নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো গুজব প্রতিরোধে ভূমিকা রাখায় ‘পজেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।
আজ ৯ই ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার লিডসউইন লিমিটেডের আয়োজনে বাংলা একাডেমীর আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী বিশ্ব নাগরিক গঠনে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন শীর্ষক সম্মেলন- ২০২৩ এ রিউমর স্ক্যানারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো: ছাকিউজ্জামানসহ প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ সদস্যের হাতে সম্মাননা স্মারক ও ক্রেস্ট তুলে দেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান এবং নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম তারিক আহসান।
অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে রিউমর স্ক্যানারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো: ছাকিউজ্জামান বলেন, অন্যান্য খাতের পাশাপাশি ইন্টারনেটে শিক্ষা খাত নিয়ে ছড়ানো মিথ্যা তথ্য মোকাবেলায় নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে রিউমর স্ক্যানার। নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়সহ ২০২৩ সালে শিক্ষা খাত নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া প্রায় ১০০ টি গুজব শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা খাতের বিষয়ে গুজব মোকাবেলায় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সহায়তা প্রয়োজন।
দেশব্যাপী শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করতে কাজ করছে প্রযুক্তি বিষয়ক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান লিডসউইন লিমিটেডের এডুম্যান প্রজেক্ট।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রমের অধীন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবি করে ইন্টারনেটে বেশ কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ভিডিও যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। ভিডিওগুলো হচ্ছে- ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই’, ‘ওরে ও কোলা ব্যাঙ’, ‘ঝিংগা লালা হু’, ‘প্যাক প্যাক ডাকে প্রশিক্ষণ’ ও ‘মাম্মি কি রুটি গোল গোল’।
সম্প্রতি, ‘সুখের কান্নায় ডান চোখে, কষ্টের কান্নায় বাম চোখে আগে পানি আসে’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ফটোকার্ড সম্বলিত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত উক্ত ফটোকার্ডটিতে বলা হয়েছে, “আপনি জানলে অবাক হবেন! আমরা যখন সুখে কান্না করি তখন সেটা প্রথম ডান চোখ দিয়ে পানি ঝরে, এবং কষ্টের কান্না করলে প্রথম বাম চোখ দিয়ে পানি ঝরে থাকে। আর এই পানি কি শুধুই পানি! এতে রয়েছে শ্লেষ্মা, তেল, ইলেক্ট্রোলাইট-এর এক জটিল মিশ্রণ। যেটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোেধী, যা চোখকে বিভিন্ন ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে থাকে।”
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুখের ও কষ্টের কান্নায় যথাক্রমে ডান ও বাম চোখে প্রথমে পানি আসে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানার আগে রিউমর স্ক্যানারের পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে চোখের অশ্রু সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো-
অশ্রু কীভাবে উৎপন্ন হয়?
চোখের গোলকের বাইরের অংশে অবস্থিত ল্যাক্রিমাল গ্রন্থিতে অশ্রু উৎপন্ন হয়। এই গ্রন্থি টিয়ার ফিল্মের মধ্যম স্তর নিয়ে গঠিত।স্বাস্থ্যকর অশ্রু চোখকে শুকিয়ে যাওয়া থেকে বাধা দেয়। চোখের কর্নিয়াকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। মানুষের মনে বিভিন্ন ধরনের অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি অশ্রু উৎপন্ন করে। মানুষ যখন কাঁদে তখন তরল চোখের বাইরে বের হয়ে আসে, যাকে আমরা অশ্রু বলি।
অশ্রুর ধরন
মানুষের চোখের সুস্থতার জন্য অশ্রু একটি অপরিহার্য জিনিস। অশ্রুর সাথে মানুষের আবেগের সংযোগ রয়েছে। মানুষের চোখ থেকে ৩ ধরনের অশ্রু উৎপন্ন হয়।
বেসাল টিয়ার্স
এটি চোখের মৌলিক অশ্রু। বেসাল টিয়ার্স চোখের পাতা নাড়াচাড়া করতে সাহায্য করে। কারণ এর মাধ্যমে চোখ পিচ্ছিল থাকে। এটি তিনটি লেয়ারের সাহায্যে তৈরি হয় যার সবচেয়ে ভেতরেরটি মিউকাস লেয়ার, মাঝেরটি অ্যাকুয়াস লেয়ার আর ওপরেরটি তৈলাক্ত লিপিড লেয়ার। এই লেয়ারগুলো চোখের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। এরা চোখকে ভেজা রাখে, বাইরের ময়লা এবং ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
ইরিটেন্ট টিয়ার্স বা রিফ্লেক্স টিয়ার্স
চোখকে ধোঁয়া, ধুলাবালি বা জ্বালাপোড়ার হাত থেকে এই অশ্রু সাহায্য করে। এটি চোখকে পরিষ্কার রাখে। যখন চোখে জ্বালাপোড়া তৈরি হয়, তখন এই টিয়ার তৈরি হয়ে চোখের জ্বালাপোড়ার জন্য দায়ী পদার্থকে চোখ থেকে বের করে দেয়। এটি ব্যক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
ইমোশনাল টিয়ার্স
