সম্প্রতি, ‘নাশকতার খরচা তুলতে Bigo Live – এ এসে নোংরামী করছেন রুহুল কবির রিজভী’ শীর্ষক ক্যাপশনে বিগো লাইভ অ্যাপের স্ক্রিনশটে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ছবিসহ একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রুহুল কবির রিজভী বিগো লাইভ প্লাটফর্মে কোনো লাইভ করেননি বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি এডিটেড।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Bangla Politix নামক ফেসবুক পেজে গত ১১ নভেম্বরে প্রকাশিত এ বিষয়ের সম্ভাব্য প্রথম ফেসবুক পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from Facebook
তবে Bangla Politix নামক পেজটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি একটি রাজনৈতিক স্যাটায়ার মূলক পেজ এবং পেজটির ক্যাটাগরিতে ‘Comedy club’ উল্লেখ করা রয়েছে। এছাড়া, এই পেজ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলি হাস্যরসাত্মভাবে উপস্থাপন করা হয় বলে লক্ষ্য করা যায়।
রুহুল কবির রিজভীর ছবিসহ বিগো অ্যাপের স্ক্রিনশট সম্পর্কে জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বিএনপির ইউটিউব চ্যানেলে গত ১০ নভেম্বর “রুহুল কবির রিজভীর সংবাদ সম্মেলন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিওর দৃশ্যের সাথে বিগো লাইভের আলোচিত স্ক্রিনশটটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায়, গত ১০ নভেম্বর ঢাকা থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বিএনপির ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেললে যোগ দেন। সেদিন তিনি উক্ত সম্মেলনে সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে কথা বলেন।
পরবর্তী অনুসন্ধানে বিগো লাইভ অ্যাপে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর ছবি ও নামে গ্রহণযোগ্য কোনো বিগো অ্যাকাউট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Bigo Live App
অর্থাৎ, রুহুল কবির রিজভীর ছবিসহ বিগো লাইভ অ্যাপের এই স্ক্রিনশটটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
মূলত, গত ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বিএনপির ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেললে যোগ দিয়ে সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে কথা বলেন। সম্প্রতি সেই সংবাদ সম্মেলনের একটি মূহুর্তের ছবি স্ক্রিনশট নিয়ে বিগো লাইভ অ্যাপের স্ক্রিনশটের আদলে এডিটের মাধ্যমে তৈরি করে, ‘নাশকতার খরচা তুলতে Bigo Live – এ এসে নোংরামী করছেন রুহুল কবির রিজভী’ শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে নিয়ে ইন্টারনেটে ভুল তথ্য প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে:
সম্প্রতি, “সৌদিআরবের ৭০ জন আলেম ফোনে হ্যালো বলা হারাম করে দিয়েছেন। কারণ হেল অর্থ জাহান্নাম আর হ্যালো অর্থ জাহান্নামী।” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সৌদি আরবের ৭০ জন আলেম ফোনে হ্যালো বলাকে হারাম বলে ঘোষণা করেননি এবং হ্যালো শব্দটির অর্থও জাহান্নামী নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
সৌদি আরবের ৭০ জন আলেম হ্যালো বলা হারাম ঘোষনা করেছেন কিনা তা জানতে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর Islamweb নামক একটি ওয়েবসাইটে “Hello has nothing to do with the Hell” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে জানা যায়, মক্কার মসজিদুল হারামের কোনো ইমাম কর্তৃক এই ধরনের কোনো ফতোয়া দেওয়া হয়নি।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইসলামিক ওয়েবসাইট কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে আলোচিত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
হ্যালো এবং হেল শব্দের অর্থ কি?
