Home Blog Page 542

বিপিএলে স্টেডিয়ামের এই ভিডিওতে খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দেননি দর্শকরা

সম্প্রতি শেষ হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) এবারের আসর। এই আসরের একটি ম্যাচ চলাকালীন স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি এই ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার বার। ভিডিওটিতে ৩ হাজার ছয়শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত বিপিএলের একটি ম্যাচের এই ভিডিওতে খালেদা জিয়ার নামে দর্শকরা মাঠে কোনো স্লোগান দেয়নি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় খালেদা জিয়ার নামে দেওয়া ভিন্ন সময়ের স্লোগানের অডিও যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে Wahed Studio নামে একট ইউটিউব চ্যানেলে গত ৮ ফেব্রুয়ারি “When shona phaki played on sylhet stadium” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে উক্ত আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

খালেদা জিয়া
Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে শিরোনামে থাকা তথ্য থেকে জানা যায়, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের একটি ম্যাচের দৃশ্যে ‘Shona Pakhi’ শীর্ষক গান চলার সময়ের ফুটেজ এটি।

তবে ভিডিওটিতে খালেদা জিয়ার নামে কোনো স্লোগান শোনা যায়নি।

এই চ্যানেলটি নাদিম ওয়াহিদ নামে এক ব্যক্তির, যিনি একজন সংগীতশিল্পী। সোনাপাখি গানটির ভিডিও ২০২২ সালে তিনি তার এই চ্যানেলে প্রকাশ করেন৷ 

গত ২৬ জানুয়ারি থেকে ০৩ ফেব্রুয়ারি বিপিএলের সিলেট পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ, এই সময়ের মধ্যেই ভিডিওটি ধারণকৃত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে নাদিম ওয়াহিদের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, “এটি লাইভ ভিডিও ছিল। আমরা আমাদের ফোনে রেকর্ড করেছিলাম।” 

অর্থাৎ, মূল ভিডিওতে সোনা পাখি নামক গানটিই শোনা গিয়েছিল। 

অডিও যাচাই

খালেদা জিয়ার নামে স্লোগানটির বিষয়ে অনুসন্ধানে Bangladesh Nationalist Party -BNP এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর “মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিওর অডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর অডিওর মিল পাওয়া যায়।

মূলত, গত ২৬ জানুয়ারি থেকে ০৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এর সিলেট পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেসময়ের একটি ম্যাচের মধ্যেই স্টেডিয়ামে ‘সোনা পাখি’ নামক একটি গান পরিবেশন করা হয়। সম্প্রতি, সেই ভিডিওর মূল অডিও সরিয়ে তাতে খালেদা জিয়ার মুক্তির স্লোগান যুক্ত করে ভিন্ন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, সিলেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের ম্যাচের মধ্যে খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

  • Wahed Studio – Youtube Video
  • Bangladesh Nationalist Party – BNP – Youtube Video 
  • Statement from Nadim Wahed
  • Rumor Scanner’s own investigation 

বিপিএলে খেলা বাদ দিয়ে সাকিব দুবাইয়ে শো-রুম উদ্বোধন করতে যাননি, এই ভিডিওটি পুরোনো

সদ্য সমাপ্ত হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ-বিপিএলে খেলা বাদ দিয়ে শোরুম উদ্বোধন করতে সাকিব আল হাসান চিত্রনায়ক শাকিব খানের সাথে দুবাই গিয়েছিলেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

সাকিব দুবাইয়ে

টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি এই ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় চার লক্ষ বার। ভিডিওটিতে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজারেরও বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাকিব বিপিএল বাদ দিয়ে শাকিব খানের সাথে শোরুম উদ্বোধন করতে দুবাই যাননি বরং যুক্তরাষ্ট্রে ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় এক মতবিনিময় সভায় সাকিব ও শাকিবের অংশগ্রহণ করার পুরোনো ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওতে প্রচারিত আলোচিত দাবি নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ক্লিপটির বিষয়ে অনুসন্ধানে বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম ‘চ্যানেল২৪’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ৩০ জুলাই “এক মঞ্চে বাংলাদেশের দুই সুপারস্টার সাকিব আল হাসান ও শাকিব খান” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে এই বিষয়ে জানা না গেলেও ভিডিও প্রকাশের তারিখ দেখে এটাই প্রতীয়মান যে ভিডিওটি গত ১ মার্চ শেষ হওয়া বিপিএল আসরের সময়ের নয়।

অনুসন্ধানে বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল আই এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ৩০ জুলাই “নিউইয়র্কে একসাথে সাকিব আল হাসান ও শাকিব খান” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে ভিন্ন দিক থেকে তোলা একটি দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনায় শো টাইম মিউজিকের মতবিনিময় সভায় সাকিব আল হাসান ও চিত্রনায়ক শাকিব খান অংশগ্রহণ করেন।

মূলত, ২০২২ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও চিত্রনায়ক শাকিব খান নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনায় শো টাইম মিউজিকের মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। উক্ত অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও ব্যবহার করে সম্প্রতি সাকিব বিপিএল বাদ দিয়ে শাকিব খানের সাথে শোরুম উদ্বোধন দুবাই গিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, বিপিএল বাদ দিয়ে সাকিব আল হাসান শাকিব খানের সাথে দুবাইয়ে শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ফাইনালে হারের পর নাফিসা কামাল অজ্ঞান হননি এবং লিটনকে লাইভে এনে তামিমও সান্ত্বনা দেননি

গত পহেলা মার্চ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) দশম আসরে ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ফরচুন বরিশাল। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফরচুন বরিশালের ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ক্রিকেটার লিটন দাসের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক নাফিসা কামাল তার দল হারার পর অজ্ঞান হয়ে যায় এবং তামিম ইকবাল লিটন দাসকে লাইভে এনে সান্ত্বনা দিয়েছেন। 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি প্রায় ১১ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং দুই শতাধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিপিএলের দশম আসরের ফাইনালে হারার পর নাফিসা কামাল অজ্ঞান হননি এবং লিটন দাসকে লাইভে এনে তামিম ইকবালের সান্ত্বনা দেওয়ার দাবিটিও সঠিক নয় বরং ২০২০ সালে তামিম ইকবাল কর্তৃক আয়োজিত ক্রিকেটার মুমিনুল হক, সৌম্য সরকার এবং লিটন দাসকে নিয়ে লাইভ আড্ডার ভিডিওর কয়েকটি অংশ কেটে সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে পুরো ভিডিওর কোথাও নাফিসা কামালের অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। এছাড়া ভিডিওতে তামিম ইকবাল এবং লিটন দাসকে দেখা গেলেও তাদের কথোপকথনের কোনো অংশেই বিপিএলের দশম আসরের ফাইনাল নিয়ে কোনো আলোচনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

