সম্প্রতি, আইসিসি ওডিআই ফাইনালে ভারতের হারে বাংলাদেশিদের উল্লাসের ঘটনায় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ভারতীয় গণমাধ্যম আজ তকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের ‘যারা গরুর মুত না খেয়ে দুধ খায় তাঁরা পাকিস্তানি’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতীয় গণমাধ্যম আজ তকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী আলোচিত মন্তব্যটি করেননি বরং Friday Post নামের একটি স্যাটেয়ার ফেসবুক পেজ থেকে সার্কাজম হিসেবে এই মন্তব্যটি প্রথম প্রচার করা হয়; যা পরবর্তীতে বাস্তব দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।
সূত্রপাত
ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুল ব্যবহার করে দেখা যায়, গত ২১ নভেম্বর রাত ১০ টা ২০ মিনিটে Friday Post নামের একটি ফেসবুক পেজে ‘দেখে নিন আপনি পাকিস্তানি কিনা…. #fridaypost’ শিরোনামে সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) করা হয়।
পরবর্তীতে পেজটি নিয়ে অনুসন্ধানে পেজটির অ্যাবাউট সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পেজটি ‘Satire/Parody বা হাস্য রসাত্মক আধেয় বা কন্টেন্ট তৈরির উদ্দেশ্যে খোলা।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, মজার উদ্দেশ্যে চঞ্চল চৌধুরীর মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত উক্তিটি পরবর্তীতে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে বাস্তব দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে। এমন দুটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
Image Collage by Rumor Scanner
উক্ত পোস্টসমূহের ঘর পর্যালোচনা করে এটি দ্বারা ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে বিভ্রান্ত হতেও দেখা যায়।
এছাড়াও, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো সূত্রে বাংলাদেশিদের ভারত বিদ্বেষ নিয়ে চঞ্চল চৌধুরীর এমন কোনো মন্তব্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
মূলত, আইসিসি ওডিআই বিশ্বকাপের এবারের আসরের ফাইনালে স্বাগতিক দেশ ভারত অস্টেলিয়ার বিপক্ষে হারায় বাংলাদেশি ক্রিকেট প্রেমীদের উল্লাসের ভিডিও নিয়ে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। যার প্রেক্ষিতে ভারতীয় গণমাধ্যম আজ তক বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর একটি সাক্ষাৎকার নেন। সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে সাংবাদিকের প্রশ্নে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ আছে, যারা ভারতের সিনেমা ও খেলাকে সাপোর্ট করে। এ রকম প্রচুর আছে যারা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানকে স্বীকার করে। তবে কেউ কেউ আছে যারা এটা স্বীকার করে না। তারা বংশ পরম্পরায় ভারত বিরোধী। বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তি। যারা বিপক্ষের শক্তি তারা পাকিস্তানকে সাপোর্ট করে। ভারতকে পছন্দ করে না।’ উক্ত মন্তব্যের কারণে দর্শক শ্রোতাদের একটি অংশের ব্যাপক তোপের মুখে পড়তে হয় তাকে। এরই প্রেক্ষিতে, Friday Post নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘দেখে নিন আপনি পাকিস্তানি কিনা…. #fridaypost’ শিরোনামে ‘যারা গরুর মুত না খেয়ে দুধ খায় তাঁরা পাকিস্তানি’ শীর্ষক মন্তব্যসহ বেশকিছু মন্তব্য অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর নামে সার্কাজম হিসেবে প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত মন্তব্যটি বাস্তব দাবিতে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে প্রচার করা হয়।
সুতরাং, ‘যারা গরুর মুত না খেয়ে দুধ খায় তাঁরা পাকিস্তানি’ শীর্ষক দাবিতে একটি মন্তব্যকে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যাতে দাবি করা হচ্ছে, এটি ভারতের একটি রিয়েলিটি শো’র মঞ্চে বাংলা গজল ‘আজকে মরলে কালকে দুইদিন পরের দিন কেউ কাদবে না’ গাওয়ার দৃশ্য।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের একটি জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো Indian Idol এর মঞ্চে ‘আজকে মরলে কালকে দুইদিন পরের দিন কেউ কাদবে না’ শীর্ষক বাংলা গজল গাওয়া হয়নি বরং Indian Idol এর একাধিক পর্বের দৃশ্যের সাথে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ভিন্ন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি এক ছেলের গাওয়ার গজলের ভিডিও যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে বিচারকের আসনে ভারতের জনপ্রিয় গায়ক হিমেশ রেশামিয়া, গায়িকা নেহা কক্কর এবং কম্পোজার আনু মালিককে দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও, একই ভিডিওতে ভারতের জনপ্রিয় নায়ক বরুণ ধাওয়ান এবং নায়িকা কৃতি শ্যাননকেও দেখা গেছে।