Home Blog Page 543

প্রতিবছর ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করছে দাবিতে আল-জাজিরার বরাতে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার

সম্প্রতি, আল-জাজিরার বরাত দিয়ে ‘প্রতিবছর ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করে’ দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানারে অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতি বছর ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করছে দাবিতে আল-জাজিরা কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বরং লিবিয়ার শরীয়াহ্ আইন বিষয়ক সভাপতি আহমেদ আল কাতানি আল-জাজিরাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে কোনোরকম তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত বিষয়টি উল্লেখ করেন। সম্প্রতি তার ঐ মন্তব্যকে আল-জাজিরার প্রতিবেদন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই, কাতার ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আল-জাজিরার ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু, আল-জাজিরার ওয়েবসাইটে(হাইপারলিংক) অনুসন্ধান চালিয়ে উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

উপরন্তু, আল-জাজিরার ওয়েবসাইটে ২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রকাশিতএকটি সাক্ষাৎকারের ওয়েব আর্কাইভ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত আর্কাইভ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাক্ষাৎকারটি আহমেদ আল কাতানি নামের জনৈক ইসলামিক স্কলারের। যিনি লিবিয়ার শরীয়াহ্ আইন বিষয়ক সভাপতি ছিলেন। ইংরেজিতে অনূদিত সেই সাক্ষাৎকার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে আলোচক আহমেদ আল কাতানি অফ্রিকার ক্রিশ্চিয়ানাইজেশনের বিষয়ে বলেন, “প্রতি ঘন্টায় ৬৬৭ জন মুসলমান খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে। প্রতিদিনের হিসেবে এই সংখ্যাটা ১৬০০০ আর প্রতি বছরের হিসেবে সেটা ৬ মিলিয়ন!”

Source: Aljazeera Archive

কিন্তু, আহমেদ আল কাতানি তার উক্ত দাবির স্বপক্ষে কোনরকম তথ্যসূত্র উল্লেখ্য করেননি। এছাড়াও, আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে উক্ত ওয়েবপেজটি আলজাজিরার নিজস্ব কোনো প্রতিবেদন নয়; একটি সাক্ষাৎকার মাত্র। অর্থাৎ, আলজাজিরা উক্ত দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে যে দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে সেটি সঠিক নয়। 

পরবর্তীতে, প্রতিবছর ঠিক কত সংখ্যক মানুষ ইসলাম ত্যাগ করেন সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু, আফ্রিকা অঞ্চলের ঠিক কতসংখ্যক মানুষ প্রতিবছর ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে এ বিষয়ক কোনো গবেষণা প্রতিবেদন, সমীক্ষার ফলাফল কিংবা নির্ভরযোগ্য তথ্য ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে, পিউ রিসার্চ সেন্টারের ওয়েবসাইটে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ধর্মীয় বিশ্বাস পরিবর্তন বিষয় একটি তথ্যচিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা চিত্র অনুসারে বর্তমান পৃথিবীতে খ্রিস্টান ধর্মের তুলনায় ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০৬০ সাল নাগাদ মুসলিমদের সংখ্যা খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদের ছাড়িয়ে যাবে।

Source: Pew Research Center

পাশাপাশি, ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট পলিটিফ্যাক্ট পিউ রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র ডেমোগ্রফার ও সহযোগী পরিচালক Conrad Hackett এর বরাত দিয়ে জানায়, ঠিক কত সংখ্যক লোক আফ্রিকা অঞ্চলে মুসলিম থেকে খ্রিস্টান হচ্ছে এ বিষয়ক কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

Source: Politifact

অর্থাৎ, ঠিক কতসংখ্যক মানুষ প্রতিবছর ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হন সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট সমীক্ষা কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। এছাড়াও, আলজাজিরার যে সাক্ষাৎকার থেকে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে সেটি আলজাজিরার কোনো প্রতিবেদন নয়; সেটি একটি সাক্ষাৎকার মাত্র। উপরন্তু, উক্ত দাবির সমর্থনে আলোচক কোনো সূত্রের উল্লেখ করেননি। এছাড়াও, যে সাক্ষাৎকার থেকে আলোচ্য দাবিটি ছড়িয়েছে সেটি প্রায় ২৩ বছর পুরোনো। অর্থাৎ, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে উক্ত পরিসংখ্যানটি অপ্রাসঙ্গিক।

মূলত, কাতারভিত্তিক রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার ২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর গৃহীত একটি সাক্ষাৎকারে লিবিয়ার শরীয়াহ্ আইন বিষয়ক সভাপতি আহমেদ আল কাতানি কোনরকম তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবি করেন যে আফ্রিকা অঞ্চলে প্রতিবছর ৬ মিলিয়ন মুসলিম ইসলাম ত্যাগ করছে। পরবর্তীতে, তার সাক্ষাৎকারের এই অংশকে আলজাজিরার প্রতিবেদন দাবি করে ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আলজাজিরা উক্ত দাবিতেকোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। উপরন্তু, কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র উক্ত দাবিকে সমর্থন করে না। 

প্রসঙ্গত, পূর্বেও ধর্মীয় বিষয়ে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে উদ্ধৃত করে আফ্রিকা অঞ্চলে প্রতিবছর ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র 

পৃথিবীর সবাই একসাথে লাফ দিলে কি পৃথিবীর তাপমাত্রা কমবে?

0

গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিঃসন্দেহে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সংকটগুলোর একটি। পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান এই তাপমাত্রা রোধের উপায় নিয়ে বিশ্বব্যাপী সভা-সেমিনার-আলোচনাও কম হচ্ছে না। তবে আজ জানবো ভিন্ন গল্পের কথা। কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন লাফ দিয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানো সম্ভব। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, প্রতিবছর ২০ জুলাই পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানোর জন্য পৃথিবীব্যাপী “বিশ্ব লাফ দিবস” পালিত হয়।

ধারণাটির প্রথম উদ্ভব ঘটে Torsten Lauschmann নামক একজন ইউরোপীয় শিল্পীর হাত ধরে। তিনি ধারণা করেছিলেন, পৃথিবীর সব মানুষ যদি একই সময়ে লাফ দেয় তবে পৃথিবীর কক্ষপথ সূর্যের থেকে দূরে সরে যাবে। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হাত থেকে রক্ষা পাবে পৃথিবী। এ লক্ষ্যে Torsten Lauschmann প্রথমে একটি ওয়েবসাইট চালু করেন। সে ওয়েবসাইটে তিনি ৬০০ মিলিয়নেরও বেশি রেজিস্ট্রার্ড জাম্পার যুক্ত করতে সক্ষম হন। অবশেষে, ২০০৬ সালের ২০ জুলাই প্রথমবারের মত World Jump Day বা বিশ্ব লাফ দিবস উদযাপিত হয়। এরপর থেকে প্রতিবছরই ২০ জুলাই বিশ্বব্যাপী ‘জাম্প ডে’ বা লাফ দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে।

Source: National Day Calendar

অর্থাৎ, বিশ্ব লাফ দিবসের উদ্দেশ্য হল বৈশ্বিক জলবায়ুর অসহিষ্ণু অবস্থা থেকে উত্তরণ পাওয়া। কিন্তু, কিভাবে সম্ভব হবে সেটি?