মানুষের দুঃখ, কষ্ট, ভয়, আনন্দ এবং অন্যান্য সংবেদনশীল অবস্থার প্রতিক্রিয়ায় এই অশ্রু তৈরি হয়। এ কান্নায় অনেক বেশি মাত্রার হরমোন এবং প্রোটিন থাকে।
চোখের বিভিন্ন স্তর
মানবদেহের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিতে কয়েকটি স্তর রয়েছে। এরমধ্যে একটি হল আভ্যন্তরীণ বা শ্লেষ্মা স্তর, যা অশ্রুকে চোখের কাছে আটকে রাখে। আরেকটি স্তর হল, জলীয় মাঝারি স্তর। এটি চোখের সবচেয়ে পুরু স্তর। এই স্তরটি চোখকে হাইড্রেটেড রাখে, ব্যাক্টেরিয়া দূর করে এবং কর্নিয়াকে রক্ষা করে। তৃতীয় স্তরটি হল, বাইরের তৈলাক্ত স্তর, যা চোখের চোখের অশ্রু পৃষ্ঠকে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।
এবার আসি আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে। আমরা কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্টের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা পলিটিফ্যাক্টের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রকাশিত চোখের অশ্রু সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই।
উক্ত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটিতে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান ক্লিভল্যান্ডের এক প্রতিবেদনের বরাতে জানানো হয়, কষ্ট বা সুখের জন্য কান্না আলাদা আলাদা হয় না। অর্থাৎ, অশুনালিতে চোখের জলের পরিবর্তন হয় না, একইভাবে থাকে।
উক্ত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা চেকইওরফ্যাক্টকে আমেরিকান একাডেমি অব অপথালমোলজি জানায়, ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির সময়ে আলাদা চোখ থেকে প্রথমে পানির আসার দাবিটির কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলেনি।
এছাড়াও, স্বাস্থ্যবিষয়ক অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সুখের কান্না করলে প্রথম ডান চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে এবং কষ্টের কান্না করলে বাম চোখ দিয়ে পানি ঝড়ার তথ্যটির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে ‘সুখের কান্না করলে প্রথমে ডান চোখ দিয়ে পানি ঝরে এবং কষ্টের কান্না করলে প্রথমে বাম চোখ দিয়ে পানি ঝরে’ শীর্ষক দাবিতে একটি ফটোকার্ড সম্বলিত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উক্ত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমেরিকান একাডেমি অব অপথালমোলজির মতে, ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির সময়ে আলাদা চোখ থেকে প্রথমে পানির আসার দাবিটির কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলেনি।
সুতরাং, সুখের কান্না করলে প্রথম ডান চোখ দিয়ে পানি ঝরে এবং কষ্টের কান্না করলে প্রথমে বাম চোখ দিয়ে পানি ঝরে শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।
সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনে অনুদান পাঠানো, ফিলিস্তিনের প্রতি সরাসরি সমর্থন ও তাদের সমর্থনে মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি প্রবর্তন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচিত আকিজ গ্রুপ ও তাদের কোলা ব্র্যান্ড মোজো।
অপরদিকে একই সময়ে একই ইস্যুর কারণে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে মার্কিন কোম্পানির পণ্য কোকাকোলা তথা কোককে ইসরায়েলকে সমর্থণকারী কোম্পানির পণ্য হিসেবে বর্জন করা হচ্ছে। কোকাকোলা বয়কটের ফলে স্থানীয় সোডা পণ্যের বিক্রি বেড়েছে এসব দেশে। এই যেমন কোকা কোলা বয়কটের ফলে বিদেশি ব্র্যান্ডের সাথে প্রতিযোগিতায় ধুকতে থাকা মিশরের স্থানীয় সোডা প্রস্তুতকারক স্পিরো স্প্যাথিস এর বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৩০০ শতাংশ।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে মোজোর আলোচিত হওয়া এবং কোকের বয়কটের ফলশ্রুতিতে সামাজিক মাধ্যমে মোজো বনাম কোক শীর্ষক একটি আলোচনার জন্ম নেয়। এ সময় কেউ কেউ কোক স্টুডিও বাংলার মতো মোজো স্টুডিও বাংলা চাই এমন কিছু পোস্ট করে। এরপরই ফেসবুকে নিজেদের মোজোর অফিশিয়াল উদ্যোগ হিসেবে উপস্থাপন করে উদয় ঘটে মোজো স্টুডিও বাংলা নামের একটি ফেসবুক পেজের।
মোজো স্টুডিও বাংলা ফেসবুক পেজ
Mojo Studio Bangla নামের ফেসবুক পেজটি গত ২ ডিসেম্বর তৈরি করা হয়। পেজটির পক্ষ থেকে এটিকে মোজোর অফিশিয়াল পেজ হিসেবে উপস্থাপন করে কোক স্টুডিও বাংলার বিপরীতে মোজো স্টুডিও বাংলা’র ঘোষণা দেওয়া হয়। লোকজনও এটিকে মোজোর আসল পেজ ধরে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং পেজটি প্রচার করে।
মোজোর অফিশিয়াল উদ্যোগ বোঝাতে সময় টিভির ফটোকার্ড এডিট করে প্রচার
গত ৪ ডিসেম্বর সোমবার পেজটিতে সময় টেলিভিশনের ফটোকার্ডে “কবে শুরু হতে যাচ্ছে মোজো স্টুডিও বাংলা” শিরোনামের একটি সংবাদ পোস্ট করা হয়। তবে অনুসন্ধানে সময় টিভির ফেসবুক পেজে এমন কোনো সংবাদের ফটোকার্ড প্রকাশের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মূলত মোজো স্টুডিও বাংলা উদ্যোগটি আসল এটি বোঝানো এবং বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য পেজটি সময় টিভির ফটোকার্ড এডিট করে ভুয়া এ সংবাদ প্রচার করে।
