সম্প্রতি ‘Tamanna Akhter Yesman’ নামক একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়, এটি তামান্না নামের একজন নারীর পাপুয়া নিউগিনির গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্ট কোর্টের প্রধান বিচারপতি ব্রেট জির্কারটের হাত থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথিত মামলার অব্যাহতির ফাইল গ্রহণের দৃশ্য। উল্লিখিত মামলাটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ লুটপাটের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৫৬ জনকে আসামী করে দায়ের করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে।
একই ক্যাপশনসহ অন্যান্য ফেসবুক আইডি থেকেও এই ভিডিও প্রচারিত হয়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পদ্মাসেতু নির্মাণে অর্থ লুটপাটের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশের বাহিরে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে ২০১২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি মামলা দায়ের করেছিল। তবে,২০১৪ সালে মামলাটির কার্যক্রম গোপনে বন্ধ করে দেওয়া হয়, গত ০১ জুলাই দুদকের পক্ষ থেকে মামলাটি নতুন করে চালু হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী রিম আল হাশিমির সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত কলম্বিয়ার রাষ্ট্রদূত ফাইহান আল ফায়েজের সাক্ষাতের ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে স্পেনের গণমাধ্যম El Correo এর সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংস্করণের ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির মিল রয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত কলম্বিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ফাইহান আল ফায়েজের সাথে সংযুক্ত আরব-আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রী রিম আল হাশিমির সাথে সাক্ষাৎকালে ধারণ করা।
একই বিষয়ে কলম্বিয়ার গণমাধ্যম Ecos Politicos এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই ছবি ও তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
তাছাড়া, পাপুয়া নিউগিনিতে ‘গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্ট কোর্ট’ নামক কোনো আদালতের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। ব্রেট জির্কারট নামেও কোনো বিচারপতির অস্তিত্ব নেই।
২০১২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা, যেটির কার্যক্রম ২০১৪ সালে গোপনে বন্ধ করে দেওয়া হয়, গত ০১ জুলাই দুদকের পক্ষ থেকে মামলাটি নতুন করে চালু হয়েছে। উক্ত মামলাটি দুদকের পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক নয়।
উল্লেখ্য, Tamanna Akhter Yesman নামে পরিচালিত এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ভুয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমিরর ছবি ব্যবহার করে এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে রাজনৈতিক প্রভাব তৈরির চেষ্টা নিয়ে গত ১৯ জুন বিস্তারিত ফ্যাক্টস্টোরি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ লুটের অভিযোগে কথিত মামলা থেকে শেখ হাসিনাসহ ৫৬ জনের অব্যাহতি পেয়েছেন দাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রী রিম আল হাশিমির সাথে ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত তৎকালীন কলম্বিয়ার রাষ্ট্রদূত ফাইহান আল ফায়েজের ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।