হ্যালো শব্দটির অর্থ অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০১১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক স্বাধীন ও অলাভজনক গণমাধ্যম npr.org এ “A (Shockingly) Short History Of ‘Hello’ ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টেলিফোন যখন আবিষ্কার হয় তখন হ্যালো শব্দটির প্রচলন হয়নি। টেলিফোনের উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রথমে সম্ভাষণ হিসেবে টেলিফোনে ‘আহয়’ শব্দটির ব্যবহার করেছিলেন। এটি সাধারণত নাবিকরা ব্যবহার করতেন। তবে হ্যালো বলার প্রচলন শুরু হয় টমাস আলভা এডিসন কর্তৃক হ্যালো শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে। তিনিই প্রথম “হ্যালো” শব্দটির সূচনা করেন। তিনি টেলিফোনে উত্তর দেওয়ার সময় “হ্যালো” ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীদের আহবান জানান। এই হ্যালো শব্দটি এসেছে পুরোনো জার্মান শব্দ ‘হ্যালা, হলা’ থেকে। ফেরি নৌকার মাঝিকে ডাকার জন্য ওই শব্দটি ব্যবহার করতো।
পরবর্তীতে হেল শব্দটির অর্থ অনুসন্ধানে ইংরেজি অভিধান Merriam Webster থেকে জানা যায়, হেল শব্দটির পুরোনো ইংরেজি শব্দ হেল (hell) বা হেলে (helle) যা দিয়ে ‘মৃতদের আবাস বা মৃত্যু দেবী’ বুঝানো হতো। এই শব্দ দুটো ‘প্রোটো জার্মানিক’ শব্দ halja থেকে এসেছে যার অর্থ কোনো কিছু ঢাকে বা লুকিয়ে রাখা৷
অর্থাৎ হেল শব্দের সাথে হ্যালো শব্দের কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়া “Where Does ‘Hello’ Come From” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শেক্সপিয়ারের সময়ে হেইল (Hail) শব্দটি অভিবাদন জানাতে ব্যবহার করা হতো এবং এটি হেইল শব্দটি স্বাস্থ্যবিষয়ক শব্দ হেল, হেলথ, হোল এর সাথে সম্পর্কিত এবং এই হেইল শব্দটি যেহেতু অভিবাদন জানানোর জন্য ব্যবহৃত হতো তাই এটি হোলো, হালো এবং হ্যালোওসহ ( hollo, hallo, halloa) বেশ কয়েকটি রূপে পরিবর্তিত হতে পারে বলেও জানা যায়।
মূলত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৌদি আরবের আলেমরা ফোনে হ্যালো বলা হারাম করেছেন দাবিতে একটি তথ্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচার করা হচ্ছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে হেল অর্থ জাহান্নাম এবং হ্যালো অর্থ জাহান্নামী। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে যে সৌদি আলেম কর্তৃক এমন কোনো ফতোয়া দেওয়া হয়নি এবং হেল শব্দের অর্থ জাহান্নাম হলেও হ্যালো শব্দের অর্থ জাহান্নামী নয়। হেল এবং হ্যালো শব্দ দুটির মধ্যে অর্থগত এবং উৎপত্তিগত পার্থক্য রয়েছে।
সুতরাং, সৌদি আরবের ৭০ জন আলেম ফোনে হ্যালো বলা হারাম ঘোষণা করেছেন এবং হ্যালো শব্দটির অর্থ জাহান্নামী শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার অনুর্ধ্ব-১৭ দলের ফুটবলার আলেজান্দ্রো গার্নাচোকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে আনফলো করেছেন’ শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
দাবি করা হচ্ছে, গত ২৬ নভেম্বর এভারটনের বিপক্ষে গোল করার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মত উদযাপন করার জন্য লিওনেল মেসি তাকে ইনস্টাগ্রাম থেকে আনফলো করে দিয়েছেন।
এছাড়া মূলধারা অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের আর্টিকেলেও একই ভুল তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৬ নভেম্বর এভারটনের বিপক্ষে গোল করার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মত উদযাপন করার কারণে আর্জেন্টিনা অনুর্ধ্ব-১৭ দলের ফুটবলার আলেজান্দ্রো গার্নাচোকে লিওনেল মেসি আনফলো (Unfollow) করার দাবিটি সত্য নয় বরং লিওনেল মেসি তাকে কখনও ইনস্টাগ্রামে Follow (অনুসরণ) করতেন না।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব এবং ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় রিও ফার্ডিনান্ড তার ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ নভেম্বর “Garnacho Goal Better Than Rooney?। Rio Comes To The Defence Of Gary Neville Career” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি টকশো করেন।
৪৯ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের টক শোটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, রিও ফার্ডিনান্ড ভিডিওটির ১৭ মিনিটে বলেন, আলেজান্দ্রো গার্নাচো আমাকে বলেছে মেসি তাকে (গার্নাচোকে) আনফলো করেছে।
রিও ফার্ডিনান্ড এই মন্তব্যের পর বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে, আলেজান্দ্রো গার্নাচোর ভাই রবার্তো গার্নাচো তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে এ নিয়ে একটি পোস্ট করেন।
Screenshot: X
পোস্টে তিনি বলেন, মিথ্যা, মেসি কখনো তাকে (গার্নাচোকে) অনুসরণই করেননি।
আলেজান্দ্রো গার্নাচোর ভাইয়ের এক্স পোস্টে রিও ফার্ডিনান্ড এটি সার্কাজম বা মজা করে বলেছেন উল্লেখ করে একটি মন্তব্য করেছেন।
Screenshot: X
অপরদিকে লিওনেল মেসির অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেখা যায়, লিওনেল মেসি তার ইনস্টাগ্রাম থেকে ৩০৭ টি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টকে অনুসরণ করছেন।
