ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনে কোনো মানুষের মৃত্যু ঘটেনি

গতকাল (১৫ মে) ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তাণ্ডবে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে দুইজনের মৃত্যুর খবর (কোনো গণমাধ্যমে একজন মৃত্যুর খবর এসেছে) প্রচার করা হয়েছে গণমাধ্যমে।

Image Collage by Rumor Scanner

উক্ত দাবিতে কতিপয় জাতীয় দৈনিক পত্রিকার আজকের (১৫ মে) প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত খবর দেখুন- যায়যায়দিন, ডেইলি অবজারভার, দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক গণমুক্তি

Image Collage by Rumor Scanner
Image Collage by Rumor Scanner

উক্ত দাবিতে প্রচারিত গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন দেখুন- দৈনিক বাংলা, এশিয়ান টিভি, দ্য রিপোর্ট ২৪, নাগরিক টিভি, এটিএন বাংলা, আরটিভি, মাই টিভি, বায়ান্ন টিভি, যুগান্তর, দৈনিক সংগ্রাম, মানবজমিন, আমাদের সময়, যায়যায়দিনইনকিলাব, জনকণ্ঠ, ভোরের কাগজ, দেশ রূপান্তর, মানবকণ্ঠ, কালবেলা, ডেইলি অবজারভার, বিজনেস বাংলাদেশ, আলোকিত বাংলাদেশ, সাম্প্রতিক দেশকাল, ঢাকা পোস্ট, ঢাকা মেইল, ডেইলি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ টাইমস, দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস, দ্য বিজনেস পোস্ট, বাংলাদেশ জার্নাল, ডেইলি ক্যাম্পাস, নিউজজি২৪, বি বার্তা২৪, সংবাদ প্রকাশ, পূর্ব পশ্চিম বিডি, বাংলাদেশ বুলেটিন, এবিনিউজ২৪, বার্তা বাজার, ফেস দ্য পিপল, আজকালের খবর, আমার সংবাদ, রেডিও টুডে, সোনালি নিউজ, বাহান্ন নিউজ, দ্য ডেইলি মেসেঞ্জার, নিউজ নাও, দৈনিক সরোবর, রিদ্মিক নিউজ, দৈনিক করতোয়া, অর্থসূচক, সময়ের কণ্ঠস্বর, একুশে সংবাদ, ডেলটা টাইমস, মর্নিং টাইমস, কুমিল্লার কাগজ, দৈনিক গণমুক্তি, সংবাদ সারাবেলা, দৈনিক আজাদী, স্টার সংবাদ, গ্লোবাল টিভি, সংবাদ, ডেইলি বাংলাদেশ (ইংরেজি), ঢাকা প্রকাশ (ইংরেজি), সানবিডি২৪, সংবাদ প্রতিদিন

Image Collage by Rumor Scanner
Image Collage by Rumor Scanner

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।

Image Collage by Rumor Scanner

একই দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

Image Collage by Rumor Scanner

এছাড়া, আমাদের সময় এর ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত খবরে প্রচারিত একটি ছবিকে সেন্টমার্টিনের ছবি বলে দাবি করা হয়েছে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তাণ্ডবে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে গাছচাপায় দুই ব্যক্তি নিহত(কতিপয় গণমাধ্যমের মতে এক ব্যক্তি) হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদটি সঠিক নয় বরং গতকালের ঘূর্ণিঝড়ে সেন্টমার্টিনে কোনো মানুষের মৃত্যু ঘটেনি। 

মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যু হয়নি : গণমাধ্যম ভেদে ভিন্ন তথ্য

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বাংলা ভাষার সংস্করণ বিবিসি বাংলা’র ওয়েবসাইটে গতকাল (১৪ মে) রাতে “বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় মোখায় প্রাণহানি নেই, তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি ভয়াবহ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছে। মহাবিপদ সংকেতও আর নেই। কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। শুধু সেন্টমার্টিন দ্বীপে একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।