ন্যাশনাল টুডের তথ্যমতে, জাম্প ডে’র স্বপক্ষের ব্যক্তিরা বিশ্বাস করেন যে পৃথিবীর সব মানুষ যদি একত্রে লাফ দেয় তাহলে পৃথিবীর কক্ষপথ কিছুটা সরে যাবে। ফলে, সূর্যের সাথে পৃথিবীর দূরত্ব বৃদ্ধি পাবে। এই বর্ধিত দূরত্বের ফলে পৃথিবীর উপর সূর্যের তাপও কমে যাবে খানিকটা। এভাবেই, পৃথিবীর কক্ষপথ পরিবর্তনের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা থেকে মুক্তি মিলবে পৃথিবীর!

Source: National Today

লাফ দিয়ে কী পৃথিবীর কক্ষপথ বদলানো সম্ভব?

এবার আমরা বেশকিছু বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং হিসাব নিকাশের সাহায্যে দেখার চেষ্টা করব লাফিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিবর্তন করা সম্ভব কি না।

কোনো ব্যক্তি যদি পৃথিবী থেকে লাফিয়ে উপরে ওঠে তবে তত্ত্বীয়ভাবে তিনি লাফিয়ে ওঠার পূর্বে পৃথিবীপৃষ্ঠে বল প্রয়োগ করেন। অন্যভাবে বললে, পৃথিবীকে নিজের বিপরীত দিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন! কিন্তু, একজন মানুষের ভর পৃথিবীর তুলনায় এতটাই নগন্য যে পৃথিবীর সরণ ঘটানোর জন্য তা একেবারেই অপ্রতুল। কিন্তু, কি হবে যদি পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষ একই সাথে লাফ দেন? যদি পৃথিবীর সব মানুষের গড় ভর ৫০ কেজি ধরে নেওয়া হয় তবে মোট ভরের পরিমাণ হবে ৩৫ হাজার কোটি কেজি। সংখ্যাটা নেহায়েত ছোট নয়। কিন্তু পৃথিবীর ভরের(5.9×10²⁴kg) তুলনায় সেটা অতি নগন্যই। তবে, পৃথিবীর সব মানুষ একসাথে লাফ দিলে যে বল পৃথিবীর উপর প্রযুক্ত হবে তার মান নগন্য হতে পারে তবে নিশ্চিতভাবে শুন্য নয়! এর অর্থ, পৃথিবীর সকল মানুষ একত্রে লাফ দিলে পৃথিবীর অতি নগণ্য পরিমাণ হলেও সরণ হবে!

তাহলে, তো বৈজ্ঞানিকভাবে লাফিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথ সরানো সম্ভব! কিন্তু বিষয়টি আসলে মোটেও এমন নয়। এবার সে বিষয়ে আগোনো যাক।

যেহেতু আমরা অতি নগণ্য হিসেব নিয়েই আলোচনা করছি সুতরাং মান শুন্য নয় এমন সবকিছুই আমাদের হিসেবে থাকবে। যেহেতু, ৭০০ বিলিয়ন মানুষ লাফিয়ে উঠার ফলে পৃথিবী নগন্য হলেও বল প্রাপ্ত হয় সুতরাং সে আলোচনাও আমরা করব। 

যদি পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৭০০ বিলিয়ন ব্যক্তি একত্রে লাফিয়ে ওঠে তবে পৃথিবীর কি ন্যূনতম সরণ ঘটবে? এর উত্তর হচ্ছে না। এক বিন্দুও না! এর কারণ, পৃথিবীপৃষ্ঠ ব্যাপী মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছে। যেহেতু পৃথিবী গোল এবং পৃথিবীর সব মানুষ একই সাথে লাফ দিচ্ছে সুতরাং, আপনি যে স্থানে লাফ দিচ্ছেন পৃথিবীর ব্যাস বরাবর তার বিপরীত স্থানেও কেউ না কেউ লাফ দিচ্ছে সেটা ধরে নেওয়াই যায়। আর আপনি লাফ দেওয়ার ফলে, পৃথিবীকে যেদিকে সরানোর চেষ্টা করছেন আপনার বিপরীতে থাকা ব্যক্তি ঠিক তার বিপরীত দিকে পৃথিবীকে সরাতে চাইছে। আরও সহজভাবে বললে বাংলাদেশ যেহেতু আমেরিকার একেবারে বিপরীত দিকে অবস্থান করছে সেহেতু আপনার লাফ দিয়ে পৃথিবীকে যেদিকে সরাতে চাইছেন, আমেরিকায় লাফ দেওয়া একজন ব্যক্তি তার বিপরীত দিকে সরানোর চেষ্টা করছে। ফলে, পৃথিবীর উপর আপনার এবং তার প্রযুক্ত বল পরস্পর কাটাকাটি হয় যাচ্ছে! পৃথিবীর এমনিতেও যে নগন্য বল অনুভব করার কথা সেটিও আর হচ্ছে না! অর্থাৎ, নিজ নিজ স্থানে থেকে যদি পৃথিবীর ৭০০ বিলিয়ন মানুষ একইসাথে লাফ দেয় তবুও পৃথিবীর উপর নিট প্রযুক্ত বলের কোনো  কোনো তারতম্য ঘটবে না। সুতরাং, পৃথিবীর কোনো সরণও ঘটবে না।