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটি মূলত Indian Idol এর দুইটি পর্বকে একত্র করে তৈরি করা হয়েছে। যার প্রথমটিতে জনপ্রিয় ভারতীয় গায়ক উদিত নারায়ণ এবং অভিজিৎ ভট্টাচার্যের সাথে প্রতিযোগীদের গান করতে দেখা যায়। উক্ত পর্বে পর্দায় দেখানো হিমেশ রেশামিয়া ও আনু মালিকের দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওতে দেখানো হিমেশ রেশামিয়া এবং আনু মালিকের দৃশ্যের হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটির দ্বিতীয় অংশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে হিমেশ রেশামিয়া এবং নেহা কক্কর এর আবেগঘণ মুহূর্তের দৃশ্যের সাথে দ্বিতীয় পর্বে তাদের দুজনকে পর্দায় দেখানোর দৃশ্যের সাথে হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটি থেকে জানা যায়, মূলত একজন প্রতিযোগীর গাওয়া একটি বিশেষ গানে হিমেশ রেশামিয়া আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ভিডিওটিতে সেই দৃশ্যই দেখানো হয়।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, Indian Idol এর উক্ত পর্বে বরুণ ধাওয়ান এবং কৃতি শ্যানন তাদের নতুন সিনেমা Bhediya এর প্রমোশনের জন্যে অতিথি হিসেবে আসেন। সেসময় বিচারকের আসনে বসে প্রতিযোগীদের গান উপভোগ করার সময়কার কিছু দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওতে দেখানো তাদের ফুটেজের সাথে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও প্রাসঙ্গিক নানা কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও ভারতীয় কোনো রিয়েলিটি শো’র মঞ্চে আলোচিত ভিডিওর গায়ককে উক্ত গজলটি গাওয়ার নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি ব্যতীতও উক্ত ব্যক্তির বেশকিছু ভিডিও ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। যেখানে তিনি একই প্রক্রিয়ায় ভারতীয় রিয়েলিটি শো’র বিভিন্ন দৃশ্যের সাথে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় নিজের গাওয়া গানের ভিডিও যুক্ত করে তা ইন্টারনেটে প্রচার করেছেন। ভিডিওগুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
মূলত, ভারতের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো Indian Idol এর তিনটি পর্বে গায়ক হিমেশ রেশামিয়া, গায়িকা নেহা কক্কর এবং কম্পোজার আনু মালিক বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এর একটিতে নায়ক বরুণ ধাওয়ান এবং কৃতি শ্যানন তাদের নতুন সিনেমার প্রমোশনের জন্যে অতিথি হিসেবে যুক্ত হন। উক্ত পর্বগুলোর ভিডিও পরবর্তীতে SET India এবং LIV Music নামক ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়। সম্প্রতি উক্ত রিয়েলিটি শো এর পর্ব তিনটির কিছু দৃশ্য সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিটের মাধ্যমে তাতে একটি বাংলা গজলের ভিডিও যুক্ত করে ভারতের একটি রিয়েলিটি শো’র মঞ্চে বাংলা গজল গাওয়ার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, ভারতীয় রিয়েলিটি শো’র মঞ্চে এর ‘আজকে মরলে কালকে দুইদিন পরের দিন কেউ কাদবে না’ শীর্ষক গজল গাওয়ার ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, “ফেরদৌস মনোনয়ন পাওয়ায় গর্ভবতী পূর্ণিমা” শীর্ষক শিরোনামে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ঢাকা মেইল এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “ফেরদৌস মনোনয়ন পাওয়ায় গর্ভবতী পূর্ণিমা” শীর্ষক শিরোনামে ঢাকা মেইল কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং ঢাকা মেইল এর একটি ফটোকার্ডের শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা লোগোর সূত্র ধরে ঢাকা মেইল এর ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া ঢাকা মেইল এর ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ২৭ নভেম্বর ঢাকা মেইল এর ফেসবুক পেজে “ফেরদৌস মনোনয়ন পাওয়ায় গর্বীত পূর্ণিমা” শীর্ষক শিরোনাম বা তথ্যে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে উক্ত ফটোকার্ডটির ডিজাইন, ফটোকার্ডটিতে যুক্ত ছবির হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়া আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনামের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের শিরোনামেরও অনেকটাই মিল পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটির শিরোনামে যুক্ত ‘গর্বিত’ শব্দের স্থলে আলোচিত ফটোকার্ডে ‘গর্ভবতী’ শব্দটি দেখা যায়। তবে আলোচিত ফটোকার্ড গর্ভবতী ও পূর্ণিমা শব্দ দুইটি যে ফন্টে লেখা হয়েছে সে ফন্টের সাথে ফটোকার্ডটির শিরোনামে থাকা বাকি শব্দগুলোর ফন্টের মিল নেই।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, গত ২৭ নভেম্বর ঢাকা মেইল এর ফেসবুক পেজে চিত্রনায়িকা পূর্ণিমাকে নিয়ে প্রকাশিত উক্ত ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া, ঢাকা মেইলের উক্ত ফটোকার্ড পোস্টের কমেন্টে একই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ঢালিউড অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ। ফেরদৌস আহমেদের মনোনয়ন পাওয়ায় তাকে শুভেচ্ছা জানান চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, অনুভূতিটা ভালো লাগার এবং গর্ববোধ করার মতো।
তাছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডের বিষয়ে ঢাকা মেইল এর ফেসবুক পেজে আজ (২ ডিসেম্বর) ‘মিথ্যা প্রচারণা’ শীর্ষক একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়। উক্ত পোস্টে ঢাকা মেইল এর নামে ছড়ানো এই ফটোকার্ডটি মিথ্যা বলে জানানো হয়।
মূলত, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ১০ আসনে আওয়ামী প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। যার প্রেক্ষিতে গত ২৭ নভেম্বর ফেরদৌসের দীর্ঘদিনের সহকর্মী চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার অভিব্যক্তি নিয়ে অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা মেইল ‘ফেরদৌস মনোনয়ন পাওয়ায় গর্বীত পূর্ণিমা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন এবং ফটোকার্ড প্রকাশ করে। পরবর্তীতে ঢাকা মেইলের উক্ত ফটোকার্ডটিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে বিকৃত করে ‘ফেরদৌস মনোনয়ন পাওয়ায় গর্ভবতী পূর্ণিমা’ শীর্ষক শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
সুতরাং, ‘ফেরদৌস মনোনয়ন পাওয়ায় গর্ভবতী পূর্ণিমা’ শীর্ষক তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে ঢাকা মেইল এর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।
আজ ২ ডিসেম্বর সকাল ৯ টা ৩৫ মিনিটে দেশব্যাপী সংঘটিত ভূমিকম্পের ঘটনায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ছুপুয়ায় আমির শার্ট গার্মেন্টসে আতঙ্কিত হয়ে ভবন থেকে সিঁড়ি দিয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে ৬ জন শ্রমিক নিহতের একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে ভবন থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ছুপুয়ায় আমির শার্ট গার্মেন্টসে পদদলিত হয়ে প্রায় শতাধিক শ্রমিক আহত হলেও উক্ত ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো শ্রমিক নিহত হননি। আহত অবস্থায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
প্রচারিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে চৌদ্দগ্রাম থানায় যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ শ্রীনাথ শাহা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নিহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে কয়েকজন বাড়িতে চলে গেছেন।’
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সামছুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এখন পর্যন্ত ৭৫ জন আমাদের এখানে চিকিৎসা নিয়েছে। তবে, নিহতের ঘটনা ঘটেনি।
পাশাপাশি, চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ফায়ারম্যান মঈনউদ্দীন সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, নিহতের কোনো খবর আমরা পাইনি।
এছাড়া উক্ত ঘটনার বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন: প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, বিডিনিউজ২৪।
মূলত, আজ শনিবার সকাল ৯ টা ৩৫ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বলছে, ঢাকা থেকে ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায় ছিল এর উৎপত্তিস্থল। এই ঘটনার পরপরই ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ছুপুয়ায় আমির শার্ট গার্মেন্টসের ভবন থেকে সিঁড়ি দিয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৬ জন শ্রমিক নিহতের একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে গণমাধ্যমের সংবাদে কুমিল্লায় ভূমিকম্পের আতঙ্কে গার্মেন্টসে পদদলিত হওয়ার এই ঘটনায় প্রায় শতাধিক শ্রমিক আহতের খবর পাওয়া গেলেও ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট পুলিশ, হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে উক্ত ঘটনায় ৬ শ্রমিক নিহতের দাবির কোনো সত্যতা পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ছুপুয়ায় আমির শার্ট গার্মেন্টসে ভূমিকম্প আতঙ্কে ভবন থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে প্রায় শতাধিক শ্রমিক আহত হলেও কেউ মারা যায়নি। তাই উক্ত ঘটনায় ৬ জন নিহতের দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
চৌদ্দগ্রাম থানা অফিসার ইনচার্জ বক্তব্য
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মেডিকেল অফিসার বক্তব্য
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ৮২৩ বছর পর এবছর ডিসেম্বরে ৫টি শুক্রবার আসার দাবিটি সঠিক নয় বরং কয়েক বছর পরপরই এমনটা ঘটে।