আলোচিত দাবিগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে প্রচারিত লাইভ ভিডিওটিতে ব্যবহৃত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধানে  তামিম ইকবালের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ১৬ মে “#TI28 Tamim Iqbal live with Mominul, Soumya and Liton” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটির সাথে আলোচিত ভিডিওর তামিম ইকবাল এবং লিটন দাসের ফুটেজের বেশকিছু অংশের মিল রয়েছে। এই ভিডিওটি ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে তামিম ইকবালের লাইভ আড্ডা আয়োজনের একটি ভিডিও এবং ভিটিওটির তামিম ইকবাল এবং লিটন দাসের আলোচনার সময়কার বিভিন্ন অংশ কেটে নিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিওটি ২০২০ সালের হওয়ায় চলতি বছরের বিপিএলের দশম আসরের ফাইনালের সাথে এর কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। 

তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক ম্যাচ পরবর্তী সময়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে তামিম ইকবাল তার ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজে দেশি -বিদেশি বিভিন্ন ক্রিকেটারদের নিয়ে লাইভ আড্ডার আয়োজন করতেন। সে সময় ক্রিকেটার মুমিনুল, সৌম্য এবং লিটন দাসকে নিয়ে লাইভ আড্ডার আয়োজন করেন। উক্ত ভিডিওর লিটন দাস এবং তামিম ইকবালের আলোচনার কিছু অংশ কেটে নিয়ে “হারের পর নাফিসা আফা অজ্ঞান হইছিলো! লিটনকে লাইভে এনে শান্তনা দিলেন তামিম” শীর্ষক শিরোনামে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখেছে যে, ফাইনালে হারার পর নাফিসা কামাল অজ্ঞান হননি এবং আলোচিত ভিডিওটিও পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার।  

সুতরাং, বিপিএল ফাইনালে হারার পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক নাফিসা কামালের অজ্ঞান হওয়া এবং ফরচুন বরিশালের তামিম ইকবাল কর্তৃক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের লিটন দাসকে লাইভে এনে সান্ত্বনা দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

প্রথম আলোর লোগো যুক্ত করে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার

0

সম্প্রতি, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে দাবিতে জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র লোগো ব্যবহার করে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছবি ফেসবুকে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

কথিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছবিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের সময় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উল্লেখ করা এবং ছবির উপরে ‘প্রথম আলো’র লোগো যুক্ত আছে। এছাড়া, আবেদনের নিয়মাবলীতে লেখা আছে, উক্ত পদ সমূহের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের ০১ মার্চ ২০২৪ ইং রাত ১১ টা মধ্যে ছবি ও সিভি [email protected] শীর্ষক ইমেইল অ্যাকাউন্টে প্রেরণ করার কথা বলা হয়েছে।

কুমিল্লা সিটি

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম আলোর লোগোসহ প্রচারিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রথম আলো বা সংশ্লিষ্ট কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া বলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ‘প্রথম আলো’র প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে কিনা তা জানতে বিজ্ঞপ্তিটিতে উল্লিখিত তারিখের সূত্র ধরে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ০১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম আলো প্রিন্ট সংস্করণগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নামে কথিত এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটির সন্ধান মেলেনি।

আলোচিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটির বিষয়ে জানতে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ছামছুল আলমের সাথে কথা হয় রিউমর স্ক্যানারের।

তিনি জানান, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এমন কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি। 

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ওয়েবসাইটেও এই বিষয়টি জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে৷ 

একই ইমেইলে প্রতারণার শিকার একাধিক প্রতিষ্ঠান 

আমরা আলোচিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ইমেইল ঠিকানাটির বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে একই ইমেইল ঠিকানার মাধ্যমে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নামেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের প্রমাণ পেয়েছি। গেল সপ্তাহে ফেসবুকে এবং একটি জব পোর্টালে প্রচারিত কথিত এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের শেষ সময় লেখা রয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।

Image: Facebook

আমরা এই বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সানজিদা বেগমের সাথে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, তারা এমন কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেননি।  

মূলত, সম্প্রতি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে দাবিতে প্রথম আলোর লোগো ব্যবহার করে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছবি ফেসবুকে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে [email protected] এই ইমেইল ঠিকানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম আলো বা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ কথিত এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করেনি। তাছাড়া, একই ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার একাধিক সিটি কর্পোরেশনের নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে একই ফরমেট ব্যবহার করে স্বাস্থ্য বিষয়ক একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷  

সুতরাং, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নাম ব্যবহার করে

প্রথম আলোর লোগো সম্বলিত একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ বানোয়াট। 

তথ্যসূত্র

  • Prothom Alo – E-Paper
  • Statement from Md. Shamsul Alam, CuCiC  
  • Rumor Scanner’s own analysis 

মানবজমিনের ফটোকার্ড বিকৃত করে ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার

0

সম্প্রতি, রাকিবকে সভাপতি ও নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের নতুন কমিটি– শীর্ষক শিরোনাম বা তথ্যে বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার নাসির হোসেন এবং তার স্ত্রীর সাবেক স্বামী রাকিব হাসানের ছবি যুক্ত করে জাতীয় দৈনিক মানবজমিন এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ছাত্রদলের কমিটি

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার নাসির হোসেন এবং তার স্ত্রী তামিমার তাম্মির সাবেক স্বামী রাকিব হাসানকে বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোনো পদ দেওয়া হয়নি এবং মানবজমিনও এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং মানবজমিন এর একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ড তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে মানবজমিন এর ফেসবুক পেজ ( এবং ) এবং ওয়েবসাইটে আলোচিত ফটোকার্ডটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, অন্য কোনো গণমাধ্যম বা বিশ্বস্ত সূত্রেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তবে, গত ১ মার্চ মানবজমিন এর ফেসবুক পেজে “রাকিবকে সভাপতি ও নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের নতুন কমিটি” শীর্ষক শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড এবং কমেন্টে একই শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।  

Screenshot: Daily Manab Zamin Facebook Page 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল এর নেতৃত্বাধীন বিদ্যমান কমিটি বিলুপ্ত করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন আংশিক কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। ০১ মার্চ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে। নবগঠিত এই আংশিক কমিটিতে রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সভাপতি এবং নাসির উদ্দীন নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। 

