Home Blog Page 542

ব্যারিস্টার সুমনের কাছে সাকিবের ক্ষমা চাওয়ার ভুয়া দাবি 

সম্প্রতি হবিগঞ্জ-৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে মাগুরা-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ক্ষমা চেয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

সাকিবের ক্ষমা চাওয়ার

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে সাকিব আল হাসান ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে ক্ষমা চান নি বরং এটি পুরোনো ভিন্ন ঘটনায় এক ভক্তের নিকট সাকিবের দুঃখ প্রকাশ করার ভিডিও।

ভিডিও যাচাই ০১

সাকিব আল হাসানের ভিডিওটির বিষয়ে জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সাকিব আল হাসানের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, সাকিব আল হাসান সেসময়(২০২০) অনিচ্ছাকৃতভাবে তার এক ভক্তের ফোন ফেঙ্গে ফেলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি ভিডিওতে জানান, কোভিড-১৯ চলাকালীন তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করার চেষ্টা করছিলেন। তবে হঠাৎ তার এক ভক্ত অনুমতি না নিয়ে শরীর ঘেষে সেলফি তুলতে আসলে তিনি সরিয়ে দিতে চান এবং সেসময়ে তার ভক্তের হাতের সাথে হাত লেগে ফোনটি পরে ভেঙ্গে যায়। যার জন্য সাকিব ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

ভিডিও যাচাই ০২

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২ অক্টোবরে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের একটি সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত সাক্ষাৎকারের একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একটি দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

সাক্ষাৎকারে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সাকিবের খেলার প্রশংসার পাশাপাশি তার খেলার বাহিরের জগৎ নিয়ে নানা সমালোচনা করেন।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওতে সংযুক্ত দুটি ভিডিও ক্লিপের সাথে আলোচিত দাবির কোনো মিল নেই।

উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন তার ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ একটি ভিডিও প্রকাশ করে দুবাইয়ে সাকিবের পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাভ খানের জুয়েলারি দোকান উদ্বোধন করতে যাওয়ার সমালোচনা করেন এবং সাকিবের বিরুদ্ধে তার(সুমন) নিজের ওপর হামলা চেষ্টার অভিযোগ করেন।

মূলত, ২০২০ সালে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান অনিচ্ছাকৃতভাবে তার একজন ভক্তের ফোন ফেঙ্গে ফেলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তার ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। অন্যদিকে ২০২৩ সালে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টিভিতে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সাকিবের খেলার প্রশংসার পাশাপাশি তার খেলার বাহিরের জগৎ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন। সম্প্রতি উক্ত দুইটি ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে করে সাকিব আল হাসান ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পূর্বে সাকিব আল হাসান ফেসবুক লাইভে এসে অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে ভিডিও প্রচারিত হলে তা ভুয়া হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

সুতরাং, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ক্ষমা চেয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

নির্বাচনে জয়ের পর নয়, ব্যারিস্টার সুমনের নাচের ভিডিওটি গত নভেম্বরের

গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জয় লাভ করেন। নির্বাচনে জয়ের পর ব্যারিস্টার সুমনকে নাচ করতে দেখা যাচ্ছে দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

বিনোদন ভিত্তিক গণমাধ্যম স্টারগল্প’র ইউটিউব চ্যানেলে (আর্কাইভ) এবং ফেসবুক পেজে (আর্কাইভ) ভিডিওটি প্রচার করে একই দাবি করা হয়েছে। ভিডিওতে এই ভিডিও প্রসঙ্গে বলা হয়, ভোটে জিতে একদম কড়া ভাইবে আছেন ব্যারিস্টার সুমন।

ব্যারিস্টার সুমনের নাচ
Collage: Rumor Scanner

গণমাধ্যমটির এই দুই প্লাটফর্মে প্রকাশিত ভিডিওটি এখন অবধি প্রায় ৭০ লক্ষ বার দেখা হয়েছে এবং ২ লক্ষ ৪২ হাজারেরও বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে রিয়েকশন করা হয়েছে।

এছাড়া, ভিডিওটি ফেসবুকেও ‘নির্বাচনে জয়ের পর সুমন ভাইয়ের নাচ’ দাবিতে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ব্যারিস্টার সুমনের নির্বাচনে জয়ের পরের ঘটনা নয় বরং গত নভেম্বরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে উক্ত নাচে অংশ নেন তিনি। সেসময়েরই ভিডিও এটি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Sk Saurab Sarkar নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের গত ০১ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