মূলত, ইংরেজি ক্যালেন্ডারে ৩১ দিনের মাস ৭ টি এবং ৩০ দিনের মাস মোট ৫ টি। আর ৩১ দিনের মাস যে বার দিয়ে শুরু হয় সেই বার এবং তার পরবর্তী ২ টি বার উক্ত মাসে ৫ বার আসে। একইভাবে ৩০ দিনের মাস যে বার দিয়ে শুরু হয় সেই বার এবং তার পরবর্তী বার উক্ত মাসে ৫ বার আসে। যেমন চলতি ডিসেম্বর মাস শুরু হয়েছে শুক্রবার, তাই এই মাসে শুক্রবার, শনিবার এবং রবিবার মোট ৫ বার আসবে। একইভাবে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে, ২০২২ এর এপ্রিল, জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসেও মোট ৫ টি করে শুক্রবার এসেছিল।
উল্লেখ্য, একাধিক সময়ে একই দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে সেসময় এবিষয়ে ফ্যাক্টচেকপ্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, ভারতীয় জাতীয় দলের পেসার মোহাম্মদ শামি নিজের বলে আউট হওয়ার জন্য ব্যাটারদেরকে টাকা দিয়েছেন শীর্ষক একটি মন্তব্যকে শামির স্ত্রী হাসিন জাহানের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতীয় জাতীয় দলের পেসার মোহাম্মদ শামি নিজের বলে আউট হওয়ার জন্য ব্যাটারদেরকে টাকা দিয়েছেন শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি তার স্ত্রী হাসিন জাহান বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত মন্তব্যটি হাসিনের নামে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানের প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এবিষয়ে সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট হিসেবে Indian Cricket Sarcasm নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ২৫ নভেম্বর ‘Shami gives money to players to take their wickets’ শীর্ষক শিরোনামে হাসিনের ছবি নিয়ে প্রকাশিত ডিজিটাল ব্যানার সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ব্যানারটি পর্যবেক্ষণ করে সেখানে দেখা যায়, শামিকে নিয়ে তার স্ত্রী হাসিনের উক্ত মন্তব্য সম্বলিত তথ্যের কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
Screenshot: Facebook
উক্ত ব্যানারের তথ্যটি পরবর্তীতে বাংলায় অনূদিত হয়ে বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে হাসিনের করা বাস্তব মন্তব্য দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে উক্ত ব্যানারে ব্যবহৃত হাসিন জাহানের ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের কিনা সেবিষয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম Dynamite News এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ ‘Shami’s wife Hasin Jahan to meet Mamata Banerjee on March 23’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Dynamite News
অর্থাৎ, হাসিন জাহানের এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
এছাড়াও, কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম ZEENEWS এর ওয়েবসাইটে Mohammed Shami’s Estranged Wife Denies Saying, ‘He Pays Batters To Pick Wickets’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে হাসিন জাহানের একটি ইন্সটাগ্রাম পোস্টের বরাতে জানানো হয়, শামিকে নিয়ে প্রচারিত উক্ত মন্তব্যটি হাসিনের নয়।
পরবর্তীতে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে হাসিন জাহানের ভেরিফাইড ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডেলে গত ২৭ নভেম্বর প্রকাশিত উক্ত পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Instagram
উক্ত পোস্টে হাসিন জাহান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার নামে মিথ্যা খবর ছড়ানো হচ্ছে এবং সমাজের সামনে তাকে হেয় করার জন্য একদল অসামাজিক লোক মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শামি ২০১৮ সালে উমেশ নামের এক মিডিয়া মাফিয়াকে তার নামে অপপ্রচার চালানোর জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত মোহাম্মদ শামিকে নিয়ে তার স্ত্রী হাসিন জাহানের উক্ত মন্তব্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০১৪ সালে বিবাহের চার বছরের মাথায় ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার মোহাম্মদ শামি এবং তার স্ত্রীর মধ্যকার বিভিন্ন সমস্যার বিষয়টি সামনে আসে। পরবর্তীতে শামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে হাসিনকে মন্তব্য করতে দেখা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে শামি নিজের বলে আউট হওয়ার জন্য ব্যাটারদেরকে টাকা দিয়েছেন শীর্ষক একটি মন্তব্যকে শামির স্ত্রী হাসিন জাহানের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসিন জাহান উক্ত মন্তব্যটি করেননি। প্রকৃতপক্ষে Indian Cricket Sarcasm নামের একটি ফেসবুক পেজে সার্কাজম হিসেবে উক্ত দাবিটি প্রচার হওয়ার তা পরবর্তীতে হাসিনের বাস্তব মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে আলাদা থাকলেও এখন পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় দলের ক্রিকেটার মোহাম্মদ শামি এবং তার স্ত্রী হাসিন জাহানের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ হয়নি।
