রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নুর বাহিনীর ঢাকা ঘেরাওয়ের ভিডিও দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০২২ সালের ০৭ অক্টোবরে ছাত্রলীগ কর্তৃক ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মারধর করে পুলিশে দেওয়ার অভিযোগের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকায় গণ অধিকার পরিষদের মশাল মিছিলের ভিডিও। যা ভুয়া লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপের সহায়তায় সাম্প্রতিক ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
মূলত, ২০২২ সালের ০৭ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে ঐ দিনই মশাল মিছিল করে গণ অধিকার পরিষদ। সম্প্রতি ঐ মশাল মিছিলের একটি ভিডিওকে নুর বাহিনীর রাতের মধ্যেই ঢাকা ঘেরাও করার ভিডিও দাবিতে ভুয়া লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপের সহায়তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে ভিডিওটি প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
গতকাল ৫ ডিসেম্বর জনপ্রিয় ভিডিও গেম সিরিজ গ্র্যান্ড থেফট অটোর নতুন কিস্তি গ্র্যান্ড থেফট অটো-৬ (জিটিএ-৬) এর ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। উক্ত বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো গেম সিরিজটিকে সিনেমা সিরিজ উল্লেখ করে সংবাদ প্রচার করেছে।
সংবাদটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘ভিডিও গেমস নিয়ে আলোচিত সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ এখনো তুঙ্গে। ১০ বছর পরে নতুন রূপে আসছে গ্র্যান্ড থেফট অটো ৬ সিনেমার সিকুয়েল। গতকাল অ্যাকশন, ক্রাইম ড্রামা ঘরানার এই সিনেমার ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। প্রথম দিনে এই ট্রেলার দেখেছেন ১০ মিলিয়ন দর্শক। দেড় মিনিটের এই ট্রেলার থেকে জানা যায়, সিনেমাটি এবারই প্রথম নারীপ্রধান চরিত্রের দেখা পাওয়া যাবে। সিনেমাটি ২০২৫ সালে মুক্তি পাবে।’
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্র্যান্ড থেফট অটো (জিটিএ) সিনেমা সিরিজ নয় বরং এটি একটি ভিডিও গেম সিরিজ।
গ্র্যান্ড থেনফট অটো কী?
গ্র্যান্ড থেফট অটো (জিটিএ) মূলত জনপ্রিয় একটি অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার ভিডিও গেম সিরিজ। এই ভিডিও গেম সিরিজটি রকস্টার নর্থ (পূর্বে ডিএমএ ডিজাইন নামে পরিচিত) তৈরি করে এবং রকস্টার গেমস প্রকাশ করে। ১৯৯৭ সালে গ্র্যান্ড থেফট অটো প্রথম বাজারে আসে। গেমটির সর্বশেষ সংস্করণ গ্যান্ড থেফট অটো-৫ (জিএটিএ-৫) ২০১৩ সালে প্রকাশ পায়।
গতকাল ৫ ডিসেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন গেমটির নতুন কিস্তি জিটিএ-৬ এর ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। গেমের এই নতুন কিস্তি ২০২৫ সালে প্রকাশ করা হবে।
পরবর্তীতে, রকস্টার গেমসের ইউটিউব চ্যানেলে ট্রেলারটি খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত, গতকাল জনপ্রিয় অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার ভিডিও গেম সিরিজ গ্র্যান্ড থেফট অটো (জিটিএ) এর নতুন কিস্তি জিটিএ-৬ এর ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। গেমটির নতুন এই কিস্তি ২০২৫ সালে প্রকাশিত হবে। উক্ত বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো গ্র্যান্ড থেফট অটো কে সিনেমা সিরিজ হিসেবে উল্লেখ করে।
সুতরাং, গ্র্যান্ড থেফট অটো (জিটিএ) ভিডিও গেম সিরিজ হলেও দৈনিক প্রথম আলো এটিকে সিনেমা সিরিজ দাবি করে সংবাদ প্রকাশ করেছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, নতুন জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর মধ্যেই একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, কতিপয় নারী-পুরুষ প্যাঁক প্যাঁক শীর্ষক হাঁসের ডাকের শব্দগুচ্ছ উচ্চারণের মাধ্যমে হাঁসের চলার মতো করি ভঙ্গি করছেন। দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।