Source: বিজ্ঞানচিন্তা 

কিন্তু যদি এমন হয় যে, পৃথিবীর সব মানুষ একই স্থান থেকে একই সাথে লাফ দিচ্ছেন? অর্থাৎ, পৃথিবীর সব মানুষ একেবারে লম্বভাবে কিরণ দেওয়া সূর্যের নিচে দাড়িয়ে পৃথিবীকে তার বিপরীত দিকে ঠেলার চেষ্টা করলে কি পৃথিবীর কোনো সরণ ঘটবে? এ প্রশ্নের উত্তরও হলো ‘না’! এক বিন্দুও সরণ ঘটবে না। এবারে বল কাটাকাটি না হলেও সরণ যে ঘটবে না তার কারণ নিউটনের গতির সূত্র! নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুসারে , আপনি লাফ দেওয়ার সময় পৃথিবীর উপরে যে বল প্রয়োগ করছেন, পৃথিবীও আপনার উপর একই পরিমাণ বল প্রয়োগ করছে। ফলে, আপনি লাফ দিলে পৃথিবী সরে যাবে ঠিকই; কিন্তু মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণার একে অপরকে আকর্ষণের সূত্র অনুসারে, আপনি যখন অভিকর্ষের প্রভাবে আবার মাটিতে এসে পড়বেন তত্ত্বীয়ভাবে পৃথিবীও আপনার উপর আছড়ে পড়বে! অর্থাৎ, আপনি লাফ দেওয়ার ফলে পৃথিবীর যা সরণ ঘটেছিল আপনি যে মুহূর্তে ভূমিতে পা রাখবেন ঠিক সেই মুহূর্তেই আপনার প্রদত্ত বলের ফলে পৃথিবীর সরণ শূন্যে নেমে আসবে। এটা যেমন একজন মানুষের ক্ষেত্রে ঠিক। তেমনি পৃথিবীর ৭০০ বিলিয়ন মানুষ একসাথে লাফিয়ে উঠলেও একই ঘটনা ঘটবে। অর্থাৎ, পৃথিবীর সব মানুষ একই স্থান থেকে, একই সময়ে, একই দিকে লাফ দিলেও পৃথিবীর কোনো সরণই ঘটবে না; কারণ পৃথিবীপৃষ্ঠে অবতরণের মুহূর্তেই সৃষ্ট সরণ শুন্য হয়ে যাবে।

Source: West Texus A&M University

অর্থাৎ, পৃথিবীর সব মানুষ একসাথে লাফিয়ে কখনো পৃথিবীর কক্ষপথ পরিবর্তন করতে পারবে না। কিন্তু, যদি ধরেও নেওয়া যায় যে, লাফিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথ একটু একটু করে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে, তবু কি পৃথিবীর তাপমাত্রা কমতো?

সাইন্টিফিক আমেরিকান এর তথ্যমতে, পৃথিবীর কক্ষপথ সূর্যে থেকে ১৪৯.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করছে। সূর্য থেকে এই দূরত্বের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা থাকে গড়ে ১৫°সেলসিয়াস। যদি পৃথিবীর এই গড় তাপমাত্রা আরো ৩° সেলসিয়াস কমাতে হয় তবে পৃথিবীর বর্তমান কক্ষপথকে সূর্য থেকে আরো ৩ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বে নিয়ে যেতে হবে! 5.97×10²⁴kg ভরের পৃথিবীকে সেই দূরত্বে নিয়ে যেতে যে শক্তি প্রয়োজন তার পরিমাণ হলো 5×10³¹ জুল! এটি কত বিপুল পরিমাণ শক্তি সে আন্দাজ যারা করতে পারছেন না তাদের জানিয়ে রাখি বর্তমান পৃথিবীতে উৎপাদিত বার্ষিক সর্বমোট বিদ্যুৎ শক্তির পরিমাণ হলো 10¹⁹ জুল। যা পৃথিবীকে কক্ষপথ সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির মাত্র 0.0000000000002 শতাংশ! অর্থাৎ, এক বছরে পৃথিবীতে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই যদি পৃথিবীর কক্ষপথ সরানোর কাজে লাগানো হয় তবে পৃথিবী মোট দূরত্বের মাত্র 0.0000000000002 শতাংশ অতিক্রম করতে পারবে! 

Source: Scientific American

এছাড়াও, শক্তির বিকল্প উৎস হিসেবে নিউক্লিয়ার এনার্জির ব্যবহার হলে ব্যাপারটি কেমন ঘটবে সে সম্পর্কেও সায়েন্টিফিক আমেরিকানের নিবন্ধ থেকে জন্য যায়। তাদের তথ্যমতে, নিউক্লিয়ার বোম বা পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণে নির্গত শক্তি কাজে লাগিয়ে যদি পৃথিবীকে তার কক্ষপথ থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তবে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ দূরত্ব (৩মিলিয়ন কিলোমিটার) অতিক্রম করতে হলে, ৫০০ বছর ধরে প্রতি সেকেন্ডে একটি করে পারমাণবিক বোমার বিষ্ফোরণ ঘটাতে হবে! 

Source: Scientific American

পাশাপাশি, Science abc এর তথ্যমতে, রকেট উৎক্ষেপনের ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠে যে বলের সৃষ্টি হয় সে বল কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথ সরানোর চেষ্টা করা হলে, ১১ টনের ১ বিলিয়ন রকেট মহাকাশে উৎক্ষেপণের ফলে পৃথিবীর গতি বদলাবে প্রতি সেকেন্ডে ২০ ন্যানোমিটার। এখানে জানিয়ে রাখি, মানুষের একটি চুলের প্রস্থ প্রায় ৮০০০০ ন্যানোমিটার! অর্থাৎ, এক বিলিয়ন রকেট মিলেও পৃথিবীর গতি মানুষের চুলের প্রস্থের সমানও পরিবর্তন করতে পারবে না!

Source: Science abc

অর্থাৎ, লাফ দেওয়ার ফলে যদি পৃথিবীর সরণ ঘটতো; তবুও পৃথিবীর কক্ষপথ কাঙ্ক্ষিত দূরত্বে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। ফলে, বিশ্ব লাফ দিবসের যে মূল উদ্দেশ্য- ‘লাফ দেওয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিবর্তন করে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানো’ সেটি অধরাই থেকে যাবে। সুতরাং, পৃথিবীর সবাই একই সময়ে লাফিয়ে কক্ষপথ পরিবর্তনে মাধ্যমে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানোর ধারণাটি একটি নেহাতই অবৈজ্ঞানিক এবং অবাস্তব ধারণা। 

তথ্যসূত্র

ছবিটি মিজানুর রহমান আজহারীর পুত্রের নয়

0

সম্প্রতি, “যাদের ওয়াজ শুনে আপনার সন্তানকে মাদ্রাসায় পাঠান, তাদের সন্তানরা পড়ে ইংলিশ মিডিয়ামে” শীর্ষক একটি দাবিতে ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর সাথে একটি শিশুর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর পুত্রের দাবিতে প্রচারিত ছবিটি তার পুত্রের নয় বরং ছবিটি নাশীদ শিল্পী গাজী আনাস রওশনের পুত্র শিশুশিল্পী শাবাব বিন আনাসের। 

