সম্প্রতি, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের পেসার মারুফা আকতার ৪.৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার মারুফা আকতার ৪.৬ (৪.৬০) নয় বরং বিকেএসপি থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মারুফা ৪.০৬ পেয়েছেন।
তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ২৮ জুলাই অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে “এসএসসি: মাঠের বাইরেও সাফল্য পেলেন অদম্য মারুফা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Dhaka Post
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় ৪.০৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের পেসার মারুফা আকতার। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে দাবিটি নিয়ে অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে এই প্রতিবেদনটির প্রতিবেদক ঢাকা পোস্টের রংপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ শরীফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তার সূত্রে ক্রিকেটার মারুফার এসএসসির ফলাফলের একটি কপি খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ফলাফল থেকে জানা যায়, মারুফা আক্তার মানবিক শাখা থেকে জিপিএ ৪.০৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
Image: Marufa Akter’s Marksheet
বিষয়টি নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে মারুফা আকতারের ভাই আল আমিন ইসলামের সঙ্গেও যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে, মারুফা আকতার এসএসসিতে ৪.০৬ পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন
মূলত, ২৮ জুলাই মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এই পরীক্ষায় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)’র শিক্ষার্থী হিসেবে মানবিক বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের পেসার মারুফা আকতার জিপিএ ৪.০৬ অর্জন করেন। তবে তার এই ফলাফলকেই কতিপয় গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিপিএ ৪.৬ দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
সুতরাং, নারী ক্রিকেট দলের পেসার মারুফা আকতার ৪.৬ পেয়ে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ে ক্যামেরুনে ভবন ধসের ঘটনার নয় বরং পূর্বের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ছবিকে ক্যামেরুনের সাম্প্রতিক ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান iStock এর ওয়েবসাইটে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: iStock
ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর ছবিটি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়।
অর্থাৎ, ছবিটি অন্তত চার বছরের পুরোনো।
ছবি যাচাই- ২
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডেইলি বাংলাদেশ।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে নাইজেরিয়া ভিত্তিক গণমাধ্যম Punchng এ ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Punchng
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই লাগোস মেইমল্যান্ডের বারিগা এলাকায় আংশিক ধসে পড়া দুই তলা ভবন থেকে এক বাড়িওয়ালা ও যমজ মেয়েসহ চার শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এর ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Reuters
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, গত ০১ জুলাই আইভরি কোস্টের আবিদজানে নির্মাণাধীন একটি ভবন ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের ঘটনার ছবি।
অর্থাৎ, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের ক্যামেরুনের ঘটনার নয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহীত এবং কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহীত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্য উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিগুলো ক্যামেরুনের সাম্প্রতিক ভবন ধসের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, গত ২৩ জুলাই ক্যামেরুনে ভবন ধসের ঘটনায় দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ক্যামেরুনের ঘটনার দাবিতে চারটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিগুলো উক্ত ঘটনার নয়। নাইজেরিয়া এবং আইভরি কোস্টসহ ভিন্ন ভিন্ন দেশের ও ঘটনার ছবিকে ক্যামেরুনের সাম্প্রতিক ভবন ধসের ঘটনার খবরে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো ক্যামেরুনের সাম্প্রতিক ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