উল্লিখিত ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওগুলো প্রায় চার লাখ বার দেখা হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্যাঁক প্যাঁক শীর্ষক আলোচিত ভিডিওটি দেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অধীন কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণের দৃশ্য নয় বরং ২০২২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গণিত বইয়ের বিষয়গুলো সহজ ও আনন্দের সাথে শিক্ষার্থীদের শেখাতে গণিত অলিম্পিয়াডের আদলে শিখন কৌশলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভাইরাল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একটি কক্ষে কিছু ব্যক্তি হাঁসের প্যাক প্যাক ডাল সদৃশ ভঙ্গিতে কসরত করছেন। কক্ষের দেয়ালে একটি ব্যানার দেখা যাচ্ছে, যাতে লেখা ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ। স্থানের নাম উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, বদলগাছী, নওগাঁ লেখা রয়েছে। তবে ভিডিওটি কবের সে বিষয়ে ব্যানারটি থেকে স্পষ্ট ধারণা মেলেনি।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে ২০২২ সালের ০৬ অক্টোবর ফেসবুকের একটি গ্রুপে Shapan Hossain নামে এক ব্যক্তির একটি পোস্ট (আর্কাইভ) নজরে আসে আমাদের। এই পোস্টেও প্রায় একই ব্যানার ছিল যাতে তারিখ স্পষ্টতই পড়া যাচ্ছে, ০৩ থেকে ১০ অক্টোবর এবং এখানেও সমজাতীয় আরও ছয়টি ভিডিও ছিল, ছিল চারটি ছবিও। তবে উক্ত ভিডিওটি এই পোস্টে ছিল না।
এই পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যাচ্ছে, ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয় ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণের ৩য় দিনের কার্যক্রমের দৃশ্য এগুলো৷ স্থান – উপজেলা রির্সোস সেন্টার, বদলগাছী, নওগাঁ।
Screenshot: Facebook
আমরা জনাব স্বপনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তবে ভিডিওটির বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি।
রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, সে সময় দেশের একাধিক স্থানেও একই প্রশিক্ষণের ছবি পোস্ট করেছেন অনেকে। কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার এই প্রশিক্ষণের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
আমরা মূল ভিডিওটির খোঁজে আরও অনুসন্ধান করে একই বছরের (২০২২) ১১ মার্চ Gazipur City নামক একটি পেজে একই ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়৷
কাছাকাছি সময়ে দেশের আরো কিছু স্থানে এই ধরণের প্রশিক্ষণের খবর পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে যশোরেও একই ধরণের প্রশিক্ষণের (হাসের প্যাক প্যাক সদৃশ প্রশিক্ষণ) পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পেয়েছি আমরা।
এই পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে, দশমিক ভগ্নাংশ চেনার জন্য এই পদ্ধতিতে শিশুদের শিখনে পারদর্শী করতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল।
Screenshot: Facebook
ভাইরাল ভিডিওটি ধারণের স্থান অর্থাৎ নওগাঁর বদলগাছিতে উক্ত প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন এমন দুইজন শিক্ষকের খোঁজ পেয়েছি আমরা। তৎকালীন বদলগাছির মিঠাপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রতন কুমার সরকারের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি বলছিলেন, “এটা গত বছরের ঘটনা। নির্দিষ্ট তারিখ মনে পড়ছে না এই মুহূর্তে। তবে কোনো নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত নয় এটি। এটা এখন আর হচ্ছেও না।”
তৎকালীন বদলগাছির কাটগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাহমুদুল হাসানের সাথে কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। জনাব রতন আমাদেরকে বলেছেন, এই প্রশিক্ষণের দায়িত্বে মাহমুদুলই ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, চতুর্থ শ্রেণির ‘আনন্দে গণিত শিখি-কনটেন্ট ডেলিভারি বুক’-এ প্যাকঁ প্যাকেঁর এই শিখন কৌশলের বিষয়ে (৮৩ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ রয়েছে। তবে এটি মূল পাঠ্যবইয়ের অংশ নয়৷ চতুর্থ শ্রেণির গণিত বইয়েও এই বিষয়টির উল্লেখ নেই। শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে এবং আনন্দের সাথে গাণিতিক বিষয়গুলো আয়ত্ব করতে পারে তার জন্য গণিত অলিম্পিয়াডের কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিক (প্রথম-পঞ্চম) শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতা উন্নয়নের জন্য এই কনটেন্ট ডেলিভারি বইগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।
Screenshot: আনন্দে গণিত শিখি (চতুর্থ শ্রেণি)
গণিত অলিম্পিয়াডের মাস্টার ট্রেনার এবং ফরিদপুরের সদরপুরের ৩৩নং ডিক্রীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ আহসান হাবীব ২০২২ সালের ১৬ মার্চ এ বিষয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট (আর্কাইভ) করেন।