মানবজমিনের উক্ত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত দুই ব্যক্তির ছবি ছাড়া বাকি অংশের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Photocard Comparison: Rumor Scanner

অর্থাৎ, মানবজমিন এর ফেসবুক পেজে গত ০১ মার্চ প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিট করে বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার নাসির হোসেন এবং তার স্ত্রী তামিমার তাম্মির সাবেক স্বামী রাকিব হাসানের ছবি যুক্ত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

মূলত, গত ০১ মার্চ বিএনপির অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রদলের ৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন আংশিক কমিটির ঘোষণা করা হয়৷ এতে রাকিবুল ইসলামকে সভাপতি ও নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। সভাপতি হওয়া রাকিবুল ইসলাম সংগঠনের সদ্য সাবেক কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আর সাধারণ সম্পাদক হওয়া নাছির একই কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। উক্ত ঘটনা নিয়ে মানবজমিন তাদের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি তাদের ফেসবুক পেজে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছবি যুক্ত করে রাকিবকে সভাপতি ও নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের নতুন কমিটি শীর্ষক শিরোনাম বা তথ্যে একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করে। পরবর্তীতে উক্ত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছবির স্থলে ক্রিকেটার নাসির হোসেনের স্ত্রী তামিমার তাম্মির সাবেক স্বামী রাকিব হাসান এবং নাসির হোসেনের ছবি যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, ক্রিকেটার নাসির হোসেনের স্ত্রী তামিমার তাম্মির সাবেক স্বামী রাকিব হাসান এবং ক্রিকেটার নাসির হোসেনকে ছাত্রদলের সভাপতি করার তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে তাদের ছবি যুক্ত করে দৈনিক মানবজমিনের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র 

অযোধ্যা মসজিদ নির্মাণে ব্রিটিশ ধনকুবের আসিফ আজিজ হাজার কোটি টাকা অনুদান দেননি

0

সম্প্রতি, অযোধ্যার মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ মসজিদ নির্মাণে ব্রিটিশ ধনকুব আসিফ আজিজ পাঁচ হাজার কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

অযোধ্যা

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ওপার বাংলার ফেসবুক ব্যবহারকারীদের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং  এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত এই বিষয়ে ভাইরাল একটি  ইন্সটাগ্রাম রিলস ভিডিও (আর্কাইভ) ৩৫ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে। এই ভিডিওতে ১ লক্ষ ২০ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভিডিওটিতে মন্তব্যের সংখ্যা ৪০৪ পর্যন্ত পৌঁছেছে, এবং এর মধ্যে অধিকাংশ দর্শকই বিষয়টি সত্য ভেবে মন্তব্য জানিয়েছেন। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের অযোধ্যার মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ মসজিদ নির্মাণে ব্রিটিশ ধনকুব আসিফ আজিজের পাঁচ হাজার কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং মসজিদটি নির্মাণের জন্য এখন অবধি ভারতের বাইরে থেকে কোনো অনুদান পাননি বলে উত্তর প্রদেশের মুসলিম সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডের চেয়ারম্যান রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। আসিফ আজিজের পক্ষ থেকেও বিষয়টি গুজব বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

আসিফ আজিজ কে?

লন্ডনের ব্যবসা সংক্রান্ত সংবাদপত্র সিটি এ.এম.-এ প্রকাশিত আসিফ আজিজের সাক্ষাৎকারের তথ্য অনুসারে, আসিফ আজিজ একজন লন্ডন-ভিত্তিক বিলিয়নেয়ার উদ্যোগপতি ও দানবীর, যিনি পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালাউই থেকে ব্রিটেনে এসে সম্পত্তির বাজারে নিজের নাম করেছেন। তাঁর মালিকানাধীন ক্রাইটেরিয়ন ক্যাপিটাল লন্ডনের নানা ল্যান্ডমার্ক প্রকল্প পরিচালনা করে। আজিজ ফাউন্ডেশন নামে তাঁর একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি লন্ডনের মুসলিম ছাত্রদের উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদান করে থাকেন, যেন তাঁরা আর্থিক সেবা, আইন, শিল্প এবং সাংবাদিকতা মতো ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে পারে।

এই প্রতিবেদনের সূত্রে আসিফ আজিজের দাতব্য প্রতিষ্ঠান আজিজ ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়। তবে প্রতিষ্ঠানটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে মসজিদ নির্মাণে অনুদান সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ঘুরেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য মেলেনি।

পরবর্তীতে এই বিষয়ে জানতে জনাব আসিফ আজিজের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করা পিআর এজেন্সি রিউমর স্ক্যানার টিমকে জানায়, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। জনাব আসিফ আজিজ অযোধ্যা মসজিদ, যা মসজিদ মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ নামেও পরিচিত, এর নির্মাণে কোনো ধরনের অর্থ দান করেননি এবং এর পরিকল্পনা বা অর্থায়নে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি সকল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থানের প্রতি শ্রদ্ধা রাখেন, তবে এই প্রকল্পে তাঁর অর্থনৈতিক অবদান সম্পর্কে করা দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তারা আরও জানায়, জনাব আজিজ এই বিষয়ের সংবেদনশীলতা এবং আয়োধ্যার প্রতি বিভিন্ন ধর্মের মানুষের গভীর আস্থা ও শ্রদ্ধার বিষয়টি বুঝেন এবং শ্রদ্ধা করেন। তিনি এই প্রকল্পের ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক প্রভাব নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে বা জড়িত হতে চান না।

অযোদ্ধা মসজিদ বা মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ মসজিদ

১৯৯২ সাল পর্যন্ত ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানে দাঁড়িয়ে ছিল বাবরি মসজিদ। সে বছরের ৬ই ডিসেম্বর কাঠামোটি ভেঙে ফেলে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। ২০১৯ সালে উক্ত ধর্মীয় স্থানটিতে একটি হিন্দু মন্দির বানানোর পক্ষে রায় দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সেই রায়ে অযোধ্যার উল্লেখযোগ্য কোনও স্থানে বিকল্প মসজিদ তৈরির জন্য সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি দিতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদ থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অযোধ্যা জেলার ধন্নিপুর গ্রামে নতুন মসজিদ তৈরির জন্য একটি জমি বরাদ্দ করে ভারতের সরকার।

গত ২২ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগামী মে মাসে অযোধ্যায় নতুন মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নামানুসারে মসজিদটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ’। প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের (আইআইসিএফ) এই মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করছে।

