Home Blog Page 545

জাতীয় পার্টির শপথ বর্জনের চিঠি দেওয়া ও সিইসির পুনরায় নির্বাচন দেওয়ার গুজব

সম্প্রতি ‘শপথ বর্জনের চিঠি দিল জাতীয় পার্টি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত পূনরায় নির্বাচন দিবে সিইসি’ শীর্ষক থাম্বনেইল এবং প্রায় সমজাতীয় শিরোনামে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

শপথ বর্জনের চিঠি

ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ অনুষ্ঠান বর্জন করে চিঠি দেয়নি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালও পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও এবং একজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সমন্বয় করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম।  ভিডিওটিতে সময় টিভির একটি প্রতিবেদন, এনটিভিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হক এবং কতিপয় আন্দোলনকারীর বক্তব্য প্রদানের ভিডিও দেখানো হয়। যার কোনোটিতেই শপথ বর্জনের জন্যে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া কিংবা সিইসির পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের  সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবির বিষয়ে কিছু বলতে দেখা যায় না।

ভিডিও যাচাই ১

আলোচিত ভিডিওটির শুরুতে দেখানো ভিডিওটির সূত্র অনুসন্ধানে ভিডিওতে থাকা সময় টিভির লোগো ও সংবাদ পাঠিকার ‘কাল শপথ নিচ্ছেন না দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বিজয়ী ১১ সংসদ সদস্য’ শীর্ষক বক্তব্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে SOMOY TV এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৯ জানুয়ারি কাল শপথ নিচ্ছেন না জাতীয় পার্টির বিজয়ীরা | Jatiya Party | National Election 2024 শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: YouTube

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখানো প্রতিবেদনের সাথে এর হুবহু মিল রয়েছে।

Video Comparison by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, জাতীয় পার্টির বিজয়ী সংসদ সদস্যরা ১০ জানুয়ারি বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শপথ অনুষ্ঠানে শপথ নিচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ঢাকায় আসলে তার সাথে আলোচনা করে শপথ নেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে প্রতিবেদনটিতে দলটির শপথ বর্জনের জন্যে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। 

ভিডিও যাচাই ২

পরবর্তীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বক্তব্য দেওয়ার ভিডিওটি অনুসন্ধানে ভিডিওতে থাকা এনটিভির লোগোর সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে NTV News এর ইউটিউব চ্যানেলে ৯ জানুয়ারি দেশে একদলীয় শাসন কায়েম হবে : জি এম কাদের | GM Quader | NTV News শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: YouTube 

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে আলোচিত ভিডিওতে দেখানো ভিডিওর সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদনের কোথাও জিএম কাদেরকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে শপথ বর্জন করার নির্দেশনা দিতে দেখা যায় না কিংবা এজন্যে চিঠি দেওয়ার বিষয়েও কিছু বলতে শোনা যায় না। এছাড়াও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পুনরায় নির্বাচন দেওয়ার দাবির বিষয়েও কোনো তথ্য উক্ত ভিডিওতে পাওয়া যায়না। 

ভিডিও যাচাই ৩

আলোচিত ভিডিওতে দেখানো অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হকের ভিডিওটি অনুসন্ধানে Dr. Fayzul Huq এর  ইউটিউব চ্যানেলে গত ৯ জানুয়ারি নির্বাচন গ্রহনযোগ্যতা পাবেনা বল্লেন জিএম কাদের! ড. ফয়জুল হকDr. Fayzul Huq শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: YouTube 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে আলোচিত ভিডিওতে দেখানো ভিডিওর সাথে উক্ত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

তবে ভিডিওটির কোথাও আলোচিত দাবির প্রেক্ষিতে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ভিডিওতে জিএম কাদেরের ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন হয়েছে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবেনা’ শীর্ষক বক্তব্য নিয়ে ড. ফয়জুল হকের মন্তব্য দেখে পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে শপথ বর্জনের জন্যে জাতীয় পার্টির চিঠি দেওয়া এবং সিইসি-র পুনরায় নির্বাচন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবির বিষয়ে  অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক নানা কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে শপথের জন্য সময় চেয়ে স্পিকারের কাছে জাতীয় পার্টির চিঠি দেওয়ার বিষয়ে একটি মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম ওসমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শপথে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। কিন্তু আজ গেজেট হওয়ায় আমাদের দলের পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়েছে। গেজেট অনুযায়ী কাল বুধবার (১০ জানুয়ারি) শপথ। আমাদের বিজয়ী প্রার্থীরা সবাই এক জায়গায় আসতে সময় লাগছে। সে কারণে সময় চাওয়া হয়েছে। শপথ না নেওয়ার কোনও কারণ নাই।’

১০ জানুয়ারি শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারেনি জাতীয় পার্টি। সন্ধ্যায় দলটির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির বরাতে গণমাধ্যমে খবর আসে পূর্বের সিদ্ধান্ত বদল করে ১০ জানুয়ারিই শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে দলটি।