Screenshot: Instagram
অর্থাৎ, লিওনেল মেসি যদি ২৬ নভেম্বরের পর গার্নাচোকে আনফলো করে থাকেন তাহলে লিওনেল মেসির ইনস্টাগ্রাম Following অবশ্যই ৩০৭ এর বেশি হতে হবে। অন্তত ৩০৮ হতে হবে।
তবে, সমাজিক মাধ্যম পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট Social Blade-এলিওনেল মেসির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট এর বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৬ নভেম্বর থেকে লিওনেল মেসির ইনস্টাগ্রাম ফলোয়িং সংখ্যা কমেনি বরং দুইটি বেড়েছে।
Screenshot: Social Blade
ওয়েবসাইটটিতে লিওনেল মেসির গত ১৫ দিনের INSTAGRAM STATS SUMMARY তে দেখা যায়, লিওনেল মেসির ফলোয়িং সংখ্যা গত ১৭ নভেম্বর একটি বেড়েছে, ১৮ নভেম্বর একটি কমেছে ও ১৯ নভেম্বর একটি বেড়েছে এবং সর্বশেষ ২৮ নভেম্বর আরও দুইটি বেড়েছে।
অর্থাৎ, Social Blade এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিসংখ্যান থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় ২৬ নভেম্বরের পর লিওনেল মেসি তার ইনস্টাগ্রাম থেকে কাউকে আনফলো করেননি বরং নতুন দুইটি অ্যাকাউন্টকে ফলো করেছেন।
মূলত, গত ২৬ নভেম্বর আর্জেন্টিনা অনুর্ধ্ব-১৭ দল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের খেলোয়াড় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে এভারটনের বিপক্ষে গোল করার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মত উদযাপন করেন। পরবর্তীতে, গত ২৭ নভেম্বর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের সাবেক ফুটবলার রিও ফার্ডিনান্ড তার ইউটিউব চ্যানেলের একটি টক শোতে মেসি গার্নাচোকে ইন্সটাগ্রাম থেকে আনফলো করেছেন বলে গার্নাচো তাকে (রিও ফার্ডিনান্ড) জানিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। তার উক্ত মন্ত্যবের প্রেক্ষিতে, ‘গত ২৬ নভেম্বর এভারটনের বিপক্ষে গোল করার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মত উদযাপন করার জন্য লিওনেল মেসি গার্নাচোকে ইনস্টাগ্রাম থেকে আনফলো করেছেন’ দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টের মাধ্যমে গার্নাচোর ভাই জানায়, লিওনেল মেসিকে কখনো ফলো বা অনুসরণ করেননি। পরবর্তীতে রিও ফার্ডিনান্ড গার্নাচোর ভাইয়ের এক্স পোস্টের কমেন্টে উক্ত বিষয়টি তিনি মজার ছলে বলেছেন বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানেও দেখা যায়, লিওনেল মেসি তার ইনস্টাগ্রাম থেকে গত ২৬ নভেম্বরের পর থেকে কোনো অ্যাকাউন্ট আনফলো করেননি বরং দুইটি অ্যাকাউন্টে ফলো দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও লিওনেল মেসি আলেজান্দ্রো গার্নাচোকে ইনস্টাগ্রামে আনফলো করেছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তা মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, গোল করার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মত উদযাপন করায় নিজ দেশের ফুটবলার আলেজান্দ্রো গার্নাচোকে লিওনেল মেসি ইনস্টাগ্রামে থেকে আনফলো করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, দেশের অসংখ্য মুঠোফোন ব্যবহারকারী একটি খুদে বার্তা পেয়েছেন। ফেসবুকে এ সংক্রান্ত খুদে বার্তাটির স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন বহু মানুষ। রিউমর স্ক্যানার টিম ফেসবুক মনিটরিং টুল এবং ম্যানুয়াল পর্যবেক্ষণে দেখেছে, খুদেবার্তাটির ভাষা প্রায় একই রকম যাতে লেখা রয়েছে, “Dear, you have successfully passed interview. Give me reply today to receive 2000TK,Click: https://wa.me/8801331630313 “
এই খুদেবার্তাটি একেকজন একেক ফোন নাম্বার থেকে পেয়েছেন। কিন্তু টাকার পরিমাণটি একই উল্লেখ রয়েছে৷
Screenshot collage: Rumor Scanner
রিউমর স্ক্যানার টিমের কাছে এই বিষয়ে অসংখ্য জিজ্ঞাসা এবং এই অফারের সত্যতা জানতে চেয়ে মেসেজ আসার পর আমরা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করি৷
আমরা এই খুদেবার্তা পাওয়া এবং পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ধাপগুলো অনুসরণ করা এক ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছি। গত ১৫ নভেম্বর তিরা মোস্তফা নামে ওই নারীর কাছে একই খুদেবার্তা আসে +8801758861759 নাম্বার থেকে।
Screenshot: Tira Mustafa
আমরা নাম্বারটি যাচাই করে দেখেছি, এটি কোনো একটি সি-ফুড রেস্টুরেন্টের Santos, Bruce and Shea নামে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার।
Screenshot: WhatsApp
তিরা বলছিলেন, “সন্দেহ ছিল যে এটা স্ক্যাম, তাও নক দিলাম আমার দ্বিতীয় একটি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার থেকে।”
মেসেজ পাঠানোর পর প্রতিত্তোরে তিরাকে বলা হয়, প্রতিদিন অবসর সময়ে ফেসবুকের নির্দিষ্ট কিছু ভিডিওতে লাইক দেওয়ার বিনিময়ে প্রতি লাইকের বিনিময়ে ৫০ টাকা করে দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় দিনে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব বলেও জানানো হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমকে তিরা বলছিলেন, তাকে শুরুতে তিনটি ফেসবুক ভিডিও লিংক পাঠানো হয়। এই ভিডিওগুলো গত জুনে জার্মানভিত্তিক স্বনামধন্য একটি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছিল।
