সম্প্রতি “নোবেল জয়ী সাভান্তে পাবোর ছাত্ররা তাঁকে পানিতে ফেলে দিয়েছে” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
গত ৫ অক্টোবর ফেসবুকে পাবলিকিয়ান পরিবার নামক একটি পেজে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “২০২২ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল বিজয়ী সুভান্তে প্যাবোর ছাত্ররা তাকে ঠান্ডা পানিতে ফেলে দিয়ে অভিনন্দন জানায়।”
একই দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন – এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাভান্তে পাবোর ছাত্ররা তাঁকে পানিতে ফেলে দেয়নি বরং পাবোর সহকর্মীরা তাঁকে পানিতে ফেলে দিয়েছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, গত ৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা Reuters এ Swedish geneticist wins Nobel medicine prize for decoding ancient DNA শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইডিশ জিনতত্ত্ববিদ সাভান্তে পাবো গত ৩ অক্টোবর ফিজিওলজি বা মেডিসিনে ২০২২ সালের নোবেল পুরস্কার জিতেছেন। জার্মানীর লিপজিগ (Leipzig) শহরে অবস্থিত Max Planck Institute for Evolutionary Anthropology এর ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন সাভান্তে পাবো। রয়টার্সের প্রতিবেদনে চারটি ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। তার একটিতে (২য় ছবি) দেখা যায়, সাভান্তে পাবোকে কয়েকজন পানিতে ফেলে দিচ্ছে। ক্যাপশনে রয়টার্স লিখেছে, সহকর্মীরা সাভান্তে পাবোকে পানিতে ফেলে দেয়।
পরবর্তীতে ম্যাক্স প্লান্ক সোসাইটির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ৪ অক্টোবর প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টে বলা হয়, “সাভান্তে পাবো একটি সংবাদ সম্মেলন করেন এবং পরে তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে ধরে ইনস্টিটিউটের পুকুরে ফেলে দেয়। বৈজ্ঞানিক সাফল্য ঐতিহ্যগতভাবে স্বেচ্ছাসেবী স্নানের মাধ্যমে এভাবেই উদযাপন করা হয়!”
পোস্টে সংযুক্ত ধারাবাহিক একাধিক ছবিতেও সাভান্তে পাবোকে পানিতে ফেলে দেওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।
এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে ম্যাক্স প্লান্ক সোসাইটির কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিষ্ঠানটির উক্ত বিভাগের পিকচার এডিটর ‘Susanne Schaur’ রিউমর স্ক্যানারকে বলেন,
“এখানকার একটি ঐতিহ্য রয়েছে যে বৈজ্ঞানিক সাফল্য পাওয়া ব্যক্তিদের ইনস্টিটিউটের পুকুরে ফেলে দিয়ে উদযাপন করা হয়। প্রধানত এই রীতি পিএইচডি ছাত্রদের মধ্যেই প্রচলিত। তবে এই ক্ষেত্রে, সাভান্তে পাবোর সহকর্মীরা ইনস্টিটিউটের ঐতিহ্যকে সম্মান করে এবং যথাযথভাবে উদযাপন করার জন্য তাকে ধরে পুকুরে ফেলে দেয়! তাকে বহনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন তার সহযোগী, ইনস্টিটিউটের পরিচালক জোহানেস ক্রাউস।”
অর্থাৎ, সাভান্তে পাবোকে তার সহকর্মীরাই পানিতে ফেলে দিয়েছিল।
মূলত, চিকিৎসা বিজ্ঞানে চলতি বছর নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন সুইডেনের বিজ্ঞানী সাভান্তে পাবো। ৩ অক্টোবর নোবেল কমিটির এ ঘোষণার পর উদযাপনের অংশ হিসেবে ঐ দিন সাভান্তে পাবো’র কর্মস্থল জার্মানীর ম্যাক্স প্লান্ক সোসাইটিতে তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে ইনস্টিটিউটের পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য ম্যাক্স প্লান্ক সোসাইটির সাথে যোগাযোগ করা হলে “সেখানে পাবোর সহকর্মীরা ছিলো” বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছে তারা। তবে, ‘সাভান্তে পাবোকে তার ছাত্ররা পানিতে ফেলে অভিনন্দন জানিয়েছে’ দাবিতে বর্তমানে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, যা সঠিক নয়।
উল্লেখ্য, বিলুপ্ত হোমিনদের জিনোম এবং মানবজাতির বিবর্তন বিষয়ে গবেষণার জন্য চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে সাভান্তে পাবোকে। পুরস্কার হিসেবে সাভান্তে পাবো পাবেন ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার।
প্রসঙ্গত, ১৯০১ সালে প্রথমবারের মতো চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল দেওয়া শুরু হয়। ১৯০১ সাল থেকে শুরু করে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় মোট ১১৩ বার নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মোট ২২৫ জন বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
সুতরাং, সাভান্তে পাবোর ছাত্রদের কর্তৃক তাঁকে পানিতে ফেলে দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Reuters: Swedish geneticist wins Nobel medicine prize for decoding ancient DNA
- Max Planck Society: Facebook Post
- Statement from Susanne Schaur, Communication Department, The Max Planck Society