এই মসজিদ নির্মাণে আসিফ আজিজ কিংবা তাঁর দাতব্য প্রতিষ্ঠান আজিজ ফাউন্ডেশন কোনো অনুদান দিয়েছেন কিনা জানতে উত্তর প্রদেশের মুসলিম সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জুফার আহমদ ফারুকীর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

তিনি বলেন, অযোধ্যার মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ মসজিদের জন্য গঠিত ইন্দো ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন ট্রাস্টে প্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বরা উল্লেখযোগ্য অনুদান দিয়েছেন দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত খবরটি ভুয়া এবং ভিত্তিহীন। আমরা এখন পর্যন্ত ভারতের বাইরে থেকে কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে (অযোধ্যা মসজিদ নির্মাণে) কোনো দান পাইনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রিটিশ এই ধনকুব আসিফ আজিজকে নিয়ে পূর্বেও ছড়ানো হয়েছিলো গুজব। দাবি করা হচ্ছিল, লন্ডনের আইকনিক ল্যান্ডমার্ক ট্রোকাডেরো ভবন মসজিদে পরিবর্তন করতে যাচ্ছে ধনকুব আসিফ আজিজ। তবে আজিজ ফাউন্ডেশন বিষয়টি স্পষ্ট করে তখন জানিয়েছিল, সম্পূর্ণ তিন তলা বিশিষ্ট ট্রোকাডেরো ভবন মসজিদে পরিবর্তন করা হচ্ছে না। বরং, ভবনটির বেসমেন্টে থাকা খালি জায়গা ব্যবহার করে এলাকার মুসলিমদের জন্য একটি প্রার্থনার স্থান তৈরি করা হবে।

মূলত, ১৯৯২ সালে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে। ২০১৯ সালে উক্ত স্থানটিতে একটি হিন্দু মন্দির বানানোর পক্ষে রায় দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। একই রায়ে অযোধ্যার উল্লেখযোগ্য কোনও স্থানে বিকল্প মসজিদ তৈরির জন্য ভারতের সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি দিতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। অযোধ্যা জেলার ধন্নিপুর গ্রামে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নামানুসারে ‘মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ’ নামে একটি মসজিদ নির্মাণ হতে চলেছে। এই মসজিদ নির্মাণে ব্রিটিশ ধনকুব আসিফ আজিজ পাঁচ হাজার কোটি দান করেছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, ইন্টারনেটে ছড়ানো এই অনুদানের দাবিটি মিথ্যা এবং মসজিদটি নির্মাণের জন্য এখন অবধি ভারতের বাইরে থেকে কোনো অনুদান পাননি বলে উত্তর প্রদেশের মুসলিম সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জুফার আহমদ ফারুকী রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। আসিফ আজিজের পক্ষ থেকেও বিষয়টি গুজব বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, অযোধ্যার মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ মসজিদ নির্মাণে জনপ্রিয় ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ৪৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন দাবিতে ছড়িয়ে পড়া একটি গুজব শনাক্ত করে ইতোমধ্যেই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

প্রসঙ্গত, গত ২২ জানুয়ারি ভারতের অযোধ্যায় বহুল আলোচিত রাম মন্দির উদ্বোধন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সময় এই বিষয় নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া একাধিক গুজব শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম। একত্রে সেসব প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

সুতরাং, অযোধ্যার মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ মসজিদ নির্মাণে ব্রিটিশ ধনকুব আসিফ আজিজ পাঁচ হাজার কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যাা।

তথ্যসূত্র

ড. ইউনূসকে জড়িয়ে কালের কণ্ঠের নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার

0

সম্প্রতি, “মুকেশ আম্বানি পুত্রের বিয়েতে অতিথিদের ২% সুদে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করবেন ড. ইউনূস” শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবিসহ জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ড. ইউনূস

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস মুকেশ আম্বানির পুত্রের বিয়েতে অতিথিদের ২% সুদে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করার কোনো ঘোষণা দেননি এবং দৈনিক কালের কণ্ঠও উক্ত শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে দৈনিক কালের কণ্ঠের ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের কোনো তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।

পরবর্তীতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কালের কণ্ঠের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও কালের কণ্ঠের’র ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

ইন্টারনেটে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে আলোচিত দাবির প্রেক্ষিতে কোনো তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় পরবর্তীতে বিষয়টির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে দৈনিক কালের কণ্ঠের সহকারী ফিচার সম্পাদক দাউদ হোসাইন রনির সাথে কথা হয় রিউমর স্ক্যানার টিমের।

তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ‘কালের কণ্ঠ এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। এটি ফেক।’

এছাড়া কালের কণ্ঠের ফটোকার্ড গুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের সুস্পষ্ট ভিন্নতা দেখা যায়।

Photocard Comparison: Rumor Scanner

অর্থাৎ, দৈনিক কালের কণ্ঠের ফটোকার্ড দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে তৈরি করা হয়েছে। 

ড. ইউনূস কি আসলেই মুকেশ আম্বানির পুত্রের বিয়েতে অতিথিদের ঋণ বিতরণ করার ঘোষণা দিয়েছেন?

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ, তার প্রতিষ্ঠান ইউনূসে সেন্টারের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ এবং দেশিয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, ভারতের ধনকুবের মুকেশ আম্বানি কনিষ্ঠ সন্তান অনন্ত আম্বানি এবং ‘অ্যাঙ্কর হেল্‌থকেয়ার’-এর সিইও বিনোদ মার্চেন্টের কন্যা রাধিকা মার্চেন্ট এর প্রাক বিবাহ অনুষ্ঠান চলছে। এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো অতিথিদের তালিকায় আছেন বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও সুন্দর পিচাইয়ের মতো ব্যক্তিত্বরা। এই প্রাক বিবাহ অনুষ্ঠান ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন সরগরম। এরই মধ্যে এই বিবাহে আমন্ত্রণ পাওয়া অতিথিদের ২% সুদে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করবেন বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস শীর্ষক একটি তথ্য  জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কালের কণ্ঠ এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। ড. ইউনূসও এরূপ কোনো ঘোষণা দেননি। প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেট থেকে কালের কণ্ঠের ফটোকার্ড সংগ্রহ করে তা ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি প্রচার করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার করা হলে সেগুলো তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক মুকেশ আম্বানির পুত্রের বিয়েতে অতিথিদের ২% সুদে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করার ঘোষণা ঘোষণা দেওয়া দাবিটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে দৈনিক কালের কণ্ঠের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া।