লক্ষাধিক টাকার গিভওয়ে ঘোষণা
Mojo Studio Bangla পেজটি তৈরির দু-তিন দিনের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার ফলোয়ার লাভ করে এবং পরবর্তীতে আরও বেশি ফলোয়ার পেতে নিজেদের মোজোর অফিশিয়াল হিসেবে উপস্থাপন করে পেজটি থেকে আইফোন প্রো ম্যাক্সসহ লাখ টাকার গিফট দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রমোশনাল গিভওয়ে পোস্ট করা হয়। শর্ত হিসেবে পেজে লাইক দেওয়া, গিভওয়ে পোস্টটি শেয়ার করা এবং Mojo Studio Bangla নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করতে বলা হয়। গিভওয়ে ঘোষণার পর লোকজন সেটিকে মোজোর উদ্যোগ ভেবে অংশগ্রহণ করে। যার ফলে তাদের ইউটিউবে সাবস্ক্রাইবারও বাড়তে থাকে। এখন পর্যন্ত সেই ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।
মোজো স্টুডিও বাংলা চাই নামের একটি ইভেন্ট এর সাথে মোজো স্টুডিও বাংলা পেজের যোগসূত্র
অনুসন্ধানে কোক স্টুডিওর পরিবর্তে মোজো স্টুডিও বাংলা চাই নামের একটি ইভেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। গত ২৭ নভেম্বর Faiyaz Ef Ti নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ইভেন্টটি তৈরি করা হয়। ঐ একই অ্যাকাউন্ট থেকে “MOJO STUDIO VS COKE STUDIO এর মারামারি চাই” নামের অপর একটি ইভেন্টও তৈরি করা হয়।
Collage by Rumor Scanner
পরবর্তীতে ২ ডিসেম্বর তৈরি হওয়া কোক স্টুডিও বাংলা নামের পেজটির একাধিক পোস্টে Faiyaz Ef Ti নামের অ্যাকাউন্টটিকে ট্যাগ করতে দেখা যায়। যার মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় ২৭ নভেম্বর ‘কোক স্টুডিওর পরিবর্তে মোজো স্টুডিও বাংলা চাই’ শীর্ষক ইভেন্ট তৈরি করা আইডিটিই Mojo Studio Bangla নামের পেজটির পিছনে রয়েছে।
Collage by Rumor Scanner
মোজো স্টুডিও বাংলা মোজোর কোনো অফিশিয়াল পেজ নয়
মোজো স্টুডিও বাংলা পেজটি মোজোর অফিশিয়াল উদ্যোগ ধরে নিয়ে যখন রাতারাতি ছড়িয়ে পড়ছিল। ঠিক তখন বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামে রিউমর স্ক্যানার। রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় মোজোর সাথে। পেজটির বিষয়ে জানতে চাইলে মোজো কর্তৃপক্ষ জানায়, “মোজো স্টুডিও বাংলা মোজোর অফিশিয়াল কোনো পেজ না। অন্য কেউ একজন এই নামে পেজ চালাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে পেজটি রিমুভ করার চেষ্টা চালাচ্ছি।”
পরবর্তীতে মোজোর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঐ পেজটিকে ভুয়া নিশ্চিত করা হয়। পোস্টটিতে লেখা হয়, “সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, Mojo Studio Bangla নামে একটি ফেইসবুক পেইজ এবং ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে যা Mojo কর্তৃক কোন অফিশিয়াল পেইজ নয়, এটি একটি Fake পেইজ যা দ্বারা মানুষকে প্রলোভন এবং বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। মোজো কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তাই সকলকে বিভ্রান্ত না হয়ে Mojo ভেরিফাইড পেইজের সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।”
Screenshot from Mojo’s FB post
সুতরাং, মোজো স্টুডিও বাংলা নামের পেজটি মোজোর অফিশিয়াল কোনো পেজ নয়, প্রকৃতপক্ষে মোজোর অফিশিয়াল উদ্যোগ দাবি করা এ পেজটি ছিল একটি ভুয়া পেজ।
দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুগল, নাসা এবং বিবিসি নিউজের বরাতে “আজ রাত ১২ টা ৩০ থেকে ৩ টা ৩০ পর্যন্ত আপনার ফোন,মোবাইল,ট্যাব বন্ধ রাখুন এবং শরীর থেকে দূরে রাখুন” শীর্ষক একটি তথ্য প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে “সিঙ্গাপুর টেলিভিশন জানিয়েছে উক্ত সময়ে আমাদের পৃথিবী উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মহাজাগতিক রশ্মির সম্মুখীন হবে যা আমাদের পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে যাবে তাই আপনার ফোন বন্ধ রাখুন, আপনার ফোন শরীরের কাছে রাখবেননা- এতে আপনার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সিঙ্গাপুরের টেলিভিশন, গুগল, নাসা কিংবা বিবিসি নিউজ কেউই মহাজাগতিক রশ্মির কারণে ক্ষতির আশঙ্কায় সম্প্রতি রাতের নির্দিষ্ট সময় ফোন, মোবাইল এবং ট্যাব বন্ধ রাখতে বলেনি। বরং কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাতে এই বানোয়াট তথ্যটি ২০১৬ সাল থেকে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে মার্কিন ফেডারেল সরকারের স্বাধীন সংস্থা নাসা এবং ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণে এমন কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার।
তিনি বলেছেন, মহাজাগতিক রশ্মি, যা সূর্য থেকে বা আমাদের সৌরজগতের বাইরে মহাজাগতিক ঘটনা থেকে নির্গত হয় যেমন ব্ল্যাক হোল বা সুপারনোভা, উপগ্রহের কম্পিউটার চিপগুলোর মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে এর মানে এই নয় যে এই রশ্মি আমাদের শরীরকেও একইভাবে প্রভাবিত করবে।
এছাড়া, দেশের মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে উল্লেখিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