তিনি লিখেছেন, প্যাঁক প্যাঁকের দৌড়াদৌড়ি নিয়ে ইদানীং ফেসবুকে কেউ কেউ ট্রল করছেন। আমি জানিনা বিষয়টি তাঁরা জেনে নাকি না জেনে, না বুঝে এমনটি করছেন। কেউ কেউ লিখেছেন প্রশিক্ষণের নামে প্রাথমিক শিক্ষকদের এতোটা নিচে নামানো ঠিক হয়নি। আর এটি দিয়ে শিক্ষার্থীরাই বা কী শিখবে?
শিক্ষার্থীদের গল্প আকারে সাধারণ ভগ্নাংশ ও দশমিক ভগ্নাংশের বিষয়ে শেখাতে এই কৌশলটি প্রয়োগ করা হয় জানিয়ে জনাব হাবিব বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাধারণ ভগ্নাংশ থেকে দশমিক ভগ্নাংশের ধারণা পাবে। আর এভাবে প্যাঁক প্যাঁকের দৌড়াদৌড়ির মাধ্যমে শেখালে তারা খুব সহজেই বুঝবে, মজা পাবে, কখনও ভূলবে না, হৃদয়ে গ্রথিত হবে। আমার মনে হয় না আর কোন উপায়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দশমিক ভগ্নাংশের মতো এমন একটি জটিল বিষয় সহজ করে শেখানো যেতে পারে।
Screenshot: Facebook
আহসান হাবিব তার পোস্টে জানিয়েছেন, গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল প্রয়োগ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আনন্দে গণিত শেখানোর পদ্ধতিতে থাকা ‘প্যাক’ শব্দটি শিক্ষাক্ষেত্রে নতুনও নয়, হাস্যকরও নয়। এটি খুব মজার। কেননা, কাব-স্কাউটের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট স্টিফেনসন স্মিথ লর্ড ব্যাটন পাওয়েল অফ গিলওয়েল প্রায় ২০০ বছর আগে ‘প্যাক’ প্রবর্তন করে গেছেন। কাব- স্কাউটের সাপ্তাহিক মিটিংয়ের আগে ইউনিক লিডারগণ প্যাক, প্যাক শব্দ করে ষষ্ঠকদের একত্রিত করেন। ‘প্যাক’ ইংরেজি শব্দের অনেকগুলি বাংলা অর্থের মধ্যে একটি হচ্ছে – তাড়া করা বা একত্রিত করা। এটিতো শিক্ষকদের আনন্দ দেয়ার কোন বিষয় নয় বা Ice breaking এর জন্যও নয়। প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকগণকে শিক্ষার্থীদের মাঝে আইডিয়াটি উপস্থাপনের কৌশল ও ধাপসমূহ হাতে- কলমে অনুশীলন করানো হয় মাত্র।
এছাড়া, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম ইস্যুতে গতকাল (০৩ ডিসেম্বর) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে প্রকাশিত এক সতর্কীকরণ বিবৃতিতে বলা হয়, “কিছু লোক ব্যাঙের লাফ বা হাঁসের ডাক দিচ্ছে এমন ভিডিও আপলোড করে বলা হচ্ছে এটা নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার।”
মূলত, সম্প্রতি নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, কিছু ব্যক্তি হাঁসের ডাকের মতো প্যাঁক প্যাঁক উচ্চারণ করে হাসের মতো ভঙ্গি করছেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এই ভিডিওর দৃশ্যের সাথে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণেরও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ সালের শুরুতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মূল গণিত বইয়ের বিষয়গুলো সহজ ও আনন্দের সাথে শিক্ষার্থীদের শেখাতে গণিত অলিম্পিয়াডের আদলে এই শিখন কৌশলটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল৷ তবে এটি এখন আর দেওয়া হচ্ছে না আর নতুন শিক্ষা কারিকুলামেও এই বিষয়টির উল্লেখ নেই।
সুতরাং, ২০২২ সালের একটি ভিডিও সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে এটিকে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার বরাতে ‘বছরে ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করে’ শীর্ষকদাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারে অনুসন্ধানে দেখা যায়, বছরে ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করছে দাবিতে আল-জাজিরা কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বরং লিবিয়ার শরীয়াহ্ আইন বিষয়ক সভাপতি আহমেদ আল কাতানি আল-জাজিরাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে কোনোরকম তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত বিষয়টি উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তার ঐ মন্তব্যকে আল-জাজিরার প্রতিবেদন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
