সম্প্রতি, ‘স্টেক খেতে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল’-শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জড়িয়ে অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আদলে তৈরি একটি স্ক্রিনশট ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘স্টেক খেতে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল’- দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি ভুয়া এবং ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটেও এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, “চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল” শীর্ষক শিরোনামে ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম বিকৃত করে এই ভুয়া তথ্যটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত স্ক্রিনশটটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনের আদলে তৈরি এই স্ক্রিনশটটিতে সংবাদ প্রচারের তারিখ ০৪ মার্চ, ২০২৪ উল্লেখ রয়েছে।
Screenshot: Facebook Claim Post
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে স্ক্রিনশটে থাকা তারিখ এবং ঢাকা পোস্টের লোগোর সূত্র ধরে ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে গত ০৪ মার্চ প্রকাশিত সংবাদগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনামে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে একই ছবি ব্যবহার করে ০৪ মার্চ “চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Dhaka Post Website
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত স্ক্রিনশটের সংবাদের সাথে উক্ত সংবাদের প্রতিবেদকের ক্রেডিট লাইন, সংবাদ প্রকাশের তারিখ ও সময় এবং ফিচারে থাকা মির্জা ফখরুলের ছবির সাথে হুবহু মিল রয়েছে।
Screenshot Comparison: Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০৪ মার্চ চিকিৎসার জন্য ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, চিকিৎসার জন্য ০৪ মার্চ সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঙ্গে উনার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম আছেন।
অর্থাৎ, গত ০৪ মার্চ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম বিকৃত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
মূলত, ‘স্টেক খেতে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল’-শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জড়িয়ে অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আদলে তৈরি একটি স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে এমন কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, মির্জা ফখরুলকে নিয়ে ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভিন্ন একটি সংবাদের শিরোনাম বিকৃত করে এই ভুয়া তথ্যটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও সংবাদের শিরোনাম বিকৃত করে মির্জা ফখরুলের নামে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং,স্টেক খেতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটের স্ক্রিনশটটি এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে “পদ্মা সেতু উড়ে গিয়েছে এতো দামি সেতু ছি” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু ভেঙ্গে গিয়েছে৷
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ৮ লাখ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ৭ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং শেয়ার করা হয়েছে ৪৭২ বার।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের পদ্মা সেতু ভেঙ্গে যায়নি বরং চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গুয়াংজুর পার্ল নদীতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি জাহাজের ধাক্কায় একটি সেতুর একাংশ ভেঙ্গে যাওয়ার ভিডিওকেই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র একটি লোগো দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত লোগোর সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে কালবেলা’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি “জাহাজের ধাক্কায় উড়ে গেলো সেতু!। Ship Broke The Bridge। China News। kalbela” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির শুরুর অংশটুকুই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
Video Comparison : Rumor Scanner
ভিডিও বিশ্লেষণে জানা যায়, চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গুয়াংজুতে পণ্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় সেতুর একাংশ ভেঙ্গে বাসসহ পাঁচটি যানবাহন নদীতে পড়ে গিয়ে ২ জন নিহত এবং তিনজন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া, বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২২ ফেব্রুয়ারি “চীনে জাহাজের ধাক্কায় ভেঙ্গে গেলো সেতু” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই বিষয় খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে পদ্মা সেতু ভেঙ্গে যাওয়া বিষয়ক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গুয়াংজুর পার্ল নদীতে জাহাজের ধাক্কায় একটি সেতুর একাংশ ভেঙ্গে যায়। উক্ত ঘটনায় বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত ঘটনায় জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনের একটি অংশ প্রচার করে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং ফ্লার্টফর্ম টিকটকে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের পদ্মা সেতু ভেঙ্গে গিয়েছে।