মহাজাগতিক রশ্মি কি?
মহাজাগতিক রশ্মি হলো অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার স্রোত। বহির্বিশ্ব থেকে ওই সব কণা এসে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে। কণার ওই বারিবর্ষণ এক অবিশ্রান্ত প্রক্রিয়া। মহাজাগতিক রশ্মিতে থাকে শতকরা ৮৯ ভাগ প্রোটন, ৯ ভাগ বিকিরণ এবং ২ ভাগ থাকে কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও লোহার ভারি নিউক্লিয়াস। এগুলোই হলো প্রাইমারি মহাজাগতিক রশ্মি। প্রায় আলোর বেগেই ওরা ছুটে চলে।
প্রাইমারি মহাজাগতিক রশ্মির ওই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার যখন বায়ুমেন্ডলের বিভিন্ন পদার্থের নিউক্লিয়াসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তখন নতুন কণার সৃষ্টি হয়। নতুন কণাদের তখন বলা হয় সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মি। সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মির কণারাও প্রচন্ড বেগে ছুটে চলে। অন্যান্য পরমাণুর সঙ্গে ওদের আবার সংঘর্ষ হয় এবং আবার নতুন পদার্থ কণা ওরা সৃষ্টি করে। চলার পথে বহুবার সংঘর্ষ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পৃথিবী পৃষ্ঠে সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মির খুব কম সংখ্যক কণারাই এসে পৌঁছতে পারে। সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মিতে থাকে প্রধানত পজিট্রন, নিউট্রন, মেসন, নিউট্রিনো প্রভৃতি। এ সব কণাদের বলা হয় প্রাথমিক বা মৌলিক কণা। এ নিয়ে বিস্তারিত দেখুন এখানে
মূলত, বিগত কয়েক বছর ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নাসা এবং বিবিসি নিউজের বরাত দিয়ে দাবি প্রচার করে বলা হচ্ছে, সিঙ্গাপুর টেলিভিশনে একটি খবর প্রচারিত হয়েছে যে মহাজাগতিক রশ্মির জন্য রাত ১২.৩০ থেকে ৩.৩০ পর্যন্ত মোবাইল ফোন, মোবাইল এবং ট্যাব বন্ধ রাখতে হবে যা মানবদেহের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে সিঙ্গাপুরের টেলিভিশন, গুগল, নাসা কিংবা বিবিসি নিউজ কেউই এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। এছাড়া, থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান প্রধান সুপালর্ক কারুহেনন প্রচারিত দাবিটিকে ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে।
সুতরাং, মহাজাগতিক রশ্মির কারণে রাত ১২ টা ৩০ থেকে ৩ টা ৩০ পর্যন্ত ফোন,মোবাইল এবং ট্যাব বন্ধ রাখতে হবে শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, নতুন জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর মধ্যেই একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, কতিপয় নারী-পুরুষ একটি ছড়া সদৃশ গানের মাধ্যমে গোল হয়ে নৃত্য করছেন। দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।
উল্লিখিত ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওগুলো প্রায় ছয় লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হিন্দি ছড়া আবৃত্তি করে শিক্ষকদের গোল নৃত্যের ভিডিওটি দেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অধীনে কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণের দৃশ্য নয় বরং ভারত ও পাকিস্তানে বিভিন্ন সময়ে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি অন্তত ২০১৯ সাল থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কিছু ব্যক্তি গোল হয়ে দাঁড়িয়ে বিশেষ ভঙ্গির মাধ্যমে হিন্দিতে যা উচ্চারণ করছেন তার তা হলো,
মাম্মি কি রুটি গোল গোল, পাপা কি পেইসে গোল গোল।
আমরা এই লাইনগুলো কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে দেখেছি, এটি ভারতে বহুল প্রচলিত একটি হিন্দি ছড়া।
ইংরেজি বর্ণে যা লিখলে দাঁড়ায়,
Mummy ki roti gol gol,
Papa ka paisa gol gol,
Dada ka chashma gol gol,
Dadi kee bindiya gol gol,
Upar pankha gol- gol
Niche dharti gol –gol
Chanda gol Suraj gol
Ham bhi gol tum bhi gol
Saari duniya gol–matol
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের কিছু ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আলোচিত ভিডিওটি (১, ২, ৩, ৪) পোস্ট করতে দেখা যায়৷ তবে এই পোস্টগুলোর ক্যাপশনে ভিডিওটির সূত্রের বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Facebook
২০২১ সালেও ভারতে আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিম ভিডিওটির প্রকৃত সূত্র অনুসন্ধানে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের একাধিক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে একই ভিডিও পোস্ট করতে দেখেছে।
১১ ফেব্রুয়ারি Imran Nasir নামে দুইটি অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট (১, ২) করা হয়৷
Screenshot: Facebook
একই মাসে পাকিস্তানভিত্তিক আরও কিছু অ্যাকাউন্ট এবং পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। দেখুন এখানে, এখানে।
তবে পাকিস্তানের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টচেক পাকিস্তানের ফ্যাক্টচেকার আহমের খান (Ahmer Khan) রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, তারা নিশ্চিত যে এটা পাকিস্তানের কোনো দৃশ্য নয়৷