তথ্যটি যাচাইয়ের জন্য কি ওয়ার্ড সার্চ করে ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি সময় টিভির ওয়েবসাইটে “কে এই মিজানুর রহমান আজহারী?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Somoytv 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মিজানুর রহমান আজহারীর দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। 

পাশাপাশি, একই বছরের ১১ জানুয়ারি জাগোনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে “কে এই মিজানুর রহমান আজহারী?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

এখানেও বলা হয়, ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। 

Screenshot: Jagonews24

এছাড়া, ছবিটির মূল সূত্র খুঁজতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে শিশুশিল্পী শাবাব বিন আনাসের ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে করা একটি পোস্টে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।  

Screenshot: Shabab Bin Anas Post

পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, ‘বাবা এবং Mizanur Rahman Azhari চাচ্চুর সাথে আমি’। 

অর্থাৎ, মিজানুর রহমান আজহারীর সাথে শিশুর ছবিটি তার পুত্র নয়। 

মূলত, ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর সাথে নাশীদ শিল্পী গাজী আনাস রওশনের পুত্র শিশুশিল্পী শাবাব বিন আনাসের তোলা একটি ছবিকে মিজানুর রহমান আজহারীর পুত্র দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া মিজানুর রহমান আজহারীর কোনো পুত্র সন্তান নেই, তিনি দুই কন্যা সন্তানের পিতা।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়লে তা মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর সাথে শিশুর ছবিটি তার পুত্রের শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

বন্ধ নয়, কিছু অংশ ঝাপসা করে দিয়ে ফিলিপাইনে বার্বির প্রদর্শনী চলছে

গত ২৪ জুলাই অনলাইন পোর্টাল ‘ঢাকা পোস্ট’ এ “মুক্তি পেয়েই বক্স অফিস কাঁপাচ্ছে ‘বার্বি’, নিষিদ্ধ একাধিক দেশে!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ফিলিপাইনে হলিউড চলচ্চিত্র ‘বার্বি’ এর প্রদর্শন বন্ধ রয়েছে।

উক্ত দাবিতে ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিপাইনে বার্বি’র প্রদর্শন বন্ধ থাকার তথ্যটি সত্য নয় বরং কিছু অংশ ঝাপসা করে দিয়ে ফিলিপাইনে বার্বির প্রদর্শনী হচ্ছে।

কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধানের মাধ্যমে, ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘The Guardian’ এর ওয়েবসাইটে গত ১২ জুলাই “Philippines allows Barbie film but wants ‘childlike’ map lines blurred” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from The Guardian

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফিলিপাইনের সেন্সরবোর্ড হলিউড চলচ্চিত্র বার্বিতে দেখানো বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরের মানচিত্রের দৃশ্য ঝাপসা করে প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছে।

অনুসন্ধানে ফিলিপাইনের কুইজন শহরের ‘Gateway Cineplex 10’ এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ৩ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Instagram

গেটওয়ে সিনেপ্লেক্সের উক্ত ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বার্বি চলচ্চিত্র ১৯ জুলাই ফিলিপাইনে মুক্তি পাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

গেটওয়ে সিনেপ্লেক্সের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ১৯ জুলাই প্রকাশিত অপর একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, ১৯ জুলাই থেকে হলিউড চলচ্চিত্র বার্বি তাদের থিয়েটরে প্রদর্শন শুরু হয়েছিল।

Screenshot from Instagram

ফিলিপাইনের অপর এক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী প্রতিষ্ঠান ‘Red Carpet Cinemas’ এর ফেসবুক পেজে গত ১৯ জুলাই প্রকাশিত পোস্টের তথ্যানুযায়ী ফিলিপাইনে বার্বি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

Screenshot from ‘Facebook’

মূলত, সম্প্রতি অনলাইন পোর্টাল ‘ঢাকা পোস্ট’ এর একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ফিলিপাইনে হলিউড চলচ্চিত্র ‘বার্বি’ এর প্রদর্শন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, কিছু অংশ ঝাপসা করে দিয়ে ফিলিপাইনে বার্বির প্রদর্শনী চলছে।  

উল্লেখ্য, বার্বি চলচ্চিত্রের ট্রেইলারে দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত মানচিত্র প্রদর্শনের কারণে গত ৩ জুলাই ভিয়েতনাম বার্বি চলচ্চিত্রকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

সুতরাং, ফিলিপাইনে হলিউড চলচ্চিত্র ‘বার্বি’র প্রদর্শনী বন্ধ রয়েছে শীর্ষক একটি দাবি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

সম্প্রতি ঢাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আওয়ামী লীগকে দায়ী করে পুরোনো ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি, “আজকে বাসে কে আগুন দিয়েছে শুনুন তার মুখে। অতিত থেকে শুরু করে আজ অবধি বাংলাদেশে যতগুলো বাস পুড়িয়ে পেলা হয়েছে তার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দায়ী।” শীর্ষক শিরোনামে ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম গুলোতে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

টুইটারে প্রচারিত এমন কিছু টুইট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘বাসে কে আগুন দিয়েছে শুনুন তার মুখে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০১৯ সালে ঢাকায় বাস চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) এর এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে মিশে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে এক যুবককে হাতেনাতে আটক করার ভিডিও।।  

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে  ‘D 24 tv’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ২০ মার্চ তারিখে “ছাত্র সেজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে মিসে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার সময় হাতে নাতে ধরা খেল এই ছাত্রলীগ কর্মী” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from ‘D 24 tv’ Facebook Post 

‘D 24 tv’ নামের উক্ত পেজের ভিডিও থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘BBC News’ এর বাংলা সেকশনে একই বছরের অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ তারিখে “ঢাকায় আবার সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মৃত্যু, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from ‘BBC News’ website 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ সকালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র আবরার আহমেদ রাস্তা পার হতে গিয়ে দুই বাসের মধ্যে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হয়। এ ঘটনার পরপরই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মূল প্রবেশপথের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। 

এছাড়া অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৯ জুলাই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীতে বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগকে দায়ী করে কোনো যুবকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সম্পর্কিত কোনো প্রতিবেদন মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি।

