প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও দাবিতে চটকদার থাম্বনেইলে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার

সম্প্রতি ‘ইফতারি শেষেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এবং ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

Screenshot: Facebook

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে। 

Screenshot: Youtube 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করা হয়নি বরং ঘটনাটি ইজরাইলের এবং ভিডিও’র ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

গত ২৭ মার্চ News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজে এবং Faridpur TV নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘ইফতার শেষে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও’ শীর্ষক ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে  আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও।  ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ৬ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের সময় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওয়ের বিষয়ে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৬ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে শুরু হয়ে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে। সেখানে বলা হয়, চলমান আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢাললো ইসরায়েলি সরকার। ‘বিচার বিভাগীয় সংস্কার’ প্রস্তাব বাতিল তো দূরের ব্যাপার, ইস্যুটি নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলায় প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে। স্পষ্ট ইঙ্গিত তার, প্রশাসনের বিরোধিতা করলে, যেকেউ পাবে মোক্ষম জবাব। ক্ষুব্ধ ইহুদিদের অভিযোগ, দেশকে স্বৈরশাসনের দিকে নিচ্ছে কট্টর ডানপন্থী প্রশাসন। এ অবস্থা চলতে থাকলে, সরকারের পতন অনিবার্য।

ভিডিওটির কমেন্টবক্স যাচাই করে দেখা যায় সেখানে ফেসবুক ইউজাররা বিষয়টিকে বাংলাদেশের মনে করেছেন। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘোরাওয়ের বিষয়টি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনে করে সেখানে নেটিজেনদের আপত্তিকর কমেন্ট করতে দেখা যায়।

Screenshot: Facebook

উক্ত ভিডিওটির সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে গত ২৭ মার্চ অর্থাৎ ওই ভিডিও প্রকাশের দিনেই মূল ধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির অনলাইন সংস্করণে ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্তের জেরে উত্তাল ইসরায়েল; প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Jamuna TV Online

প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সের বরাতে জানানো হয়, চলমান আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢাললো ইসরায়েলি সরকার। ‘বিচার বিভাগীয় সংস্কার’ প্রস্তাব বাতিল তো দূরের ব্যাপার, ইস্যুটি নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলায় প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে। স্পষ্ট ইঙ্গিত তার, প্রশাসনের বিরোধিতা করলে, যেকেউ পাবে মোক্ষম জবাব। ক্ষুব্ধ ইহুদিদের অভিযোগ, দেশকে স্বৈরশাসনের দিকে নিচ্ছে কট্টর ডানপন্থী প্রশাসন। এ অবস্থা চলতে থাকলে, সরকারের পতন অনিবার্য।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে যমুনা টিভির প্রতিবেদনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হুবহু দাবিকৃত ভিডিওতে পাঠ করা হয়। এছাড়া প্রচারিত ভিডিও’র প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও অংশে ব্যবহৃত ছবিটিও যমুনা টিভির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে।

Collage: Rumor Scanner

পাশাপাশি, দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো সূত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও নিয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করা হয়নি বরং বাসভবন ঘেরাওয়ের ঘটনাটি ইজরায়েলের। 

মূলত, প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্তের জেরে উত্তাল ইসরায়েলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করা হয়। তবে প্রচারিত নিউজ বুলেটিন ভিডিওতে দেশটির নাম উল্লেখ না করে ‘ইফতারি শেষেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও’ শীর্ষক ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করায় বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

উল্লেখ্য, ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। উক্ত ঘটনায় পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

সুতরাং, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওয়ের সংবাদের ভিডিও’র ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে শুধুমাত্র ‘ইফতারির পর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও’ লিখে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img