Screenshot: Tira Mustafa/Whatsapp
তিরা ভিন্ন একটি অ্যাকাউন্ট থেকে লাইক রিয়েক্ট দিলেন ৩টি পোস্টেই। উক্ত ব্যক্তির নির্দেশনা মেনে পাঠালেন এ সংক্রান্ত স্ক্রিনশটও। পরবর্তীতে তিরাকে একটি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট দেওয়া হয়, যার লিংক https://t.me/NuwairaAhamedHridhi। এই লিংকে গিয়ে নির্দিষ্ট জব কোড দেওয়ার পর তাকে ১৫০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়।
Screenshot: Tira Mustafa/Whatsapp
আমরা অ্যাকাউন্টটি যাচাই করে দেখেছি, এটি এখন আর সচল নেই। তিরা আমাদের কাছে বিকাশ পেমেন্টের স্ক্রিনশটটিও পাঠিয়েছেন। তাকে 01932831884 এই নাম্বার থেকে বিকাশ করা হয়েছিল।
আমরা নাম্বারটি ট্রু-কলারে যাচাই করে দেখেছি, এটি উজ্জ্বল (Ujjal) নামে কোনো এক ব্যক্তির নামে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফেসবুকে চলতি বছর এমন আরো কিছু অফার সংক্রান্ত একাধিক পোস্টে (১, ২, ৩) একই নাম্বার ব্যবহার করে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করার প্রমাণ মিলেছে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
তিরা রিউমর স্ক্যানার টিমকে বলছিলেন, এরপর তাকে বলা হলো ৩২ টি টাস্ক সম্পন্ন করতে পারলে ১৬০০ টাকা পাবেন তিনি। তবে আগে তাকে ইনভেস্ট বা বিনিয়োগ করতে হবে। তিরা তাদের সাথে আর কথোপকথন চালিয়ে যেতে চাননি। টেলিগ্রাম গ্রুপটি থেকে লিভ নিয়ে নেন তিনি।
তিরা বলছেন, এরা শুরুতেই বিনিয়োগের কথা বলে না। টাস্ক দিতে থাকে। এরপর হঠাৎ করে বিনিয়োগ করতে বলে। বিনিয়োগ না করলে প্রতি টাস্কের বিপরীতে ৫০ টাকার পরিবর্তে ২৫ টাকা দেয়। এরপর আবার এভাবে চারটা টাস্ক সম্পন্ন করার পর বিনিয়োগের টাস্ক আসে। তখনও বিনিয়োগ না করলে ২৫ টাকা থেকে টাস্ক প্রতি উপার্জন ৫ টাকায় নেমে আসে। এরপর ওরা বলে, যদি বিনিয়োগ না করি তাহলে সারাদিনে যে টাকা উপার্জন হবে সেটা তারা দেবে না।
তিরা হোয়াটসঅ্যাপের যে স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন তাতে আলোচিত নাম্বারটিতে এক নারীর ছবি দেখা যাচ্ছে। তিরা আমাদের জানিয়েছেন, টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টটিতেও একই ছবি ছিল। আমরা ছবি এবং টেলিগ্রামের অ্যাকাউন্টটির নামের সূত্র (NuwairaAhamedHridhi) ধরে ফেসবুকে এই নামে একই নারীর দুইটি অ্যাকাউন্টের (১, ২) খোঁজ পেয়েছি। এর মধ্যে একটি অ্যাকাউন্টে গত ২২ অক্টোবর আলোচিত ছবিটি প্রকাশ করা হয়।
Screenshot collage: Rumor Scanner
হ্রদি নামের এই নারী চলতি বছর ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তার অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে জানা যাচ্ছে, তিনি প্রায়ই কনটেন্ট প্রমোশনের কাজ করে থাকেন। রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।
এই কেস স্টাডিতে আমরা যে পন্থা অবলম্বন করতে দেখেছি তা যে সকলের ক্ষেত্রেই একইরকম এমন নয়।
ইউটিউবে আমরা গত ০২ নভেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পেয়েছি যেখানে একইরকম আরেকজন ভুক্তভোগীর কেস স্টাডি শেয়ার করা হয়েছে। এই কেস স্টাডিতেও একই পন্থা এমনকি একই নারীর (NuwairaAhamedHridhi) নাম সম্বলিত টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার হতে দেখা গেছে।
Screenshot: YouTube
তবে এক্ষেত্রে ভিন্ন বিকাশ নাম্বার (01878435234) ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করা দেখা যায়, ভুক্তভোগী দুই দফায় (প্রথমে তিন এবং পরে ১৬ হাজার) নির্দেশদাতাকে প্রায় ১৯ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। তৃতীয় টাস্কের অংশ হিসেবে তাকে আরো ৩৪ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। জানানো হয়, এই টাকা পাঠালে তাকে ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু তার কাছে সমপরিমাণ অর্থ না থাকায় তিনি পাঠাতে পারেননি।
রিউমর স্ক্যানার টিমের কাছে আরো একজন ভুক্তভোগী সমজাতীয় প্রতারণায় শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। মাহিন দেওয়ান নামে এই ব্যক্তির কাছে সম্প্রতি একটি ফোনকল আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি মাহিনকে বলেন, তাদের হাতে একটা কাজ আছে। টিকটক আইডি ফলো করলে ২০ টাকা করে দেওয়া হবে। এরপর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে চক্রটির সাথে যোগাযোগ শুরু হয় মাহিনের। হোয়াটসঅ্যাপে মাহিনকে চক্রের অন্য এক সদস্য ল প্লে স্টোরে থাকা নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনের প্রচারণার কাজের অফার দেন। তাদের নির্দেশনা মেনে নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করলে ৫০ টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। মাহিন অ্যাপ্লিকেশনগুলো ইনস্টল করার পর তাকে টাকা পাঠানো হয়। এরপর তাকে ১৭০০ টাকা পাঠাতে বলা হয়। জানানো হয়, এই টাকা পাঠালে তাকে প্রায় ২২০০ টাকা দেওয়া হবে। মাহিন তাদের কথামতো ১৭০০ টাকা পাঠালেও তিনি ২২০০ টাকা পাননি।
