পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী লিখে Google-এ অনুসন্ধান করলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮ সালে এমন দাবিতে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
২০১৯ সালে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে।
২০২০ সালে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে।
২০২১ সালে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে।
২০২২ সালে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে।
২০২৩ সালে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে।
আর্কাইভ দেখুন এখানে।
টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক/ নিকৃষ্ট শাসক/ একশত বছরে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধানদাবিতে যেসব সূত্র প্রচার করা হচ্ছে:
দাবি ১: এবার নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকের তালিকায় প্রথম হলেন শেখ হাসিনা! সূত্র: ‘দি টপটেনস’
দাবি ২: শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক’ – দ্য স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট
দাবি ৩: গত একশত বছরে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধান: শেখ হাসিনা সবার শীর্ষে। সূত্র: We Are The People (WRTP)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক/ নিকৃষ্ট শাসক/ একশত বছরে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধান দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয় বরং অস্তিত্বহীন কিছু সাইট এবং দি টপটেনস.কম (thetoptens.com) নামের একটি সামাজিক যোগাযোগ সাইটের অনির্ভরযোগ্য জরিপের বরাতে করা ভূইফোঁড় অনলাইন পোর্টালের সংবাদের সূত্রে ধরে উক্ত তথ্যগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবি ১: এবার নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকের তালিকায় প্রথম হলেন শেখ হাসিনা! সূত্র: ‘দি টপটেনস’ এর সত্যতা যাচাই
ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুলস ব্যবহার করে bdtoday.net নামের একটি ফেসবুক পেইজে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ ‘MonitorBd.news’ (আর্কাইভ) নামের একটি ওয়েবসাইট সূত্রে সর্বপ্রথম “এবার নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকের তালিকায় প্রথম হলেন শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এই পোর্টালটিতে বর্তমানে প্রবেশ করা যাচ্ছে না।
পরবর্তীতে এই পেইজটির নামানুসারে bdtoday.net নামের একটি ওয়েবসাইটে একইদিনে “এবার নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকের তালিকায় প্রথম হলেন শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্ট একনায়ক তথা স্বৈরাশাসকের তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জার্মানির নিকৃষ্ঠ স্বৈরশাসক এডলফ হিটলারকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান অর্জন করেন তিনি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও জনপ্রিয় জরিপভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘দি টপটেনস’ এ একটি দীর্ঘমেয়াদী জরিপের মাধ্যমে সেরা স্বৈরাশাসক নির্বাচিত হন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
এই প্রতিবেদনটির সূত্র ধরে ‘দি টপটেনস.কম’ (thetoptens.com) নামের ওয়েবসাইটটিতে Top 10 Worst Dictators in History‘ নামের একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়।
এই তালিকাটি থেকে দেখা যায়, প্রায় ১২ বছর আগে এই তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। OzzyVanHalen নামের যুক্তরাষ্ট্রের একজন ব্যবহারকারী এই জরিপ টি চালু করেন।
‘Top 10 Worst Dictators in History’ শিরোনামে Ozzy Van Halen এর এই তালিকায় ২২৯ জনের নাম রয়েছে এবং এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এই তালিকায় মোট ভোট পড়েছে ২৫ হাজার। এদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কমেন্ট পেয়েছেন প্রায় ২২১৩টি, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন এডলফ হিটলার, কমেন্ট পেয়েছেন ২৫৯ টি।
এছাড়া একই ওয়েবসাইটে “Top 10 Dictators In History” শীর্ষক শিরোনামে আলাদা আরেকটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। প্রায় ৮ বছর আগে তৈরি করা এই তালিকায় নাম রয়েছে ৫২ জনের৷ তালিকায় মোট ভোট পড়েছে ৯০০ টি।
এই তালিকায় শীর্ষ দশে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে জার্মানির এডলফ হিটলার, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের জোসেফ স্ট্যালিন ও চীনের মাও সেতুং।
