গত অক্টোবর মাসে দেশে জাতীয়, আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও খেলাধুলাসহ নানা ইস্যুতে হরেকরকম তথ্যে সরগরম ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এ মাসে বহিঃবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল নোবেল পুরস্কার। এছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির মহাসমাবেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ছিল ক্রিকেট সম্পর্কিত নানা তথ্য। আর এসব আলোচিত বিষয়সহ আরো বেশ কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সয়লাব ছিল ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্যে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অক্টোবর মাসজুড়ে প্রচারিত ১৩০ টি তথ্যকে ভুল ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে থেকে বাছাইকৃত শীর্ষ ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলো নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের এবারের আয়োজন।
গেল অক্টোবরে রিউমর স্ক্যানারে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলো নিম্নরূপঃ-
সেপ্টেম্বরের মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ফেসবুকজুড়ে আলোচিত দাবি ছিল ‘সাবেক শিবির নেতা ড. মির্জা গালিব যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেয়েছেন এবং তিনি ঢাবিতে অনার্সে তিনি রেকর্ড মার্ক পেয়েছিলেন, যা এখনো কেউ পায়নি।’
উক্ত বিষয়ে সপ্তাহেজুড়ে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত পহেলা অক্টোবর বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. মির্জা গালিব হার্ভার্ডে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পাননি বরং তিনি হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়া, ‘অনার্সে তিনি রেকর্ড মার্ক পেয়েছিলেন, যা এখনো কেউ পায়নি’ এরুপ দাবিটিও মিথ্যা।
নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অক্টোবরে প্রথম সপ্তাহে ফেসবুকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল নোবেল পুরস্কার সংক্রান্ত নানা তথ্য। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত এক তথ্যকে সূত্র ধরে বাংলাদেশী চিকিৎসক ডা. রায়ান সাদী এ বছরের(২০২২) নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন শীর্ষক দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করে বাংলাদেশের বেশকয়েকটি মূলধারার সংবাদমাধ্যম।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) সাবেক শিক্ষার্থী এবং যুক্তরাষ্ট্রের টেভোজেন বায়োর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. রায়ান সাদীর এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বরং গত পহেলা অক্টোবর থেকে টেভোজনের ওয়েবসাইটে বরাতে শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর বরাতে মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে “ডা. রায়ান সাদী এ বছরে নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে” এরূপ দাবি প্রচার করা হলেও পরবর্তীতে ২ অক্টোবর তারিখে টেভোজেন বায়োর ওয়েবসাইটে ও ৩ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ফেসবুক আইডিতে তা পরিবর্তন করে “তিনি আগামী বছরের(২০২৩) নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন” বলে জানানো হয়। তাছাড়া একই ইস্যুতে অপর এক অনুসন্ধানে জানা যায় ডা. রায়ান সাদী এককভাবে নয় বরং বরং তাঁর প্রতিষ্ঠান টেভোজেনও যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্টিস পেট্টন কর্তৃক মনোনীত হয়েছেন।
এছাড়া নোবেল পুরস্কার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে একটি ছবিসহ ফেসবুকে আরেকটি আলোচিত দাবি ছিল সুইডিশ বিজ্ঞানী সাভান্তে পাবোকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল জয়ী ঘোষণার পর উদযাপনের অংশ হিসেবে সাভান্তে পাবোকে তার ছাত্ররা পানিতে ফেলে অভিনন্দন জানিয়েছে।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিতে নোবেল জয় উদযাপনের অংশ হিসেবে সাভান্তে পাবোকে পানিতে ফেলে দেওয়া ব্যক্তিগুলো পাবোর ছাত্র ছিল না বরং তাকে পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়া ব্যক্তিগুলো তার সহকর্মী ছিল। তাজমহল নির্মাণের পর শ্রমিকদের হাত কেটে হয়েছিল দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যকে গত ১১ অক্টোবর মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়,তাজমহল নির্মাণের পর শ্রমিকদের হাত কেটে হয়েছিল সত্য নয় কেননা দাবির পক্ষে যথার্থ কোনো প্রমাণ নেই বরং কোনো প্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উল্লিখিত দাবিটি দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক প্রচার হয়ে আসছে।