মূলত, গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১টি আসনে জয় পায় জাতীয় পার্টি। এত কম আসনে জয় লাভ করায় দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দায়ী করে দলের ভেতরে বাহিরে চলছে তুমুল সমালোচনা। এর মধ্যে ৯ জানুয়ারি দুপুরে জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে জানান ১০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তারা অংশ নিচ্ছেন না। দলটির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের জন্য আরও কিছু দিন সময় চেয়ে স্পিকারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে জানানো হয়। উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘শপথ বর্জনের চিঠি দিল জাতীয় পার্টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পুনরায় নির্বাচন দিবে সিইসি’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও  ইউটিউবে  প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা  যায়, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে স্পিকারের নিকট শপথ বর্জনের কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। শপথ গ্রহণের জন্য কিছুদিন সময় চেয়ে চিঠি দেওয়া হলে পরবর্তীতে দলটি তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ১০ জানুয়ারিই শপথ গ্রহণ করার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এছাড়া, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের পক্ষ থেকেও পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়নি।

সুতরাং, জাতীয় পার্টির শপথ বর্জনের জন্যে চিঠি দেওয়া ও সিইসি’র পুরনায় নির্বাচন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবিগুলো মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ভোট জালিয়াতির এই ভিডিওটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নয়

গত ০৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘রাতেই পুলিশের সহায়তায় নৌকায় সিল পিটালো আ. লীগের কর্মীরা’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘রাতেই পুলিশের সহযোগিতায় ব্যালট বাক্স পূর্ণ, নিরব প্রশাসন’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ভোট জালিয়াতির

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় ৬ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভোট জালিয়াতির আলোচিত এই ভিডিওটি গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ের নয় বরং এটি ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময়ে ভোট জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে ধারণকৃত ভিডিও।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে চশমা পরিহিত এক যুবককে সাংবাদিকদের কাছে ভোট জালিয়াতির বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ করতে দেখা যায়। তবে সেখানে কোনো পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি দেখা যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আরটিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর ‘প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে সিল মারছে যুবকরা!’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটি’র একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনের নয় এবং এর সাথে পুলিশের কোনো সংশ্লিষ্টটা নেই বরং ভিডিওটি ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময়ের। তবে ভিডিওটি কোন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি’র থাম্বনেইলে এক ব্যক্তিকে ব্যালটে সিল দিতে দেখা যায়।

Screenshot: Sabai Sikhi YouTube

কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে একাধিক গণমাধ্যম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়,  ভিডিওটি ২০২৩ সালের ০৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপ নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারার ঘটনার দৃশ্যের।

Screenshot: Channel 24 YouTube

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কয়েকটি আসনের একাধিক কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের ব্যালটে সিল মারার বা নৌকা প্রতীকের সিল সম্বলিত ব্যালটের ভিডিও প্রকাশ হওয়ার কথা গণমাধ্যম সূত্রে (, ,) জানা যায়। এসব অভিযোগে একাধিক কেন্দ্রে সিল মারা ব্যালট বাতিল ও কেন্দ্রের ভোট বাতিলের সংবাদও পাওয়া যায়।

মূলত, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময়ে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে যুবকদের সিল মারার অভিযোগের একটি ভিডিও সেসময় গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। উক্ত ভিডিও’র একটি অংশের সাথে গত ০৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘রাতেই পুলিশের সহায়তায় নৌকায় সিল পিটালো আ. লীগের কর্মীরা’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘রাতেই পুলিশের সহযোগিতায় ব্যালট বাক্স পূর্ণ, নিরব প্রশাসন’ শীর্ষক থাম্বনেইলের সাথে ২০২৩ সালের ০৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপ নির্বাচনের একটি কেন্দ্রে এক যুবকের সিল মারার ছবি যুক্ত করে প্রচার করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইন্টারনেটে প্রচারিত একাধিক ভুল তথ্য শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময়ের পুরোনো ভিডিওকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের সহায়তায় নৌকায় সিল মারার ভিডিও দাবিতে ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি শীর্ষক মন্তব্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার করেননি 

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি “সুষ্ঠ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হয়নি। একি বললো প্রধান নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচনের খবর। Bd Election” শীর্ষক শিরোনাম এবং  “নির্বাচন সুষ্ঠ হয়নি বললো প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসির বক্তব্য শুনে ক্ষেপেছেন প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি শীর্ষক কোনো মন্তব্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল করেননি বরং 

নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া প্রসঙ্গে তার দেওয়া বক্তব্যকে খণ্ডিত আকারে উপস্থাপন করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও  যুক্ত করে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন যেখানে ভিডিওটির শুরুতেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড.ফয়জুল হক এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। পরবর্তীতে ভিডিওটিতে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে উক্ত ভিডিও ক্লিপগুলোই বিস্তারিত অংশে দেখানো হয়। 

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “দর্শকশ্রোতামন্ডলী এই নির্বাচন গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হয়নি, এই নির্বাচন সুষ্ঠু গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হয়নি এমনটা দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আজকে যে নির্বাচনটি আমরা দেখলাম এখানে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ভোট কারচুপি করা হয়েছে…। ”

