পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওন। প্রায় ৭১,৭৪০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বেশ বৈচিত্র্যময়। ১৯৬১ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করা দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১৮টি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো সিয়েরা লিওনের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হলে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ দেশটির শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেয়। বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশ সিয়েরা লিওনে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেয়। ২০০২ সালে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজন কাব্বাহ গৃহযুদ্ধের ইতি টানেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের সূত্র ধরেই বাংলাদেশ ও সিয়েরা লিওনের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
২০০২ সালের পর থেকে প্রায় প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা ভাষা এবং সিয়েরা লিওনকে জড়িয়ে একটি তথ্য সামনে আসে। দাবি করা হয়ে থাকে, সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা বা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বা সরকারি ভাষা বা দাপ্তরিক ভাষা বাংলা। এই দাবি এতটাই জোরালো যে মূলধারার গণমাধ্যম, বিভিন্ন মাধ্যমের ওয়েবসাইট, স্কুলের পাঠ্যবই, এমনকি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএসের প্রশ্নপত্রেও এই দাবিটি প্রচার হয়ে আসতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত দাবিতে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন – একাত্তর টিভি (ইউটিউব), কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ঢাকা মেইল, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, সমকাল, বণিক বার্তা, বিএনএনিউজ২৪, আলোকিত বাংলাদেশ, বিডিমর্নিং, এবিনিউজ২৪, নিউজ২৪।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত কলাম দেখুন – ইনকিলাব, ঢাকা ট্রিবিউন, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, ভোরের কাগজ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ফিচার দেখুন – জুম বাংলা, রাইজিংবিডি, বিডিনিউজ২৪।
ওপার বাংলার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন – এই সময়, নিউজ১৮, ওয়ান ইন্ডিয়া, জি নিউজ, আনন্দবাজার, দ্য ওয়াল।
বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ফিচার কনটেন্ট প্ল্যাটফর্ম রোর বাংলা’য় একই দাবিতে ফিচার আর্টিকেল দেখুন এখানে।
বাংলাদেশের ইন্টারনেটভিত্তিক শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান টেন মিনিট স্কুলের ওয়েবসাইটে একই দাবিতে প্রকাশিত একটি ব্লগ দেখুন এখানে।
৪১ এবং ৪৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় এ বিষয়ে প্রশ্ন এসেছিল।
নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবইয়ের ‘জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ’ বিষয়ক নবম অধ্যয়ে (১৩৩তম পৃষ্টা) বাংলাকে সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলা সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় সরকারি, দাপ্তরিক বা রাষ্ট্রভাষা নয়; বরং দেশটির একমাত্র সরকারি ভাষা ইংরেজি। সিয়েরা লিওনে ক্রিও, লিম্বা, মেন্দে, এবং তেমনে সহ আরও কয়েকটি ভাষা প্রচলিত রয়েছে, যার মধ্যে ক্রিও সর্বজনীন ভাষা হিসেবে প্রচলিত।
আলোচিত দাবিটির ব্যাপকতা বিবেচনায় রিউমর স্ক্যানার টিম দীর্ঘদিন বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছে। বিশ্লেষণ করা হয়েছে দেশি বিদেশি অর্ধশতাধিক গবেষণা প্রতিবেদন। খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত দাবির সূত্র। আমরা বাংলাদেশ এবং সিয়েরা লিওনের সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। আমাদের অনুসন্ধানের শুরুটা ছিল দাবিটির মূল সূত্রপাত খোঁজার মধ্য দিয়ে।
আলোচিত দাবিটির সূত্রপাত কীভাবে?