সুতরাং, ক্যামেরুনের সাম্প্রতিক ভবন ধসের ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একাধিক পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ভারতের মণিপুর রাজ্যে দুই নারী হেনস্তার শিকার হওয়ার ঘটনায় বলিউড নায়ক অক্ষয় কুমার ভিডিও প্রকাশ করে প্রতিবাদ করেছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউব এবং ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, অক্ষয় কুমার ভারতের মণিপুর রাজ্যের দুই নারীকে হেনস্তার ঘটনায় ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রতিবাদ করেননি বরং পূর্বের ভিন্ন ঘটনায় অক্ষয় কুমার কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ব্যবহার করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অক্ষয় এক টুইটের মাধ্যমে সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ভিডিওটির কিছু কিফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে ‘Akshay Kumar’ এর টুইটার অ্যাকাউন্টে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে উক্ত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
অক্ষয় কুমার সেদিন ভারতের বেঙ্গালুরুতে শ্লীলতাহানির ঘটনায় নিজের টুইটার আক্যাউন্টে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান।
তবে অক্ষয় তার টুইটার অ্যাকাউন্টে মনিপুরে দুইজন নারীকে হেনস্তা নিয়ে গত ২০ জুলাই একটি টুইট পোস্ট করেন। কিন্তু সেখানে তিনি কোনো ভিডিও যুক্ত করেননি।
Screenshot from Twitter
মূলত, গত ১৯ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মণিপুরের রাস্তায় দুইজন নারীকে একদল লোক যৌন হয়রানি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ইন্টারনেটে বলিউড নায়ক অক্ষয় কুমার ভিডিও প্রকাশ করে প্রতিবাদ করেছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচারিত হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ঘটনায় অক্ষয় কোনো ভিডিও প্রকাশ করেনি বরং পূর্বের ঘটনায় করা ভিডিও ব্যবহার করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই ভারতের মণিপুরের রাস্তায় কুকি-জোমি সম্প্রদায়ের দু’জন নারীকে নগ্ন করে একদল লোকের দ্বারা যৌন লাঞ্ছনা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা পুরো ভারতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়।
প্রসঙ্গত, পূর্বে বলিউড নায়ক অক্ষয় কুমার ফিলিস্তিনকে সমর্থন করেছেন দাবিতে এডিটেড ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, মণিপুর রাজ্যে দুই নারী হেনস্তার শিকার হওয়ার ঘটনায় অক্ষয় কুমার ভিডিও প্রকাশ করে প্রতিবাদ করেছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি “পোল্যান্ডের ফুটবলার রবার্ট লেভানদোভস্কি জাতীয় দলে তার ফুটবল ক্যারিয়ার ডিফেন্ডার হিসেবে শুরু করেছিলেন” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পোল্যান্ডের ফুটবল তারকা রবার্ট লেভানদোভস্কি জাতীয় দলে তার ফুটবল ক্যারিয়ার রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে শুরু করেননি বরং তিনি সেন্টার ফরওয়ার্ডের খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় দলে খেলা শুরু করেছিলেন।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধানের মাধ্যমে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ ভিত্তিক ক্রীড়া গণমাধ্যম ‘Premierseason’ এ ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর “Poland debut as a defender? That’s behind this picture” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from ‘Premierseason’
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সান মারিনোর বিপক্ষে পোল্যান্ডের হয়ে রবার্ট লেওয়ানডোস্কি জাতীয় দলের হয়ে প্রথম খেলতে নামেন। সেই খেলায় ম্যাচের ৫৯ মিনিটে জেহনার মারেক সাগানভস্কি এর বিকল্প হিসেবে লেভানদোভস্কি মাঠে নামেন। কিন্তু টেলিভিশন সম্প্রচারে পর্দার স্ক্রলে লেভানদোভস্কির নামের পাশে ভুলবশত ‘ডিফেন্ডার’ ট্যাগ দেখানো হয়।
এছাড়া, আফ্রিকা ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘Opera News’ এ “How Robert Lewandowski was announced as a Defender on his International debut” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
Screenshot from Opera news
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য, জার্মান ভিত্তিক ফুটবলের পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ‘Transfermarkt’ এ ২০০৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সান মারিনো বনাম পোল্যান্ডের ফুটবল ম্যাচের লাইনআপের বিস্তারিত তথ্য পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot from ‘Transfermarkt’