তথ্যসূত্র

১৯১১ সালে ইতালিতে ট্রেন গায়েব হয়ে যাওয়ার সাথে টাইম ট্রাভেলের গল্প ফেঁদে গুজব

গেল বেশ কয়েক বছর ধরেই ইতালির একটি ট্রেন ঘিরে ইন্টারনেটে ব্যাপক আলোচনা হয়ে আসছে৷ ১৯১১ সালের ঘটনা দাবি করে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ সংক্রান্ত আলোচনায় বলা হচ্ছে, সে বছর (১৯১১) ইতালির জেনেটি নামে একটি রেল সংস্থা একটি ট্রেন চালু করে। উদ্বোধনের দিন সব যাত্রীকে বিনা টিকিটে ঘোরানোর ব্যবস্থা করেছিল সংস্থাটি। ছয়জন রেলকর্মী এবং ১০০ যাত্রী নিয়ে রওনা দিয়েছিল ট্রেনটি। কিন্তু গন্তব্যে আর পৌঁছায়নি। মাঝ পথে রহস্যজনকভাবে আস্ত ট্রেনটিই গায়েব হয়ে যায়! আজ পর্যন্ত যার কোনো খোঁজও মেলেনি। খোঁজ পাওয়া যায়নি যাত্রীদেরও। দাবি করা হচ্ছে, যাত্রাপথে একটি সুড়ঙ্গ পড়েছিল। ট্রেন সেই সুড়ঙ্গে প্রবেশ তো করেছিল কিন্তু আর বের হয়নি। পরবর্তীকালে ট্রেনের সন্ধানে সুড়ঙ্গের মধ্যে অনেকেই গেছেন। কিন্তু তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তার চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি হওয়া ওই সুড়ঙ্গের ভেতর আর কোনো রাস্তাও ছিল না। ট্রেন দুর্ঘটনারও কোনো চিহ্ন মেলেনি। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে এমন দাবিও করা হচ্ছে যে, ট্রেনের মধ্যে থাকা ১০৬ জনের মধ্যে দু’জনের সন্ধান পাওয়া যায়। টানেলের বাইরে থেকে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। তবে তারা কোনো তথ্যই দিতে পারেননি ট্রেনের বিষয়ে। অগোছালো কথা বলছিলেন তারা। বলা হয়ে থাকে, সুড়ঙ্গে প্রবেশের মুহূর্তে সাদা ধোঁয়া গ্রাস করেছিল ট্রেনটিকে। সেই সময় কোনোক্রমে দুজন ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন। তার পর আর কিছু মনে ছিল না তাদের। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমা পড়ে সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খোঁজও থামিয়ে দিতে হয়। 

তবে এই রহস্যের এখানেই শেষ নয়। প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, অনেক বছর পর মেক্সিকোর এক চিকিৎসক দাবি করেন, অনেক বছর আগে মেক্সিকোর একটি হাসপাতালে নাকি ওই ১০৪ যাত্রীকে ভর্তি করা হয়েছিল। তারা প্রত্যেকেই অসংলগ্ন কথা বলছিলেন। প্রত্যেকেই কোনো একটি ট্রেনের উল্লেখ করেছিলেন। সেই ট্রেনে করেই নাকি তারা মেক্সিকো পৌঁছেছিলেন। এমনকি ইতালির বিভিন্ন প্রান্তে, জার্মানি, রোমানিয়া এবং রাশিয়াতেও নাকি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষ ঠিক ওই রকমই একটি যাত্রীবোঝাই ট্রেন দেখতে পেয়েছেন বলে দাবি করতে শুরু করেছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা ট্রেনের যে বর্ণনা দিয়েছিলেন তা হুবহু ওই অদৃশ্য হওয়া ট্রেনটির মতো ছিল। সেই সময় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ট্রেনটি নাকি ট্রাইম ট্রাভেল করে ১৮৪০ (মতান্তরে ১৮৪৫) সালের মেক্সিকোয় পৌঁছে গিয়েছিল।

উক্ত দাবিতে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন বিজয় টিভি (ফেসবুক), আরটিভি (ফেসবুক), মাই টিভি (ফেসবুক)৷ 

ট্রেন গায়েব

সাম্প্রতিক সময়ে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফেসবুকের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে টিকটকের কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে একই দাবিতে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন একাত্তর টিভি (২০২১), সময় টিভি (২০২১), ডিবিসি নিউজ (২০২১), যমুনা টিভি (২০২১), ইনকিলাব (২০২১), যুগান্তর (২০২১),  বাংলাদেশ প্রতিদিন (২০২১), ঢাকা টুডে (২০২১), ডেল্টা টাইমস (২০২১), নিউজ২৪ (২০২১), বিবার্তা১৪ (২০২১), একুশে টিভি (২০২১), ঢাকা টাইমস (২০২১), জাগোনিউজ২৪ (২০২১), ডেইলি বাংলাদেশ (২০২২)। 

একই দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন নিউজ১৮

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯১১ সালে ইতালিতে ১০৬ জন নিয়ে কোনো ট্রেন গায়েব হয়ে যায়নি বরং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে অস্তিত্বহীন একটি ট্রেন সংস্থার নামে কথিত এই ঘটনাটি প্রচার হয়ে আসছে৷  

কথিত এই রহস্যজনক ঘটনাটির বিষয়ে অনুসন্ধানে শুরুতে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার আন্তর্জাতিক কোনো নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমেই এ সংক্রান্ত ঘটনার সংবাদের অস্তিত্ব মেলেনি। অথচ কথিত এই ঘটনার উল্লিখিত সময়কালের (১৯১১) পরের বছরই (১৯১২) পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম  আলোচিত টাইটানিক জাহাজ দুর্ঘটনার খবর একাধিক সংবাদমাধ্যম (, ) ও নির্ভরযোগ্য সূত্রেই (, ) রয়েছে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার বিষয়টি যেভাবে গণমাধ্যমে এসেছে ঠিক সেভাবে ইতালির কথিত ট্রেনটি গায়েবের বিষয়টিও আলোচনায় থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমন কোনো ঘটনার উল্লেখই পাওয়া যায়নি ইতালি কিংবা আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যমেই। 

কথিত ঘটনাটি ‘ইতালির জেনেটি নামে একটি রেল সংস্থার ট্রেনের’ শীর্ষক দাবির প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে এই নামে ইতালিতে কোনো ট্রেন সংস্থার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আমরা উইকিপিডিয়ার একটি পেজে ইতালিতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া রেল কোম্পানিগুলোর একটি তালিকা পেয়েছি যাতে জেনেটি নামে কোনো কোম্পানির নাম উল্লেখ নেই। রেল কোম্পানি না থাকলেও ইতালিতেই এই নামের সাথে জড়িয়ে অন্তত দুইটি কোম্পানির (, ) হদিস মিলেছে। একইসাথে ইতালির ট্রেন দুর্ঘটনার ইতিহাস ঘেঁটেও এই দুর্ঘটনার বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। 