সুতরাং, চীনের নদীতে জাহাজের ধাক্কায় একটি সেতুর একাংশ ভেঙ্গে যাওয়ার ভিডিও পদ্মা সেতু ভেঙ্গে গিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে ; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর তৎকালীন পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে তালবাহানার কারণে বাঙালিরা আন্দোলন শুরু করে৷ এর প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রমনার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক একটি ভাষণ দেন। তার এই ভাষণের একাধিক ছবি বহু বছর ধরেই প্রচার হয়ে আসছে যার মধ্যে একটি ছবিতে দেখা যায়, তিনি একটি ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়ে তর্জনী উঠিয়ে ভাষণ দিচ্ছেন। এই ডায়াস কোনো পর্দা বা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল না।
সম্প্রতি উক্ত ছবি ব্যবহার করে ক্যাপশনে ‘ছবিটি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের’ দাবি করে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন বিবিসি বাংলা, বিডিনিউজ২৪, সময় টিভি (ফেসবুক), এটিএন নিউজ (ফেসবুক), ইত্তেফাক (মতামত নিবন্ধ)।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সিআরআই প্রকাশিত ২০২২ সালের এক ভিডিওর থাম্বনেইলেও এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে। একইভাবে দলটির অফিশিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টের এক পোস্টেও ২০১৭ সালে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বহুল প্রচারিত ছবিটি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের নয় বরং সে বছরেরই ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর আরেক সমাবেশ থেকে ছবিটি তুলেছিলেন জালালউদ্দিন হায়দার।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ইউটিউবের একাধিক চ্যানেলে (১, ২) ১৯৭১ সালের ০৭ মার্চের ভিডিওটি খুঁজে পেয়েছি আমরা, যার সাথে আলোচিত ছবিটির সুনির্দিষ্ট অমিল পরিলক্ষিত হয়েছে। যেমন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ডায়াসটির সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন, সেটি সাদা কাপড় বা পর্দা দিয়ে সামনের এবং উপরের অংশ ঢেকে দেওয়া ছিল। কিন্তু প্রচারিত ছবিটিতে সাদা কাপড় বা পর্দার অস্তিত্ব নেই। আমরা ভাষণের পুরো ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে কোনো অংশেই সাদা কাপড় বা পর্দার অস্তিত্ব পাইনি।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
বিষয়টি আরো নিশ্চিত হতে এই ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ০৮ মার্চের দুইটি পত্রিকার (দৈনিক পাকিস্তান ও The People) প্রিন্ট সংস্করণ ইতিহাসভিত্তিক অনলাইন সংগ্রহশালা ‘সংগ্রামের নোটবুক’ এর সহায়তায় খুঁজে বের করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। দুইটি পত্রিকার প্রথম পাতাতেই সেদিন ৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের খবর ও ছবি ছাপা হয়েছিল। দুই পত্রিকায় ছাপা হওয়া ছবি দুটো থেকেও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, বঙ্গবন্ধু যে ডায়াসটির সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন, সেটি সাদা কাপড় বা পর্দা দিয়ে সামনের এবং উপরের অংশ ঢেকে দেওয়া ছিল।
Screenshot collage: Rumor Scanner
তবে মূল ধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘বিডিনিউজ২৪’ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে প্রচারিত ছবিটির ফটোগ্রাফার হিসেবে নাসির আলী মামুনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
Screenshot: Bdnews24
এর প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে আমরা জনাব নাসির আলী মামুনের সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, তিনি সেদিন সমাবেশস্থলে উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ছবি তুললেও এই ছবিটি তার তোলা নয়৷
এই ছবিটির ফটোগ্রাফারের খোঁজ করতে গিয়ে ফেসবুকে জালালউদ্দিন হায়দার নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে একই ছবি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এই ছবিগুলোর ক্যাপশনে ছবিটির ফটোগ্রাফার হিসেবে নিজের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি। একইসাথে এও দাবি করেছেন যে, ছবিটি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তোলা। ২০১৯ সালের পোস্টে একাধিক ব্যক্তি এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও তিনি তাদের সুস্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি।
Screenshot collage: Rumor Scanner
২০২০ সালে সোহেল আরমান নামে এক ব্যক্তি জালালউদ্দিন হায়দারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনেন। সে বছরের ৭ই মার্চ করা এক পোস্টে জনাব আরমান জানান, জালালউদ্দিন হায়দার নিজের তোলা অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ছবির সঠিক ক্যাপশন দিতে না পারায় চরম ইতিহাস বিকৃতি ঘটছে। তিনি ৭০ সালের ঘটনাকে ৬৯, ৭১ এর ঘটনাকে ৬৯, ৬৯ এর ঘটনাকে ৭১, ৭২ এর ঘটনাকে ৭১, ফেব্রুয়ারীকে মার্চ, মার্চকে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের তারিখ গুলোকে এদিক সেদিক বানিয়ে ইতিহাসকে ওলট পালট করে ফেলেছেন বলে দাবি করেন আরমান।
আরমান বলছেন, “৭ মার্চের ছবি বলে তিনি যে ছবি প্রচার করেছেন তা ৭ মার্চের না। তিনি ৩ জানুয়ারীর ছবিকে ৭ মার্চের বলে চালিয়েছেন। এ নিয়ে গতবছর তার সাথে তর্ক করার পর তিনি বলেছিলেন ৭ মার্চের ভিডিও গুলি ভুয়া। তার টাই সঠিক।”
Screenshot: Facebook
জনাব জালালউদ্দিন হায়দার নিজেই তার ছবির বিষয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন যা আমাদের উপরোক্ত তথ্যপ্রমাণ থেকে স্পষ্ট হওয়া যাচ্ছে।