এই ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, সেই খেলায় পোল্যান্ড ফুটবল দলের লাইনআপের সেন্টার ফরওয়ার্ডে রবার্ট লেভানদোভস্কির নাম পাওয়া যায়।
তাছাড়া, ‘Transfermarkt’ এর তথ্যানুযায়ী ২০০৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সান মারিনো বনাম পোল্যান্ডের সেই ম্যাচে রবার্ট লেভানদোভস্কি ৫৯ মিনিটে যার (জেহনার মারেক সাগানভস্কি) বিকল্প হিসেবে মাঠে নামেন তিনিও সেই ম্যাচে সেন্টার ফরওয়ার্ড পজিশনে খেলেছিলেন।
Screenshot from ‘Transfermarkt’
অর্থাৎ, জেহনার মারেক সাগানভস্কির সেন্টার ফরওয়ার্ডের পজিশন পূরণ করার জন্যই ৫৯ মিনিটে রবার্ট লেভানদোভস্কিকে মাঠে নামানো হয়।
মূলত, ২০০৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ফুটবল তারকা রবার্ট লেভানদোভস্কির সান মারিনোর বিপক্ষে খেলায় অংশগ্রণের মাধ্যমে পোল্যান্ড ফুটবল টিমে অভিষেক হয়। সেই খেলায় ম্যাচের ৫৯ মিনিটে সেন্টার ফরওয়ার্ডের জেহনার মারেক সাগানভস্কি এর বিকল্প খেলোয়াড় হিসেবে লেভানদোভস্কি মাঠে নামেন। সম্প্রতি লেভানদোভস্কি জাতীয় দলে তার ফুটবল ক্যারিয়ার ‘ডিফেন্ডার’ হিসেবে শুরু করেছিলেন শীর্ষক দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৮ সালের সান মারিনো বনাম পোল্যান্ডের ম্যাচের ৫৯ মিনিটে জেহনার মারেক সাগানভস্কি এর পরিবর্তে লেভানদোভস্কি মাঠে নামার সময় টেলিভিশন সম্প্রচারে পর্দার স্ক্রলে তার নামের পাশে ভুলে ‘ডিফেন্ডার’ ট্যাগ দেখানো হয়। সে থেকেই তার অভিষেকের পজিশন নিয়ে এই ভুল তথ্যের সূত্রপাত।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও ব্রাজিল ও নেইমারকে নিয়ে রবার্ট লেভানদোভস্কির ভুয়া মন্তব্য প্রচার করার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, পোল্যান্ডের ফুটবল খেলোয়াড় রবার্ট লেভানদোভস্কি জাতীয় দলের ফুটবল ক্যারিয়ার ‘ডিফেন্ডার’ হিসেবে শুরু করেছিলেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটিসম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘সাবেক দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৪ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মার্কিন ভিসা বাতিল!’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ব্যক্তি চারজন হলেনঃ
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবুদ্দিন আহমদ
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান
এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দুই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করলেও এই নীতির আওতায় এখন পর্যন্ত কাউকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই এই চার ব্যক্তির ভিসা নিষেধাজ্ঞার ভিত্তিহীন দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে দুই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবুদ্দিন আহমদ, কে এম নুরুল হুদা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের আমেরিকার ভিসা বাতিল সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে তাদের আমেরিকান ভিসা বাতিলের দাবিটি সম্পর্কে অধিকতর অনুসন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Sanction Programs and Information সেকশনে উক্ত বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: U.S. Department of the treasury
বরং সবশেষ প্রকাশিত স্যাংশন বা ভিসা বাতিলের তথ্য সমূহ যাচাই করে দেখা যায়, দেশটি গত ২৪ জুলাই আফ্রিকান দেশ মালিতে রাশিয়ান ভাড়াটে সেনা ওয়াগনার গ্রুপের উপস্থিতি সহজতর ও প্রসারিত করার জন্য সহায়তার অভিযোগে মালির তিন নাগরিকের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এছাড়া গত ২০ জুলাই ওয়েবসাইটটিতে রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কিরগিজস্তানের ১২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞার একটি বিজ্ঞপ্তিও খুঁজে পাওয়া যায়।
পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ভিসা নীতি ঘোষণা করা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের ভ্যারিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট ঘুরেও আলোচিত চার ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে গত ২০ ও ২৪ জুলাই আরোপিত দুইটি নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক কোন দেশের নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে অ্যান্থনি ব্লিনকেন সে বিষয় নিয়ে টুইট প্রকাশ করে থাকেন।
