সম্প্রতি “মির্জা গালিব হার্ভার্ডে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেয়েছেন” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে ‘Dr.Shafiqul Islam Masud Fans’ নামের একটি গ্রুপে ‘রাব্বি রাহিদ’ নামক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত এক পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “মির্জা গালিব ভাই আমেরিকার হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেছে।”

একই দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে ‘Science Bee – বিজ্ঞান গ্রুপ’ নামক গ্রুপে Mashrafe Bin Mostafa Safat নামক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত এক পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, ” বর্তমানে Dr.Mirza Galib ভাই আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত Howard University তে Associate Professor হিসেবে জয়েন করেছেন।”

একই দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে ‘Dr. Mirza Galib’ নামক গ্রুপে আল হেরা নামক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত এক পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “মির্জা গালিব ঢাবি রসায়ন ডিপার্টমেন্ট থেকে ৯৮% মার্ক নিয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে, যে মার্ক এখন পর্যন্ত কেউ পায় নাই।”

একই দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ড. মির্জা গালিব হার্ভার্ডে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পাননি বরং তিনি হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়া, ‘অনার্সে তিনি রেকর্ড মার্ক পেয়েছিলেন, যা এখনো কেউ পায়নি’ এরুপ দাবিটিও মিথ্যা।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে পেশাজীবীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম LinkedIn এ মির্জা গালিবের অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মির্জা গালিব সর্বশেষ পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চার হিসেবে কাজ করছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলেতে। ২০১৮ সালে যোগ দেওয়ার পর থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি সেখানে কাজ করছিলেন বলে অ্যাকাউন্টে উল্লেখ পাওয়া যায়।

- পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটি অফ বার্কলের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডেভিড লিম্মারের রিসার্চ গ্রুপ বিষয়ক ওয়েবসাইটে মির্জা গালিবের নাম খুঁজে পাওয়া যায়। সেখান থেকে জানা যায়, মির্জা গালিব উক্ত গ্রুপে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (Howard University) সহকারী অধ্যাপক (Assistant Professor) পদে কাজ করছেন।

এছাড়া, গবেষণা বিষয়ক সার্চ ইঞ্জিন গুগল স্কলার ‘Google Scholar’ এর ওয়েবসাইটে মির্জা গালিবের অ্যাকাউন্টেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

তবে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া শিক্ষকদের তালিকায় মির্জা গালিবের নাম খুঁজে পাওয়া যায় নি।
কী বলছেন মির্জা গালিব?
সার্বিক বিষয়ে জানতে মির্জা গালিবের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। তিনি জানান, চলতি বছরের আগস্টে তিনি হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর অর্থাৎ সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, “কেউ কেউ হাওয়ার্ড (Howard) বিশ্ববিদ্যালয়কে হার্ভার্ড (Harvard) উল্লেখ করছেন এবং সহকারী (Assistant) অধ্যাপক পদকে সহযোগী (Associate) অধ্যাপক পদ বলছেন, যা সত্য নয়।”

সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপকের মধ্যে পার্থক্য আছে?
কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক নিয়োগ হয় লেকচারার পদে। এরপর ক্রমান্বয়ে সহকারী, সহযোগী এবং শেষে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভের সুযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা, রিসার্চ ফিল্ডের সাফল্য ও পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনায় সরাসরি সহকারী, সহযোগী এমনকি অধ্যাপক পদেও নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ থাকে। এছাড়া ইন্সট্রাক্টর পদ থেকেও সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
মির্জা গালিবের অর্জিত মার্ক এখনও কেউ পায় নি?
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া অসংখ্য পোস্টে দাবি করা হয়েছে, “মির্জা গালিব ঢাবি রসায়ন বিভাগ থেকে ৯৮ শতাংশ মার্ক নিয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন, এই মার্ক এখন পর্যন্ত কেউ পায় নি।”
অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এই দাবিটি সত্য নয়। এ সংক্রান্ত অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ডিএমপি নিউজ এর ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট রসায়ন বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ঢাবি শিক্ষার্থী মৌরির রেকর্ড শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১২-১৩ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন মাকসুদা পারভিন মৌরি। চার বছরের অনার্স শেষে সম্মিলিত ফলাফলে তার সিজিপিএ দাঁড়ায় ৩.৯২ (৯৮.৫০ শতাংশ), যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

মির্জা গালিব ঢাবি থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন ২০০৬ সালে।

রিউমর স্ক্যানারকে তিনি জানিয়েছেন, ঢাবিতে পড়াকালীন সময়ে তাদের গ্রেডিং পদ্ধতি চালু ছিল না। তিনি অনার্স এবং মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণী (first class) অর্জন করেন এবং তার ক্লাসে প্রথম হন।

অর্থাৎ, শ্রেণীভিত্তিক মার্কিং ব্যবস্থায় মির্জা গালিব প্রথম শ্রেণী অর্জন করেছিলেন। অন্যদিকে জিপিএ পদ্ধতি চালুর পর মাকসুদা মৌরি সর্বোচ্চ মার্ক পেয়েছেন। ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে গালিব ৯৮ শতাংশ মার্ক পেয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু মাকসুদা মৌরি সাড়ে ৯৮ শতাংশ মার্ক পেয়েছেন বলে তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে।
মূলত, গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড (Howard) বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক (Assistant Professor) পদে নিয়োগ পান ঢাবির রসায়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ড. মির্জা গালিব। তবে, ‘মির্জা গালিব হার্ভার্ডে (Harvard) সহযোগী অধ্যাপক (Associate Professor) পদে নিয়োগ পেয়েছেন’ দাবিতে একটি তথ্য সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, যা সঠিক নয়। তাছাড়া, অনার্সে তার রেকর্ড মার্ক পাওয়ার দাবিটিও সত্য নয় বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক বিশ্ব র্যান্কিংয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৫ম। অন্যদিকে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৬৫১-৭০০ এর মধ্যে।
সুতরাং, মির্জা গালিব সম্পর্কিত প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- মির্জা গালিবের সাক্ষাৎকার
- Linkedin : Mirza Galib
- Google Scholar : Mirza Galib
- University of California Barkley: Limmer Group