সংবাদপাঠ অংশে থাকা দাবিগুলো নিয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এরূপ কোনো দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটিতে দেখানো ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই – ০১ 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা কাজী হাবিবুল আউয়ালের ভিডিওটির অনুসন্ধানে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৭ জানুয়ারি “নির্বাচন যে গ্রহনযোগ্য হয়েছে সেটাতো আমি বলিনি: সিইসি। Election Update। Election News” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির একটি অংশ আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো হয়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিওটি থেকে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে ঢাকার নির্বাচন ভবনে নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন  কাজী হাবিবুল আউয়াল। উক্ত সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবের এক পর্যায়ে তিনি বলেন “আমি তো গ্রহণযোগ্য হয়েছে এই কথা এখনও বলিনি। গ্রহণযোগ্য হয়েছে এটা আপনারা বলবেন ফলাফল প্রকাশ এবং চূড়ান্ত মূল্যায়ন হওয়ার পরে। এর জন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।” কিন্তু আলোচিত ভিডিওটিতে এই বক্তব্যের শেষ অংশটুকু বাদ দিয়ে শুধু প্রথম বাক্যটি অর্থাৎ ‘আমি তো গ্রহনযোগ্য হয়েছে এ কথা এখনও বলিনি’ শীর্ষক বাক্যটি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। 

ভিডিও যাচাই – ০২ 

পরবর্তী ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘Dr.Faizul Huq’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ৭ জানুয়ারি “ভোট প্রত্যাখ্যান করেছে জনগন! ঘৃণিত ভাবে পতন হচ্ছে ওদের! ড.ফয়জুল হক Dr.Faizul Huq” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিওটিতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড.ফয়জুল হককে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ভোটগ্রহণ এবং বর্জন এর বিষয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে দেখা যায়। এই ভিডিওটি কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবির সাথে যুক্ত করা হয়েছে। 

ভিডিও যাচাই – ০৩ 

আলোচিত দাবিটিতে সর্বশেষ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহার একটি ভিডিও দেখানো হয়। উক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে ‘Rumeen’s Voice’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ৭ জানুয়ারি “মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে এই নাটক। Rumeen’s Voice । রুমিন ফারহানা । Rumeen Farhana”শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিওটিতে রুমিন ফারহানা গত ৭ তারিখ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি,  ভোটার উপস্থিতি সহ আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেন।

অর্থাৎ আলোচিত ভিডিওর কোথাও কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি শীর্ষক মন্তব্য করেছেন বিষয়ক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পাশাপাশি, কি ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে কোনো তথ্য বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ শেষে ঢাকার নির্বাচন ভবনে নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। উক্ত সম্মেলনে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে ‘আমি তো গ্রহণযোগ্য হয়েছে এই কথা এখনও বলিনি। গ্রহণযোগ্য হয়েছে এটা আপনারা বলবেন ফলাফল প্রকাশ এবং চূড়ান্ত মূল্যায়ন হওয়ার পরে। এর জন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।’’ শীর্ষক বক্তব্যের একটি অংশ কাট করে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলেছেন  প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার উক্ত মন্তব্যটি করেননি। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি শীর্ষক একটি মন্তব্য করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

জনগণের নীরব ভোট প্রত্যাখ্যান সরকারের পরাজয়- শীর্ষক মন্তব্যটি যুগান্তরের নয়, ১২ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের 

সম্প্রতি, জাতীয় গণমাধ্যম দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম কপি করে তা ফেসবুকে পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, দৈনিক যুগান্তর “জনগণের নীরব ভোট প্রত্যাখ্যান, সরকারের পরাজয়” শীর্ষক মন্তব্য জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

১২ দলীয় জোটের

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুগান্তরের সূত্রে প্রচারিত তথ্যটি যুগান্তরের নিজস্ব কোনো তথ্যের ভিত্তিতে করা সংবাদ নয় বরং গত ০৭ জানুয়ারি ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের দেওয়া বক্তব্যকে কোট করে প্রকাশিত সংবাদকে যুগান্তরের নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে করা সংবাদ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে গত ০৭ জানুয়ারি “জনগণের নীরব ভোট প্রত্যাখ্যান, সরকারের পরাজয়’’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Jugantor 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “৭ জানুয়ারি দুপুরে প্রেসক্লাব, পল্টন এলাকায় ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ১২ দলীয় জোট আয়োজিত হরতাল ও গণ-কারফিউর সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করে নেতাকর্মীরা। তখন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা বলেন, আওয়ামী লীগের ‘ডামি’ নির্বাচনে জনগণের ভোট বর্জন ইতিহাসের মাইল ফলক হয়ে থাকবে।

তারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের এখনই নাকে খত দিয়ে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ জনগণ ভোট কেন্দ্রে যায়নি। দেশের মানুষ এই জালিম সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। তাই জনগণের নীরব ‘ভোট প্রত্যাখানে’ জাতির বিজয় এবং ফ্যাসিবাদ সরকারের পরাজয়।

তারা আরো বলেনবলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সেই ভোট ডাকাতির কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এই সরকার দেশ ও জনগণের জন্য একটি মহাবিপদ ডেকে এনেছে। তাই এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সরকারের বিদায় না করা পর্যন্ত জনগণের মুক্তি আসবে না। আমরা শেখ হাসিনার পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ একদফার যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাব। 

এ সময় ভোট বর্জন, হরতাল ও গণ-কারফিউ পালন করায় দেশবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ১২ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ।”