আরো অনুসন্ধান করে Mohon Kurmi নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একইদিন প্রকাশিত এক পোস্টে অন্য ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot From Facebook

জনাব মোহনের পোস্ট থেকে জানা যায়, এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হনুমান পূজার অনুষ্ঠান ছিল। ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং নাচে অংশ নেন। 

গত ৩০ নভেম্বর ফেসবুকে প্রকাশিত আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একই স্থানে নাচে অংশ নেওয়ার পূর্বে জনাব সুমন বক্তব্য দিচ্ছেন। 

Screenshot: Facebook 

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ২০২৩ সালের নভেম্বরের।

মূলত, গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করা ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন হবিগঞ্জ-৪ আসন জয় লাভ করেন। ২০২৩ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে তিনি হবিগঞ্জের নোয়াপাড়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে নাচে অংশ নেন। উক্ত নাচের দৃশ্যের ভিডিওকে ব্যবহার করে সম্প্রতি নির্বাচনে জয়ের পর এই নাচে অংশ নেন বলে দাবি করা হচ্ছে। 

সুতরাং, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যারিস্টার সুমন জয় লাভ করার পর নাচ করছেন দাবিতে ২০২৩ সালের পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে রাষ্ট্রপতি পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণা দেননি

গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ১২ জানুয়ারি Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সিএসসির (সিইসি) অভিযোগে নির্বাচনের ফল বাতিল করলো রাষ্ট্রপতি’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা দিলো রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পু, ক্ষেপলো প্রধানমন্ত্রী হাসিনা’’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

 নির্বাচনের ফলাফল বাতিল

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ২৪ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ৮ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

পরবর্তীতে ভিডিওটি অপর একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছে। সেটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

Sabai Sikhi চ্যানেল থেকে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি’র লিংক শেয়ার করে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সিইসির অভিযোগে সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল বাতিল কিংবা পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের কোনো ঘোষণা দেননি রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কিছু ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল কিংবা পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণা দিতে দেখা যায়নি।

ভিডিওটিতে প্রচারিত রাষ্ট্রপতি সম্পর্কিত ভিডিও ক্লিপগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই ০১

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ১ম ভিডিও ক্লিপটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘নিউজ২৪’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যা বললেন নতুন রাষ্ট্রপতি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটিতে সেসময় রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কথা বলেন। সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের সুযোগ নেই বলে তিনি জানান।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর আগে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

ভিডিও যাচাই ০২

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ২য় ভিডিও ক্লিপটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৬ মে ‘ক্ষমতায় যাবার একমাত্র পথ নির্বাচন: রাষ্ট্রপতি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটিতে সে সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে সহিংসতা পরিহার করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটিও সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর আগে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

পাশাপাশি, গগণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন কর্তৃক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল কিংবা পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ০৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনকে ঘিরে রাষ্ট্রপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে জড়িয়ে বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১২ জানুয়ারি Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সিইসির অভিযোগে নির্বাচনের ফল বাতিল করলো রাষ্ট্রপতি’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা দিলো রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পু, ক্ষেপলো প্রধানমন্ত্রী হাসিনা’’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কিছু ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২২২টি আসনে জয়ী হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি এবং স্বতন্ত্র পদে মোট ৬২ টি আসনে জয়লাভ করেন প্রার্থীরা।

সুতরাং, সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে রাষ্ট্রপতি পুনরায় নির্বাচন গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি

0

সম্প্রতি, “হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য” শীর্ষক শিরোনামে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

৩৭ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি দুটি সংবাদপাঠের ভিডিও এবং ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর “১৩ দেশের ৩৭ ব্যক্তির ওপর মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা | United States Sanctions | USA | Channel 24” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে আফগানিস্তান, চীন, ইরান, সুদান ও উগান্ডাসহ মোট ১৩টি দেশের ৩৭ জন ব্যক্তির ওপর অর্থনৈতিক ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে উক্ত প্রতিবেদনে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ৩৭ জন ব্যক্তির তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা বাংলাদেশি কোনো ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি।