সুতরাং, ভারতীয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ শামি নিজের বলে আউট হওয়ার জন্য ব্যাটারদেরকে টাকা দিয়েছেন শীর্ষক একটি মন্তব্যকে শামির স্ত্রী হাসিন জাহানের মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। চলমান এই সংঘাতের মধ্যেই সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে ৩৭ দিন পর এক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি প্রচার করা হয়েছে দেশের একাধিক গণমাধ্যমে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া এই নবজাতক ৩৭ দিন নয় বরং ৩ ঘন্টা আটকে ছিল ধ্বংসস্তূপে।
দেশের গণমাধ্যমগুলোতে এ সংক্রান্ত সংবাদের সূত্র হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত গালফ নিউজের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের শিরোনামে একই তথ্যই উল্লেখ থাকলেও মূল সংবাদে বলা হয়েছে, সংঘাত শুরুর ৩৭ দিনে এসে নবজাতকটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।
গালফ নিউজ তাদের খবরের সূত্র হিসেবে নুহ আল শাঘনোবি (Nooh Al Shaghnobi) নামে নবজাতকটিকে উদ্ধারের সময় উপস্থিত থাকা একজন সিভিল ডিফেন্স সদস্য এবং ফটোগ্রাফারের নাম উল্লেখ করেছে যিনি তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রকাশ করেছেন বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
এই তথ্যের সূত্র ধরে ইনস্টাগ্রামে নুহ আল শাঘনোবির অ্যাকাউন্টে গত ২৭ নভেম্বর এই নবজাতক সম্পর্কিত চারটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রথম পোস্টে নবজাতকটিকে উদ্ধারের সময়ের একটি ভিডিও যুক্ত করে তিনি ক্যাপশনে আরবিতে যা লিখেছেন বাংলা ভাষায় তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায়, যুদ্ধের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই শিশুটির বয়স এক মাসেরও কম৷ মা-বাবাকে হারিয়ে সে নতুন জীবন ফিরে পায় যখন তাকে তিন ঘন্টার চেষ্টায় ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়।
Screenshot: Instagram
দ্বিতীয় পোস্টে শাঘনোবি নবজাতকটির সাথে ধারণ করা সকল উদ্ধারকর্মীর ছবি পোস্ট করে একই ক্যাপশন দিয়েছেন।
Screenshot: Instagram
তৃতীয় আরেক পোস্টে নবজাতকটিকে নিয়ে গাড়িতে করে ফেরার পথের একটি ভিডিও যুক্ত করেছেন তিনি, যাতে একই ক্যাপশনই রয়েছে।
অর্থাৎ, নবজাতকটির বিষয়ে প্রচারিত খবরের সূত্র হিসেবে নুহ আল শাঘনোবি নামে যে ব্যক্তির ইনস্টাগ্রাম পোস্টের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যই নেই৷
এ বিষয়ে আরো জানতে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল ফিলিস্তিনের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান কাশিফ (Kashif) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিহাম আবু আইতা’র (Reham Abu Aita) সাথে। রিহামও নিশ্চিত করেছেন যে, সালাম নামের আলোচিত মেয়ে নবজাতকটি তিন ঘন্টা আটকে ছিলেন ধ্বংসস্তুপের নিচে।
মূলত, ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত চলাকালীন গত ২৭ নভেম্বর গাজায় এক নবজাতককে ধ্বংসস্তূপে তিন ঘন্টা আটকে থাকার পর উদ্ধারের খবর জানান স্থানীয় এক উদ্ধারকর্মী। এই ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে ৩৭ দিন বেঁচে ছিল নবজাতক, যা সঠিক নয়৷
সুতরাং, গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে এক নবজাতকের তিন ঘন্টা আটকে থাকার ঘটনাকে গণমাধ্যমে ৩৭ দিন আটকে থাকার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির পদ থেকে কাজী সালাউদ্দিন পদত্যাগ করেছেন এবং এই পদের জন্য নতুন দায়িত্বে এসেছেন ইমরুল হাসান” র্শীষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, কাজী সালাউদ্দিন বাফুফের সভাপতির পদ থেকে নয় বরং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত “হঠাৎ লিগ কমিটির দায়িত্ব ছাড়লেন সালাউদ্দিন” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
Source: প্রথম আলো
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তার জায়গায় লিগ কমিটির নতুন চেয়ারম্যান করা হয়েছে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি এবং বাফুফে সহ-সভাপতি ইমরুল হাসানকে।
তবে জনাব সালাউদ্দিন বাফুফের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে কোনো তথ্য নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তার স্থলাভিষিক্ত হন ইমরুল হাসান। এই ঘটনাকেই কাজী সালাউদ্দিন বাফুফের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচারিত হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগের ঘটনাকে বাফুফের সভাপতির পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেছেন শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ‘আর্জেন্টিনার দর্শকদের লাঠিচার্জ করায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ব্রাজিলকে ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করেছে ফিফা’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আর্জেন্টিনার দর্শকদের লাঠিচার্জ করায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা (ফিফা) ব্রাজিলকে ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করার দাবিটি সত্য নয় বরং কোনোপ্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উক্ত দাবির স্বপক্ষে তথ্য খুঁজের চেষ্টা চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে অনুন্ধানে বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে এই দাবির স্বপক্ষে কোনো তথ্য মেলেনি।