রিউমর স্ক্যানার টিম সে বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ভারতের কতিপয় পেজ থেকেও একই ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে। এর মধ্যে ০৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভারতের হায়দারাবাদ ভিত্তিক একটি পেজে ভিডিওটি (আর্কাইভ) শেয়ার হতে দেখা যায়।
Screenshot: Facebook
তবে এ সকল পোস্টগুলোর ক্যাপশনে ভিডিওটির সূত্রের বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
ফেসবুকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিগত বিভিন্ন সময়ে এই ছড়াটি শিক্ষার্থীদের আবৃত্তি করার পোস্ট নজরে এসেছে আমাদের৷ দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ভারতের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ফ্যাক্টচেকার অন্কিতা দেশকার (Ankita Deshkar) রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, এটি ভারতের কোনো পাঠ্যবইয়ে নেই। তবে শিশুরা মজাচ্ছলে এটি আবৃত্তি করে থাকে। ভারতের আরেক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টলি’র ফ্যাক্টচেকার ভারত গুনিগান্টি’ও (Bharath Guniganti) একই মত দিয়েছেন।
মূলত, সম্প্রতি নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, কতিপয় নারী-পুরুষ একটি ছড়া সদৃশ গানের মাধ্যমে গোল হয়ে নৃত্য করছেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় এবং এই ভিডিওর দৃশ্যের সাথে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণেরও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, অন্তত ২০১৯ সাল থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। ভিডিওতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যে ছড়াটি আবৃত্তি করছেন সেটি ভারতে বহুল প্রচলিত একটি শিশু ছড়া হলেও এটি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভূক্ত নেই বলে ভারতের একজন ফ্যাক্টচেকার রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন।
সুতরাং, অন্তত ২০১৯ সাল থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান ভারত ও পাকিস্তানে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওকে সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে এটিকে বাংলাদেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে একটি টিকটক পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।
সম্প্রতি, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশে মেয়র লিটন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে ক্ষোভ’ শীর্ষক শিরোনামে রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন দাবিতে শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটি ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক।
দৈনিক ইত্তেফাক-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
নিউজটি দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে অনেকে তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে উক্ত নিউজটির লিংক শেয়ার করেছেন। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (এখানে)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের সঙ্গে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ১৫ অক্টোবর তৃতীয় মেয়াদে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সেদিন বাঘা উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম ও রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকসহ বেশকয়েক জন মেয়রের প্রথম কার্যদিবসে শুভেচ্ছা জানাতে তার কার্যালয়ে যান। এটি সেসময়ে তোলা ছবি। এছাড়া, গত ৬ ডিসেম্বর এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সাথে রাহেনুল হক কিংবা মেরাজুল ইসলামের কোনো সৌজন্য সাক্ষাৎ অথবা শুভেচ্ছা বিনিময়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
অনুসন্ধানের শুরুতে ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পড়ে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হচ্ছে, গত ৬ ডিসেম্বর (বুধবার) রাজশাহী সিটি করপোরেশন ভবনে রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের সঙ্গে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এছাড়াও দাবি করা হয়, এসময় তার সঙ্গে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাঘা উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
Screenshot: Daily Ittefaq
উক্ত ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। তবে প্রতিবেদনটিতে এটিও দেখা যায়, উক্ত সাক্ষাতের বিষয়ে মেয়র লিটনের কাছে জানতে চাইলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করার বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ছবিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় দৈনিক ইত্তেফাকে ব্যবহৃত ছবিটির সাথে উক্ত ছবির হুবহু মিল রয়েছে।