তবে রাজধানীতে গতকালের বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে নিয়ে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ‘মোটরসাইকেলে ৩ যুবক এসে বাসে আগুন দিয়ে চলে যান‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখিত বাস চালকের ভাষ্য অনুযায়ী, তিন যুবক মোটরসাইকেলে করে এসেছিল। তাঁদের কাছে একটি বোতলে পেট্রল ও দেশলাই ছিল। তাঁদের হুমকির পর তিনি (বাসচালক) লাফ দিয়ে নেমে যান। তিনি লাফ দিয়ে বাস থেকে নামার পর ওই যুবকেরা বোতল থেকে বাসের ভেতরে পেট্রল ঢালেন এবং দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেন। এরপর তাঁরা মোটরসাইকেলে করে উল্টো পথ দিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে চলে যান। পরে আশপাশের লোকজন বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

তবে এই প্রতিবেদনে ঐ তিন যুবকের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। 

এছাড়া একই বিষয়ে মূলধারার বাকি সংবাদমাধ্যম গুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও তিন যুবকের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি।

এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন; সমকাল, মানবজমিন, বিডিনিউজ২৪, আরটিভি। 

অর্থাৎ, গত ২৯ জুলাই বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির সময়ে ‘বাসে কে আগুন দিয়েছে শুনুন তার মুখে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

মূলত, গত ২৯ জুলাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকার সব প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে ৭-৮ টি বাসে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। উক্ত ঘটনায় বাসে অগ্নিসংযোগের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে এক যুবকের একটি স্বীকারোক্তি মূলক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি  প্রায় ৪ বছর পূর্বে অর্থাৎ ২০১৯ সালের মার্চ মাসে  ঢাকায় বাস চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে মিশে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে এক যুবককে হাতেনাতে আটক করার ঘটনার। 

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১২ নভেম্বরে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোট ৯টি বাসে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সে সময়ে একই ভিডিওটি (২০১৯ সালে ভাইরাল) ১২ নভেম্বরে রাজধানীতে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় একজনকে আটকসহ ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে প্রচার করা হয়েছিলো। তখন বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ৪ বছর পূর্বে ভিন্ন ঘটনায় ধারণকৃত একটি ভিডিওকে সম্প্রতি ঢাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় যুবকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দাবিতে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

চ্যানেল২৪ এবং প্রথম আলোর বরাতে ছাত্রলীগ কর্তৃক বাসে আগুন ধরানোর ভিত্তিহীন দাবি ফেসবুকে

গতকাল (২৯ জুলাই) রাজধানীতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচী ও যুবলীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে একাধিক বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ফেসবুকে দাবি করা হচ্ছে “ফাঁকা বাস নিয়ে এসে আগুন ধরিয়েছে ছাত্রলীগ” শীর্ষক তথ্য জানিয়ে খবর প্রকাশ করেছে চ্যানেল২৪ এবং প্রথম আলো।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, “ফাঁকা বাস নিয়ে এসে আগুন ধরিয়েছে ছাত্রলীগ” শীর্ষক তথ্য জানিয়ে গতকাল কোনো খবর প্রকাশ করেনি চ্যানেল২৪ ও প্রথম আলো বরং ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুক মনিটরিং টুলস ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি Mo Rahman Masum নামে একটি ফেসবুৃক অ্যাকাউন্ট থেকে ২৯ জুলাই রাত নয়টায় প্রকাশিত এক পোস্টে উক্ত দাবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

জনাব মাসুম তার পোস্টের কমেন্টে লিখেছেন, “এই খবরের লিংক গুলো এখানে কমেন্টে দিবেন প্লিস। আমি টেকনিকাল কারণে দিতেছি না। (বানান অপরিবর্তিত)”

অর্থাৎ, জনাব মাসুম কোনো তথ্যসূত্রের প্রমাণ উপস্থাপন ব্যতীত দুইটি গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করে উক্ত দাবিটি প্রচার করছেন। 

পরবর্তীতে, গতকাল রাজধানীতে বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় (দাবিটি প্রকাশের পূর্বের সময়ের) প্রকাশিত চ্যানেল২৪ এর খবরগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

চ্যানেল২৪ উক্ত ঘটনাগুলোতে যে খবরগুলো প্রকাশ করেছে তার লিংক: 

চ্যানেল২৪ এর প্রতিবেদনে বলা হয়, “দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা-ভৈরব রুটে চলাচল করা তিশা পরিবহনের এই বাসটিতে কে বা কারা আগুন লাগায়।”

প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, “এ সময় আরও কয়েকটি বাসে আগুন লাগানোর চেষ্টা করলেও পুলিশের বাধায় তা পারেনি বিএনপির নেতাকর্মীরা।”

Screenshot source: Channel24

গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদনেই “ফাঁকা বাস নিয়ে এসে আগুন ধরিয়েছে ছাত্রলীগ” শীর্ষক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তবে, ছাত্রলীগ নয়, প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের দায়ী করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে আরো জানতে চ্যানেল২৪ এর সহ-সম্পাদক জাহিদ হাসানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, তারা এ সংক্রান্ত (“ফাঁকা বাস নিয়ে এসে আগুন ধরিয়েছে ছাত্রলীগ” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত) কোনো খবর প্রকাশ করেননি। 

একইভাবে, গতকাল রাজধানীতে বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় (দাবিটি প্রকাশের পূর্বের সময়ের) প্রকাশিত প্রথম আলো’র খবরগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

প্রথম আলো উক্ত ঘটনাগুলোতে যে খবরগুলো প্রকাশ করেছে তার লিংক: 

প্রথম আলোর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে মাতুয়াইলে বাসে অগ্নিকান্ডের বিষয়ে বলা হয়, “‘তাড়াতাড়ি নাম। নইলে তোর শরীরে ঢাইলা দিলাম।’ —এ কথা বলে তিন যুবক বাসে উঠে আগুন দিয়ে চলে যায় বলে জানিয়েছেন আজ শনিবার ঢাকার মাতুয়াইলে অগ্নিসংযোগের শিকার হওয়া তিনটি বাসের একটির চালক। চালকের নাম মো. সানাউল্লাহ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিন যুবক মোটরসাইকেলে করে এসেছিল। তাঁদের কাছে একটি বোতলে পেট্রল ও দেশলাই ছিল। তাঁদের হুমকির পর তিনি (বাসচালক) লাফ দিয়ে নেমে যান।”

পত্রিকাটির এক ভিডিও প্রতিবেদনে বিএনপির এক নেতা অভিযোগ করেন, বাসে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ আগুন দিয়েছে। 

প্রথম আলোর ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদনেই “ফাঁকা বাস নিয়ে এসে আগুন ধরিয়েছে ছাত্রলীগ” শীর্ষক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

এখানে উল্লেখ্য, একইদিনের ঘটনায় “বাসে আগুনের চেষ্টা, ছাত্রলীগের ৩ নেতা-কর্মী আটক” শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত ২০১৪ সালের প্রতিবেদনকে সাম্প্রতিক দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে। 