Image Collage: Rumor Scanner
এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের টুইটার অ্যাকাউন্ট ঘুরে দেখা যায়, তিনিও মালির তিন নাগরিকের উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়েও টুইট করেছেন।
Screenshot: Matthew Millar Twitter
পাশাপাশি সাম্প্রতিক কম্বোডিয়ার নির্বাচনকে ঘিরে দেশটিতে গণতন্ত্রের মর্যাদা নষ্ট করার মতো পরিস্থিতির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে গত ২৩ জুলাই একটি টুইট করেন ম্যাথিউ মিলার।
Screenshot: Matthew Millar Twitter
এর বাইরে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশের কারো উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে গত ২৪ জুলাই ম্যাথিউ মিলার বলেন, যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাম প্রকাশ করে না। তবে নিষেধাজ্ঞায় পড়া অফিসিয়াল বা সরকারি ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করে।
Screenshot: state.gov, USA
যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, তাদের মধ্যে অফিসিয়াল বা সরকারি ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো নাম প্রকাশ করে না সেহেতু দুই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য সরকারি অফিসিয়াল হওয়ায় তাদের ভিসা বাতিল হলে দেশটি নাম প্রকাশ করতো অথবা যদি নাম প্রকাশ নাও করে তাহলেও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ছাড়া অন্য কারো পক্ষে তাদের ভিসা বাতিলের বিষয়টি জানা সম্ভব নয়। অর্থাৎ তাদের আমেরিকার ভিসা বাতিলের দাবিটি কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের কানাডার ভিসা না পাওয়ার একটি তথ্য প্রচার করা হয়। গণমাধ্যমের এসব প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানাডায় অনুষ্ঠিত একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে ভিসার আবেদন করেছিলেন ঢাবি উপাচার্য। কিন্তু আবেদনের এক মাস পরেও তিনি দেশটির ভিসা পাননি।
তবে ভিসা না পাওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ভিসার জন্য আবেদন করেছি। বাকিটা কানাডিয়ান হাইকমিশনের বিষয়। এটি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ওয়েবসাইটে নোটিফিকেশন বলা আছে, তিন মাস সময় লাগতে পারে। যেহেতু মাত্র এক মাস হয়েছে এখনই কাউকে দোষারোপ করতে পারছি না।’
Screenshot: Jugantor
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমেরিকার ভিসা নীতি ঘোষণার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সরকারি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মার্কিন ভিসা বাতিলের একাধিক ভিত্তিহীন দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুইজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের আমেরিকার ভিসা বাতিলের একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে পূর্বের দাবিগুলোর মতোই উক্ত দাবিটিও গুজব বলে প্রতীয়মান হয়।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বেও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির আমেরিকার ভিসা বাতিলের দাবিকে গুজব হিসেবে চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, দুই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের আমেরিকার ভিসা বাতিলের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটের আদলে ‘জামায়াতের রাজনীতিতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী‘ শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘জামায়াতের রাজনীতিতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি এডিটেড। মূলত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে জামায়াত এবং বিএনপি উভয় দলের কথাই উল্লেখ ছিল। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে ‘বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম বিকৃত করে উক্ত স্ক্রিনশটটি তৈরী করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম NEWS24 এর অনলাইন সংস্করণে গত ২০ জুলাই ‘বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: NEWS24
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতিতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে অতীতের মতো কোনো ধ্বংস ও সন্ত্রাস করতে গেলে ধরে ধরে কঠোর সাজা নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।’