অর্থাৎ, আলোচিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ১২ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের অংশ কোট করে বানানো হয়েছে। এখানে, যুগান্তরের নিজস্ব কোনো সূত্র বা তথ্য নেই। 

একই ঘটনায় যুগান্তরের মতোই প্রায় একই শিরোনামে দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন দেখুন আরটিভি, এনটিভি, বাংলা নিউজ২৪ এবং ঢাকা টাইমস

একই তথ্যে ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন- চ্যানেল আই

মূলত, গত ৭ জানুয়ারি ঢাকায় ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ১২ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের সমর্থনে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা বলেন, আওয়ামী লীগের ‘ডামি’ নির্বাচনে জনগণের ভোট বর্জন ইতিহাসের মাইল ফলক হয়ে থাকবে। উক্ত বিক্ষোভ মিছিলে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের দেওয়া বক্তব্যকে শিরোনামে কোটেশনের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত করে যুগান্তরসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যেখানে যুগান্তরের শিরোনামটি ছিল “‘জনগণের নীরব ভোট প্রত্যাখ্যান, সরকারের পরাজয়’। যা পরবর্তীতে কপি হয়ে যুগান্তরের নিজস্ব মতামত সম্বলিত সংবাদ প্রতিবেদন দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে নেটিজেনরা উক্ত মন্তব্যকে যুগান্তরের মন্তব্য ধরে নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া জানান। 

সুতরাং, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ১২ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের দেওয়া বক্তব্যকে কোট করে প্রকাশিত সংবাদকে যুগান্তরের নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে করা সংবাদ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

সিইসি নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণা দেননি

গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন অর্থাৎ গতকাল (০৮ জানুয়ারি) Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘খালেদ মুহিউদ্দীনের সামনে নির্বাচন বাতিল করলো সিইসি, পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

নির্বাচন বাতিল

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

পরবর্তীতে ভিডিওটি অপর একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়। সেটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

Sabai Sikhi চ্যানেলের উক্ত ভিডিওটি’র লিংক শেয়ার করে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের কোনো ঘোষণা দেননি বরং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনকে দেওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাক্ষাৎকারের একটি অংশের ভিডিও ক্লিপের সাথে উক্ত দাবি সম্বলিত শিরোনাম ও থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে দেখা যায়। তবে সেখানে কোথাও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচন বাতিল কিংবা পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি।

উক্ত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৮ জানুয়ারি ‘মুখোমুখি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র একটি অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটিতে গত ৭ তারিখ অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিনের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে কোথাও আলোচিত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ভিডিওতে নির্বাচন কতটা সফল হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘‘কমিশন সার্বিকভাবে চেষ্টা করেছে নির্বাচন সফল করতে৷ এটাও কিন্তু একটা আপেক্ষিক বিষয়, কারণ, একটা বড় দল নির্বাচনে অংশহগ্রহণ করেনি৷ এটা অনস্বীকার্য৷’’

নির্বাচনে সহিংসতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন অনেকটাই সহিংসতামুক্ত হয়েছে এবং ভোটার উপস্থিতিও ছিল সব মিলিয়ে৷ আমাদের জন্য যেটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে যে কোনো ধরনের সহিংসতা বড় ধরনের হয়নি, মৃত্যু ঘটেনি, যেটা আমরা সব সময় প্রত্যাশা করি যে মানুষ আহত না হয়, নিহত না হয়৷ সেদিক থেকে আপেক্ষিক অর্থে নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হয়েছে৷”

অর্থাৎ, ভয়েচে ভেলের সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনকে দেওয়া নির্বাচন পরবর্তী উক্ত সাক্ষাৎকারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল কিংবা পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের কোনো ঘোষণা দেননি।

পাশাপাশি, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্তৃক গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল কিংবা পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং নির্বাচনে ২৯৮ আসনে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে ২৯৮টি আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২২২টি আসন লাভ করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি এবং স্বতন্ত্র পদে মোট ৬২ টি আসনে জয়লাভ করেছেন প্রার্থীরা।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়।

মূলত, গত ০৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত ২৯৮ আসনের ফলাফলে ২২২ টি আসন লাভ করে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন পরবর্তী গতকাল ০৮ জানুয়ারি উক্ত নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। উক্ত সাক্ষাতকারের ভিডিওটি ‘DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে উক্ত ভিডিওটি সংগ্রহ করে এর কিছু অংশের সাথে ‘খালেদ মুহিউদ্দীনের সামনে নির্বাচন বাতিল করলো সিইসি, পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল যুক্ত করে Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল কিংবা পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের কোনো ঘোষণা দেননি।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনকে জড়িয়ে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন দুটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে

সুতরাং, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

নির্বাচন নিয়ে খালেদ মুহিউদ্দীনের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

সম্প্রতি, “৭০ উইকেটের বিনিময়ে অর্জন ৪০%, তার মধ্যে ৩৮% জাল, ২% কাস্ট, গত ১৫ বছরে এটাই তাদের অর্জন…! সাংবাদিক হিসেবে আমি লজ্জিত।” শীর্ষক একটি মন্তব্য জার্মান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে’র বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীন এর মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে। 