অর্থাৎ, অস্তিত্বহীন একটি ট্রেন সংস্থার নামে কথিত ঘটনাটি প্রচার করা হচ্ছে। 

খেয়াল করে দেখুন, কথিত এই ঘটনায় যে ১০৬ জন যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিষয়ে বলা হচ্ছে সেখানে এদের কারো নামই উল্লেখ নেই। এমনকি যে দুইজন পরবর্তীতে উদ্ধার হয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে, তাদের পরিচয়ও কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি। 

তাছাড়া, যে সুড়ঙ্গে ট্রেনটি হারিয়ে যাওয়ার দাবি করা হচ্ছে তা নিয়েও আছে ধোঁয়াশা৷ কারণ, গণমাধ্যমের এ সংক্রান্ত দাবি সম্বলিত প্রতিবেদনগুলোতে সুড়ঙ্গের যে ছবিগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্থানের সুড়ঙ্গ। দেখুন এখানে, এখানে

আমরা মেক্সিকোর কথিত সেই চিকিৎসকের বিষয়েও খোঁজ নিয়েছি যিনি দাবি করেছেন, অনেক বছর আগে মেক্সিকোর একটি হাসপাতালে ওই ১০৪ যাত্রীকে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু উক্ত চিকিৎসকের বিস্তারিত পরিচয় এ সংক্রান্ত দাবিগুলোতে উল্লেখ না থাকায় অনুসন্ধানে কোনো তথ্য মেলেনি। 

আবার কথিত এই ট্রেনটি ট্রাইম ট্রাভেল করে ১৮৪০ সালের মেক্সিকোয় পৌঁছে গিয়েছিল বলে যে দাবি এসেছে, তার বিষয়েও নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে তথ্য মেলেনি। ১৮৪০ এর দশকের মধ্যভাগে মেক্সিকোতে রেললাইন নির্মাণ শুরু নয় পরিসেবা চালু হয় হয়। সেসময় বা এরপর দেশটির ট্রেন পরিসেবায় টাইম ট্রাভেলের কোনো ঘটনার বিষয়ে জানা যায়নি। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাও বলছে, পৃথিবীতে টাইম ট্রাভেল করে অতীতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। অন্তত বৈজ্ঞানিকভাবে এটি প্রমাণের কোনো সুযোগ নেই এখনো। 

তাহলে ঘটনাটি রটলো কীভাবে এমন প্রশ্নে ই-বরঘি নামে ইতালিরই ভ্রমণ বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে কিছু তথ্যের সন্ধান মিলেছে। তারা দাবি করছে, জেনেটি ট্রেনের গল্পটি ইউক্রেনের লেখক নিকোলে চেরকাশিনের একটি কল্পকাহিনীর সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। মার্কিন ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপসও ২০২২ সালে আলোচিত এই ঘটনাটি ভুয়া প্রমাণে একই ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহার করেছে৷ 

স্নোপস বলছে, এই কল্পকাহিনী পরবর্তীতে ইন্টারনেটে সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়ে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

মূলত, কয়েক বছর ধরেই ইতালির একটি ট্রেনের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে,  ১৯১১ সালে ইতালির জেনেটি নামে একটি রেল সংস্থা একটি ট্রেন চালু করার পর সে বছর ছয়জন রেলকর্মী এবং ১০০ যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি। কিন্তু গন্তব্যে আর পৌঁছায়নি। যাত্রাপথে একটি সুড়ঙ্গ পড়েছিল। ট্রেন সেই সুড়ঙ্গে প্রবেশ তো করেছিল কিন্তু আর বের হয়নি। ট্রেনের মধ্যে থাকা ১০৬ জনের মধ্যে দু’জনের সন্ধান পাওয়া যায়। টানেলের বাইরে থেকে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। তবে তারা কোনো তথ্যই দিতে পারেননি ট্রেনের বিষয়ে। দাবি করা হচ্ছে, অনেক বছর পর মেক্সিকোর এক চিকিৎসক বলেছেন, অনেক বছর আগে মেক্সিকোর একটি হাসপাতালে ওই ১০৪ যাত্রীকে ভর্তি করা হয়েছিল। তারা প্রত্যেকেই অসংলগ্ন কথা বলছিলেন। প্রত্যেকেই কোনো একটি ট্রেনের উল্লেখ করেছিলেন। সেই ট্রেনে করেই নাকি তারা মেক্সিকো পৌঁছেছিলেন। ট্রেনটি নাকি ট্রাইম ট্রাভেল করে ১৮৪০ সালের মেক্সিকোয় পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, কথিত এই ট্রেনটির গায়েব হওয়া ঘটনাটির বাস্তব কোনো প্রমাণ নেই। আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো খবর না পেয়ে ঘটনার নানা দিক অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, জেনেটি নামে কখনোই কোনো ট্রেন সংস্থা ছিল না ইতালিতে। তাছাড়া, ট্রেনে থাকা ১০৬ জন ভ্রমণকারীর পরিচয়ও কোথাও উল্লেখ নেই। উল্লেখ নেই, সেই চিকিৎসকের পরিচয়ও যিনি দুইজন যাত্রীর বিষয়ে বলেছেন দাবি করা হয়। নাসা বলছে, টাইম ট্রাভেল করে অতীতে ফেরার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। এক্ষেত্রে তাই কথিত এই ট্রেনটির ১৮৪০ সালের মেক্সিকোতে যাওয়াও সম্ভব নয়।

সুতরাং, ১৯১১ সালে ইতালিতে ১০৬ জন নিয়ে কথিত একটি ট্রেন গায়েব হয়ে যাওয়ার পর সেটি ট্রাইম ট্রাভেল করে ১৮৪০ সালের মেক্সিকোয় পৌঁছে গিয়েছিল শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণে রোনালদোর ৪৫ কোটি টাকা দেওয়ার গুজব

0

সম্প্রতি, পর্তুগিজ ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টের একটি পোস্টের স্ক্রিনশট এবং তার ছবি সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, “ভারতের সর্ব্বোচ্চ বড় মসজিদ নির্মাণের জন্য ৪৫ কোটি টাকা দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং তার সাথে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন”। 

