সম্প্রতি ‘‘চরমোনাইয়ের পীর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর রওজা গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু সালামকে জিজ্ঞাসা করতেছে ,হে রাসূল আমরা কার পক্ষে যাব হাসিনার পক্ষে না খালেদার পক্ষে, দুইজনে তো মহিলা , তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম চরমোনাই পীরকে বলেছে, হাসিনার পক্ষে যাওয়ার জন্য!’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
টিকটকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সূত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি চরমোনাই পীরের একটি বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ। প্রকৃতপক্ষে চরমোনাই পীরের দীর্ঘ একটি বক্তব্য থেকে আলোচিত অংশটি কেটে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিওগুলোতে দৃশ্যমান ‘জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ’ কি-ওয়ার্ড সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে RI Media27 নামের একটি চ্যানেলে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি ‘কুমিল্লায় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে শায়েখে চরমোনাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ভিডিওটির সঙ্গে চরমোনাই পীরের হযরত মুহাম্মদ সা. সূত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির তিন মিনিট সময়কালে চরমোনাই পীর মুফতী ফয়জুল করিম আলেমদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে উদাহরণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ধরে নেন জনাব মুহাম্মদ রাসুল (সঃ) মদিনাতে আছেন। ধরে নেন। আমাদের বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল মদিনায় গেছে। গিয়ে আল্লাহর নবীর কাছে বলতেছে, ইয়া নাবিয়াল্লাহ! আমাদের বাংলাদেশের পরিস্থিতি এই, বাংলাদেশে দুটি দল, দুটি দলের মধ্যে দুইজন নেত্রী এবং কেউ সেক্যুলার, কেউ ডেমোক্রেসি। এর বাইরে ক্ষমতায় আসা খুব জটিল এবং কঠিন। এখন আমাদের মধ্যে কিছু ইসলামী দল আছে, যারা আপনার ইসলাম নিয়ে ভাবে, আপনার কথা বলে, আপনার আদর্শের বানী শোনায় সবাইকে। কিন্তু তারা এখনো ক্ষমতায় যাবার উপযুক্ত হয়নি। কিন্তু যারা সেক্যুলার আছে, তারা ক্ষমতায় যাওয়ার অনেক উপযুক্ত এবং যারা আমেরিকানপন্থী আছে, তারাও ক্ষমতায় যাওয়ার উপযুক্ত। তবে দুই দলের নেত্রীই মহিলা। ইয়া নাবিয়াল্লাহ, এখন আমরা কি করবো? শেখ হাসিনার পক্ষে যাবো না খালেদা জিয়ার পক্ষে যাবো?’
এসময় চরমোনাই পীর বলেন, ‘প্রশ্ন কার কাছে করছেন? উত্তরে শ্রোতারা বলেন, রাসূল সা. এর কাছে। এরপর চরমোনাই পীর পুনরায় বলেন, ওলামা ইকরাম ভালমতো বুঝবেন, বোঝার চেষ্টা করেন। দুইটা দল আছে বড়, তাদের অবস্থা এই। আর ছোট চরমোনাই হুজুর হাকডাক দিয়ে বেড়াইতেছে, সবাইকে বলতেছে আসো। শুধু নেতা নয়, নীতির পরিবর্তন চাই। ইসলামী হুকুমাত কায়েম করতে চাই। জীবন যাবে, যাক। ইসলামের বাইরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই, এসব সাধু বাণী শুনাইতেছে। এখন আমরা কি করবো? আমরা শেখ হাসিনার পক্ষে যাবো না খালেদা জিয়ার পক্ষে যাবো?
আল্লাহর নবী বলতেন, যা! কি করবি? যেহেতু বড় দুটি দল, তোরা সবাই শেখ হাসিনার পক্ষে যা!
তবে এ সময়উপস্থিত শ্রোতারা সবাই না বলে উঠেন। এরপর চরমোনাই পীর বলেন, ‘রাসূল সা. বলতেন,, তাহলে শেখ হাসিনার পক্ষ বাদ দে, সবাই খালেদা জিয়ার পক্ষে যা। এসময়ও উপস্থিত শ্রোতারা না বলে উঠলে চরমোনাই পীর বলেন, কেন না বললেন? কারণ বিবেককে ধোঁকা দেওয়া যায় না। এরপর চরমোনাই পীর রাসূল সা. ও সাহাবীদের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেন।’
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চরমোনাই পীরের পুরো ১৩ মিনিট ২১ সেকেন্ডের উক্ত ভিডিওটি থেকে কেবল ৩ মিনিট থেকে ৪ মিনিটি ৪৫ সেকেন্ডের অংশটুকু প্রচার করা হচ্ছে। পাশাপাশি বক্তব্য থেকে ‘সবাই খালেদা জিয়ার পক্ষে যা।’ অংশটুকু কেটে দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, চরমোনাই পীরের হযরত মুহাম্মদ সা. সূত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ ভিডিও থেকে কেটে নেওয়া খণ্ডিত অংশ।
মূলত, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লায় জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের আয়োজনে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি রাসূল (সা.) সঙ্গে মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে টেনে উদাহরণ দেন। সম্প্রতি রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার ঐ বক্তব্য থেকে কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের অংশটুকু কেটে নিয়ে চরমোনাই পীরের হযরত মুহাম্মদ সা. সূত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে যাওয়ার বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের একটি দীর্ঘ বক্তব্যের ভিডিও থেকে নেওয়া খণ্ডিত অংশ প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সূত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে যেতে বলেছেন; যা সম্পূর্ণ বিকৃত।