সম্প্রতি, “আজকে বাসে কে আগুন দিয়েছে শুনুন তার মুখে। অতিত থেকে শুরু করে আজ অবধি বাংলাদেশে যতগুলো বাস পুড়িয়ে পেলা হয়েছে তার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দায়ী।” শীর্ষক শিরোনামে ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম গুলোতে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

টুইটারে প্রচারিত এমন কিছু টুইট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘বাসে কে আগুন দিয়েছে শুনুন তার মুখে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০১৯ সালে ঢাকায় বাস চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) এর এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে মিশে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে এক যুবককে হাতেনাতে আটক করার ভিডিও।।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘D 24 tv’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ২০ মার্চ তারিখে “ছাত্র সেজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে মিসে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার সময় হাতে নাতে ধরা খেল এই ছাত্রলীগ কর্মী” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

‘D 24 tv’ নামের উক্ত পেজের ভিডিও থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘BBC News’ এর বাংলা সেকশনে একই বছরের অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ তারিখে “ঢাকায় আবার সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মৃত্যু, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ সকালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র আবরার আহমেদ রাস্তা পার হতে গিয়ে দুই বাসের মধ্যে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হয়। এ ঘটনার পরপরই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মূল প্রবেশপথের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে।
এছাড়া অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৯ জুলাই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীতে বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগকে দায়ী করে কোনো যুবকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সম্পর্কিত কোনো প্রতিবেদন মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি।
তবে রাজধানীতে গতকালের বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে নিয়ে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ‘মোটরসাইকেলে ৩ যুবক এসে বাসে আগুন দিয়ে চলে যান‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে উল্লেখিত বাস চালকের ভাষ্য অনুযায়ী, তিন যুবক মোটরসাইকেলে করে এসেছিল। তাঁদের কাছে একটি বোতলে পেট্রল ও দেশলাই ছিল। তাঁদের হুমকির পর তিনি (বাসচালক) লাফ দিয়ে নেমে যান। তিনি লাফ দিয়ে বাস থেকে নামার পর ওই যুবকেরা বোতল থেকে বাসের ভেতরে পেট্রল ঢালেন এবং দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেন। এরপর তাঁরা মোটরসাইকেলে করে উল্টো পথ দিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে চলে যান। পরে আশপাশের লোকজন বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তবে এই প্রতিবেদনে ঐ তিন যুবকের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য উল্লেখ নেই।
এছাড়া একই বিষয়ে মূলধারার বাকি সংবাদমাধ্যম গুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও তিন যুবকের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি।
এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন; সমকাল, মানবজমিন, বিডিনিউজ২৪, আরটিভি।
অর্থাৎ, গত ২৯ জুলাই বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির সময়ে ‘বাসে কে আগুন দিয়েছে শুনুন তার মুখে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
মূলত, গত ২৯ জুলাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকার সব প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে ৭-৮ টি বাসে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। উক্ত ঘটনায় বাসে অগ্নিসংযোগের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে এক যুবকের একটি স্বীকারোক্তি মূলক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি প্রায় ৪ বছর পূর্বে অর্থাৎ ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় বাস চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে মিশে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে এক যুবককে হাতেনাতে আটক করার ঘটনার।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১২ নভেম্বরে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোট ৯টি বাসে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সে সময়ে একই ভিডিওটি (২০১৯ সালে ভাইরাল) ১২ নভেম্বরে রাজধানীতে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় একজনকে আটকসহ ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে প্রচার করা হয়েছিলো। তখন বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ৪ বছর পূর্বে ভিন্ন ঘটনায় ধারণকৃত একটি ভিডিওকে সম্প্রতি ঢাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় যুবকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দাবিতে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- D 24 tv Facebook Post: “ছাত্র সেজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে মিসে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার সময় হাতে নাতে ধরা খেল এই ছাত্রলীগ কর্মী
- BBC News: ঢাকায় আবার সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মৃত্যু, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
- Rumor Scanner’s Previous fact-check: বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুরাতন ভিডিও ভাইরাল
- Prothomalo: ‘মোটরসাইকেলে ৩ যুবক এসে বাসে আগুন দিয়ে চলে যান‘
- Samakal: ‘৩ যুবক মোটরসাইকেলে এসে বাসে আগুন দেয় : বাসচালক‘
- Manabzamin: ‘বাসে আগুন দিল কারা?’
- Bdnews24: ‘পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি এবার গড়াল সংঘাতে‘
- Rtv: ‘মোটরসাইকেলে এসে ৩ যুবক বাসে আগুন দেয়: বাসচালক‘