খালেদ মুহিউদ্দীন

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে টিকটকের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইউটিউবের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন এরূপ কোনো মন্তব্য করেননি বরং তিনি ০৭ জানুয়ারি দুুপুরে ‘দুইটি কেন্দ্র বাদ দিলে ঢাকার যে কয়টি ভোট কেন্দ্র DW বাংলা টিম ঘুরেছে সেগুলোতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে বলে একটি মন্তব্য করেছিলেন।  

অনুসন্ধানে “৭০ উইকেটের বিনিময়ে অর্জন ৪০%, তার মধ্যে ৩৮% জাল, ২% কাস্ট। ১৫ বছরে এটাই তাদের অর্জন…!” শিরোনামের বিভিন্ন পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। এরূপ কিছু পোস্টে DW বাংলার একটি ভিডিও যুক্ত করতেও দেখা গেছে। তবে প্রথমদিকের এ পোস্টগুলোর শিরোনামে ওই মন্তব্যকে খালেদ মুহিউদ্দীন এর মন্তব্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। 

Screenshot: Facebook 

যদিও পরবর্তীতে তা বিবর্তিত হয়ে ওই মন্তব্য খালেদ মুহিউদ্দীন এর মন্তব্য হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে।

যে ভিডিওটি যুক্ত করে প্রচারিত হচ্ছে সেটি মূলত DW বাংলার গত ০৭ জানুয়ারির ভোটের দিনে দুপুর ১.৫৩ মিনিটে শুরু হওয়া “ভোটের পরস্থিতি কেমন দেখা যাচ্ছে? দেখুন লাইভ, জানান মতামত।” শিরোনামের একটি লাইভে খালেদ মুহিউদ্দীনের দেওয়া বক্তব্য। 

ওই ভিডিওতে ২ শতাংশ ভোট পড়েছে সংক্রান্ত খালেদ মুহিউদ্দীন এর একটি বক্তব্য পাওয়া যায়, যেখানে তিনি বলেছেন– “জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও ইলিয়াস মোল্লার বাসার কেন্দ্র দুইটি বাদ দিলে আমরা ঢাকার যত ভোট কেন্দ্র ঘুরেছি সেগুলোতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২% এর মতো ভোট পড়েছে।” 

Screenshot: Facebook

তবে পুরো ভিডিওতে ‘৭০ উইকেটের বিনিময়ে অর্জন ৪০%, তার মধ্যে ৩৮% জাল, ২% কাস্ট, গত ১৫ বছরে এটাই তাদের অর্জন, কিংবা সাংবাদিক হিসেবে আমি লজ্জিত।’ তার এমন কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রিউমর স্ক্যানার টিম এ সংক্রান্ত বিশ্লেষণে দেখেছে, ২ শতাংশ ভোট কাস্টিং সংখ্যাটির উল্লেখ যেসকল পোস্টগুলোতে করা হয়েছে, সেই পোস্টগুলো ওই লাইভের পরই করা হয়েছে৷ এ বিষয়টি ওই দাবিতে উল্লেখ করা ৪০ শতাংশ শীর্ষক সংখ্যাটি থেকেও বোঝা যায়। এই ৪০ শতাংশের সংখ্যাটি ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সংখ্যা। 

খালেদ মুহিউদ্দীন এর ওই লাইভ বক্তব্যের ভিডিওটি বিকেলের পর বিভিন্ন শিরোনামে ব্যাপক প্রচারিত হয়। ফলে সন্ধ্যার পর থেকে কিছু পোস্টে নির্বাচনের সমালোচনা করতে গিয়ে ২ শতাংশ শীর্ষক সংখ্যাটির উল্লেখ দেখা যায়। এমন একটি পোস্ট নিচের স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে। ম্যানুয়াল অনুসন্ধানে এই পোস্টটি এই শিরোনামের সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট হিসেবে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook

গত ৭ জানুয়ারি সন্ধা ৭.৩০ মিনিটে দেওয়া ওই পোস্টে দেখা যায় পোস্টদাতা একই শিরোনাম দিলেও তিনি তার শিরোনামে এটিকে খালেদ মুহিউদ্দীন এর বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করেননি৷ তিনি শিরোনামে ৩৮ শতাংশ ভোট জাল হওয়ার দাবি করেছেন৷

ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ৪০ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য এবং খালেদ মুহিউদ্দীন এর দুপুরের লাইভের ২ শতাংশ সংখ্যা থেকে বিয়োগ করে ৩৮ শতাংশ সংখ্যাটা এসে থাকতে পারে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে খালেদ মুহিউদ্দীন এর বলা ২ শতাংশ ভোট পড়ার হারটি ছিল ঢাকার কিছু কেন্দ্রের ১২টা পর্যন্ত ঘুরে কেমন ভোট ওই সময় পড়েছে তার পর্যবেক্ষণ। এটি সারাদেশের ও সারাদিনের ভোটের পর্যবেক্ষণ নয়।

পরবর্তীতে মন্তব্যটি সম্পর্কে জানতে চেয়ে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে এমন কোনো মন্তব্য করেননি বলে নিশ্চিত করেছেন।