মূলত, কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর গৃহীত একটি সাক্ষাৎকারে লিবিয়ার শরীয়াহ্ আইন বিষয়ক সভাপতি আহমেদ আল কাতানি কোনরকম তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবি করেন যে আফ্রিকা অঞ্চলে প্রতিবছর ৬ মিলিয়ন মুসলিম ইসলাম ত্যাগ করছে। পরবর্তীতে, তার সাক্ষাৎকারের এই অংশকে আল জাজিরার প্রতিবেদন দাবি করে ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে ‘বছরে ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করে’ শীর্ষক তথ্যটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আল জাজিরা উক্ত দাবিতে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। উপরন্তু, কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র উক্ত দাবিকে সমর্থন করে না।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, নতুন জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর মধ্যেই একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, একদল নারী-পুরুষের ঝিংগা লালা হু শীর্ষক শব্দগুচ্ছ উচ্চারণের মাধ্যমে জংলী সদৃশ পোশাকে নৃত্য করছেন। দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।
উল্লিখিত দাবিতে Md Masud Rana নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত ফেসবুকে সবচেয়ে ভাইরাল পোস্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ১০ লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার বার। এছাড়া, এই পোস্টে প্রায় ১১০০ পৃথক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,ঝিংগা লালা হু শীর্ষক আলোচিত ভিডিওটি দেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অধীন কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণের দৃশ্য নয় বরং কাব স্কাউটের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুকে Rakibul Alam Rony নামে একটি অ্যাকাউন্টে আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
জনাব রনির পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যাচ্ছে, জংলী সাজার এই দৃশ্যটি ২৯২তম কাব স্কাউট ইউনিট লিডার বেসিক কোর্সের।
Screenshot: Facebook
রাকিবুল আলম রনি কুমিল্লার দাউদকান্দির ২৯নং শ্রীরায়েরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষক। আমরা জনাব রনির সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি রিউমর স্ক্যানার টিমকে বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের সাথে এর কোন যোগাযোগ (সম্পর্ক) নেই৷ এটি কুমিল্লা পিটিআইয়ের ঘটনা। সম্ভবত ২৯ অথবা ৩০ তারিখের ভিডিও। আমার ধারণ করা নয়। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি অন্য আরেকজন থেকে ডাউনলোড করে এই পোস্ট করেছিলাম।
গত ২৬ থেকে ৩০ নভেম্বর কুমিল্লার কুমিল্লা প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে (পিটিআই) ২৯২তম কাব স্কাউট ইউনিট লিডার বেসিক কোর্সের আলোচিত এই অনুষ্ঠানটি হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানের আরও একটি ভিডিওর বিষয়ে ইতোমধ্যে অনুসন্ধান করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম, যাতে দেখা যায়, একদল নারী-পুরুষের ব্যাঙ নৃত্যের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।
Screenshot: Facebook
আমরা ফ্যাক্টচেক করে জানিয়েছিলাম, এটি ছিল মূলত গত ২৮ নভেম্বর কুমিল্লা প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে (পিটিআই) কাব স্কাউটের এক প্রশিক্ষণে স্কাউটের সিলেবাসের অংশ হিসেবে আলোচিত একটি ব্যাঙ নৃত্যের প্রশিক্ষণ দৃশ্য।
এই দৃশ্যে প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মনতলী সরকারি প্রাথমিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: ইয়াছিন।
আমরা ঝিংগা লালা হু শীর্ষক ভিডিওটির বিষয়ে জনাব মো: ইয়াছিনের সাথে আবার যোগাযোগ করি। তিনিও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন, এটি একই অনুষ্ঠানেরই অন্য একটি ঘটনার দৃশ্য।
ইয়াছিন বলছেন, এটিও কাব স্কাউটের প্রশিক্ষণের অংশ ছিল। তবে এই প্রশিক্ষণে আমি অংশ না নিলেও আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম।
অনুসন্ধানে ফরহাদ রায়হান নামে এক ব্যক্তির সাম্প্রতিক একটি ফেসবুক পোস্ট (আর্কাইভ) নজরে আসে আমাদের, যেখানে আলোচিত অনুষ্ঠানটির বিষয়ে উল্লেখ করে এ সংক্রান্ত কিছু ছবি যুক্ত করা হয়েছে।
Screenshot: Facebook
আমরা জনাব ফরহাদ রায়হানের সাথে কথা বলেছি। তিনিও রিউমর স্ক্যানারকে একই তথ্য দিয়েছেন।