সাম্প্রতিক সময়ের এই প্রতারণাগুলোর বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন কাজ শুরু করেছে। সাইবার অপরাধ ইনভেস্টিগেশন বিভাগের এডিসি নাজমুল ইসলাম বলছেন, “ওই চাকরির মেসেজ নিয়ে আমাদের কাছে দু-একটা অভিযোগও এসেছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। হয়তো অচিরেই এই অপরাধীদের শনাক্ত করা যাবে। তার আগে আমরা স্বউদ্যোগী হয়ে সচেতনতা তৈরিরও চেষ্টা চালাচ্ছি-যাতে কেউ এদের ফাঁদে পা না দেয়।”
তাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি সচেতনতামূলক ফেসবুক পোস্টও দেওয়া হয়েছে।
Screenshot: Facebook
এতে লিংকে ক্লিক না করে এসএমএস মুছে ফেলার পরামর্শ যেমন দেওয়া হয়েছে, তেমনই এসএমএস পাঠানো নম্বরগুলোকে ব্লক করে দিতে বলেছে পুলিশ।
অর্থাৎ, মুঠোফোনে খুদেবার্তা এবং সরাসরি ফোনকলের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে চাকরির অফার পেয়েছেন দেশের অসংখ্য মানুষ৷ রিউমর স্ক্যানার টিম এই ধরণের তিনটি প্রতারণার কেস স্টাডি এই লেখায় তুলে ধরেছে। এগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, দৈবচয়নভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে মুঠোফোনে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আয়ের সুযোগের কথা জানিয়ে খুদেবার্তা বা ফোনকল দেওয়া হয়৷ কেউ যদি তাতে সাড়া দেয়, তাকে কিছু টাস্ক দেওয়া হয়। টাস্ক সম্পন্ন হওয়া সাপেক্ষে প্রথমদিকে কিছু অর্থ প্রদান করা হলেও পরবর্তীতে বিনিয়োগ করতে প্রলুব্ধ করা হয় ভুক্তভোগীকে। কেউ সে ফাঁদে পা দিয়ে অর্থ খুইয়ে প্রতারিত হওয়ার প্রমাণও মিলেছে। তবে পুলিশ এ বিষয়ে কাজ করছে এবং অচিরেই এই অপরাধীদের শনাক্ত করা যাবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাকিব আল হাসান মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর সাকিবকে নিয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।
একই ভিডিও নিয়ে টিকটকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাকিব আল হাসানের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা এই ব্যক্তি সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর নয় বরং ভিন্ন এক ব্যক্তি নিজেকে সাইফুজ্জামান শিখর হিসেবে দাবি করে উক্ত মন্তব্য করে মজার ছলে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করেছেন।
গুজবের সূত্রপাতঃ অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে উক্ত ভিডিওটি নিয়ে গাজীপুর টিভি – Gazipur TV নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৬ নভেম্বর ‘মাগুরা ১ এর বর্তমান এমপি সাইফুজ্জামান শিখর যা বলেন সাকিব সম্পর্কে মনে মনে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, নিজেকে সাইফুজ্জামান শিখর হিসেবে দাবি করা এক ব্যক্তি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে সাকিব আল হাসানের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
Screenshot: Facebook
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত এই ভিডিওটিতে প্রদর্শিত বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তি আসল সাইফুজ্জামান শিখর নয়। ভিডিওটিতে উক্ত ব্যক্তির একপাশে সাকিব আল হাসান এবং অন্য পাশে যে ব্যক্তি রয়েছেন তিনি আসল সাইফুজ্জামান শিখর। তবে ভিডিওটিতে নিজেকে শিখর দাবি করে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনাকারী ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে উক্ত ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে সেখানে একই ব্যক্তির বিভিন্ন ইস্যুতে আরও কিছু সার্কাজম বা কমেডিধর্মী ভিডিও (১, ২, ৩) খুঁজে পাওয়া যায়। ফলে নিশ্চিত হওয়া যায়, এই ব্যক্তিই আলোচিত ভিডিওটির নির্মাতা এবং তিনি বিভিন্ন বিষয়ে সার্কাজম বা কমেডিধর্মী ভিডিও তৈরি করেন।
ভিডিওটির কমেন্টবক্স পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে অধিকাংশ ফেসবুক ব্যবহারী উক্ত ব্যক্তিকে আসল সাইফুজ্জামান শিখর ভেবে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। এমন কয়েকটি মন্তব্য দেখুন।
Comment Collage by Rumor Scanner
অর্থাৎ, মজার উদ্দেশ্যে তৈরি উক্ত ভিডিওটি পরবর্তীতে বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে আজ ৩০ নভেম্বর মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম বাংলানিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ‘শিখরকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন সাকিব’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: banglanews24
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সাকিব আল হাসান মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উক্ত আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর।