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, নিউজ টোয়েন্টিফোর এর শিরোনামে উল্লেখিত প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে ‘বিএনপি’ অংশটুকু বাদ দিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, নিউজ২৪ এর হেডলাইনটি বিকৃত করে উক্ত স্ক্রিনশটটি তৈরী করা হয়েছে।
পাশাপাশি একই বিষয়ে মূলধারার সংবাদমাধ্যম গণমাধ্যম বা আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সূত্রেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুধুমাত্র জামায়াতকে নিয়ে এরূপ মন্তব্যের বিষয়ে উল্লেখ পাওয়া যায়নি বরং সেসব সূত্রগুলোতে বিএনপির কথাটিও উল্লেখ ছিল।
মূলত, দেশের মূলধারার গণমাধ্যম NEWS24 এর অনলাইন সংস্করণে গত ২০ জুলাই ‘বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে উক্ত প্রতিবেদনের শিরোনামটিকে বিকৃত করে ‘জামায়াতের রাজনীতিতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, জামায়াতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত এই স্ক্রিনশটটি এডিটেড।
সম্প্রতি, লিটন দাস “ভালো খেললে আমি বাংলাদেশি, আর খারাপ খেললে আমি হিন্দু” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ডিজিটাল ব্যানার ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশ ও ধর্মকে জড়িয়ে আলোচিত মন্তব্যটি লিটন দাস করেননি বরং সাবেক জার্মান ফুটবলার মেসুত ওজিলের সমধর্মী বক্তব্যের অনুকরণে একটি ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করে লিটন দাসের উক্তি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে শুরুতেই মূলধারার গণমাধ্যমে লিটন দাসের আলোচ্য উক্তিটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র হতে লিটন দাস উক্ত মন্তব্য করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিজের প্রতি সমর্থকদের দ্বৈত আচরণের ও বর্ণবাদের কারণে জার্মান ফুটবলার মেসুত ওজিল আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণ করেন। সেইসাথে জার্মান সমর্থকদের দ্বৈত আচরণের ব্যাপার মেসুত ওজিল বলেন, “I am German when we win, but I am an immigrant when we lose”. অর্থাৎ, দল জিতলে আমি একজন জার্মান, আর হেরে গেলে আমি একজন ভিনদেশী।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধান পদ্ধতি ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই “German when he won, an immigrant when he lost – why Mesut Ozil turned his back on Germany” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ২০১৮ সালে অবসর ঘোষণার সময় মেসুত ওজিল সমর্থকদের দ্বৈত আচরণের বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন।
মূলত, ২০১৮ সালে জার্মান ফুটবলার মেসুত ওজিল আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণ করেন। নিজের উপর বর্ণবাদী আচরণের প্রেক্ষিতে সে সময়ে মেসুত ওজিল বলেন, “জিতলে আমি জার্মান, হারলে বিদেশি”। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার এ বক্তব্যের অনুকরণেই “ভালো খেললে আমি বাংলাদেশি, আর খারাপ খেললে আমি হিন্দু” শীর্ষক উক্তি তৈরি করে লিটন দাসের নামে প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে লিটন দাস এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের হয়ে লিটন দাসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ২০১৫ সালে। ৩৯ টেস্ট, ৭২ ওডিআই এবং ৭৩ টি২০ ম্যাচে অংশগ্রহণ করা লিটন দাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি রানের মালিক। সেইসাথে, বেশকিছু দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বাংলাদেশ জাতীয় দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। তার নেতৃত্বেই সম্প্রতি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে রেকর্ড রানের জয় অর্জন করে বাংলাদেশ।
পূর্বেও, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার লিটন দাসকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বাংলাদেশের ক্রিকেটার লিটন দাসের নামে দেশ ও ধর্মকে জড়িয়ে ইন্টারনেটে প্রচারিত এই তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইউটিউবারদের হামলায় হিরো আলম আহত হয়েছেন শীর্ষক তথ্য উল্লেখ করে জাগোনিউজ এবং ইয়ার্কি কর্তৃক কোনো ফটোকার্ড ও ব্যানার প্রকাশের তথ্য সঠিক নয় বরং, জাগোনিউজ এবং ইয়ার্কি এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে জাগো নিউজের আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে দেখা যায়, jagonews24.com এর পরিবর্তে vagonews24.com লেখা রয়েছে। এছাড়াও এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ইউটিউবারদের হামলায় আহত হিরো আলম: চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দেওয়া এবং বাজে ব্যবহার করার জন্য এই হামলা করা হয়েছে বলে জানা যায়।’ সেখানে এই ফটোকার্ডটি প্রকাশের তারিখ দেখানো হয়েছে, ১৭ জুলাই ২০২৩।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে অনুসন্ধানের মাধ্যমে আলোচিত দাবিটি প্রচারের তারিখে অর্থাৎ ১৭ জুলাই জাগোনিউজের ফেসবুক পেজে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Jagonews24