মূলত, গত নভেম্বরে কুমিল্লা প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে (পিটিআই) কাব স্কাউটের এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে ঝিংগা লালা হু শীর্ষক একটি নৃত্যের প্রশিক্ষণে অংশ নেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক। এই নৃত্যের দৃশ্যকে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অংশ হিসেবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত এমন আরো একটি ভিডিও নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, কাব স্কাউটের ট্রেনিং অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্যকে জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষকদের ঝিংগা লালা হু শীর্ষক প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আইসিইউ-তে মৃত রোগীকে গরুর ইনজেকশন দেওয়ার সিরিঞ্জ পুশ করে জীবিত দেখানোর দাবিটি ভিত্তিহীন। এছাড়া গরুর ইনজেকশন পুশ করে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখাও সম্ভব নয়।
মূলত, ২০১৭ সাল থেকেই বিভিন্ন সময়ে এই দাবিটি কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ফেসবুকে প্রচার করে আসছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে একইভাবে এই তথ্যটি পুনরায় প্রচার করা হচ্ছে।
পূর্বেও একই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক প্রচারিত হয়েছিলো। সে সময় বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনপ্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগার থেকে মুক্তি পাননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও।
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিএনপির দলীয় মনোনয়নের চিঠি বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় তাকে ছাড়াই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার কথা বলতে গিয়ে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন মির্জা ফখরুল।
উক্ত ভিডিও সাথে আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, একমাস কারাভোগের পর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জামিনে মুক্তি পান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ভিডিও যাচাই-৩
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, NTV News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি “কা’রাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল | NTV News” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতাইবপ্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত ভিডিওর দৃশ্যের সঙ্গে আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামিনে মুক্তি পান। অর্থাৎ, গট জানুয়ারি মাসে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর নেতাকর্মীদের সামনে বক্তব্য রাখার সময়ের ভিডিও এটি।
অর্থাৎ, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন মুক্তির পুরোনো ভিডিও এবং ভিন্ন প্রসঙ্গের একটি ভিডিওর ফুটেজ জুড়ে দিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও, জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিনের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে পুলিশ সদস্যকে হত্যা এবং গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপিসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্টারনেটে “সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাতেই কারাগার থেকে মুক্তি পেলো মির্জা ফখরুল”- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ চলাকালে পুলিশ সদস্য হত্যা ও গাড়ি পোড়ানোর মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন। এসব মামলায় একাধিকবার জামিন আবেদন করেও তিনি জামিন পাননি।
উল্লেখ্য, পূর্বে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কারামুক্তির ব্যাপারে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, নতুন জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর মধ্যেই একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, একদল নারী-পুরুষের ব্যাঙ নৃত্যের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।
উল্লিখিত দাবিতে ‘Tahjib Media’ নামের একটি পেজ থেকে প্রচারিত ফেসবুকে সবচেয়ে ভাইরাল পোস্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ৩১ লক্ষ বার দেখা হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার বার। এছাড়া, এই পোস্টগুলোতে প্রায় ১ লক্ষ ১৭ হাজার পৃথক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।
একই বিষয়ে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত পোস্ট দেখুন ফেস দ্য পিপল।