তাছাড়া, এর আগে গত ২৭ নভেম্বর মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে ‘সাকিবের পক্ষে সবাইকে মাঠে নামতে বললেন শিখর’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিজে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তার বর্তমান সংসদীয় আসন (মাগুরা-১) থেকে সাইফুজ্জামান শিখর নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে দলের সবাইকে মাঠে নামতে বলেছেন।
অর্থাৎ, মাগুরা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও তিনি দল মনোনীত প্রার্থী সাকিব আল হাসানকে জয়ী করার লক্ষ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের কাজ করতে বলেছেন। তাছাড়া সাকিব আল হাসানের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে তার উপস্থিতিও প্রমাণ করে তিনি দলীয় প্রার্থী সাকিব আল হাসানের পক্ষেই রয়েছেন।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত উক্ত আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা কিংবা সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে এক ব্যক্তি নিজেকে মাগুরা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর হিসেবে দাবি করে মজার ছলে উক্ত আসন থেকে শিখরের মনোনয়ন না পাওয়া এবং রাজনীতির মাঠে না থেকেও সাকিব আল হাসানের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করে একটি ভিডিও তৈরি করেন। পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি ইন্টারনেটে বাস্তব দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে মাগুরা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি বরং তিনি সাকিব আল হাসানকে বিজয়ী করতে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে নামতে বলেছেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৬ নভেম্বর ২৯৮ আসনে নৌকা প্রতীকের চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এতে দলটির প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েন মাগুরা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর। তার পরিবর্তে উক্ত আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিশ্বকাপে ব্যর্থতার দায়ে সাকিব হেনস্তার শিকার দাবিতে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও বিকৃত করে প্রচার করা হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, নিজে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে উক্ত আসনে সাকিব আল হাসানের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
টিকটিকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রচারিত বক্তব্যটি ২০০১ সালের নয় বরং ২০১৭ সালের বেগম খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের আলাদা সময়ের খণ্ড খণ্ড অংশের মন্তব্য সংযুক্ত করে বিকৃত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।
মূলত, ২০১৭ সালের পহেলা জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট মিলনায়তনে ছাত্রদল আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটি দীর্ঘ বক্তব্য দেন। উক্ত বক্তব্যে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ সরকারকে ইঙ্গিত দিয়ে করা সমালোচনা সূচক মন্তব্যের দুটি আলাদা সময়ের খণ্ড খণ্ড অংশকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সংযুক্তের মাধ্যমে বিকৃত আকারে বিভ্রান্তিকর শিরোনামে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই ভিডিও ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সংসদ সদস্য (এমপি) ডা. মুরাদ হাসান এবং চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সাথে সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানের এই ছবিটি বাস্তব নয় বরং স্বামী রাকিব সরকারের মাহির তোলা একটি ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে রাকিবের মুখমণ্ডলের স্থলে ডা. মুরাদ হাসানের মুখমণ্ডল জুড়ে দিয়ে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চ করে সিনে বাংলা জগৎ নামক ফেসবুক গ্রুপে গত ৩১ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্টের সংযুক্ত ছবির সাথে উক্ত আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
পরবর্তীতে, অনুসন্ধানে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৩০ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, সেদিন মাহিয়া মাহি এবং রাকিব সরকারের ছেলে ফারিশ’র মুখে ভাত অনুষ্ঠান উপলক্ষে তোলা কিছু ছবি প্রকাশ করেন। উক্ত ফেসবুক পোস্টের সাথে সংযুক্ত কিছু ছবিতে মাহিয়া মাহি এবং তার স্বামী রাকিব সরকারের পোশাকের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
এছাড়া মাহিয়া মাহির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৩০ সেপ্টেম্বরে পোস্টকৃত ছবি গুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে ছবি গুলোর নিচের দিকে কার্টেসী হিসেবে Shahriar Tamim শীর্ষক ওয়াটার মার্ক লক্ষ্য করা যায়।
Photo: Facebook
পরবর্তীতে এই ওয়াটার মার্কের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Photography by Shahriar TAmim নামের ফেসবুক পেজে গত ১২ নভেম্বর প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