পরবর্তীতে Top Tens ওয়েবসাইটটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা যায়, ওয়েবসাইটটি ২০০৫ সাল থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছে। যেটি ব্যবহারকারীদের পারস্পরিক অংশগ্রহণে পরিচালিত হয়৷ ওয়েবসাইটটির সংগ্রহে ২ লাখের বেশি বিভিন্ন বিষয়ে শীর্ষ দশের তালিকা রয়েছে। যেখানে যে কেউ ভোট দেওয়া, শীর্ষ দশের তালিকা তৈরি করা, তালিকায় কোনো কিছু যোগ করা ও পুনরায় সাজানো সহ নানা কাজ করতে পারেন৷
অপরদিকে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান যাচাই ২০১৮ সালের ২৬ মার্চ “শেখ হাসিনাকে সেরা স্বৈরশাসকের তালিকায় নির্বাচিত করা হয়েছে?” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনটিতে Top Tens সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, “দি টপটেনস.কম (thetoptens.com) এমন কোন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ওয়েবসাইট নয়, যারা বিভিন্ন সময় গবেষণা উদ্দেশে এরকম জরিপ করে থাকে। এটি মূলত একটি সামাজিক যোগাযোগ সাইট যেখানে যে কেউ তার পছন্দ মত বিষয় নিয়ে জরিপ শুরু করতে পারে এবং অনুরূপ জরিপে ভোট দিতে পারে। এমনকি এই জরিপে অংশগ্রহণের জন্য কোন ব্যক্তিকে এই ওয়েবসাইটে একাউন্টও খুলতে হয় না। যেকেউ নির্দিষ্ট সময় পরপর এই ওয়েবসাইটে গিয়ে ভোট দিয়ে আসতে পারে।”
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানেও দেখা যায়, সাইটটিতে একাউন্ট না খুলেও যেকোনো বিষয়ে ভোট দেওয়া এবং একইসাথে ভোট সরিয়েও নেওয়া যায়। অর্থাৎ ওয়েবসাইটটি একটি সাধারণ উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানে যে কেউ শীর্ষ দশের তালিকা তৈরি করা, একাউন্ট খোলা ছাড়াও ভোট দেওয়া, তালিকায় কোনো কিছু যোগ করা ও পুনরায় সাজানো সহ নানা কাজ করতে পারেন৷
অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকের তালিকায় প্রথম হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটির উৎস The Top Tens ওয়েবসাইটটি কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র নয়। বরং ব্যবহারকারীরা তাদের ইচ্ছামতো এখানে তালিকা তৈরি করতে পারেন।
দাবি ২: ‘শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক’ – দ্য স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট’ এর সত্যতা যাচাই
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ২০১৮ সালের একইদিনে bdpolitico.com নামের একটি ওয়েবসাইটে ‘শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক’ – দ্য স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনালে’র রিপোর্ট’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদন অনুসারে, সিঙ্গাপুরভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘দ্যা স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনাল’ এর জরিপে শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক বিবেচিত হয়েছেন। নিকৃষ্ট শাসক হিসেবে দ্বিতীয় হয়েছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ এবং তৃতীয় নর্থ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন।
তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে ‘দ্যা স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনাল’ নামে সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোনো গবেষণা সংস্থা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে International Statistical Institute (ISI) নামে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়।
নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত পরিসংখ্যানের বোঝাপড়া, বিকাশ এবং অনুশীলনের নেতৃত্ব দেওয়া, সমর্থন এবং প্রচারে কাজ করে থাকে। এদের ওয়েবসাইট ঘুরেও সেরা প্রধানমন্ত্রীর জরিপ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকের তালিকায় প্রথম হওয়ার দাবিতে প্রচারিত এই তথ্যটির উৎস ‘দ্যা স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনাল’ ও একটি ভিত্তিহীন প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে এই প্রতিষ্ঠানটির সূত্রেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী‘ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এমন দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল। তবে উক্ত দাবিটিকেও মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
দাবি ৩: গত একশত বছরে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধান: শেখ হাসিনা সবার শীর্ষে
এই দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ২০১৮ সালের ১৫ জুন সালাউদ্দিন আহমেদ নামের একটি একাউন্টে ‘গত একশত বছরে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধান: শেখ হাসিনা সবার শীর্ষে‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টটিতে wearethepeoples.com নামে একটি ওয়েবসাইটকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, We Are The Peoples যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যম।