পরবর্তীতে গত ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল ম্যাচের গ্যালারিতে দুই দলের সমর্থকদের লড়াইয়ের বিষয়ে ফিফার সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে জানতে আবারো কী-ওয়ার্ড সার্চ করা হয়। অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা AP এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ নভেম্বর Argentina and Brazil charged by FIFA after fan violence delays World Cup qualifying game at Maracana শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২১ নভেম্বরে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপ – ২০২৬ এর বাছাইপর্বের ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনার মধ্যকার খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের খেলা শুরু হতে বিলম্ব হওয়ায় ফিফা আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
এতে ফিফা আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ভিড়ের ঝামেলা এবং দেরিতে শুরু করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে এবং ব্রাজিলিয়ান ফেডারেশনের বিরুদ্ধে খেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার অভিযোগে অভিযুক্ত করে।
তবে আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা (ফিফা) এই অভিযোগের বিচার ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো সময়সূচি প্রকাশ করেনি।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম The Washington Post এ গত ২৪ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া, আন্তির্জাতিক ক্রীড়া গণমাধ্যম ESPN এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৪ মার্চের আগ পর্যন্ত ব্রাজিল ফুটবল দলের কোনো আন্তর্জাতিক খেলা নেই। অন্যদিকে আর্জেন্টিন ফুটবল দলেরও ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক খেলা নেই।
মূলত, গত ২১ নভেম্বরে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপ – ২০২৬ এর বাছাইপর্বের ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনার মধ্যকার খেলা শুরু হতে বিলম্ব হওয়ায় ফিফা আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। যেখানে, ফিফা আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ভিড়ের ঝামেলা এবং দেরিতে শুরু করার অভিযোগে এবং ব্রাজিলিয়ান ফেডারেশনের বিরুদ্ধে খেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা (ফিফা) এই দুই দলের মামলার বিচার ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো সময়সূচি প্রকাশ করেনি। তবে সম্প্রতি, সে ম্যাচে ‘আর্জেন্টিনার দর্শকদের লাঠিচার্জ করায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা (ফিফা) ব্রাজিলকে ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে’ দাবিতে একটি ভুয়া তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, আর্জেন্টিনার দর্শকদের লাঠিচার্জ করায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা (ফিফা) ব্রাজিলকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভুয়া তথ্য, প্রোপাগান্ডা, পাল্টা-প্রোপাগান্ডার প্রচার বাড়ছে। প্রোপাগান্ডা, বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং ভুয়া খবর জনমতের মেরুকরণ ও ম্যানিপুলেশন, সহিংসতা উস্কে দেওয়া, সর্বোপরি গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। নির্বাচনকে ঘিরে ভুয়া তথ্যের প্রচার সামনে আরও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও মিথ্যা সংবাদ ব্যাপকভাবে নানান কৌশলে ও নানান উপায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে তেমন একটি আলোচিত কৌশল হল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের নিউজ ফটোকার্ড এডিট করে নিজেদের মতো সংবাদ বা তথ্য বসিয়ে প্রচার। অনলাইনে যারা জনগণের মতামতের জগতকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়, উস্কে দিতে চায়, তারা ভুয়া তথ্যকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের নিউজ ফটোকার্ড এডিটের মাধ্যমে প্রচার করার এ কৌশল অবলম্বন করছে, যা গত কয়েকমাসে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। লোকজনও সেগুলোকে আসল মনে করে বিশ্বাস করে নিচ্ছে, প্রভাবিত হচ্ছে এবং কেউ কেউ শেয়ারও করছে।