আরটিভির ফটোকার্ড বিকৃত করে অগ্নিকাণ্ডে নিহত তরুণীকে নিয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার 

- Advertisement -

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি, প্রিয় মানুষ এর আগুন এ পুড়ে মৃত্যু সহ্য করতে না পারায় যুবক এর আত্নহত্যা– শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি’র আদলে তৈরি একজন নারী ও একজন পুরুষের ছবিযুক্ত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

অগ্নিকাণ্ডে

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

দাবি করা হচ্ছে, রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত প্রেমিকার মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে এক যুবক আত্নহত্যা করেছেন।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রেমিকার মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে কোনো যুবক আত্মহত্যা করেননি এবং আরটিভিও উক্ত দাবিতে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং গত ০১ মার্চ আরটিভি’র ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ড পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়,উক্ত ফটোকার্ডটিতে আরটিভির লোগোর পাশাপাশি ফটোকার্ডটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ০১ মার্চ ২০২৪ উল্লেখ করা হয়েছে। 

Screenshot: Tiktok Claim Post

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডে থাকা গণমাধ্যমের লোগো এবং তারিখের সূত্র ধরে আরটিভি’র ফেসবুক পেজ (, )  এবং ওয়েবসাইটে গত ০১ মার্চ প্রকাশিত এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি। 

তবে, গত ০১ মার্চ আরটিভি’র ফেসবুক পেজে “শপিং শেষে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে ৩ বোনের মৃত্যু” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়। 

Screenshot: Rtv Facebook Page 

উক্ত ফটোকার্ডে থাকা নারীর ছবি, গ্রাফিক্যাল ডিজাইন ও তারিখের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডে থাকা নারীর ছবি, গ্রাফিক্যাল ডিজাইন ও তারিখের হুবহু মিল রয়েছে। তবে আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনাম ও ফন্টের সাথে আরটিভির ফটোকার্ডের শিরোনাম ও ফন্টের অমিল পরিলক্ষিত হয়।

Photo Card Comparison By Rumor Scanner 

উক্ত পোস্টের কমেন্ট বক্সে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।  

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুইবোন ফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও সাদিয়া আফরিন আলিশা। তাদের বাবা কোরবান আলী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রিয়ার মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট ছিল শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে। বিদেশ যাওয়ার আগের দিন রাতে বোনকে নিয়ে শপিং করতে যায় রিয়া। সেখানে শপিং শেষে রেস্টুরেন্টে গিয়ে আর ফেরেনি দুবোন। বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের বহুতল ভবনে লাগা আগুনে মৃত্যু হয় আমার মায়েদের।’

একই ঘটনায় মারা গেছেন তাদের খালাতো বোন নুসরাত জাহান নিমু। 

অর্থাৎ, আরটিভির এই ফটোকার্ড নকল করেই আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

মূলত, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হয়েছেন আপন দুইবোন ফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও সাদিয়া আফরিন আলিশা এবং একই ঘটনায় মারা গেছেন তাদের খালাতো বোন নুসরাত জাহান নিমু। এরই প্রেক্ষিতে “শপিং শেষে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে ৩ বোনের মৃত্যু” শীর্ষক শিরোনামে দুইবোনের ছবি যুক্ত করে আরটিভি তাদের ফেসবুক পেজে একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করে। পরবর্তীতে উক্ত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে “প্রিয় মানুষ এর আগুন এ পুড়ে মৃত্যু সহ্য করতে না পারায় যুবক এর আত্নহত্যা”- শীর্ষক শিরোনামে এক বোনের ছবির স্থলে অন্য একজন পুরুষের ছবি যুক্ত করে একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। 

সুতরাং, বেইলি রোডে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রেমিকার মৃত্যুতে যুবকের আত্নহত্যার দাবিটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে আরটিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ড এডিটেড বা বিকৃত। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img