মূলত, গত ০৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন DW বাংলার দুপুরের একটি লাইভে খালেদ মুহিউদ্দীন ঢাকার কিছু কেন্দ্র ঘুরে ১২টা পর্যন্ত কেমন ভোট পড়েছে তার পর্যবেক্ষণ জানাতে গিয়ে ২ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে বলে জানান। এছাড়াও ভোট নিয়ে আরও বেশকিছু আলোচনা করেন। তার ওই লাইভে দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও পরবর্তীতে অনেকে প্রচার করে। ওই ভিডিওতে তার বলা ২ শতাংশ সংখ্যাটি নির্বাচনের সমালোচনা করতে গিয়ে একটি ‘৭০ উইকেটের বিনিময়ে অর্জন ৪০%, তার মধ্যে ৩৮% জাল, ২% কাস্ট, গত ১৫ বছরে এটাই তাদের অর্জন’ শিরোনামেও কিছু পোস্ট হয়। পরবর্তীতে এই শিরোনাম বিবর্তিত হয়ে ‘সাংবাদিক হিসেবে আমি লজ্জিত’ অংশ যুক্ত হয়ে এই শিরোনাম খালেদ মুহিউদ্দীন এর মন্তব্য হিসেবে প্রচার হয়।

সুতরাং, ৭০ উইকেটের বিনিময়ে অর্জন ৪০%, তার মধ্যে ৩৮% জাল, ২% কাস্ট, গত ১৫ বছরে এটাই তাদের অর্জন…! সাংবাদিক হিসেবে আমি লজ্জিত। শীর্ষক মন্তব্য খালেদ মুহিউদ্দীন করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

  1. Rumor Scanner Investigation 
  2. DW Live Video
  3. Statement from Khaled Muhiuddin

নির্বাচনে সহিংসতার ভিডিও বিশেষ নাম্বারে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়ে বিএনপির নামে প্রচারিত এই ঘোষণাপত্রটি ভুয়া

সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর ঘোষণাপত্র দাবিতে দলটির অফিশিয়াল প্যাডে লেখা একটি বিজ্ঞপ্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর সম্বলিত এবং ০৫ জানুয়ারি তারিখ উল্লেখ করে প্রচারিত কথিত ঘোষণাপত্রটির সারমর্ম এমন, সরকার জোর জবরদস্তি করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এই নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে তাদের দলের সদস্যরা নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাই যে সব জায়গায় তাদের নেতাকর্মী সরকারের আক্রমণের শিকার হবেন, সেই আক্রমণের ছবি বা ভিডিও ধারণ করে নির্দিষ্ট কিছু হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন দেশনায়ক তারেক রহমান।

পরবর্তীতে কিছু হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার দেওয়া হয়।

নির্বাচনে সহিংসতার

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপির নামে প্রচারিত ঘোষণাপত্রটি দলটি প্রকাশ করেনি বরং বিএনপির পক্ষ থেকে এই ঘোষণাপত্রকে ভুয়া বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে ঘোষণাপত্রটির বিষয়ে বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং মিডিয়া সেল ফেসবুকে পেজে অনুসন্ধান করলে গত ৫ জানুয়ারি তারিখে এমন কোনো ঘোষণাপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে গত ৬ জানুয়ারি রুহুল কবির রিজভীর পাঠানো একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook

বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, রুহুল কবির রিজভীর সাথে আলোচিত ঘোষণাপত্রটির কোনো সম্পর্ক নেই। পাশাপাশি তিনি ঘোষণাপত্রটিকে ভুয়া ও বিভ্রান্তিমূলক উল্লেখ করেন এবং এটি উদ্দেশ্যপ্রণোতিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করার কথা জানান।

মূলত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি ইন্টারনেটে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত একটি ঘোষণাপত্রের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ঘোষণাপত্রের ছবিটি বিএনপি কর্তৃক প্রকাশিত হয়নি এবং সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সাথে আলোচিত ঘোষনাপত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে ফেসবুকে প্রচারিত ঘোষণাপত্রটি ভুয়া। 

সুতরাং, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব  রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর সম্বলিত ভুয়া একটি ঘোষণাপত্রের ছবি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Bangladesh Nationalist Party-BNP – Facebook Post
  • Rumor Scanner’s own analysis

৩০০ আসনের ভোট স্থগিতের গুজব

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ৩০০ আসনে ভোট স্থগিত করেছেন দাবিতে ‘সিইসি কেন্দ্রে ঢুকে দেখেন শুধু জাল ভোট ফাইনালি ৩০০ আসনে ভোট স্থগিত করলেন’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

৩০০ আসনের ভোট

ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের ভোট স্থগিত করা হয়নি প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে গাইবান্ধা-৫ আসনে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনের ভোট গ্রহণ স্থগিত করার ঘটনায় প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদের ভিডিওর সাথে ভোট জালিয়াতির একটি ভিডিও এবং ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভোট দেওয়ার কয়েকটি ভিডিও যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির ইন্ট্রোতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে ভোট কেন্দ্র প্রবেশ করতে দেখা যায়। যার পরবর্তীতে  তার প্রেস ব্রিফিংয়ের আরেকটি ভিডিও দেখানো হয় যেখানে তিনি বলেন, ‘এরপরই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সমগ্র অঞ্চলের… ভোট কার্যক্রম আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।’ এরপর ভোট জালিয়াতির একটি ভিডিও এবং Jagonews এর একটি ভিডিও প্রতিবেদনের উপস্থাপকের অংশ দেখানো হয়। যাতে উপস্থাপককে বলতে শোনা যায়, ‘সিইসি বলেন নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হলো।’ সর্বপরি নির্বাচন কমিশনারের ভোট দেওয়ার কয়েকটি ভিডিও দেখানো হয়। যাতে ভোট কেন্দ্রে কোনো জালিয়াতির প্রমাণ সংক্রান্ত কোনো দৃশ্য বা তথ্য দেখানো হয়নি।