বিবিসি লিখেছে, সেন্টমার্টিনে গাছ থেকে নারকেল পড়ে এক নারী মাথায় আঘাত পান। মাথায় সেলাই ও প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ আছেন বলে জানান সেখানকার হাসপাতালের কর্মচারী আব্দুল কাদের।

“মানুষজন ভালো আছে। কিন্তু ঘরবাড়ির অস্তিত্ব নেই, সব তছনছ। আমরা সবাই গরীব মানুষ আমাদের কিচ্ছু নাই।”—বলেন মি. কাদের।

Screenshot source : BBC Bangla 

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোও গতকাল দুপুরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিমের বরাতে একই নারীর আহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। 

মূল ধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘Bdnews24’ এর ওয়েবসাইটে গতকাল বিকেলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উক্ত নারীর বিষয়ে বলা হয়, ঝড়ো হাওয়ায় গাছ চাপায় যে নারী আহত হয়েছেন তিনি স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিমের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, “দুপুরে সেন্টমার্টিন দ্বীপের কোনারপাড়ায় ঝড়ো হাওয়ার কবলে গাছ চাপায় এক নারী গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দ্বীপের ক্লিনিকে নিয়ে আসে।”

গতকাল রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ‘প্রথম আলো’ ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনায় সেন্ট মার্টিনে ১১ জনের আহত হওয়ার খবর দিয়েছে। তবে কোনো মৃত্যুর খবর উল্লেখ করা হয়নি। 

‘Bdnews24’ এর ওয়েবসাইটে গতকাল রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়, ১২ হাজারের মতো ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হিসাব প্রশাসনের কাছ থেকে মিললেও কারও নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কী বলছেন? 

এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে স্থানীয় একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত নারী মৃত্যুর ঘটনাটি সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে।  এর প্রেক্ষিতে ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফয়েজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, গতকাল আমার ওয়ার্ডে কেউ মারা যায়নি। এটা ভুয়া নিউজ। 

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো: কামরুজ্জামানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “আমি দায়িত্ব নিয়ে আপনাকে নিশ্চিত করছি, এটা গুজব। কেউ মারা যায়নি গতকালের ঘটনায়।”

তার বরাতে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর বেরিয়েছে এমন মন্তব্য করা হলে তিনি বলেন, “গুজবকারীদের থেকে তারা তথ্য নিয়েছে। আমাদের থেকে নেয়নি।” 

পরবর্তীতে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মো: মুজিবুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “গতকালের ঝড়ে কেউ মারা যায়নি। এ বিষয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মানুষ কেন একটা মুরগীও মারা যায়নি।”

সার্বিক বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানারের টিমের পক্ষ থেকে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিমের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে আজ এই প্রতিবেদন প্রকাশের খানিকক্ষণ পূর্বে জানান, “গতকালকে কেউ মারা যায়নি। আহত ছিল এক মহিলা। গাছ পড়ে আহত হয়েছিল। আমি এই মাত্র কথা বলেছি সেখানে। তিনি সুস্থ আছেন। সেন্টমার্টিনে গতকাল কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।”

আমাদের সময় এর প্রতিবেদনে ভুল ছবি

ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনে মানুষ মৃত্যুর খবরে আমাদের সময় যে ছবিটি তাদের প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে সেটি সেন্টমার্টিনের নয়। ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ছবিটি মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তাণ্ডব পরবর্তী সময়ের যা মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম Mizzima এর ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source: Mizzima

মূলত, গতকাল ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনে গাছচাপায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন (কিছু গণমাধ্যমের মতে এক ব্যক্তি) দাবিতে মূলধারার প্রায় ৪০টি গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরের প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেন্টমার্টিনে দুইজন নিহতের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, মোখার তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনে এক নারীর গায়ে গাছ পড়ে আহত হওয়াসহ একাধিক ব্যক্তির আহতের খবর পাওয়া গেলেও সেন্টমার্টিন সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি উক্ত ঘটনায় কারো মৃত্যু হয়নি বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। 

সুতরাং, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সেন্টমার্টিনে দুই ব্যক্তির মৃত্যু(কিছু গণমাধ্যমের মতে এক ব্যক্তি) হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img