এই দাবির সূত্র খুঁজতে গিয়ে ২০০২ সালের ২৭ ডিসেম্বর মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ভয়েস অফ আমেরিকা’র বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নজরে আসে আমাদের। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছিল, “সিয়েরা লিওনের সরকার দেশের অন্যান্য সরকারি ভাষাগুলোর সঙ্গে বাংলাকেও একটি সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছে। ডিসেম্বরের ১২ তারিখে দেশটির প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজান কাব্বাহ একটি ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পুনর্নির্মিত সড়কের উদ্বোধন করার সময় এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা করেন। এই সড়কটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার্স কোর জাতিসংঘের সহায়তায় পুনর্নির্মাণ করেছে।”
প্রায় একই তথ্য পাওয়া যায় ভারতের কলকাতা ভিত্তিক ইংরেজি পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনেও। ২০০২ সালের ২৯ ডিসেম্বর বার্তা সংস্থা এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেসের (এএফপি) বরাতে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের দেশটিতে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সিয়েরা লিওন বাংলাকে একটি সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছে। সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট আহমেদ তেজান কাব্বাহ পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের নির্মিত ৫৪-কিলোমিটার একটি দীর্ঘ রাস্তা উদ্বোধনের সময় এই ঘোষণা করেন।”
এএফপির বরাতে ২০০২ সালের ২৯ ডিসেম্বর একই তথ্য প্রকাশ করেছিল পাকিস্তানের ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ডেইলি টাইমস।
উপরিউক্ত তারিখের সূত্রে বাংলাদেশের পুরোনো পত্রিকার অনলাইন সংরক্ষণাগার সংগ্রামের নোটবুক ওয়েবসাইট থেকে ২০০২ সালে এ সংক্রান্ত দেশীয় পত্রিকার সংবাদগুলো খুঁজে বের করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সে বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশের চারটি পত্রিকা ইত্তেফাক, প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার এবং জনকণ্ঠে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, “সিয়েরা লিওন সরকার বাংলা ভাষাকে দেশটির অন্যান্য অফিসিয়াল ভাষার মত সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।”
পরের বছরের (২০০৩) ০৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র (বাসস) বরাতে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত সংবাদে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের একটি বক্তব্য পাওয়া যায়। তার বক্তব্যটি এসেছে এভাবে, “জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সৈন্যরা সিয়েরা লিওনের তিনটি প্রদেশকে যুক্ত করে এমন একটি নতুন সড়ক নির্মাণ করেছে। এছাড়াও, সিয়েরা লিওনের সদ্য নির্বাচিত সরকার বাংলা ভাষাকে দেশটির একটি সরকারি ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।”
তবে এই দাবিটির কিছুটা পরিবর্তিত রূপও দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। জিওগ্রাফি বিষয়ক শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসে সিয়েরা লিওনের ভাষা নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সিয়েরা লিওন বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্তটি দেশটির গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী ১৯৯১ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত (সিয়েরা লিওনে) চলমান গৃহযুদ্ধে জাতিসংঘ মিশনের অধীনে অন্যতম বৃহত্তম দল হিসেবে কাজ করেছে এবং বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সংঘাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তবে, সিয়েরা লিওনের বাসিন্দারা এই ভাষা ব্যবহার করে না যেহেতু, এটি বাংলা ভাষার জন্য কেবল একটি অনারারি বা সম্মানজনক মর্যাদা।
সমজাতীয় তথ্য এসেছে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসা এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত সংগঠন কমনওয়েলথ চেম্বার অফ কমার্সের ওয়েবসাইটের এক নিবন্ধেও। সিয়েরা লিওন সম্পর্কিত এই নিবন্ধে বলা হয়েছে, ২০০২ সালের গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রচেষ্টা ও অবদানের কারণে সে বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের ‘অনারারি অফিসিয়াল ল্যাংগুয়েজ’ বা সম্মানজনক সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