ছবিটির ক্যাপশনে উল্লেখিত তথ্য থেকে জানা যায়, এটি বনানী বিদ্যানিকেতনে হিরো আলমকে বিরোধীদের ধাওয়া দেওয়ার সময়ের।
কিন্তু ছবিটি কোনো ফটোকার্ড সদৃশ বিষয় নয়। তাছাড়া, এই পোস্টে ‘ইউটিউবারদের হামলায় হিরো আলমের আহত শীর্ষক কোনো তথ্যও উল্লেখ ছিল না। একইদিন এমন কোনো ফটোকার্ডও প্রকাশ করেনি সংবাদমাধ্যমটি।
এ বিষয়ে গত ১৮ জুলাই জাগোনিউজের ওয়েবসাইটে ‘হিরো আলমের ওপর হামলায় গ্রেফতার ৭ জনের পরিচয় মিলেছে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Jago News
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বনানী থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।’
তবে সেখানে হামলাকারীরা ইউটিউবার কিনা সে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, হামলাকারীরা নৌকার ব্যাজ পরিহিত বা নৌকার সমর্থক ছিলেন।
অর্থাৎ, এই ছবিতে প্রদর্শিত হামলাকারী ব্যক্তিরা ইউটিউবার এবং চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দেওয়া এবং বাজে ব্যবহার করার জন্য এই হামলা করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো এখনও প্রমাণিত না হলেও এটা নিশ্চিত যে জাগোনিউজ উক্ত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে স্যাটায়ার প্ল্যাটফর্ম ইয়ার্কির আদলে তৈরি ডিজিটাল ব্যানারটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউটিউবাদের হামলায় আহত হিরো আলম।’ লক্ষ্য করুন, ব্যানারে ইউটিউবারদের পরিবর্তে ইউটিউবাদের শীর্ষক লেখা দেখা যায়।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে অনুসন্ধানের মাধ্যমে স্যাটায়ার প্ল্যাটফর্ম ইয়ার্কির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে আলোচিত ব্যানারটি নিয়ে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: earki Facebook
উক্ত পোস্টে হিরো আলমকে নিয়ে প্রচারিত ব্যানারটিকে ‘এডিট করা পোস্ট’ উল্লেখ করে জানানো হয়, ‘eআরকির লোগোসহ ছড়িয়ে পড়া প্রথম ছবিটি আমাদের তৈরি করা নয়। ‘if সুষ্ঠু নির্বাচন has a face’ কপিসহ পোস্টটি eআরকির অফিশিয়াল পেজ থেকে পাবলিশ করা। মিথ্যা তথ্য, ভুল তথ্য ও গুজব এড়িয়ে চলতে eআরকির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ফলো করুন।’
অর্থাৎ, প্রচারিত ব্যানারটি ইয়ার্কির তৈরি নয়।
মূলত, সম্প্রতি ‘ইউটিউবারদের হামলায় আহত হিরো আলম’ শীর্ষক একটি দাবিতে জাগো নিউজ এবং স্যাটায়ার প্ল্যাটফর্ম ইয়ার্কির আদলে তৈরি ফটোকার্ড ও ব্যানারের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাগোনিউজ বা ইয়ার্কি এমন কোনো ফটোকার্ড বা ব্যানার প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, প্রচারিত এই ফটোকার্ড এবং ব্যানারটি এডিটের মাধ্যমে তথ্য বিকৃত করে তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফটোকার্ড সম্পাদনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত একাধিক গুজব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন
সুতরাং, ‘ইউটিউবারদের হামলায় আহত হিরো আলম’ শীর্ষক একটি দাবিতে একাধিক প্লাটফর্মের আদলে ফটোকার্ড ও ব্যানার তৈরি করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি,‘হিরো আলম কে হত্যা করে বুড়িগঙ্গার নদী ফেলে দিলো এইমাত্র ফেঁসে গেলো আরাফাত’ শীর্ষক শিরোনামের থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
ভিডিওটির থাম্বনেইলে দাবি করা হচ্ছে আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমকে হত্যা করে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। যাতে ঢাকা-১৭ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত ফেঁসে গিয়েছেন।
Atv news bangla 1 নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমকে হত্যা করে বুড়িগঙ্গায় ফেলে যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং গত ২৪ জুলাই রাতে হিরো আলমকে ফোন কলে হত্যার হুমকি দিলে তিনি বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় জিডি করেন।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটির থাম্বনেইলে ‘হিরো আলম কে হত্যা করে বুড়িগঙ্গার নদী ফেলে দিলো এইমাত্র ফেঁসে গেলো আরাফাত’ শীর্ষক শিরোনাম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ভিডিওটি অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওর বিস্তারিত অংশে হিরো আলমকে হত্যা করে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার সপক্ষে কোনো তথ্য নেই।