মূলত, গতকাল (২৯ জুলাই) রাজধানীতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচী ও যুবলীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে একাধিক বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে গতকাল রাতে ফেসবুকের একাধিক পোস্টে দাবি করা হয়, “ফাঁকা বাস নিয়ে এসে আগুন ধরিয়েছে ছাত্রলীগ” শীর্ষক তথ্য জানিয়ে খবর প্রকাশ করেছে চ্যানেল২৪ ও প্রথম আলো। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দুই গণমাধ্যম আলোচিত দাবি উল্লেখ করে কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। 

উল্লেখ্য, গতকাল (২৯ জুলাই) ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচী ও যুবলীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত একাধিক বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অগ্নিকান্ডের শিকার হওয়া বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে তিশা পরিবহন, তুরাগ পরিবহন, স্বদেশ পরিবহন, বিকাশ পরিবহন, ওয়েলকাম পরিবহন। 

প্রসঙ্গত, ঢাকার উত্তরায় দাঁড়িয়ে থাকা ঈগল পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে গতকাল শনিবার রাত ১০টায়। তবে কীভাবে এই আগুন লেগেছে তা জানা যায়নি। 

সুতরাং, চ্যানেল২৪ এবং প্রথম আলো’র বরাতে “ফাঁকা বাস নিয়ে এসে আগুন ধরিয়েছে ছাত্রলীগ” শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র 

ভিক্টর ক্লাসিক বাসে অগ্নিসংযোগের পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক দাবি

গতকাল (২৯ জুলাই) রাজধানীতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচী ও যুবলীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে একাধিক বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনার সাথে ভিক্টর ক্লাসিক নামে একটি গণপরিবহনে আগুন দেওয়ার ছবিকে গতকালের ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।  

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পোস্ট দেখুন ঢাকা প্রকাশ

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও গতকাল (২৯ জুলাই) তার ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক টুইটে একই ছবি ব্যবহার করে ক্যাপশনে এটি গতকালের ঘটনার বলে দাবি করেছেন। 

এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, সদরঘাটে ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনে অগ্নিসংযোগ করেছে বিএনপি নেতা–কর্মীরা। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিক্টর ক্লাসিক বাসে আগুন দেওয়ার ছবিটি গতকালের নয় এবং গতকাল ভিক্টর ক্লাসিকের কোনো বাসও অগ্নিকান্ডের শিকার হয়নি বরং ২০২০ সালে ভিক্টর ক্লাসিক বাসে অগ্নিকাণ্ডের একটি ছবিকে গতকালের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 
 
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source: Kaler Kantho 

কালের কন্ঠের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে রাজধানীতে ১২ নভেম্বর দাঁড়িয়ে থাকা ও চলন্ত ১১টি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ভিক্টর বাসে আগুন দেওয়ার এই ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর প্রগতি সরণির কোকা-কোলা এলাকায়। 

উল্লেখ্য, গতকাল (২৯ জুলাই) ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচী ও যুবলীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে একাধিক বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত (যেহেতু ভিক্টরে অগ্নিকাণ্ডের ছবিটি দিনের) অগ্নিকান্ডের শিকার হওয়া বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে তিশা পরিবহন, তুরাগ পরিবহন, স্বদেশ পরিবহন, বিকাশ পরিবহন, ওয়েলকাম পরিবহন। এসব ঘটনায় ভিক্টর ক্লাসিকের কোনো বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। 

মূলত, গতকাল (২৯ জুলাই) রাজধানীতে বিএনপি ও যুবলীগের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে একাধিক বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ভিক্টর ক্লাসিক নামে একটি গণপরিবহনে আগুন দেওয়ার ছবিকে গতকালের ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। গতকাল ভিক্টর ক্লাসিকের কোনো বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর রাজধানীর প্রগতি সরণির কোকা-কোলা এলাকায় ভিক্টর বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনার ছবিকে গতকালের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, ২০২০ সালে ভিক্টর ক্লাসিক বাসে আগুন দেওয়ার পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায়ের গতকালের আহত অবস্থার ছবি দাবিতে পুরোনো ছবি প্রচার

গতকাল (২৯ জুলাই) রাজধানীতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে ধোলাইখালে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের হাসপাতালে তোলা রক্তাক্ত একটি ছবিকে গতকালের ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আহত অবস্থায় হাসপাতালে তোলা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ছবিটি গতকালের নয় বরং ২০১৮ সালের ছবিটিকে গতকালের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে জাতীয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ছাপা সংস্করণে ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।  

Screenshot source: Jugantor 

একইদিন পত্রিকাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একই খবরেও উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot source: Jugantor

যুগান্তরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেসময় ঢাকা-৩ আসনে বিএনপির গণসংযোগে চলাকালে কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের শুভাঢ্যা বেগুনবাড়ী এলাকায় ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। হামলায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মাথা ফেটে যায়। তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উক্ত ঘটনারই ছবি এটি।

একই খবর ও ছবি প্রকাশ করে অন্য গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ঢাকা টাইমস।

মূলত, গতকাল (২৯ জুলাই) রাজধানীতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ধোলাইখালে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আহত হন। এ বিষয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টে হাসপাতালে তোলা গয়েশ্বর রায়ের রক্তাক্ত একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি গতকালের ঘটনার। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি গতকালের নয়। ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা চলার সময় হামলায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মাথা ফেটে যায়। তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উক্ত ঘটনার এই ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গতকাল (২৯ জুলাই) ঢাকায় বিএনপির শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে ধোলাইখালে অবস্থান কর্মসূচি পালনে গয়েশ্বরের নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের। সেখান থেকে আহত অবস্থায় গয়েশ্বরকে আটক করেছিল পুলিশ। এরপর বিকেলে গয়েশ্বর রায় পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্ত হন।   

সুতরাং, ২০১৮ সালে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের আহত অবস্থায় হাসপাতালে তোলা পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে সাংবাদিকের ওপর পুলিশের হামলা দাবিতে পুরানো ছবি প্রচার

সম্প্রতি, বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির সময়ে ভিডিও করার দায়ে সাংবাদিকের ওপর পুলিশের হামলার দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট  (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।