উক্ত ফেসবুক পোস্টের সাথে সংযুক্ত মাহিয়া মাহি এবং রাকিব সরকারের ছেলে ফারিশ’র মুখে ভাত অনুষ্ঠানের বেশ কিছু ছবির পাশাপাশি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির আসল ছবিটিও খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত, গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি এবং রাকিব সরকারের ছেলে ফারিশ’র মুখে ভাত অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানের ফটোগ্রাফি করেন শাহরিয়ার তামিম নামের একজন ফটোগ্রাফার। পরবর্তীতে শাহরিয়ার তামিম তার ফেসবুক পেজ Photography by Shahriar TAmim এ মাহিয়া মাহি এবং রাকিব সরকারের ছেলে ফারিশ’র মুখে ভাত অনুষ্ঠানের কিছু ছবি প্রকাশ করেন। তবে সম্প্রতি, সেই অনুষ্ঠানে তোলা মাহিয়া মাহি এবং তার স্বামী রাকিব সরকারের একসাথে তোলা ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে রাকিব সরকারের মুখমণ্ডল বাদ দিয়ে তাতে সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানের মুখমণ্ডল যুক্ত করে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সাথে সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানের ছবি দাবিতে ইন্টারনেট প্রচারিত এই ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।
সিলেটে গত ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট। টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম ইনিংসে গতকাল বোলিং করতে এসে উইকেট পেয়েছেন বাংলাদেশের মুমিনুল হক। ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, মুমিনুল ৯ বছর পর টেস্টে উইকেট পেয়েছেন। ফেসবুকের কিছু পোস্টে এমনও দাবি করা হয়েছে যে, তিনি ৯ বছর পর টেস্টে বোলিং করেছেন।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন আজকের পত্রিকা।
তাছাড়া, গতকাল মুমিনুল উইকেট পাওয়ার পর টেলিভিশন কমেন্ট্রিতে ধারাভাষ্যকারও দাবি করেন, মুমিনুল ৯ বছর পর বোলিং করেছেন।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মুমিনুল ৯ বছর পর টেস্টে উইকেট পেয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং ২০২২ সালের জানুয়ারিতেও তিনি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই টেস্টে এক উইকেট পান।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট Howstat এ মুমিনুল হকের প্লেয়ার প্রোফাইল থেকে জানা যাচ্ছে, মুমিনুল সর্বশেষ গত এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে বোলিং করেছিলেন। সেই ম্যাচে এক ওভার বোলিং করে কোনো উইকেট পাননি তিনি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, টেস্টে মুমিনুল সর্বশেষ উইকেট পেয়েছেন ২০২২ সালে জানুয়ারিতে। ক্রাইস্টচার্চে সেবার দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৩ ওভার বোলিং করে এক উইকেট পান তিনি।
অর্থাৎ, ৯ বছর পূর্বে নয়, মুমিনুল টেস্টে উইকেট পেয়েছেন গত বছরই৷
মূলত, সিলেটে গত ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম ইনিংসে বোলিং করতে এসে উইকেট পান বাংলাদেশের মুমিনুল হক। এ বিষয়ে কতিপয় গণমাধ্যমে মুমিনুল ৯ বছর পর টেস্টে উইকেট পেয়েছেন এবং ফেসবুকের কিছু পোস্টে তিনি ৯ বছর পর টেস্টে বোলিং করেছেন শীর্ষক দাবি করা হয়৷ তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। মুমিনুল সর্বশেষ গত এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে বোলিং করলেও কোনো উইকেট পাননি তিনি। টেস্টে মুমিনুল সর্বশেষ উইকেট পেয়েছেন ২০২২ সালে জানুয়ারিতে।
প্রসঙ্গত, মুমিনুল ওডিআই ক্রিকেটে সর্বশেষ উইকেট পেয়েছেন ২০১৪ সালে, পাকিস্তানের বিপক্ষে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মুমিনুলের কোনো উইকেট নেই।
সুতরাং, গেল বছর টেস্টে উইকেট পেলেও মুমিনুল ৯ বছর পর টেস্টে উইকেট পেয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওতে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিএনপি ছেড়ে দিয়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন চাওয়া নিয়ে এই মন্তব্যটি করেননি বরং দেশটিভির “দেশ সাম্প্রতিক” একটি টকশোতে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে রুমিন ফারহানার করা দীর্ঘ মন্তব্যের একটি ছোট অংশ কেটে উক্ত ভিডিওটি তৈরী করা হয়েছে।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটিতে “বাংলা পলিটিক্স” লিখা একটি লোগো রয়েছে। সেই লোগো’র সূত্র ধরে Bangla Politix নামক ফেসবুক পেজটিতে গত ২৮ নভেম্বর “বিএনপির সাথে বেইমানী করলো রুমিন ফারহানা” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি রিল ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়াও, পেজটির ক্যাটেগরি সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, এটি একটি কমেডি পেজ। বিভিন্ন সময়ে এই পেজটি থেকে বিভিন্ন কমেডিধর্মী পোস্ট প্রচার করতে দেখা যায়।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, এই পেজটি থেকে আলোচিত ভিডিওটি ব্যাঙ্গাত্মক হিসেবে প্রথমে প্রচার হয় এবং পরবর্তীতে তা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে রুমিন ফারহানার মূল বক্তব্যটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধান করে বেসরকারি টেলিভিশন দেশটিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ নভেম্বর “বিএনপি চাইলে কি এখন নির্বাচনে আসতে পারবে?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি টকশো খুঁজে পাওয়া যায়।