তবে অনুসন্ধানে ওয়েবসাইটটিতে গত একশত বছরে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধানের শীর্ষে শেখ হাসিনা সবার উপরে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে একই বছরের ২১ জুন Politics with Policy নামের একটি ফেসবুক পেইজে ‘গত একশত বছরে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধান: শেখ হাসিনা সবার শীর্ষে (আর্কাইভ) একই শিরোনামে একটি বিস্তারিত পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টটিতে বলা হয়, ‘নিউ ইয়র্ক, আমেরিকায় অবস্থিত মানবাধিকার সংস্থা WRTP(WE ARE THE PEOPLE) গত একশত বছরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধানের নাম ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৩০ মে WRTP আয়োজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে একশত বছরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধানের নাম ঘোষণা করে। যার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি পোস্টটিতে এই তথ্যের সূত্র হিসেবে Indian Panorama নামে একটি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইটের পিডিএফ ফাইলও যুক্ত করা হয়।
পিডিএফ ফাইলটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি ২০১৮ সালের জুন ৬ থেকে জুন ১৪ সংখ্যার একটি সংস্করণ। এই ম্যাগাজিনটির ৬ নাম্বার পৃষ্ঠায় ‘Five Worst Dictators in the last 100 years- We Are The People Report’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিষ্ঠান WRTP (We Are The People)। এটি অভিবাসী বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালের ৩০ মে একশত বছরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধানের নাম ঘোষণা করে। নিকৃষ্ট এই পাঁচজন সরকার প্রধান নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বারের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. জিলানি ওয়ার্সীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল। তারাই এই পাঁচজন সরকার প্রধানের নাম ঘোষণা করেন।
WRTP (We Are The People) সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
ইন্ডিয়ান প্যানারোমার প্রতিবেদনটিতে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধানের নাম ঘোষণাকারী প্রতিষ্ঠান WRTP (We Are The People) কে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ও অভিবাসী বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে WRTP (We Are The People) নামে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে WRTP | BIG STEP নামে একটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া যায়।
এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এটির পূর্ণরূপ Wisconsin Regional Training Partnership (WRTP)। এটি ১৯৯০ এর দশকে প্রতিষ্ঠিত একটি অলাভজনক কর্মশক্তি মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান, যারা মানুষকে টেকসই চাকরির সাথে সংযুক্ত করার জন্য কাজ করে থাকে।
এছাড়া We Are The People কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে Empire of The Sun নামে একটি অস্ট্রেলিয়ান ব্যান্ডের গান খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এর বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না।
অর্থাৎ ইন্ডিয়ান প্যানারোমার প্রতিবেদনটিতে উল্লেখিত WRTP একটি অস্তিত্বহীন ভুয়া প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির সূত্র ধরে ইন্ডিয়ান প্যানারোমা নামের ম্যাগাজিনটি একশত বছরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধানের নাম ঘোষণার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
গুগলে খুঁজলে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম আসে কেন
বিষয়টি সম্পর্কে অনুসন্ধানে প্রশ্নোত্তর পর্ব ভিত্তিক প্লাটফর্ম Quora তে এই সংক্রান্ত প্রশ্নে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান যাচাইয়ের একটি উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়।
উত্তরে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ‘বিভিন্ন বেনামী ওয়েবসাইটে “পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিহ্নিত করেছে” শিরোনামে বানোয়াট কিছু সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে ‘দ্যা স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনাল’ নামক একটি অস্তিত্বহীন সংস্থার নাম দিয়ে। এসব সংবাদে শেখ হাসিনার নামের সাথে তার ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে।