মসজিদ

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ

টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি প্রায় ১৫ হাজার ৪০০ পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ২০৭ বার। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামের পোস্টটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি প্রায় ১০ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওতে প্রায় ৬৫ হাজার ৮০০ পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ বার। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের অযোধ্যায় মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ মসজিদ নির্মাণে পর্তুগিজ ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কর্তৃক ৪৫ কোটি টাকা দেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে তিনি কোনো শুভেচ্ছা বার্তাও পাঠাননি বরং ২০২৩ সালে রমজান উপলক্ষ্যে তার এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) শুভেচ্ছা জানানোর একটি স্ক্রিনশটের সাথে তার ছবি যুক্ত ফটোকার্ডটিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

দাবির সম্ভাব্য সূত্রপাত 

অনুসন্ধানে ‘Faishal786’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২২ ফেব্রুয়ারি “CRISTIANO RONALDO Ayondhya mein banne wali masjidke lie 45 carod diye #CR7 #cristianoronaldo” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ভিডিওটিতে কোনো তথ্যসূত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

ভিডিওতে বলা হয়, ফুটবলের রাজা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো অযোধ্যায় নির্মিতব্য ভারতের সবচেয়ে বড় মসজিদের জন্য ৪৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। 

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কি মসজিদ নির্মাণে ৪৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন?  

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ, এক্স অ্যাকাউন্ট (সাবেক টুইটার) এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক একাধিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতসহ আন্তজার্তিক কোনো গণমাধ্যমে আলোচিত দাবির সত্যতা সম্পর্কিত কোনো তথ্য কিংবা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘Hindustan Times’ এর ওয়েবসাইটে গত ২২ জানুয়ারি “Muslim body reveals date for Ayodhya mosque construction, new crowdfunding plan” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের অযোধ্যায় মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ মসজিদ নামে মসজিদটি নির্মাণে ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। আদালতের রায়ে অযোধ্যার বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির এবং কিছু দূরে মুসলমানদের জন্য একটি মসজিদ নির্মাণের কথা রয়েছে। মসজিদটির নাম ঠিক করা হয়েছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নামে। 

এর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে অযোধ্যায় নির্মিতব্য মসজিদের ট্রাস্টটির নামে খোলা ফেসবুক পেজে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দান সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে দাবিটির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে উত্তর প্রদেশের মুসলিম সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জুফার আহমদ ফারুকীর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

এই মসজিদ নির্মাণে ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনলাদো কোনো অনুদান দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, অযোধ্যার মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ মসজিদের জন্য গঠিত ইন্দো ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন ট্রাস্টে প্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বরা উল্লেখযোগ্য অনুদান দিয়েছেন দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত খবরটি ভুয়া এবং ভিত্তিহীন। আমরা এখন পর্যন্ত ভারতের বাইরে থেকে কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে (অযোধ্যা মসজিদ নির্মাণে) কোনো দান পাইনি।

অর্থাৎ, কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর অযোধ্যায় নির্বিতব্য মসজিদের ৪৫ কোটি টাকা দেওয়ার দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে কি রোনালদো কোনো শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছেন? 

দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো পর্যবেক্ষণে কোনো পোস্ট বা শুভেচ্ছা বার্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে আলোচিত ফটোকার্ডে চ্যানেল ২৪ এর লোগোর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে চ্যানেল ২৪ এর খেলাধুলা বিষয়ক বুলেটিন বিভাগ  ‘স্পোর্টস ২৪’ ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ “মুসলিম সম্প্রদায়কে রমজানের শুভেচ্ছা জানালেন রোনালদো” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত দাবিতে যুক্ত ফটোকার্ডের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।  

Photocard Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত সূত্র ধরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) একই দিনে একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়৷ 

উক্ত টুইটের মাধ্যমে তিনি ২০২৩ সালের রমজান উপলক্ষ্যে মুসলমান সম্প্রদায়কে রমজানের শুভেচ্ছা জানান।

অর্থাৎ, আলোচিত ফটোকার্ডে যুক্ত টুইটটি ২০২৩ সালের। 

মূলত, ভারতের অযোধ্যায় চলতি বছরের মে মাসে মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ নামে একটি নতুন মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের (আইআইসিএফ) উন্নয়ন কমিটির প্রধান হাজী আরাফাত শাইখ মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পটি তদারক করছেন। পবিত্র রমজান মাস শেষ হলে আগামী মে মাসের দিকে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানা যায়। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পর্তুগিজ ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর একটি টুইট বার্তা এবং ছবি সহ একটি ফটোকার্ড প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভারতের সর্ব্বোচ্চ বড় মসজিদ নির্মাণের জন্য ৪৫ কোটি টাকা দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং তার সাথে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে, কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণের জন্য রোনালদোর টাকা দেওয়ার দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে রমজান মাস উপলক্ষ্যে মুসলমান সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানানোর একটি টুইট সাম্প্রতিক দাবিতে আলোচিত দাবিতে যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া ইন্টারনেটে ছড়ানো এই অনুদানের দাবিটি মিথ্যা এবং মসজিদটি নির্মাণের জন্য এখন অবধি ভারতের বাইরে থেকে কোনো অনুদান পাননি বলে উত্তর প্রদেশের মুসলিম সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জুফার আহমদ ফারুকী রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে বিভিন্ন গুজব প্রচার হলে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, ভারতের অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণে রোনালদোর ৪৫ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া এবং আসন্ন রমজানে তার সবাইকে শুভেচ্ছা জানানোর দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

সংবাদ ভিত্তিক কনটেন্ট দিয়ে ফেসবুক থেকে আয় বন্ধ হওয়ার দাবিটি বিভ্রান্তিকর

সম্প্রতি, “সংবাদ ভিত্তিক কনটেন্ট থেকে ইনকাম বন্ধ শুরু করলো ফেসবুক। অর্থাৎ, কোন নিউজ চ্যানেলের নিউজের কারণে ভিউ থেকে আর কোন অর্থ পাবে না চ্যানেলগুলো।” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

সংবাদ ভিত্তিক কনটেন্ট

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সংবাদ ভিত্তিক কনটেন্ট দিয়ে ফেসবুক থেকে আয় বন্ধ হওয়ার দাবিটি পুরোপুরি সঠিক নয়। সম্প্রতি ফেসবুক যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য থাকা ‘নিউজ ট্যাব’ বন্ধ এবং এই বিষয়ে উক্ত দুই দেশের বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশদের সাথে চুক্তি নবায়ন না করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে অন্যান্য মাধ্যমে নিউজ কনটেন্ট দিয়ে ফেসবুক থেকে পূর্বের মতোই আয় করা যাবে। এছাড়া আলোচ্য ‘নিউজ ট্যাব’ ফিচারটি বাংলাদেশে পূর্বে থেকেই চালু নেই।

গুজবের সূত্রপাত

গত ০১ মার্চ বাংলাদেশের মূল ধারার গণমাধ্যম বাংলা ভিশনে “সংবাদ ভিত্তিক কনটেন্ট থেকে ইনকাম বন্ধ শুরু করলো ফেসবুক” (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে এই শিরোনামের একটি ফটোকার্ডও প্রকাশ করা হয় গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে (আর্কাইভ)।

Screenshot: Facebook. 