আমরা ছবিটি ধারণের মূল তারিখ নিশ্চিত হতে অনুসন্ধান এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের যাচাইয়ে ছবি ও ভিডিও হোস্টিং ওয়েবসাইট ‘Flickr’ এ একই ছবির সন্ধান মিলেছে, যাতে ছবিটির ফটোগ্রাফার হিসেবে জালালউদ্দিন হায়দারের নাম এবং ছবিটির ধারণকাল সত্তরের দশক বলে উল্লেখ পাওয়া যায়।
Screenshot: Flickr
ইউটিউবের একাধিক চ্যানেলে (১, ২) ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রেসকোর্সেই বঙ্গবন্ধুর আরেক সমাবেশের একটি ভিডিও খুঁজে পেয়েছি আমরা, যার সাথে এই ছবিটির আনুষঙ্গিক বিষয়বস্তুর মিল পাওয়া যাচ্ছে।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
বিষয়টি নিয়ে আরো অনুসন্ধানে এই ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ০৪ জানুয়ারির দুইটি পত্রিকার (Morning News ও আজাদ) প্রিন্ট সংস্করণ ‘সংগ্রামের নোটবুক’ এর সহায়তায় খুঁজে বের করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। দুইটি পত্রিকার প্রথম পাতাতেই সেদিন ০৩ জানুয়ারির রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের খবর ও ছবি ছাপা হয়েছিল। দুই পত্রিকায় ছাপা হওয়া ছবি দুটোর সাথেও জালালউদ্দিন হায়দারের তোলা ছবিটির মিল পাওয়া যাচ্ছে। এটাও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, বঙ্গবন্ধু যে ডায়াসটির সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন, সেটিতে সাদা কাপড় বা পর্দা দিয়ে সামনের এবং উপরের অংশ ঢাকা ছিল না।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
জনাব জালালউদ্দিন হায়দার গত বছরের মার্চে (২০২৩) মারা গেছেন। আমরা এ বিষয়ে জানতে তাঁর ছেলে নাজিম উদ্দীন হায়দারের সাথে কথা বলেছি। তিনিও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন, তার বাবার তোলা এই ছবিটি ৭ই মার্চের নয়।
মূলত, জালালউদ্দিন হায়দার নামে এক ফটোগ্রাফার ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাবেশে তাঁর ভাষণ দেওয়ার সময়কার একটি ছবি তুলেন। উক্ত ছবিটিকে তিনি এবং ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ৭ মার্চের ছবি বলে দাবি করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখেছে, বঙ্গবন্ধু যে ডায়াসটির সামনে দাঁড়িয়ে ০৭ই মার্চ ভাষণ দিয়েছিলেন, সেটি সাদা কাপড় বা পর্দা দিয়ে সামনের এবং উপরের অংশ ঢেকে দেওয়া ছিল। কিন্তু প্রচারিত ছবিটিতে সাদা কাপড় বা পর্দার অস্তিত্ব নেই। এ সংক্রান্ত ভিডিও এবং সে সময়কার পত্রিকা বিশ্লেষণ করে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে ছবিটি ০৭ই মার্চের নয়।
সুতরাং, জালালউদ্দিন হায়দারের তোলা ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেওয়ার সময়কার একটি ছবিকে সে বছরের ৭ মার্চের ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, সনাতন ধর্মীয় দেবদেবীর প্রতিকৃতি সম্বলিত কয়েকটি ধাতব মুদ্রার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, এগুলো ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলের মুদ্রা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত মুদ্রাগুলো ব্রিটিশ শাসনামলের নয় বরং বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে উক্ত মুদ্রাগুলো পাওয়া যায়; যা বিক্রির উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আলোচিত মুদ্রাগুলোর অনুরূপ কোনো মুদ্রা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত মুদ্রাগুলোর ছবি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে একটি এক আনা এবং একটি দুই আনার মুদ্রার দুই পিঠ দেখা যায়। মুদ্রাগুলোর গায়ে খোদাইকৃত লেখা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এক আনার মুদ্রাটির তারিখ হিসেবে ১৮৩৯ সাল এবং ২ আনার মুদ্রাটির তারিখ হিসেবে ১৮১৮ সালের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
Screenshot: Facebook Claim Post
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজা ৩য় জর্জের শাসনামল ছিল ১৭৬০ সাল থেকে ১৮২০ সাল পর্যন্ত এবং রাণী ভিক্টোরিয়ার শাসনামল ছিল ১৮৩৭ সাল থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত।
আলোচিত মুদ্রাগুলোতে উল্লেখিত সাল (১৮৩৯ ও ১৮১৮) অনুযায়ী এক আনার মুদ্রাটি রাণী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলের এবং দুই আনার মুদ্রাটি রাজা ৩য় জর্জের শাসনামলের হওয়ার কথা।
তবে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ব্রিটিশ শাসনামলের মুদ্রা সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ১৮৩৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজা চতুর্থ উইলিয়ামের প্রতিকৃতি সম্বলিত কিছু মুদ্রা চালু করেছিল। ১৮৪০ পরবর্তী সময়কালে জারি করা মুদ্রাগুলোতে রাণী ভিক্টোরিয়ার প্রতিকৃতি ছিল।
Screenshot: Federal Reserve Bank of India
পরবর্তী অনুসন্ধানে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের ‘কারেন্সি মিউজিয়াম’ সেকশনে গিয়ে রাণী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলের মুদ্রাগুলোর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সেসময়ের মুদ্রাগুলোর অধিকাংশই ছিল রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জের। উক্ত মুদ্রাগুলোতে রাণী ভিক্টোরিয়ার প্রতিকৃতি ছিল। তবে সেখানে আলোচিত রামায়ণ থিমের মুদ্রার ছবির অনুরূপ কোনো মুদ্রা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Image Collage by Rumor Scanner
এছাড়া, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের ‘কারেন্সি মিউজিয়াম’ সেকশনে গিয়ে রাজা চতুর্থ উইলিয়ামের শাসনামলের মুদ্রাগুলোর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সেসময়ের মুদ্রাগুলোর অধিকাংশই ছিল রৌপ্য এবং কপারের। উক্ত মুদ্রাগুলোতে রাজা চতুর্থ উইলিয়ামের প্রতিকৃতি ছিল। তবে সেখানে আলোচিত রামায়ণ থিমের মুদ্রার ছবির অনুরূপ কোনো মুদ্রা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Federal Reserve Bank of India