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটার অন্যতম। সংবাদমাধ্যমগুলো গত কয়েকবছর আগেও তাদের সোস্যাল মিডিয়া পেজে নিউজ আর্টিকেল সরাসরি প্রচার করার মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন করতো। গত কয়েকবছরে সামাজিক মাধ্যমে গণমাধ্যমগুলোর সংবাদ প্রকাশের কৌশলে পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো আর্টিকেল পোস্ট করার পাশাপাশি এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে নিউজ ফটোকার্ড প্রকাশ। সোস্যাল মিডিয়ায় নিউজ পরিবেশনকে আরও বেশি আকর্ষণীয় এবং অধিকসংখ্যক রিচ পেতে এ ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটে। ফটোকার্ডে সাধারণত সংবাদ সংশ্লিষ্ট একটি ছবি এবং সংবাদের হেডলাইনকে সুন্দর ডিজাইনে উপস্থাপন করা হয়। এর ফলে সামাজিক মাধ্যমে সেই সংবাদের পাবলিক এংগেজমেন্ট এবং রিচ বেশি পাওয়া যায়। সংবাদকে আকর্ষণীয় ও অধিকসংখ্যক মানুষের কাছে পৌছানোর নিমিত্তে গণমাধ্যমের প্রবর্তিত এ মাধ্যমকে সম্প্রতি অপব্যবহার করে ভুয়া তথ্য প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে নিচ্ছে অনলাইন দৃষ্কিতিকারীরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের নিউজ ফটোকার্ড এডিট করে ভুয়া তথ্য প্রচারের ফলে ভুয়া তথ্য অধিকতর বিশ্বস্তভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে।
২৮ অক্টোবর ঢাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দেশের মূল ধারার সংবাদমাধ্যম একাত্তর টিভির সৌমিত্র মজুমদার, সমকালের কাজল হাজরা এবং জাগোনিউজ২৪ এর বিভাষ দিক্ষীত বিপ্লব বিএনপি ও শিবির কর্মীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন দাবিতে গণমাধ্যম তিনটির আদলে তৈরি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে সাংবাদিক আক্রমণের শিকার এ দাবিগুলো ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়। একাত্তর টিভি, সমকাল ও জাগোনিউজ২৪ এমন কোনো সংবাদের ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এবং উল্লেখিত সাংবাদিকরা কোনো আক্রমণের শিকার হননি বলে গণমাধ্যমগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়।
ভীতি ছড়াতেও নকল ফটোকার্ড প্রচারিত হয়েছে। বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের দিন সকালে মানবজমিন এবং যমুনা টেলিভিশনের ফটোকার্ড নকল করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে “২৮শে অক্টোবর সমাবেশে কমপক্ষে ৮০-১০০ টা লাশ চায় তারেক জিয়া” শীর্ষক ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়।
ঢাবির বিশেষ সমাবর্তন স্থগিত দাবিতেও প্রচারিত হয় ভুয়া ফটোকার্ড। প্রথম আলো ও কালবেলা’র ডিজাইন নকল করে নিরাপত্তা বা হরতালজনিত কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) বিশেষ সমাবর্তন স্থগিত হওয়ার গুজব প্রচারিত হয়।
গত ২ নভেম্বর মূলধারার চারটি সংবাদমাধ্যমের ফটোকার্ড নকল করে সরকার পতন ও নতুন সরকার গঠন নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচারিত হয়। প্রথম আলো, একাত্তর টেলিভিশন, আজকের পত্রিকা এবং কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত পৃথক ৪ টি ফটোকার্ডে ৩ নভেম্বরের মধ্যে বর্তমান সরকারের পতন ও ১৫ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় সরকার গঠন শীর্ষক এ ভুয়া মন্তব্য প্রচার করা হয়।
একই দিনে কালবেলার ফটোকার্ড এডিট করে ছাত্রদল নেত্রী মানসুরা আলমকে জড়িয়ে প্রচারিত হয় ভুয়া গণধর্ষণের খবরও। অনুসন্ধানে দেখা যায় নয়াপল্টনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও আইন বিভাগের ছাত্রী মানসুরা আলমের গণধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং দৈনিক কালবেলাও উক্ত শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। বরং কালবেলার ফটোকার্ড এডিট করে প্রচার করা হয়েছিল ভুয়া তথ্য।
এছাড়াও রিউমর স্ক্যানার গত কয়েকমাসে সংবাদমাধ্যমের নিউজ ফটোকার্ড এডিট করে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অসংখ্য উদাহরণ দেখেছে, তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে।
নকল ফটোকার্ড কিছুক্ষেত্রে শনাক্ত করা সহজ হলেও অনেক সময় শুধু দেখে শনাক্ত করা সহজ হবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফটোকার্ডের ফন্ট, ওভারভিউ দেখে ভুয়া ফটোকার্ড বোঝা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের আসল ফটোকার্ড সংগ্রহ করে তার ওপরই এডিট করেই ভুয়া ফটোকার্ড তৈরি করা হয়। নকল ফটোকার্ড দক্ষতার সাথে হুবহু নকল করে তৈরি করা হলে সেক্ষেত্রে শুধু দেখে আসল-নকল চেনা দুষ্কর হয়ে পড়ে।