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Jamuna TV এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর “যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞা; কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর? | Impact of US Ban” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে র্যাবের সাবেক ও তৎকালীন ৭ কর্মকর্তারা ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। 

অর্থাৎ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন(র্যাব) এর ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার পুরোনো সংবাদের ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

ভিডিও যাচাই-৩

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে The Daily Star এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি “যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চোখে নির্বাচন অবাধ হয়নি, শেখ হাসিনাকে মোদির অভিনন্দন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়া ও ভোটের দিন অনিয়মের খবরে উদ্বেগ জানিয়েছে দেশ দুটি।

অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার দাবির সাথে উক্ত ভিডিওটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।

এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার দাবির সত্যতা জানা যায়নি।

তবে, দৈনিক যুগান্তরে ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার দাবির বিষয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত বছরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার কথা জানান দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে দেশটিতে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায়  সম্প্রতি “হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সরকার পতনের ডাক দিয়ে সম্প্রতি কোনো সংবাদ সম্মেলন করেননি খালেদা জিয়া 

সম্প্রতি, “দীর্ঘ ৮ বছর পর সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া সরকার পতনের ডাক দিলেন” শীর্ষক শিরোনামে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও  প্রচার করা হয়েছে।

সরকার পতনের ডাক

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকার পতনের ডাক দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেননি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার দুটি ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Maasranga News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি “৫ মাস পর বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া | Khaleda Zia | Maasranga News” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison Image By Rumor Scanner

ভিডিওটি দীর্ঘ ৫ মাস রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১১ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানে নিজ বাসভবন ফিরোজায় ফিরার ঘটনায় ধারণকৃত।  

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Kalbela News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি “পাঁচ মাস পর বাসায় ফিরছেন খালেদা জিয়া | khaleda Zia | BNP | Bnp News | Kalbela” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison Image By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, গত ১১ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৫ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর নিজ বাসভবনে ফেরেন। উক্ত ভিডিওটি খালেদা জিয়ার বাসভবনে ফেরার সময় ধারণকৃত।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও দুইটি এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে ফেরার ভিডিও। কথিত সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে কোনো তথ্য উক্ত ভিডিওগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকেও কথিত সংবাদ সম্মেলনের দাবির সত্যতা জানা যায়নি।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া শারীরিক অসুস্থতা ও বয়স বিবেচনায় ২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতাবলে ছয় মাসের মুক্তি পান। এরপর এই জামিনের মেয়াদ বেশ কয়েকবার বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর জামিনের মেয়াদ ৬ মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালে জামিনে মুক্তির পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে শারীরিক জটিলতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিয়েছেন তিনি। 

মূলত, গত ১১ জানুয়ারি প্রায় ৫ মাস রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গুলশানে নিজ বাসভবন ফিরোজায় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এই ঘটনা নিয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমের মতো মাছরাঙা টিভি ও কালবেলার ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে এই দুই গণমাধ্যমের ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে “দীর্ঘ ৮ বছর পর সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া সরকার পতনের ডাক দিলেন” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কোনো সংবাদ সম্মেলন করেননি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, দীর্ঘ ৮ বছর পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকার পতনের ডাক দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

শিক্ষামন্ত্রী নয়, আনিসুল হক নতুন মন্ত্রীসভায় আইনমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নিয়োগ পেয়েছেন

0

গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়। এরপর  নতুন মন্ত্রীসভা গঠনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এর মধ্যেই গত ১১ জানুয়ারি সকাল থেকে নতুন মন্ত্রীসভায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনিসুল হক শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

আনিসুল হক

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আনিসুল হক নবগঠিত মন্ত্রীসভায় শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাননি বরং তিনি উক্ত মন্ত্রীসভায় আইনমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নিয়োগ পেয়েছেন। তাছাড়া, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বিবিসি বাংলা’র ওয়েবসাইটে গত ১০ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় নতুন কারা, বাদ পড়লেন কে কে? শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সেদিন রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম জানান। 

জনাব মো. মাহবুব হোসেন মন্ত্রীদের যে তালিকা দিয়েছেন তাতে আনিসুল হকের নামও রয়েছে। 