তাছাড়া, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’ সেকশনে গিয়ে রাজা তৃতীয় জর্জের শাসনামলের কোনো মুদ্রা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে উল্লেখিত অন্যান্য রাজাদের শাসনামলে জারিকৃত মুদ্রাগুলোর সাথেও আলোচিত মুদ্রাগুলোর কোনো সাদৃশ্য পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Federal Reserve Bank of India
এছাড়াও, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ব্রিটিশ শাসনামল ছাড়াও অন্যান্য সময়ের মুদ্রাগুলো পর্যবেক্ষণ করেও আলোচিত রামায়ণ থিমের মুদ্রাগুলোর অনুরূপ কোনো মুদ্রা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, ব্রিটিশ শাসনামল বা তার পরবর্তী কোনো সময়ের মুদ্রাতেই আলোচিত মুদ্রাগুলোর অনুরূপ সনাতন ধর্মীয় দেবদেবীর প্রতিকৃতি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতের ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’র ওয়েবসাইটে ব্রিটিশ শাসনামলের সময়ের মুদ্রার বিবরণী নিয়ে প্রকাশিত একটি নথি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখিত মুদ্রার ছবিতেও রামায়ণ থিমের বা সনাতন ধর্মীয় দেবদেবীর প্রতিকৃতির উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
Image Collage by Rumor Scanner
এছাড়াও, আলোচিত মুদ্রাগুলো সম্পর্কে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে দিল্লি ন্যাশনাল মিউজিয়ামের মুখপাত্র সঞ্জিব সিং এর বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে তিনি জানান, সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত হিন্দু দেবদেবীর প্রতিকৃতি সম্বলিত কোনো মুদ্রা থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ফ্লিপকার্ট (১, ২), অ্যামাজন এবং ই-বে এর ওয়েবসাইটে আলোচিত মুদ্রাগুলোর অনুরূপ কিছু মুদ্রার ছবি পাওয়া যায়; যেগুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে দেওয়া।
Screenshot Collage by Rumor Scanner
পরবর্তীতে মুদ্রা বিষয়ক ওয়েবসাইট Coin Quest এ ‘India (East Company) Spiritual Tokens (Counterfeit) 1616 to 1839’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচিত মুদ্রাগুলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জারি করা মুদ্রা নয়, সেগুলো মূলত মন্দিরের টোকেন, যা সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত মুদ্রাগুলো ব্রিটিশ শাসনামলের নয়।
মূলত, সনাতন ধর্মীয় দেবদেবীর প্রতিকৃতি সম্বলিত কয়েকটি ধাতব মুদ্রার ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, সেগুলো ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলের মুদ্রা। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আলোচিত মুদ্রাগুলোর অনুরূপ কোনো মুদ্রা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে উক্ত মুদ্রাগুলো পাওয়া যায়; যা বিক্রির উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, দিল্লি ন্যাশনাল মিউজিয়ামের মুখপাত্র সঞ্জিব সিং জানান, সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত হিন্দু দেবদেবীর প্রতিকৃতি সম্বলিত কোনো মুদ্রা থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সনাতন ধর্মীয় দেবদেবীর ছবি সম্বলিত কিছু ধাতব মুদ্রাকে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলের মুদ্রা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
ভারতের ধনকুবের মুকেশ আম্বানির কনিষ্ঠ সন্তান অনন্ত আম্বানি এবং ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের টাইকুন হিসেবে পরিচিত বীরেন মার্চেন্টের মেয়ে রাধিকা মার্চেন্টের প্রাক-বিবাহ অনুষ্ঠানের কেক দাবিতে একটি কেকের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি আনন্ত আম্বানি এবং রাধিকা মার্চেন্টের প্রাক-বিবাহ অনুষ্ঠানের কেকের ভিডিও নয় বরং আলোচিত কেকের ভিডিওটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ব্রিটিশ ইন্টারনেট মিডিয়া কোম্পানি UNILAD এর ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scannar
ভিডিওটিতে কোনো ঘটনা বা স্থানের তথ্য উল্লেখ নেই। তবে তাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একই দিনে ভিডিওটি প্রকাশ করে। সেখানে ভিডিওর ক্রেডিট হিসেবে ‘@fill220812’ ইউজারের একটি টিকটক অ্যাকাউন্টের উল্লেখ করেছে।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে @fill220812 নামক টিকটক অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর প্রকাশিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্টে ভিন্ন সময়ে প্রকাশিত ভিডিওতে তুর্কেমেনিস্তানের আশখাবাদ শহরের হ্যাশট্যাগ ব্যবহৃত হয়েছে।
‘turkmen_today’ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বরে তুর্কেমেনিস্তানের শহর আশখাবাদে চেক ইন দিয়ে একই কেকের ভিন্ন কোণ থেকে তোলা একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে ভারতীয় গণমাধ্যম News 18 এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর “Watch: Couple Celebrates Their Wedding With Massive Hogwarts Castle-Themed Cake” শীর্ষক শিরোনামে একই কেকের ভিডিও নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেকটি জেকে রাউলিং এর হ্যারি পটার সিরিজের দুর্গের ন্যায় তৈরি করা হয়েছে। তবে এই প্রতিবেদনে উক্ত ঘটনার স্থান সম্পর্কে কোন তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
অন্যদিকে ২০২৪ সালের মার্চের ১ থেকে ৩ তারিখ পর্যন্ত গুজরাটের জামনগরে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানি এবং ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের টাইকুন হিসেবে পরিচিত বীরেন মার্চেন্টের মেয়ে রাধিকা মার্চেন্টের প্রাক-বিবাহ অনুষ্ঠান হয়েছে।