Photo Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ছবিটি মূলত রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের তৃতীয় মেয়াদে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম কার্যদিবসে শুভেচ্ছা জানানোর সময় ধারণ করা হয়েছে।
পরবর্তী অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Khalid Hossain Sajan নামের একটি ফেসবুক আইডিতে গত ৮ ডিসেম্বর করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
পোস্টটিতে তিনি লিখেছেন, ‘Mohammad Sirajul Islam ভাই একটি দায়িত্বশীল পোস্ট এ থেকে আপনার থেকে এই ধরনের পোস্ট বা নিউজ জনগণ এমনকি কি আপনার কর্মীরাও আসা করেনা। যে ছবি দিয়েছেন তা Md Merazul Islam Meraz ভাই গত ১৫ অক্টোবর ই পোস্ট দিয়েছে। চারঘাট বাঘার জনগণ আসা করে আপনি সবসময় সত্যের সাথে থাকবেন। আপনার জন্য শুভকামনা সবসময়’
এছাড়াও তিনি পোস্টটিতে দুটো স্ক্রিনশট যুক্ত করেছেন, একটি হলো Mohammad Sirajul Islam নামের ব্যক্তির নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনটিরর শেয়ার করা লিংকের এবং অপরটি হলো পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম-এর ফেসবুক আইডিতে গত ১৫ অক্টোবর মেয়রের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় নিয়ে করা আলোচিত ছবিযুক্ত ফেসবুক পোস্টের।
পরবর্তী অনুসন্ধানে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের তৃতীয় মেয়াদে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে দৈনিক যুগান্তর-এর ওয়েবসাইটে গত ১৫ অক্টোবর তৃতীয় মেয়াদে রাসিক মেয়রের দায়িত্ব নিলেন লিটন শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Daily Jugantor
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর দুপুরে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় নির্বাচিত মেয়র এবং ৪০ জন কাউন্সিলরের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এরপর বিকালে নগর ভবনে মেয়র দপ্তর কক্ষে নবনির্বাচিত পরিষদের উপস্থিতিতে তৃতীয়বারের মত সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের পর দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
তাছাড়া, আলোচিত ছবির বিষয়ে জানতে পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, ছবিটি মূলত গত ১৫ অক্টোবর তোলা। মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তৃতীয়বারের মত সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করার দিন তার প্রথম কার্যদিবসে শুভেচ্ছা জানাতে তারা মেয়রের কার্যালয়ে যান। সেসময় তাদের সাথে রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও তিনি আরও জানান, গত ৬ ডিসেম্বর মেয়রের সাথে তাদের কোনো সাক্ষাৎ কিংবা শুভেচ্ছা বিনিময়ের ঘটনা ঘটেনি। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলেও ১৫ অক্টোবরেই আপলোড করা হয়েছিল।
অর্থাৎ, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশে মেয়র লিটন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে ক্ষোভ’ শীর্ষক শিরোনামে দৈনিক ইত্তেফাক-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
মূলত, গত ১৫ অক্টোবর তৃতীয়বারের মত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সেদিন বাঘা উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম ও রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকসহ বেশকয়েক জন মেয়রের প্রথম কার্যদিবসে শুভেচ্ছা জানাতে তার কার্যালয়ে যান। সেদিনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটি ছবি সম্প্রতি দৈনিক ইত্তেফাক তাদের একটি প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে করে প্রচার করে। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, গত ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী সিটি করপোরেশন ভবনে রাজশাহী-৬ (বাঘা ও চারঘাট উপজেলা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটি ৬ ডিসেম্বরের নয় এবং উক্ত দিনে মেয়রের সাথে পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম ও রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের সাক্ষাৎ কিংবা শুভেচ্ছা বিনিময়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সুতরাং, গত ১৫ অক্টোবরের একটি ছবিকে দৈনিক ইত্তেফাক তাদের ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশে মেয়র লিটন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে ক্ষোভ’ শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ের ছবি দাবিতে প্রচার করেছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের দুই টাকার নোট পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ব্যাংক নোটের স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং আর্মেনিয়ান একটি নিউজের নামহীন সূত্রের বরাতে গত কয়েক বছর ধরে উক্ত তথ্যটি প্রচারিত হচ্ছে।
