গত ৯ জুলাই মিটফোর্ডে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর সাথে এক ব্যক্তির ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, নাহিদ ইসলাম ও হাসনাত আবদুল্লাহর সাথে ছবিতে থাকা ব্যক্তি মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যার পরিচালক বা আসামী।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নাহিদ ও হাসনাতের সাথে ছবিতে থাকা এই ব্যক্তি মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যার আসামী নন। তার নাম আহনাফ জামান, তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য। সোহাগ হত্যার মামলার আসামীর তালিকায় আহনাফ জামানের নাম নেই।
অনুসন্ধানে ‘Ahnaf Zaman’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১২ মার্চে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর সাথে তুলা একটি ছবি অ্যাকাউন্টটির কাভার ফটো হিসেবে পোস্ট হতে দেখা যায়। ছবিটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত হাসনাত আবদুল্লাহর সাথের ছবির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।

একই অ্যাকাউন্টে গত ২৫ জুনে “চলেন একটা কোরাম করি নাহিদ ভাই” শীর্ষক ক্যাপশনে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সাথে তুলা একটি ছবি পোস্ট হতে দেখা যায়৷ উক্ত ছবিটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত নাহিদ ইসলামের সাথের ছবির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়। উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে বায়োতে নিজের পরিচয় হিসেবে দেখা যায়, “কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ”। ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে নাহিদ ইসলাম ও হাসনাত আবদুল্লাহর সাথে থাকা এই ব্যক্তির নাম আহনাফ জামান।
পরবর্তীতে মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামীর তালিকার বিষয়ে অনুসন্ধান করলে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভির ওয়েবসাইটে “প্রকাশ্যে সেই হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেল” শীর্ষক শিরোনামে গত ১১ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “এ ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিন, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাকিব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, মো. সিরাজুল ইসলাম, রবিন, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী, আনিসুর রহমান হাওলাদারসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।” এছাড়াও, এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তর ও দেশ রূপান্তরেও মামলার আসামী হিসেবে একই ব্যক্তিদের নাম পাওয়া যায়। কিন্তু, আসামীর তালিকায় ‘আহনাফ জামান’ এর নাম পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নিশ্চিত করেন, মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলায় আসামীর তালিকায় ‘আহনাফ জামান’ নামে কারোর নাম নেই।
সুতরাং, নাহিদ ইসলাম ও হাসনাত আবদুল্লাহর সাথে ছবিতে থাকা ব্যক্তি ‘আহনাফ জামান’ মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যার আসামী শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Ahnaf Zaman – Facebook Post
- Ahnaf Zaman – Facebook Post
- RTV – প্রকাশ্যে সেই হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেল
- Jugantor – রাজনীতির দাবার ঘুঁটি অধরা ২ ঘাতক
- Desh Rupantor – হত্যার পরও লাশের ওপর লাফালাফি
- Statement of Md Moniruzzaman, OC, Kotwali Police Station, Dhaka Metropolitan Police