অর্থাৎ, আলোচিত কেকের ভিডিওটি অনন্ত আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্টের প্রাক-বিবাহ অনুষ্ঠানের পূর্বেই ইন্টারনেটে রয়েছে।
মূলত, অনন্ত আম্বানি এবং রাধিকা মার্চেন্টের প্রাক-বিবাহ অনুষ্ঠানের কেক দাবিতে একটি কেকের ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিকৃত কেকের ভিডিওটির অস্তিত্ব প্রাক-বিবাহ অনুষ্ঠানের আরো অনেক আগে থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে।
সুতরাং, অনন্ত আম্বানি এবং রাধিকা মার্চেন্টের প্রাক-বিবাহ অনুষ্ঠানের কেকের ভিডিও দাবিতে পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার এবি ডি ভিলিয়ার্স “ ধোনি আমাকে বলেছে- চেন্নাই এর সেরা পছন্দ ছিল বিশ্বসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল কিন্তু তামিমের সাথে তারা চুক্তি করতে পারে নাই কারণ তামিম আইপিএল এর মত জুয়ারি আসরে খেলেন না” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এবি ডি ভিলিয়ার্স “ধোনি আমাকে বলেছে, তামিম ইকবাল চেন্নাইয়ের সেরা পছন্দ ছিল” শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং স্পোর্টস ডাইভারসিটি নামের একটি খেলাধুলা বিষয়ক ফেসবুক পেজে মহেন্দ্র সিং ধোনির বিষয়ে করা এবি ডি ভিলিয়ার্সের মন্তব্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই একাধিক প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এবি ডি ভিলিয়ার্সের আলোচিত মন্তব্যের কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওর ওপরের ডান কোণে থাকা Sports Diversity লেখার সূত্র ধরে স্পোর্টস ডাইভারসিটির ফেসবুক পেজে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
কিন্তু, স্পোর্টস ডাইভারসিটির ফেসবুক পেজে এবি ডি ভিলিয়ার্সের আলোচিত মন্তব্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, স্পোর্টস ডাইভারসিটির ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বরে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে নিয়ে এবি ডি ভিলিয়ার্সের করা মন্তব্যের বিষয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের সাথে সংযুক্ত ফটোকার্ডের সাথে দাবিকৃত ভিডিওতে থাকা ফটোকার্ডের শিরোনাম ব্যতীত বাকি অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison Image By Rumor Scanner
টিকটকে প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহৃত ফটোকার্ডের ফন্টের সাথে স্পোর্টস ডাইভারসিটি পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের ফন্টের ভিন্নতাও লক্ষ্য করা যায়।
অর্থাৎ, স্পোর্টস ডাইভারসিটি পেজে প্রচারিত এই ফটোকার্ডের শিরোনাম সম্পাদনা করেই আলোচিত ভিডিওতে প্রদর্শিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
পরবর্তীতে, স্পোর্টস ডাইভারসিটির সূত্রে ভাতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক এম.এস ধোনি ২০২৪ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে সুযোগ পাওয়ার প্রসঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ক্রিকেটার এবি ডি ভিলিয়ার্স নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত একটি ভিডিওতে বলেন, “ধোনি হয়ত আরও তিনটি মৌসুম খেলতে পারেন।”
হিন্দুস্তান টাইমসের সূত্রে এবি ডি ভিলিয়ার্সের ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে ২০২৪ সালের আইপিএলে থেকে দলগুলো সম্পর্কে আলোচনা করেন ভিলিয়ার্স। এই ভিডিওর কোনো অংশে তাকে তামিমের আইপিএলে খেলা সম্পর্কে আলোচ্য মন্তব্যটি করতে দেখা যায়নি।
মূলত, স্পোর্টস ডাইভারসিটি নামের খেলাধুলাবিষয়ক একটি ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক এম.এস ধোনিকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ক্রিকেটার এবি ডি ভিলিয়ার্সের করা মন্তব্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে সেই ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট বা সম্পাদনা করে এবি ডি ভিলিয়ার্স “ধোনি আমাকে বলেছে, তামিম ইকবাল চেন্নাইয়ের সেরা পছন্দ ছিল” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলির নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচারিত হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, এবি ডি ভিলিয়ার্স “ধোনি আমাকে বলেছে, তামিম ইকবাল চেন্নাইয়ের সেরা পছন্দ ছিল” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।
০৭ মার্চ, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে ফেসবুকে একই দাবি সম্বলিত পোস্ট আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে কতিপয় উক্ত পোস্টগুলোকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।
গত ০২ জানুয়ারি Sports Center নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘চান কপাল শরিফুলের। আইপিএলে ২৩ কোটি চুক্তিতে শরিফুলকে দলে নেওয়ার ঘোষণা ধোনির’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘যেকোন মূল্যে শরিফুলকে আমার দলে চাই, সংবাদমাধ্যমে শরিফুলকে ২৩ কোটি টাকার অফার দিল ধোনি’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ৪৮ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ৭১২ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ১২১ টি মন্তব্য করা হয়েছে।
পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়। সেটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরে আইপিএল ফ্রেঞ্চাইজি চেন্নাই সুপার কিংস বাংলাদেশি পেসার শরিফুল ইসলামকে কেনেনি বরং চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনির পুরোনো ভিডিও ক্লিপের সাথে শরিফুল ইসলামের কিছু ছবি যুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে চেন্নাই সুপার কিংস অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনিকে কথা বলতে দেখা যায়। ভিডিওটির সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “যেকোনো মূল্যে শরিফুলকে আমার দলে দেখতে চাই। এবার সংবাদমাধ্যমে এসে শরিফুলকে ২৩ কোটি টাকার অফার দিলো আইপিএল ফ্রেঞ্চাইজি চেন্নাই সুপার কিংস অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি…..। আজ এক সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, যত টাকা লাগে আমরা দিবো। তবুও শরিফুল ইসলামকে আমাদের দলে চাই। কেননা ২০২৩ সালে জাতীয় দলের ৩ ফরম্যাটে বল হাতে দুর্দান্ত অগ্নিঝরা, বিধ্বংসী বোলিং করেছেন শরিফুল ইসলাম। যেকোনো কন্ডিশনে বিধ্বংসী বোলিং করে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের আতঙ্কের নাম হয়েছেন শরিফুল ইসলাম। আর তাইতো ২০২৪ সালের আইপিএলে শরিফুল ইসলামকে আমাদের চাই ই চাই।”
বিষয়টি যাচাইয়ে আলোচিত ভিডিওটির শুরুতে প্রদর্শিত মাহেন্দ্র সিং ধোনি’র বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ থেকে থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আইপিএল ফ্রেঞ্চাইজি চেন্নাই সুপার কিংস এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালে ২১ নভেম্বর “My last T20 game will be in Chennai”- Thala’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটিতে দলটির অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনিকে আইপিএল এবং চেন্নাই সুপার কিংসের বিষয়ে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। তবে সেখানে তাকে বাংলাদেশি পেসার শরিফুল ইসলামের বিষয়ে কোনো কথা বলতে দেখা যায়নি।
এই ভিডিওটি’র একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির শুরুতে দেখানো মাহেন্দ্র সিং ধোনি’র বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে শরিফুল ইসলামের আইপিএল খেলার কোনো সম্পর্ক নেই।
তাছাড়া, চেন্নাই সুপার কিংস কিংবা মাহেন্দ্র সিং ধোনি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ, অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টেও দলটির হয়ে শরিফুল ইসলামের আইপিএল খেলার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, এবারের আইপিএলের চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছিলেন বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার। এদের মধ্যে ছিলেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ এবং শরিফুল ইসলাম। মুস্তাফিজের ভিত্তিমূল্য ছিল ২ কোটি রুপি, তাসকিনের ভিত্তিমূল্য ছিল ৭৫ লাখ রুপি এবং শরিফুলের ভিত্তিমূল্য ছিল ৫০ লাখ রুপি। তবে পরবর্তীতে পেসার শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ নিলাম থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেন। ফলে বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র মোস্তাফিজুর রহমানের নামই নিলাম তালিকায় ছিল। এরপর ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ২০২৪ আসরের নিলাম অনুষ্ঠিত হলে সেখান থেকে চেন্নাই সুপার কিংস মোস্তাফিজুর রহমানকে ভিত্তিমূল্য ২ কোটি রূপিতে দলে ভেড়ায়।
অর্থাৎ, চলতি বছরের আইপিএলে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলবেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান।
উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ২০২৪ সালের আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংস কর্তৃক বাংলাদেশি পেসার শরিফুল ইসলামকে কেনার দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, আগামী ২২ মার্চ ভারতের চেন্নাইয়ে আইপিএলের ১৭ তম আসর শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে আইপিএলকে ঘিরে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে গত ০২ জানুয়ারি Sports Center নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘চান কপাল শরিফুলের। আইপিএলে ২৩ কোটি চুক্তিতে শরিফুলকে দলে নেওয়ার ঘোষণা ধোনির’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘যেকোন মূল্যে শরিফুলকে আমার দলে চাই, সংবাদমাধ্যমে শরিফুলকে ২৩ কোটি টাকার অফার দিল ধোনি’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। চলতি বছরের আইপিএলের চূড়ান্ত নিলাম তালিকায় জায়গা পেলেও পরবর্তীতে তিনি নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে শরিফুল ইসলাম চলতি বছরের আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলবেন না।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বাংলাদেশি পেসার হাসান মাহমুদের আইপিএলে খেলার ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ২০২৪ সালের আইপিএলে শরিফুল ইসলামকে চেন্নাই সুপার কিংস দলে নিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ০১ মার্চ অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান অনুষদের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে- শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের বিজ্ঞান অনুষদের (ক ইউনিট) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ০১ মার্চ বেলা ১১ টা থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত।
এর পূর্বে একইদিন সকাল ৯ টায় ফেসবুকে Foysal Ahamed Joy (আর্কাইভ) নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “Dhaka বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ‘A’ ইউনিটের’ এর প্রশ্ন ২ ঘন্টা আগে ফ্রি দিলাম এক্সাম দিয়ে মিলায়েন ১০০% কমন থাকবে এটা। টাকা ছাড়া প্রশ্ন পাবেন না কখনই। আমি এডভান্স টাকা ছাড়া কাউকে কোন প্রশ্ন দেইনি আর কোনদিন দিবোও না। বলছিলাম পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে ফ্রি দিবো কিছু দিলাম এইটুকুই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। যাদের ডেন্টাল, রাবি, চবি ও গুচ্ছসহ যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ১০০% কমন প্রশ্ন লাগবে তারা ইনবক্সে যোগাযোগ করো। টাকা ফিক্সড এবং এডভান্স যারা বাংলা কম বুঝো দয়া করে তারা অযথা কোন মেসেজ দিয়ে ব্লক খাবে না।” (পোস্ট অপরিবর্তিত)
