গত ০১ মার্চ অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান অনুষদের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে- শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের বিজ্ঞান অনুষদের (ক ইউনিট) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ০১ মার্চ বেলা ১১ টা থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত।
এর পূর্বে একইদিন সকাল ৯ টায় ফেসবুকে Foysal Ahamed Joy (আর্কাইভ) নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “Dhaka বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ‘A’ ইউনিটের’ এর প্রশ্ন ২ ঘন্টা আগে ফ্রি দিলাম এক্সাম দিয়ে মিলায়েন ১০০% কমন থাকবে এটা। টাকা ছাড়া প্রশ্ন পাবেন না কখনই। আমি এডভান্স টাকা ছাড়া কাউকে কোন প্রশ্ন দেইনি আর কোনদিন দিবোও না। বলছিলাম পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে ফ্রি দিবো কিছু দিলাম এইটুকুই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। যাদের ডেন্টাল, রাবি, চবি ও গুচ্ছসহ যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ১০০% কমন প্রশ্ন লাগবে তারা ইনবক্সে যোগাযোগ করো। টাকা ফিক্সড এবং এডভান্স যারা বাংলা কম বুঝো দয়া করে তারা অযথা কোন মেসেজ দিয়ে ব্লক খাবে না।” (পোস্ট অপরিবর্তিত)
পোস্টে একটি ছবি সংযুক্ত রয়েছে, যেখানে একটি ছাপা প্রশ্নের একাংশ দেখা যাচ্ছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবির ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেসবুকে ঢাবির প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রায় ২৬ মিনিট পর ওই পোস্ট এডিট/সম্পাদনা করে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টটিতে থাকা প্রশ্নপত্রের সাথে ঢাবির ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মূল প্রশ্নের (আর্কাইভ) মিল পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে আলোচিত পোস্টটির (Foysal Ahamed Joy নামক একটি অ্যাকাউন্টের পোস্ট) ‘Edit History’ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সকাল ৯ টায় যখন পোস্ট করা হয়, তখন পোস্টে প্রশ্নপত্রের কোনো ছবি যুক্ত ছিল না। দুপুর ১২ টা ৫৬ মিনিটে ওই পোস্টে প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
একই অ্যাকাউন্টে এমন ঘটনার আরো উদাহরণ Foysal Ahamed Joy নামের অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টটিতে পূর্বেও এমন প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ানো হয়েছে।
যেমন, গত ০৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) করেন। পোস্টে তিনি লিখেন, “মেডিকেল প্রশ্ন ২০২৪। ১০০% কমন দিলাম এক্সাম দিয়ে মিলায়ে নিয়েন। যাদের প্রমান দরকার ছিলো তাদের জন্য ২ ঘন্টা আগে টাইমলাইনে দিয়ে রাখলাম। বলছিলাম পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে ফ্রি দিবো কিছু দিলাম এইটুকুই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। ডেন্টাল, ঢাবি, রাবি, জাবি ও গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সম্পূর্ণ অরজিনাল প্রশ্ন নিতে চাইলে ইনবক্সে যোগাযোগ করো। টাকা আগে ছাড়া প্রশ্ন দেই নাই, আর দিবো না কোনোদিন। কোনো অযুহাতই লাভ হবে না। So যাদের এক্সাম খারাপ হবে নক দিয়েন ঠিক করে দিবো টাকা বেশি পরবে তবে ১০০% প্রশ্নের মতই হবে।”
কিন্তু পোস্টে কোনো ছবি যুক্ত ছিল না সেসময়।
সেদিনই (০৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রায় চার ঘণ্টা পর বিকাল ০৩ টা ০৩ মিনিটে এই পোস্টে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
অর্থাৎ, ০৯ ফেব্রুয়ারির মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে দাবি করে সেদিনের কোনো ছবি ছাড়া প্রকাশিত একটি পোস্টে পরীক্ষা শেষ হওয়ার চার ঘন্টা পর প্রশ্নের ছবি যুক্ত করা হয়েছে।
একই অ্যাকাউন্টে এমন আরেকটি প্রতারণামূলক পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)।
মূলত, গত ০১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের বিজ্ঞান ইউনিটের (ক) পরীক্ষা বেলা ১১ টা থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে একই দিন সকাল ৯ টায় ফেসবুকে প্রকাশিত এক পোস্টে “ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়। উক্ত পোস্টে প্রশ্নপত্রের একটি ছবিও যুক্ত রয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বিকাল ১২ টা ৫৬ মিনিটে পরীক্ষার পূর্বের পোস্টটি এডিট করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের ছবি যুক্ত করে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের এই ভর্তি পরীক্ষাটি শুরুর আগের দিন ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে টেলিগ্রামে প্রশ্নপত্র সরবরাহের প্রলোভন দেখাচ্ছিল একটি চক্র। এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s Own Analysis
- Account Analysis: Foysal Ahamed Joy