তাছাড়া, বিভিন্ন ওয়াজেও একই দাবিতে সমালোচনা করা হয়েছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি দেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অধীন শিক্ষক প্রশিক্ষণের কোনো ঘটনা/দৃশ্য নয় বরং কাব স্কাউটের প্রশিক্ষণের অনুষ্ঠানে স্কাউটের সিলেবাসের অংশ হিসেবে এই ব্যাঙ নৃত্যের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘটনাকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওতে ব্যাঙ নৃত্যের প্রশিক্ষক এবং তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন নারীর পরনে যে পোশাক রয়েছে তা স্কাউটের পোশাক বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রশিক্ষকের গলায় স্কাউটের স্কার্ফও রয়েছে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
অনুসন্ধানে ফরহাদ রায়হান নামে এক ব্যক্তির সাম্প্রতিক একটি ফেসবুক পোস্ট (আর্কাইভ) নজরে আসে আমাদের, যেখানে একই পোশাক পরিহিত কিছু ব্যক্তিকে দেখা যায়। এই পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে, গত ২৬ থেকে ৩০ নভেম্বর কুমিল্লার পিটিআই’তে ২৯২তম কাব স্কাউট ইউনিট লিডার বেসিক কোর্স ইভেন্টে তোলা ছবি এগুলো।
Screenshot: Facebook
আরো অনুসন্ধান করে ফেসবুকে Monjurul Islam নামের এক রোভার স্কাউট সদস্যের পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাই আমরা। আলোচিত ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে মনজুরুল যা লিখেছেন তার সারমর্ম হচ্ছে, এটি একটি “কাব স্কাউট ইউনিট লিডার বেসিক কোর্স” এর দৃশ্য। কোর্সটি মূলত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে ট্রেনিং দেয়ার জন্য হয়। কাব স্কাউটিং কার্যক্রম হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ৬-১০+ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের স্কাউটিং কার্যক্রম৷ এটা নতুন শিক্ষাক্রমের সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়।
মনজুরুল বলছেন, ভিডিওতে থাকা শিক্ষক হচ্ছেন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক এবং তিনি তারও কাব স্কাউট ইউনিট লিডার বেসিক কোর্সের ট্রেইনার ছিলেন।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে মনজুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে আমরা জানতে পারি, ভিডিওতে প্রশিক্ষকের ভূমিকায় থাকা ব্যক্তির নাম ইয়াসিন বাবুল (মো: ইয়াছিন)। তিনি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মনতলী সরকারি প্রাথমিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষক মো: ইয়াছিনের সাথে যোগাযোগ করেছি আমরা।
ভাইরাল ভিডিওটির বিষয়ে প্রশিক্ষক ইয়াছিন রিউমর স্ক্যানার টিমকে জানান, ব্যাঙের ছড়ার নৃত্যের প্রশিক্ষনের এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে গত ২৮ নভেম্বর। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি কুমিল্লার প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে (পিটিআই) সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এটি কাব স্কাউটের একটি কোর্স। জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের নয়৷ এটি কাব স্কাউটের কোর্সের মধ্যে থাকা শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক একটি খেলা। শিশুরা এটাতে মজা পায়। শিশুদের শেখানোর জন্য শিক্ষকদেরও এটা শেখানো হয়। আমি এটার জন্যই উক্ত ভিডিওতে প্রশিক্ষকের ভূমিকায় ছিলাম।
ব্যাঙের ছড়ার নৃত্য আসলেই কাব স্কাউটের কোনো কোর্সের অংশ কিনা তা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে ইন্টারনেটে অতীতে শিক্ষকদের কাব স্কাউটের ব্যাঙের ছড়ার নৃত্যর প্রশিক্ষণের ভিডিও পাওয়া যায়। দেখুন এখানে।
Screenshot: YouTube
এছাড়া, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম ইস্যুতে গতকাল (০৩ ডিসেম্বর) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে প্রকাশিত এক সতর্কীকরণ বিবৃতিতে বলা হয়, “কিছু লোক ব্যাঙের লাফ বা হাঁসের ডাক দিচ্ছে এমন ভিডিও আপলোড করে বলা হচ্ছে এটা নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার।”
