সম্প্রতি, আল-জাজিরার বরাত দিয়ে ‘প্রতিবছর ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করে’ দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারে অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতি বছর ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করছে দাবিতে আল-জাজিরা কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বরং লিবিয়ার শরীয়াহ্ আইন বিষয়ক সভাপতি আহমেদ আল কাতানি আল-জাজিরাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে কোনোরকম তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত বিষয়টি উল্লেখ করেন। সম্প্রতি তার ঐ মন্তব্যকে আল-জাজিরার প্রতিবেদন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই, কাতার ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আল-জাজিরার ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু, আল-জাজিরার ওয়েবসাইটে(হাইপারলিংক) অনুসন্ধান চালিয়ে উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উপরন্তু, আল-জাজিরার ওয়েবসাইটে ২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রকাশিতএকটি সাক্ষাৎকারের ওয়েব আর্কাইভ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত আর্কাইভ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাক্ষাৎকারটি আহমেদ আল কাতানি নামের জনৈক ইসলামিক স্কলারের। যিনি লিবিয়ার শরীয়াহ্ আইন বিষয়ক সভাপতি ছিলেন। ইংরেজিতে অনূদিত সেই সাক্ষাৎকার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে আলোচক আহমেদ আল কাতানি অফ্রিকার ক্রিশ্চিয়ানাইজেশনের বিষয়ে বলেন, “প্রতি ঘন্টায় ৬৬৭ জন মুসলমান খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে। প্রতিদিনের হিসেবে এই সংখ্যাটা ১৬০০০ আর প্রতি বছরের হিসেবে সেটা ৬ মিলিয়ন!”
কিন্তু, আহমেদ আল কাতানি তার উক্ত দাবির স্বপক্ষে কোনরকম তথ্যসূত্র উল্লেখ্য করেননি। এছাড়াও, আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে উক্ত ওয়েবপেজটি আলজাজিরার নিজস্ব কোনো প্রতিবেদন নয়; একটি সাক্ষাৎকার মাত্র। অর্থাৎ, আলজাজিরা উক্ত দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে যে দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে সেটি সঠিক নয়।
পরবর্তীতে, প্রতিবছর ঠিক কত সংখ্যক মানুষ ইসলাম ত্যাগ করেন সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু, আফ্রিকা অঞ্চলের ঠিক কতসংখ্যক মানুষ প্রতিবছর ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে এ বিষয়ক কোনো গবেষণা প্রতিবেদন, সমীক্ষার ফলাফল কিংবা নির্ভরযোগ্য তথ্য ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, পিউ রিসার্চ সেন্টারের ওয়েবসাইটে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ধর্মীয় বিশ্বাস পরিবর্তন বিষয় একটি তথ্যচিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা চিত্র অনুসারে বর্তমান পৃথিবীতে খ্রিস্টান ধর্মের তুলনায় ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০৬০ সাল নাগাদ মুসলিমদের সংখ্যা খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদের ছাড়িয়ে যাবে।
পাশাপাশি, ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট পলিটিফ্যাক্ট পিউ রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র ডেমোগ্রফার ও সহযোগী পরিচালক Conrad Hackett এর বরাত দিয়ে জানায়, ঠিক কত সংখ্যক লোক আফ্রিকা অঞ্চলে মুসলিম থেকে খ্রিস্টান হচ্ছে এ বিষয়ক কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
অর্থাৎ, ঠিক কতসংখ্যক মানুষ প্রতিবছর ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হন সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট সমীক্ষা কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। এছাড়াও, আলজাজিরার যে সাক্ষাৎকার থেকে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে সেটি আলজাজিরার কোনো প্রতিবেদন নয়; সেটি একটি সাক্ষাৎকার মাত্র। উপরন্তু, উক্ত দাবির সমর্থনে আলোচক কোনো সূত্রের উল্লেখ করেননি। এছাড়াও, যে সাক্ষাৎকার থেকে আলোচ্য দাবিটি ছড়িয়েছে সেটি প্রায় ২৩ বছর পুরোনো। অর্থাৎ, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে উক্ত পরিসংখ্যানটি অপ্রাসঙ্গিক।
মূলত, কাতারভিত্তিক রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার ২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর গৃহীত একটি সাক্ষাৎকারে লিবিয়ার শরীয়াহ্ আইন বিষয়ক সভাপতি আহমেদ আল কাতানি কোনরকম তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবি করেন যে আফ্রিকা অঞ্চলে প্রতিবছর ৬ মিলিয়ন মুসলিম ইসলাম ত্যাগ করছে। পরবর্তীতে, তার সাক্ষাৎকারের এই অংশকে আলজাজিরার প্রতিবেদন দাবি করে ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আলজাজিরা উক্ত দাবিতেকোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। উপরন্তু, কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র উক্ত দাবিকে সমর্থন করে না।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও ধর্মীয় বিষয়ে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে উদ্ধৃত করে আফ্রিকা অঞ্চলে প্রতিবছর ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Aljazeera: Web Archive
- Pew research center: THE CHANGING GLOBAL RELIGIOUS LANDSCAPE
- Politifact: “Muslims by the millions are converting to Christianity.”
- Rumor Scanner Own Analysis