ভিডিওটিতে চ্যানেলের উপস্থাপক বর্তমান সময়ের আলোচিত ঘটনা জানানোর উদ্দেশ্যে দুটি ভিডিও দেখান। যার একটি নাইম নামের এক ইউটিউবারের। অপরটি সাংবাদিকদের দেওয়া হিরো আলমের একটি সাক্ষাৎকার।
Screenshot: Youtube
প্রথম ভিডিওটি মূলত হিরো আলমকে ফোন কলের মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেওয়া হলে তিনি জিডি করার পর প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে তৈরি করা। ভিডিওটিতে ইউটিউবার নাইমকে ‘বস্তায় ভরে হিরো আলমকে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি’ শীর্ষক শিরোনামে অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্ট-এ প্রকাশিত সংবাদটি পাঠ করতে শোনা যায়।
পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ইউটিউবার নাইমের ইউটিউব চ্যানেল NAYEEM ELLI 2 এ ‘আলমকে বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা ফেলতে একি কান্ড || গভীর রাতে যা ঘটলো’ শিরোনামে প্রকাশিত সেই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটিতে হিরো আলমকে বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হয়েছে সংক্রান্ত কোনো আলোচনা করা হয়নি। বরং ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যে অংশটুকু দেখানো হয় সেটুকুই দেখতে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
ভাইরাল ভিডিওটিতে হিরো আলম নিয়ে যে অংশটুকু দেখতে পাওয়া যায় তা মূলত টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত একটি ভিডিওর অংশ বিশেষ। একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত হিরো আলমের সাক্ষাৎকারটি মূলত তার হত্যা হুমকি পাওয়ার প্রেক্ষিতে থানায় মামলা করার পরবর্তী সময়ের।
Video Comparison: Rumor Scanner
অর্থাৎ, হিরো আলমকে হত্যা করে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়ার তথ্যটি সত্য নয়।
মূলত, গত ২৪ জুলাই রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য পদে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফেহিরো আলমকে অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন কল করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর তিনি ১১ টার দিকে নিজে বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় জিডি করেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আলোচিত ইউটিউব চ্যানেলটিতে হিরো আলমকে হত্যা করা হয়েছে বলে বিভ্রান্তিকর শিরোনাম এবং থাম্বনেইল দিয়ে নানা ভিডিও প্রকাশ করে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনে সংসদ সদস্যের শূন্য পদে উপনির্বাচন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত জয়ী হন।
সুতরাং, হিরো আলমকে হত্যা করে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি,’কাতার আওয়ামী লীগ শাখার সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী কান ধরে আওয়ামী লীগ ছেড়েছে‘ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কাতার আওয়ামী লীগ শাখার তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ওমর ফারুক চৌধুরীর কান ধরে আওয়ামী লীগ ছাড়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান কর্তৃক শ্যামল কান্তি ভক্ত নামে এক শিক্ষককে কান ধরে ওঠবোস করানোর প্রতিবাদে নিজেই কান ধরে ওঠবোস করেছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম আওয়ামী লীগ, কাতার শাখার সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সালের ২৪ মে ‘আন্তরিক শুভেচ্ছা সতর্কীকরণ (আর্কাইভ)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রদত্ত একটি পোস্ট খুঁজে পায়।
Screenshot: Omar Faroque Chowdhury Post
পোস্টটিতে ওমর ফারুক চৌধুরী লিখেন, ‘সম্মানিত আমার সকল বন্ধু, সমাজসেবক, রাজনৈতিক কর্মী, সকল ব্যক্তির প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা। গত দুই দিন আগে আমার ফেসবুক আইডিতে নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। আমার ছবির সঙ্গে সেখানে এগারোটি ছবিসহ এই বিষয় ৭/৮ লাইন লেখা ছিল। কিন্তু খুব দুঃখের বিষয় কোন ভিন্ন মত পোষনকারী ব্যক্তি ফেইক আইডি থেকে কান ধরা আমার ছবিটা পৃথক করে (আমি চিরকালের জন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে অবসরে যাচ্ছি) অনুরূপ পোস্ট দিয়ে অপপ্রচার করে। যে বিষয়টির জন্য অনেক বন্ধু আমাকে কল করে জানতে চায় কি ঘটছে?