মূলত, ২০১২ সালে আর্মেনিয়ান একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের দুই টাকার ব্যাংক নোট বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর নোটের স্বীকৃতি পেয়েছে। নামহীন রাশিয়ান একটি আউটলেটের সূত্র ব্যবহার করে প্রকাশিত উক্ত প্রতিবেদনের বরাতে বিগত কয়েক বছর ধরে উক্ত তথ্যটি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম ও ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে। কিন্তু আর্মেনিয়ান সংবাদমাধ্যমটি রাশিয়ান অনলাইন এন্টারটেইনমেন্ট আউটলেটের যে সূত্র ব্যবহার করেছে তার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার। তাছাড়া, ব্যাংক নোটের সৌন্দর্যের বাৎসরিক স্বীকৃতি প্রদানকারী IBNS-ও বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক নোটকে এখনও সেরার স্বীকৃতি দেয়নি৷
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মায়ের কবরের পাশে ছোট্ট মেয়ের কান্নার ভিডিওটি ফিলিস্তিনের নয় বরং ২০২০ সালে ইরাকে করোনা মহামারীতে মৃত মায়ের কবরের পাশে মেয়ের কান্নার ভিডিও।
ভিডিওটির কি ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Ali Shibam নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর হবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
যেহেতু, চলমান হামাস-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হয় চলতি বছরের ৭ অক্টোবর সেহেতু ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ইন্টারনেটে ভিডিওটির উপস্থিতি স্পষ্টতই নির্দেশ করে যে ভিডিওটি চলমান হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের নয়।
উক্ত ভিডিওর বিস্তারিত বিবরণী বাংলায় অনুবাদ করে জানা যায়, ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ইরাকের নাজাফ প্রদেশের নাজাফ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে ফাতিমা সালাম সালানের মা মৃত্যুবরণ করেন।
উক্ত ভিডিওতে মায়ের মৃত্যুর তিনদিন পর কবরে ফুল দিতে দেখা যায় মেয়েটিকে। সেইসাথে ভিডিওতে ইরাকের পতাকাও দেখতে পাওয়া যায়।
Indication By Rumor Scanner
মূলত, ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর করোনা আক্রান্ত হয়ে ফাতিমা সালাম সালান নামের এক ইরাকি শিশুর মা মৃত্যুবরণ করেন। সেসময় মায়ের কবরের পাশে মেয়ের কান্নার ভিডিওকেই চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে মৃত মায়ের কবরের পাশে মেয়ের কান্নার ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের ভিডিও দাবিতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ভিডিও প্রচারিত হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ইরাকের পুরোনো ভিডিওকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত মায়ের কবরের পাশে মেয়ের কান্নার ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, ইসরায়েল- ফিলিস্তিন সংঘাতকে কেন্দ্র করে “বয়কট এমনভাবে করুন যেন তারা নিজেদের রূপ পাল্টাতে বাধ্য হয়” শীর্ষক দাবিতে হলুদ রঙের মোড়কে মোড়ানো কোকা-কোলার কিছু ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, বয়কটের কারণে কোকা-কোলা নিজেদের রূপ বদলাতে অর্থাৎ মোড়ক বদলাতে বাধ্য হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,বয়কটের কারণে কোকা-কোলার মোড়ক পরিবর্তনের দাবিটি সঠিক নয় বরং প্রচারকৃত ছবিগুলো লেমন ফ্লেভারের ডায়েট কোকের, যা চলমান বয়কট প্রসঙ্গের অনেক আগে থেকেই বাজারে রয়েছে।
সূত্রপাত
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে থাকা ব্যানারটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে ব্যানারের এক কোণে ‘To The Point’ নামক একটি লিখা দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত লিখার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ‘To The Point’ নামক একটি ফেসবুক পেজে উক্ত ব্যানারটি খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ এই পেজ থেকেই আলোচিত দাবিটির সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) করা হয়।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে দুই বছর পূর্বের অর্থাৎ ২০২১ সালে সামাজিক মাধ্যম রেডিটে ‘Coke Zero Lemon’ শীর্ষক শিরোনামে আলোচ্য দাবিতে প্রচারিত কোকের ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Source: Reddit
অর্থাৎ, বয়কটের ডাক দেওয়ার পূর্বে থেকেই এই কোকের অস্তিত্ব রয়েছে।
পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২৫ মার্চ স্টকফটো ওয়েবসাইট অ্যালামিতে আলোচ্য হলুদ মোড়কে মোড়ানো কোকা-কোলার অনুরূপ কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর ‘Ryan Mercer’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে “Coca-Cola Lemon Zero Sugar from Japan” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিওতে থাকা হলুদ রঙের কোকা-কোলার বোতলের সাথেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কোকা-কোলার ছবির মিল পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে, বয়কটের কারণে কোকা-কোলার ডিজাইন পরিবর্তন হয়নি বরং আলোচ্য দাবিতে ভিন্ন ফ্লেভারের এক কোকা-কোলার বোতলের ছবি প্রচার করা হচ্ছে, যা অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন দেশের বাজারে রয়েছে।