Screenshot: The Daily Star

তবে তখন পর্যন্ত নতুন মন্ত্রীদের কে কোন দপ্তরের দায়িত্ব পাচ্ছেন তা জানানো হয়নি। তাই আনিসুল হক যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরই দায়িত্বে আসছেন তা এই সংবাদ সম্মেলন থেকে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু পরদিন সকালেই আনিসুল হক শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট হতে দেখা যায়। 

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি’র সত্যতা যাচাইয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে গত ১১ জানুয়ারি প্রকাশিত নতুন মন্ত্রীসভার দায়িত্ব বন্টনের প্রজ্ঞাপনটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Collage by Rumor Scanner

মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত নতুন মন্ত্রীসভার এই তালিকাটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে আনিসুল হকের নাম রয়েছে।

Screenshot: Cabinet Division Notice

তাছাড়া সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে মহিবুল হাসান চৌধুরীর নাম রয়েছে।

Screenshot: Cabinet Division Notice

অর্থাৎ, নতুন মন্ত্রীসভায় আনিসুল হক শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাননি বরং তিনি নতুন মন্ত্রীসভায় আইনমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নিয়োগ পেয়েছেন।

মূলত, গত ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করে। গত ১০ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রীসভা গঠনের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর  নতুন মন্ত্রীসভায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনিসুল হক শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আনিসুল হক নবগঠিত মন্ত্রীসভায় শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাননি বরং তিনি উক্ত মন্ত্রীসভায় আইনমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নিয়োগ পেয়েছেন। অপরদিকে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী।

সুতরাং, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসন থেকে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আনিসুল হক শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান জামিনে মুক্তি পাননি 

0

সম্প্রতি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান জামিনে মুক্তি পেয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

আমান উল্লাহ আমান

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আমান উল্লাহ আমান জামিনে মুক্তি পাননি বরং তিনি গত ১০ জানুয়ারি একটি মামলায় জামিন পেলেও দুর্নীতির মামলায় জামিন না পাওয়ায় কারাগার থেকে মুক্তি পাননি। 

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার সংবাদমাধ্যম এনটিভি এর ওয়েবসাইটে গত ১০ জানুয়ারি “নাশকতার মামলায় জামিন পেলেন বিএনপিনেতা আমান” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের এক মামলায় আমানউল্লাহ আমানের জামিন দিয়েছেন আদালত।  

তার আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, ‘এখন পর্যন্ত আমানউল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে দুই শতাধিকের বেশি মামলা রয়েছে। একটি বাদে সব কয়টি মামলায় তিনি জামিন রয়েছেন। এই মামলায় জামিন হলে আশা করি তিনি কারা মুক্তি পাবেন।’

অর্থাৎ, আমান উল্লাহ আমানের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাষ্যমতে তিনি একটি মামলায় এখনও জামিন না পাওয়ায় এখনই তার মুক্তি মিলছে না। 

একই তথ্য সম্বলিত আরো কিছু প্রতিবেদন দেখুন ইনকিলাব, নয়া দিগন্ত।

মূলত, গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আমান উল্লাহ আমান ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ আদালতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত ১০ জানুয়ারি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের একটি মামলায় তার জামিন হয়। এরইমধ্যে জামিনে মুক্তি পেলেন আমান উল্লাহ আমান- শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আমান উল্লাহ আমান একটি মামলায় জামিন পেলেও কারাগার থেকে মুক্তি পাননি বরং আরো একটি মামলায় জামিন না পাওয়ায় তিনি এখনও কারাগারেই রয়েছেন  

সুতরাং, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান জামিনে মুক্তি পাওয়ার তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার দপ্তর বণ্টনের কথিত এই তালিকার অধিকাংশ তথ্যই ভুয়া

0

গত ০৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ; ভোট হওয়া ২৯৯ আসনের মধ্যে ২২২টি পেয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে দলটি। এরপর গত ১০ জানুয়ারি সংসদ সদস্যদের শপথের পর জানা যায়, পরদিনই (১১ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন। এর প্রেক্ষিতে ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকেই ফেসবুকে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম এবং দপ্তর সম্বলিত একটি তালিকা ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

মন্ত্রিসভার দপ্তর

দুই পাতার এই তালিকায় মন্ত্রী দাবিতে ২৩ জন এবং প্রতিমন্ত্রী দাবিতে ১১ জনের নাম ও দপ্তরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। 

