প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাদিয়ানীদের কাফের বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেননি

সম্প্রতি, পঞ্চগড়ের আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী সালানা জলসাকে ঘিরে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে কাদিয়ানীদেরকে নিষিদ্ধ বা কাফের ঘোষণা করলো প্রধানমন্ত্রী শীর্ষক তথ্য সম্বলিত থাম্বনেইল ব্যবহার করে কিছু ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।

Screenshot: Youtube 

ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানেএখানে
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানেএখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কাদিয়ানীদেরকে নিষিদ্ধ বা কাফের ঘোষণা করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওগুলোর বিস্তারিত অংশে এমন কোনো তথ্য নেই বরং শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

Screenshot: Youtube 

দাবিগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওগুলো মূলত বিভিন্ন সময়ে কাদিয়ানীদের নিষিদ্ধ করার দাবিতে ইসলামী বক্তাদের একাধিক ভিডিওয়ের ফুটেজ যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে। 

পাশাপাশি ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষণ করে, ভিডিওগুলোর কোথাও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কাদিয়ানীকে কাফের বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, উক্ত তথ্যগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে মূলধারার জাতীয় গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করেও কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, ভিডিওর ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে প্রদান করা তথ্যগুলোর মধ্যে কোনো মিল নেই।

Screenshot: Youtube 

বরং এমন থাম্বনেইল ব্যবহার করা ভিডিওগুলোর মধ্যে ‘পঞ্চগড়ে কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হলো আরিফ‘ শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিওতে দৃশ্যমান ব্যানার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভিডিওয়ের এই অংশটি হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত একটি সমাবেশের। অর্থাৎ ভিন্ন ঘটনার অপ্রাসঙ্গিক একটি ভিডিওকে কাদিয়ানীদের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

Screenshot: Youtube 

মূলত, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কাদিয়ানীদেরকে নিষিদ্ধ বা কাফের ঘোষণা করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত ইউটিউব ভিডিওগুলো বিভিন্ন সময়ে ইসলামী বক্তাদের দেওয়া একাধিক ওয়াজের খণ্ডিত অংশ যুক্ত করে তৈরী করা। 

Screenshot: Youtube 

এসব ভিডিওগুলোতে কাদিয়ানীদের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণার কোনো তথ্য না থাকলেও ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে উক্ত দাবিতে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, পঞ্চগড়ের আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী উক্ত সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে  ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখা, সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি, ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি, পঞ্চগড় কওমি ওলামা পরিষদ ও জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের নেতা-কর্মীরা জেলা প্রশাসকের কাছে গত বৃহস্পতিবার স্মারকলিপি দেয়। এরপর গত শুক্রবার ইসলামী আন্দোলনসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় মিছিলে বাধা দেওয়ায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত আরিফুর রহমান নামে একজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। এছাড়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভের সময় বিক্ষোভকারীরা জাহিদ হাসান নামে একজন কাদিয়ানিকে পিটিয়ে মেরেছেন বলে অভিযোগ করেছেন পঞ্চগড় জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম সিরাজুল হুদা। 

সুতরাং, ইউটিউবে চটকদার শিরোনাম-থাম্বনেইল ব্যবহার করে কাদিয়ানীদের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নিষিদ্ধ বা কাফের ঘোষণা করা হয়েছে দাবি করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img