সম্প্রতি “জার্মানিতে অনুমতি পেল আজান। আজ থেকে জার্মানির প্রত্যেকটা মসজিদে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান হবে। আলহামদুলিল্লাহ!” শীর্ষক শিরোনামসহ বিভিন্ন শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পাশাপাশি, দেশীয় গণমাধ্যম সময় টিভি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং তাদের ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনে যথাক্রমে ‘জার্মানিতে প্রথমবার মাইকে শোনা গেল আজানের ধ্বনি’ এবং ‘প্রথমবারের মতো মাইকে আজান হলো জার্মানিতে!’ শীর্ষক ভুল শিরোনাম ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও ভুল শিরোনাম ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক নয়া দিগন্ত, বিডি-জার্নাল।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জার্মানিতে কয়েকটি শহরে আগে থেকেই লাউডস্পিকারে আজান দেয়ার অনুমতি আছে এবং কোলন শহরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময় লাউডস্পিকারে আজান দেওয়া যাবেনা বরং আলোচিত কোলন শহরের শুধুমাত্র সেন্ট্রাল মসজিদে কেবলমাত্র শুক্রবার নির্দিষ্ট শব্দ-সীমার মধ্যে লাউডস্পিকারে আজান দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জার্মানিতে নয়, দেশটির কোলন শহরের একটি মসজিদে সম্প্রতি প্রথমবারের মত লাউডস্পিকারে আজান দেওয়া হয়েছে।
বিভ্রান্তি-১
এই প্রথম নয়, জার্মানিতে লাউডস্পিকারে আজান বিভিন্ন শহরে আগেই দেওয়া যেতো। সম্প্রতি যে শহরে আজান দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে সেখানেও আগে আজান দেওয়া যেতো, তবে লাউডস্পিকারে অনুমতি পেয়েছে গতবছর।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের বাংলা সংস্করণে ২০২০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর “আজান থেকে নিষেধ তুললো জার্মান আদালত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জার্মানির ওই আদালত জানিয়ে দিয়েছে, সপ্তাহে একদিন যে ভাবে সেখানে আজান দেওয়া হতো, তা আগের মতোই করা যাবে।… সেখানে সপ্তাহে একদিন আজান দেওয়া হয়। যা এক কিলোমিটার দূর থেকে শোনা যায়।

পাশাপাশি, জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের বাংলা সংস্করণে গত ১৫ অক্টোবর “জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদে প্রথমবারের মতো আযান প্রচার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জার্মানির বিভিন্ন শহরের মসজিদে লাউডস্পিকারে আযান প্রচারের অনুমতি রয়েছে৷ তবে কোলন কর্তৃপক্ষ এই মসজিদটিকে গত বছর প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে আযান প্রচারের অনুমতি দেয়৷

বিভ্রান্তি-২
সম্প্রতি দেওয়া অনুমতির শর্ত হলো; লাউড স্পিকারে আজান শুধু শুক্রবার দেওয়া যাবে, পুরো সপ্তাহ নয়। এছাড়াও এক্ষেত্রে সাউন্ডসহ সময়ের লিমিটেশন রয়েছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের বাংলা সংস্করণে গত ১৫ অক্টোবর “জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদে প্রথমবারের মতো আযান প্রচার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী দুই বছর প্রতি শুক্রবার দুপুর দুইটা থেকে বিকেল তিনটার মধ্যে পাঁচ মিনিটের জন্য লাউড স্পিকারে আযান প্রচার করা যাবে৷ তবে শব্দসীমা হবে সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবেল৷পাশাপাশি, দেশীয় গণমাধ্যম যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে গত ১৫ অক্টোবর “জার্মানির কোলনে মাইকে জুমার নামাজের আজান দেওয়ার অনুমতি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জার্মানির কোলন শহরের সেন্ট্রাল মসজিদে শুক্রবার থেকে মাইকে জুমআর নামাজের আজান দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ। কয়েক মাস আগেই মাইকে জুমার আজান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কিন্তু বিভিন্ন বিতর্কের কারণে তা এতদিন চূড়ান্ত হয়নি।

মূলত, জার্মানির বিভিন্ন শহরে আগে থেকেই লাউডস্পিকারের আজান দেয়ার অনুমতি ছিল। তবে গতবছর “কোলন” কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কিছু শর্তে শুধুমাত্র শহরের সেন্ট্রাল মসজিদে কেবলমাত্র জুমআর নামাজের আজান লাউডস্পিকারে দেয়ার অনুমতি দিলেও বিভিন্ন কারণে এতদিন তা কার্যকর করা যায়নি। সম্প্রতি কোলন শহরে একটি মসজিদে লাউডস্পিকারে শুধুমাত্র জুমার আজানের অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি “জার্মানিতে প্রথম লাউডস্পিকারে পাঁচ ওয়াক্ত আজানের অনুমতি পেয়েছে (সকল মসজিদ)”; হিসেবে ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পশ্চিম জার্মানির কোলন শহরে প্রায় এক লাখ মুসলমান বাস করেন৷ কোলন কর্তৃপক্ষ এই মসজিদটিকে গত বছর প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে আযান প্রচারের অনুমতি দেয়৷ নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী দুই বছর প্রতি শুক্রবার দুপুর দুইটা থেকে বিকেল তিনটার মধ্যে পাঁচ মিনিটের জন্য লাউড স্পিকারে আযান প্রচার করা যাবে৷ তবে শব্দসীমা হবে সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবেল৷ কোলন শহরের আরো কয়েকটি মসজিদও এখন আযান প্রচারের আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারের অনুমতি চেয়েছে৷
প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বেও আজান সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে প্রচারিত তথ্যের সত্যতা যাচাই করে বেশকিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, জার্মানির বিভিন্ন শহরে ইতোমধ্যে লাউডস্পিকারের আজান দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। কোলন শহরে কেবলমাত্র সেন্ট্রাল মসজিদে গতবছর কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কিছু শর্তে শুধুমাত্র জুমআর নামজের আজান লাউডস্পিকারে দেওয়ার অনুমতি দিলেও একবছর পরে গত ১৪ অক্টোবর তা কার্যকর করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
- ডয়েচে ভেলে: আজান থেকে নিষেধ তুললো জার্মান আদালত
- ডয়েচে ভেলে: জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদে প্রথমবারের মতো আযান প্রচার
- যুগান্তর: জার্মানির কোলনে মাইকে জুমার নামাজের আজান দেওয়ার অনুমতি