মন্ত্রী দাবিতে তালিকায় যারা রয়েছেন তারা হলেন, আ ক ম মোজাম্মেল হক (মুক্তিযুদ্ধ), ওবায়দুল কাদের (সড়ক পরিবহন ও সেতু), নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন (শিল্প), আসাদুজ্জামান খান কামাল (স্বরাষ্ট্র), ডা. দীপু মনি (শিক্ষা), মো. তাজুল ইসলাম (স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়), মুহাম্মদ ফারুক খান (বাণিজ্য), আবুল হাসান মাহমুদ আলী (পররাষ্ট্র), আনিসুল হক (আইন), মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ (তথ্য ও সম্প্রচার), মো: আব্দুস শহীদ (গৃহায়ণ ও গণপূর্ত), সাধন চন্দ্র মজুমদার (খাদ্য), উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী (অর্থ), মো. আব্দুর রহমান (বস্ত্র ও পাট), মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (ভূমি), ফরহাদ হোসেন (পরিকল্পনা /জনপ্রশাসন), মো. ফরিদুল হক খান (ধর্ম), মো. জিল্লুল হাকিম (প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান), সাবের হোসেন চৌধুরী (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন), জাহাঙ্গীর কবির নানক (বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন), নাজমুল হাসান পাপন (যুব ও ক্রীড়া), স্থপতি ইয়াফেস ওসমান (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি) এবং ডা. সামন্ত লাল সেন (স্বাস্থ্য)। 

এছাড়া, প্রতিমন্ত্রী দাবিতে তালিকায় যারা রয়েছেন তারা হলেন সিমিন হোসেন রিমি (মহিলা ও শিশু), নসরুল হামিদ (বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ), জুনাইদ আহমেদ পলক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি), মোহাম্মদ আলী আরাফাত (পররাষ্ট্র), মো. মহিববুর রহমান (শ্রম ও কর্মসংস্থান), খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (নৌ-পরিবহন), জাহিদ ফারুক (জনপ্রশাসন), কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (পার্বত্য চট্টগ্রাম), রুমানা আলী টুশি (দপ্তর উল্লেখ নেই), শফিকুর রহমান চৌধুরী (পানি সম্পদ) এবং আহসানুল ইসলাম (বস্ত্র ও পাট)। 

জাতীয় দৈনিক ‘ভোরের পাতা’ পত্রিকার সম্পাদক ড. কাজী এরতেজা হাসান তালিকাটি ফেসবুকে পোস্ট (আর্কাইভ) করে ক্যাপশনে সকলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। 

একই তালিকা প্রচার করেছে এমন আরো কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম এবং দপ্তর সম্বলিত যে তালিকা ছড়িয়ে পড়েছে তার সাথে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত তালিকার অধিকাংশেরই মিল নেই বরং প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রীদের তালিকায় ২৫ জনের নাম রয়েছে যা উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিতে ছিল ২৩ জন। তালিকাটির সাথে প্রজ্ঞাপনের ১৩ জন মন্ত্রী ও পাঁচ জন প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের মিল রয়েছে। বাকিদেরগুলোর মিল পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ১১ জানুয়ারি রাত ৮ টা ৬ মিনিটে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘সারাবাংলা’ এর সিনিয়র সাংবাদিক নৃপেন রায়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রচারিত মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের স্বাক্ষরিত নতুন মন্ত্রিসভার দপ্তর বণ্টন সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি প্রজ্ঞাপন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

Screenshot: Facebook

এই প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রীদের তালিকায় ২৫ জনের নাম রয়েছে যা আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিতে ছিল ২৩ জন। 

আমরা এই প্রজ্ঞাপনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটেও খুঁজে পেয়েছি। ১১ জানুয়ারি প্রকাশিত এই প্রজ্ঞাপনে একাধিক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের নামের সাথে আলোচিত তালিকাটির অমিল রয়েছে। যেমন, আলোচিত তালিকায় শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ডা. দীপুর মনির নাম থাকলেও এই তালিকায় দেখা যাচ্ছে একই দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহিবুল হাসান চৌধুরীকে। 