অনুসন্ধান চলাকালীন আমরা দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত সিয়েরা লিওনের দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত সিয়েরা লিওনের রাষ্ট্রদূতের দেওয়া একটি বক্তব্য খুঁজে পেয়েছি। বক্তব্যের শেষাংশে রাষ্ট্রদূত ক্যাথস জিবাও মাতাই বলছিলেন, সিয়েরা লিওনের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আহমেদ তেজান কাব্বা ২০০২ সালে বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের একটি সম্মানসূচক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
অর্থাৎ, ২০০২ সালে সিয়েরা লিওনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে, দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ তেজান কাব্বাহ বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণা করেন। এই ঘোষণাটি নিয়ে বিভিন্ন সূত্রের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিছু সূত্র অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অপরদিকে কিছু সূত্র দাবি করে, বাংলাকে সিয়েরা লিওনের অনারারি ল্যাংগুয়েজ অর্থাৎ সম্মানজনক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
সিয়েরা লিওনের ভাষা নিয়ে যা জানা যাচ্ছে
সিয়েরা লিওনের পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে দেশটির ভাষাগত বৈচিত্র্য নিয়ে আলোচনায় বিভিন্ন সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, সিয়েরা লিওনে ১৬ থেকে ২০ জাতিগোষ্ঠী বাস করে, যাদের মধ্যে ‘তেমনে’ এবং ‘মেন্দে’ জাতিগোষ্ঠী সবচেয়ে বড় এবং মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশই এই দুই জাতিগোষ্ঠীর দখলে। দেশটির প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী নিজেদের ভাষায় কথা বলে। এর মধ্যে মেন্দে, তেমনে, এবং ক্রিও ভাষা বেশি প্রচলিত। ইংরেজি ভাষা স্কুল ও সরকারি কাজকর্মের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সিয়েরা লিওনের শিশুরা সাধারণত তাদের মাতাপিতার জাতিগোষ্ঠীর ভাষা, প্রতিবেশীর ভাষা, ক্রিও, এবং ইংরেজি – এই চারটি ভিন্ন ভাষা শিখে বড় হয়।
মার্কিন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্বের প্রায় সব দেশ এবং অঞ্চলের ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, জনসংখ্যাগত এবং সামাজিক তথ্য ওপর প্রকাশিত বার্ষিক প্রকাশনা ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক’–এ সিয়েরা লিওন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। বইটির সিয়েরা লিওন সংক্রান্ত আলোচনায় দেশটির ভাষা সম্পর্কে জানা যায়, দেশটির সরকারি ভাষা ইংরেজি। তবে সরকারি ভাষা হলেও এর নিয়মিত ব্যবহার শিক্ষিত সংখ্যালঘুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। মেন্দে দক্ষিণাঞ্চলে এবং তেমনে উত্তরাঞ্চলে প্রধান কথ্য ভাষা। ক্রিও দেশটির লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা বা যোগাযোগের সাধারণ ভাষা। ক্রিও ভাষা দেশটির মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের প্রধান ভাষা হলেও ৯৫ শতাংশ মানুষ এটি বুঝতে পারে।
বিশ্বস্ত ইংরেজি জ্ঞানকোষ ব্রিটানিকা থেকে সিয়েরা লিওনের ভাষা সম্পর্কে জানা যায়, ইংরেজি এবং বিভিন্ন আফ্রিকান ভাষা থেকে উৎপন্ন একটি ভাষা ক্রিও, এটি সিয়েরা লিওনের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা বা সর্বজনীন ভাষা। নাইজার-কঙ্গো ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে মান্দে ভাষাগুলো বৃহত্তম, যার অন্তর্গত হলো মেন্দে, কুরানকো, কোনো ইত্যাদি। মেল গোষ্ঠীর মধ্যে তেমনে, কিসি, লিম্বা ইত্যাদি ভাষা আছে। ইংরেজি দেশটির সরকারি ভাষা হিসেবে প্রশাসন, শিক্ষা এবং বাণিজ্যে ব্যবহার হয়। লেবানিজ ব্যবসায়ী এবং ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে আরবি ভাষা ব্যবহৃত হয়। মেন্দে এবং তেমনে ভাষায় স্কুলের পাঠ্যপুস্তক, তথ্য বুলেটিন এবং লোককথার সংগ্রহ প্রকাশিত হয়।