অক্টোবর মাসে সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম ছিল ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে চট্টগ্রামে আয়োজিত জশনে জুলুস।
মূলধারার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি করা হয়’ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে চট্টগ্রামে আয়োজিত জশনে জুলুসকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুলুসের স্বীকৃতি পেতে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে জশনে জুলুস আয়োজনকারী সংস্থা। এবং গত ৯ অক্টোবর গিনেজ কমিটির একটি প্রতিনিধি দল জুলুসটি পর্যবেক্ষণে এসেছিল।’
তবে উক্ত দাবিতে প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে চট্টগ্রামে আয়েজিত জশনে জুলুসকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুলুসের স্বীকৃতি দিতে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার দাবিটি সঠিক নয় এবং ৯ অক্টোবর গিনেজ কমিটির জুলুসটি পর্যবেক্ষণের দাবিটিও মিথ্যা বরং জুলুসের আয়োজনকারী সংস্থা জানিয়েছে আগামী ২০২৩ সালে গিনেজে এই আবেদন করা হবে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়ের দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্নার দৃশ্য দাবিতে একটি ছবি ছবি বেশ কয়েক বছর যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
তবে উক্ত বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শেষে গত ১৭ অক্টোবর বিষয়কে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শেখ হাসিনার বিয়ের দিন খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্নার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া কেউই নেই এবং এটি শেখ হাসিনার বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবিও নয় বরং কোনো ধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ছবিটি তাদের নামে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বেলার ছবি দাবিতে প্রচারিত একটি তথ্যকে মিথ্যা শনাক্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোটবেলার ছবির দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সত্য নয় বরং এটি গাজীপুরের কাপাসিয়ার বাসিন্দা আশিক উকিলের কন্যার ছবি।
গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাঝে অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল জার্মানির মসজিদে লাউডস্পিকারে আজান দেওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গ।
দেশীয় মূলধারার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দাবি করা হয় ‘জার্মানিতে প্রথম লাউডস্পিকারে পাঁচ ওয়াক্ত আজান দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জার্মানিতে কয়েকটি শহরে আগে থেকেই লাউডস্পিকারে আজান দেয়ার অনুমতি আছে এবং কোলন শহরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময় লাউডস্পিকারে আজান দেওয়া যাবেনা বরং আলোচিত কোলন শহরের সেন্ট্রাল মসজিদে কেবলমাত্র শুক্রবার নির্দিষ্ট শব্দ-সীমার মধ্যে লাউডস্পিকারে আজান দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জার্মানিতে নয়, দেশটির কোলন শহরের একটি মসজিদে সম্প্রতি প্রথমবারের মত লাউডস্পিকারে আজান দেওয়া হয়েছে।
পুরো অক্টোবর মাস জুড়ে ফেসবুকে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল বিভাগীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর গণসমাবেশ।
উক্ত সমাবেশকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া সর্বমোট ৬ টি তথ্যকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে ৫ টি ছিল ভিন্ন ঘটনার পুরোনো দৃশ্যকে বিএনপির আন্দোলনে জনসমাগমের চিত্র দাবিতে প্রচার এবং ১ টি ছিল বিএনপির গণসমাবেশের একটি বাস্তব(আসল) ছবিকে এডিটেড ছবি দাবিতে প্রচার।
খুলনায় বিএনপির সমাবেশে জনসমুদ্র দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিও অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি অক্টোবরে খুলনায় অনুষ্ঠিত বিএনপি’র বিভাগীয় গণসমাবেশ স্থলের ভিডিও নয় বরং এটি বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রচারিত ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে একটি উৎসব চলাকালীন সময়ের ভিডিও।
অপরদিকে, খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি দেখাতে বিএনপির অফিসিয়াল পেজ থেকে এডিটেড ছবি প্রচার করা হয়েছে দাবিতে ছড়িয়ে পড়া তথ্যটি অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ নিয়ে প্রকাশিত ছবিগুলোর যে দুটি ছবিকে লাল মার্ক করে ফটোশপের মাধ্যমে এডিট দাবি করা হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে এডিট করা হয়নি। মূলত একই রঙের কাপড়ে সমাবেশ মঞ্চ ও পাশে ডক্টর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর মেডিকেল ক্যম্পের ছাউনি থাকায় এবং ফেসবুকে আপলোডের পর ছবির রেজুলেশন কমে যাওয়ায় উক্ত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