তিনি পোস্টে আরও লিখেন, ‘এখানে নিজের সম্পর্কে বিবৃতি দেওয়া দরকার। আমি পঞ্চম শ্রেণীতে থেকে আমার শিশু কর্মী হিসাবে রাজনৈতিক কাজ শুরু। এরপর ছাত্রলীগ, স্বাধীনতা যুদ্ধ, যুবলীগ ও বর্তমান আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মুজিববাদকে ধারণ করে এই পর্যন্ত অবস্থান করছি। আমি বঙ্গবন্ধুর শুধুমাত্র নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমি অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি যাদের সাথে তারা হলেন বীরপুরূষ আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, এহচানুল হক ইনু, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, আলতাফ হোসেন গোলনদাছ এবং আরও অনেক অনেক ব্যক্তিত্ব I এই আমি নগণ্য রাজনৈতিক কর্মী দেশের জন্য অধিকতর কিছু করতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জীবনের মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পরে রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছি এবং দেশ স্বাধীনতা লাভ করে।বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি আমার পেশা, আমার নেশা এবং তৃণমুল থেকে উটে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক চৌধুরী মুজিব আদর্শের আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসাবে আমরণ পর্যন্ত নিবেদিত থাকবেই এবং অবসরে যেতে পারে না। সবাই ভাল থাকুন এবং শুভ কামনা রইলো।’
তার এই দীর্ঘ এই পোস্টটি প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে অন্যান্য আরও কিছু ছবির সঙ্গে তিনি তারা অ্যাকাউন্টে কানেধরে ওঠবোসের একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে তার এই ছবিটিকেই কানধরে ওঠবোস করে আওয়ামী লীগ ছাড়ছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থাৎ ওমর ফারুক চৌধুরীর নারায়নগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্চনার প্রতিবাদের ঘটনায় ধারণকৃত একটি ছবিকে তার আওয়ামী লীগ ছাড়ার ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ওমর ফারুক চৌধুরী কি বর্তমানে আওয়ামী লীগে আছেন?
রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানের এই পর্যায়ে ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে বর্তমানে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তা যাচাই করে দেখে। এক্ষেত্রে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে ২০১৯ সালের ১ আগস্ট “কাতার আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ওমর ফারুক চৌধুরী সে সময় কাতার আওয়ামী লীগ শাখার প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন।
Screenshot: Jugantor
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে ২০১৯ সাল পরবর্তী সময়েও গণমাধ্যম সূত্রে ওমর ফারুক চৌধুরীকে কাতার আওয়ামী লীগের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
গণমাধ্যমের এসব প্রতিবেদন ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতেও ওমর ফারুক চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও আয়োজনে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
যেমন, চলতি বছরের গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফরের সময় ওমর ফারুক চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। যেটি তিনি তার নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টেই গত ২৫ মে প্রকাশ করেন।
অর্থাৎ, দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোর দাবি অনুযায়ী, ওমর ফারুক চৌধুরী কান ধরে ওঠবোস করে আওয়ামী লীগ ছেড়েছেন। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের বিস্তারিত অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওমর ফারুক চৌধুরী আওয়ামী লীগ ছাড়েননি। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগ, কাতার শাখার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
মূলত, ২০১৬ সালের মে মাসে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে স্কুলটির দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে শাসন করার সময় ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠে। পরবর্তীতে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠবোস করানো হয়েছিল। এই ঘটনায় দেশের সচেতন নাগরিকেরাও কান ধরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। এরই প্রেক্ষিতে কাতার আওয়ামী লীগ শাখার তৎকালীন সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীও কানে ধরা ফেসবুকে ছবি পোস্ট দিয়ে প্রতিবাদ জানান। তবে তার কান ধরার এই ছবিটিই পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি কান ধরে আওয়ামী লীগ ছেড়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনি আওয়ামী লীগ ছাড়েননি বরং বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগ, কাতার শাখার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সুতরাং, কাতার আওয়ামী লীগ শাখার সাবেক সভাপতি ও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ওমর ফারুক চৌধুরীর কান ধরে আওয়ামী লীগ ছাড়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।