মূলত, গত ২৮ নভেম্বর কুমিল্লা প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে (পিটিআই) কাব স্কাউটের এক প্রশিক্ষণে স্কাউটের সিলেবাসের অংশ হিসেবে আলোচিত একটি ব্যাঙ নৃত্যের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। এই প্রশিক্ষণে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: ইয়াছিন। এই প্রশিক্ষণের দৃশ্যকে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই শিরোনামের আরেকটি ভিডিওকে বাংলাদেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অংশ হিসেবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক ভিডিও প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, কাব স্কাউটের ট্রেনিংয়ের একটি দৃশ্যকে জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষকদের ব্যাঙ ছড়ার নৃত্যের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, নতুন জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর মধ্যেই একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, একটি শ্রেণীকক্ষে একদল নারী-পুরুষের টিলিং টিলিং ছাইকেল চলাই শীর্ষক একটি ছড়া আবৃত্তির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।
উল্লিখিত দাবিতে প্রচারিত ফেসবুকের ভাইরাল ৫টি পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ৭৪ লাখ ১৮ হাজার বার দেখা হয়েছে, রিয়েক্ট পড়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৩৩ হাজার। এছাড়া, এই পোস্টগুলোতে প্রায় ৬০ হাজার ২০০ পৃথক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই’ ভিডিওটি বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রমের অধীনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কোনো দৃশ্যের নয় বরং ভারতের আসামের শিক্ষক প্রশিক্ষণের এই ভিডিওকে বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটির কিছু কি ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ফেসবুকে Ratan Lal Saha নামের একটি পেজে আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
গত ১৭ নভেম্বর জনাব রতন লাল সাহা ভিডিওটি প্রকাশ করে তার ক্যাপশনে যা লিখেছেন তার সারমর্ম দাঁড়াচ্ছে, এটি মূলত FLN Training প্রোগ্রামে তার প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভিডিও।
Screenshot: Facebook
রতন লাল সাহার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, তিনি মূলত ভারতের আসামের আম্বারি শিশুকল্যাণ এলপি স্কুলের (AMBARI SISHUKALYAN LP SCHOOL) একজন শিক্ষক, যিনি আনন্দময় পাঠদানের জন্য বহুল আলোচিত।
তার প্রশিক্ষণ দানের এই ভিডিওটি বাংলাদেশে ভাইরাল হওয়ার পর, বাংলাদেশের একটি ভিডিও শেয়ার (আর্কাইভ) করে তিনি তার পেজে লিখেছেন, “২০২২ সালে আসামে ভাইরাল হওয়ার পর আনন্দদায়ক পাঠের এই ভিডিওটি এবার বাংলাদেশেও ভাইরাল।”
Screenshot: Facebook
এছাড়া, একই ভিডিও সম্বলিত অন্য আরেকটি পোস্ট শেয়ার (আর্কাইভ) করে তিনি লিখেছেন, “আসাম সরকারি স্কুলের প্রথম শ্রেণির চতুর্থ পাঠের টিলিং টিলিং চাইকেল চলাই কবিতার আনন্দময় পাঠটি বাংলাদেশে ভাইরাল হয়েছে।”
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে ভাইরাল ভিডিওতে থাকা প্রশিক্ষক অর্থাৎ রতন লাল সাহার সাথে যোগাযোগ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি আমাদের জানান, আসামের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে জয়ফুল লার্নিং নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের পড়ানোর পাশাপাশি বর্তমানে শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তাছাড়া, যে ভিডিওটি বাংলাদেশে ভাইরাল হয়েছে, সেটি গত নভেম্বরের ১৬ কিংবা ১৭ তারিখের। এর আগে ২০২২ সালে একই ছড়ার আনন্দময় পাঠদানের অন্য একটি ভিডিও-ও আসামে ভাইরাল হয়েছিল বলে তিনি জানান আমাদের।
অনুসন্ধানে, আসামের প্রথম শ্রেণির বই Ankuran (অংকুরান) প্রথম পাঠের ৪২তম পৃষ্ঠায় টিলিং টিলিং নামের ছড়াটি খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot: Ankuran Book
মূলত, গত ১৭ নভেম্বর ভারতের আসামের শিক্ষক রতন লাল সাহা তার ফেসবুক পেজে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট টিলিং টিলিং চাইকেল চলাই শীর্ষক একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। উক্ত ভিডিওকে সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, একই বিষয়ে ইতোমধ্যে ফ্যাক্টচেক ভিডিও প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ভারতের আসামের শিক্ষক প্রশিক্ষণের ভিডিওকে বাংলাদেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অধীনে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ভিডিও দাবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘ভারতে বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার বাংলাদেশি যুবক’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