সিয়েরা লিওনের ভাষা রাজনীতি নিয়ে ২০২০ সালে আফ্রিকান জার্নাল অফ পলিটিক্যাল সায়েন্স এবং ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসে প্রকাশিত হয় এমারসন কলেজের রাজনৈতিক বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ম্নিশা গেলম্যানের একটি গবেষণাপত্র। জনাব গেলম্যান তার গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, ব্রিটেন থেকে ১৯৬১ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর থেকে, ক্রিও নামক এক ধরনের ক্রেওল ভাষা (দুই বা ততোধিক ভাষার মিশ্রণ থেকে উদ্ভূত পূর্ণাঙ্গ ভাষা) ক্ষুদ্র একটি জাতিগত সংখ্যালঘুর মাতৃভাষা থেকে সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউনে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা বা সর্বজনীন যোগাযোগের মাধ্যমে পরিণত হয়। ঔপনিবেশিক যুগ থেকে ইংরেজি ভাষা সিয়েরা লিওনের অভিজাত শ্রেণির মধ্যে প্রচলিত এবং সরকারি কাজকর্মের একমাত্র অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে চালু রয়েছে। পাশাপাশি, সিয়েরা লিওনের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও পরিস্থিতিতে অন্যান্য বহু ভাষা চর্চা করা হয়।
সিয়েরা লিওনের জাতীয় ভাষা নিয়ে গবেষক জোকো সেঙ্গোভার লেখা ‘The national languages of Sierra Leone: a decade of policy experimentation’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র খুঁজে পাওয়া যায়। গবেষণা নিবন্ধটি ১৯৮৭ সালে আফ্রিকা জার্নালের ৫৭তম ভলিউমের ৪ নম্বর ইস্যুতে প্রকাশিত হয়েছিল। এই গবেষণা নিবন্ধটি ২০১১ সালে ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান ইনস্টিটিউটের সৌজন্যে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশ করেছে। এই গবেষণা নিবন্ধ থেকে জানা যায়, সিয়েরা লিওন একটি বহুভাষিক দেশের উত্তম উদাহরণ। সিয়েরা লিওনে প্রায় ১৬টি ভাষা প্রচলিত আছে। দেশটিতে ক্রিও, লিম্বা, মেন্দে এবং তেমনে – এই চারটি ভাষা বিশেষ গুরুত্ব পায়, গণমাধ্যমে ব্যাপক এই ভাষা ব্যবহৃত হয়। তবে শিক্ষা ও সাক্ষরতার ক্ষেত্রে এই ভাষাগুলো সীমিত পরিসরে ব্যবহৃত হয়। ইংরেজি সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে পরিচিত। ভাষাটি শিক্ষা, সরকারি ও প্রশাসনিক কাজ, বিচার ব্যবস্থা, গণমাধ্যম, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এটি অফিসিয়াল কাজকর্মের ভাষা হিসেবে স্বীকৃত।
ইংরেজি সিয়েরা লিওনের জাতীয় ভাষা হিসেবে কাজ করতে পারবে কিনা ২০১৯ সালে প্রকাশিত এমন একটি গবেষণা প্রকাশনায় সিয়েরা লিওন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপক মোমোডু তুরে লিখেছেন, দেশটির জাতীয় রেডিও এবং টেলিভিশন সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান, সিয়েরা লিওন ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (এসএলবিএস) সার্বজনীন ঘোষণাগুলো প্রথমে ইংরেজি ভাষায় এবং পরবর্তীতে মেন্দে, তেমনে, লিম্বা, এবং ক্রিও- এই চার ভাষায় করা হয়।
ভাষা নিয়ে কাজ করার অলাভজনক সংস্থা ট্রান্সলেটরস উইথাউট বর্ডার্স (Translators without Borders) এর ওয়েবসাইটে সিয়েরা লিওনের ভাষা সম্পর্কে একটি নিবন্ধ পাওয়া যায়। ২০০৪ সালের জনশুমারি অনুসারে তৈরি নিবন্ধটি থেকে জানা যায়, দেশটিতে ১৮টি প্রধান ভাষা রয়েছে। এদের মধ্যে ক্রিও প্রধান ভাষা। প্রায় ৯৭% জনগণ ক্রিও বুঝতে ও বলতে পারে। মেন্দে ও তেমনে হচ্ছে অন্য দুই প্রধান ভাষা। তবে ইংরেজি দেশটির সরকারি ভাষা হিসেবে শিক্ষা, সরকারি প্রশাসন এবং গণমাধ্যমে ব্যবহৃত হয়।
উল্লিখিত সূত্রগুলো থেকে পরিষ্কার যে, সিয়েরা লিওন একটি বহুভাষী দেশ। দেশটির একমাত্র আনুষ্ঠানিক বা সরকারি ভাষা ইংরেজি, কিন্তু ইংরেজির নিয়মিত ব্যবহার মূলত শিক্ষিত অল্পসংখ্যকের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই দেশের ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্রিও, ইংরেজি, মেন্দে, তেমনে প্রভৃতি ভাষার ব্যাপক চর্চা লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে, সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষার ব্যবহার বা প্রচলন সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য উল্লিখিত সূত্রগুলোতে পাওয়া যায়নি।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে যা জানা যাচ্ছে
সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি বা সমজাতীয় দাবিগুলোর বিষয়ে জানতে গেল বছরের (২০২৩) মার্চে পশ্চিম আফ্রিকা ভিত্তিক ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান দুবাওয়ার সাথে যোগাযোগ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