যখন আপনি “পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী” লিখে সার্চ করছেন গুগল সেটির অর্থ বুঝে আপনাকে ফলাফল দেখাচ্ছে না। বরং “পৃথিবী, সবচেয়ে নিকৃষ্ট, প্রধানমন্ত্রী” — এই শব্দগুলো যেসকল প্রকাশনায় পাওয়া গিয়েছে সেসবকে ও সেসব থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আপনাকে ফলাফল দেখাচ্ছে। যেহেতু আপনি বাংলায় খোঁজ করছেন, তাই ফলাফল প্রদর্শনের ক্ষেত্রে গুগল বাংলায় প্রকাশিত ওয়েবসাইটগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
“পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী” কি-ওয়ার্ড সম্বলিত বাংলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারো সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য ও মানসম্মত প্রকাশনা না থাকায়, ফলাফলে আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেখছেন।’
অর্থাৎ, কিছু অস্তিত্বহীন সংস্থার সূত্রে বিভিন্ন ওয়েবসাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বের নিকৃষ্ট শাসক হিসেবে উল্লেখ করে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ফলে কেউ যখন সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী, নিকৃষ্ট শাসক ইত্যাদি কি-ওয়ার্ড ধরে গুগলে অনুসন্ধান করে তখন গুগল তার ডাটাবেইজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসব কি-ওয়ার্ড সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ওয়েবসাইটের প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোকে অনুসন্ধানকারীর সামনে উপস্থাপন করে।
মূলত, অস্তিত্বহীন কিছু সাইট ও দি টপটেনস.কম (thetoptens.com) নামের একটি সামাজিক যোগাযোগ সাইটের জরিপকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কিছু অখ্যাত অনলাইন পোর্টালে নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক/ নিকৃষ্ট শাসক/ একশত বছরে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধানদাবিতে সংবাদ প্রচার করা হয়। ফলে কেউ যখন এসব কি-ওয়ার্ড ধরে গুগলে অনুসন্ধান করে তখন গুগল তার ডাটাবেইজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসব কি-ওয়ার্ড সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ওয়েবসাইটের প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোকে ফলাফল হিসেবে অনুসন্ধানকারীর সামনে উপস্থাপন করে। রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব ফলাফলকেই ফেসবুকে দীর্ঘদিন ধরে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী লিখে Google-এ অনুসন্ধান করলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শিত হওয়ার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে৷
অর্থাৎ, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক/ নিকৃষ্ট শাসক/ একশত বছরে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধান উল্লেখ করে প্রচারিত দাবিগুলোর তথ্যসূত্র সম্পূর্ণ অনির্ভরযোগ্য।
সুতরাং, শেখ হাসিনা বিশ্বের নিকৃষ্ট শাসক নির্বাচিত হওয়ার দাবিটি বানোয়াট।
তথ্যসূত্র
- bdtoday.net_Facebook: এবার নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকের তালিকায় প্রথম হলেন শেখ হাসিনা! (আর্কাইভ)
- bdtoday.net: এবার নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকের তালিকায় প্রথম হলেন শেখ হাসিনা (আর্কাইভ)
- Toptens.com: Top Tens website
- Toptens.com: Top 10 Dictators In History
- Toptens.com: Top 10 Worst Dictators in History
- যাচাই: শেখ হাসিনাকে সেরা স্বৈরশাসকের তালিকায় নির্বাচিত করা হয়েছে?
- bdpolitico.com: শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক’ – দ্য স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনালে’র রিপোর্ট’
- ISI: International Statistical Institute (ISI)
- সালাউদ্দিন আহমেদ_Facebook: ‘গত একশত বছরে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধান: শেখ হাসিনা সবার শীর্ষে
- We Are The Peoples: We Are The Peoples
- Politics with Policy_Facebook: গত একশত বছরে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধান: শেখ হাসিনা সবার শীর্ষে (আর্কাইভ)
- Indian Panorama: ‘Five Worst Dictators in the last 100 years- We Are The People Report’
- WRTP | BIG STEP: WRTP | BIG STEP
- Empire of The Sun_Youtube: we are the people
- Quora: “পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী” লিখে Google-এ অনুসন্ধান করলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। এতে আপনার মন্তব্য কী?