উদাহরণ হিসেবে নিচের ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ডটি দেখা যাক। এই ফটোকার্ডটি আসল কি নকল তা দেখে বলা অনেকের পক্ষেই সম্ভব। যদিও কেউ কেউ আছে যারা এ ফটোকার্ডকেও আসল হিসেবে গ্রহণ করবে। ফটোকার্ডটির ফন্ট, বানান ইত্যাদি কারণে দেখেই বলা যেতে পারে এটি ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ড এর ওপর এডিটকার্য সম্পাদন করে প্রচারিত একটি ভুয়া ফটোকার্ড।
এবার নিচের ফটোকার্ডটি দেখুন। এখানে মানবজমিন এর ফটোকার্ডে বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার একটি বক্তব্য দেখা যাচ্ছে। যদিও এই ফটোকার্ডটি ভুয়া, কিন্তু উপরের মতো কেবল দেখেই এই ফটোকার্ডটি আসল না নকল তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে মূলত বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। একটি ভুয়া বক্তব্য তৈরি করে তা রুমিন ফারহানার নামে মানবজমিন এর ফটোকার্ডে সুন্দর করে এডিট করে প্রচার করার কারণে অনেকেই এটি বিশ্বাস করে নেবে, প্রতিক্রিয়া দেখাবে– ঘটেছেও তাই।
এখন প্রশ্ন হলো যখন দক্ষতার সাথে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ফটোকার্ড এমনভাবে নকল করা হবে তখন কিভাবে আমরা ফটোকার্ড আসল না নকল চিনব! উপরের এই প্যারাটি প্রথমে ‘কিভাবে নকল ফটোকার্ড চিনবেন’ শিরোনাম দিয়ে শুরু করা হয়েছিল, কিন্তু পরে দেখা গেল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নকল ফটোকার্ড দেখে চেনার উপায় নেই। বরং এক্ষেত্রে ফটোকার্ড যাচাই করার পর তা আসল না নকল নিশ্চিত হতে হবে। পরে তাই এই প্যারার হেডিং এর সাথে কিভাবে নকল ফটোকার্ড যাচাই করবেন কথাটি যুক্ত করতে হয়েছে। তো চলুন কিভাবে ফটোকার্ড আসল কি নকল তা যাচাই করার সরল একটি পদ্ধতি জেনে রাখা যাক।
উদাহরণ হিসেবে নিচের ফটোকার্ডটি নেয়া যাক। ফটোকার্ড দেখলে বোঝা যাচ্ছে এটি গত ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত প্রথম আলোর ফটোকার্ড, যেখানে মঞ্চে উঠে ওবায়দুল কাদেরকে অতিরিক্ত কথা বলতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শীর্ষক একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
এখন এই ফটোকার্ড আসল না নকল তা আমরা সহজভাবে চলুন যাচাই করার চেষ্টা করি। যাচাই এর আগে আমাদের তথ্যের প্রতি সন্দেহপ্রবন হওয়ার প্রয়োজন আছে। এই সন্দেহ যাচাই করার তাড়না বা প্রবণতা সৃষ্টি করবে। ব্যক্তি জীবনে সন্দেহবাতিক হওয়া ভালো না হলেও তথ্য বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সন্দেহপ্রবন হওয়া ভালো। তথ্যের প্রতি আপনার সন্দেহপ্রবণতা ওই তথ্য যাচাই করে নিয়ে বিশ্বাস করার অভ্যাস তৈরিতে সহযোগিতা করবে। তথ্যের প্রতি এই সন্দেহপ্রবনতাকে ক্রিটিকাল থিংকিং এর একটি চর্চা ধরে নিতে পারেন যে আমি সবকিছু সহজ-সরলভাবে বিশ্বাস করে নিতে চাই না। এই তথ্য কিভাবে আসলো, এই মন্তব্য কি আসলেই করেছে, এই তথ্যের সূত্র কি, প্রথম আলো এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে কি না, আমি এ তথ্য মূল উৎস থেকে দেখে বিশ্বাস করতে চাই। এ বিষয়টি ওপরের ফটোকার্ডের ক্ষেত্রে হবে– এটা যেহেতু প্রথম আলোর নিউজ ফটোকার্ড তাই প্রথম আলোর পেজ থেকে দেখে তারপর আমি এটা বিশ্বাস করতে চাই।
অর্থাৎ, নকল ফটোকার্ড এর ফাঁদে পড়ে ভুয়া তথ্য যাতে বিশ্বাস না করে ফেলি সেজন্য ফটোকার্ডের ক্ষেত্রে আমাদের থার্ড পার্টি কারো কাছ থেকে দেখে তা গ্রহণ না করে যে সংবাদমাধ্যমের ফটোকার্ড তাদের পেজে দেখে গ্রহণ করার চর্চা করতে হবে। এমতবস্থায় ফটোকার্ডের ক্ষেত্রে সবসময় সংবাদমাধ্যমের পেজ তথা মূল সোর্স থেকে দেখে নেয়া জরুরি।
উপরের ফটোকার্ডটি থেকে দেখা যাচ্ছে এটি প্রথম আলোর ২৭ অক্টোবরে প্রকাশিত। তাহলে এটা সহজে যাচাই এর জন্য প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে যেতে হবে। তারপর ফটোস অপশনে গিয়ে ২৭ অক্টোবরে প্রথম আলোয় প্রকাশিত সকল ফটোকার্ড অনুসন্ধান করলেই ওই ফটোকার্ড প্রথম আলো প্রকাশ করেছে কিনা তা জানা যাবে। এভাবে সাধারণত কোনো ফটোকার্ড আসল না নকল তা সহজেই যাচাই করা সম্ভব। কিংবা ফটোকার্ডের লেখা কপি করে তা সার্চ করে অনুসন্ধানের মাধ্যমেও জানা যেতে পারে। উপরের এ ফটোকার্ড যাচাই করতে গিয়ে দেখা গেছে এটি প্রথম আলোর ফটোকার্ড এডিট করে প্রচারিত একটি ভুয়া ফটোকার্ড।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে একটি সংবাদমাধ্যম ফটোকার্ড প্রকাশের পর তা কোনো কারণে সরিয়ে ফেলেছে। এক্ষেত্রে কিছুটা অ্যাডভান্স অনুসন্ধান করে সেটা বের করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে এটি নিয়ে ভাবনার কিছু নেই এমন ঘটনা কম ক্ষেত্রেই ঘটবে, আর এমন ঘটেছে সন্দেহ হলে আসলেই এমন ঘটেছে কি না তা নিজে অনুসন্ধান করে বের করার চেষ্টা করা যেতে পারে কিংবা আমাদের জানানো যেতে পারে। আমাদের যেকোনো সন্দেহজনক তথ্য পাঠালে আমরা দ্রুততম সময়ে তা যাচাই করে দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি। আমাদের সাথে যোগাযোগের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইল কিংবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করার মাধ্যমে সন্দেহজনক তথ্য যাচাইয়ের অনুরোধ করা যায়।