তবে প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, “সংবাদ ভিত্তিক কনটেন্টের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের রাস্তা বন্ধের কার্যক্রম শুরু করলো ফেসবুক। সংবাদকর্মীদের জন্য প্রথম আঘাতটি শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে। পহেলা মার্চ ফেসবুকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা মেটা জানিয়েছে, এখন থেকে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানির সংবাদ প্রকাশকদের সাথে লভ্যাংশ ভাগ করা হবে না। এই তিনটি দেশে এসম্পর্কিত কোন চুক্তিও নবায়ন করবে না মেটা। এতে চরম দুর্যোগের মুখে পড়তে যাচ্ছে আগে থেকেই আর্থিক সংকটে ধুঁকতে থাকা সংবাদ মাধ্যমগুলো। আসছে এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হবে নিউ ট্যাব সেবা যা গতবছর বন্ধ হয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিতে।”

উক্ত সূত্রের ভিত্তিতে কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের ওয়েবসাইটে গত ২ মার্চ “Facebook owner Meta angers Australia with plan to stop paying for news content” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ফেসবুকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা আর অস্ট্রেলিয়ান সংবাদ প্রকাশকদের ফেসবুকে প্রকাশিত সংবাদের বিনিময়ে অর্থ প্রদান করবে না। এই সিদ্ধান্তের আওতায়, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য ফেসবুকের বিশেষ ‘নিউজ ট্যাব’ বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং ঐ দুই দেশের গণমাধ্যমের সাথে ফেসবুকে সংবাদ পরিবেশনের জন্য থাকা চুক্তি নবায়ন করা হবে না। মেটা আরো জানিয়েছে, গত বছর তারা ফ্রান্স, জার্মানি, ও যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমের সাথে চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

গত ১ মার্চ প্রযুক্তি সংক্রান্ত আমেরিকান মিডিয়া আউটলেট দ্য ভার্জ একই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালে প্রকাশকদের সাথে মিলিয়ন ডলারের চুক্তি (উদাহরণস্বরূপ, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার, নিউ ইয়র্ক টাইমসের জন্য ২০ মিলিয়ন ডলার, এবং সিএনএনের জন্য ৩ মিলিয়ন ডলার) করে ফেসবুকের ‘নিউজ ট্যাব’ চালু হয়েছিল। কিন্তু আগামী এপ্রিল মাসে এটি আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।

উল্লিখিত গণমাধ্যমগুলোর সূত্রে এ বিষয়ে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মেটার প্রকাশিত মূল বিবৃতিটি খুঁজে পাওয়া যায়। বিবৃতিটিতে মেটা বলেছে, ২০২৪ সালের এপ্রিলের প্রথম দিকে, আমরা যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ায় ফেসবুকের বুকমার্কস অংশে একটি নির্দিষ্ট ট্যাব হিসেবে থাকা ফেসবুক নিউজকে বাতিল করবো। এটি আমাদের ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের ঘোষণার অনুসরণ করে, যেখানে আমরা গত বছর যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ও জার্মানিতে ফেসবুক নিউজকে বাতিল করেছিলাম।

উক্ত বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ফেসবুকের নিউজ ফিচারের এই পরিবর্তনগুলো এই দেশগুলোতে মেটার অন্যান্য পণ্য ও সেবাসমূহের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। ব্যবহারকারীরা এখনো ফেসবুকে সংবাদের লিংক দেখতে পারবে। সংবাদ প্রকাশকেরা তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ অ্যাক্সেস করতে পারবে, তারা তাদের গল্পের লিংক পোস্ট করতে এবং মানুষকে তাদের ওয়েবসাইটে নিয়ে যেতে পারবে। সংবাদ সংস্থাগুলি রিলস এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আরও ব্যাপক দর্শকের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ পাবে এবং তাদের ওয়েবসাইটে মানুষকে নিয়ে যেতে পারবে, যেখানে তারা ফেসবুকের বাহিরের লিংক থেকে উপার্জিত আয়ের শতভাগ রাখতে পারবে।

Screenshot: Facebook.

অর্থাৎ, ফেসবুক সম্প্রতি এক বিবৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য ফেসবুকে যে আলাদা ‘নিউজ ট্যাব’ আছে সেটি বাতিলের ব্যাপারে জানিয়েছে এবং এ প্রসঙ্গে সংবাদ প্রকাশদের সাথে যে চুক্তি ছিল তা নবায়ন করা হবে না বলে জানিয়েছে। তবে সংবাদ প্রকাশরা এখনো অন্যান্য উপায়ে সংবাদ কনটেন্টের মাধ্যমে আয় করতে পারবে। 

এছাড়া, বাংলাদেশে ফেসবুকের ‘নিউজ ট্যাব’ ফিচারটি চালু নেই, এটি কেবল নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশে চালু রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে ফেসবুক এই ফিচারটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বন্ধ করছে, যেমন গত বছর এটি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ও জার্মানিতে বন্ধ করা হয়েছে। এ বছর এপ্রিল মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াতেও এটি বন্ধ হতে চলেছে।

মূলত,  ২০১৯ সালে বিভিন্ন প্রকাশকদের সাথে মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে ফেসবুকের ‘নিউজ ট্যাব’ চালু হয়েছিল। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটা যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য থাকা এই ‘নিউজ ট্যাব’ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। সেই সাথে এই বিষয়ে এই দুই দেশের বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশদের সাথে চুক্তি নবায়ন না করার কথাও জানিয়েছে মেটা। তবে উক্ত দুই দেশের সংবাদ প্রকাশকরা এখনও বিভিন্ন উপায়ে সংবাদ কনটেন্টের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। উক্ত বিষয়টি “সংবাদ ভিত্তিক কনটেন্ট থেকে ইনকাম বন্ধ শুরু করলো ফেসবুক। অর্থাৎ, কোন নিউজ চ্যানেলের নিউজের কারণে ভিউ থেকে আর কোন অর্থ পাবে না চ্যানেলগুলো” শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, “সংবাদ ভিত্তিক কনটেন্ট থেকে ইনকাম বন্ধ শুরু করলো ফেসবুক” শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র