনটি দর্শকদের উদ্দেশ্যে পড়ে শোনান এবং নিজ থেকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। তবে তার এই সংবাদটি পাঠের সাথে ভিডিওটিতে দেওয়া শিরোনামের কোনো প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না।
অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা না ছাড়ার বিপরীতে ভারতকে পশ্চিমাদের ম্যানেজ করতে তার মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি উপস্থাপক কর্তৃক পাঠকৃত আনন্দবাজার পত্রিকার উক্ত প্রতিবেদনটিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কি আছে আনন্দ বাজার পত্রিকার প্রতিবেদনটিতে?
গত ১০ মে তে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকার ‘পশ্চিমী চাপে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ (আর্কাইভ)’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই প্রতিবেদনটি পুরোটাই তৈরি করা হয়েছে কিছু অজ্ঞাত সূত্র যেমন, ‘ঢাকার দাবি, বাংলাদেশ সূত্রের দাবি, বাংলাদেশ চাইছে, ঢাকার বক্তব্য, বাংলাদেশের যুক্তি, ঢাকার দীর্ঘ দিনের অভিযোগ’ ইত্যাদির ভিত্তিতে। অর্থাৎ প্রতিবেদনটিতে কোনো সুনির্দিষ্ট সূত্র নেই।
এসব সূত্রের ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা তথা পশ্চিমের যে চাপ বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলায় কূটনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের পাশে থাকুক ভারত। বন্ধুদেশ হিসাবে ভারত কূটনৈতিকভাবে ঐ দেশগুলির সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা বলুক।

এছাড়া প্রতিবেদনটির সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি বছরের আগামী সেপ্টেম্বরে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের কথা রয়েছে। এর বাইরে প্রতিবেদনটি থেকে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কিত আর কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ১০ মে ভারতের বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজারে ‘পশ্চিমী চাপে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। উক্ত প্রতিবেদনটি সূত্রে গত ১১ মে ‘ক্ষমতা ছাড়ব না।পশ্চিমাদের ম্যানেজ করুন, ভারতকে শেখ হাসিনা। আনন্দিত বাজারে তথ্য প্রকাশ। ড. ফয়জুল হক।’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। কিন্তু একাধিক অজ্ঞাত সূত্র ব্যবহার করে তৈরী আনন্দবাজার পত্রিকার উপরিউক্ত প্রতিবেদনটিতে প্রধানমন্ত্রীর এমন কোনো মন্তব্য বা উদ্ধৃতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে পত্রিকাটির উক্ত প্রতিবেদনটি সূত্রেই ভারতকে উদ্দেশ্য করে ক্ষমতা না ছাড়ার বিপরীতে দেশটিকে পশ্চিমাদের ম্যানেজ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হয়তো চায় না আমি প্রধানমন্ত্রী থাকি, দেশের যে উন্নয়ন আমার সময়ে হয়েছে তারা হয়তো তা মেনে নিতে পারছে না।’
সুতরাং, আনন্দবাজার সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ভারতকে উদ্দেশ্য করে ক্ষমতা না ছাড়ার বিপরীতে দেশটিকে পশ্চিমাদের ম্যানেজ করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Anandabazar Patrika: পশ্চিমী চাপে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ
- Channel24: প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে আমাকে সরাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র: শেখ হাসিনা
- Rumor Scanner Own Investigation