টুইটারে প্রচারিত এমন একটি টুইট দেখুন (টুইট)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পুলিশ কর্তৃক সাংবাদিককে মারধরের ছবিটি বিএনপির সাম্প্রতিক অবস্থান কর্মসূচির নয়। প্রকৃতপক্ষে ছবিটি ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল নয়াপল্টনে বিএনপির এক কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহকালে পুলিশ কর্তৃক ‘বাংলা টিভি’র প্রতিবেদক আরমান কায়সারকে হেনস্তার ঘটনার।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা ট্রিবিউনে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল ‘DMP chief promises action against police for assaulting journalists UNB’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Dhaka Tribune

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়,  ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপি। সেই কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের তৎকালীন উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন কর্তৃক হেনস্তার  শিকার হন  ‘বাংলা টিভি’র প্রতিবেদক আরমান কায়সার ও ক্যামেরা পারসন মানিক। 

এছাড়া আরেকটি অনলাইন পোর্টাল জাগো নিউজ২৪ এ একইদিনে ‘ডিসি আনোয়ারের শাস্তির দাবিতে ডিএমপি’র গেটে সাংবাদিকদের অবস্থান’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Jago News24

প্রতিবেদনটিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র তৎকালীন কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে সাংবাদিকদের দেওয়া একটি স্মারকলিপিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘নয়াপল্টন এলাকায় বিএনপির মিছিলের সংবাদ সংগ্রহের সময় বাংলা টিভির রিপোর্টার আরমান ও ক্যামেরাপারসন মানিক নির্যাতনের শিকার হন। এতে নেতৃত্ব দেন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন ও তার ফোর্স।’

অর্থাৎ বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির সময়ে ভিডিও করার অভিযোগে সাংবাদিকের ওপর পুলিশের হামলার দাবিতে প্রচারিত ছবিটি পুরানো। 

প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুলাই বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সংগ্রহের সময় দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক সাংবাদিক বীর সাহাবীর মোবাইল কেড়ে নেন ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (পেট্রোল, মতিঝিল) আব্দুল্লাহ আল মামুন। অবশ্য পরে অন্যান্য সাংবাদিকদের অনুরোধে তাকে মোবাইলটি ফেরত দেওয়া হয়।  

মূলত, গত ২৯ জুলাই বিএনপি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকার সব প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। এ কর্মসূচি চলাকালে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই কর্মসূচির সময়ে ভিডিও করার দায়ে সাংবাদিকের ওপর পুলিশের হামলার দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিলে পুলিশ কর্তৃক সাংবাদিক হেনস্তার একটি ঘটনার পুরোনো ছবি।

সুতরাং, বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির সময়ে ভিডিও করার অভিযোগে পুলিশ কর্তৃক  সাংবাদিকের ওপর হামলার দাবিতে একটি পুরানো ছবি প্রচার করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

ইউটিউব ভিউজ ও সাবস্ক্রাইবার অনুযায়ী বৈশ্বিক অবস্থান নিয়ে সময় টিভিতে ভুয়া তথ্য প্রচার

সম্প্রতি, দেশীয় সংবাদমাধ্যম সময় টিভির ২ কোটি সাবসক্রাইবার সম্পন্ন হওয়া উপলক্ষে বেশ কিছু তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রথম দাবি: ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেখা সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেলের মধ্যে ১৪.৩ বিলিয়ন ভিউজ নিয়ে প্রথমে ‘CNN’ এবং ১২.৪ বিলিয়ন ভিউজ নিয়ে ২য় অবস্থানে ‘SOMOY TV’ রয়েছে। 

দ্বিতীয় দাবি: সাবস্ক্রাইবারের হিসাবে সারা বিশ্বের সকল ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে সময়ের অবস্থান এখন ২৩তম। ভিডিও ভিউয়ের হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বের সকল ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে এর অবস্থান ১৭তম।

সময় টিভি

সংবাদভিত্তিক চ্যানেলের মধ্যে সাবস্ক্রাইবার অনুযায়ী বিশ্বে দ্বিতীয় দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন।

পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট  (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)

বিশ্বের সকল ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে সাবস্ক্রাইবার বিবেচনায় ২৩ তম এবং ভিউ বিবেচনায় ১৭ তম দাবিতে সময় টিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন। ২ কোটির মাইলফলকে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেল (আর্কাইভ)

Screenshot taken from Somoy TV YouTube

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেখা সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেলের মধ্যে ভিউজ ভিত্তিতে CNN প্রথম নয় এবং Somoy TV দ্বিতীয় নয়। ভিউজ অনুযায়ী এই দুইটি চ্যানেলের উপরে আরো অনেক সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেল রয়েছে। তাছাড়া, বিশ্বের সকল ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে সাবস্ক্রাইবার বিবেচনায় সময় টিভির ২৩তম হওয়া এবং ভিউ অনুযায়ী ১৭তম হওয়ার দাবিটিও মিথ্যা।

প্রথম দাবি নিয়ে অনুসন্ধান

প্রথম দাবি অর্থাৎ ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেখা সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেলের মধ্যে ভিউজ বিবেচনায় ১৪.৩ বিলিয়ন ভিউজ নিয়ে CNN এর প্রথম অবস্থানে থাকা এবং ১২.৪ বিলিয়ন ভিউজ নিয়ে সময় টিভির দ্বিতীয় অবস্থানে থাকার দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রথমেই আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিসংখ্যান ভিত্তিক প্লাটফর্ম ‘Social Blade’ এর সাহায্য নেই। সোশ্যাল ব্লেড এর ওয়েবসাইট থেকে সংবাদ ভিত্তিক বিভিন্ন চ্যানেলের ইউটিউব প্ল্যাটফর্মের একটি তালিকা খুঁজে পাই আমরা।

Screenshot: Social Blade

সোশ্যাল ব্লেডে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী দেখা যায়, CNN এবং সময় টিভি এর উপরে আরো অনেকগুলো সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেলের ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে যাদের মোট ভিউজ ১৪.৩ বিলিয়নের অধিক।

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিক নিশ্চিতের জন্য সোশ্যাল ব্লেডের তালিকায় থাকা চ্যানেলগুলোর এবাউট সেকশন যাচাই করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, আমাদের এই প্রতিবেদন লেখাকালীন ভারতের হিন্দি ভাষা ভিত্তিক সংবাদ চ্যানেল Aaj Tak এর ইউটিউব চ্যানেলের মোট ভিউজ ২৫ বিলিয়ন ৫৭৯ মিলিয়ন ৬৮৯ হাজার ৭৫০।

Screenshot: Aaj Tak 

একই তালিকায় থাকা ভারতীয় আরেকটি সংবাদ ভিত্তিক গণমাধ্যম Zee News এর ইউটিউব চ্যানেলের মোট ভিউজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চ্যানেলটির মোট ভিউজ ১৭ বিলিয়ন ৩৫ মিলিয়ন ৯৬৮ হাজার ৮৬৭।