পোস্টে একটি ছবি সংযুক্ত রয়েছে, যেখানে একটি ছাপা প্রশ্নের একাংশ দেখা যাচ্ছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবির ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেসবুকে ঢাবির প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রায় ২৬ মিনিট পর ওই পোস্ট এডিট/সম্পাদনা করে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টটিতে থাকা প্রশ্নপত্রের সাথে ঢাবির ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মূল প্রশ্নের (আর্কাইভ) মিল পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে আলোচিত পোস্টটির (Foysal Ahamed Joy নামক একটি অ্যাকাউন্টের পোস্ট) ‘Edit History’ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সকাল ৯ টায় যখন পোস্ট করা হয়, তখন পোস্টে প্রশ্নপত্রের কোনো ছবি যুক্ত ছিল না। দুপুর ১২ টা ৫৬ মিনিটে ওই পোস্টে প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
Image by Rumor Scanner
একই অ্যাকাউন্টে এমন ঘটনার আরো উদাহরণFoysal Ahamed Joy নামের অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টটিতে পূর্বেও এমন প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ানো হয়েছে।
যেমন, গত ০৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) করেন। পোস্টে তিনি লিখেন, “মেডিকেল প্রশ্ন ২০২৪। ১০০% কমন দিলাম এক্সাম দিয়ে মিলায়ে নিয়েন। যাদের প্রমান দরকার ছিলো তাদের জন্য ২ ঘন্টা আগে টাইমলাইনে দিয়ে রাখলাম। বলছিলাম পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে ফ্রি দিবো কিছু দিলাম এইটুকুই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। ডেন্টাল, ঢাবি, রাবি, জাবি ও গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সম্পূর্ণ অরজিনাল প্রশ্ন নিতে চাইলে ইনবক্সে যোগাযোগ করো। টাকা আগে ছাড়া প্রশ্ন দেই নাই, আর দিবো না কোনোদিন। কোনো অযুহাতই লাভ হবে না। So যাদের এক্সাম খারাপ হবে নক দিয়েন ঠিক করে দিবো টাকা বেশি পরবে তবে ১০০% প্রশ্নের মতই হবে।”
কিন্তু পোস্টে কোনো ছবি যুক্ত ছিল না সেসময়।
সেদিনই (০৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রায় চার ঘণ্টা পর বিকাল ০৩ টা ০৩ মিনিটে এই পোস্টে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
Image By Rumor Scanner
অর্থাৎ, ০৯ ফেব্রুয়ারির মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে দাবি করে সেদিনের কোনো ছবি ছাড়া প্রকাশিত একটি পোস্টে পরীক্ষা শেষ হওয়ার চার ঘন্টা পর প্রশ্নের ছবি যুক্ত করা হয়েছে।
একই অ্যাকাউন্টে এমন আরেকটি প্রতারণামূলক পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)।
মূলত, গত ০১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের বিজ্ঞান ইউনিটের (ক) পরীক্ষা বেলা ১১ টা থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে একই দিন সকাল ৯ টায় ফেসবুকে প্রকাশিত এক পোস্টে “ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়। উক্ত পোস্টে প্রশ্নপত্রের একটি ছবিও যুক্ত রয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বিকাল ১২ টা ৫৬ মিনিটে পরীক্ষার পূর্বের পোস্টটি এডিট করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের ছবি যুক্ত করে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের এই ভর্তি পরীক্ষাটি শুরুর আগের দিন ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে টেলিগ্রামে প্রশ্নপত্র সরবরাহের প্রলোভন দেখাচ্ছিল একটি চক্র। এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ০৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ‘বি’ ইউনিটের উপ-ইউনিট ‘বি১’ এর পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে ‘বি১’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে- শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের চারুকলা, নাট্য ও সংগীত অনুষদের ‘বি’ ইউনিটের উপ-ইউনিট ‘বি১’ এর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ০৩ মার্চ বেলা ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত। এর পূর্বে একইদিন রাত ১ টা ৩৩ মিনিটে ফেসবুকে Jahid Afridi (আর্কাইভ) নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ২০২৩-২০২৪ এর ‘B1’ ইউনিট এর প্রশ্ন আমাদের হাতে চলে আসছে নিচে প্রশ্নের কিছু অংশ ফ্রিতে দেওয়া হলো। সময় ০৩/০৩/২০২৪ তারিখ রাত ১ টা ৩০ মিনিট এই টুকুই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। যারা টাকার বিনিময়ে সম্পূর্ণ প্রশ্ন সংগ্রহ করতে চাও তারা দ্রুত ইনবক্সে যোগাযোগ করো। টাকা ফিক্সড এবং এডভান্সড। ডেন্টাল,রাবি ও গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ২০২৪ এর ১০০% অরজিনাল প্রশ্ন নিতে চাইলে ইনবক্সে যোগাযোগ করো।” (পোস্ট অপরিবর্তিত)
পোস্টে একটি ছবি সংযুক্ত রয়েছে, যেখানে একটি ছাপা প্রশ্নের একাংশ দেখা যাচ্ছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চবির বি১ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেসবুকে চবির প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৩২ মিনিট পর ওই পোস্ট এডিট/সম্পাদনা করে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টটিতে থাকা প্রশ্নপত্রের সাথে চবির ‘বি১’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মূল প্রশ্নের (আর্কাইভ) মিল পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে আলোচিত পোস্টটির (Jahid Afridi নামক একটি অ্যাকাউন্টের পোস্ট) ‘Edit History’ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাত ১ টা ৩৩ মিনিটে যখন পোস্ট করা হয়, তখন পোস্টে প্রশ্নপত্রের কোনো ছবি যুক্ত ছিল না। পরবর্তীতে দুপুর ১২ টা ৩২ মিনিটে ওই পোস্টে প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