ভিডিও যাচাই ১

আলোচিত ভিডিওর শুরুতে দেখানো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রেস ব্রিফিংয়ের ভিডিওটি অনুসন্ধানে ভিডিওতে থাকা ‘বাংলা BANGLA TV’ লেখা সম্বলিত লোগোটির সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Bangla TV এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন বন্ধ ঘোষনা | Gaibandha Election News | Bangla TV শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Youtube

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখানো ভিডিওর সাথে উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের হুবহু মিল রয়েছে।

Video Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও ভিডিও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, নানা অনিয়ম ও জালিযাতির অভিযোগে ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এবিষয়ে সেসময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল গণমাধ্যমকে বলেন,  ‘নির্বাচন কমিশনের কাছে যদি এটি প্রতীয়মান হয় যে, নির্বাচন সঠিকভাবে হচ্ছে না। তবে যে কোনো কেন্দ্রের বা সকল কেন্দ্রের অর্থাৎ এন্টায়ার কন্সটিটিউয়েন্সের ভোট কমিশন বন্ধ করে দিতে পারবে; স্থগিত নয় বন্ধ করে দিতে পারবে। ৫১টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ওর পরই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সমগ্র কন্সটিটিউয়েন্সের মানে পুরো অঞ্চলের নির্বাচনি এলাকা গাইবান্ধা-৫ এর ভোট কার্যক্রম আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।’

অর্থাৎ, ২০২২ সালের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উক্ত প্রেস ব্রিফিংয়ের ভিডিওটির বক্তব্য কাট করে আলোচিত দাবির ভিডিওর সাথে জুড়ে দেওয়া  হয়েছে। 

ভিডিও যাচাই ২

পরবর্তীতে ভিডিওতে দেখানো Jagonews এর প্রতিবেদনটি অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Jago news এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন বন্ধ: সিইসি|| Jago News শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Youtube

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখানো প্রতিবেদনের সাথে উক্ত প্রতিবেদনের হুবহু মিল রয়েছে।

Video Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও ভিডিও প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে জানা যায়, উক্ত প্রতিবেদনটিও ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনকে নিয়ে করা। এর সাথে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।

ভিডিও যাচাই ৩

আলোচিত ভিডিওতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনের ভিডিও নির্দেশকারী ভিডিওটি অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক নানা কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Kalbela World এর ফেসবুক পেজে গত ৭ জানুয়ারি Live: ভোট দিচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার… শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখানো ভিডিওটির শুরুর কিছু অংশের সাথে এটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও ভিডিওটি থেকে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল ভোট প্রদানের জন্য ভোট কেন্দ্রে গেলে সেসময় উক্ত লাইভ ভিডিওটি কালবেলার ফেসবুক পেজে প্রচার করা হয়।

ভিডিও যাচাই ৪

আলোচিত ভিডিওটির শেষাংশে দেখানো সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য দেওয়ার ভিডিওটি অনুসন্ধানে ভিডিওর শেষে ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তির ‘আপনাদেরকে সরাসরি দেখাচ্ছি যায়যায়দিনের মাধ্যমে’ শীর্ষক কথাটির সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক যায়যায়দিন এর ফেসবুক পেজ Jaijaidin DIgital এ গত ৭ জানুয়ারি ভোট দিতে এসেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, দেখুন সরাসরি শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত আরেকটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওর শেষে দেখানো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য প্রদানের ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়াও, ভিডিওটি থেকে জানা যায়, ‍উক্ত ভিডিওটিও সিইসি হাবিবুল আউয়ালের ভোট প্রদান পরবর্তী সময়ে ধারণ করা। 

Video Comparison by Rumor Scanner

তবে ভিডিওটির কোথাও তাকে ৩০০ আসনের ভোট স্থগিত ঘোষণা করতে শোনা যায়নি। 

এছাড়া, কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যমে আলোচিত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে ময়মনসিংহ- ৩ আসনের একটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হওয়ায় ঐ আসনের ফল ঘোষণা স্থগিত রাখার কথা জানা গেছে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচন ভোটের তারিখের পূর্বেই স্থগিত করা হয়েছিল। যা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

তাছাড়া, জাল ভোটের দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে কয়েকটি আসনের একাধিক কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের ব্যালটে সিল মারার বা নৌকা প্রতীকের সিল সম্বলিত ব্যালটের ভিডিও প্রকাশ হওয়ার কথা গণমাধ্যম সূত্রে (, ,) জানা যায়। এসব অভিযোগে একাধিক কেন্দ্রে সিল মারা ব্যালট বাতিল ও কেন্দ্রের ভোট বাতিলের সংবাদও পাওয়া যায়।