তাছাড়া, কোকা-কোলার ওয়েবসাইটে সাম্প্রতিক সময়ে কোকা-কোলার ডিজাইন পরিবর্তন সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে এই তথ্য অস্তিত্ব মিলেনি।
মূলত, ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলা কেন্দ্র করে শুরু হয় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত। পরবর্তীতে এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশে কোকা-কোলা সহ আরো কিছু পশ্চিমা পণ্যে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি হলুদ মোড়কে মোড়ানো কোকা-কোলার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে বয়কটের কারণে কোকা-কোলার বোতলের ডিজাইন পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোকা-কোলার ডিজাইন পরিবর্তন হয়নি। উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি মূলত লেমন ফ্লেভারের ডায়েট কোক, যা চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের অনেক আগ থেকেই বিভিন্ন দেশের বাজারে রয়েছে।
সুতরাং, হলুদ মোড়কে মোড়ানো লেমন ফ্লেভারের ডায়েট কোকের ছবি সংযুক্ত করে বয়কটের কারণে কোকা-কোলার রূপ বা মোড়ক বদলানো হয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রচার করা তথ্যটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, বাংলাদেশি, বলে “হাসপাতালেও” জায়গা নেই!!– শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, একজন বাংলাদেশি তার বাবাকে নিয়ে ভারতে গেছেন চিকিৎসা করাতে। সেখানে হাসপাতালে জায়গা দিচ্ছে না। পরবর্তীতে কিছু যুবক এসে, কোথা থেকে এসেছে জানতে চাইলে সে বাংলাদেশ থেকে এসেছে বলে পরিচয় দেয়। এরপর তাকে হেনস্তা করতে থাকে। পরিশেষে একজন ডাক্তার এসে তাঁর বাবাকে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাংলাদেশি বলে হাসপাতালে জায়গা না পাওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয় বরং বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি উক্ত ভিডিওটি বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি যেসব অ্যাকাউন্ট এবং পেজ থেকে ছড়িয়েছে সেসব পোস্টের কমেন্টবক্স পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, অধিকাংশ নেটিজেন বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
Screenshot collage: Rumor Scanner
বিষয়টি যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে Comedy Processing Unit নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ৪ ডিসেম্বর “বাংলাদেশি, বলে “হাসপাতালেও” জায়গা নেই!!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আলোচিত মূল ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: Facebook
১২ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের পুরো ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটি’র ১৮ সেকেন্ড অংশে ডিসক্লেইমারে উল্লেখ পাওয়া যায়, এই ভিডিওটি বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।
Screenshot source: Facebook
পরবর্তীতে উক্ত পেজটির অ্যাবাউট সেকশন পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে উল্লেখিত তথ্য থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায়, এটি একটি বিনোদনভিত্তিক পেজ।
Screenshot source: Facebook
তাছাড়া উক্ত পেজ থেকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক কয়েকটি ভিডিও (১, ২, ৩) পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেগুলোও বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি ভিডিও।
এছাড়া, এসব ভিডিওতে বাংলাদেশি যুবক দাবিতে প্রচারিত ব্যক্তিরও উপস্থিতি পাওয়া যায়। এতে বোঝা যায় যে, কথিত বাংলাদেশি ওই যুবক Comedy Processing Unit এর একজন সদস্য।
Screenshot comparison: Rumor Scanne
মূলত, গত ১৯ নভেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিত ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয় ভারত। সে ম্যাচে বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকদের একাংশের ভারতের পরাজয়ে উল্লাস করার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ভারতে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ভারতীয়দের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি জানান। পরবর্তীতে বাংলাদেশি, বলে “হাসপাতালেও” জায়গা নেই!! শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ০৪ ডিসেম্বর Comedy Processing Unit নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি উক্ত ভিডিওটি পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বাংলাদেশি নাগরিক বলে বাবার চিকিৎসা করাতে ভারতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হলে সেটিও স্ক্রিপ্টডে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি ভারতে বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাংলাদেশি যুবক হাসপাতালে জায়গা পাচ্ছে না- শীর্ষক ভিডিওটিকে বাস্তব ঘটনার ভিডিও দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।