Image by Rumor Scanner
একই অ্যাকাউন্টে এমন ঘটনার আরো উদাহরণJahid Afridi (আর্কাইভ) নামক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টটিতে পূর্বেও এমন প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ানো হয়েছে।
যেমন, গত ০৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) করেন।
পোস্টে তিনি লিখেন, “মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ২০২৩-২০২৪ এর প্রশ্ন আমাদের হাতে চলে আসছে নিচে প্রশ্নের কিছু অংশ দেওয়া হলো। রাত ১টা এই টুকুই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট । যারা টাকার বিনিময়ে সম্পূর্ণ প্রশ্ন সংগ্রহ করতে চাও তারা দ্রুত ইনবক্সে যোগাযোগ করো। টাকা ফিক্সড এবং এডভান্সড। ঢাবি, রাবি ও গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ২০২৪ এর ১০০% অরজিনাল প্রশ্ন নিতে চাইলে ইনবক্সে যোগাযোগ করো।”
কিন্তু পোস্টে কোনো ছবি যুক্ত ছিল না সেসময়।
সেদিনই (০৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর একদিন পর ১০ ফেব্রুয়ারি এই পোস্টে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
Image by Rumor Scanner
অর্থাৎ, ০৯ ফেব্রুয়ারির মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে দাবি করে সেদিনের কোনো ছবি ছাড়া প্রকাশিত একটি পোস্টে পরীক্ষা শেষ হওয়ার একদিন পর প্রশ্নের ছবি যুক্ত করা হয়েছে।
একই অ্যাকাউন্টে এমন আরেকটি প্রতারণামূলক পোস্ট দেখুন, এখানে (আর্কাইভ)।
মূলত, গত ০৩ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ‘বি’ ইউনিটের উপ-ইউনিট ‘বি১’ এর পরীক্ষা বেলা ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে একই দিন রাত ০১ টা ৩৩ মিনিটে ফেসবুকে প্রকাশিত এক পোস্টে “বি১ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়। উক্ত পোস্টে প্রশ্নপত্রের একটি ছবিও যুক্ত রয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, চবির ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুর ১২ টা ৩২ মিনিটে রাতের পোস্টটি এডিট করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের ছবি যুক্ত করে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের উপ-ইউনিট ‘বি১’ এর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা জুয়ার অ্যাপের প্রচারণা করছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে মাশরাফিকে পুরোটা সময়ই দেখা যায়। তার সদৃশ কন্ঠে ভিন্ন উচ্চারণে কিছু বলতে শোনা যায়। অডিও বিশ্লেষণ করে যা বোঝা যায় তা হলো, মাশরাফি একটি বেটিং অ্যাপের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাশরাফি বিন মর্তুজা জুয়ার অ্যাপের প্রচারণা করেননি বরং ২০২৩ সালে সময় টেলিভিশনে দেওয়া মাশরাফির এক সাক্ষাৎকারের ভিডিওতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ভিন্ন অডিও এবং জুয়ার বিজ্ঞাপন যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিওটিতে যুক্ত মাশরাফি বিন মর্তুজার কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১ জুলাই “মাশরাফির কাছে ক্রিকেট নাকি রাজনীতির মারপ্যাঁচ কঠিন?। Eid Special Sompadokio। Mashrafe Bin Mortaza” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : YouTube
উক্ত ভিডিওতে মাশরাফির পোশাক, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং আনুষঙ্গিক বিষয়বস্তুর সাথে আলোচিত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison : Rumor Scanner
এই ভিডিও থেকে জানা যায়, এটি বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার সময় টেলিভিশনে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও। যেখানে তিনি ক্রিকেটের সাথে জড়িত তার জীবনের বিভিন্ন মুহুর্ত শেয়ার করেন এবং পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে আসার পরবর্তী বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। তবে এই ভিডিওতে মাশরাফি কোনো জুয়ার অ্যাপ বা সাইটের বিষয়ে কথা বলেননি।
অর্থাৎ, ভিন্ন একটি ভিডিওতে মাশরাফির কন্ঠস্বরে নকল কন্ঠস্বর বসিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। মাশরাফির এই ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিটির কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিওটি প্রচার করা ফেসবুক পেজ সম্পর্কে যা জানা গেল
গুগল টান্সলেটরের মাধ্যমে জানা যায়, পেজটির (আর্কাইভ) নামের পাশাপাশি পেজটিতে প্রচারিত সব পোস্টেই থাই ভাষা ব্যবহার করা হয়। তথ্য গোপন রাখায় পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন যাচাই করে পেজটি কোন দেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে পেজটি পর্যবেক্ষণ করে পেজটিতে নিয়মিত জুয়ার প্রচারণামূলক পোস্ট ( ১, ২, ৩) দেখতে পাওয়া যায়।
মূলত, ২০২৩ সালের ১ জুলাই সময় টেলিভিশনে সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার একটি সাক্ষাৎকার ভিডিও প্রচার করা হয়। ওই ভিডিওর একটি অংশ কাট করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তাতে সময় টিভির লোগো, ভিন্ন একটি অডিও এবং জুয়ার অ্যাপের প্রচারণার ভিডিও যুক্ত করে দাবি করা হচ্ছে, মাশরাফি জুয়ার অ্যাপের প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, মাশরাফি বিন মর্তুজা এমন কোনো জুয়ার অ্যাপের প্রচারণা করেননি।
উল্লেখ্য, পূর্বে সাকিব আল হাসানকে জড়িয়ে মোবাইল ক্যাসিনোর ভুয়া বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।