মূলত, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এতে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮ টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। যার ২২২টিতে জয় লাভ করে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। উক্ত নির্বাচনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল রাজধানীর শান্তিনগরে অবস্থিত হাবীবুল্লাহ্ বাহার ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন। এসময় দেশীয় গণমাধ্যমগুলো তার ভোট প্রদান দৃশ্যটি সরাসরি সম্প্রচার করে। উক্ত ভোট প্রদানের সরাসরি সম্প্রচার করা ভিডিও এবং এর সাথে ২০২২ সালের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোট গ্রহণ স্থগিত করার ঘটনায় প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদের ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্তৃক ৩০০ আসনের ভোট স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিওটি ইন্টারনেটে প্রচার  করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের ভোট স্থগিতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। একটি কেন্দ্র স্থগিত থাকায় ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের ফল স্থগিত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে গত ২৯ ডিসেম্বর নওগাঁ- ২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক মারা গেলে সে আসনটিতে ৭ জানুয়ারির ভোট স্থগিত করে ইসি। এছাড়া বাকি ২৯৮টি আসনে ভোটে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। 

সুতরাং, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ৩০০ আসনের ভোট স্থগিত করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

৪ মিনিটে ৫০ ভোট শিরোনামের এই ভিডিওটি গতবছরের

গতকাল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক নারী ৪ মিনিটে ৫০ টা ভোট দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভাইরাল এই ভিডিওতে মধ্যবয়সী এক নারীকে বলতে শোনা (১ মিনিট ১৮ সেকেন্ড সময় থেকে) যায়, “আরেক মহিলা কইসে, আমি চার মিনিটে ৫০ টা ভোট দিসি।”

মূলত এই মন্তব্যটি শিরোনামে ব্যবহার করে ভিডিওটি গতকাল ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

৪ মিনিটে ৫০ ভোট

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)  এবং এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত এই ভিডিওটি গতকাল অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময়ের নয় বরং ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনের সময়ে এক নারীর ৪ মিনিটে ৫০ টি ভোট প্রদানের দাবি সম্বলিত পুরোনো ভিডিওকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ২০ জুলাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ইউটিউব চ্যানেলে ‘৪ মিনিটে ৫০ টা ভোট দিছি, আমি আর কত ভোট দিমু? (ঢাকা ১৭ আসনের একজন মহিলা ভোটার)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র হুবহু মিল পাওয়া যায়।

সেখানে উল্লেখিত তথ্য থেকে জানা যায়, এই ভিডিওটি ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনের সময়ে ধারণকৃত। 

Video Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও পরবর্তীতে কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ২০২৩ সালে ঢাকা-১৭ আসনে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (পরাজিত) ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই প্রকাশিত উক্ত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Hero Alom Official YouTube

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রদানের সময়ের নয়।

মূলত, ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনের সময়ে এক নারীর ৪ মিনিটে ৫০ টি ভোট প্রদানের দাবি সম্বলিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। উক্ত ভিডিওকেই গতকাল (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘটনা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গতকাল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইন্টারনেটে প্রচারিত একাধিক ভুল তথ্য শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, এক নারীর ৪ মিনিটে ৫০ টি ভোট প্রদানের দাবি সম্বলিত উপ নির্বাচনের পুরোনো ভিডিওকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভিডিও দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দাবিতে পুরোনো ছবি প্রচার 

গতকাল ৭ জানুয়ারি সারাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এই ভোটগ্রহণ চলাকালে সারাদেশের কোনো একটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের লাইন ধরে দাঁড়ানোর দৃশ্য দাবিতে একটি ছবি একাধিক গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

ভোটারদের দীর্ঘ সারি

উক্ত ছবি যুক্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন- ডেইলি বাংলাদেশ, পিবিএ এজেন্সি

এছাড়া স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমেও এই ছবিটি প্রচার করতে দেখা গেছে। দেখুন দৈনিক পঞ্চগড়, শেরপুর নিউজ, দিনাজপুর দর্পণ, দৈনিক জামালপুর, লালমনিরহাট বার্তা, দৈনিক রংপুর, নীলফামারি বার্তা, কুড়িগ্রাম বার্তা, আজকের টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়ার বার্তা, কুমিল্লার ধ্বনি, নোয়াখালী সমাচার, দৈনিক গাইবান্ধা এবং যশোরের আলো। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিটি গতকাল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের কোনো জেলার ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির ঘটনার নয় বরং ২০২১ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধান শুরুতে আলোচিত ছবিটির উৎসের খোঁজ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ঢাকা পোস্ট’ এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর “ভোটারদের দীর্ঘ লাইন, ভোট দিতে পেরে উচ্ছ্বাস” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একটি ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল রয়েছে।

Picture Comparison: Rumor Scanner

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ২৬ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে ভোট দিতে আসা ভোটারদের দৃশ্য এটি। 

মূলত, ২০২১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ২৬ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে নিয়ে সেসময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভোটারদের দীর্ঘ লাইনের একটি ছবি প্রচার করা হয়। এই ছবিটিই গতকাল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির দৃশ্য দাবি করে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।  

সুতরাং, ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনের পুরোনো ছবিকে গতকাল অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র