প্রতিষ্ঠানটির ফ্যাক্ট-চেকার ফাইয়া জুনিয়র মোসের রিউমর স্ক্যানারকে বলছিলেন, সিয়েরা লিওনে ইংরেজি হচ্ছে একমাত্র সরকারি ভাষা। যদিও দেশটিতে বিভিন্ন ভাষার প্রচলন রয়েছে, তবে সেগুলো সরকারি মর্যাদা পায়নি। বাংলা ভাষা এবং সিয়েরা লিওন সম্পর্কে বাংলাদেশে প্রচলিত দাবিগুলো শুনে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন, কারণ সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষার কোনো প্রচলন তিনি দেখেননি।
ফাইয়া জুনিয়র মোসেরের সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে সিয়েরা লিওনে ভাষা নিয়ে কাজ করে এমন কোনো সংগঠন আছে কিনা জানতে চাই আমরা। মোসেরে আমাদের জানান, ফ্রিটাউনে ভাষা নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থা হল দ্য ইনস্টিটিউট ফর সিয়েরা লিওনিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস (টিআইএসএলএল)। এই সংস্থাটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর লামিন হেনরি কার্গবোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে লামিন হেনরি কার্গবো বলেন, বাংলা ভাষা কখনোই সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহার বা ঘোষণা করা হয়নি। দেশটির প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজন কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কার্গবো বলেন, আমি যতদূর জানি প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট শুধু মাত্র উল্লেখ করেছিলেন যে বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের ভাষার মধ্যে বিবেচনা কিংবা অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তবে সেটা সরকারি ভাষা হিসেবে নয়।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের অবদান ও সহায়তার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট এমন মন্তব্য করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলা ভাষা কখনো সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষিত হয়নি। যদিও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট কাব্বা যুদ্ধের পর তার অনেক বক্তব্যে বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের ভাষার তালিকায় বিবেচনা কিংবা অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছিলেন। তবে সিয়েরা লিওনের নাগরিকরা বাংলাকে একটি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, না সিয়েরা লিওনের কোনো অংশে বাংলা ভাষা বলা হয়েছে।
কার্গবো আরও স্পষ্ট করে বলেন, সিয়েরা লিওনে শুধু ইংরেজি ভাষাই আনুষ্ঠানিক ভাষা হিসেবে প্রচলিত এবং বাকি ভাষাগুলো ঘর, মসজিদ, গির্জা, গ্রাম ইত্যাদি জায়গায় অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
একই বিষয়ে দুবাওয়া সিয়েরা লিওনে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসা সিয়া টেংবের সাথে যোগাযোগ করেছে। সিয়া টেংবে বলেন, তার পুরো শিক্ষকতা জীবনে তিনি কখনো শুনেননি যে সিয়েরা লিওনের কোনো রাষ্ট্রপতি বা সরকারি কর্তৃপক্ষ দেশের সরকারি ভাষা পরিবর্তন করার কোনো ঘোষণা করেছে। তার মতে, সিয়েরা লিওনে ইংরেজি সবসময়ই সরকারি ভাষা হিসেবে বহাল থেকেছে।
এই বিষয়ে পরবর্তীতে গত বছরের মার্চ মাসেই একটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদনও প্রকাশ করে দুবাওয়া। প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়, বাংলা কখনও সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়নি
অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা মো. আকবর হোসেন নামের একজন বাংলাদেশি মনোবিজ্ঞানীর সন্ধান পাই। পেশাগত কারণে সিয়েরা লিওনে এক বছর অবস্থান করেছিলেন তিনি। ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ ‘নিউজজি২৪’ নামের একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত তার লেখা একটি প্রতিবেদনে, তিনি সিয়েরা লিওনে বসবাসের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলা সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার যে দাবি দীর্ঘদিন যাবৎ প্রচার হয়ে আসছে, তা মিথ্যা। এ ধরনের অসত্য তথ্য পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
আকবর হোসেনের সাথেও যোগাযোগ করেছিলাম আমরা। তিনি আমাদের ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর তার ইউটিউব চ্যানেল ‘Sound of Silence’ এ প্রকাশিত একটি ভিডিও শেয়ার করেন। এই ভিডিওটিতে আকবর হোসেন সিয়েরা লিওনের বিভিন্ন পেশার মানুষের সাক্ষাৎকার নেন। সাক্ষাৎকারে তিনি সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের অবদান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে বাংলাদেশ এবং এর শান্তিরক্ষীদের প্রতি স্থানীয়দের ভূয়সী প্রশংসা লক্ষ্য করা যায়। তিনি সিয়েরা লিওনের ভাষা সম্পর্কেও প্রশ্ন করেন, তখন প্রায় সবাই জানায় সিয়েরা লিওনের প্রধান দুইটি ভাষা হল ইংরেজি ও ক্রিও। বাংলা ভাষা সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ অবগত নন বলে জানায়।