Screenshot collage: Rumor Scanner

মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের নাম ও দপ্তর দাবিতে ছড়িয়ে পড়া তালিকার সাথে প্রজ্ঞাপনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, তালিকাটির সাথে প্রজ্ঞাপনের ১৩ জন মন্ত্রীর দপ্তরের মিল রয়েছে। এরা হলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক (মুক্তিযুদ্ধ), ওবায়দুল কাদের (সড়ক পরিবহন ও সেতু), নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন (শিল্প), আসাদুজ্জামান খান কামাল (স্বরাষ্ট্র), মো. তাজুল ইসলাম (স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়), আনিসুল হক (আইন), সাধন চন্দ্র মজুমদার (খাদ্য), ফরহাদ হোসেন (জনপ্রশাসন), মো. ফরিদুল হক খান (ধর্ম), সাবের হোসেন চৌধুরী (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন), নাজমুল হাসান পাপন (যুব ও ক্রীড়া), স্থপতি ইয়াফেস ওসমান (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি) এবং ডা. সামন্ত লাল সেন (স্বাস্থ্য)। প্রজ্ঞাপনে ২৫ জনের নাম থাকলেও ছড়িয়ে পড়া তালিকায় আছে ২৩ জনের নাম। বাদ পড়েছেন আবদুস সালাম (পরিকল্পনা) এবং নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (ভূমি)। বাকিদের দপ্তরের সাথে তালিকায় থাকা মন্ত্রীদের দপ্তরের মিল পাওয়া যায়নি। 

একইভাবে তালিকাটির সাথে প্রজ্ঞাপনের পাঁচ জন প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের মিল রয়েছে। এরা হলেন সিমিন হোসেন রিমি (মহিলা ও শিশু), নসরুল হামিদ (বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ), জুনাইদ আহমেদ পলক (ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি), খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (নৌ-পরিবহন), কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (পার্বত্য চট্টগ্রাম)। বাকিদের দপ্তরের সাথে তালিকায় থাকা প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তরের মিল পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গত ০৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠনের সুযোগ পায় আওয়ামী লীগ। গত ১০ জানুয়ারি সংসদে ২৯৮ জন সংসদ সদস্যকে শপথ বাক্য পাঠ করান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর গত ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় গণভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। এর আগে ১০ জানুয়ারি রাতে নতুন মন্ত্রিসভার দায়িত্ব পেতে চাওয়া ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকেই ফেসবুকে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম এবং দপ্তর সম্বলিত একটি তালিকা ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, এই তালিকায় মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীদের নামের পাশে যেসব দপ্তরের নাম উল্লেখ রয়েছে তার অধিকাংশের সাথে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত দপ্তরের মিল নেই। দাবিকৃত তালিকা এবং প্রজ্ঞাপনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রীদের তালিকায় ২৫ জনের নাম রয়েছে যা আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিতে ছিল ২৩ জন। তালিকাটির সাথে প্রজ্ঞাপনের ১৩ জন মন্ত্রী ও পাঁচ জন প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের মিল রয়েছে। বাকিদের দপ্তরের সাথে তালিকায় থাকা মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তরের মিল পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ও দপ্তর বণ্টন সম্বলিত একটি ভুয়া তালিকা ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে যার সাথে মূল প্রজ্ঞাপনের অধিকাংশেরই মিল নেই; যা অধিকাংশই মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

খালেদা জিয়া বা মির্জা ফখরুল নয়, তালা ভেঙে বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকেছেন রিজভী  

সম্প্রতি, ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে “তালা ভেঙে  বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকলো রিজভী ফখরুল ও খালেদা জিয়া” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

বিএনপি কার্যালয়ে

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ১ লাখ ৫৯ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ৬ হাজার ৯ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, তালা ভেঙে  বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকার দাবিটি সঠিক নয় বরং গত ১১ জানুয়ারি বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের বিএনপির কার্যালয়ে ঢুকার ভিডিওকে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইলে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে দেখানো ভিডিওতে রুহুল কবির রিজভীর তালা ভাঙার একটি দৃশ্য দেখা গেলেও খালেদা জিয়া এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের তালা ভেঙে  বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকার দাবি সম্পর্কিত কোনো তথ্য কিংবা দৃশ্য পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই – ০১ ও ০২ 

অনুসন্ধানে দেখা যায় আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত প্রথম দুটি ভিডিও ক্লিপই গত ১১ জানুয়ারি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীদের তালা ভেঙে  বিএনপি কার্যালয়ের প্রবেশের বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশন ও সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিও (,) থেকে নেওয়া। 