৩৮ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের টকশোটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০ মিনিটে সঞ্চালক ‘এমন অভিযোগ তো আপনাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে যে ২০১৮ তে আপনারা ৮০ আসন ভাগাভাগির একটি নির্বাচনে গিয়েছিলেন’ শীর্ষক একটি প্রশ্ন করেন। এই প্রশ্নের জবাবে রুমিন ফারহানা বলেন, ৮০ আসন ভাগাভাগির আপনি প্রমাণ দেন।…প্রত্যেকটা গণমাধ্যম দেখেন একদম কে কী বলছে কোট করে দিচ্ছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি আমাকে তিনটা আসন দিতে হবে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে রশা করেছি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটা ছেড়ে দেবে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে রশা করেছি আমাকে পাঁচটা দেওয়া হবে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি আমাদের প্রধান বিরোধী দল করতে হবে। আর কী চান?এরকম একটা নিউজ আমাদের দেখাতে পারবেন বা একটা উক্তি আমাদের নেতাদের সেই সময়কার?
অর্থাৎ, রুমিন ফারহানার এই দীর্ঘ মন্তব্যের একটি অংশ কাট করে বিকৃতভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, গত ২৫ নভেম্বর বেসরকারি টেলিভিশন দেশটিভির ইউটিউব চ্যানেলে “বিএনপি চাইলে কি এখন নির্বাচনে আসতে পারবে?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি টকশোতে রুমিন ফারহানা উপস্থিত ছিলেন। সেই টকশোতে সরকারের সাথে ভাগাভাগি করে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অভিযোগ প্রসঙ্গে সঞ্চালকের করা প্রশ্নের জবাবে রুমিন ফারহানা সঞ্চালকের কাছে উক্ত দাবির প্রমাণ দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন। সম্প্রতি রুমিন ফারহানার এই পাল্টা প্রশ্ন করার একটি অংশ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কাট করে “রুমিন ফারহানা বিএনপি ছেড়ে দিয়ে শেখ হাসিনা’র কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নির্বাচনের কথা বলেছেন।” শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বক্তব্য বিকৃত করে ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, “বিএনপির সাথে বেইমানী করলো রুমিন ফারহান” শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেট প্রচারিত এই ভিডিওটি বিকৃত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতীয় ভিসা বন্ধ করা হয়নি বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে বিষয়টি যাচাইয়ে বাংলাদেশের ভারতীয় হাই কমিশনের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা বন্ধের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: High Commission of India, Bangladesh
তাছাড়া, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা, বন্ধ বা স্থগিতের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Ministry of External Affairs India
এছাড়াও, ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টার এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে দেখা যায়, ভিসা আবেদন পক্রিয়া পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা বন্ধের কোনো তথ্য সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Indian Visa Application Center, Bangladesh
পাশাপাশি, গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য অন্যকোনো সূত্রে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা বন্ধ, নিষেধাজ্ঞা কিংবা স্থগিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ১৯ নভেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিত ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয় ভারত। সে ম্যাচে বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকদের একাংশের ভারতের পরাজয়ে উল্লাস করার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ভারতে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ভারতীয়দের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা বন্ধের দাবি জানান। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ভারত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা ও পাসপোর্ট বন্ধ করে দিয়েছে’ শীর্ষক দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে এধরণের কোনো ঘোষণা আসেনি।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেটে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের নিষিদ্ধের গুজব প্রচার করা হলে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারত ভিসা ও পাসপোর্ট বন্ধ করে দিয়েছে শীর্ষক তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
High Commission of India, Bangladesh: https://www.hcidhaka.gov.in/
Ministry of External Affairs India: https://www.mea.gov.in/