উল্লিখিত দাবিতে ‘News Vision’ নামের একটি পেজ থেকে প্রচারিত ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ১২ লক্ষ বার দেখা হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৮ শত বার। এছাড়া, এই পোস্টগুলোতে প্রায় ৬৪ হাজার পৃথক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ভাইরাল এই পোস্টটির মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাংলাদেশি যুবকের হেনস্তার শিকার হওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয় বরং বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি উক্ত ভিডিওটি বাস্তব দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক যুবক নিজেকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানাচ্ছেন, তিনি তার বাবার চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছেন। সেখানে কয়েকজন ভারতীয় যুবক তাকে ঘিরে ধরে হেনস্তা করছেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সমর্থকদের একাংশের ভারত বিরোধিতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা এমন আচরণ করেছেন বলে ভিডিওটি থেকে জানা যায়।
ভিডিওটি’র কমেন্টবক্স পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, অধিকাংশ নেটিজেন বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
Comment Collage by Rumor Scanner
বিষয়টি যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে Team Uncut নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৯ নভেম্বর ‘বাংলাদেশীরা নাকি আর INDIA আসবেনা?’’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটি’র পূর্ণ্য সংস্করণ বা মূল ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
১০ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের পুরো ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি’র ২৫ সেকেন্ড অংশে ডিসক্লেইমারে উল্লেখ করা হয়, এই ভিডিওটি বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, ভিডিওটিতে উক্ত পেজের লোগো থাকায় নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এই পেজ কর্তৃপক্ষই ভাইরাল ভিডিওটি’র নির্মাতা।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে উক্ত পেজটির অ্যাবাউট সেকশন পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে উল্লেখিত তথ্য থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায়, এটি একটি বিনোদনভিত্তিক পেজ।
Screenshot: Facebook
তাছাড়া উক্ত পেজ থেকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক কয়েকটি ভিডিও (১, ২, ৩) পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেগুলোও বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি ভিডিও।
তাছাড়া এসব ভিডিওতে বাংলাদেশি যুবক দাবিতে প্রচারিত ব্যক্তিরও উপস্থিতি পাওয়া যায়। এতে বোঝা যায় যে, কথিত বাংলাদেশি ওই যুবক Team Uncut এর একজন সদস্য।
Face Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি প্রথমে বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় এবং পরবর্তীতে তা বাস্তব দাবিতে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়িয়ে পড়ে।
মূলত, গত ১৯ নভেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিত ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয় ভারত। সে ম্যাচে বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকদের একাংশের ভারতের পরাজয়ে উল্লাস করার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ভারতে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ভারতীয়দের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি জানান। পরবর্তীতে ‘ভারতে বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার বাংলাদেশী নাগরিক’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ২৯ নভেম্বর Team Uncut নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি উক্ত ভিডিওটি পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হারে বাংলাদেশের সমর্থকদের একাংশের উল্লাস করার ইস্যুতে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতীয় ভিসা বন্ধের গুজব প্রচার করা হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি ভারতে বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাংলাদেশি যুবকের হেনস্তার শিকার হওয়ার ভিডিওটিকে বাস্তব ঘটনার ভিডিও দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা সঠিক নয়।