Video Comparison : Rumor Scanner 
Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিও দুটিতে রুহুল কবির রিজভীকে বিএনপি কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেখা গেলেও ভিডিওর কোথাও খালেদা জিয়া কিংবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি।

ভিডিও যাচাই – ০৩ 

আলোচিত ভিডিওটির পরবর্তী ভিডিওটির অনুসন্ধানে বাংলা ভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ জানুয়ারি “বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশার জায়গা থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরেনি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত ভিডিওটির ক্লিপটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিও প্রতিবেদনে গত ১০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশের নির্বাচন ও বিরোধীদলের ওপর সরকারি নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নোত্তরের বিষয়ে বলা হয়। 

ভিডিও যাচাই – ০৪ 

সর্বশেষ ভিডিওটির অনুসন্ধানে এটিএন নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১০ জানুয়ারি “৯ মামলায় জামিন তবুও মুক্তি পাচ্ছেন না ফখরুল। Mirza Fakhrul। BD Politics। ATN News” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত ভিডিওটির ক্লিপটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনে গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ও রমনার ৯ টি মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন পাওয়ার বিষয়ে বলা হয়।

অর্থাৎ আলোচিত ভিডিওটিতে রুহুল কবির রিজভীর তালা ভেঙে  বিএনপি কার্যালয়ে প্রবেশ করার ভিডিওকেই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

তাছাড়া, গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ১১ জানুয়ারি তিনি গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের তাঁর বাসা ফিরোজায় পৌঁছান। এছাড়া, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে সংঘর্ষের পরদিন মির্জা ফখরুলকে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাবন্দী আছেন। 

মূলত, গত ১১ জানুয়ারি আড়াই মাস পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তালা ভেঙে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। উক্ত ঘটনার ভিডিওকেই তালা ভেঙে বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকলো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবির রিজভী শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। বর্তমানে খালেদা জিয়া তার বাসা ফিরোজায় রয়েছেন এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

সুতরাং, রুহুল কবির রিজভী, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং খালেদা জিয়ার তালা ভেঙে বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকার দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

নির্বাচনী সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য ফেসবুকে

গত ০৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের আগের রাত অর্থাৎ ০৬ জানুয়ারি রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে সংঘর্ষে মৃত্যুর ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

০৭ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে শুরু করে দিনভর একাধিক পোস্টে দাবি করা হচ্ছিল, সে সময় পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের সমর্থকদের সাথে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের সংঘর্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছে। 

অনলাইন এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে এ সংক্রান্ত দাবি করলেও পরে ভিডিওটি সরিয়ে নেন (গুগল ড্রাইভে ভিডিওটি দেখুন এখানে)। লাইভ ভিডিও প্রকাশের কিছুক্ষণ পরেই তিনি তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন যাতে ২৫ জন নিহত হওয়ার কথা সরাসরি উল্লেখ না করে দাবি করেন, ২৫ উইকেটের পতন হয়েছে। 

মৃত্যুর সংখ্যা

২৫ জন নিহত হওয়া সংক্রান্ত দাবিতে কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

কিছু পোস্টে মৃতের সংখ্যা ২৮ জন বলেও দাবি করা হয়েছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

আমাদের নজরে এমন পোস্টও এসেছে যেখানে মৃতের সংখ্যাটা ৪৫ জন বলে দাবি করা হয়েছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

পরদিন (০৮ জানুয়ারি) ফেসবুকের কিছু পোস্টে এই সংখ্যার দাবিটি ৭০ এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এ সংক্রান্ত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

অর্থাৎ, ভোটকেন্দ্র দখলসহ নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতায় সর্বনিম্ন ২৫ জন থেকে সর্বোচ্চ ৭০ জন পর্যন্ত মৃত্যুর দাবি ছড়িয়েছে ফেসবুকে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভোটকেন্দ্র দখলসহ নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতায় ২৫, ২৮, ৪৫ বা ৭০ জন নিহতের দাবিটি সঠিক নয় বরং গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত নয় জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নির্বাচনের দিন (০৭ জানুয়ারি) নিহত হয়েছে দুইজন। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে গত ০৬ জানুয়ারি ‘বিবিসি নিউজ বাংলা’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে জানানো হয়, ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনি প্রচার শুরুর পর থেকে ০৫ জানুয়ারি পর্যন্ত (সেদিন সকালেই প্রচারণা শেষ হয়) ১৮ দিনে ১৫৬টি জায়গায় নির্বাচনি সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আর এতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। 