Screenshot: Zee News

সোশ্যাল ব্লেডের একই তালিকায় থাকা India TV এবং Fox News এর ইউটিউব চ্যানেলও যাচাই করি আমরা। সেখানে ইন্ডিয়া টিভির মোট ভিউজ ১৬ বিলিয়ন ৩১৬ মিলিয়ন ২৮৯ হাজার ৫৬৮ এবং ফক্স নিউজের মোট ভিউজ ১৪ বিলিয়ন ৯৩ মিলিয়ন ৫৬ হাজার ৬৭০।

অর্থাৎ, প্রথম দাবি বা ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেখা সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেলের মধ্যে ভিউজ অনুযায়ী সিএনএনসময় টিভি যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে CNN এবং সময় টিভির চেয়ে অধিক ভিউজ সম্পন্ন আরো অনেক সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেল রয়েছে।

সময় টিভি কি বিশ্বের সকল ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে সাবস্ক্রাইবার বিবেচনায় ২৩তম এবং ভিউজ অনুযায়ী ১৭তম?

গত ২৫ জুলাই সময় টিভির ওয়েবসাইটে ‘২ কোটির মাইলফলকে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেল’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং উক্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয় ‘সাবস্ক্রাইবারের হিসাবে সারা বিশ্বের সকল ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে সময়ের অবস্থান এখন ২৩তম। ভিডিও ভিউয়ের হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বের সকল ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে এর অবস্থান ১৭তম।

Screenshot: Somoy TV Website

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন।

দ্বিতীয় দাবি নিয়ে অনুসন্ধান

দ্বিতীয় দাবি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা Social Blade এর ওয়েবসাইটে ‘TOP 50 SUBSCRIBED YOUTUBE CHANNELS, SORTED BY SUBSCRIBER COUNT’ শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে খুজে পাই। উক্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সাবস্ক্রাইবারের ভিত্তিতে শীর্ষ ৫০ টি ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে ২৪৬ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার নিয়ে শীর্ষে রয়েছে টি সিরিজ

তাছাড়া, উক্ত তালিকায় ৫০তম বা সর্বশেষ অবস্থানে থাকা সনি মিউজিক ইন্ডিয়া ভেভো এর সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৪৬.৮ মিলিয়ন।

এছাড়া একই ওয়েবসাইটে ‘TOP 50 MOST VIEWED YOUTUBE CHANNELS (SORTED BY VIDEO VIEWS)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ভিউজের ভিত্তিতে তালিকায় থাকা শীর্ষ ৫০ টি ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে এখানেও সময় টিভির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, উক্ত তালিকায় থাকা সর্বশেষ চ্যানেলটির ভিউজ সংখ্যা ২৮ বিলিয়ন ৬৭২ মিলিয়ন ৬৬৬ হাজার ৭৩১। অর্থাৎ, সময় টিভির মোট ভিউজের প্রায় দ্বিগুন।

তাছাড়া, পরিসংখ্যানের এই বিষয়টি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে রিউমর স্ক্যানারের একজন সদস্য উক্ত বিষয়ে প্রথম ফেসবুক পোস্ট করা ব্যক্তি ও সময় টিভির হেড অব ব্রডকাস্ট অ্যান্ড আইটি জনাব সালাউদ্দিন সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের জানান, পরিসংখ্যান ভিত্তিক ওয়েবসাইট Social Blade এর Peoples & Blog ক্যাটাগরিতে সাবস্ক্রাইবার ও ভিউজের ভিত্তিতে চ্যানেলটির অবস্থান যথাক্রমে ২৩তম ও ১৭তম। ওখানে ভুলে সকল ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে লেখা হয়েছে।

পরবর্তীতে সোস্যাল ব্লেড ওয়েবসাইটে পিপলস & ব্লগ ক্যাটাগরিতে সাবস্ক্রাইবারভিউজের ভিত্তিতে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলের অবস্থান যথাক্রমে ২৩তম ও ১৭তম হিসেবে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, সময় টিভি সারাবিশ্বের সকল ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে সাবস্ক্রাইবার বিবেচনায় ২৩তম এবং ভিউ অনুযায়ী ১৭তম নয় বরং Peoples & Blog নামের একটি ক্যাটাগরিতে সাবস্ক্রাইবার ও ভিউজের ভিত্তিতে চ্যানেলটির অবস্থান যথাক্রমে ২৩ ও ১৭ তম।

মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে ইউটিউবে ২ কোটি সাবস্ক্রাইবের মাইলফলক অর্জন করেছে দেশীয় বেসরকারি সংবাদভিত্তিক চ্যানেল সময় টিভি। পরবর্তীতে সময় টিভির বৈশ্বিক অবস্থান সংক্রান্ত দুইটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রথম দাবি অর্থাৎ মোট ভিউজের ভিত্তিতে CNN ও সময় টিভির যথাক্রমে প্রথম এবং দ্বিতীয় হওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। ইউটিউব প্লাটফর্মে গণমাধ্যম দুইটির উপরে আরো কিছু সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেল রয়েছে যাদের মোট ভিউজ তাদের চেয়ে বেশি। দ্বিতীয় দাবি অর্থাৎ সাবস্ক্রাইবার অনুযায়ী সারা বিশ্বের সকল ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে সময় টিভির ২৩তম হওয়ার এবং ভিউজ অনুযায়ী সারাবিশ্বে ১৭তম হওয়ার বিষয়টিও সত্য নয়।

সুতরাং, বিশ্বের সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেলের মধ্যে ইউটিউব ভিউজ অনুযায়ী সময় টিভির দ্বিতীয় হওয়া এবং সাবস্ক্রাইবার ও ভিউজ অনুযায়ী সারাবিশ্বের সকল চ্যানেলের মধ্যে সময় টিভির যথাক্রমে ২৩ ও ১৭ তম হওয়ার দাবিগুলো মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

Social Blade: TOP 100 YOUTUBERS NEWS CHANNELS SORTED BY VIDEO VIEWS

Aaj Tak: Aaj Tak Youtube About 

Zee News: Zee News Youtube about 

India TV: India TV Youtube About

Fox News: Fox News Youtube About

Social Blade: TOP 50 SUBSCRIBED YOUTUBE CHANNELS, SORTED BY SUBSCRIBER COUNT

Social Blade: TOP 50 MOST VIEWED YOUTUBE CHANNELS (SORTED BY VIDEO VIEWS)