মূলত, ২০০২ সালে সিয়েরা লিওনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে, দেশটির তৎকালীন সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদ তেজান কাব্বাহ বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন সূত্রের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিছু সূত্র অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অপর কিছু সূত্র অনুযায়ী, বাংলাকে দেশটির সম্মানজনক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, সিয়েরা লিওনের একমাত্র সরকারি ভাষা ইংরেজি। কিন্তু ইংরেজির নিয়মিত ব্যবহার সল্পসংখ্যক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। দেশটির ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্রিও, মেন্দে, তেমনে প্রভৃতি ভাষার ব্যাপক চর্চা লক্ষ্য করা যায়। দেশটিতে অন্তত ১৮টি ভাষা প্রচলিত রয়েছে। তবে এদের মধ্যে ক্রিও দেশটির সর্বজনীন ভাষা। অন্তত ৯৫ শতাংশ মানুষ এটি বুঝতে পারে। রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেশটিতে বাংলা ভাষার প্রচলন দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে দেশটিতে ভাষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা দ্য ইনস্টিটিউট ফর সিয়েরা লিওনিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস (টিআইএসএলএল) এর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর লামিন হেনরি কার্গবো বলেছেন, বাংলা ভাষা কখনো সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজন কাব্বাহ কেবল বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের ভাষার তালিকায় বিবেচনা কিংবা অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ করেছিলেন, সরকারি ভাষা হিসেবে নয়। এর পেছনের কারণ হিসেবে সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের অবদান ও সহায়তার স্বীকৃতি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, বাংলা ভাষা সিয়েরা লিওনের জনগণ বা সরকারের দ্বারা কখনো সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। সিয়েরা লিওনে ইংরেজি ভাষাই একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে প্রচলিত এবং বাকি ভাষাগুলো অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সুতরাং, সিয়েরা লিওনের একাধিক সূত্র অনুযায়ী এটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, দেশটির প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজন কাব্বাহ ২০০২ সালে সম্মানজনক মর্যাদা প্রদানে বাংলাকে দেশটির ভাষার তালিকায় বিবেচনা কিংবা অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তবে সিয়েরা লিওনে বাংলা দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে কখনোই প্রচলিত ছিলনা।
অর্থাৎ, বাংলা সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় সরকারি, দাপ্তরিক বা রাষ্ট্রভাষা দাবিতে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রচার হয়ে আসা তথ্যটি সঠিক নয়।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s own investigation
- Old News Archives from Songramer Notebook.
- Sierra Leone Ministry of Tourism and Cultural Affairs – History of Sierra Leone
- The Commonwealth Chamber of Commerce – Sierra Leone
- Embassy of the Republic of Sierra Leone in the Republic of Korea – SIERRA LEONE’S AMBASSADOR TO SEOUL SPEAKS AT INTERNATIONAL MOTHER-LANGUAGE DAY CONFERENCE
- The World Factbook by CIA – Sierra Leone
- Britannica – Sierra Leone
- African Journal of Political Science and International Relations – “Mother Tongue Won’t Help You Eat:” Language Politics in Sierra Leone.”
- Journal of the International African Institute – The National Languages of Sierra Leone: A Decade of Policy Experimentation
- Research Journal of English Language and Literature(RJELAL) – CAN ENGLISH SERVE AS THE NATIONAL LANGUAGE OF SIERRA LEONE?
- Statement from Fayia Junior Moseray, Sierra Leone Fact-Checker, Dubawa