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালের সংগঠন মানবাধিকার সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের বার্ষিক রিপোর্টের বরাত দিয়ে একই তথ্য দিয়েছে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা। 

জাতীয় গণমাধ্যম প্রথম আলো একই তথ্য উল্লেখ করে জানিয়েছে, নির্বাচনী প্রচারে প্রাণহানির প্রথম ঘটনা ঘটে গত ২৩ ডিসেম্বর, মাদারীপুরের কালকিনিতে। সেদিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় গত ০৩ জানুয়ারি (বুধবার) দিবাগত রাতে নৌকার প্রার্থীর এক সমর্থককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে, একইদিন দুপুরে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বাদুরা গ্রামে নির্বাচনী সহিংসতায় আহত স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি পূর্বশত্রুতার জের ধরে ঘটেছে। 

নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালীন মৃত্যুর একই সংখ্যা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরো কিছু প্রতিবেদন দেখুন চ্যানেল২৪, সময়ের আলো, সংবাদ। 

পরবর্তীতে নির্বাচনের আগেরদিন (০৬ জানুয়ারি) ভোটকেন্দ্র দখল বা সংশ্লিষ্ট কারণগুলোয় কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে কিনা এমন তথ্যের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেদিন সকালে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে ভোট কেন্দ্র পাহারায় থাকা এক গ্রাম পুলিশের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্মা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, ‘তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।’

এর বাইরে সেদিন একাধিক স্থানে ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়াসহ সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনা ঘটলেও এসব ঘটনায় কেউ নিহত হয়নি।  

অন্যদিকে, নির্বাচনের দিন (০৭ জানুয়ারি) সহিংসতায় দুইজন মৃত্যুর খবর দিয়েছে গণমাধ্যমগুলো (, , )। মুন্সিগঞ্জে নৌকা প্রার্থীর এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর কুমিল্লায় তর্কাতর্কির একপর্যায়ে ঈগল প্রতীকের কিছু সমর্থকের ধাক্কায় মাটিতে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন এক ব্যক্তি। 

এছাড়া, মাদারীপুরনেত্রকোনায় নির্বাচন পরবর্তী বিজয় মিছিলে হামলার ঘটনায় দুইজন মারা যাওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এর বাইরে ঝালকাঠিতে একজন নিহত হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত তাদের এক বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সে বছর (৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) নির্বাচনী সহিংসতায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১০। 

Screenshot: MSF

মূলত, গত ০৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গেল ডিসেম্বরে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে নির্বাচন পরবর্তী সময়েও বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের আগের রাত অর্থাৎ ০৬ জানুয়ারি রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনী সহিংসতা ও সংঘর্ষে মৃত্যুর ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা (২৫, ২৮, ৪৫, ৭০) প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, নিহতের যে সংখ্যাগুলো প্রচার করা হয়েছে তার কোনোটিই সঠিক নয়। নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর পর থেকে প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত সহিংসতায় মারা গেছে তিনজন। এছাড়া, নির্বাচনের আগের দিন একজন, নির্বাচনের দিন দুইজন এবং নির্বাচনের পরের দিন থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত সহিংসতায় মারা গেছে তিনজন। এ হিসেবে এখন অবধি মোট নিহতের সংখ্যা নয় জন। এছাড়া, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ২০২৩ সালে (৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) নির্বাচনী সহিংসতায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১০। অর্থাৎ, নির্বাচনী সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা কোনোভাবেই ২৫ বা তার উপরের সংখ্যাগুলোয় পৌঁছায়নি। 

উল্লেখ্য,  ২০১৮ সালে একাদশ জাতী‌‌য় সংসদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর দিন থেকে নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত ২১ দিনে সারা দেশে ২২ জন নিহত হয়। এর মধ্যে ভোটের দিনের সহিংসতাতেই ১৭ জন নিহত হয়।

সুতরাং, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতায় নয়জন মারা গেলেও মৃত্যুর ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র