পার্বত্য চট্রগ্রামে পাহাড়ী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন এর ওপর যৌথ বাহিনীর অভিযানের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও গত ২০ অক্টোবর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।
তবে উক্ত বিষয়টি নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিনের ওপর বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর অভিযানের ভিডিও নয় বরং এটি মিয়ানমারের কায়াহ রাজ্যের কারেনি আর্মি নামের একটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সামরিক অনুশীলনের ভিডিও।
অক্টোবর মাসে ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাতে গণধোলাইয়ের শিকার ব্যক্তি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তাপসের পিএস’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। উক্ত দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে সেসময় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ছয় দফা দাবির মানববন্ধনে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাতে গণপিটুনির শিকার ব্যক্তি মেয়র তাপসের পিএস নয় বরং ঐ ব্যক্তি পেশায় একজন সার্জিক্যাল ব্যবসায়ী এবং তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক। তার নাম মো. তৌহিদ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে গেল অক্টোবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেগুলো প্রচারিত হয়েছে ক্রিকেট অঙ্গন সংক্রান্ত অসংখ্য তথ্য। প্রচারিত এসব তথ্য থেকে বেশ কয়েকটি তথ্যকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচের আগে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিমানে করে পিচ এনে পিচ লাগানো হচ্ছে।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি প্রচারিত হয়।
উক্ত বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের নয় এবং পিচটি বিমানে করে আনা হয়নি বরং এটি অস্ট্রেলিয়ার কার্দিনিয়া পার্ক স্টেডিয়ামের ছবি এবং পিচটি আগে থেকেই কার্দিনিয়ায় ছিল।
এছাড়া, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ‘২০১২ সালে ইউনুস খান বলেছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস আফগানিস্তান কে দিয়ে দেওয়া উচিত।’ শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে প্রচারিত হয়।
উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানি ক্রিকেটার ইউনুস খান বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস আফগানিস্তানকে দিয়ে দেওয়া উচিত শীর্ষক কোন মন্তব্য করেননি বরং ২০১২ সাল থেকে তার নামে এই বক্তব্যটি ভুলভাবে প্রচার হয়ে আসছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ঘিরে গত অক্টোবর মাসে ‘ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এই লোকটির নাম মিরিয়াদস। উনি একজন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। তিনি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুণীকে বিয়ে করেন এবং তার গর্ভে আসে এই দুই সন্তান কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস তিনি তার স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলেন দ্বিতীয় সন্তান জন্মের সময়। তখন থেকেই তিনি বাংলাদেশকে ভালবাসেন। তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে তিনি সবসময় সাপোর্ট করেন।’ শীর্ষক দাবিতে ছবি সম্বলিত একটি তথ্য ফেসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।
পরবর্তীতে উক্ত বিষয়টির সত্যতা যাচাইকালে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের জার্সি পরে দুই সন্তানসহ নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশকে সমর্থন করতে মাঠে খেলা দেখতে আসা অস্ট্রেলিয়ান বাবার আলোচিত ছবিটির সাথে প্রচারিত গল্পটি সত্য নয় বরং ভুয়া নাম জুড়ে দিয়ে এই কল্পিত গল্প তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে।
অর্থাৎ, গত অক্টোবর মাসে রিউমর স্ক্যানারে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করে বলা যায়, বরাবরের মতোই এ মাসেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচারিত ভুল ও বিভ্রান্তিকর দাবিগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ছিল নোবেল পুরস্কার, টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু কেন্দ্রিক। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু কেন্দ্রিক কোনো তথ্য প্রচারের আগে নেটিজেনদের সেটির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।